ওঁ নমঃ শ্রী ভগবতে প্রণবায়….!
আমাদের এই মূল্যবান সুন্দর মনুষ্য জীবনে সত্য সনাতন হিন্দুধর্মে প্রকৃতির নিয়মে ১২ মাসে ১২টি পূর্ণিমা পালিত হয়। প্রতিটি পূর্ণিমার বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে, যেমন বৈশাখী পূর্ণিমা তথা বুদ্ধ পূর্ণিমা দিনটি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জন্য এক অবিস্মরণীয় দিন। কারণ এ তিথি ঘিরে রয়েছে তথাগত বুদ্ধের তিনটি স্মরণীয় ঘটনা। ত্রি-স্মৃতিবিজড়িত এ তিথির তাৎপর্য অত্যন্ত বিশাল। বুদ্ধের জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ এবং মহাপরিনির্বাণ – এই তিনটি ঘটনা বৈশাখী পূর্ণিমার সাথে বিশেষভাবে জড়িত। পুরাণ অনুযায়ী বৈশাখী পূর্ণিমায় গৌতম বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেন। আবার এই তিথিতেই বুদ্ধত্ব জ্ঞান লাভ করেন তিনি। গৃহত্যাগের পর রাজকুমার সিদ্ধার্থ সত্যের সন্ধানে সাত বছর পর্যন্ত বনে ঘুরতে থাকেন। কঠোর তপস্যা করেন, অবশেষে বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে বোধগয়ায় বোধি বৃক্ষের নীচে বুদ্ধত্ব জ্ঞান লাভ করেন। জ্ঞান লাভের পর বুদ্ধ পায়েস খেয়ে নিজের ব্রতভঙ্গ করেন। তাই বুদ্ধ পূর্ণিমায় পায়েস রান্না করা হয়। বুদ্ধদেবকে পায়েসের প্রসাদ নিবেদন করা হয়। শুধু তাই নয়, বৈশাখ পূর্ণিমায় কুশীনগরে বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণ হয়।
বুদ্ধ পূর্ণিমা বা বৈশাখী পূর্ণিমা হল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পবিত্রতম উৎসব। এই পুণ্যোৎসব বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে উদযাপিত হয়। গৌতম বুদ্ধের অমৃত বাণীগুলি মূলত অহিংসা, দয়া, জ্ঞান এবং আত্ম-নিয়ন্ত্রণ ও সত্যের উপর জোর দেয়, বুদ্ধের বাণীগুলি মানুষকে দুঃখের কারণ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলে এবং জীবনের লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করে। তাঁর মূলনীতি হলো অহিংসা, সাম্য, মৈত্রী ও প্রীতির বন্ধনে সবাইকে আবদ্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। এই পবিত্র তিথিতে বুদ্ধদেব জন্মগ্রহণ করেছিলেন, বোধি বা সিদ্ধিলাভ করেছিলেন এবং মহাপরিনির্বাণ লাভ করেছিলেন। বুদ্ধ পূর্ণিমা তিথিকে অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। এদিন যে কোনও নতুন শুরু অত্যন্ত শুভ। এই পবিত্র দিনে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীগণ স্নান করেন, শুচিবস্ত্র পরিধান করে মন্দিরে বুদ্ধের বন্দনায় রত থাকেন। ভক্তগণ প্রতিটি মন্দিরে বহু প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করেন, ফুলের মালা দিয়ে মন্দিরগৃহ সুশোভিত করে বুদ্ধের আরাধনায় নিমগ্ন হন। এছাড়া বুদ্ধগণ এই দিনে বুদ্ধ পূজার পাশাপাশি পঞ্চশীল, অষ্টশীল, সূত্রপাঠ, সূত্রশ্রবণ, সমবেত প্রার্থনা করে থাকেন।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি হিন্দুদের কাছেও এই দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ হিন্দু ধর্ম অনুসারে শ্রী বিষ্ণুর নবম অবতার হিসেবে গণ্য করা হয় গৌতম বুদ্ধকে। স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজ ও বললেন বুদ্ধের পর হইতে সঙ্ঘ কি বস্তু তাহা মানুষ ভুলিয়া গিয়াছে। আমার সঙ্ঘ হইবে দ্বিতীয় বুদ্ধের সঙ্ঘ, আমি সমগ্র দেশ ও জাতিকে বুদ্ধ, শঙ্কর, চৈতন্যের মত নতুন আদর্শ ও তপঃশক্তিতে সঞ্জীবিত করিতে চাই। একদিন লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি তৃষিত ও যাপিত নরনারী যেমন বৌদ্ধ সঙ্ঘের আশ্রয় গ্রহণ করিয়া শান্তি ও নির্বাণের অধিকারী হইয়াছিল; তেমনি এমন একদিন আসিবে যখন ভারতের তথা জগতের কোটি কোটি নরনারী এই মহাসঙ্ঘের
শরণাগত ও শরণাপন্ন হইয়া শান্তি ও মুক্তি লাভে ধন্য হইবে।
হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী বুদ্ধ পূর্ণিমার দিনে পবিত্র নদীতে স্নান করে বাড়িতে সত্যনারায়ণ পুজো করা উচিত। সন্ধ্যাবেলা চন্দ্রোদয়ের পর চাঁদকে দুধের অর্ঘ্য দিন। মনে করা হয় পূর্ণিমা তিথিতে চন্দ্রকে অর্ঘ্য দিলে মানসিক শান্তি লাভ করা যায়। তাঁর মূলনীতি হলো অহিংসা, সাম্য, মৈত্রী ও প্রীতির বন্ধনে সবাইকে আবদ্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।
তাই, আমাদের পৃথিবী সুন্দর হোক, মানুষের রাষ্ট্র মানবিক হোক, আমাদের রাষ্ট্র শুভ ও মঙ্গলময় হোক। সবার কল্যাণে নিয়োজিত হোক, ভগবান বুদ্ধের কাছে, জগৎ গুরু ভগবান স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজের কাছে এই প্রার্থনা করি…! আগামী ইং – 12/05/2025 ( বাং – ২৪ শে বৈশাখ) সোমবার বুদ্ধপূর্ণিমা/বৈশাখী পূর্ণিমা। ২০২৫ সালে, বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী, পূর্ণিমা ১১ মে, রবিবার সন্ধ্যা ৭:১৭ মিনিট থেকে ১২ মে, সোমবার সন্ধ্যা ৯.১৯ মিনিট পর্যন্ত থাকবে। সবাইকে বৈশাখী পূর্ণিমা/বুদ্ধ পূর্ণিমার শুভেচ্ছা।
ওঁ বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি।
ওঁ সঙ্ঘং শরণং গচ্ছামি।
ওঁ ধর্মং শরণং গচ্ছামি।
ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্ ।
স্বামী আত্মভোলানন্দ *পরিব্রাজক* l