Categories
কবিতা রিভিউ

কবিতার পবিত্রতার ছুঁয়ে : শু ভ ঙ্ক র দা স।

বরিশালে জন্ম হলেও বালকটি বড় হওয়া কলকাতায়…
ইস্কুলের গণ্ডী পেরানোর অনেক আগেই কবিতায় নিমজ্জন। সেইভাব জাগ্রত হল,বরিশালে এক জমিদারের বৈঠকখানায় রবি বর্মার রামায়ণ-মহাভারতের ছবি দেখে,ভাবলেন চিত্রচিল্পী হবেন,কিন্তু ছবি আঁকা শুরু করলেন অক্ষরে…
সহসা মা মারা গেলেন।
বালকটি অসহায়,নিঃসঙ্গ এবং উদাস।
লিখলেন প্রথম কবিতা,মাকে নিয়ে,লিখে টাঙিয়ে রাখলেন দরজার পাশেই…
বরিশাল থেকে মাসির হাত ধরে মহানগরের পথে..
প্রচন্ড দারিদ্র্য এবং অসংখ্যবার বাসাবদল।
এর মধ্যে সেই বালক বড় হতে লাগলেন এবং মনেপ্রাণে এই বিশ্বাস প্রোথিত হল,কবিতার জন্য তাঁর জন্মগ্রহণ।
টিউশনির টাকায় পত্রিকা প্রকাশ।
নাম, কবিপত্র।
যেটি পরে সাহিত্যপত্রের ইতিহাস সৃষ্টি করে।
বাষট্টির বছর ধরে প্রকাশ হয়ে আসছিল। এক বিরাট বিস্ময়!
দেখা হল,বিষ্ণু দে,সুভাষ মুখোপাধ্যায়, প্রেমেন্দ্র মিত্র, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রাম বসু,নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, আলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত এবং সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে..
আলাপ হল,প্রেরণা ও উৎসাহে পেলেন এক নতুন শক্তি।
তারপর মনে হল, কবিতার বই বের করতে হবে।
পান্ডুলিপি তৈরি হল,নাম দিলেন,’দর্পণে অনেক মুখ’।
কিন্তু ছাপতে কে? টাকা কোথায়?
কবির কী অবস্থা!
নিজে ভালো করে কবি খেতেই পান না!অন্য লোকের কাছে আশ্রিত।
অথচ তাঁর ধ্যানজ্ঞান,কবিতার বই বের করবেন।
এক বন্ধু কবিতা পড়ে বলল,আমি টাকা দেবো।
কবিযুবক ছুটলেন সিগনেটের কর্ণধার দিলীপ গুপ্তের কাছে।
প্রচ্ছদ আঁকলেন,পূর্ণেন্দু পত্রী।
সেই শুরু, আবির্ভাব হল এক নতুন কবিপুরুষের…
তিনি পবিত্র মুখোপাধ্যায়।
তিনি তো লিখতে পারেন—

“অনন্তকাল কেউ বেঁচে থাকবে না
খড়কুটোর রহস্য বেরিয়ে পড়বার আগেই
আমি
খুলে ফেললাম আনুগত্যের দস্তানা
হেলমেটের সবুজ ঢালুপথের ওপর দাঁড়িয়ে পড়লো সূর্য
আমি রেকাবে পা রাখলাম রেকাবে রাখলাম পা
রেকাবে”

কী আশ্চর্য!
কবি পবিত্র মুখোপাধ্যায় সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে পা রাখার ভুলে পড়ে যান,তারপর হাসপাতালে..
তারপর অশেষ কবিতার যাত্রায়..

অলংকরণ। ভগীরথ সর্দার।।

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *