প্রতি বছর সারা পৃথিবীতে অনেক মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হন। যেমন অনেকেই শেষ পর্যন্ত ক্যানসারকে জয় করে ফেলতে পারেন, তেমনই অনেকেই দীর্ঘ লড়াইয়ের পর হার মানতে বাধ্য হন। ২০২০ সালে প্রায় ১ কোটি মানুষ মারা গিয়েছেন ক্যানসার। পরিসংখ্যান বলছে, গোটা পৃথিবী যত মানুষ মারা যান, তার প্রতি ছয় জনের মধ্যে এক জনের মৃত্যুর কারণ ক্যানসার। তবে ক্যানসারের চিকিৎসা গত কয়েক বছরে অনেক এগিয়ে গিয়েছে। এবং সেই ভাবনা থেকেই উঠে এসেছে বিশ্ব ক্যানসার দিবস পালনের কথা।
উন্নত-আধুনিক দেশ থেকে পিছিয়ে পড়া কোনও দেশ, ক্যান্সার এবং তার জেরে মৃত্যুর খবর শোনা যায় সবজায়গাতেই। তথ্য বলছে বিশ্বে মৃত্যুর কারণ হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ক্যান্সার। বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, সচেতনতা এবং সুষ্ঠু জীবনযাত্রা এই দুই অস্ত্রেই একটি বড় অংশের ক্ষেত্রে ঠেকিয়ে রাখা যায় এ মারণরোগ।সারা বিশ্বে ক্যান্সার মারণরোগ হিসেবে পরিচিত। কোনও কোনও সময়ে অনেকটা পরে ধরা পড়ে এই রোগ। যখন চিকিৎসার আর তেমন কোনও সুযোগ থাকে না। ফলে ক্যান্সার রুখতে গেলে Early Detection-এর কথা বলে থাকেন চিকিৎসকরা। এখানেই আসে সচেতনতার বিষয়টি। অর্থাৎ কী কী দেখে আগেভাগে সতর্ক হতে হবে, দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে তা নিয়ে সচেতনতার প্রসারের জন্য়ই এমন দিনের প্রয়োজন
ক্যান্সার নিয়ে আশঙ্কার বদলে সচেতনতা প্রসার বেশি জরুরি। ঠিক সেই কারণেই, প্রতি বছর ৪ ফেব্রুয়ারি পালিত হয় বিশ্ব ক্যান্সার দিবস ।
২০০০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি প্যারিসে বিশ্ব ক্যানসার সামিট আয়োজিত হয়। সেখানেই ঠিক হয়, এই দিনটি বিশ্ব ক্যানসার দিবস বা বিশ্ব ক্যানসার সচেতনতা দিবস বা বিশ্ব ক্যানসার প্রতিরোধ দিবস হিসাবে পালন করা হবে।এই দিনটিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(WHO) ক্যান্সার প্রতিরোধ এবং ক্যান্সার রোগীদের জীবন ধারার মান উন্নয়নে ইন্টারন্যাশানাল ইউনিয়ন এগেনষ্ট ক্যান্সার (International Union Against Cancer)-কে সহায়তা করে থাকে।
ওই দিনে ইউনেস্কোর তৎকালীন জেনারেল ডিরেক্টর কৈচিরো মাতসুরা ফরাসি প্রেসিডেন্ট জাক শিরাকের সঙ্গে তৎকালীন নিয়ে লড়াইয়ের অঙ্গীকার করেন। এই ভাবনার মূল লক্ষ্যই হল যাতে বিশ্বব্যাপী গবেষণা, তৎকালীন প্রতিরোধ, রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে উন্নতি।
২০২২, ২০২৩ এবং ২০২৪- এই তিন বছরের জন্য একই থিম রাখা হয়েছে। ‘Close The Care Gap’। ক্যান্সার রোগীদের মানসিক ও শারীরিক ভাবে দেখভালের সমস্যা দূর করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ক্যান্সারের নানা উপসর্গের বিষয়ে সচেতন করেন। কী কী সমস্যা হলে দেরি না করে দ্রত ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত তা নিয়েও নিয়ম করে সচেতন করা হয়ে থাকে। তবে একটি বিশেষ দিন থাকলে তাকে কেন্দ্র করে সারা বিশ্বে একসঙ্গে সামগ্রিক ভাবে সচেতনতা ও সতর্কতার প্রসার করা যায়। ক্যান্সার এবং তার চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত সবস্তরের লোকজন, রোগী-রোগীর পরিবার, চিকিৎসক, সাপোর্ট গ্রুপ, প্রশাসন- সবাইকে নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেই এই দিনটি পালিত হয়।
যেসব কারণে ক্যান্সার হয় তার ঝুঁকিগুলোর মধ্যে- ধূমপান, পান-জর্দা-তামাকপাতা খাওয়া, সবজি, ফলমূল ও আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়া, শারীরিক ব্যায়াম না করা, শারীরিক স্থূলতা বা বেশি ওজন, আলট্রাভায়োলেট রশ্মি, এক্স-রে রেডিয়েশন, কিছু রাসায়নিক পদার্থ, কিছু ভাইরাস বা অন্যান্য জীবাণু অন্যতম।
যদিও ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিন্তু সেই সাথে ক্যান্সার থেকে আরোগ্য পাওয়া লোকদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে ক্যান্সার সনাক্তকরণে পারদর্শীতা বৃদ্ধি এবং নতুন নতুন চিকিৎসার আবির্ভাব যা পূর্বে ছিল না। বর্তমান সময়ে শুরুতেই যদি ক্যান্সার সনাক্ত করা যায় তাহলে সেটি খুব সহজেই সফলভাবে চিকিৎসা করা যায়।
বর্তমানে মানুষের মধ্যে পাওয়া ক্যান্সারের ৪০% এরও বেশি নিরাময়যোগ্য এবং আক্রান্ত রোগীর বেঁচে যাওয়ার সংখ্যাও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বিগত দশক ধরে ক্যান্সার নিয়ে পড়াশোনা এবং একে বোঝার ফলস্বরূপ সম্ভবত এই উন্নতি সম্ভব হয়েছে যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নতুন সম্ভাবনারও জন্ম দিয়েছে। ক্যান্সার নির্ণয়, চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি দেখা যায় তা রোগীদের ক্যান্সারের সুষ্ঠু চিকিৎসার ব্যাপারে সর্বোচ্চ আস্থা দেয়।
ঠিক কোন কারণে ক্যান্সারের মতো মারণ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন সকলে তা বোঝা কঠিন। খাওয়া-দাওয়ার অনিয়ম, পর্যান্ত ঘুমের অভাব এই সবের সঙ্গে অধিক পরিমাণ রেস্তোরাঁর খাবার- এই সবে অভ্যস্ত বর্তমান প্রজন্ম। এখন প্রায় কেউই শরীর চর্চার জন্য সময় বের করতে পারেন না। তেমনই বাড়ির রান্নার বদলে দোকানে খাবারে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এর সঙ্গে ধূমপান ও মদ্যপান তো আছেই। আর এই সব খারাপ অভ্যেসের প্রভাব পড়ছে আমাদের শরীরে। সে কারণেই বয়স ৩০-র কোটায় পা দিলেই শরীরে বাঁধছে একের পর এক রোগ। ডায়বেটিস, প্রেসার, কোলেস্টেরল, ফ্যাটি লিভারের সমস্যা এখন ঘরে ঘরে। তেমনই দেখা দিচ্ছে ক্যান্সার। এই রোগ থেকে বাঁচতে চাইলে সবার আগে সুস্থ জীবনযাপন করুন। সঙ্গে সর্বদা চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বিশেষ পরীক্ষা দ্বারাই রোগ নির্নয় করা সম্ভব। তাই সঠিক সময় রোগ ধরা পড়লে তার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
তাই ক্যান্সার প্রতিরোধে সর্বপ্রথম সচেতন থাকাটা খুব জরুরি। নিয়মিত সুস্থ জীবনযাপন ক্যান্সার প্রতিরিধে অন্যতম হাতিয়ার।
।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।