কেলুচরণ মহাপাত্র ছিলেন একজন কিংবদন্তি ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্যশিল্পী, গুরু এবং ওড়িশি নৃত্যের প্রবর্তক যার কৃতিত্ব বিংশ শতাব্দীতে এই শাস্ত্রীয় নৃত্যের পুনরুজ্জীবন এবং জনপ্রিয়তার দিকে পরিচালিত করেছিল। তিনি ওডিশা থেকে প্রথম ব্যক্তি যিনি পদ্মবিভূষণ পুরস্কার পান। তিনি ১৯২৬ সালের ৮ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন।
ভারতের একজন প্রসিদ্ধ সংস্কৃত কবি এই গুরু সম্বন্ধে লিখেছেন – ‘তাঁর নৃত্যে দেহের প্রতিটি অঙ্গ সঞ্চালন অলৌকিক ভঙ্গি ও অঙ্গবিন্যাসের পরম মাধুর্য সৃষ্টি করে। প্রকৃতপক্ষে গুরু কেলুচরণ মহাপাত্র নৃত্যশৈলীর সাগর পার করেছিলেন।
কেলুচরণ মহাপাত্র তাঁর যৌবনে গাতিপোয়া পরিবেশন করতেন, যা উড়িষ্যার একটি ঐতিহ্যবাহী নৃত্য, যেখানে অল্পবয়সী ছেলেরা ভগবান জগন্নাথ দেবের প্রশংসা করার জন্য মহিলাদের পোশাক পরে। পরবর্তী জীবনে তিনি গতিপোয়া এবং মাহারি নৃত্য নিয়ে গভীর গবেষণা করেন, যা তাঁকে ওড়িশি নৃত্যের পুনর্গঠনে সাহায্য করেছিল। গুরু কেলুচরণ মহাপাত্র মৃদঙ্গ, পাখওয়াজ এবং তবলায় পারকাশন যন্ত্রের একজন বিশেষজ্ঞ ছিলেন, যা তাঁর নৃত্য রচনায় সরাসরি অবদান রেখেছিল। ঐতিহ্যবাহী পটচিত্র অঙ্কনেও তিনি পারদর্শী ছিলেন। গুরু কেলুচরণ মহাপাত্রের স্ত্রীর নাম লক্ষ্মীপ্রিয়া মহাপাত্র। লক্ষ্মীপ্রিয়া নিজেও একজন নৃত্যশিল্পী।
তিনি বলেছিলেন, “নৃত্য আমার জীবনে শুধু অভীষ্টসাধনই করেনি, এটাই ছিল আমার সম্পূর্ণ জীবন। আজকে আমি যা-ই হই-না-কেন সেটা পুরোপুরি আমার গুরুর আশীর্বাদেই।” তিনি আরো বলেন, “প্রকৃত নৃত্য নিশ্চিতভাবে অবিভক্ত অস্তিত্বের অনুভূতি প্রকাশ করে, যাতে একটি দর্শকের অনুভূতি হয় যে, সে উপলব্ধি করা বিষয় থেকে ভিন্ন নয়”।
“জনগণকে প্রমোদ প্রদানের জন্যে ওডিশি শুধুমাত্র একটা নৃত্যশৈলীই নয় আসলে অনুপ্রেরণা এবং উন্নয়নের উৎস। আমি আদতে নৃত্য প্রদর্শন করিনা বরং সমবেদনার সঙ্গে প্রার্থনা করি এবং দর্শকদের ভাষায় যেন এই ‘শৈলী’ নৃত্যরত ।”
পুরস্কারসমূহ—–
তিনি সংগীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার (১৯৬৬), পদ্মশ্রী (১৯৭৪), পদ্মভূষণ (১৯৮৮), সংগীত নাটক আকাদেমি ফেলোশিপ (১৯৯১), পদ্ম বিভূষণ(২০০০), মধ্য প্রদেশ রাজ্য সরকার থেকে কালিদাস সম্মান লাভ করেন।
মৃত্যু—
কেলুচরণ মহাপাত্র ৭ এপ্রিল ২০০৪ সালে প্রয়াত হন।
।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।