ঘুরতে কে না ভালোবাসে। বিশেষ করে বাঙালিরা সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ে ভ্রমনের নেশায়। কেউ পাহাড়, কেউ সমুদ্র আবার কেউ প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থান ভালোবাসে ভ্রমণ করতে। প্রকৃতি কত কিছুই না আমাদের জন্য সাজিয়ে রেখেছে। কতটুকুই বা আমরা দেখেছি। এ বিশাল পৃথিবীতে আমরা অনেক কিছুই দেখিনি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার দুনিয়ায় আজ গোটা পৃথিবীটা হাতের মুঠোয়় এলেও প্রকৃতিকে চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করা এ এক আলাদা রোমাঞ্চ, আলাদা অনুভূতি যার রেষ হৃদয়ের মনিকোঠায় থেকে যায় চিরকাল।। তাইতো আজও মানুষ বেরিয়ে পড়়ে প্রকৃতির কে গায়ে মেখে রোমাঞ্চিত হওয়ার নেশায়। কেউ চায় বিদেশে ভ্রমণে, আবার কেউ চায় দেশের বিভিন্ন স্থান ভ্রমণে। এমনি এক ভ্রমণ এর জায়গা হলো পুরীর পঞ্চতীর্থ ।
পঞ্চতীর্থ বলতে ভারতের পুরী শহরে অবস্থিত পাঁচটি জলাধারকে বোঝায়। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, পুরীতে তীর্থযাত্রা সম্পূর্ণ করতে হলে এই পাঁচটি জলাধারে স্নান করতে হয়।
এই পাঁচটি জলাধার হল:—
ইন্দ্রদ্যুম্ন কুণ্ড: প্রাচীন ভারতের মালবদেশের অবন্তী অঞ্চলের রাজার নামও পান্ড্য রাজার মতো একই সূর্যবংশের বংশধর রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন। ইনি পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার মূর্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কিংবদন্তি হয়ে আছেন এবং যাহা স্কন্দ পুরাণে পুরুষোত্তম-ক্ষেত্র – মাহাত্ম্য বিভাগে বিশেষভাবে বর্ণিত আছে। গুণ্ডিচা মন্দিরের কাছে অবস্থিত। মহাভারতে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের অশ্বমেধ যজ্ঞ ও জগন্নাথ সংস্কৃতির চার প্রধান দেবতার আবির্ভাব বর্ণিত হয়েছে। এই মহাকাব্যে আছে, কীভাবে সহস্রাধিক গরুর ক্ষুরের চাপে পবিত্র ইন্দ্রদ্যুম্ন জলাধার নির্মিত হয়েছিল। রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন এই জলাধার ব্রাহ্মণদের দান করেছিলেন। ভারতীয় মহাকাব্য মহাভারত এবং পুরাণে বর্ণিত পান্ড্য রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন সূর্যবংশের রাজা সুমতির পুত্র এবং ভরতের পৌত্র। বিষ্ণু ভক্ত এই রাজা গজেন্দ্র স্তূতি অর্থাৎ বিষ্ণু সহস্রনামে গজেন্দ্রমোক্ষে ভগবান বিষ্ণুর দ্বারা গজেন্দ্র জন্ম ও মৃত্যুর চক্র থেকে মোক্ষ বা মুক্তি লাভ করেন।
রোহিণী কুণ্ড : রোহিণী কুণ্ড হল বিমলা মন্দিরের কাছে জগন্নাথ মন্দির প্রাঙ্গনের ভিতরে অবস্থিত একটি পবিত্র কূপ। রোহিণী কুণ্ডকে নারায়ণের আবাস বলে মনে করা হয়। এখানে অবস্থিত অক্ষয় কল্পবত নামক পবিত্র বটবৃক্ষটিরও পূজা করা হয়। পুরাণ অনুসারে, শিকারী জরা সাভার ঘটনাক্রমে কৃষ্ণকে হত্যা করে তাকে দাহ করেন। কৃষ্ণ জারার স্বপ্নে আবির্ভূত হন এবং তাকে বলেছিলেন যে তার দেহাবশেষ একটি লগে রূপান্তরিত হবে যা সমুদ্র থেকে রোহিণী কুণ্ডে ভেসে যাবে। ইন্দ্রদ্যুম্ন জরার সাহায্যে সেই পবিত্র লগিটি খুঁজে পান যেখান থেকে জগন্নাথের মূর্তি খোদাই করা হয়েছিল।
মার্কণ্ডেয় কুণ্ড : হল পুরীর তীর্থ পরিক্রমার প্রথম স্থান। জলাধারটির আয়তন ৪ একর। এর পাশে মার্কণ্ডেয়েশ্বরের মন্দির আছে।
শ্বেতগঙ্গা কুণ্ড : নীলাচলের দক্ষিণে অবস্থিত। এই কুণ্ডের পাশে বিষ্ণুর মৎস্য অবতার ও রাজা শ্বেতের মন্দির আছে।
স্বর্গোদ্বার অঞ্চলের সমুদ্রকে “মহোদধি” বলা হয়। এটি একটি স্নানক্ষেত্র। মহোদধি নামেও সমুদ্রকে স্বর্গদ্বারা এলাকায় একটি পবিত্র স্নানের স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সমুদ্র আরতি হল একটি দৈনিক ঐতিহ্য যা বর্তমান শঙ্করাচার্য ৯বছর আগে শুরু করেছিলেন। প্রতিদিনের অনুশীলনের মধ্যে রয়েছে মঠের শিষ্যদের দ্বারা পুরীর স্বর্গদ্বারে সমুদ্রে প্রার্থনা এবং অগ্নি নিবেদন প্রতি বছরের পৌষ পূর্ণিমায়।
অন্য সংস্করণ অনুসারে পুরীর ৫টি তীর্থ হল ৫টি গুরুত্বপূর্ণ স্থান যা পুরীতে আসা সমস্ত তীর্থযাত্রীদের অবশ্যই যেতে হবে:
(ক) বলরাম
(খ) অক্ষয় ভাতা
(গ) মার্কন্ডেয় ট্যাঙ্ক
(ঘ) ইন্দ্রদ্যুম্ন ট্যাঙ্ক
(ঙ) সমুদ্র
।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া।।