হাজী মুহাম্মদ মহসিন ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলার একজন প্রখ্যাত মুসলিম জনহিতৈষী, ধার্মিক, উদার ও জ্ঞানী ব্যক্তি, যিনি তাঁর নিজের দানশীলতার মহৎ গুণাবলীর জন্য দানবীর খেতাব পেয়েছিলেন।ইতিহাসে দাতা হাজী মুহাম্মদ মহসিনের নাম চিরস্মরণীয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হলের নাম তার স্মরণে রাখা হয়েছে। এছাড়াও মহসিন ফান্ডের অর্থে অসংখ্য দরিদ্র ছাত্রদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হয়। ঢাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঘাটির নাম বিএনএস হাজী মহসিন।
হাজী মুহম্মদ মহসিন ৩ জানুয়ারি ১৭৩২ সালে হুগলি জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। একজন অত্যন্ত নম্র জনহিতৈষী, হাজী মুহাম্মদ মহসিন তার উদারতার জন্য ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।
দানের ক্ষেত্রে তুলনা অর্থে মানুষ সর্বদা তার দৃষ্টান্ত ব্যবহার করে থাকে। এই সর্বশ্রেষ্ঠ দানবকে সমগ্র বাঙালি জাতি, হিন্দু-মুসলমান সকলেই শ্রদ্ধা করে।
হাজী মহসিন অনেক সম্পত্তির মালিক ছিলেন। এসব সম্পদ তিনি দুই হাতে বিতরণ করেছেন। মহসিনের পূর্বপুরুষরা অনেক ধনী ছিলেন। তার পিতা হাজী ফয়জুল্লাহ, যিনি ইরান থেকে বাংলায় আসেন, তিনি ছিলেন একজন ধনী জায়গীরদার।
মাতা জয়নব খানম হুগলি, যশোর, মুর্শিদাবাদ এবং নদীয়াতেও বিশাল জমির মালিক ছিলেন। বোন মন্নুজানের মৃত্যুর পর মহসিন উত্তরাধিকারী হিসেবে তার বোনের সম্পত্তির মালিক হন।
এত সম্পদের মালিক হওয়া সত্ত্বেও মহসিন ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক ও নিরীহ। তিনি সবসময় সাদাসিধে জীবনযাপন করতেন। তিনি ছিলেন চিরকুমার। তিনি যে প্রাসাদে ইমাম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেখানে তিনি থাকতেন না। বাড়ির পাশে একটি ছোট কুঁড়েঘরে থাকতেন ইমাম।
বোন মুন্নুজানের মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি প্রচুর সম্পদের মালিক হন। মেধাবী মহসিন মুর্শিদাবাদে শিক্ষাজীবন শেষ করে বিশ্বভ্রমণে বের হন। তিনি ইরান, ইরাক, আরব, তুর্কিয়ে প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ করেন এবং এর সাথে মক্কা, মদিনা, কুফা, কারবালা প্রভৃতি স্থানে যান।
তিনি ছিলেন চিরকুমার। ফলে এ সম্পদ মানবকল্যাণে ব্যয় করার যথেষ্ট সুযোগ তার ছিল।
১৭৬৯-৭০ সালের সরকারী নথি থেকে জানা যায় যে সেই সময়ের মহা দুর্ভিক্ষের সময় তিনি অনেক লঙ্গরখানা স্থাপন করেছিলেন এবং সরকারি ত্রাণ তহবিলে অর্থ প্রদান করেছিলেন।
কঠোর তপস্বী মহসিন ১৮০৬ সালে একটি ট্রাস্ট গঠন করেন এবং দুজন মুতওয়াল্লি নিয়োগ করেন। তিনি তার সম্পত্তি নয় ভাগে ভাগ করেন। তিনটি শেয়ার ছিল ধর্মীয় কাজে ব্যবহারের জন্য।
হাজী মুহাম্মদ মহসিন প্রতিষ্ঠিত ইমামবারা, হুগলি, পশ্চিমবঙ্গ।
পেনশন, বৃত্তি এবং দাতব্য ব্যয়ের জন্য চারটি শেয়ার রাখা হয় এবং মুতাওয়াল্লিদের বেতন হিসাবে দুটি শেয়ার রাখা হয়।
তাঁর ওয়াকফের অর্থ ব্যবহার করা হয়েছিল হুগলিতে মহসিন কলেজ এবং চট্টগ্রামে হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য। তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠিত হয় দৌলতপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়। মহসিন তহবিলের পৃষ্ঠপোষকতায়, ধর্ম নির্বিশেষে অসংখ্য শিক্ষার্থীকে শিক্ষা প্রদান করা হয়।
মহসিন খুবই সাদাসিধে ও ধার্মিক জীবনে অভ্যস্ত ছিলেন। নিজ হাতে রান্না করে খেতেন। তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে প্রচুর সম্পত্তি পেয়েছিলেন, যা তাকে সেই সময়ে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম করেছিল। এই বিশাল সম্পত্তির মালিক হওয়া সত্ত্বেও, তিনি কেবল একটি অতি সাধারণ এবং অসাধারন জীবনযাপনই করেননি, বরং সঠিক শিক্ষা, চিকিৎসা সেবা এবং দরিদ্র জনগণের দুঃখ-কষ্ট ও দারিদ্র্য দূর করার জন্য তার সম্পত্তির বিপুল ত্যাগ স্বীকার করেছেন।
হাজী মুহম্মদ মহসিন ২৯ নভেম্বর ১৮১২ সালে মারা যান।
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া ও বাংলাপিডিয়া।