Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

নেতাজী বসেছিলেন,  তাই সেই চেয়ারে আর কেউ কখনো বসেননি, নেতাজীর স্পর্শ পাওয়া কাঠের চেয়ারকে বুক দিয়ে আগলে রাখেন দেশুড়িয়া গ্রামের কর্মকার পরিবার।

নেতাজী বসেছিলেন যে চেয়ারে সে চেয়ারে  আর কেউ বসেনি কোনোদিন। ৭৩  বছর ধরে বাঁকুড়ার দেশুড়িয়া গ্রামের কর্মকার বাড়িতে যত্নে রাখা সেই চেয়ার আজো শূন্য। পরিবারের আশা ফের কোনোদিন নেতাজী ফিরে এসে আবার বসবেন সেই চেয়ারে।

সালটা ১৯৪০। বাংলার আকাশে ক্রমশ তীব্রতা বাড়ছে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের। ২৮ এপ্রিলের তপ্ত বাঁকুড়ায় সুভাষ চন্দ্র বসু এসেছিলেন গঙ্গাজলঘাটির বুকে সভা করতে। মঞ্চে তাঁর বসার জন্য রানীগঞ্জ থেকে ভাড়া করে আনা হয়েছিল সুন্দর সোফা। স্থানীয় নেতৃত্বের বসার জন্য মঞ্চে বরাদ্দ ছিল স্থানীয় ভাবে সংগ্রহ করা কাঠের চেয়ার।

 

 

নেতাজী সোফা সরিয়ে বসার জন্য টেনে নিয়েছিলেন সাধারণ একটি কাঠের চেয়ারকে। আগুন ঝরানো বক্তৃতা শেষে নেতাজী মঞ্চ ছাড়তেই আর দেরী করেননি দেশুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা রামরূপ কর্মকার। ছুটেছিলেন মঞ্চের উদ্যেশ্যে। তাঁর বাড়ি থেকে আনা চেয়ারেই যে বসেছিলেন নেতাজী। সটান মঞ্চে উঠে সেই চেয়ার মাথায় তুলে হেঁটে সেদিন বাড়ি ফিরেছিলেন রামরূপ কর্মকার। বাড়িতে ফিরে চেয়ার রেখেছিলেন নিজের বাড়ির ঠাকুর ঘরে।

 

বাড়ির সকলকে বলেছিলেন ওই চেয়ারে নেতাজীর ছোঁয়া আছে। তাই সেই চেয়ার যেন যত্নে রাখা হয়।  তারপর দামোদর দিয়ে বয়ে গেছে বহু জল। প্রিয় নেতাজী নিরুদ্দেশ হয়ে গেছেন। আরও পরে দেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু নেতাজী অন্তর্ধান রহস্যের মিমাংসা আজো হয়নি। নেতাজীকে হারানোর একরাশ যন্ত্রণা নিয়ে আজো দিন কাটে কর্মকার পরিবারের। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বুক দিয়ে কর্মকার পরিবার আগলে রাখেন নেতাজীর ছোঁয়া পাওয়া সেই সাধারণ কাঠের চেয়ারটিকে। পরিবারের কূলদেবী মনসার নিত্য পুজোর পাশাপাশি শূন্য কাঠের চেয়ার কর্মকার বাড়িতে পূজিত হয় দেবতা জ্ঞানে। শূন্য কাঠের চেয়ারকে ঘিরে যাবতীয় আবেগ ও অহঙ্কার আবর্তিত হয় দেশুড়িয়া গ্রামের কর্মকার পরিবারের।

 

কলমে : আবদুল হাই।

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *