ওঁ নমঃ শ্রী ভগবতে প্রণবায় ….।
***আমাদের জীবনে আমরা যদি *আনন্দকে* ভাগ করি দুটি জিনিস পাব একটি হচ্ছে *জ্ঞান* এবং অপরটি হচ্ছে *প্রেম* – একথা বলছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। জীবনে নিজের সৎ থাকার মতন মানসিক শান্তি ও আনন্দ আর কোনো কিছুতেই নেই। এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে কাকে যে কখন কি অবস্থায় চলে যেতে হবে তা আমরা কেউই জানি না। আমরা জানি মৃত্যু খুবই বেদনাদায়ক। শুধু মাত্র তিনি ছাড়া আর কেউ জানেন না আর কতো ঘণ্টা, কতো মিনিট আর কতো সেকেন্ড আমার,আপনার হাতে আছে এই সুন্দর পৃথিবীতে। জীবনের চরম সত্য এই “মৃত্যু”। তাই আসুন্ আমরা প্রত্যহ সাবলীল ভাবে জীবনকে উপভোগ করি। রাগ, অহংকার, লোভ, মিথ্যা, হিংসা ইত্যাদি ত্যাগ করি। আমার, আপনার জ্ঞানী হওয়া অর্থহীন হবে, যদি আমার, আপনার বন্ধু ও সহকর্মীরা মূর্খ হয়। আপনার চারপাশে যদি মূর্খ এবং বাস্তববোধ বুদ্ধিহীন মানুষ থেকে থাকে তাহলে আপনার যে কোন কাজে আপনি হাততালি কুড়বেন ঠিকই। কিন্তু, দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে এই আনন্দ, হাততালি আপনার কোন কাজে লাগবে না । তাই, আনন্দ সম্পর্কে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলছেন:-
*** মৃত্যু কহে পুত্র নিব চোর কহে ধন
ভাগ্য কহে সব নিব যা তোর আপন।
নিন্দুক কহিল লব তব যশোভার
কবি কহে কে লইবে আনন্দ আমার।***
জীবনে যে নিজের কর্তব্য কর্ম করে তার অনেক দোষ, এটা ভুল সেটা ভুল, এটা করেনা সেটা করেনা।যে কোনো কর্তব্য কর্ম কিছু করেই না, তার একটাই দোষ ও পারেনা বা ও ঐরকমি। জীবনে যদি উড়তে না পারেন তবে দৌড়ান। যদি দৌড়াতে না পারেন তবে হাঁটুন। হাঁটতে না পারলে হামাগুড়ি দিন। যে অবস্থাতেই থাকুন সামনে চলা বন্ধ করবেন না। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত কর্তব্য কর্ম করে যান,তারই নাম জীবন। জীবনের রাস্তায় পারাপার করার সময় অবহেলা করবেন না। যেমন গাড়ি চালানোর সময়, যেমন রাস্তা ও রেলপথ অতিক্রম করার সময়, আমাদের সতর্ক হতে হয় জীবনের পথ অতিক্রম করার সময় সেই রকম সতর্ক থাকুন। আপনার নিজের, পরিবারের আপনাকে প্রয়োজন, সমাজের আপনাকে প্রয়োজন, জীবনের চলার পথে যারা নিজেদের সাহায্য করে ঈশ্বর তাদের সাহায্য করেন। জীবনে থামার নামই মৃত্যু, চলার নামই জীবন। জীবনে এটা সত্যিই, চরম সত্য। আপনি যদি স্বয়ং নিজে আপনার স্বপ্ন এবং আপনার পরিস্থিতি দ্বারা অনুপ্রাণিত হতে না পারেন, তবে কেউ আপনাকে অনুপ্রাণিত করতে পারবে না। তাই, নিজের জীবনের আনন্দকে উপভোগ করুন। অসামান্য কথাশিল্পী, ঔপন্যাসিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন:-
*মানুষ কি চায় — উন্নতি, না আনন্দ? উন্নতি করিয়া কি হইবে যদি তাহাতে আনন্দ না থাকে? আমি এমন কত লোকের কথা জানি, যাহারা জীবনে উন্নতি করিয়াছে বটে, কিন্তু আনন্দকে হারাইয়াছে। অতিরিক্ত ভোগে মনোবৃত্তির ধার ক্ষইয়া ভোঁতা — এখন আর কিছুতেই তেমন আনন্দ পায় না, জীবন তাহাদের নিকট একঘেয়ে, একরঙা, অর্থহীন। মন শান-বাঁধানো — রস ঢুকিতে পায় না।” আরণ্যক – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
আমাদের হিন্দু সনাতন ধর্মে বিশ্বাসীরা বিশ্বাস করেন, মানুষের দেহ পাঁচটি উপাদান দিয়ে তৈরি। যথাঃ আকাশ, বায়ু, অগ্নি, জল ও মাটি। তাই মৃত্যুর পর এই দেহ আগুনে দাহ করা হয় অথবা মাটি দেওয়া হয়। যে উপাদান দিয়ে এই দেহ তৈরি, মৃত্যুর পর আবার সেই একই উপাদানে মিশে যায়। ঈশ্বর সর্বত্রই বিরাজিত। প্রতিটি বস্তু, প্রতিটি প্রাণীর মধ্যই তিনি আছেন। আমাদের জীবনে যদি আমরা ছোট ছোট কারণে বা অকারণে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ না করে, ব্যক্তিগত অহংকার দূরে ঠেলে আমরা যদি একে অন্যের হাতটা ধরতে পারি তাহলে আমাদের জ্ঞান এবং প্রেম বহু গুণ বেড়ে যায়।আমরা আনন্দকে নিজেদের মধ্যে ভাগ
করে নিতে পারি। তাই, প্রেম সম্পর্কে স্বামী বিবেকানন্দ বলছেন:-
*বহুরূপে সম্মুখে তোমার ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর। জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।*
শ্রীচৈতন্যদেব প্রেম সম্পর্কে বলছেন:-
*মুচি হয়ে শুচি হয় যদি কৃষ্ণ ভজে”।*
শ্রীচৈতন্যদেবের কথা অনুযায়ী বর্ণবৈষম্য ও ভেদাভেদ ভুলে এবং জাতি বর্ণ নির্বিশেষে মানুষে মানুষে বিশ্বাস এবং জাতীয় সংহতি গড়ে তোলাই হবে সর্বোৎকৃষ্ট ব্রত।শ্রীচৈতন্যদেব মানুষকে মানুষ হিসেবেই মূল্য দিয়ে বর্ণ শ্রেণিভেদে বিভক্ত আত্মবিচ্ছিন্ন জাতিকে একসূত্রে বাঁধার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি সকল মানুষের জন্য যে মহানাম, প্রেমময় হরিনাম,প্রচার করে গেছেন তা হলো –
* ” হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে, হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে ।”*
আমাদের জীবনে কষ্ট ভাগাভাগি করলে তা কমবে, সুখ ভাগাভাগি করলে তা বাড়বে, তাই কষ্ট এবং সুখ নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি বা শেয়ার করুন। বিশেষ করে তার সাথে ভাগাভাগি বা শেয়ার করুন যিনি আপনার যত্ন নেন।আপনাকে অনুপ্রাণিত করেন। আপনার বাকি জীবন আপনার জীবনের সেরা করুন । ভবিষ্যত তাদেরই, যারা নিজের জীবনে তাদের স্বপ্নের সৌন্দর্যে বিশ্বাসী। জ্ঞান একটি সুন্দর উপহার যা আমাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করে এবং বিশ্ব সম্পর্কে আমাদের বোঝার জন্য মনকে প্রসারিত করে। এটি আমাদের মন এর বৃদ্ধি, বিকাশ এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেয়। ইতিহাস জুড়ে, অনেক জ্ঞানী ব্যক্তি জ্ঞানের উপর তাদের গভীর অন্তর্দৃষ্টি আমাদের মধ্যে ভাগাভাগি, শেয়ার করেছেন। যার ফলে আমাদের জ্ঞান বিকশিত হয়েছে প্রসারিত হয়েছে। তাই, কোন জিনিসই অতিরিক্ত হওয়া ভাল নয় দুটি জিনিস ছাড়া,এক জ্ঞান,দুই ভদ্রতা।
সুমহান ভারত সেবাশ্রম সংঘ এর প্রতিষ্ঠাতা স্বামী প্রণবানন্দ মহারাজ বলছেন:- *প্রতিদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে নবজীবনের নূতন সঙ্কল্প লইয়া উৎসাহ উন্মাদনাপূর্ণ নূতন জীবন আরম্ভ করিবে; সমস্ত দিন এমনিভাবে চলিবে যাহাতে একটা পরিবর্তন, একটু উন্নতি অনুভব করিতে পার।*
জগৎগুরু ভগবান স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজের শুভ ও মঙ্গলময় আশির্বাদ সকলের শিরে বর্ষিত হোক! এই প্রার্থনা করি…***
ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্ ….!