Categories
গল্প প্রবন্ধ

মহাদেবের স্বপ্নাদেশেই ১০৮ টি শিব মন্দির তৈরি করেছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র, রইল শিবনিবাসের অজানা তথ্য।

শিবনিবাস বাংলার ইতিহাস খ্যাত ও পুরাকীর্তি সমৃদ্ধ এক প্রাচীন স্থান। পশ্চিম বাংলার নদীয়া জেলার শিবনিবাসকে বাংলার কাশী বলা হয়। দেবাদিদেব শিব মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের স্বপ্নে হাজির হয়েছিলেন। হিন্দু ধর্মে মহা শিবরাত্রির মাহাত্ম্য অনেক। পুণ্যার্থীরা শিবের জন্যে ব্রত পালন করেন। দিনভর চলে নানা ধর্মীয় রীতি পালন। এমনকি অনেক জায়গায় শিবরাত্রি উপলক্ষে নানা মেলাও হয়। মন্দিরে তো বটেই, বাড়িতে বাড়িতেও পুজো হয় মহাদেবের। ‘হড় হড় মহাদেব’ উচ্চারণ করে তারকেশ্বর দেশের ভিন্ন প্রান্তে বাবার মাথায় জল ঢালতে ভক্তদের সমাগম হয়। প্রায় এক মাস আগে থেকে চলে প্রস্তুতি। শিবরাত্রির আগে, রইল পশ্চিমবঙ্গে নদীয়া জেলায় অবস্থিত ‘শিবনিবাস’ এর অজানা নানা কথা।শিবনিবাস বাংলার ইতিহাস খ্যাত ও পুরাকীর্তি সমৃদ্ধ এক প্রাচীন স্থান। পশ্চিম বাংলার নদীয়া জেলার শিবনিবাসকে বাংলার কাশী বলা হয়। যদি এক্ষেত্রে কাশীর মতো গঙ্গা নদী বয়ে যায়নি। তবে এখানে এই মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে চুর্ণী নদী। জনশ্রুতি আছে যে, দেবাদিদেব শিব মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের স্বপ্নে হাজির হয়েছিলেন। তাঁকে বলেছিলেন যে, তিনি কাশি থেকে তাঁর রাজধানী স্থানান্তরিত করছেন। তাই মহাদেবকে সন্তুষ্ট করতে মহারাজা শিবনিবাসে তাঁর নতুন রাজধানী স্থাপন করেছিলেন এবং তাঁর সম্মানে ১০৮ টি মন্দির নির্মাণ করেছিলেন।

তবে ইতিহাসবিদরা আরও কিছু যুক্তি দিয়েছেন। কেউ কেউ বলেন, আঠারো শতকের মাঝামাঝি মহারাজা আক্রমণকারী মারাঠাদের হাত থেকে তাঁর রাজধানী কৃষ্ণনগরকে বাঁচানোর জন্য এটিকে শিবনিবাসে স্থানান্তরিত করেন, যা চূর্ণী নদীর তীরে ঘিরে ছিল। ফলে আক্রমণকারীদের কাছ থেকে তিনি কিছুটা সুরক্ষিত থাকতেন। তাঁর রাজধানী স্থানান্তরিত হওয়ার পরে মহারাজা সম্ভবত এই জায়গাটির নাম ‘শিবনিবাস’-এ নামকরণ করেন। লোকেদের বিশ্বাস, এটি মহাদেব নিজেই করেছেন। আবার অনেকে বলেন, এই নামটি তাঁর পুত্র শিবচন্দ্রের নামে রাখা হয়েছিল।মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজত্বকালে (১৭২৮-১৭৮২) বাংলায় সাংস্কৃতিক বিপ্লব হয়েছিল। তাঁর জ্ঞান, শিক্ষা ও সংস্কৃতি তাঁকে বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসে একটি অনন্য স্থান দিয়েছে। তাঁর নবরত্ন (নয়টি রত্ন) সভা এখনও বাংলার সাংস্কৃতিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই মন্দিরের ছাদ ধালু এবং গম্বুজ রয়েছে।তিহ্যবাহী বাঙালি কাঠামো অনুসরণ করে না।

এই মন্দিরে যেমন আছে পোড়ামাটি কাজ, তেমন ইসলামিক ও গথিক কাজও দৃশ্যমান। এখানের সবচেয়ে বড় শিব মন্দিরটি বুড়ো শিব নামে পরিচিত। চূড়া সমেত মন্দিরের উচ্চতা ১২০ ফুট। মন্দিরের ভেতরের শিবলিঙ্গের পূর্ব ভারতের সবচেয়ে উচ্চতম শিবলিঙ্গটি রয়েছে। শিবনিবাসের এখন যেই মন্দিরগুলো রয়েছে তার রয়েছে বিভিন্ন নাম। যেমন – রাজ রাজেশ্বর মন্দির, রগনিশ্বর মন্দির, রাম-সীতা মন্দির, বুড়ো শিব মন্দির।

যদিও দুর্ভাগ্যক্রমে বর্তমানে এখানে ১০৮ টির মধ্যে মাত্র তিনটি মন্দির রয়েছে। যার মধ্যে একটিতে পূর্ব ভারতের বৃহত্তম শিব লিঙ্গ রয়েছে। তাছাড়া এখানের রাম সীতা মন্দিরের সঙ্গে রয়েছে আরও দুটি শিব মন্দির এবং কৃষ্ণচন্দ্রের প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ শিবনিবাসের গৌরবময় অতীতের অবশিষ্টাংশ।

।। নদীয়া।।

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *