Categories
উপন্যাস

দামাল মেয়ে কুহেলি (ধারাবাহিক উপন্যাস, সপ্তম পর্ব) : দিলীপ রায় (৯৪৩৩৪৬২৮৫৪)।

কানাই কাকা কিরণের অভব্যতার বিন্দুবিসর্গ টেরও পেলো না । অন্যদিকে কুহেলি উপযাজক হয়ে কাকাকে কিচ্ছু জানালো না । ইচ্ছা করেই জানালো না, কেননা কথা প্রসঙ্গে কিরণের বেয়াদপীর কথাগুলি বা কার্যকলাপগুলি কাকাকে সবিস্তারে জানাতে হবে । সেখানে শ্লীলতাহানির প্রসঙ্গও উঠবে । সেটা নিয়ে কাকা রেগে গিয়ে গাঁয়ে ফিরে হুলস্থুল বাধাতে পারে । তাতে আখেরে কুহেলির বদনাম রটবে ছাড়া ভাল কিছু ঘটবে না । সুতরাং কাকাকে সমস্ত ঘটনা না বলার সিদ্ধান্তে অটল রইলো কুহেলি । অথচ কিরণের অভব্যতার একটা যোগ্য শাস্তি হওয়া উচিত ছিল । নতুবা ভবিষ্যতে আবার চড়াও হতে পারে । কাকাকে না জানালেও কুহেলি মনে মনে ভেবে রাখলো — সময় সুযোগ মতো সে নিজে কিরণকে জব্দ করবে । যতক্ষণ পর্যন্ত কিরণকে উচিৎ শিক্ষা দিতে না পারছে, ততক্ষণ কুহেলির মানসিক শান্তি নেই । তাই সময় সুযোগের অপেক্ষায় রইলো ।
বড় রাস্তা থেকে কাঞ্চন নগর গাঁয়ে ঢোকার মুখে বড়াল কাকীমার চায়ের দোকান । কুহেলি লক্ষ করলো, কিরণ সেখানে বসে মাটির ভাঁড়ে চা খাচ্ছে । চায়ের ভাঁড়ে চুমুক দিয়ে ভয়ার্ত চোখে ঘুরে ফিরে কুহেলির দিকে কিরণের নজর । অন্যদিকে বড় বড় চোখ করে কুহেলি এমন একটা ইঙ্গিত দিলো যার মর্ম – সবুর করো, দুই একদিনের মধ্যে বাদরামির যোগ্য জবাব তুমি পাবে ।
কানাই কাকা কুহেলিকে বড্ড ভালবাসে । কিন্তু কাকীমার ভয়ে কুহেলির মঙ্গলের জন্য কিচ্ছু করতে পারে না । এমনকি কুহেলিকে ভাল-মন্দ খাবার কিনে দিতে পারে না । পাছে কাকীমা জানতে পারলে তুমুল ঝগড়াঝাটির হুলস্থুল বাধিয়ে কাকাকে অশান্তির বেড়াজালে নাকানি-চোবানি খাওয়াবে !
পাকুড় গাছ তলায় দেখা মাত্র হাতে “বাপুজি কেক্‌” ধরিয়ে দিয়ে কানাই কাকা বলল, “খেয়ে নে মা । অনেকক্ষণ আগে বাড়ি থেকে বের হয়েছিস, এখন নিশ্চয় খিদেতে পেট জ্বলছে । কেক্‌টা খেলে অনেকটা শান্তি !” তারপর কাঞ্চন নগরে ঢোকার আগে সাইকেল থামিয়ে কাকা জিজ্ঞাসা করলো, “তোর পরীক্ষা শুরু হচ্ছে কবে থেকে ?”
আগামী বুধবার থেকে, কাকা ।
“সুতরাং তোর পরীক্ষা এসে গেলো । পরীক্ষা ভাল হওয়া চাই । তোর উপর আমার অনেক ভরসা । আমার বিশ্বাস, তুই ভাল রেজাল্ট করবি ।“ কাকা ডান হাতটা কুহেলির মাথায় রেখে আবার বলল, “আমার আশীর্বাদ রইলো ।”
সাইকেল দাঁড় করিয়ে কুহেলি কাকার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো ।
বাড়ি ফিরে দেখে, গোটা বাড়িটা অন্ধকার । অন্ধকার বাড়ির আনাচে কানাচের গাছের ডালে জোনাকীরা মৃদুমন্দ আলো ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে । উঠোনে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে, মৃদুমন্দ আলোর ছটা ছাড়ানো তারাগুলিতে আকশটা ভর্তি । বাড়িতে ঢোকার মুখে দুটো কুকুর এতক্ষণ শুয়ে ছিল । কুহেলিকে দেখা মাত্র লেজ নাড়তে নাড়তে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো । যদি কুহেলি দিদিমণির কাছ থেকে খাবার পাওয়া যায় । কুকুরের চাহনীতেই বলে দিচ্ছে, তারা কুহেলির আগমনের অপক্ষায় ছিল । কুহেলির বাড়ি ঢোকার অর্থ হচ্ছে কুকুর দুটি পেট ভরে খেতে পারবে । কেননা প্রতিদিন বিশেষ করে রাত্রিতে পথ-কুকুরদের কুহেলি খাওয়ায় । তবে ইদানীং খাওয়াবার পরিমাণ কমে গেছে । বাবা থাকাকালীন, কুহেলি বাজার থেকে আলাদাভাবে কুকুরদের খাওয়াবার জন্য খাবার কিনে আনতো । কুকুরেরাও পরম তৃপ্তিতে খাবারগুলি খেতো । সেটা এখন কুহেলির কাছে ইতিহাস ! তবে কুকুরেরাও সম্ভবত জেনে গেছে তার আদরের দিদিমণির খাওয়ানোর ক্ষমতা কমে গেছে । তারা আর কুহেলিকে বেশী উত্ত্যক্ত করে না । নীরবে ঘরের সামনে এসে লেজ নাড়ে । কুহেলি তার সামর্থ্য মতো খাবার দেয় । তাতেই কুকুরগুলি খুশী ।
লাইট জ্বালিয়ে বাথ রুমে ঢুকলো । স্নান সারলো । কিরণের জাপটে ধরাটা কুহেলিকে প্রচণ্ড আঘাত দিয়েছে । মানসিক কষ্টে বিব্রত । রাস্তার আজকের ঘটনায় কুহেলিকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো সে একজন অবলা নারী । নারীরা আজও মধ্যরাত্রে রাস্তা ঘাটে অসুরক্ষিত । যে কোনো মুহূর্তে তাদের বিপদ অনিবার্য । তাই নিজেকে আরও সাবধানতা অবলম্বন করার কথা ভাবছে । স্নান সেরে বসার উপায় নেই । ছুটলো রান্না ঘরে । ভাত বসালো সেই সঙ্গে ডাল ও ভেণ্ডি ভাজা । গ্যাসে রান্না । একজনের রান্না । তাই বেশী সময় নিলো না । খাওয়া দাওয়ার পর ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত্রি সাড়ে দশটা ।
পড়ার ঘরে ঢুকলো । পড়ায় তার একেবারেই মন বসছে না । বারংবার কিরণের বাদরামির ঘটনা চোখের সামনে ভেসে উঠছে । কিছুতেই মন থেকে ঝেড়ে ফেলে পড়ায় মন বসাতে পারছে না । কিরণকে নিয়ে যতো ভাবছে ততো তার চোখে ক্রোধের আগুন । কেননা কিরণকে তার অভব্যতার যোগ্য শাস্তি দিতে না পারলে কুহেলির মন শান্ত হচ্ছে না । পড়ার ঘরের লাইট নিভিয়ে শোওয়ার ঘরে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো ।
এমন সময় দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ ! কুহেলি হকচকিয়ে গেলো । এত রাত্রিতে কে এলো ? তবে কী কাকা খোঁজ নিতে তার ঘরে এত রাত্রিতে কড়া নাড়ছে । ধন্দে পড়ে গেলো কুহেলি । তাই বিছানায় শুয়েই তার চিৎকার, “কে ওখানে, কে ডাকছেন ?”
কোনো সাড়া শব্দ নেই । আবার কড়া নাড়লো ।
কুহেলি এবার স্পষ্ট বুঝতে পারলো, কেউ দুরভিসন্ধিমূলকভাবে তার দরজায় অনবরত কড়া নাড়ছে । কাকা নিশ্চয় নয় ! কাকা থাকলে তার ডাকে সাড়া দিতো । নিজেকে শক্ত করলো কুহেলি । তারপর কাকাকে ফোন করলো । কিন্তু ঐদিক থেকে কাকা ফোন তুলছে না । এদিকে আবার জোরে জোরে দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ ! তারপর বাইরে থেকে চিৎকার করে কুহেলিকে বলল, “দরজা খোল্‌ । নতুবা তোর দিন শেষ !”
গলার স্বর শুনে কুহেলির দৃঢ় বিশ্বাস, গলার আওয়াজ কিরণের । কুহেলি বুঝতে পারলো, কিরণ অন্য কোনো অভিসন্ধি নিয়ে রাত্রিতে এসেছে । সেই সময় কুহেলির সাথে দুর্ব্যবহার করে তার আশ মেটেনি । পুনরায় এসেছে যেনতেনপ্রকারেন কুহেলিকে অপদস্ত করতে । আর ঝুঁকি না নিয়ে কাকাকে আবার ফোন ।
“হ্যালো !” কাকা ফোন তুলেই হ্যালো সম্বোধন করে পুনরায় উত্তর পাওয়ার আশায় রইলো ।
“হ্যালো কাকা ! দরজায় অচেনা কেউ এসে কড়া নাড়ছে !” কুহেলি কাকাকে বলল ।
কাকা শোনামাত্র বলল, “আমি এক্ষুণি আসছি, মা ।“
কানাই কাকার হাঁটার শব্দ পেয়ে কিরণ সেখান থেকে চম্পট !
কাকা এসে কাউকে দেখতে না পেয়ে কুহেলিকে বলল, “কেউ এখানে নেই । তুই বরং খেয়ে শুয়ে পড় মা ।“
কাকা চলে যাওয়ার পর কুহেলি আবার বিছানায় গা এলিয়ে দিলো । কুহেলির বদ্ধ ধারণা, কিরণ দরজায় কড়া নাড়ছিল । রাগে সে জ্বলছিল । কিন্তু তার পক্ষে সেই সময় কিচ্ছু করার নেই । ছেলে হলে ঘর থেকে বেরিয়ে কিরণের কলার ধরে অন্তত শাসানো যেতো । অথচ সেটাও তার পক্ষে সম্ভব হলো না । তাই চুপচাপ খানিকক্ষণ বিছানায় শুয়ে থাকার পর হঠাৎ কুহেলির মনে পড়লো অঙ্কের কথা । ঝটাপট বিছানা থেকে উঠে লাইট জ্বালিয়ে অঙ্ক কষতে শুরু করলো । তারপর অনেক সময় বাদে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত্রি ১টা । তখন কুহেলির ঘুমও পাচ্ছে । লাইট নিভিয়ে ঘুমিয়ে গেলো ।
সকালে উঠতে দেরী । সকালে উঠেই খাবারের চিন্তা ! ঘরে জমানো পয়সা প্রায় শেষ । কুহেলি কোনোরকমে পরীক্ষা পর্যন্ত জমানো পয়সায় চালাতে চায় । তাই ডাল ও ডিমের ওমলেট্‌ হচ্ছে তার দুপুরের খাবার । রান্নাটুকু বাদ দিয়ে বাকী সময় তার পড়াশুনা । পড়াশুনায় তার ঢিলেমি নেই । পড়ায় ভীষণ মনোযোগী । তার মাথায় সর্বদা ঘুরপাক খাচ্ছে নিজের পায়ে দাঁড়াবার কথা । প্রথমে লক্ষ্য গ্রাজুয়েট । তারপর সর্বভারতীয় পরীক্ষায় বসা । গ্রাজুয়েট ডিগ্রি থাকলে দেশের সমস্ত পরীক্ষায় বসার ছাড়পত্র মিলবে । তাই তার আপাতত স্নাতক ডিগ্রি টার্গেট ।
দেখতে দেখতে বুধবার আগত । নিজের স্কুলেই পরীক্ষার সিট্‌ । দুপুর বারোটা থেকে পরীক্ষা শুরু । সকালবেলায় চাষের জমিতে যাওয়ার আগে কানাই কাকা কুহেলির সঙ্গে দেখা এবং আশীর্বাদ করে গেছে । সকালবেলায় আগেভাগে সেদ্ধ-ভাত নামিয়ে রেখেছে । যাতে যাওয়ার সময় কোনোরকম দেরী না হয় । ৯টার মধ্যে স্নান শেষ । খাওয়া সেরে ঠিক সকাল ১০টায় বাড়ি থেকে পরীক্ষার উদ্দেশে রওনা দিলো । বের হবার আগে পরীক্ষায় বসার এ্যাডমিট কার্ড ও আনুসঙ্গিক জিনিসপত্র যেমন কলম, ইত্যাদি ঝালিয়ে নিলো । সব ঠিক মতো বুঝে নিয়ে বাড়ি থেকে পরীক্ষার উদ্দেশে রওনা দিলো ।
পরীক্ষা ভাল দিচ্ছে কুহেলি ।
শেষদিনে অঙ্ক পরীক্ষা । বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় ঠাকুরকে প্রণাম করলো কুহেলি । ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা জানালো, অঙ্ক পরীক্ষা যেনো ভাল হয় । পরীক্ষার হলে বসে অঙ্কের প্রশ্নপত্র দেখে কুহেলি অবাক ! বরং বলা ভাল খুব খুশী । প্রশ্নের অঙ্কগুলি খুব সহজ । তাই নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই তার অঙ্ক প্রশ্নের উত্তর শেষ । বাকীটা সময় সিটে বসে অঙ্কগুলি পুনরায় ঝালাই করে নিলো, কোথাও ভুল হয়েছে কিনা ? ভাল করে দেখার পর কুহেলি নিশ্চিত, অঙ্কে ১০০এর মধ্যে ১০০ পাচ্ছে । সুতরাং অঙ্ক পরীক্ষা দিয়ে কুহেলি খুব খুশী ।
পরীক্ষা শেষ । কুহেলির মাথা থেকে পরীক্ষার টেনশন আউট্‌ । এখন সে ফ্রী । এখন তার মানসিক চাপমুক্ত জীবন !
রান্না করতে গিয়ে মাথায় হাত ! এক ফোঁটা সরষের তৈল নেই । তা ছাড়া চাল, ডাল, কাঁচা আনাচ-পাতি সব কিছুই বাড়ন্ত । অথচ ভাণ্ডারে একটা পয়সা নেই । চিন্তায় কুহেলি বেসামাল । এখন কী করবে ? মাঠের জমি শেষ । বাবা সেগুলি বিক্রি করে নতুন সংসার পেতেছে । সুতরাং চাষের জমি থেকে আয় আসার পথ বন্ধ । কাকীমার উপদ্রবে ভাইঝির প্রয়োজনে কানাই কাকা কাজে লাগতে পারছে না । সেটা কাকার চালচলনে প্রস্ফুটিত । পয়সা উপায়ের ব্যবস্থা কীহবে, কুহেলির মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না । এতদিন ইচ্ছা করে কুহেলি শীতলের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখেনি । তার ঘন ঘন ফোনে পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হতে পারে, এইসব কথা ভেবে শীতলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেনি । পয়সা উপার্জনের ব্যাপারে কুহেলি কিছুতেই শীতলের সঙ্গে পরামর্শ করতে নারাজ । শীতল শুনলে কুহেলির উপার্জনের ভাবনার জলাঞ্জলি ঘটবে । শীতল কিছুতেই পয়সা উপার্জনের জন্য কুহেলিকে কাজ করতে দেবে না । তার চেয়ে তাকে না জানানোই ভাল । কুহেলিকে একা সিদ্ধান্ত নিতে হবে । শলা-পরামর্শ করার কেউ নেই । কানাই কাকাও কুহেলির উপায়ের পথ খোঁজার সঙ্গে একমত হবে না । কানাই কাকা কিছুতেই কুহেলিকে এই অল্প বয়সে উপার্জনের দিকে ঠেলে দিতে চাইবে না । কাকা যদিও আগে বলে রেখেছে, পরীক্ষার পর মামা বাড়িতে গিয়ে থাকতে ।
মামা বাড়িতে থাকতে কুহেলি ঘোর বিরোধী । সে এখন যথেষ্ট বড় । বাঁচার জন্য একটা কিছু করে খাওয়ার ক্ষেত্রে কুহেলি যথেষ্ট স্বাবলম্বী । সুতরাং এইসব ছোটখাট সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কুহেলি একাই একশ ! পান্তা মাসিকে নিজের চোখে দেখেছে কায়িক পরিশ্রম করে বাঁচতে । পান্তা মাসিও একজন মহিলা । কুহেলি ভাবলো, সে শারীরিকভাবে শক্ত । যে কোনো কাজ করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট দক্ষ । যদিও প্রয়োজনীয় কাজ করার ক্ষেত্রে তার অনীহা নৈব নৈব চ । বাঁচার ক্ষেত্রে যে কোনো ছোটখাট কাজও সম্মানের । অনেক ভেবে দেখলো, কাঞ্চন নগরে থাকলে পরের বাড়ি থালা-বাসন মেজে উপার্জন করা ছাড়া অন্য কোনো সম্মানজনক উপায়ের পথ খোলা নেই । তার মাথায় কয়েকটা দোকান খোলার কথা ঘুরপাক খাচ্ছে । যেমন চায়ের দোকান, ফুচকার দোকান, জামা-কাপড় আইরণ করার দোকান, টেলারিং দোকান, রুটি তরকারির দোকান, ইত্যাদি । পকেটে পূঁজি নেই । ব্যবসা খুলতে পুঁজি লাগে । সুতরাং স্বল্প পুঁজিতে চায়ের দোকান খোলা যেতে পারে । ফুচকা বানাতে অল্প পুঁজি লাগে । আইরণের দোকানে নামমাত্র পুঁজি । এইসব ভাবতে ভাবতে সকালবেলাটা কেটে গেলো ।
বাজারে ছুটলো । পাঁচশ গ্রাম চাল, দুটো কাঁচকলা, অল্প পরিমাণে আলু, পিঁয়াজ, আদা, রসুন, একটা বেগুন, কয়েকটা পটল, ইত্যাদি সবজি কিনে বাড়ির দিকে যাত্রা শুরু । বাড়িতে এসে দেখলো, তনামিকা উঠোনের পাশে কাঠাল গাছের নীচে দাঁড়িয়ে । তনামিকা পাশের গ্রামে থাকে । ওরা একসঙ্গে পড়ে । ওর বাবা স্কুল শিক্ষক । গাঁয়ে ওদের আর্থিক অবস্থা, স্বচ্ছল । তনামিকা কুহেলির ভাল বন্ধু । একসঙ্গে পড়ার সুবাদে দুইজনের সম্পর্ক খুব কাছের । তাই তনামিকাকে দেখা মাত্র কুহেলি এক গাল হাসি দিয়ে বলল, “কতক্ষণ ?”
“কিছুক্ষণ ! তুই অযথা টেনশন করিস না । তোর সঙ্গে দরকারি কথা আছে । সেটা বলতেই তড়িঘড়ি আসা ।
এবার তোর দরকারি কথাটা শোনা যাক ।
তুই একটা কাজের খোঁজ নিতে বলেছিলি ?
পেয়েছিস কী ?
পেয়েছি, তবে পরের মাস থেকে কাজে যোগ দিতে বলেছে ।
কাজটা কী ? সেটা আগে জানা দরকার ।
একটা কাপড়ের দোকানে ।
দোকানটি কোথায় ?
কাপড়ের দোকানটি সালারে । সকালে ৯টার সময় দোকানে পৌঁছাতে হবে, আর ছুটি সন্ধ্যা ৭টায় । সারাদিনের কাজ ।
মাসিক বেতন কতো ?
মাসিক বেতন ৮হাজার টাকা ।
এবার কুহেলি থামলো । তারপর তনামিকার দিকে তাকিয়ে বলল, “সারাদিন কাজ করলে আমি পড়বো কখন ?”
বাড়ি ফিরে রাত্রিতে পড়বি ।
তোর কী মাথা খারাপ ! কাজটা জোগাড় করেছিস, এইজন্য আমি তোর কাছে কৃতজ্ঞ ! কিন্তু তুই তো জানিস, এরপর আমাকে কলেজে ভর্তি হতে হবে । সারাদিন দোকানে বসে থাকলে কলেজ কখন করবো, আর পড়বো কখন ? আর তা ছাড়া, সন্ধ্যা ৭টার পর দোকান থেকে ছাড়া পেলে আমার বাড়ি ফিরতে অনেক রাত্রি হবে । সালার থেকে বাসে ভরতপুর । তারপর সেখান থেকে সাইকেলে কাঞ্চন নগর । রাত্রিতে রাস্তায় অনেক রকমের উপদ্রব । বিশেষ করে একদল কুমতলবি ছোকরার দলের উৎপাত । তখন আমার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ?
তনামিকার কথা বন্ধ হয়ে গেলো । তখন কুহেলিকে বলতে বাধ্য হলো, “তুই বরং অন্য কোথাও কাজের চেষ্টা কর । সেটাই বরং ভাল ।“
বেজার মুখে তনামিকা চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত !
তনামিকার উঠে যাওয়া দেখে কুহেলি বলল, “উঠলে হবে না । এক কাপ চা খেয়ে যেতে হবে । চা বানাতে আমার সময় লাগবে না ।“
মাটির ভাঁড়ে চায়ে চুমুক দিয়ে তনামিকা হেসে হেসে বলল, “একটা পরামর্শ দেবো ?”
অবশ্যই !
তুই বরং চায়ের দোকান খোল্‌ । তোর হাতের চা খুব সুন্দর । তারপর ডান হাতের মাটির ভাঁড় তুলে ধরে বলল, এই রকম সুস্বাদু চা বানালে তোর চায়ের দোকান খুব ভাল চলবে ।“
এটা ভাল প্রস্তাব । চায়ের দোকান খোলা নিয়েও ভাবছি । তবে সিদ্ধান্ত নিইনি ।
তারপর তনামিকা তার বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিলো ।
দুপুরের রান্না শেষে স্নান সেরে খেয়ে নিলো কুহেলি ।
———–০———–
( চলবে )

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *