ওঁ নমঃ শ্রী ভগবতে প্রণবায় ….।
***আমাদের সুন্দর ভারতীয় সমাজে অনন্তকাল ধরে ঋষি, মুনি, সাধু, সন্ন্যাসী, প্রাচীনকালে হইতে অনেক বিখ্যাত দার্শনিক, অনেক বিখ্যাত বিজ্ঞানী, অনেক বিখ্যাত মহাপুরুষ, সাধুমহাত্মা, মহামানব, অনেক বিখ্যাত মানুষ,সময়ে সময়ে নিজেদের প্রভাব, মহিমা, জ্ঞানের, তপস্যার, আবিস্কারের অবদান রেখে গেছেন এই পৃথিবীতে মানব সমাজের জন্য, আমাদের জন্য। যেমন, উদাহরণ স্বরূপ সুদুর অতীতে রাজা রামমোহন রায়, পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, স্বামী বিবেকানন্দ, স্বামী প্রণবানন্দ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা আরো অনেক মহামানব।বিনিময়ে তাদের কেউ কি তপস্যার মূল্য, সাধনার মূল্য, কঠোর পরিশ্রমের মূল্য চেয়েছেন? না পেয়েছেন? না আমরা কিছু দিয়েছি কোনোদিন?না দিতে পারবো?
সৌন্দর্যময় আমাদের এই পৃথিবী সকল নৈসর্গিক উপাদানে সমৃদ্ধ। এই মনোরম , অনুপম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনন্তকাল ধরে আমাদের চিত্তে আনন্দের অমৃতধারা জাগিয়ে তুলছে। এরই বহিঃপ্রকাশ আমাদের নানা অনুভবে ও অনুভূতিতে। দিনে দিনে কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়েই শিক্ষা স্বাস্থ্য ও আবাসন গড়ে উন্নত হওয়ার পথে আমাদের সমাজ ও আধুনিক সভ্যতা। যে অরণ্যঘেরা পৃথিবীতে তিলে তিলে মানুষ গড়ে তুলেছে আধুনিক সভ্যতা। আবার আধুনিক সভ্যতা মানুষের ক্রোধেই দাবানলের মতো জ্বলে পুড়ে সভ্যতার বিনাশ হওয়ার পথে আজ আমাদের সুন্দর সমাজ।
আমরা মানুষ যদি মেঘের দিকে তাকায়, নদীর দিকে তাকায়, দেখি? মেঘ সারা পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ায় জল-বৃষ্টি দেয়।নদী গুলি বিশাল জমিতে সেচ দেয়, জল দেয় এবং সমস্ত বিশ্বের পানীয় জল,সবুজ, ফসল উপহার দেয়। উদ্ভিদ,গাছ, বন,অকৃপণ ভাবে আমাদের অক্সিজেন, ছায়া, আশ্রয়,সবুজ ফসল, সবজি, ফুল, ফল, ইত্যাদি উপহার দেয়, আমরা মানুষ সেখানে বাস করি বহু বছর ধরে এবং গাছ কাটি, আমরা নদীকে দূষিত করি, জমিকে দূষিত করি, উদ্ভিদকে, নদীকে মেঘকে এর ক্ষতি পূরণ কে দিয়েছে ? নদীকে মেঘকে উদ্ভিদকে তাদের কঠোর পরিশ্রমের মূল্য কে দি? আমরা মানুষ সামান্য কারও উপকার করে বলি—“অনেক করেছি,কিন্তু বিনিময়ে কি পেলাম?”
তাই, কেউ আপনাকে খারাপ বললেও আপনি মন খারাপ করবেন না, অভিশাপ দিলেও ভয় করবেন না,কিন্তু ,আপনি শত্রু মিত্র সবার জন্য ঈশ্বরের কাছে মঙ্গল কামনা করবেন। তাই, আমাদের জীবনে পড়ে গেলে ক্ষতি নেই। কিন্তু পড়ে গিয়ে আবার জীবনে উঠে দাঁড়ানো, ঘুরে দাঁড়ানোই জীবন। হার মানা চলবেনা।আমাদের প্রত্যেকের সর্ব্বদা স্মরণ রাখা প্রয়োজন, আমাদের কথা ও ব্যবহার মিত্রকে শত্রু ও আপনকে পর করে, আবার কথা ও ব্যবহারই শত্রুকে মিত্র, পরকে আপন করে। নীরবতা এবং হাসি দুটোই জীবনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়। হাসি যেমন সমস্যা মেটাতে সাহায্য করে, নীরবতা সেই সমস্যাগুলিকে এড়িয়ে চলতে শেখায়।আবার,রেগে গিয়ে চিৎকার করে কথা বলা মানুষের মন সরল হয়, কিন্ত যারা রেগে গেলে ও হাসি হাসি মুখে চলাফেরা করে তারা শয়তানের থেকেও ভয়ংকর হয়।
কারণ,*মানুষের জীবনী একধরনের সাহিত্য যা কোন মানুষের জীবনের উপর লেখা হয়। জীবনী কখনও কাল্পনিক হয় না। দোষ-গুন,ভালো-খারাপ মানুষের সব দিয়েই জীবনী হয়।প্রতিদান, বিনিময়ে দিয়ে নয়।*
তাই, পৃথিবীতে সবথেকে কঠিন কাজ মানুষকে খুশি রাখতে পারা, কারণ, মানুষের সামান্য একটু স্বার্থে আঘাত লাগলেই, পূর্বের সব উপকারের কথা মানুষ ভুলে যায়।এই সুন্দর প্রকৃতি ও মানুষকে খুশি রাখতে পারে নি? আমরা মানুষ ভয়ংকর স্বার্থপর। কোন কোন সময় খুব ভয় পেলে একা ঘরে আছেন ভাববেন না, তখন ভেবে নেবেন আপনার পাশে সবসময় দুই জন থাকেন ভগবান আর শয়তান , আপনি যাকে বেশি পছন্দ করবেন সেই আপনার পাশে থাকবে, আপনার ভালোবাসার উপর নির্ভর করবে সেটা কে? ভগবান না শয়তান আপনার পাশে আছেন।সেটা, আপনার অনুভবের, ভাবনার, ভালোবাসার উপর নির্ভর করবে। দান প্রতিদান এর উপর নয়।
আমরা এই সুন্দর পৃথিবীতে কতটুকু বাঁচবো আর কতদিনই বা বাঁচবো ? টিক টিক করে করে সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা দিন,রাত কিন্তু চলে যাচ্ছে! মৃত্যু খুব সন্তর্পণে এগিয়ে আসছে! এতো অল্প দিনের জীবনে হিংসা, বিদ্বেষ, রাগ, অভিমান, উষ্কানী মূলক কাজ-কর্ম, সম্পত্তি নিয়ে রেষারেষি, ঘৃণা, কষ্ট, মন খারাপ,এই সব ব্যাপার স্যাপার গুলোতে দয়া করে কেউ সময় নষ্ট করবেন না। ভালো বই পড়ুন, রাত জেগে আকাশ দেখুন, ভোরের সূর্যোদয় দেখুন, নদীর ঢেউ অনুভব করুন, প্রতিদিন নিয়ম করে অন্তত একজন মানুষকে ভালো থাকার জন্য সাহায্য করুন, সন্ধ্যায় পাখিরা কিভাবে ঘরে ফেরে দেখুন, পৃথিবী কতো সুন্দর সেটা অনুভব করুন, নি:শ্বাস কতোটা সুন্দর সেটা অনুভব করুন, ভগবান, স্রষ্টাকে স্মরণ করুন। কোনও প্রতিদান, বিনিময়, চাওয়া পাওয়ার প্রয়োজন হবে না।
কারণ,*অন্যায় করলে আমাদের শাস্তি হবেই,পাপ বাপকে ও ছাড়েনা, এই জন্মের পাপ এই জন্মেই ভোগ করে যেতে হবে, সে আপনি যত বড়োই হওন না কেনো ।* তাই ,*মনের গোপনে একটি সুন্দর সুরভিত ফুল রেখো মনে মনে, দলে দলে আসবে প্রজাপতি মনের বাগানে, দেখো মনটি মুহূর্তে পরিণত হবে সুরভিত ফুলের বাগানে।* তাই, বিনিময়, প্রতিদান, চাওয়া পাওয়ার বাসনা থেকে যে মানুষ নিজেকে দুরে রাখতে পারবেন, মনে রাখবেন, সুন্দর মূল্যবান মনুষ্য জীবনে এই পৃথিবীতে তিনি আসল শান্তি-সুখের জগতে প্রবেশ এর পথ খুঁজে পেলেন।
জগৎগুরু ভগবান স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজের শুভ ও মঙ্গলময় আশির্বাদ সকলের শিরে বর্ষিত হোক! এই প্রার্থনা করি…***
ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্ ….!
স্বামী আত্মভোলানন্দ