Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজ ১জুলাই, ইতিহাসের দিকে চোখ বুলিয়ে দেখে নেব ইতিহাসের এই দিনে বিশিষ্টজনদের জন্ম-মৃত্যু, দিনসহ ঘটে যাওয়া ঘটনা।।।

আজ ১জুলাই। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনা, বিশিষ্টজনদের জন্ম-মৃত্যু দিনসহ গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু বিষয়।

দিবস—–

(ক)  জাতীয় চিকিৎসক দিবস (ভারত)।
(খ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস (বাংলাদেশ)।

আজ যাদের জন্মদিন—-

১৮১৮ – ইগনাৎস জেমেলভাইস, হাঙ্গেরীয় চিকিৎসক ও হাত ধোয়া ব্যবস্থার প্রবর্তক।

১৮৭২ – লুই ব্লেরিওট, ফরাসি পাইলট ও প্রকৌশলী।
১৮৭৯ – লিওন জউহাউক্স, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ফরাসি ইউনিয়ন নেতা।

১৮৮০ – অমরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সক্রিয় কর্মী, যুগান্তর দলের তহবিল গঠনে ভারপ্রাপ্ত ছিলেন।

১৮৮২ – ভারতরত্ন বিধানচন্দ্র রায়, চিকিৎসক ও পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী।

১৮৯৯ – চার্লস লটন, ইংরেজ অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক ও চিত্রনাট্যকার।
১৯০২ – উইলিয়াম ওয়াইলার, একাডেমি পুরস্কার বিজয়ী মার্কিন চলচ্চিত্র পরিচালক।
১৯০৩ – আবুল ফজল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং রাষ্ট্রপতির শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা।
১৯০৭ – আতাউর রহমান খান, বিশিষ্ট রাজনীতিক, পার্লামেন্টারিয়ান।
১৯১৮ – আহমেদ দিদাত, দক্ষিণ আফ্রিকার লেখক ও ধর্মবেত্ত্বা এবং ভারতীয় বংশদ্ভুত জনবক্তা ও তার্কিক।

১৯২৩ – হাবীবুর রহমান, বাঙালি কবি, শিশুসাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
১৯২৪ – অ্যান্টনি রামালেট্‌স, স্প্যানিশ ফুটবলার।
১৯২৬ – রবার্ট ফোগেল, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী আমেরিকান অর্থনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদ।

১৯২৮ – মীর কাশেম খান, একুশে পদক বিজয়ী বাঙালি সেতারবাদক, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক।
১৯২৯ – জেরাল্ড এডেলম্যান, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী আমেরিকান জীববিজ্ঞানী ও চিকিৎসক।
১৯৩০ – মুস্তফা আক্কাদ, সিরীয়-আমেরিকান পরিচালক ও প্রযোজক।

১৯৩২- (ক)  ভারতীয় বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক ও কৃত্তিবাস পত্রিকার অন্যতম প্রথম সম্পাদক আনন্দ বাগচী।
(খ) এম এন আখতার, বাংলাদেশি গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী।

১৯৩৮ – হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া, বিখ্যাত ভারতীয় বাঁশী বাদক।
১৯৪০ – সৈয়দ আব্দুল হাদী, বাংলাদেশি সঙ্গীত শিল্পী।
১৯৪১ – অ্যালফ্রেড গুডম্যান গিলম্যান, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী আমেরিকান ফার্মাকোলজিস্ট ও প্রাণরসায়নবিদ।
১৯৪৭ – আবদুল কুদ্দুস মাখন, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য।
১৯৪৮ – ডলি আনোয়ার, বাংলাদেশি চলচ্চিত্র অভিনেত্রী।
১৯৫৩ – লরেন্স গঞ্জি, মল্টিয় আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও ১২ তম প্রধানমন্ত্রী।
১৯৫৩ – জাডরানকা কসর, ক্রোয়েশীয় সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ ও ৯ম প্রধানমন্ত্রী।
১৯৫৫ – লি কেকিয়াং, চীনের অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদ।
১৯৬১ – (ক)  কার্ল লুইস, মার্কিন ক্রীড়াবিদ।
(খ)প্রিন্সেস ডায়ানা, যুক্তরাজ্যের যুবরাজ্ঞী।
১৯৬৮ – ওস্তাদ রশিদ খান, রামপুর ঘরানার হিন্দুস্তানী শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী।
১৯৭৬ – রুড ভ্যান নিস্টেল্‌রয়ি, ওলন্দাজ ফুটবলার।
১৯৮৬ – আগনেজ মো, ইন্দোনেশীয় গায়ক, গীতিকার, প্রযোজক ও অভিনেত্রী।
২০০১ – চুজেন জেকবস, আমেরিকান বিনোদনকারী।

ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনের ঘটনাবলী—-

১৮৩৫ – উইলিয়াম অ্যাডাম কর্তৃক বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষাবিষয়ক রিপোর্ট (অ্যাডাম রিপোর্ট) পেশ করা হয়।
১৮৪৭ – মার্কিন ডাক বিভাগ প্রথম ডাক টিকিট চালু করে।
১৮৬২ – ভারতের প্রাচীনতম হাইকোর্ট কলকাতা উচ্চ আদালত বা কলকাতা হাইকোর্ট স্থাপিত হয়।
১৮৬২ – রাশিয়ার মস্কোতে রাষ্ট্রীয় গণগ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৮৬৩ – আমেরিকায় গৃহযুদ্ধ (গ্যাটিসবার্গ যুদ্ধ) শুরু হয়।
১৮৬৭ – কানাডা ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে।
১৮৭৯ – অবিভক্ত ভারতে প্রথম পোস্টকার্ড চালু হয়।
১৯০৬ – কানাড়া ব্যাঙ্ক ভারতের চতুর্থ বৃহত্তম ব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯০৮ – আন্তর্জাতিক আতান্তর সংকেত এসওএস চালু হয়।
১৯২১ – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯২১ – কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়না প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯২১ – নদীয়ার বড়জাগুলী তে জমিদার গোপাল সিংহের হাত ধরে বড়জাগুলী গোপাল একাডেমি স্কুল প্রতিষ্ঠা হয় , এটি নদীয়া জেলার সবচেয়ে প্রাচীন উচ্চ বিদ্যালয় ।
১৯২৯ – স্যার আবদুর রহিমকে সভাপতি, মওলানা আকরম খাঁকে সম্পাদক এবং শেরেবাংলা একে ফজলুল হককে সহ-সভাপতি করে নিখিল বঙ্গ প্রজা সমিতি গঠিত হয়।
১৯৪৭ – ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতা আইন পাস করা হয়।
১৯৫৫ – ভারতের বৃহত্তম ব্যাঙ্ক স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইণ্ডিয়া তথা ভারতীয় স্টেট ব্যাংক নামে পরিচিত হয়।
১৯৬০ – ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত সোমালিয়া ও ইতালি নিয়ন্ত্রিত সোমালিয়ার একীভূত হওয়ার মধ্য দিয়ে আফ্রিকার দেশ সোমালিয়া স্বাধীনতা লাভ করে।
১৯৬২ – আফ্রিকার ছোট্ট দেশ বুরুন্ডি ও রুয়ান্ডা স্বাধীনতা অর্জন করে।
১৯৬৬ – কানাডায় প্রথম রঙিন টেলিভিশন সম্প্রচারিত হয়।
১৯৬৭ – কানাডা প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৯১ – বাংলাদেশে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) চালু হয়।
১৯৯৭ – ভারতীয় উপমহাদেশের বৃহত্তম বিজ্ঞান সংগ্রহালয় ও বিজ্ঞানকেন্দ্রিক বিনোদন উদ্যান- সায়েন্স সিটি কলকাতা এর উদ্বোধন হয়।
২০০২ – নেদারল্যান্ডসের হ্যাগে বিশ্বের প্রথম স্থায়ী আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালতের কার্যক্রম শুরু।
২০১৬ – বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার গুলশানের একটি রেস্তোরায় আইএসআইএস (ইসলামিক স্টেট অব ইরাক এন্ড দ্য লেভান্ট) কর্তৃক আক্রমণ হয়।
২০১৭ – ভারতে পরোক্ষ কর পণ্য-পরিষেবা কর পদ্ধতি চালু হয়।

এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন যারা—-

১৮৯৬ – হ্যারিয়েট বিচার স্টো, মার্কিন লেখিকা এবং দাসপ্রথা বিলোপ আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী।
১৯৬২ – ভারতরত্ন বিধানচন্দ্র রায়, ভারতীয় চিকিৎসক, পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী।
১৯৬৫ – ওয়ালি হ্যামন্ড, ইংল্যান্ডের টেস্ট ক্রিকেটার এবং অধিনায়ক।
১৯৭১ – উইলিয়াম লরেন্স ব্র্যাগ, অস্ট্রেলীয় বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী।
১৯৭১ – লিয়ারি কনস্ট্যান্টাইন, ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেট খেলোয়াড়, আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ।
১৯৭৪ – হুয়ান পেরোন, আর্জেন্টিনা ররাষ্ট্রপতি।
১৯৯৬ – মার্গো হেমিংওয়ে, মার্কিন ফ্যাশন মডেল ও অভিনেত্রী।

১৯৯৭ – রবার্ট মিচাম, মার্কিন অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, লেখক, কবি, সুরকার ও গায়ক।
১৯৯৯ – সিলভিয়া সিডনি, মার্কিন অভিনেত্রী।
২০০০ – ওয়াল্টার ম্যাথাউ, মার্কিন অভিনেতা ও কৌতুকাভিনেতা।
২০০১ – নিকোলাই গেন্নাদিয়েভিচ বাসভ, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী রাশিয়ান পদার্থবিদ।
২০০৪ – মার্লোন ব্রান্ডো, অস্কার পুরস্কার বিজয়ী মার্কিন চলচ্চিত্র অভিনেতা।
২০০৪ – পিটার বার্নেস, ইংরেজ লেখক।
২০০৬ – ফ্রেড ট্রুম্যান, ইংরেজ ক্রিকেটার, লেখক এবং ধারাভাষ্যকার।
২০০৬ – রয়ুটারো হাশিমটো, জাপানি রাজনীতিবিদ ও ৫৩ তম প্রধানমন্ত্রী।
২০০৯ – কার্ল মালডেন, মার্কিন অভিনেতা।
২০১৫ – নিকোলাস ওয়িন্টন, ইংরেজ লেফটেন্যান্ট ও মানবিক।
২০২০ – লতিফুর রহমান, বাংলাদেশি শিল্পপতি ও ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান।

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

অমরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সক্রিয় কর্মী – জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি।।।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের অব্যর্থ পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে এমন ই এক বাঙালি বিপ্লবী ছিলেন অমরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। অমরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় একজন ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।

যুগান্তর আন্দোলনের তহবিল আদায়ের জন্য ভারপ্রাপ্ত অবস্থায়, তার কার্যক্রম মূলত, বিহার, ওড়িশা এবং অধুনা উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ড ব্যাপী বিপ্লবী কেন্দ্রগুলিতে ছিল।

প্রাথমিক জীবন——–

১৮৭৯ সালের ১ জুলাই কলকাতার কাছে হুগলি জেলার উত্তরপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। অমরেন্দ্রের পিতা উপেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। উত্তরপাড়ায় প্রাথমিক শিক্ষা এবং ভাগলপুরে মাধ্যমিক শিক্ষার পর, অমরেন্দ্র কলকাতার সুপরিচিত ডাফ কলেজে (বর্তমানে স্কটিশ চার্চ কলেজ) পড়াশোনা করেন, যেখানে তার সহপাঠীদের মধ্যে ছিলেন পরবর্তী জীবনে সহ বিপ্লবী উপেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি এবং ঋষিকেশ কাঞ্জিলাল। স্নাতক শেষ করার পর, তিনি এবং তার বন্ধুরা সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জির সাথে ভারতজুড়ে তার বক্তৃতা সফরে যান এবং পরে সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জির দ্বারা প্রভাবিত সমাজসেবা কেন্দ্র খোলেন। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সময়, অমরেন্দ্র ব্রিটিশ পণ্য বয়কট চিহ্নিত করে জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।

প্রথম পদক্ষেপ————

রাজা পিয়ারীমোহন এবং তার পুত্র রাজেন্দ্রনাথ মুখার্জির অর্থায়নে, তিনি উত্তরপাড়া শিল্প-সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন, একটি কাঠের কারখানা তৈরি করেন, ছয়টি তাঁত ক্রয় করেন এবং স্বদেশী কাপড় বিক্রি শুরু করেন। শীঘ্রই তিনি যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়কে সহায়তা করে নদীয়ার পোড়াগাছা ইউনিটের তত্ত্বাবধান করেন। তারা ছাত্রভান্ডার গঠনে সহযোগিতা করেছিল, যা পরে শ্রমজীবি সমবায়ে রূপান্তরিত হয়েছিল।
১৯০৩ সাল থেকে যখন যতীন মুখোপাধ্যায় সরাসরি অরবিন্দ ঘোষের আদেশে কাজ করছিলেন, তখন অমরেন্দ্র ১৯০৭ সালে শ্রী অরবিন্দের সাক্ষাত পান এবং এই কথাগুলো দিয়ে: “নিজেকে ঈশ্বর ও কাছে সমর্পণ কর এবং ডিভাইন মাদারের নামে ভারতবর্ষের সেবা করে যাও। এটাই তোমাকে আমার দীক্ষা ” দীক্ষা পেয়েছিলেন। শ্রী অরবিন্দ তাকে আরো বলেন “আমরা যদি দেশের স্বাধীনতা অর্জন করতে চাই, তবে আমাদের এর জন্য সবকিছুই উত্সর্গ করতে হবে, এবং এমনকি আমাদের জীবন ত্যাগ করতে প্রস্তুত হওয়া উচিত। যদি আমরা দেশকে মুক্ত করতে চাই, তাহলে আমাদের মৃত্যুভয় জিততে হবে।” চরমপন্থীদের আন্দোলনের তহবিল সংগ্রহের জন্য শ্রী অরবিন্দ দ্বারা উত্সাহিত, হয়ে তিনি যতীন মুখার্জির কাছাকাছি আসেন। বাণিজ্যিক কার্যক্রমের পিছনে, তাদের কেন্দ্রগুলি আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলির স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আশ্রয়স্থল হিসাবে, পাশাপাশি যতীন ও অন্যান্য যুগান্তর নেতাদের বৈঠকের জন্য ব্যবহৃত হত।

পরবর্তী জীবন————-

বাংলার ফিরে আসার পর, অমরেন্দ্র চেরি প্রেসের পরিচালনা গ্রহণ করে, আত্মশক্তি মুদ্রণ ও প্রকাশ করেন, স্বরাজ্য পার্টির কাঠামোর মধ্যে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশকে তার যুগান্তরের সাথীদের পূর্ণ সহানুভূতি প্রদান করেন। স্বল্প মেয়াদী কারাগার বাসের পর তিনি ১৯২৩ সালে মুক্তি পান এবং সুরেশ মজুমদার দ্বারা কর্মী সংঘ এর সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৪৫ সালে রেডিকাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে যোগ দেন।
তিনি ১৯৫৭ সালে উত্তরপাড়ায় তিনি প্ররয়া হন।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

স্মরণে, ভারতীয় বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক ও কৃত্তিবাস পত্রিকার অন্যতম প্রথম সম্পাদক আনন্দ বাগচী।।।।

জন্ম–
১ জুলাই ১৯৩২ সালে আনন্দ বাগচীর জন্ম অবিভক্ত বাংলার অধুনা বাংলাদেশের পাবনা জেলার স্বাগতা গ্রামে। পিতা শ্রীচন্দ্র বাগচী এবং মাতা সজলবালা দেবী। পাঁচ ভাই বোনের সকলের বড় ছিলেন তিনি। আনন্দ বাগচী ছিলেন ভারতীয় বাঙালি কবি ও উপন্যাসিক।

শিক্ষা জীবন——-

তার উচ্চ শিক্ষাএ কলকাতায়। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে স্কটিশ চার্চ কলেজে পড়ার সময় তার সহপাঠী ছিলেন কবি দীপক মজুমদার। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এম.এ পাশ করেন।
কর্মজীবন ——
এম.এ পাশের পর তিনি ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে কর্মজীবন শুরু করেন বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজে| বাঁকুড়ার এই কলেজে ষোল বৎসর অধ্যাপনা করার পর তিনি সাগরময় ঘোষের আহ্বানে দেশ পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগে যোগ দেন এবং কলকাতায় চলে আসেন। সাহিত্যজীবনের শুরুতে তিনি হর্ষবর্ধন এবং ত্রিলোচন কলমচির ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন।
সাহিত্যকর্ম——
উনিশ শতকের পঞ্চাশের দশকে তিনি কবি হিসেবে বিখ্যাত হলেও ঔপন্যাসিক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, দীপক মজুমদার এবং তিনি ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত তরুনতম কবিদের মুখপত্র কবিতা পত্রিকা কৃত্তিবাসের প্রথম সংখ্যার সম্পাদক ছিলেন। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ স্বগত সন্ধ্যার কবিতা এই পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এবং তিনি কবি হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেন।
কৃত্তিবাস পত্রিকার মাধ্যমে তিনি শক্তি চট্টোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব বসু, শরৎকুমার মুখোপাধ্যায় প্রমুখের সঙ্গে আধুনিক কবিতা আন্দোলনে নিবিড়ভাবে যুক্ত হন। এছাড়া তিনি শেষে সেতু, পারাবত, বৃশ্চিক প্রভৃতি পত্রিকা বিভিন্ন সময়ে সম্পাদনা করেছেন। কবিতা উপন্যাস ছাড়াও তিনি কিশোরদের উপন্যাস, ছোটগল্প, রম্যরচনা ইত্যাদি রচনা করেছেন। প্রকাশিত রচনা ও গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল –
কাব্যগ্রন্থ—–
স্বগত সন্ধ্যা, তেপান্তর, উজ্জ্বল ছুরির নিচে, বিস্মরণ, শ্রেষ্ঠ কবিতা।
উপন্যাস ও অন্যান্য রচনা—–
চকখড়ি, আক্ষেপানুরাগ , স্বকালপুরুষ, ফেরা না ফেরা, চাঁদ ডুবে গেল’, পরমায়ু, রাজযোটক, এই জন্ম অন্য জীবন, ছায়ার পাখি, সাহিত্য প্রসঙ্গে প্রভৃতি।
কবির স্বকালপুরুষ গ্রন্থটি হল কাব্যোপন্যাস এবং এটিই ছিল বাংলা সাহিত্যে সম্ভবত প্রথম প্রচেষ্টা।

পারিবারিক জীবন———

কবি আনন্দ বাগচী ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ২ ফেব্রুয়ারি মীরা বাগচীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের একমাত্র পুত্র সুনন্দ বাগচী।

জীবনাবসান——-

কবি আনন্দ বাগচী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ খ্রিস্টাব্দের ৯ জুন পরলোক গমন করেন।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজ জাতীয় চিকিৎসক দিবস, জানুন কেন পালিত হয় এবং দিনটির গুরুত্ব।।।।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে ডাক্তাররা সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন। সমাজে তাদের আবাদান অনস্বীকার্য। ঈশ্বরের পরে আমরা ডাক্তারদের স্থান দিয়ে থাকি। ডাক্তাররা দেশের এমন এক সৈনিক, যারা সীমান্তে যুদ্ধ করে না কিন্তু জীবন বাঁচাতে এবং জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে রেখে মানুষের আয়ু বাড়াতে নিবেদিতপ্রাণ কাজ করে।।।

জাতীয় চিকিৎসক দিবস হল এমন একটি দিন যা ব্যক্তিগত জীবন ও সম্প্রদায়ের জন্য চিকিৎসকদের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য উদযাপিত হয়। কিছু দেশে দিনটিকে ছুটির দিন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবে দিনটিতে ডাক্তার ও স্বাস্থ্য কর্মীদের সম্মান জানাতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জাতীয় ডাক্তার দিবসের এই বছরের থিম হল “সেলিব্রেটিং রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড হিলিং হ্যান্ডস”। এই বছরের থিমের মাধ্যমে, আমরা সেই চিকিৎসক পেশাদারদের উদযাপন করতে চাই যারা মহামারীর কারণে কঠিন সময়ের মুখোমুখি হয়ে কঠোর পরিশ্রম করেছেন।
ভারতে জাতীয় চিকিৎসক দিবসের ইতিহাস—
ভারতে, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে তাঁর অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়ের সম্মানে ১৯৯১ সালের ০১শে জুলাই প্রথম জাতীয় ডাক্তার দিবস পালন করা হয়েছিল। ডাঃ বি.সি. রয়, ১৮৮২ সালের ০১শে জুলাই জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৬২ সালের ০১ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন, একটি অদ্ভুত কাকতালীয় ঘটনা।
ডঃ বিধান চন্দ্র রায় একজন সুপরিচিত ডাক্তার, শিক্ষাবিদ, মুক্তিযোদ্ধা, সমাজসেবক এবং রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি ১৯৮৪ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত ১৪ বছর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীও ছিলেন। ০৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৬১ তারিখে তিনি ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার “ভারত রত্ন” লাভ করেন। তিনি মানুষের জন্য তার জীবন দিয়েছেন, অনেক ব্যক্তির চিকিৎসা করেছেন এবং লক্ষ লক্ষ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছেন। তিনি মহাত্মা গান্ধীর ব্যক্তিগত চিকিৎসকও ছিলেন।
১৯৭৬ সালে, B.C. চিকিৎসা, বিজ্ঞান, পাবলিক অ্যাফেয়ার্স, দর্শন, শিল্প ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে কাজ করা বিশিষ্ট ব্যক্তিদের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য তাঁর স্মরণে রায় জাতীয় পুরস্কারও প্রতিষ্ঠিত হয়।
জাতীয় চিকিৎসক দিবসের তাৎপর্য—
সমাজে চিকিৎসকদের ভূমিকার গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিতে এবং উপলব্ধি করতে ভারতে জাতীয় ডাক্তার দিবস পালিত হয়েছে। এটি সাধারণ জনগণকে ডাক্তারদের দ্বারা রোগীর যত্নের প্রতি গুরুত্ব, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং দায়িত্বগুলি জানতে সহায়তা করে।
এই বিশেষ দিনে, প্রত্যেক ভারতীয়ের দক্ষ চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গর্ব বোধ করা উচিত যারা তাদের দেশের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেন এবং চিকিৎসা জরুরী পরিস্থিতিতে তাদের প্রচেষ্টা ও অবদানের জন্য কৃতজ্ঞ হন।
প্রতিটি ভারতীয় নাগরিককে অবশ্যই শ্রদ্ধা জানাতে হবে এবং চিকিৎসা জরুরী অবস্থা এবং মহামারী পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সাধারণ জনগণকে সহায়তা করার জন্য প্রতিটি ডাক্তারের প্রচেষ্টার প্রশংসা করতে হবে। COVID-19 মহামারী চলাকালীন চিকিৎসা কর্মীদের (ডাক্তার এবং নার্স) বীরত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা অক্ষয়, যদিও আজ বিশ্ব করোনাভাইরাস মুক্ত।
ডাক্তারদের গুরুত্ব ও ভূমিকা—
সমাজে ডাক্তারদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে; তারা রোগীদের সুস্থতার জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করে, রোগ বা অবস্থা থেকে দ্রুত পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করে। তারা চিকিৎসা বিজ্ঞানকে ব্যাপকভাবে বোঝে এবং রোগীদের চিকিৎসার অবস্থার চিকিৎসা এবং আয়ু বাড়ানোর জন্য তাদের জ্ঞানকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করে।
এমন অনেক ঘটনায় যেখানে রোগী ও তাদের স্বজনদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েও চিকিৎসকরা হাল ছাড়েননি। সাধারণ জনগণের জন্য তাদের চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রেখেছে। তাদের অবদান ও অক্লান্ত পরিশ্রম কেউ ভুলতে পারবে না।
ইতিহাস—-
প্রথম ডাক্তার দিবস পালন করা হয়েছিল ২৮ মার্চ, ১৯৩৩, উইন্ডার, জর্জিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এই প্রথম পালনের মধ্যে ছিল চিকিত্সক এবং তাদের স্ত্রীদের কাছে কার্ড পাঠানো, ডক্টর লং সহ মৃত ডাক্তারদের কবরে ফুল দেওয়া এবং ডক্টর এবং মিসেস উইলিয়াম টি. র্যান্ডলফের বাড়িতে একটি আনুষ্ঠানিক নৈশভোজ। ব্যারো কাউন্টি অ্যালায়েন্স চিকিৎসকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মিসেস অ্যালমন্ডের প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পরে, ব্যারো কাউন্টি অ্যালায়েন্সের সভাপতি মিসেস ই.আর. হ্যারিস অফ উইন্ডার দ্বারা ১৯৩৩ সালে জর্জিয়া স্টেট মেডিকেল অ্যালায়েন্সের কাছে পরিকল্পনাটি উপস্থাপন করা হয়েছিল। ১০ মে, ১৯৩৪-এ, অগাস্টা, জর্জিয়ার বার্ষিক রাষ্ট্রীয় সভায় প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছিল। সাউদার্ন মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের উইমেনস অ্যালায়েন্সের কাছে প্রস্তাবটি পেশ করা হয়েছিল তার ২৯তম বার্ষিক সভায় সেন্ট লুইস, মিসৌরিতে, ১৯-২২ নভেম্বর, ১৯৩৫, অ্যালায়েন্স প্রেসিডেন্ট মিসেস জে বোনার হোয়াইট দ্বারা। সেই থেকে, ডাক্তার দিবস সাউদার্ন মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন অ্যালায়েন্সের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং সমার্থক হয়ে উঠেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট এবং প্রতিনিধি পরিষদ পাস করেছে S.J. RES #৩৬৬ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১০১তম কংগ্রেসের সময়, যা রাষ্ট্রপতি বুশ ৩০ অক্টোবর, ১৯৯০ তারিখে স্বাক্ষর করেছিলেন (পাবলিক ল ১০১-৪৭৩ তৈরি করে), ৩০ মার্চ পালিত হবে এমন একটি জাতীয় ছুটি হিসাবে ডাক্তার দিবসকে মনোনীত করে।
ডাঃ মেরিয়ন মাস ডঃ কিম্বার্লি জ্যাকসন এবং ডাঃ ক্রিস্টিনা ল্যাং এর সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে চিকিৎসক দিবসকে চিকিৎসক সপ্তাহে পরিবর্তিত করার জন্য আবেদন করেছেন। এটি মার্চ ২০১৭ এ গৃহীত হয়েছিল।
২০১৭ সালে ফিজিশিয়ান ওয়ার্কিং টুগেদার (PWT, ডক্টর কিম্বার্লি জ্যাকসন প্রতিষ্ঠিত) কেভিনএমডি-তে আয়োজিত জাতীয় চিকিৎসক সপ্তাহ উদযাপনের জন্য নিবন্ধের একটি সিরিজ স্পনসর করেছে। ২০১৮ সালে PWT ওপেনক্সমেডের সাথে চিকিৎসকের সুস্থতা এবং অ্যাডভোকেসির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে একটি বিনামূল্যের অনলাইন কনফারেন্স স্পনসর করেছে। ২০১৯ সালে, PWT এবং Openxmed মেডিকেল ছাত্র এবং বাসিন্দাদের জন্য একটি স্কলারশিপ প্রোগ্রাম স্পনসর করেছে। সপ্তাহব্যাপী ইভেন্টটি চিকিৎসক সম্প্রদায়কে সমর্থন এবং সমর্থন করার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
বিভিন্ন দেশে উদযাপন—
তবে জাতীয় চিকিৎসক দিবস পালনের তারিখ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে পালিত হয়। এক ই তারিখে সকল দেশে পালিত হয় না। যেমন—
ব্রাজিল–
ব্রাজিলে, জাতীয় ডাক্তার দিবস ১৮ অক্টোবর ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়, যেদিন ক্যাথলিক চার্চ সেন্ট লুকের জন্মদিন উদযাপন করে। গির্জার ঐতিহ্য অনুসারে প্রেরিত এবং ধর্মপ্রচারক সেন্ট লুক একজন ডাক্তার ছিলেন, যেমনটি নিউ টেস্টামেন্টে লেখা আছে (কলোসিয়ান ৪:১৪)।
কানাডা—
জাতীয় চিকিৎসক দিবস ১ মে কানাডায় পালিত হয়। তারিখটি কানাডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন দ্বারা কানাডায় অনুশীলন করা প্রথম মহিলা চিকিৎসক ডঃ এমিলি স্টো-এর স্বীকৃতিতে বেছে নেওয়া হয়েছিল।
অস্ট্রেলিয়া—
অস্ট্রেলিয়াতে, বিভিন্ন তারিখে জাতীয় ডাক্তার দিবস স্বীকৃত হতে পারে, সবচেয়ে বেশি অংশগ্রহণ করা হয় ৩০ শে মার্চ।
চীন—
চাইনিজ ডক্টরস ডে বার্ষিক ১৯ আগস্ট চীনে একটি জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। তারিখটি গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ন্যাশনাল হেলথ অ্যান্ড ফ্যামিলি প্ল্যানিং কমিশন (পিআরসি) দ্বারা ২০১৬ সালের চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য ও সুস্থতা সম্মেলনে নির্বাচিত হয়েছিল এবং ২০ নভেম্বর, ২০১৭ পিআরসি-এর স্টেট কাউন্সিল দ্বারা অনুমোদিত হয়েছিল। এর তাৎপর্য চীনা ডাক্তার দিবস হল তাদের সম্প্রদায় এবং সমাজে চীনা ডাক্তারদের মহান অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া, স্বাস্থ্যকর্মীদের ইতিবাচকভাবে ‘জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা, আহতদের নিরাময় এবং মৃত ব্যক্তিদের বাঁচানোর, অবদান রাখতে ইচ্ছুক হওয়া এবং ভালোবাসা ছাড়াই’ মহৎ মনোভাব পোষণ করতে উত্সাহিত করা।
তুরস্ক—
তুরস্কে, ১৯১৯ সাল থেকে প্রতি বছর ১৪ মার্চ মেডিসিন দিবস হিসেবে পালিত হয়।
যুক্তরাষ্ট্র—
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, জাতীয় চিকিৎসক দিবস হল এমন একটি দিন যেখানে চিকিৎসকদের দেশের প্রতি বার্ষিক পরিষেবা স্বীকৃত হয়। ডক্টর চার্লস বি. অ্যালমন্ডের স্ত্রী ইউডোরা ব্রাউন অ্যালমন্ড থেকে ধারণাটি এসেছে এবং যে তারিখটি বেছে নেওয়া হয়েছে সেটি ছিল অস্ত্রোপচারে সাধারণ অ্যানেস্থেশিয়ার প্রথম ব্যবহারের বার্ষিকী।
নেপাল—
নেপালও ২০ ফাল্গুন (৪ মার্চ) নেপালী তারিখে নেপালী জাতীয় ডাক্তার দিবস উদযাপন করে। নেপাল মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে নেপাল প্রতি বছর এই দিবসের আয়োজন করে আসছে। ডাক্তার-রোগীর যোগাযোগ, ক্লিনিকাল চিকিৎসক এবং সম্প্রদায়-ভিত্তিক স্বাস্থ্য প্রচার এবং যত্ন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
এই ভাবে আরো দেশ গুলিতে ভিন্ন তারিখে পালন করা হয় জতিয় চিকিৎসক দিবস। তবে যে দেশে যে তারিখেই পালন হোক না কেনো, এই দিনটি পলের মূল উদ্দেশ্য ই হল ডাক্তারদের সম্মান জানানো।

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজ ৩০ জুন, ইতিহাসের দিকে চোখ বুলিয়ে দেখে নেব ইতিহাসের এই দিনে বিশিষ্টজনদের জন্ম-মৃত্যু, দিনসহ ঘটে যাওয়া ঘটনা।।।

আজ ৩০ জুন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনা, বিশিষ্টজনদের জন্ম-মৃত্যু দিনসহ গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু বিষয়।

দিবস—–

(ক) হুল দিবস বা সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস।(ভারত – পশ্চিমবঙ্গ)
(খ) আন্তর্জাতিক রবীন্দ্রকাব্যপাঠ দিবস।
আজ যাদের জন্মদিন—-

১৯২৬ – পল বার্গ, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী আমেরিকান প্রাণরসায়নী।

১৯৩৩ – এম. জে. কে. স্মিথ, সাবেক ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা।
১৯৩৯ – হোসে এমিলিও পাচেকো, মেক্সিকোর তরুণ প্রজন্মের শীর্ষসারির কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, ছোটগল্পকার, অনুবাদক ও প্রাবন্ধিক।
১৯৪১ – পিটার পোলক, সাবেক ও বিখ্যাত দক্ষিণ আফ্রিকান আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা।

১৯৪৩ – (ক)  সৈয়দ আখতার মির্জা,ভারতের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রনাট্যকার, চলচিত্র পরিচালক।
(খ) আহমদ ছফা, বাংলাদেশী লেখক, চিন্তক ও ঔপন্যাসিক।
১৯৫৪ – সেরযহ সারগসয়ান, আর্মেনিয় রাজনীতিবিদ ও ৩য় প্রেসিডেন্ট।
১৯৬৩ – য়ংওইয়ে মাল্মস্টেন, সুইডিশ গিটারিষ্ট ও গীতিকার।

১৯৬৪ – মার্ক ওয়াটার্স, মার্কিন চলচ্চিত্র পরিচালক।

১৯৬৫ – গ্যারি প্যালিস্টার, ইংরেজ ফুটবল খেলোয়াড়।

১৯৬৬ – মাইক টাইসন, মার্কিন পেশাদার বক্সিং খেলোয়াড়।

১৯৬৯ – সনাথ জয়াসুরিয়া, শ্রীলংকার সাবেক ক্রিকেটার ও রাজনীতিবিদ।

১৯৭৭ – জুস্টো ভিলার, প্যারাগুয়ের ফুটবলার।
১৯৭৮ – লুসিয়ানা লেওন লুসি, ছোটবেলা থেকে রাজনীতির মাঠে এবং অসংখ্য তরুণের মনে ঝড় তোলেন।
১৯৮০ – রায়ান টেন ডেসকাট, নেদারল্যান্ডসের ক্রিকেটার।
১৯৮৩ – শেরিল কোল, ইংরেজ গায়ক, গীতিকার, ড্যন্সার ও মডেল।

১৯৮৫ – মাইকেল ফেলপস, মার্কিন সাঁতারু এবং ২৩ টি অলিম্পিক স্বর্ণ পদক বিজয়ী।
১৯৮৬ – ফ্রেডয় গুয়ারিন, কলম্বিয়ান ফুটবলার।

ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনের ঘটনাবলী—-

১৭৫৭ – বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা ত্রিশ হাজার সেনা নিয়ে ইংরেজ অধিকৃত কোলকাতা দখল করেন।
১৭৫৭ – নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা স্বীয় পত্নী ও কন্যাসহ পালিয়ে যাবার সময় পথিমধ্যে রাজমহলে রাত কাটাতে গিয়ে তিনি ধরা পড়েন।
১৭৭২ – বাংলাদেশের রংপুরে ফকির মজনু শাহ জেহাদ শুরু করেন।
১৮৫৫ – ব্রিটিশবিরোধী সাঁওতাল বিদ্রোহ সংঘটিত হয়।
১৮৮৬ – ন্যায়বান গভরমেন্ট দক্ষিণ সাহাবাজপুর পরগনা কোর্ট অব ওয়ার্ডসের শাষনাধীনে গ্রহণ করে বাবু পিতাম্বর বন্ধ্যোপাধ্যায়কে অস্থায়ী ম্যানেজার নির্ধারণ করে দৌলতখায় প্রেরণ করে।
১৮৯৪ – কোরিয়া চীন থেকে স্বাধীনতা পেয়ে জাপানের সহযোগিতা কামনা করে।
১৮৯৪ – লন্ডন টাওয়ার ব্রিজ উদ্বোধন করা হয়।
১৯০৮ – রাশিয়ার সাইবেরিয়ার বৈকাল হ্রদের উত্তর-পশ্চিমের দুর্গম পার্বত্য এলাকা টাঙ্গুস্কায় এক প্রচন্ড শক্তির বিস্ফোরন ঘটে।
১৯১৬ – রাশিয়া ও জাপানের মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
১৯২০ – আয়াতুল্লাহ মীর্যা মোঃ ত্বাক্বী শিরাজীর নেতৃত্বে ইরাকের জনগণ বৃটিশ দখলদারদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করে।
১৯৩৪ – জার্মানিতে ফ্যাসিবাদী হিটলারের বিরোধীতা করায় প্রায় এক হাজার লোককে হত্যা করা হয়।
১৯৩৭ – বিশ্বে প্রথম আপৎকালীন টেলিফোন নম্বর ‘৯৯৯’ চালু হয় লণ্ডনে।
১৯৪১ – নাজি গ্রুপের অনুসারীরা ইউক্রেনের স্বাধীনতা ঘোষণা করে।
১৯৫৭ – আওয়ামী লীগের প্রাদেশিক প্রধান, মাওলানা ভাসানী দলের সভাপতি হিসেবে পদত্যাগ করেন।
১৯৬০ – কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র বা জায়ার স্বাধীনতা ঘোষণা করে।
১৯৬৯ – নাইজেরীয় সরকার বায়াফ্রায় পাঠানো রেডক্রসের সব ধরনের সাহায্য বন্ধ করে দেন।
১৯৭১ – ‘নিউইয়র্ক টাইমস’- এর প্রতিনিধি সিডনি শ্যানবার্গকে ঢাকা থেকে বহিষ্কার করা হয়।
১৯৭১ – মুক্তিযোদ্ধারা তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে নীলমনিগঞ্জ, হালসা ও আলমডাঙ্গা রেল লাইন বিষ্ফোরকের সাহায্যে উড়িয়ে দিয়ে পাকসেনাদের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
১৯৭৪ – বিশিষ্ট রাজনীতিক ভাষাসৈনিক জাতীয় লীগ প্রধান জনাব অলি আহাদ বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেফতার হয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক হন।
১৯৭৯ – সুদানের জেনারেল ওমর আল বাশীর অভ্যন্তরীন সংকটের সম্মুখীন সুদানের সাদেক আল মাহদীর সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন।
১৯৯১ – দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদী শাসনের অবসান ঘটে।
১৯৯৩ – ভারতে বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার প্রতিবাদে ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদ থেকে লাখো জনতা অযোধ্যা অভিমুখে প্রতীকি লংমার্চ শুরু করেন।
১৯৯৭ – বর্ণাঢ্য এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চীনের কাছে হংকং হস্তান্তর করা হয়।
২০০০ – সমাপ্য অর্থ বত্সরের কার্যাদি নির্বাহের জন্য সংযুক্ত তহবিল হইতে অর্থ প্রদান ও নির্দিষ্টকরণের কর্তৃত্ব প্রদানের জন্য আইন প্রণয়ন করা হয় ৷
২০০২ – বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাটকল আদমজী জুট মিল বন্ধ করে দেয় বিএনপি জোট সরকার৷

এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন যারা—-

১৬৬০ – উইলিয়াম অউগট্রেড, ইংরেজ মন্ত্রী ও গণিতবিদ।
১৭১৭ – নবাব মুর্শিদ কুলি খান, বাংলার প্রথম নবাব।
১৮৩৯ – দ্বিতীয় মাহমুদ খাঁ, তুর্কি সুলতান।
১৯১৭ – দাদাভাই নওরোজি, বৃটিশ পার্লামেন্টের প্রথম ভারতীয় সদস্য।
১৯১৯ – জন উইলিয়াম স্ট্রাট ৩য় ব্যারন রেলি, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ইংরেজ পদার্থবিজ্ঞানী।
১৯৩৪ – কার্ট ভন সচলেইচের, জার্মান জেনারেল, রাজনীতিবিদ ও ২৩ তম চ্যান্সেলর।

১৯৫৯ – খ্যাতনামা বাঙালি অভিনেতা ও নাট্যাচার্য শিশিরকুমার ভাদুড়ী।

১৯৬২ – প্রমীলা নজরুল, বিদ্রোহী কবি কাজি নজরুল ইসলামের পত্নী।

১৯৭১ – ভ্লাডিস্লাভ ভোল্কোভ, রাশিয়ান প্রকৌশলী ও মহাকাশচারী।

১৯৭৪ – এ্যালবার্ট কিং, মার্টিন লুথার কিং এর মা।
২০০১ – চ্যাট অ্যাটকিন্স, আমেরিকান গায়ক, গীতিকার, গিটার ও প্রযোজক।
২০০৩ – বাডি হাকেট, আমেরিকান অভিনেতা ও কৌতুকাভিনেতা।
২০০৯ – পিনা বাউসচ্, জার্মান ড্যন্সার, কোরিওগ্রাফার ও পরিচালক।
২০১৪ – পল মাযুরস্কয়, আমেরিকান অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক ও চিত্রনাট্যকার।

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

বীরভূমের রাঙা মাটির রাঙ্গা-পথে সিধু-কানুর নেতৃত্বে সাঁওতাল বিদ্রোহ।।।।

উনিশ শতকে বঙ্গীয় ‘রেনেসান্স’ বা রেনেসাঁ যে সময়ে প্রকৃত জাতিয়তাবাদের ভিত্তি রচনা করতে ব্যর্থ হয়েছিল ঠিক সেই সময়েই ইংরেজ শাসকের অপশাসন ও জমিদার শ্রেণী আর মহাজনদের শোষণের বিরুদ্ধে সশস্ত্র কৃষক- সংগ্রাম সমগ্র জাতির সামনে এক নতুন সংগ্রামী ঐতিহ্য সৃষ্টি করেছিল যাকে ভারতের বৈপ্লবিক জাতিয়তাবাদের ভিত্তিভূমি বলা চলে।

ব্রিটিশ শাসনকালে যে সমস্ত কৃষক বিদ্রোহ হয়েছিল তাদের মধ্যে অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য ছিল সাঁওতাল বিদ্রোহ বা খেরওয়ারি হুল বিদ্রোহ।
১৮৫৫ সালের সাঁওতাল বিদ্রোহ ও ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ বা মহাবিদ্রোহ – দুটোকেই ভারতের প্রথম ঐক্যবদ্ধ স্বাধীনতা সংগ্রাম বলা চলে। এই উভয় সংগ্রামই শুরু হয়েছিল ইংরেজ শাসনের কবল থেকে, শোষণ থেকে মুক্তি ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার ধ্বনি নিয়ে।
সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রকৃত কারণ ছিল জমির উপর একছত্র অধিকার প্রতিষ্ঠার অকাঙ্খা এবং তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল স্বাধীনতা স্পৃহা- যার ফলে তারা ধ্বনি তুলেছিল – “আমাদের নিজ সম্পত্তির অধীনে স্বাধীন সাঁওতাল রাজ্য চাই।”

এই প্রসঙ্গে ওল্ডহাম সাহেব মন্তব্য করেছিলেন – “পুলিশ ও মহাজনের অত্যাচারের স্মৃতি যাহাদের দেশপ্রেম জাগাইয়া তুলিয়াছিল সেই আন্দোলন তাহাদের সকলকেই আকৃষ্ট করিল,কিন্তু যে মূল ভাবধারাকে কার্যে পরিণত করিবার চেষ্টা হইতেছিল তাহা ছিল সাঁওতাল অঞ্চল ও সাঁওতাল রাজ্য প্রতিষ্ঠার চিন্তা।”
সাঁওতালী ভাষার বিদ্রোহকে বলা হয় ‘হুল’,সুতরাং সাঁওতাল বিদ্রোহ ‘সাঁওতাল হুল’ নামেই বেশি পরিচিত । ১৮৫৪ সাল থেকেই এই বিদ্রোহের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ উঠতে আরম্ভ করেছিল,তারপর ১৮৫৫ সালে সেই বিদ্রোহ পরিপূর্ণ ভাবে আত্মপ্রকাশ করে দাবাগ্নির মতো চতুর্দিকে বিস্তৃত হলো।শত শত বছরের প্রায় বিচ্ছিন্ন সমাজ জীবনের ধারা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সাঁওতালরা পথ খোঁজে মুক্তি আন্দোলনের মাধ্যমে। জমির অধিকার,জঙ্গলের অধিকার,ফসলের অধিকার,জমিদার ও মহাজনদের শোষণমুক্তির অধিকার ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন যেন এই প্রথম ঘুম থেকে হঠাৎ জেগে ওঠে তারা দেখতে পায়।

সাঁওতালরা তাদের সমাজের দুর্দশার কথা গানের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে কোম্পানির কুশাসনের স্বরূপ তুলে ধরেছিল । যেমন –
“নেরা নিয়া নুরু নিয়া
ডিণ্ডা নিয়া ভিটা নিয়া
হায়রে হায়রে! মাপাঃ গপচদ,
নুরিচ নাড়াঁড় গাই কাডা নাচেল লৌগিৎ পাচেল লৌগিৎ
সেদায় লেকা বেতাবেতেৎ ঞাম রুওয়ৌড় লৌগিৎ
তবে দ বোন লুনাগেয়া হো।”
এর অর্থ হচ্ছে – “স্ত্রীপুত্রের জন্য
জমি জায়গা বাস্তুভিটার জন্য
হায় হায় ! এ মারামারি কাটাকাটি
গো-মহিষ-লাঙ্গল ধন-সম্পত্তির জন্য
পূর্বের মত আবার ফিরে পাবার জন্য
আমরা বিদ্রোহ করবো।”
গানটির প্রতিটি লাইনে প্রতিটি শব্দে শোষণ আর উৎপীড়নে গুমড়ে ওঠা সাঁওতালদের মনের গোপন কথা প্রকাশ পেয়েছিল। সেদিন এই প্রকার আরও অনেক গান তারা রচনা করেছিল সংগ্রাম করে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে।
এরূপ আরো একটা গান এখানে তুলে ধরা হলে –
“আদ বাংবন পৌচঃ সিধু আদ বাংবন থিরঃ,
বাইরি ঞেলতে লৌড়হাই ঘন বাংবন ঞিরঃ।
বহঃক্ ঞুরুঃ রেহঁ সিধু মায়াম লিঙ্গি রেহঁ,
বাংবন পাচঃ লৌড়হাই আবন দেবন সহরঃ।।
এই গানের অর্থ হচ্ছে –
“আর আমরা পিছু হঠব না সিধু আর চুপ থাকবে না,
শত্রু দেখে লড়াই থেকে পালাব না,
মাথা উড়ে গেলেও সিধুর রক্ত বইতে থাকলেও,
আমরা আর পিছু হটবনা,লড়াই মুখো হব।।”

এই সব কবিতা বা গানের মধ্য থেকে বোঝা যাচ্ছে আদিবাসী সহজ সরল সাঁওতালরা যুগ যুগ ধরে শোষণ-অত্যাচারের শিকার হওয়ার জন্য তারা বাধ্য হয়ে সশস্ত্র বিপ্লবের পথ বেছে নিয়েছিল। এভাবে ইংরেজ শাসক,জমিদার ও মহাজনদের শোষন -অত্যাচার-অবিচার থেকেই এই বিদ্রোহের সৃষ্টি হয়েছিল এবং বিদ্রোহের মধ্য থেকেই জন্ম নিয়েছিল নেতৃত্ব। সাঁওতাল পরগনার ধূমায়িত বিদ্রোহের মধ্য থেকে বার হয়ে এলেন ঐতিহাসিক সাঁওতাল বা হূল বিদ্রোহের নায়ক সিধু, কানু, চাঁদ ও ভৈরব নামে চার ভাই। এছাড়া এই নেতাদের মধ্যে ছিলেন কালো প্রামানিক, ডোমন মাঝি,বীরসিংহ মাঝি, গোক্ক ইত্যাদি সাওতাঁল আদিবাসী ।
১৮৫৫ সালের ৩০ শে জুন এই সব নেতাদের নেতৃত্বে প্রায় ১০ হাজার সাঁওতাল ভাগনাডিহির মাঠে সমবেত হয়েছিল। তাদের মধ্যে রটনা করে দেওয়া হয়েছিল যে , সিধু, কানু, দৈব নির্দেশপ্রাপ্ত। বিভিন্ন এলাকার কামার, কুমোর, তাঁতি, ছুতোর প্রভৃতি নিম্নশ্রেণির মানুষও এই বিদ্রোহে যোগদান করেছিল, শোনা যায়, দুই লক্ষ সাঁওতাল এই বিদ্রোহে সামিল হয়েছিল,ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে সাঁওতালরা গেরিলা পদ্ধতিতে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে জমিদার ও মহাজনদের আক্রমণ করে। এই বিদ্রোহীরা এক সময় রাজমহল ভাগলপুরের মধ্যে রেল ও ডাক যোগাযোগের ব্যবস্থা বিছিন্ন করে দেয়,তাদের হাতে শতাধিক ইংরেজ নিহত হয়।”ক্যলকাটা রিভিউ” পত্রিকা থেকে জানা যায় যে, একজন ইংরেজ সেনাপতি মেজর বরোজ সাঁওতালদের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হন।

এই বিদ্রোহের সংবাদ বিনা মেঘে বজ্রাঘাতের মতো সমস্ত শাসকগোষ্ঠীকে স্তম্ভিত করে দেয়। “ক্যালকাটা রিভিউ” পত্রিকার একজন ইংরেজ মন্তব্য করেছিলেন – “এই রূপ আর কোনো অদ্ভুত ঘটনা ইংরেজের স্মরণকালের মধ্যে দক্ষিণবঙ্গের সমৃদ্ধিকে বিপদগ্রস্ত করিয়া তোলে নাই।”
এই সংবাদে সেনাপতি মেজর বরোজ ভাগলপুরের দিকে সাঁওতাল বাহিনীর গতিরোধ করেন। ১৮৫৫ সালের ১৬ই আগষ্ট ভাগলপুর জেলায় পীরপাইতির ময়দানে উভয়পক্ষের মধ্যে প্রচন্ড রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। শোনা যায়, মেজর বরোজের বাহিনী চূড়ান্তভাবে অপদস্থ ও পরাজিত হয়, এতে একজন ইংরেজ অফিসারসহ কয়েক জন ইংরেজ সৈন্য এবং বেশকিছু সাওতাঁল বিদ্রোহী নিহত হয়। ভাগলপুরের কমিশনার এই যুদ্ধের একটা বিবরণ দিয়েছিলেন – “বিদ্রোহীরা নির্ভিক চিত্তে প্রাণপণে যুদ্ধ করিয়াছিল।তাহাদের যুদ্ধাস্ত্র কেবল তীর ধনুক আর কুঠার। তাহারা মাটির উপর বসিয়া পায়ের দ্বারা ধনুক হইতে তীর ছুড়িতে অভ্যস্ত।”
এক সময়ে বীরভূম জেলার সমগ্র উত্তর পশ্চিমাংশে বিদ্রোহীদের দখলভুক্ত হয়েছিল। সরকারের আত্মসমর্পণ নির্দেশকে বিদ্রোহীরা ঘৃণাভরে পরিত্যাগ করেছিল। সিধু ও কানুর নেতৃত্বে সাঁওতাল বাহিনী পাকুড়ে পৌঁছায় এবং তিনদিন ও তিনরাত্রি পাকুড়কে অবরোধ করে রাখে। এভাবে তারা বীরভূম থেকে ভাগলপুর পর্যন্ত এক বিরাট ভূখন্ডকে অধিকার করে। ডাক-তার ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট প্রভৃতি সমস্ত রকমের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বিছিন্ন করে দেয়।
কিন্তু কয়েকদিন পরেই ইংরেজশাসক চরমপন্থা গ্রহণ করে সামরিক আইন জারি করে অবাধে লুণ্ঠন, নরহত্যা ও ধ্বংস সাধন করে মানুষের মনে এক বিভীষিকার সৃষ্টি করে। তখন সাঁওতালরা বাধ্য হয়ে পশ্চাৎপদ হতে থাকে।জনৈক ইংরেজ সেনাপতি নিজেই স্বীকার করেছিলেন – “আমরা যুদ্ধ করিনি, করেছিলাম গণহত্যা।”

১৮৫৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একদল সাঁওতাল হতাশাগ্রস্ত হয়ে সিধুর গোপন আশ্রয় স্থল জানিয়ে দেয়। তাই ইংরেজরা সহজেই সিধুকে গ্রেপ্তার করে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। এভাবে পরাধীন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম বীরসন্তান সিধু ইংরেজ শত্রুর হাতে প্রাণ বিসর্জন দিয়ে ভারতের ইতিহাসে অমর হয়ে রয়েছেন। এর কিছুদিন পরে আর এক নায়ক কানু বীরভূমের ওপারবাঁধের নিকটে সশস্ত্র পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।তাকেও ইংরেজ বাহিনী নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করে। প্রকৃতপক্ষে,এই সাওতাঁল বিদ্রোহে অন্ততপক্ষে ২৫ হাজার সাঁওতাল নিহত হয়েছিলেন ।এভাবে বীরভূম থেকে ভাগলপুর পর্যন্ত বিশাল অঞ্চল সাঁওতালদের রক্তস্রোতে রঞ্জিত হয়েছিল।
সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রচন্ড আঘাত থেকে ইংরেজ সরকার উপলব্ধি করে যে, যারা অনায়াসে প্রাণ দিতে পারে, যারা আত্মসমর্পণ করতে চায় না তাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের মিশ্রণের ফলে সারাভারতে আরও বিদ্রোহের বীজ ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই তারা কৌশল করে সাঁওতালদের জনজীবন থেকে বিছিন্ন করার উদ্দেশ্যে সাঁওতাল পরগণাকে ‘সাঁওতাল ডিহি পরগণা’ নামে একটা পৃথক পরগণা গঠন করে।
দুঃখের বিষয় মৃত্যুভয়হীন বীরত্ব ও শৌর্য থাকা সত্ত্বেও সেদিন সাঁওতাল বিদ্রোহের ভবিষ্যৎ ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন, কারন ভারতের অন্য অঞ্চলসমূহ এই বিদ্রোহের সময়েও ছিল শান্ত, নির্লিপ্ত,ও নিস্তরঙ্গ । তাই ইংরেজ শাসক এই বিদ্রোহকে সহজেই দমন করতে সক্ষম হয়েছিল। তা সত্ত্বেও একথা বলা যেতে পারে শুধুমাত্র তীর-ধনুক-টাঙ্গিকে সম্বল করে ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার সাওতাঁল আধুনিক কামান-বন্দুক সজ্জিত পনের হাজার সুশিক্ষিত সেনার বিরুদ্ধে বীরবিক্রমে যুদ্ধ পরিচালনা করে সমগ্র ভারতবাসীর সম্মুখে যে পথনির্দেশ করেছিল, সেই পথ ১৮৫৭ সালে মহাবিদ্রোহের মধ্য দিয়ে ভারতের মুক্তি সংগ্রামের সুপ্রশস্ত রাজপথে পরিণত হয়েছিল আর সেই রাজপথই পরবর্তীকালে বিংশ শতাব্দীর মধ্য দিয়ে প্রসারিত হলো। ভারতের এই অশিক্ষিত দরিদ্র আদিবাসী সাঁওতাল তথা কৃষক সমাজ সেই রাজপথেরই অভিযাত্রী- তাঁরাই হচ্ছেন ভারত মাতার মহান বীর সন্তান, বীরযোদ্ধা – তাই আমরা তাঁদেরই জয়গান গাইবো।

কলমে : প্রশান্ত কুমার দাস।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

পূরবী দত্ত শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী হলেও তিনি মূলত নজরুল গান গাওয়ার জন্য বিখ্যাত – একটি বিশেষ পর্যালোচনা।।।

পূরবী দত্ত ১৭ মার্চ ১৯৪২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন ভারতীয় গায়িকা ছিলেন। তিনি কলকাতায় থাকতেন এবং শুধুমাত্র বাংলা ভাষায় গান গেয়েছিলেন, প্রধানত নজরুলের গান গাওয়ার জন্য বিখ্যাত। পূরবী দত্ত ছিলেন প্রখ্যাত শাস্ত্রীয় কণ্ঠশিল্পী বিভূতি দত্তের মেয়ে, তাই ছোটবেলা থেকেই বাড়িতে তার প্রশিক্ষণ শুরু হয়।

১৯৪৬ সালে, মাত্র চার বছর বয়সে, তিনি চেতলা মুরারি স্মৃতি সঙ্গীত সম্মিলনী আয়োজিত সর্বভারতীয় সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন যেখানে তিনি তার গানের জন্য রৌপ্য ট্রফি জিতেছিলেন।
পূরবী দত্ত শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী হলেও তিনি মূলত নজরুল গান গাওয়ার জন্য বিখ্যাত। তার প্রথম দিনগুলিতে তিনি কলকাতায় অল ইন্ডিয়া রেডিওর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং তার সঙ্গীত জীবনের বেশিরভাগ অংশ সেখানে রেকর্ড করা হয়েছিল। যার অধিকাংশই ছিল নজরুলের গান।1950 এবং 60 এর দশকে, তিনি অল ইন্ডিয়া রেডিওর সাথে যুক্ত ছিলেন এবং বিভিন্ন প্রোগ্রামে গান গেয়েছিলেন। তিনি সারাজীবন নজরুল গীতির প্রশিক্ষণে নিঃস্বার্থভাবে আত্মনিয়োগ করেছেন। বহু বছর ধরে তিনি গড়িয়াহাটের “বাণীচক্র” এবং পরে “বেঙ্গল মিউজিক কলেজ” এর সাথে যুক্ত ছিলেন। যেখানে তিনি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, চিন্ময় চট্টোপাধ্যায় এবং অখিলবন্ধু ঘোষের সাথে পড়াশোনা করেছেন। তিনি পণ্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ, বিমান মুখোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, অধীর বাগচী এবং বাংলার অন্যান্য বিশিষ্ট শিল্পী ও গায়কদের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
নজরুল গীতি নিয়ে পূরবী দত্তের অ্যালবামগুলি খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। নিচে কিছু অ্যালবামের শিরোনাম উল্লেখ করা হলো——
১৯৭৪ কাজী নজরুলের গান – সারেগামা, ১৯৭৫ কাজী নজরুলের গান – সারেগামা, ১৯৮০ ভ্যালেন্টাইন স্পেশাল – বাংলা রোম্যান্টিক নজরুলগীতি, ১৯৮২ হালুদ গন্দর ফুল, ২০১৪ ছাড় ছাড় আঁচল, ২০১৪ ঝুম ঝুম ঝুমরা নাচতে, ২০১৪ শিউলি তোলে ভোরবেলা – আইএনআরইসিও।
প্রায় দেড় বছর নিজেকে সবার থেকে দূরে রাখার পর, ২০০৪ সালের এপ্রিল মাসে পূরবী দত্ত বাংলা সঙ্গীত মেলার মঞ্চে আবার আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি দুটি গান গেয়েছিলেন:”মনে পরে আজ সে কোন জনমে” এবং তার পর “নিরন্ধ্র মেঘে মেঘে অন্ধ গগন।”
তিনি তার গড়িয়াহাটের বাড়ি থেকে চলে আসার পর এই বাড়িতে থাকতেন, জীবনের শেষ দিন অবধি। তার সোনারপুরের বাড়িতে ১ ডিসেম্বর ২০১৩ সালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

স্মরণে বাংলার বাঘ আশুতোষ মুখোপাধ্যায় : প্রশান্ত কুমার দাস।।।।

“সেই ধন্য নরকূলে লোকে যারে নাহি ভুলে, মনের মন্দিরে যারে পূজে সর্বজন।”

উনিশ শতকে বাংলার বুকে এমন অনেক মনীষী আবির্ভূত হয়েছিলেন যাঁরা আমাদের মনের মন্দিরে সর্বদা পুজো পেয়ে থাকেন, তাঁদের মহৎ কর্মের জন্য আমরা বাঙালি হিসাবে গর্বিত।
এইরূপ একজন স্বনামখ্যাত পুরুষ সিংহ ছিলেন যিনি “বাংলার বাঘ” নামেই সর্বাধিক পরিচিত।আজ থেকে একশত পঞ্চান্ন বছর আগে কলকাতার বৌবাজারে ১৮৬৪ খ্রীষ্টাব্দের ২৬ শে জুন তারিখে আশুতোষ মুখোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন।তাঁর পিতা গঙ্গাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ছিলেন একজন বিখ্যাত চিকিৎসক।

তাঁর মাতা ছিলেন জগত্তারিনী দেবী।
ছোট বেলা থেকেই আশুতোষ ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী।চক্রবেড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়া শেষ করে তিনি কলকাতার সাউথ সুবার্বন স্কুলে পড়াশুনা করেন।তিনি পড়াশুনাতে অত্যন্ত মনোযোগী ও অধ্যবসায়ী ছিলেন।সারাদিন তিনি এত পড়াশুনা করতেন যে তাঁর স্বাস্থ্য ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হলো।তখন একদিন তাঁর পিতা তাঁকে একটা ঘরে আবদ্ধ করে রাখলেন।সারদিন শেষে ঘরের দরজা খুলে দেখা গেল যে,ঘরের মেঝেতে ও দেওয়াল গুলিতে অংক কষা ও জ্যামিতি আঁকা রয়েছে।সকলে উনার অধ্যবসায় দেখে বিস্মিত হলেন।প্রবেশিকা পরীক্ষায় তিনি দ্বিতীয় স্থান এবং বি.এ পরীক্ষায় প্রথম স্থান লাভ করেন এবং সেই সঙ্গে “প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ” বৃত্তি লাভ করলেন।তাঁর অংক শাস্ত্র সম্পর্কে কয়েকটি তথ্যপূর্ণ প্রবন্ধ ইংল্যান্ডেও প্রকাশিত হওয়ায় তাঁর নাম সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।

আশুতোষ শুধুমাত্র অংকশাস্ত্রে পণ্ডিত ছিলেন না,তিনি বিজ্ঞান,দর্শন,আইন,এমনকি বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন।আইন গবেষণা করার জন্য তিনি “ডক্টর অফ ল” উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯০৩ খ্রিঃ থেকে ১৯১৩ খ্রিঃ পর্যন্ত তিনি কলকাতা তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ অলংকৃত করেছিলেন। ২৪ বছর বয়সেই তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন।
তিনি আজীবন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতিকল্পে নানাপ্রকার কাজ করেছিলেন।তিনিই প্রথম বাংলাভাষার মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন করেছিলেন।
তিনি আইন পরীক্ষায় ভালভাবে উত্তীর্ন হয়ে কলকাতা হাইকোর্টে ওকালতি করতে শুরু করেন।অল্পদিন পরে নিজ প্রতিভার জোরে তিনি হাইকোর্টের বিচারপতির পদ অলংকৃত করেন।এক্ষেত্রেও তিনি যথেষ্ট সুনাম ও প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন।
তখন ব্রিটিশ রাজত্ব পুরোদমে চলছে।তাদের দাপটে সকলে তটস্থ।এই অবস্থাতেও কত নির্ভিক ও সাহসী পুরুষ ছিলেন আশুতোষ মুখোপাধ্যায় তার পরিচয় পাওয়া যায়।একদা তিনি আলিগড় থেকে ট্রেনে আসছেন ।আশুতোষ মুখোপাধ্যায় সেখানে ট্রেনের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন,তাঁর নতুন জুতো খুলে রেখে ঘুমোচ্ছিলেন।
এমন সময়ে একটা স্টেশনে একজন ইংরেজ সাহেব সেই কামরাতে আরোহন করলেন।ধুতি-চাদর পরিহিত এক বাঙালিকে ট্রেনের কামরার মধ্যে ঘুমোতে দেখে তিনি তো রেগে আগুন।তিনি আশুতোষের নতুন জুতো জোড়া জানলার বাইরে ফেলে দিয়ে অপর একটা বেঞ্চে ঘুমোতে শুরু করলেন।কিছুক্ষণ পরে আশুতোষের ঘুম ভেঙ্গে গেল। তিনি তাঁর জুতো দুটি দেখতে না পেয়ে বিস্মৃত হলেন।তিনি বুঝতে পারলেন যে,ঐ ইংরেজ সাহেবই তাঁর জুতা ফেলে দিয়েছে।আশুতোষও কম সাহসী ছিলেন না।তিনি দেখলেন সাহেবের মাথার উপর তাঁর টুপিটা ঝুলছে।আশুতোষ টুপিটা নিয়ে জানলা দিয়ে বাইরে ফেলে দিলেন।একটু পরে সাহেব ঘুম থেকে উঠলেন,কিন্তু তিনি তাঁর টুপি খুঁজে না পেয়ে খুব রেগে গেলেন এবং আশুতোষকে টুপি সম্পর্কে জিঙ্গাসা করলেন ।আশুতোষ নির্ভিক ভাবে উত্তর দিলেন – “Your hat has gone to fetch my shoes”. সাহেব নিজের অন্যায় বুঝতে পেরে আশুতোষ কে আর কিছু বলতে সাহস করলেন না।এরূপ তেজস্বী নির্ভিক পুরুষ বাঙালীর মধ্যে খুবই কম দেখা যায়।তাঁর এই তেজস্বীতার জন্য তিনি ‘বাংলার বাঘ’ নামে সুপরিচিত।

আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের মাতৃভক্তি ছিল প্রবল।প্রাতঃস্মরণীয় বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মাতৃভক্তির মতই ছিল তাঁরও অসীম মাতৃভক্তি একবার বাংলার তৎকালীন গভর্নর লর্ড কার্জন আশুতোষকে ইংল্যান্ড যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান।কিন্তু আশুতোষের মাতার ছেলেকে ইংল্যন্ড যেতে দিতে মত ছিল না।আশুতোষ লর্ড কার্জনকে জানালেন ‘মায়ের অমতে আমি ইংল্যান্ড যেতে পারব না।’ তখন গর্বিত লর্ড-কার্জন আশুতোষকে লিখলেন- ‘আপনি আপনার মাকে জানিয়ে দেন যে,ভারতের বড়লাট আপনাকে ইংল্যান্ড যেতে আদেশ করছেন।’ কিন্তু নির্ভিক আশুতোষ মুখোপাধ্যায় স্পষ্ট করে জানালেন – “আমার কাছে মায়ের আদেশই সবচেয়ে বড় আদেশ।মায়ের আদেশ ছাড়া আমার পক্ষে ইংল্যান্ড যাওয়া সম্ভব নয়।”
এভাবে সারাজীবন তিনি অনেক তেজস্বীতার পরিচয় দিয়েছিলেন। ‘বাংলার বাঘ’ নামকরন তাঁর সার্থক হয়েছিল।
বাংলার এই তেজস্বী দেশপ্রেমিক কর্মবীর আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ শে মে তারিখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আজও তাঁর সম্পর্কে মূল্যায়ন ঠিক মত হয়নি।আমরা তাঁর জন্মদিনে শ্রদ্ধাবনত চিত্তে তাঁকে স্মরণ করবো। যদি বর্তমান প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা আশুতোষের মত ব্যক্তির উজ্জ্বল কর্মপ্রেরণা,তেজস্বীতা,স্বদেশপ্রেম ইত্যাদি বিষয় সমূহ জানতে পেরে অনুপ্রানিত হতে পারে তাহলেই তাঁর মত মনীষীর জন্মদিন পালন করা সার্থক হবে।
আমরা জানি,তিনি বাংলার বুকে যে জ্ঞানের আলো জ্বেলেছিলেন –
“সেই আলোক-শিখা আজও উজ্জ্বল
ঘুচে গেছে সব কালো।”
শিক্ষারত্ন প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক (বাজিতপুর উচ্চ বিদ্যালয়(উঃমাঃ)
(পোঃ-পাথাই, ময়ূরেশ্বর-১,বীরভূম)

Share This
Categories
প্রবন্ধ

স্মরণে প্রখ্যাত অধ্যাপক ও লেখক – চারুচন্দ্র ভট্টাচার্য।।।

চারুচন্দ্র ভট্টাচার্য বিশিষ্ট অধ্যাপক ও বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধের রচয়িতা। চারুচন্দ্র ভট্টাচার্য দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার হরিনাভিতে ২৯ জুন, ১৮৮৩ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতার নাম বসন্ত কুমার ভট্টাচার্য ও মাতার নাম মেনকা দেবী। অতিশয় মেধাবি ছিলেন তিনি।।

শিক্ষা জীবন——

১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন থেকে প্রথম বিভাগে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এফ. এ পরীক্ষায় দ্বাদশ স্থান অর্জন করেন (১৯০১ খ্রিস্টাব্দে)। এরপর তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক হন ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় এম.এ পাশ করেন ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে।

কর্মজীবন—–

এম. এ পাশের পর পরই তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন এবং দীর্ঘ ৩৫ বৎসর তিনি সেখানে অধ্যাপনা করেছেন। আর এ প্রসঙ্গে তিনি বলতেন-
“বাংলার পাঁচজন এফ.আর.এস – এর মধ্যে একজন আমার শিক্ষক, বাকি চারজন ছাত্র ।”
শিক্ষক হচ্ছেন আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু এবং ছাত্ররা হচ্ছেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু , মেঘনাদ সাহা, প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ ও শিশির কুমার মিত্র। তার আর এক ছাত্র প্রতুল চন্দ্র গুপ্ত বলতেন – “কত কঠিন বিষয় তিনি অত্যন্ত সহজে ব্যাখ্যা করতে পারতেন”।

সাহিত্যক্ষেত্রে অমর অবদান———

চারুচন্দ্র 1939 খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতীর সাহিত্য বিভাগে যোগদান করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সাহিত্য বিভাগের আর্থিক সংকটের সময় তিনি রবীন্দ্রনাথের বাংলা রচনার সংকলন রবীন্দ্র-রচনাবলী প্রকাশ করে বাংলার সাহিত্যক্ষেত্রে অমর অবদান রাখেন। শিক্ষা সম্প্রসারণের জন্য রবীন্দ্রনাথের পরিকল্পনায়, বিশ্বভারতী তার নিজস্ব দক্ষতায় “বিশ্ববিদ্যাসংগ্রহ গ্রন্থমালা” এবং লোকশিক্ষার বই প্রকাশের ব্যবস্থা করে। উল্লেখযোগ্য লোকশিক্ষার প্রথম বইটি “বিশ্ব-পরিচয়: রবীন্দ্রনাথ সত্যেন্দ্রনাথ বসুকেই উৎসর্গ করেন।

সহজ সরল ও হৃদয়গ্রাহী বাংলা ভাষায় লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল –

আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার কাহিনী, নব্যবিজ্ঞান, বাঙালির খাদ্য, বিশ্বের উপাদান, তড়িতের অভ্যুত্থান, ব্যাধির পরাজয়, পদার্ধবিদ্যার নবযুগ।
সত্যেন্দ্রনাথ বসু প্রতিষ্ঠিত বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের পক্ষ থেকে তিনি বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান প্রচার চেষ্টার সূচনা করেন ‘বিজ্ঞান প্রবেশ’ ও পদার্থবিদ্যা’ গ্রন্থ রচনার মধ্য দিয়ে। নানা বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধের মাধ্যমে তিনি জগদীশচন্দ্রের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারকে সাধারণের মধ্যে পরিচিত করান। তার রচিত ‘কবিস্মরণে’ একখানি রসমধুর স্মৃতিচারণ গ্রন্থ তিনি ছদ্মনামে রচনা করেন। কয়েক বছর তিনি সমবায় সমিতির ‘ভাণ্ডার’ পত্রিকা এবং আমৃত্যু ‘বসুধারা’ পত্রিকার সম্পাদনা করেছেন। বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদে প্রথম রাজশেখর বসু স্মৃতি বক্তৃতা “পরমাণু নিউক্লিয়াস “বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান রচনার অন্যতম মূল্যবান সংযোজন। পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণীর জন্য দুটি বিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তক ও রচনা করেন। বিজ্ঞানে ব্যবহারের জন্য বহু বাংলা প্রতিশব্দ নির্ধারণ করেছেন। এ বিষয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিযুক্ত কমিটিতে তিনি সচিব ছিলেন এবং সভাপতি ছিলেন রাজশেখর বসু। তিনি পরিমাপ ও বৈজ্ঞানিক প্রতিশব্দ চয়ন ও নির্ধারণে ভারত সরকারকেও সহায়তা করেন।

মৃত্যু———

চারুচন্দ্র ভট্টাচার্য ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে ২৬ শে আগস্ট প্রয়াত হন।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি কবি, সাহিত্যিক এবং নাট্যকার মাইকেল মধুসূদন দত্ত : সুভাষ চন্দ্র দাশ।।।

তিনিই এক এবং অদ্বিতীয় মাইকেল মধুসূদন দত্ত। তাঁর সমাধিস্থলে স্বরচিত কবিতাটি লেখা রয়েছে, “দাঁড়াও, পথিক-বর, জন্ম যদি তব

বঙ্গে! তিষ্ঠ ক্ষণকাল! এ সমাধিস্থলে
জননীর কোলে শিশু লভয়ে যেমতি বিরাম মহীর পদে মহানিদ্রাবৃত
দত্তকুলোদ্ভব কবি শ্রীমধুসূদন!
যশোরে সাগরদাঁড়ী কবতক্ষ-তীরে
জন্মভূমি, জন্মদাতা দত্ত মহামতি
রাজনারায়ণ নামে, জননী জাহ্নবী!.” রামনারায়ণ তর্করত্ন বিরচিত ‘রত্নাবলী’ নাটকের ইংরেজি অনুবাদ করতে গিয়ে তিনি বাংলা নাট্যসাহিত্যে উপযুক্ত নাটকের অভাব বোধ করেন। এই অভাব পূরণের লক্ষ্য নিয়েই তিনি নাটক লেখায় আগ্রহী হয়েছিলেন। ১৮৫৯ খৃস্টাব্দে তিনি রচনা করেন ‘শর্মিষ্ঠা’ নামক একটি নাটক। এটিই প্রকৃত অর্থে বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম মৌলিক নাটক। ১৮৬০ খৃস্টাব্দে তিনি রচনা করেন দুটি প্রহসন, যথা: ‘একেই কি বলে সভ্যতা’ এবং ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ এবং পূর্ণাঙ্গ ‘পদ্মাবতী’ নাটক। পদ্মাবতী নাটকেই তিনি প্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দ ব্যবহার করেন। ১৮৬০ খৃস্টাব্দেই তিনি অমিত্রাক্ষরে লেখেন ‘তিলোত্তমাসম্ভব’ কাব্য। এরপর একে একে রচিত হয় ‘মেঘনাদ বধ কাব্য’ (১৮৬১) নামে মহাকাব্য, ‘ব্রজাঙ্গনা’ কাব্য (১৮৬১), ‘কৃষ্ণকুমারী’ নাটক (১৮৬১), ‘বীরাঙ্গনা’ কাব্য (১৮৬২), চতুর্দশপদী কবিতা (১৮৬৬)। যশোর জেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্ম তাঁর। পাশ্চাত্য সাহিত্যের দুর্নিবার আকর্ষণ বশতঃ ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য রচনায় তিনি মনোনিবেশ করেন। জীবনের দ্বিতীয় পর্বে মধুসূদন আকৃষ্ট হন নিজের মাতৃভাষা বাংলার প্রতি। এই সময়েই তিনি বাংলায় নাটক, প্রহসন ও কাব্যরচনা করতে শুরু করেন। মাইকেল মধুসূদন বাংলা ভাষায় সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক। তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি অমিত্রাক্ষর ছন্দে রামায়ণের উপাখ্যান অবলম্বনে রচিত “মেঘনাদবধ কাব্য” নামক মহাকাব্য। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলি: দ্য ক্যাপটিভ লেডি, শর্মিষ্ঠা, কৃষ্ণকুমারী (নাটক), পদ্মাবতী (নাটক),বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ, একেই কি বলে সভ্যতা, তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য, বীরাঙ্গনা কাব্য, ব্রজাঙ্গনা কাব্য, চতুর্দশপদী কবিতাবলী, হেকটর বধ ইত্যাদি। মাইকেল মধুসূদন দত্তের ব্যক্তিগত জীবন ছিল নাটকীয় এবং বেদনাময়।মাত্র ৪৯ বছর বয়সে কলকাতায় কপর্দকশূন্য করুণ অবস্থায় মৃত্যু হয় এই মহাকবির।
১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারী তিনি জন্মগ্রহন করেন। তিনি ছিলেন রাজনারায়ণ দত্ত ও জাহ্নবী দেবীর একমাত্র সন্তান। রাজনারায়ণ দত্ত ছিলেন কলকাতার সদর দেওয়ানি আদালতের এক খ্যাতনামা উকিল। মধুসূদন দত্তের যখন সাত বছর বয়স, সেই সময় থেকেই তাঁকে কলকাতায় বসবাস করতে হত। খিদিরপুর সার্কুলার গার্ডেন রিচ রোডে (বর্তমানে কার্ল মার্কস সরণী) অঞ্চলে তিনি এক বিরাট অট্টালিকা নির্মাণ করেছিলেন। মধুসূদন দত্তের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু তাঁর মাতৃদেবী জাহ্নবী দেবীর কাছে। জাহ্নবী দেবীই তাঁকে রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ প্রভৃতির সঙ্গে সুপরিচিত করে তোলেন।মাত্রতেরো বছর বয়সে মধুসূদন কলকাতায় আসেন। স্থানীয় একটি স্কুলে কিছুদিন পড়ার পর তিনি তদনীন্তন হিন্দু কলেজে (বর্তমানে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হন। মধুসূদন দত্ত খুব মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তাই অচিরেই কলেজের অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন ডি. এল. রিচার্ডসনের প্রিয় ছাত্র হয়ে ওঠেন। রিচার্ডসন মধুসূদনের মনে কাব্যপ্রীতি সঞ্চারিত করেছিলেন। হিন্দু কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক ডিরোজিওর স্বদেশানুরাগের স্মৃতিও তাঁকে বিশেষ উদ্বুদ্ধ করতো,এছাড়া কলেজে তাঁর সহপাঠী ছিলেন ভূদেব মুখোপাধ্যায়, রাজনারায়ণ বসু, গৌরদাস বসাক, প্যারীচরণ সরকার প্রমুখ ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। আঠারো বছর বয়সেই মহাকবি হওয়ার ও বিলাতে যাওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা তাঁর মনে বদ্ধমূল হয়ে যায়। ১৮৪৩ সালে রেভারেন্ড কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিকট মধুসূদন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। এরপর ওই বছরই ১৩ ফেব্রুয়ারি মিশন রো-তে অবস্থিত “ওল্ড মিশন চার্চ” নামে এক অ্যাংলিক্যান চার্চে গিয়ে তিনি খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন। তাঁকে দীক্ষিত করেছিলেন “পাদ্রী ডিলট্রি”।তিনিই মধুসূদন দত্ত্কে “মাইকেল” নামকরণ করেন। মধুসূদন পরিচিত হন “মাইকেল মধুসূদন দত্ত” নামে। তাঁর এই ধর্মান্তর সমাজে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। রাজনারায়ণ দত্ত তাঁর বিধর্মী পুত্রকে ত্যাজ্যপুত্র ঘোষণা করেন। খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণের পর মধুসূদন শিবপুরের বিশপস কলেজে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যান। এখানে তিনি গ্রিক, লাতিন, সংস্কৃত প্রভৃতি ভাষা শিক্ষা করেন। রাজনারায়ণ দত্ত তাঁকে পরিত্যাগ করলেও, বিশপস কলেজে পড়াশোনার ব্যয়ভার বহন করছিলেন। চার বছর পর তিনি টাকা পাঠানো বন্ধ করেন। বিশপস কলেজে কয়েকজন মাদ্রাজি ছাত্রের সঙ্গে মধুসূদনের বন্ধুত্ব হয়েছিল। বিশপস কলেজে অধ্যয়ন শেষ করে যখন কলকাতায় চাকরির চেষ্টা করে ব্যর্থ হন মধুসূদন। তখন তাঁর সেই মাদ্রাজি বন্ধুদের সঙ্গে ভাগ্যান্বেষণে মাদ্রাজে (অধুনা চেন্নাই) চলে যান মধুসূদন। কথিত আছে, আত্মীয়স্বজনের অজ্ঞাতসারে নিজের পাঠ্যপুস্তক বিক্রি করে সেই টাকায় মাদ্রাজ গিয়েছিলেন তিনি। মাদ্রাজেও বিশেষ সুবিধা করে উঠতে পারেননি মধুসূদন দত্ত। স্থানীয় খ্রিষ্টান ও ইংরেজদের সহায়তায় তিনি একটি স্কুলে ইংরেজি শিক্ষকের চাকরি পান। তবে বেতন যা পেতেন, তাতে তাঁর ব্যয়সংকুলান হত না। এই সময় তাই তিনি ইংরেজি পত্রপত্রিকায় লিখতে শুরু করেন। মাদ্রাজ “ক্রনিকল” পত্রিকায় ছদ্মনামে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হতে থাকে। “হিন্দু ক্রনিকল” নামে একটি পত্রিকাও সম্পাদনা করেছিলেন তিনি। কিন্তু অল্পকালের মধ্যেই অর্থাভাবে পত্রিকাটি বন্ধ করে দিতে হয়। পঁচিশ বছর বয়সে নিদারুণ দারিদ্র্যের মধ্যেই তিনি “দ্য ক্যাপটিভ লেডি” তাঁর প্রথম কাব্যটির রচনা করেন। কবি ও দক্ষ ইংরেজি লেখক হিসেবে তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। মাদ্রাজে আসার কিছুকাল পরেই মধুসূদন “রেবেকা ম্যাকটিভিস” নামে এক ইংরেজ যুবতীকে বিবাহ করেন। উভয়ের দাম্পত্যজীবন সাত বছর স্থায়ী হয়েছিল। রেবেকার গর্ভে মধুসূদনের দুই পুত্র ও দুই কন্যার জন্ম হয়। মাদ্রাজ জীবনের শেষ পর্বে রেবেকার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার অল্পকাল পরে মধুসূদন দত্ত “এমিলিয়া আঁরিয়েতা সোফিয়া” নামে এক ফরাসি তরুণীকে বিবাহ করেন। আঁরিয়েতা মধুসূদনের সারাজীবনের সঙ্গিনী ছিলেন। এদিকে মাইকেল তাঁর এক কপি দ্য ক্যাপটিভ লেডি বন্ধু গৌরদাস বসাককে উপহার পাঠালে, গৌরদাস সেটিকে জে ই ডি বেথুনের কাছে উপহার হিসেবে পাঠান। উক্ত গ্রন্থ পাঠ করে অভিভূত বেথুন মাইকেলকে চিঠি লিখে দেশে ফিরে আসতে এবং বাংলায় কাব্যরচনা করতে পরামর্শ দেন। ১৮৫৬ সালে মধুসূদন কলকাতায় ফিরে আসেন। পত্নীকে সেই সময় তিনি সঙ্গে আনেননি। নাটক বাংলা নাটকে মাইকেল মধুসূদনের আবির্ভাব আকস্মিক। ১৮৫২ সালে তারাচরণ শিকদার, জে. সি. গুপ্ত ও রামনারায়ণ তর্করত্নের হাত ধরে বাংলায় শৌখিন রঙ্গমঞ্চে নাট্য মঞ্চায়ন শুরু হয়। এই সময় লেখা নাটকগুলির গুণগত মান খুব ভাল ছিল না। ১৮৫৮ সালে পাইকপাড়ার জমিদার ঈশ্বরচন্দ্র সিংহ ও প্রতাপচন্দ্র সিংহের পৃষ্ঠপোষকতায় কলকাতার বেলগাছিয়া নাট্যমঞ্চে রামনারায়ণ তর্করত্নের রত্নাবলী নাটকটি অভিনীত হয়। শিল্পগুণবিবর্জিত এই সাধারণ নাটকটির জন্য জমিদারদের বিপুল অর্থব্যয় ও উৎসাহ দেখে মধুসূদনের শিক্ষিত মন ব্যথিত হয়ে ওঠে। এরপর তিনি নিজেই নাট্যরচনায় ব্রতী হন। রামনারায়ণ তর্করত্নের সংস্কৃত নাট্যশৈলীর প্রথা ভেঙে তিনি পাশ্চাত্য শৈলীর অনুসরণে প্রথম আধুনিক বাংলা নাটক রচনা করেন। মাইকেল মধুসূদনের নাট্যচর্চার কাল ও রচিত নাটকের সংখ্যা দুইই সীমিত। ১৮৫৯ থেকে ১৮৬১ – এই তিন বছর তিনি নাট্যচর্চা করেন। এই সময়ে তাঁর রচিত নাটকগুলি হল: শর্মিষ্ঠা (১৮৫৯), একেই কি বলে সভ্যতা (১৮৬০), বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ (১৮৬০), পদ্মাবতী (১৮৬০), কৃষ্ণকুমারী (১৮৬১)। এছাড়া মৃত্যুর পূর্বে মায়াকানন (১৮৭৪) নামে একটি অসমাপ্ত নাটক। “মেঘনাদবধ” কাব্য মধুসূদন দত্তের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি হচ্ছে – অমিত্রাক্ষর ছন্দে রামায়ণ উপাখ্যান অবলম্বনে রচিত মেঘনাদবধ কাব্য নামক মহাকাব্যটি। চরিত্র-চিত্র হিসেবে রয়েছেন – রাবণ, ইন্দ্রজিৎ, সীতা, সরমা, প্রমীলা প্রমূখ। তিনি তাঁর কাব্যকে অষ্টাধিক সর্গে বিভক্ত করেছেন এবং সংস্কৃত অলঙ্কারশাস্ত্র অনুযায়ী এতে নগর, বন, উপবন, শৈল, সমুদ্র, প্রভাত, সন্ধ্যা, যুদ্ধ, মন্ত্রণা প্রভৃতির সমাবেশও করেছেন। কিন্তু সর্গান্তে তিনি নূতন ছন্দ ব্যবহার করেননি, সর্গশেষে পরবর্তী সর্গকথা আভাসিত করেননি। যদিও তিনি বলেছিলেন – ” গাইব মা বীররসে ভাসি মহাগীত ” তবুও কাব্যে করুণ রসেরই জয় হয়েছে। মেঘনাদবধ কাব্য রামায়ণ-আহৃত কাহিনীর পুণরাবৃত্তি নয় – এটি নবজাগ্রত বাঙালীর দৃষ্টি নিয়তি-লাঞ্ছিত নবমানবতাবোধের সকরুণ মহাকাব্যের রূপে অপূর্ব গীতি-কাব্য। মেঘনাদবধ কাব্য এ দিক দিয়ে বাংলা কাব্য সাহিত্যে একক সৃষ্টি। মধুসূদন অতি আশ্চর্য্যজনকভাবে নির্মাণ-কুশলতা গুণে মহাকাব্যোচিত কাব্য-বিগ্রহ সৃষ্টি করেছেন। এ কাব্যের তাৎপর্য্য রাবণ-চরিত্রের প্রতীকতায়। তাঁর সৃষ্ট রাবণ চরিত্রে পরম দাম্ভিকতা প্রকট হয়ে উঠেনি। রামায়ণকে তিনি তাঁর মানবতার আলোকে বিধৌত করে যে মহাকাব্য রচনা করেছেন, তা আসলে রোমান্টিক মহাকাব্য। এ কারণে আকারে ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ মহাকাব্যোচিত হলেও, এর প্রাণ-নন্দিনী সম্পূর্ণ রোমান্টিক এবং মধুসূদন দত্ত এ কাব্যে জীবনের যে জয়গান করেছেন, তা বীররসের নয়, কারুণ্যের।বিশ্বকবি রবীন্দ্র ঠাকুরের ভাষায়, ” সমুদ্রতীরের শ্মশানে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিয়া কাব্যের উপসংহার করিয়াছেন। ” মৃত্যু মধুসূদনের শেষ জীবন চরম দুঃখ ও দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। আইন ব্যবসায়ে তিনি তেমন সাফল্য লাভ করতে পারেননি। তাছাড়া অমিতব্যয়ী স্বভাবের জন্য তিনি ঋণগ্রস্তও হয়ে পড়েন। ১৮৭৩ খ্রীস্টাব্দের ২৯ জুন আলিপুর জেনারেল হাসপাতালে কপর্দকহীন(অর্থাভাবে) অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মহাকবি জীবনের অন্তিম পর্যায়ে জন্মভূমির প্রতি তাঁর সুগভীর ভালবাসার চিহ্ন রেখে গেছেন অবিস্মরণীয় পংক্তিমালায়। তাঁর সমাধিস্থলে নিচে লেখা “যশোরে সাগরদাঁড়ী কবতক্ষ-তীরে জন্মভূমি, জন্মদাতা দত্ত মহামতি রাজনারায়ণ নামে, জননী জাহ্নবী! ………………………………….

Share This