Categories
অনুগল্প

পতিহীনা নারীর জীবন বৃত্তান্ত : রাণু সরকার।

বৃদ্ধার যখন ভরা যৌবন, তখন একজনকে ভালোবাসতো, ধীরে ধীরে প্রেম গভীর হলো, কিন্তু ক্রমান্বয়ে জানতে পারলো প্রেমিক শরাবখোর ও মাস্তান, কি আর করা যাবে ছেড়ে দিলে প্রেমিকের হাতে খুন অবধারিত মনের সাথে অনেক লড়াই করে অবশেষে বাধ্য হলো বিয়ের পিড়িতে বসতে।
ভালো মন্দ মিলেমিশে চললো, একদিন বুঝতে পারলো সে অন্তঃসত্ত্বা খুশি ছিলো
দুজনেই।
একদিন রাতে পুলিশ মেয়েটির স্বামীকে তুলে নিয়ে গেলো তখন ভীষণ কষ্টে মেয়েটি ভেঙে পড়েও উঠে দাঁড়াল গর্ভে তার সন্তান আছে ভেবে।

কয়েক মাস পর সন্তান ভূমিষ্ঠ হলো, খেয়ে না খেয়ে কোনরকম দিন চলে। এভাবেই তিন বছর কেটে গেলো বাচ্চাটিকে নিয়ে। স্বামী ছাড়া পেয়ে একদিন গভীর রাতে বাড়ি ফিরলো, চলছে তাদের রাগারাগি কিন্তু সহবাসের ছাড় নেই, আবার হলো গর্ভবতী, ভাগ্যের কি পরিহাস, গভীর রাতে হঠাৎ একদিন খুব চিৎকার চেঁচামেচি হচ্ছিলো রাস্তায়। শুনতে পেয়ে মেয়েটি দৌড়ে গেলো, গিয়ে দেখে গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত অবস্থায় স্বামী পরে আছে। দেখে মেয়েটি সেখানে লুটিয়ে পড়লো, যাইহোক

সবাই চোখে মুখে জল দিলো একটু সুস্থ বোধ করাতে মেয়েটিকে বাড়িতে পৌছে দিলো।
মেয়েটির স্বামীর বডি পুলিশ নিয়ে গেলো পোস্টমটেম জন্য। পোস্টমটেম হলো, দাহও হলো, শেষ কাজ কোনরকম করলো টাকা পয়সা তেমন কিছুই রাখেনি মদখোর মাস্তান স্বামী।
কিছুদিন পর একটি মেয়ে সন্তান ভূমিষ্ঠ হলো, সপ্তা খানেক ছিলো মেয়ে বাচ্চাটি তারও মৃত্যু হলো।

মেয়েটি ভেবে নিল ছেলেটি যেন ওর বাবার মতো না হয়- টাকার জন্য নানারকমের কাজ করে নিজে কম খেয়ে-
ছেলেকে উচ্চশিক্ষিত করলো। ছেলে একটি ভালো কাজ পেলো মাকে না বলে বিয়ে করে শ্বশুর বাড়িতে থাকতে শুরু করলো। শ্বশুড় বিশাল টাকার মালিক
ভালোই কাটে ছেলেটির। বয়স হচ্ছে মায়ের, ছেলে খোঁজ নেয় না মা কিভাবে কেমন আছে। কত কষ্ট বলুন তো মহিলার?
মহিলার অনেকটাই বয়স একরকম বুড়িই বলা চলে,
শখআল্লাদ বিসর্জন দিয়ে এই বয়সে কপালের কি দুর্গতি।

মেহিলাটির পাড়ায় এক দর্জির দোকান ছিলো সেখানে টুকিটাকি সেলাই করে যা টাকা পায় তাতে কোনরকম চলে। পাড়ার এক ভদ্রমহিলা তাকে খুব ভালোবাসতো একদিন তার কাছে এসে বললো দিদি অনেক তো হলো এবার তোমার কথা একটু ভাবো, সে বললো কি আর ভাববো বোন। দিদি, আমি একটি কথা বলছি, না করবে না বলো?
-কি কথা?
-আমাদের পাড়ায় ঐ যে মাষ্টার বাবুর বৌ মারা গেছেন তাকে তোমার সাথে বিয়ে দেবো।
-ছি ছি, মানুষ কি বলবে, আর আমার ছেলে! এতোদিন কিছু করিনি এখন এই বয়সে এসে বিয়ে! ছি ছি, না গো আমি পারবো না।
-ভেবে দেখো দিদি, ভদ্র লোকের ছেলে, মেয়ের বিয়ে হয়েছে, চাকুরীর জন্য বিদেশে থাকতে হয় তার সন্তানরাই বলেছে আমায়, আমি তোমার কথা ভেবেই তোমাকে
বললাম, তুমি না বলো না রাজি হয়ে যাও।
তোমার যেটা ভালো মনে হয় করো, ঠিকই বলেছো অনেক তো করলাম, কি পেলাম কষ্ট ছাড়া নিজেকে নিয়ে কখনো ভাবিতো,

আর এই বয়সে বিয়ে মানে দু’জন দু’জনকে সাহায্য করা, এই বয়সে কী আর যৌবন খেলা হয়, দু’জনেরই বাধ্যর্ক ডাক দিয়েছে।
অনেক বোঝানোর পর অবশেষে রাজি হলো বৃদ্ধা মহিলা,বসলো বিয়ের পিঁড়িতে বুড়ো ভদ্রলোকের ছেলে মেয়ে এসেছে

বললো মা তুমি কেঁদোনা আমরা আছি তোমার জন্য। তুমি আমার বাবাকে একটু ভালো বেসো ও যত্ন করো। এভাবেই শুরু হলো বুড়ো বুড়ির নতুন সংসার।

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *