Categories
প্রবন্ধ

মূল্যবান মনুষ্য জীবন ও তার সদ্‌ব্যবহার : স্বামী আত্মভোলানন্দ।

ওঁ নমঃ শ্রী ভগবতে প্রণবায় ।

***আমাদের সুন্দর এই মনুষ্য জীবন সৃষ্টির আদিতে ভগবান ব্রহ্মার দ্বারা  সৃষ্টি মোট চুরাশি লক্ষ প্রকার যোনি ভ্রমণ  করে জীব যোনি  থেকে উদ্ধার পেয়ে সুদুর্লভ মনুষ্য (যোনি) জীবন লাভ হয়। তাই পৃথিবীতে এই সুন্দর জীবনকে উপভোগ করুন। আমাদের জীবনে চলার পথে অনেক ধরনের মানুষের সংস্পর্শে আসা হয়, কেও কেও আপনার  সুখ্যাতি করবে আবার কেও কেও আপনাকে  কটু কথা শোনাবে বা ধিক্কার দেবে। মনে রাখবেন দুজনই  আপনার  প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে উপকার করে। সুখ্যাতি শুনলে, মনে উৎসাহ ও উদ্দীপনা বারে আরও ভালো করার, আর ধিক্কার শুনলে নিজের ভুলকে শোধরানোর সুযোগ এনে দেয়। তাই সব কিছু আনন্দের সাথে গ্রহণ করা উচিৎ।এমন কোন মানুষ নেই, যার মধ্যে কোন ভালো গুন নেই।আর ভালো মানুষগণ সবসময় সবার ভিতরে থাকা ভালো গুন গুলো দর্শন করেন। তাই সবসময়, নিজেকে নিয়েই ভাবা উচিত, নিজের ভুলগুলো বের করা উচিত,তবেই আমরা জীবনে উন্নতি করতে পারবো l

আমাদের মনুষ্য জীবন বেশ মজার, আপনি পৃথিবীতে সাথে কিছুই নিয়ে আসেন নি ,তারপর আপনি সবকিছুর জন্য  সারাজীবন লড়াই করেন এবং পরে সবকিছু ছেড়ে যান এবং কিছুই  সাথে নিয়ে যান না l আমাদের মনে রাখা উচিত জীবনে সুখ্যাতি, অর্থবল, পদমর্যাদা ও ক্ষমতা এই চারটি জিনিস মানুষের চিরস্থায়ী থাকে না আজকে যা আপনার কালকে  তা কিন্তু অন্য কারো হবে।কারণ,সৎ ও সুন্দর  মানুষের জীবনে ধন-সম্পত্তি-পদমর্যাদা নয়,  সবথেকে প্রয়োজনীয় জিনিস হলো নিরোগ দেহ, পরিতৃপ্ত মন, সততা ও মানসিক প্রশান্তি পূর্ণ জীবন, এইগুলো আবার একে অপরের পরিপূরক।জীবনে ভালো হওয়ার চেষ্টা করুন। আমি ভালো তা প্রমান করার কোন দরকার নেই ।আমাদের চিন্তাধারার কোন সীমা নেই, সর্বদা ভাল চিন্তা করুন, ভাল কাজ করুন , ভাল কথা বলুন , অপরকে ভালোবাসা দিন, তারপর ভাল হন।

আমাদের জীবনে সন্তুষ্ট থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। জীবন  যারা এটাকে উপভোগ করছেন তাদের জন্য জীবন শ্রেষ্ঠ। জীবন  যারা এটিকে বিশ্লেষণ করছেন তাদের জন্য জীবন কঠিন l জীবন যারা এর সমালোচনা করছেন তাদের জন্য জীবন সবচেয়ে খারাপ। আপনি আপনার নিজের জীবনকে নিজে সংজ্ঞায়িত করুন। অন্য লোকেদের আপনার জীবনের স্ক্রিপ্ট লিখতে দেবেন না।আমাদের এই পৃথিবীতে তর্ক করে জয়ী হবার চেয়ে, চুপ থেকে হেরে যাওয়াই ভালো। কারন বুদ্ধিমানেরা পরাজয় ভয় করে না, বরং উপভোগ করে মুর্খদের উল্লাস। আর  যে মানুষ সব হারিয়েও শান্ত আর একাগ্র থাকে সেই জীবন সংগ্রামে  জয়ী হয়।

জগতের সবকিছুই সুন্দর লাগে, যদি সুন্দরতা দেখার জন্য আমাদের একজোড়া সুন্দর চোখ থাকে। মনে খুশি খুশি ভাব থাকে। প্রতিটা দিন সুন্দর মনে হয়।  আপনি  ও সুন্দর, আমি ও সুন্দর , ফুলও সুন্দর, ফলও সুন্দর, বিষও সুন্দর, অমৃতও সুন্দর। জগতের সবকিছুই সুন্দর মনে হয়।  জীবনে এইগুলি হলো সুস্বাস্থ্য , দীর্ঘায়ু ও ভালো থাকার রহস্য। সর্বদা সত্য কথা বলুন ,কারণ, সত্য একটি অস্ত্রোপচারের মত, সামান্য ব্যথা দেয়, কিন্তু স্বস্তি দেয়, আর মিথ্যা হল একটি ব্যথানাশক, যা আপনাকে স্বল্পমেয়াদী স্বস্তি দেয় কিন্তু সারা জীবনের জন্য আপনাকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেয়।

যদি মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধক্ষেত্রএর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করি। কর্ণের রথের চাকা মাটিতে বসে গেলে তিনি তা মাটি থেকে তোলার জন্যে রথ থেকে নিচে নামেন। এসময় তিনি নিরস্ত্র ছিলেন। ভগবান শ্রী কৃষ্ণ তৎক্ষণাৎ অর্জুন কে, কর্ণের উপর বান মেরে হত্যা করার নির্দেশ দেন। অর্জুনও ভগবানের কথা মতো কর্ণকে লক্ষ্য করে একের পর এক বান নিক্ষেপ করে। যা কর্ণ কে ভয়ংকর ভাবে বিদ্ধ করে। এতে কর্ণ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। মাটিতে লুটিয়ে পড়া কর্ণ ভগবান শ্রী কৃষ্ণ কে প্রশ্ন করেন, এই তুমি ভগবান?  এই তুমি করুনাময়?  এই তোমার ন্যায্য বিচার ! যে একজন নিরস্ত্র কে হত্যা করার পরামর্শ দাও ? ভগবান শ্রী কৃষ্ণ স্মিত হেসে জবাব দেন, “চক্রব্যূহে অর্জুন পুত্র অভিমুন্যও নিরস্ত্র হয়ে গেছিলো, যখন সকলে মিলে তাঁকে নৃশংস ভাবে হত্যা করেছিলে, তাঁর মধ্যে তুমিও ছিলে। তখন তোমার এই ধর্মজ্ঞান কোথায় ছিলো কর্ণ ? এ জগতে যে যেরূপ কর্ম করবে আমিও তাঁকে সেইরূপ কর্মফলই প্রদান করি। ইহাই আমার বিচার।”

অতএব, আমাদের এই সুন্দর মনুষ্য জীবনে চলার পথে কর্ম করুন ভেবেচিন্তে। আপনি আজ কাউকে কষ্ট দিলে, যন্ত্রনা দিলে, অবজ্ঞা করলে, কারো দুর্বলতার সুযোগ নিলে আগামীতে আপনার জন্যেও সেই একই কর্মফল অপেক্ষা করে থাকবে এবং স্বয়ং তিনিই (ভগবান) আপনাকে তা প্রদান করবেন।পরিশেষএ জগৎগুরু ভগবান স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজের শুভ ও মঙ্গলময় আশির্বাদ সকলের শিরে বর্ষিত হোক,এই প্রার্থনা করি…***
সর্বে ভবন্তু সুখিনঃ সর্বে সন্তু নিরাময়াঃ।।
ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্ ….!

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *