Categories
রিভিউ

করমা গান ও তার সামাজিক প্রেক্ষাপট : ড. ব্রতীন দেওঘরিয়া।

♦’সাহিত্য’ এবং ‘সমাজ’ একে অপরের পরিপূরক। যেকোনো সাহিত্যে সমাজের বিভিন্ন চিত্র বর্ণিত হয়ে থাকে। তৎকালীন সময়ের মানুষের রীতি-নীতি আচার-আচরণ সবকিছুই আমরা সাহিত্যের মধ্যে খুঁজে পাই। বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক প্রমথ চৌধুরী একারণে বলেছেন, ‘সাহিত্য হল সমাজের দর্পণ’। ঠিকই তো, দর্পণে যেমন আমরা আমাদের প্রতিবিম্ব দেখতে পাই সাহিত্যের মধ্যে খুঁজে পাই সমাজের প্রতিবিম্ব।  বাংলা সাহিত্য এর ব্যতিক্রম নয়। বাংলার ভূ-প্রকৃতি, গাছপালা, নদী-নালা, মানবসম্পদ, দেব-দেবী, আচার- অনুষ্ঠান, কামনা-বাসনা, রীতি-নীতি সবকিছুর পরিচয় আমরা সাহিত্যের মধ্যে খুঁজে পাই। বাংলা সাহিত্যের সেই প্রাচীনকাল থেকে যে সমস্ত গ্রন্থগুলি সৃষ্টি হয়েছে তার মধ্য থেকে সেই সমাজের রীতি-নীতি, আচার-আচরণ সহ বিভিন্ন তথ্য যেমন আমরা খুঁজে পাই; ঠিক তেমনই খুঁজে পাই বাংলার লোকপ্রবাদ, গান, ছড়া, ঝুমুর প্রত্যেকের থেকে তৎকালীন সমাজের পরিচয়। তাই বলতে পারি  আজকের দিনে দাঁড়িয়েও বিভিন্ন লোকগান যেমন ভাদু, টুসু, রোহিনি, ইঁদ, বাঁদনা, ঝুমুর, ছৌ, করম প্রভৃতি বাংলার কতটা মর্মমূলে রয়েছে তা আলোচনা করা যেতেই পারে।  এখানে আমরা করম পরবকে সামাজিক প্রেক্ষাপটের নিরিখে আলোচনা করার চেষ্টা করবো।

♦’করম’ শব্দটি কর্ম থেকে এসেছে। নিজ নিজ কর্ম ফলের সংশোধনের জন্য এই করম পরব। এই পরব  সাধারণত ভাদ্র মাসের শুক্ল একাদশী তিথিতে সাড়ম্বরে পালিত হয় ভারতের ঝাড়খন্ড, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, ছত্রিশগড়, আসাম, উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ সহ বাংলাদেশ ও নেপালে ফসল কাটার উৎসব হিসাবে। করম কুড়মি, ভূমিজ, রাজপুত, সরাক, লোহার, বাউরি, বীরহড়, বীরনিয়া, খেরওয়ার, হো, খেড়িয়া, শবর, কোড়া, মাহালি, পাহাড়িয়া, হাড়ি, বাগদি, বেদে, ঘাসি, লোধা ও বৃহৎ জনগোষ্ঠী সাঁওতাল, মুন্ডা, ওঁরাও প্রভৃতি সম্প্রদায়ের আরণ্যক ও কৃষিভিত্তিক লোকউৎসব। এই উৎসবে করম দেবতার উপাসনা করা হয়, যিনি শক্তি, যুব ও যৌবন তথা প্রাচুর্যের দেবতা। তবুও স্থান-কাল ভেদে বিভিন্ন রূপে করম উৎসব পালিত হয় —

★  পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম- মেদিনীপুরের কৃষিভিত্তিক হিন্দু সমাজ, আদিবাসী সাঁওতাল, হো, মুন্ডা প্রমুখ জনজাতির কাছে করম আরণ্যক ও কৃষি-শস্যের দেবতা হিসেবে পূজিত হয়।

★   ডুয়ার্সের আদিবাসীদের কাছে করম চা-বাগিচা ও সমস্ত শস্যের দেবতা হিসেবে পূজিত হয়।

★  পলি সমভূমি অঞ্চল তথা পশ্চিম মেদিনীপুরের লালগড় ও গড়দেবতা এলাকার মানুষের কাছে করম শিকারের দেবতা হিসেবে পূজিত হয়।

★  ঝাড়খণ্ডের তামাড়, বুন্ড এলাকা, রাঁচির আদিবাসী মানুষদের কাছে করম জল-জমিন-জঙ্গল তথা প্রকৃতির দেবতা হিসেবে পুজিত হয়।

♦ কোনো একটি দিনে পালিত হলে তা পূজা হয়, কিন্তু একাধিক দিনে পালিত হলে তা ‘পূজা’ থেকে ‘পরবে’ পরিনত হয়। করম এর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা লক্ষ্য করা যায়। করম সমাজে ছেলে-মেয়ে  নির্বিশেষে সকলের পরব হলেও মূলত অবিবাহিত বা কুমারী মেয়ে এবং সদ্য বিবাহিত মেয়েদের করম পূজার ক্ষেত্রে অধিক প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। লোকজ মানুষের বিশাল জনপ্রিয় পরব করম পালনের যে রীতি লক্ষ্য করা যায়,  তা হলো —

ভাদ্র মাসের শুক্ল একাদশী তিথির সাতদিন আগে মেয়েরা ভোরবেলায় শালের দাঁতন কাঠি ভেঙে নদী বা পুকুরে স্নান করে বাঁশ দিয়ে বোনা ছোট টুপা ও ডালায় বালি দিয়ে ভর্তি করেন। তারপর গ্রামের প্রান্তে একস্থানে ডালাগুলিকে রেখে জাওয়া গান গাইতে গাইতে তিন পাক ঘোরে। এরপর তাতে তেল ও হলুদ দিয়ে মটর, মুগ, বুট, জুনার ও কুত্থির বীজ মাখানো হয়। অবিবাহিত মেয়েরা স্নান করে ভিজে কাপড়ে ছোট শাল পাতার থালায় বীজগুলিকে বুনা দেন ও তাতে সিঁদুর ও কাজলের তিনটি দাগ টানা হয়, যাকে বাগাল জাওয়া বলা হয়। এরপর ডালাতে ও টুপাতে বীজ বোনা হয়। এরপর প্রত্যেকের জাওয়া চিহ্নিত করার জন্য কাশকাঠি পুঁতে দেওয়া হয়। একে জাওয়া পাতা বলা হয়। যে ডালায় একাধিক বীজ পোঁতা হয়, তাকে সাঙ্গী জাওয়া ডালা এবং যে ডালায় একটি বীজ পোঁতা হয়, তাকে একাঙ্গী জাওয়া ডালা বলা হয়। যে সমস্ত কুমারী মেয়েরা এই কাজ করেন, তাদের জাওয়ার মা বলা হয়। বাগাল জাওয়াগুলিকে লুকিয়ে রেখে টুপা ও ডালার জাওয়াগুলিকে নিয়ে তারা গ্রামে ফিরে আসেন। দিনের স্নান সেরে পাঁচটি ঝিঙাপাতা উলটো করে বিছিয়ে প্রতি পাতায় একটি দাঁতনকাঠি রাখা হয়। পরদিন গোবর দিয়ে পরিষ্কার করে আলপনা দেওয়া হয় ও দেওয়ালে সিঁদুরের দাগ দিয়ে কাজলের ফোঁটা দেওয়া হয়।

দশমীর দিন সকালে পুরুষেরা জঙ্গলে গিয়ে  শাল গাছের ডাল বা ছাতাডাল কিংবা করম গাছ নির্বাচন করে দুটি শাখা পূজার জন্য সংগ্রহ করে আনেন। গ্রামের বয়স্কদের একটি নির্দিষ্ট করা স্থানে দুটি করম ডাল বরণ করে গাইতে গাইতে হলুদ ও লাল সুতো জড়িয়ে সিঁদুর মাখানো হয় এবং নিচে নতুন লাল গামছা জড়িয়ে গান ও নাচের মাধ্যমে ডাল দুটিকে পুজোর স্থানে নিয়ে আসা হয়। একাদশীর দিন ‘পানহারা’-র দ্বারা সেই দুটি ডালকে নির্দিষ্ট করা জায়গায় পোঁতা  হয়, যা সন্ধ্যার পরে করম ঠাকুর বা করম গোঁলায় এবং ধরম ঠাকুর হিসেবে পুজা করা হয়।

কুমারী মেয়েরা সারাদিন উপোষ করে সন্ধ্যার পরে থালায় ফুল, ফল সহকারে নৈবেদ্য সাজিয়ে এই স্থানে গিয়ে পূজা করেন।  তারা একটি করে বাঁশের ঝুড়ি নিয়ে আসে, যেখানে সদ্য অঙ্কুরিত পঞ্চশস্য – যব, ছোলা, মুগ, বিরি ও কুত্থি থাকে।  অন্যদিকে সন্তানবতী মায়েরা আনেন ছোট ‘ডুকরি’, যেখানে সিঁদুর মাখানো কঁচি শশা থাকে। এটি তাদের সন্তানের প্রতীক, সন্তানের মঙ্গল কামনায় তারা পুজো করেন।

রাত্রের প্রথম প্রহরে পূজা হয়, মেয়েরা প্রদীপ জ্বালিয়ে, কাঁজল-সিঁদুর দিয়ে পূজা করেন।  পূজার অর্ঘ্য রূপে মেয়েরা ঘি, গুড়, আতপচাল, মধু, ধুপ, ধান, কাকুড় প্রভৃতি উৎসর্গ করে থাকেন আবার কোথাও কোথাও মেয়েরা ডুমুর, মাটির ঘোড়া, চিড়ে, দুধ প্রভৃতি উৎসর্গ করেন। একদিকে  যেমন করমকে শস্যের দেবতা হিসেবে দেখা হয় তেমনি অন্যদিকে মেয়েরা স্বামী ও সুসন্তানবতী হওয়ার উপাস্য দেবতা হিসেবেও করমের আরাধনা করে থাকেন। শস্য বৃদ্ধি এবং অপদেবতার হাত থেকে রক্ষার প্রার্থনায় এই আয়োজন।  এরপর বলিদান,  ব্রতকথা পাঠা এবং তারপর সারারাত ধরে চলে নাচ-গান। পরদিন সকালে মেয়েরা জাওয়া থেকে অঙ্কুরিত বীজগুলিকে উপড়ে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়ে বাড়িতে বিভিন্ন স্থানে সেগুলিকে ছড়িয়ে দেন। এরপর করম ডালটিকে জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এরপর মেয়েরা একে অপরের হাতে করম ডোর রাখী হিসাবে পরিয়ে দেন।

♦ তবে প্রশ্ন আসতেই পারে এই করম কে? কোথা থেকেই বা করম পূজার সৃষ্টি?  এপ্রসঙ্গে বলা যেতে পারে কান পাতলেই করম সম্পর্কে বেশ কয়েকটি গল্প প্রচলিত।  কিন্তু তারমধ্যে দুটি গল্প বেশ জনপ্রিয় —

★ আদিবাসী ওরাওঁ সম্প্রদায়ের মতে  পুরান কালে অগ্নি প্রলয় হলে নায়েক ও সারেন নামক দুই ভাইবোন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে প্রাণ ভিক্ষে চান। তাদের করম গাছের কোটরে আশ্রয় নেওয়ার নির্দেশ দেন ঈশ্বর। প্রলয়ের আগুনে সব পুড়ে ছাই হলেও সেই করম গাছের কোন ক্ষতি হয়নি। স্বভাবতই প্রাণে বেঁচে যায় নায়েক ও সারেন।  তাই প্রকৃতি পূজার মূল কেন্দ্র থাকে করম গাছের ডাল, তাকে রাজার সম্মান দেওয়া হয়। সেখান থেকেই শুরু হয় ‘করম উৎসব’।

★কিন্তু বেশি প্রচলিত ধলভূম ও ঝাড়গ্রাম অঞ্চলের কাহিনী।  সেখানে দেখা যায় এক সওদাগরের দুই ছেলে। বড় ছেলের নাম ‘ধরম’ আর ছোট ছেলের নাম ‘করম’। বড় ছেলে ব্যবসা-বাণিজ্য করে প্রচুর ধনরত্ন লাভ করেন কিন্তু করম সেদিকে না গিয়ে কৃষিকাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকেন আর করম দেবতার আরাধন করেন। ধরম একদিন  ব্যবসা-বাণিজ্য করে প্রচুর ধনরত্ন নিয়ে বাড়ি ফিরলে করমকে করম দেবতার আরাধনা করতে দেখেন। ক্রুদ্ধ ধরম করমের আরাধ্য করম গাছের ডাল ছুড়ে ফেলে দিয়ে পুজোর উপকরণ নষ্ট করে দিলে করম রাজা ক্রুদ্ধ হয়ে তাদের সব সম্পত্তি নষ্ট করে দিয়ে সেখান থেকে চিলে যান। এমনই অবস্থা হয় যে দিনমজুরের কাজ করে দিন গুজরান করতে হয়! করম তার আরাধ্য দেবতার খোঁজে  বেরিয়ে পড়েন নিরুদ্দেশের যাত্রায়!  অবশেষে সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে ক্ষুধার্ত তৃষ্ণার্ত করম কুমিরের পিঠে চড়ে তার আরাধ্য দেবতার দেখা পান। তিনি তার পা ধরে ক্ষমা চান এবং প্রার্থনা করেন বাড়িতে আসার জন্য। করম দেবতা ভাদ্র মাসের শুক্ল পক্ষের একাদশী তিথিতে পুজোর আয়োজন করতে বলেন।  এভাবেই করম তার আরাধ্য সহ সব সম্পত্তি ফিরে পান।

♦ করম পূজা শেষে যে গান গাওয়া হয় তা করম গান নামে পরিচিত।  এই গান মূলত ছয় প্রকারের হয়ে থাকে-

ক) আচার মূলক করম গান।
খ) ডহরাই
গ) আখড়া বন্দনা
ঘ) চাষবাস সম্পর্কিত করম গান
ঙ) নারী কেন্দ্রিক
চ) ভাসান

–  এই গানগুলির মধ্যে উৎসব, লোকাচার তো রয়েছে এর পাশাপাশি সামাজিক তৎকালীন চিত্র, মেয়েদের অবস্থান সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া যায়।

★ একটি করম গানে বলা হয়েছে —

আইজ তরে করম রাজা / ঘরে দুয়ারে রে।
কাল তরে করম রাজা / কাঁসাই নদীর ধারে।।
আইজ তরে করম রাজা / খিরি খিচুড়ি।
কাল তরে করম রাজা / দাঁত গিজিড়ি।।

— করম পূজার পর যখন বলিদান হয়, তখন পশু-পক্ষী বলিদানের পর ভক্তরা এই গান ধরেন। এখানে মানুষের উল্লাসের পাশাপাশি  দিন আনে দিন খায় মানুষদের অবস্থান সম্পর্কেও জানা যায়। এরা উৎসবের দিনে বিশাল আয়োজন করলেও ভবিষ্যৎ এদের কিন্তু অনিশ্চিত! তাই আজ (উৎসবের দিন)  ‘খিরি খিচুড়ি’ এর কথা  বললেও ভবিষ্যতের জন্য ‘দাঁত গিজিড়ির’ কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ খেটে খাওয়া,  শ্রমজীবী মানুষদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত ছিল সেসময়।

★ আবার আরেকটি করম গানে রয়েছে —

উপর খেতে হাল দাদা / নামব খেতে কামিন রে,
কোন খেতে লাগাবি দাদা / কাজল কাঠি ধান রে।
কাজল কাঠি ধান দাদা / আগে আগে কাটি রে,
না চাইয়া লব দাদা / দশ আড়া ধান রে।।

আসলে আমাদের কর্ম থেকেই করম এসেছে।  অর্থাৎ প্রতিটি মানুষই এমনকি প্রতিটি জীবই তার কর্ম অনুযায়ী ফল পেয়ে থাকে। কর্মই হলো সমৃদ্ধির মূল।  তাই কাজল কাঠি ধানের কথা বলা হয়েছে। বোন তার দাদার খেতে ধান লাগানোর বিনিময়ে আবার দশ আড়া ধান নেবে সেই চুক্তিও করা হয়েছে। কারন কৃষিভিত্তিক সমাজে চাষাবাদের মধ্যেই এখানকার মানুষের সুখ-সমৃদ্ধি যাবতীয় নির্ভর করে। সেই ছবিও এখানে পাওয়া যায়।

★ সমাজের  গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল নারী। এই নারীর জীবনের বিভিন্ন চিত্র আবার করমের নানান গানে লক্ষ্য করা যায়। যেমন একটি গানের মধ্যে রয়েছে –

‘আঙিনা কাদা গলি কাদা তাও আসছে লিতে লো।
হারালে সিঁদুরের কোঠা মন মরে নাই যাতে লো।।’

— এখানে  একটি মেয়ে তার বাপের বাড়ি এসেছে। বর্ষাকালের কর্দমাক্ত রাস্তা, চারিদিকে  অবস্থা খুবই খারাপ তবুও এই পরিস্থিতিতে তাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে নিতে এসেছে সেই দুঃখের কথা এখানে তিনি তুলে ধরেছেন। তার মন যেতে চায় না তবুও তাকে যেতে হচ্ছে এই কষ্টের বহি:প্রকাশ এখানে লক্ষ্য করা যায়।

★ শস্য ও নারীর সম্পর্ক অঙ্গাঙ্গী,  তাই একের আহ্বান ছাড়া অন্যের উদ্বোধন অসম্পূর্ণ। এরকমই একটি গানে উঠে এসেছে এক বিবাহিত কন্যার জীবন বৃত্তান্ত —

আখ দুয়ারে আম গাছটা কাওয়া গ গাছে।
হামরা বলি: হামার ভাই আস্যে গ।।
শাউড়ী হামার ছলনদরী ফিরায়ে দিল গ।
ভাই হামার শুধাই ঘুরিঞ গেল যে।।

—  শাশুড়ি ও বৌমার দ্বন্দ্ব চিরন্তন। এখানেও যেন তার প্রতিচ্ছবি আমরা লক্ষ্য করি। দেখাযায় একজন বিবাহিত নারীর ভাইয়ের আগমন ঘটেছে তার  শ্বশুরবাড়িতে অথচ  শাশুড়ি তার ভাইয়ের প্রতি অসৎ ব্যবহার করেছে বলে সেই নারী দুঃখ করে তার শাশুড়িকে ‘ছলনদরী’ বলেছেন।

★ আরেকটা করম গানের মধ্যে আমাদের হাড়ির খবর পাওয়া যায় —

নেহি খাঅল আতা মাড়, নেহি খাঅল বাসিক গ।
নেহি খা অল ধুড়স্যা কনেহ্যার পুড়া।।
জাওয়া যে দিলিস তরা, কবে নেড়ান গ।
একাদশীর বার করি, জাওয়া নিকাব গ।।

–  সে সময় সমাজে বাসি ভাত, মুড়ি,  নুন-লঙ্কা খাওয়া ছিল নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। ফলে সেই ছবি এই গানে পাওয়া যায়।

এছাড়াও যেহেতু করম দেবতাকে মলের থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, তাই এই সপ্তাহ খানেক মাটির ওপর মলত্যাগ করা নিষিদ্ধ থাকে। ফলে পাথরের ওপর মলত্যাগ করতে হয়। এভাবেই নিয়ম-নীতি, আচার-আচরণ,  বিশ্বাস ও সংস্কারের বশীভূত হয়ে করম পূজা পরিনত হয় করম উৎসবে। সমাজের একটা বিশাল অংশ সাতদিন ধরে করম উৎসবে মেতে ওঠে আর একাদশীর দিন সেই উৎসবের সমাপ্তি। এভাবেই ধর্মীয় ভাবাবেগ ও প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্যের আশ্বাসের অপর এক নাম করম পরব, যার প্রতিটি ছত্রে সমাজের বিভিন্ন চিত্র লক্ষিত হয়।

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *