Categories
গল্প প্রবন্ধ রিভিউ

মূল্যবান মনুষ্য জীবন ও মহাকুম্ভ মেলা-2025 (ধারাবাহিক তৃতীয় পর্যায়) : স্বামী আত্মভোলানন্দ(পরিব্রাজক)।

ওঁ নমঃ শ্রীভগবতে প্রনবায় নমঃ…!

আমাদের মূল্যবান মনুষ্য জীবনে প্রয়াগরাজে চলছে মহাকুম্ভ, অমৃত-কুম্ভমেলা। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ ভক্ত সঙ্গম তীর্থে স্নান করছেন। এই মহাকুম্ভ ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। বারোটি কুম্ভ অতিক্রম করে একটি করে মহাকুম্ভ হয়। সেই বিচারে এক-একটি মহাকুম্ভ ১৪৪ বৎসর অন্তর হয়। অর্দ্ধকুম্ভ প্রতি ছয় বৎসর অন্তর হয়। অর্দ্ধকুম্ভের জন্য তিনটি তীর্থস্থান:- হরিদ্বার, নাসিক ও উজ্জয়িণী। পূর্ণকুম্ভ শুধুমাত্র প্রয়াগরাজে। “নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান, বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান !” এক অপূর্ব দৃশ্য, বাহ্যিক দৃষ্টিতে এক তীর্থক্ষেত্র, গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতীর মিলন ক্ষেত্র, নদীর চর মেলাক্ষেত্র, কয়েকশো একর জমির উপর মেলা ক্ষেত্রে নাগরিক পরিষেবা, বিশুদ্ধ পানীয় জল, উপযুক্ত পরিমাণে সুস্বাদু ভান্ডারার ব্যবস্থাপনা, বিভিন্ন আখড়ায় ধর্মকথা, ভজন, কীর্তন, অঘোরী, নাগা, বৈষ্ণব সন্ন্যাসীদের উপস্থিতি, নাগা সাধুদের হঠযোগ ও ক্রিয়াযোগের দৃশ্য পর্যবেক্ষণ, কয়েক লক্ষ মানুষের উপস্থিতি হলেও সবকিছু সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা অনুভব হলেও অন্তর্দৃষ্টি তে এর অনুভূতি আলাদা। অনুমান, মহাকুম্ভে প্রায় ৪০-৪৫ কোটি মানুষ সঙ্গম তীর্থে স্নান করবেন।

*অনেক মানুষ এমনও আছেন যারা কোনও না কোনও কারণে মহাকুম্ভে যেতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে তারা কীভাবে মহাকুম্ভ স্নানের ফল পাবেন, সে সম্পর্কেও আমাদের শাস্ত্র, ধর্মগ্রন্থে বলা হয়েছে। এই উপায়গুলি খুবই সহজ, যে কেউ করতে পারেন। স্নান করার সময় পূর্ণ শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাস থাকা জরুরি। যেতে না পারলে, কাছের যে কোনও পবিত্র নদীতে স্নান করে পুণ্য অর্জন করা যায়। অমৃত স্নানের দিন প্রবাহিত জলে গঙ্গাজল মিশিয়ে বাড়িতে স্নান করলেও পুণ্য অর্জন সম্ভব হয়।*

হিন্দুশাস্ত্রে আমাদের ধর্মগ্রন্থে এমন একটি মন্ত্র বলা হয়েছে, স্নান করার সময় যা বললে ঘরে বসেই কুম্ভ স্নানের ফল পাওয়া যায়। তবে এর জন্য মনে পূর্ণ শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাস থাকা খুবই জরুরি। এর জন্য স্নান করার সময় প্রথমে দেবনদী গঙ্গার স্মরণ করুন এবং মগ, ঘটি দিয়ে শরীরে জল ঢালার সময় ধীরে ধীরে এই মন্ত্রটি বলুন- “ওঁ গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরী সরস্বতী। নর্মদে সিন্ধু কাবেরী জলেস্মিন সন্নিধিং কুরু।।” ঘরে কুম্ভ স্নানের পুণ্যফল লাভের জন্য কিছু বিষয় মনে রাখবেন যেমন স্নান করার সময় সাবান বা শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন না। স্নানের পর সূর্যকে অর্ঘ্য দিন এবং তুলসী গাছেও জল অর্পণ করুন। মহাকুম্ভে স্নানের পর দ্বিতীয় সবচেয়ে পুণ্যের কাজ হল দান করা। তাই আপনি যখনই এই উপায় করবেন, সেদিন নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী অভাবীদের কাপড়, খাবার ইত্যাদি দান করতে পারেন। যেদিন আপনি এই উপায় করবেন, সেদিন সাত্ত্বিক খাবার খান। কুম্ভ স্নানের ফল পেতে শরীরের সাথে মানসিক শুদ্ধিরও যত্ন নিন। এই দিন কাউকে খারাপ কথা বলবেন না। কারও প্রতি খারাপ চিন্তাও মনে আনবেন না। স্নান করার সময় দেবনদী গঙ্গার স্মরণ করুন।

কুম্ভস্নানে সরাসরি পুণ্য ও পাওয়া যায় না, মোক্ষও পাওয়া যায় না, পাওয়া যায় অমৃত। আর এই অমৃতই মানুষকে দেয় যথাক্রমে পুণ্য এবং মোক্ষ। অমৃত কি? যা মানুষকে মৃত্যু-রহিত করে, তাই-ই অমৃত। সুতরাং জ্ঞানই হল অমৃত। কারণ জ্ঞানই মানুষকে মৃত্যু-রহিত করে, অমর করে। আমাদের যদি চেতনা থাকেতো কুম্ভে গিয়ে আমরা অবশ্যই এমন কিছু জ্ঞান অর্জন করতে পারবো, যা আমাদের জীবনীশক্তি বাড়িয়ে দেবে, যা আমাদেরকে অমর করে দিলেও করে দিতে পারে। তাই, দুর্লভ মনুষ্য জন্ম লাভ করে ডুব দিন আপন অন্তস্থল, নিজের অন্তরে। নিজস্ব গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতীর সঙ্গমস্থলে, যেখানে পরম জ্ঞানের মহা অমৃতভান্ড লুকোনো আছে! সেই অমৃতের খোঁজ যিনি পেয়েছেন তিনি নিজেই এক তীর্থক্ষেত্র! কারণ, আধ্যাত্মিক মতে, গঙ্গা হলো জ্ঞানের প্রতীক ! যমুনা হলো প্রেমের প্রতীক ! সরস্বতী হলো প্রজ্ঞার প্রতীক! আমাদের সকলের জ্ঞানচক্ষু উন্মেষ হোক।

আমরা মানুষ সকলেই একদিন মারা যাব, কিন্তু কে, কোথায়, কিভাবে মারা যাব সেটা আমরা জানি না। কত মানুষ কত রকমভাবে মারা যান। গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান অনেকেই, আরও কত কারণ। অতএব দুর্ঘটনায় কুম্ভমেলায় যারা মারা গেলেন, তারা মেলায় পুণ্যের জন্য না গেলেই বেঁচে যেতেন, অথবা তারা কেন পুণ্য করতে গেলেন? এতে লাভ কী হলো? তাদের প্রাণটাই যে চলে গেল? এসব ভাবাই কিন্তু অর্থহীন, কুম্ভমেলায় গিয়ে তার পুণ্য সঞ্চযের সঙ্গে তাদের মৃত্যুর কোনো যোগ আমি দেখি না। আমার সঙ্গে অনেকের মতের মিল হতে নাও পারে। মৌনী অমাবস্যায় মহাকুম্ভে অমৃত স্নানে দুর্ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়। দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী, সাধু-সন্তরাও এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন ও পীড়িত পরিবারের প্রতি সমবেদনা ব্যক্ত করেছেন। দুঃখজনক ঘটনার জন্য পীড়িত পরিবারের প্রতি সমবেদনা ব্যক্ত করি। সকলের জন্য গুরু মহারাজের শুভ আশির্বাদ প্রার্থনা করি। সবার মঙ্গল হোক, সবার কল্যাণ হোক, সবাই শুভ দর্শন করুক, কেউ যেন দুঃখ না পায়…..
ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্ …..।
স্বামী আত্মভোলানন্দ(পরিব্রাজক)

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *