শ্রীজগদানন্দ পন্ডিত বৃন্দাবন ভ্রমণ করে নীলাচলে মহাপ্রভুর কাছে ফিরে যাচ্ছেন । শ্রীসনাতন গোস্বামী তাই তাঁর হাত দিয়ে মহাপ্রভুর জন্য কিছু ভেট বস্তু অর্থাৎ উপহার সামগ্রী পাঠালেন । কী কী সেই উপহার ? — রাসস্থলীর বালু , গোবর্দ্ধনের শিলা , শুষ্ক পাকা পীলু ফল আর গুঞ্জামালা । জগদানন্দ পন্ডিত ফিরে যেতেই সনাতনের মন ব্যাকুল হয়ে উঠলো মহাপ্রভুর জন্য। এতদিন তো মহাপ্রভুর অতি কাছের একজন মানুষ, প্রিয় পরিকর বা দূত যাই বলি না কেন তিনি ছিলেন সনাতনের কাছে। জগদানন্দের সঙ্গ পেয়ে সনাতনের মনে হতো যেন মহাপ্রভুর আবেশ উপলব্ধি করছেন । যেমনটা হয় আর কী ! প্রিয়জনের কাছের কাউকে পেলেও মনে এক অদ্ভুত প্রেম ভাব জাগে , ভালো লাগে—তেমন আর কী ! আজ জগদানন্দ চলে যেতে সনাতনের মন তাই কেঁদে উঠলো মহাপ্রভুর জন্য। দ্বাদশ আদিত্য টিলার উপর একটি মঠ পেয়ে , সে স্থান সংস্কার করে চালা বেঁধে রেখে দিলেন তিনি, যাতে ব্রজে এসে মহাপ্রভু সেখানে বাস করতে পারেন নিরালায় ।
ওদিকে জগদানন্দ পথে একটুও দেরী না করে খুব শীঘ্র চলে এলেন নীলাচলে । তাঁর যে আর তর সইছে না মহাপ্রভুকে দু’চোখ ভরে দেখার জন্য। নীলাচলে মহাপ্রভু সহ আর সব ভক্তদের পেয়ে তাঁর মনে পরম আনন্দ হল । প্রভুর চরণ বন্দনা করে সকলের সাথে আলিঙ্গন করলেন। মহাপ্রভুও তাঁকে দৃঢ় আলিঙ্গন দিলেন । ব্রজ থেকে ফেরত এসেছে যে প্রাণপ্রিয় বাল্যবান্ধব জগদানন্দ ! তাই। এরপর জগদানন্দ সেই সমস্ত ভেট তথা উপহার সামগ্রী মহাপ্রভুর শ্রীহস্তে তুলে দিলেন, যা-যা সনাতন প্রেরণ করেছিলেন মহাপ্রভুর জন্য ।
রাসস্থলীর বালু , গোবর্দ্ধনের শিলা আর গুঞ্জামালা নিজের কাছে রেখে মহাপ্রভু পীলু ফলগুলি তখনই সকলের মধ্যে বণ্টন করে দিতে বললেন । ভক্তরা বিশেষতঃ গৌড়ীয়ারা পীলু ফল দেখেননি। গৌড়দেশে পীলুফল হয়ও না। বৃন্দাবন থেকে এসেছে যে ফল সে ফল না জানি কত ভালো , কত সুস্বাদু, কত অমৃতসম মিষ্টি হয়তো বা ! তাই তো সনাতন পাঠিয়েছেন পীলু ফল ! তাই না ! একারণে সকলের মধ্যেই মহা আগ্রহ পীলু ফল খাবার । সকলে মহা আনন্দের সাথে পীলু ফল হাতে নিলেন খাবেন বলে।
যাঁরা জানেন তাঁরা পীলু ফল নিয়ে চুষতে থাকলেন আর যাঁরা জানেন না বিশেষতঃ গৌড়ীয়ারা পীলু ফলে কামড় বসিয়ে চিবোতে শুরু করে দিলেন। আর যে মুহূর্তে চিবোলেন অমনি তাঁদের মুখের ছাল উঠে গেল, জিহ্বা প্রচন্ড জ্বালা করতে থাকলো । আসলে পিলু ফল এমনই হয় ,চিবিয়ে খেতে নেই ,চুষে খেতে হয় । চিবোলেই মুখ জ্বলে যায় । স্বাভাবিক ভাবেই পীলু ফলকে কেন্দ্র করে তখন সেখানে এক মহা রগড় হলো মহাপ্রভু ও ভক্তদের মধ্যে।
“সনাতন প্রভুকে কিছু ভেট বস্তু দিলা ।।
রাসস্থলীর বালু আর গোবর্ধনের শিলা ।
শুষ্ক পক্ক পীলু ফল আর গুঞ্জামালা ।।
জগদানন্দ পণ্ডিত চলিলা সব লইয়া।
*************************************
*************************************
*************************************
সনাতনের নামে পন্ডিত দণ্ডবৎ কৈল।
রাসস্থলীর বালু আদি সব ভেট দিল ।।
সব দ্রব্য রাখি পীলু দিলেন বাঁটিয়া ।
বৃন্দাবনের ফল বলি খাইল হৃষ্ট হইয়া।।
যে কেহ জানে সে আঁটি চুষিতে লাগিল ।
যে না জানে গৌড়ীয়া পীলু চিবাইয়া খাইল।।
মুখে তার ছাল গেল জিহবা করে জ্বালা ।
বৃন্দাবনের পীলু খাইতে এই এক লীলা।।”
(চৈ।চ। অন্ত্য,১৩)