Categories
উপন্যাস

ধারাবাহিক উপন্যাসঃ কঙ্কাবতীর দুঃসাহস (চতুর্দশ পর্ব) : দিলীপ রায় (+৯১ ৯৪৩৩৪৬২৮৫৪)।

অবশেষে প্রমোদ পাকাপাকিভাবে অনীশার দোকানে এসে উঠলো । এছাড়া উপায় নেই । বাড়ি্তে প্রমোদ ত্যাজ্যপুত্র । বাড়িতে ফিরে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ । তাই অনীশার সাথে ব্যবসায় হাত লাগালো প্রমোদ । দোকানটা আরও কীভাবে বড় করা যায় সেই ব্যাপারে দুজনের ধ্যান-জ্ঞান । কাজে তারা এখন অনেক বেশী চাঙা । বেঁচে থাকার পথ এখন দোকান থেকে আয়ের উপর । তা ছাড়া চায়ের দোকানের পাশাপাশি খাবারের রেস্টুরেন্টের উপর তারা জোর দিলো । ধীরে ধীরে স্টেশন চত্বরে দোকানটির কলেবর বৃদ্ধি পেলো ।
বেশ কিছুদিন পর চায়ের দোকানের পাশাপাশি খাবারের দোকান চালু হয়ে গেলো । অনেক টোটোওয়ালা, ভ্যান-ওয়ালা, অনীশার খাবারের দোকানের নিয়মিত খরিদ্দার । দুপুরে ডাল, ভাত, তরকারি, মাছের ঝোল দিয়ে হোটেল চালু । পেট পুরে খাওয়া, অথচ খরচাও খুব কম । যার জন্য অনীশার খাবারের দোকানে ক্রমশ ভিড় বাড়ছে । রাতে রুটি তরকারি, ডিমের ওমলেট্‌ । ট্রেনের অনেক যাত্রী যাওয়া-আসার রাস্তায় অনীশার হোটেলে ঢুকছেন । খাবার খেয়ে খরিদ্দারেরা পরিতৃপ্ত ।
স্টেশন এলাকায় একটিমাত্র খাবারের দোকান । রাস্তার পাশে হোটেল খোলার জন্য হোটেলের প্রতি খরিদ্দারদের দৃষ্টি সর্বক্ষণ । অনীশা ও প্রমোদ দুজনে আলাদাভাবে হোটেলের কাজ ভাগ করে নিলো । খাবারের দোকানের দায়িত্ব রইল প্রমোদের উপর । খরিদ্দারের চাহিদা অনুসারে বাজার করা এবং খাবারের আয়োজন করা, প্রমোদের দায়িত্ব । খরিদ্দারদের রুচি অনুযায়ী হোটেলের খাবারের প্রস্তুতি । প্রমোদ সেই কাজটা খুব যত্ন সহকারে পালন করছে । যার জন্য হোটেলের সুনাম খুব তাড়াতাড়ি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল । অন্যদিকে অনীশার দায়িত্ব, চায়ের দোকান ঠিকমতো চালু রাখা । যদিও অনীশা দীর্ঘদিন ধরে চায়ের দোকান সামলাচ্ছে, সেই কারণে তার চায়ের দোকান ভীষণ ভাল চলছে । দোকানের আয় থেকে এখন তাদের হাসিমুখে সংসার ।
কঙ্কাবতী ঘোতনকে তাগাদা দিলো, অনীশাদের দো-তলায় শীঘ্র দোকান খুলতে । কিন্তু দোকান খোলা নিয়ে ঘোতনের ছিল ভীষণ আড়ষ্টতা । এতদিন তার সারা শরীরে আলস্য ভর করে ছিল । মায়ের কথা শুনে তার টনক নড়ল । ঘোতনের আন্তরিক উপলব্ধি, এবার তাকে দোকান খোলার উপর নজর দিতে হবে । তার একটাই চিন্তা, দোকান খোলার পুঁজির সংস্থান ?
ঘোতনের ইচ্ছা ছিল, রেডিমেড গার্মেন্টসের দোকান খোলার । কিন্তু মহাজনের সঙ্গে কথাবার্তা বলে যেটা বুঝেছে তাতে ব্যবসা শুরুর সময় বেশ কিছু নগদ টাকার দরকার ! নতুবা নতুন দোকানের ক্ষেত্রে মহাজনেরা বাকীতে কারবার করতে রাজি নয় । প্রথমে নগদ টাকা দিয়ে মাল তুলতে হবে । তারপর কাজের হালহকিকৎ দেখে ধার-বাকীতে লেনদেন । সুতরাং দোকান খোলার প্রারম্ভে ঘোতনের মোটা টাকা দরকার । দোকান খুলতে গিয়ে ঘোতনের অভিজ্ঞতা মাকে সবিস্তারে জানালো । তাই কঙ্কাবতী নিজেও শহরে কাপড়ের ব্যবসায়ীর সঙ্গে দেখা করলো । তাঁদের সেই এক বক্তব্য, নতুন দোকানের ক্ষেত্রে বিনা পয়সায় মাল দিতে তাঁরা গররাজি ।
মাকে হতাশ অবস্থায় দেখে ঘোতন তার মত বদলালো । পুঁজির অভাবে রেডিমেড গার্মেন্টসের দোকান আর খুলতে চায় না । সে টেলারিং দোকান খুলতে চায় । ইতিমধ্যে সে টেলারিংয়ের কাজ অনেকটাই শিখেছে । টেঁয়া স্টেশন বাজারে আলম ফকিরের টেলারিং দোকানে বসে কাপড় কাটা এবং সেলাইয়ের কাজ ঘোতনের অনেকটাই রপ্ত । আলম ফকির আন্তরিকতার সাথে ঘোতনকে কাজ শিখিয়েছে । এর পেছনে একটা কারণও রয়েছে । একবার কিছু উটকো মস্তানদের পাল্লায় পড়ে তার দোকান বন্ধ হওয়ার উপক্রম । জোরজুলুম করে পঞ্চাশ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জঘন্য ধান্দা ছিল ! উটকো মস্তানদের ষড়যন্ত্র টের পেয়ে উপযাজক হয়ে আলম ফকিরকে বাঁচাতে ঘোতন ষড়যন্ত্রকারীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল । যার জন্য সে যাত্রায় বেঁচে গিয়েছিল আলম ফকির । তার অনেকদিন পর যখন ঘোতন আলম ফকিরের কাছে কাজ শিখতে গেলো, তখন আলম ফকির সাদরে স্বাগত জানিয়ে ঘোতনকে কাজ শেখাবার প্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ হলো । আলম ফকির বলেছিল, “কাজটা শিখতে কিছুদিন সময় লাগবে । কিন্তু মনোযোগ দিয়ে কাজ শিখলে ভবিষ্যতে টেলারিং দোকান খুললে স্থায়ী আয়ের একটা বন্দোবস্ত হবে ।“ তাই ঘোতন এখন ভাবছে, সেই আলম ফকিরের ভবিষ্যতবাণী ঘোতনের জীবনে ফলে গেলো । ঘোতন টেলারিং দোকান খুলতে চলেছে ।
ঘোতন ছুটলো আলম ফকিরের কাছে । কীভাবে দোকান খুলবে এবং টেলারিং দোকানে কী কী সামগ্রী লাগবে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ লিখে আনলো । সেই সময় আলম ফকির ঘোতনকে আরও বলল, “প্রয়োজনে সে সবরকম সহযোগিতা করতে প্রস্তুত ।“ আলম ফকিরের আশ্বস্থতা পেয়ে ঘোতন যারপরনাই আনন্দে উদ্বেলিত ।
ইতিমধ্যে আলম ফকির একটি পুরানো সেলাই মেশিন ঘোতনকে দিয়েছে । ঊষা কোম্পানীর মেশিন । মেশিনটির অবস্থা এখনও অনেক ভাল । চালু মেশিন । ঘোতন ঠিক করলো, ঐ পুরানো মেশিন দিয়ে তার টেলারিং দোকান চালু করবে । তারপর স্থানীয় ব্যাঙ্কের স্মরণাপন্ন হবে । লোনের জন্য । লোন না নিলে দোকানটা সাজাতে পারবে না । ইতিমধ্যে ব্যাঙ্কের স্থানীয় শাখায় দেখা করে এসেছে । লোনের ব্যাপারে শাখা প্রবন্ধক যেভাবে পরামর্শ দিয়েছেন । সেদিকেই হাঁটছে ঘোতন ।
কঙ্কাবতী চাইছে, ঘোতন শারীরিক কসরত করে নিজের পায়ে দাঁড়াক ।
অনীশার রেস্টুরেন্টের উপরের তলায় দোকান ঘর সাজালো ঘোতন । খুব সাধারণভাবে দোকান ঘর সাজিয়ে তুললো । পুরানো একটি সেলাই মেশিন । তার সাথে কিছু সরঞ্জাম যেমন মাপ করার ফিতে ও স্কেল, কাপড় কাটার কাঁচি, বিভিন্ন রঙের সুতো, ইত্যাদি । স্টেশনে যাওয়ার পথে দোকান হওয়ায় সুবাদে কিছুদিনের মধ্যে ঘোতনের টেলারিং দোকান মানুষের নজরে পড়লো । দোকানে ক্রমশ ভিড় বাড়ছে । ছেঁড়া ফাটা কাপড় যেমন সেলাইয়ের জন্য তেমনি নতুন শার্ট, প্যান্ট, পায়জামা, ব্লাউজ, সায়া, ইত্যাদি তৈরীর জন্য খরিদ্দারদের ভিড় বাড়ছে । তবে ডোরাকাটা চেক লুঙ্গির সেলাই প্রতিদিন থাকছে । লুঙ্গি অর্থাৎ দুই মুখ জোড়া লাগানো কাপড় যাকে বলে কাছা-কোঁচাহীন ধুতি পরনের চল এলাকায় বেশী । যার জন্য প্রতিদিন বেশ কয়েকটি লুঙ্গি সেলাইয়ের কাজ থাকে ।
কাজের প্রতি ঘোতনের খুব মনোযোগ । ব্যবসায় সে দাঁড়াতে চায় । আশেপাশের ঝুটঝামেলা থেকে সে এখন অনেক দূরে । ঝুটঝামেলার কারণে মাঝে মাঝে ডাক এলে তাদের সরাসরি “না” করে দিচ্ছে । তার একটাই বক্তব্য, তাকে তার ভবিষ্যত জীবনের কথা ভাবতে হবে । নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে । সুতরাং কোনোরকম অপ্রীতিকর কাজে সে আর জড়াতে চায় না । ঘোতনের সংসার-প্রীতি অনেকের আবার অপছন্দ, যার জন্য তারা মাঝে মাঝে ঘোতনকে উত্ত্যক্ত করে । কিন্তু ঘোতন তার নিজের সিদ্ধান্তে অটল । ফলে তার বিরূদ্ধে কিছু বন্ধু-বান্ধবের রোষ বাড়ছে । সেটা ঘোতন টের পেয়েও নির্বিকার । ঐসব উটকো ছেলেদের কীভাবে টাইট দিতে হয় সেই ঔষধ তার জানা । সেইজন্য উটকো ছেলেদের তড়পানিতে ডরায় না ঘোতন । তার মাথায় একটাই চিন্তা, ব্যবসা বাড়ানো !
দেখতে দেখতে ঘোতনের এক বছর কেটে গেলো । কঙ্কাবতী ঘোতনকে তাগাদা দিচ্ছে বিয়ে করার জন্য । ঘোতনের এখন বিয়ের বয়স, বরং বলা চলে বিয়ের মোক্ষম সময় । তাই বিয়েতে ঘোতনকে রাজি করানো । কিন্তু ঘোতন এই মুহূর্তে বিয়ে করতে চাইছে না । সে দোকানটাকে আরও বাড়াতে চায় !
ব্যাঙ্ক থেকে অল্প কিছু লোন পেলো । তাতে নতুন একটা মেশিন কিনলো এবং প্যান্ট-শার্টের জন্য কাপড় কিনলো । দোকান ঘরটাও কাঠের আসবাব দিয়ে সাজালো । দোকান ঘরটা এমনভাবে সাজালো খরিদ্দারেরা দোকানে ঢুকে তাদের সন্তুষ্টি প্রকাশ করে ঘোতনকে বলতে বাধ্য হল, “এতদিনে মনে হচ্ছে সত্যিকারের টেলারিং দোকানে ঢুকলাম ।“ খরিদ্দারদের কথাগুলি ঘোতনকে খুব তৃপ্তি দেয় ।
প্যান্ট শার্ট কাটিং করতে গিয়ে কোনো সমস্যা হলে সোজা টেঁয়ার আলম ফকিরের দোকানে । তার কাছ থেকে ভাল করে বুঝে তারপর প্যান্টের বা শার্টের কাপড়ের কাটিং । এইভাবে ঘোতন নিজেকে সমৃদ্ধ করতে থাকলো । এর মধ্যে স্থানীয় এক ভদ্রলোক পর্দার কাপড় সেলাইয়ের অর্ডার দিলেন । সেই কাজ হাতছাড়া করলো না ঘোতন । রাত-দিন অতিরিক্ত খেটে সেই অর্ডার পালন করলো । এইভাবে তার টেলাইং কাজের সুনাম চতুর্দিকে ছড়িয়ে গেলো ।
ঘোতনের টেলারিং দোকান থেকে আয়ের পরিমান ক্রমশ বাড়ছে । সংসার চালাতে মাকে নিয়মিত টাকা দিচ্ছে ঘোতন । যদিও তার সব বোনেরা কিছু না কিছু কাজ করছে, ফলে তাদের জন্য ঘোতনের চিন্তা কম । তবে বোনদের বিভিন্ন আবদার কঙ্কাবতী মেটায় । ঘোতন ও অনীশা এক বিল্ডিংয়ে সুন্দর ও লাভজনকভাবে ব্যবসা চালাচ্ছে । ভাই-বোনের ব্যবসা দেখে অনেকের মুখে এখন আলোচনার বিষয়, “কঙ্কাবতীর ছেলে-মেয়েগুলি ভীষণ কর্মঠ ।“
ব্যাঙ্কের ম্যানেজারবাবু পোস্ট-স্যাঙ্ক (Post Sanction Inspection) ইন্সপেকশনে এলেন । তিনি টেলারিং দোকান দেখে ভীষণ উৎফুল্ল । ঘোতনের কাজকর্মের বর্তমান অবস্থান ও ব্যবসার গতিধারা দেখে তিনি নিশ্চিত হলেন, “যোগ্য জায়গায় লোনটা দেওয়া হয়েছে ।“ মিষ্টি খেতে পীড়াপীড়ি করলো ঘোতন । তিনি কিছুই খেলেন না । কিন্তু টেলারিং থেকে ব্যাঙ্কে ফিরে যাওয়ার আগে বললেন, “এক কাপ চা দাও বরং চা খেয়ে ওঠা যাক ।“
চা খেয়ে বিদায় নিলেন ম্যানেজারবাবু ।
 চলবে

Share This
Categories
কবিতা

একান্তে :: রাণু সরকার।।

খেলেছি কত তোমার সাথে
যখন আমার শুরু হলো প্রথম মেয়েবেলা,
তখন চিনতো কি আমাদের মন-
কে তুমি আর কে আমি!

ছিলোনা আমাদের ভয় লজ্জা অপমানের জ্বালা,
তখন সেই যে আমার প্রথম শুরু বেলা-
মনটা ছিলো বিশ্রামহীন অস্থির উড়ু উড়ু,
থাকাটাই তো স্বাভাবিক।

সকাল সন্ধ্যা রোজ আসতে না তুমি বলো ডাকতে,
যেন তুমি আমার কোন এক কালে ছিলে ভীষন আপন জন,
আমার তো কেউ ছিলো না বলো তুমি ছাড়া খেলার সাথী-
তুমিই ছিলে একজন একান্ত আপনজনা!

ছুটোছুটি করেছি কতনা হাত ধরে,
হেসে খেলে বনের এপ্রান্ত থেকে ওপান্তে।
এখন কি তোমার ওসব কথা মনে পড়ে আমার মতো?
তোমার পাঁচমিশালী টুকরো টুকরো গানের সুরে দিতাম আমি তাল,
করতো না তো একটুও লজ্জা আমার!
তখন নাচতো আমার মন, হতো চঞ্চল,
তখন আমি ছোট্ট খুকী-
সবে গায়ের গন্ধ বাতাসে ওড়ে, বুঝতামনা গানের মর্মার্থ।

আচমকা দিনের সূচনা স্তব্ধ হল সব,
প্রকৃতির এটাই বুঝি নিয়ম,
পশ্চিমেতে সূর্য রেগে ঠায় দাঁড়িয়ে,
যাচ্ছে না কেনো চলে-
বুঝেছি, এবার আমার থাকতে হবে একান্তে নিরালায় ঘরের কোণে।

Share This
Categories
কবিতা

রূপহীন : রাণু সরকার।

কালো তব রূপহীন পাত্রী আমি,
রয়েছে আকুল আকাঙ্ক্ষা, অনেকে বলে কেনো থাকবে কামনা বাসনা?

রক্ত মাংস দিয়ে যে গড়া আমি, থাকতে নেই কি কোনো আকাঙ্ক্ষা?

জানা তো ছিলোই কেউ করবে না পূজা,
যদিওবা একদিন হয় উপাসনা,
প্রদীপ জ্বালিয়ে করবে কি আরাধনা?

হয়তো হবে অর্চনা হেলাফেলায়-
তাল-ছন্দে কি বাজবে মাদল?
পরমানন্দ থাকবে কি অনন্তকাল?

বাধা আসবে জানি তো, তবুও চেয়ে থাকি দ্বারে,
তাকাই বারে বারে
যাকে ধরে মনে,
সেকি তাকায় তব রূপহীন পাত্রীর পানে!

Share This
Categories
কবিতা

বায়স্কোপের নেশা : সৌগত রাণা কবিয়াল।

যদি কঠিন কিছু বলার থাকে,
তবে বলে দিতে পারো আমায়.. !
নিজেকে সুখী করতে একটু নির্লিপ্ত হতে দোষ কি..? ‘অনুভুতি’ বুঝি অংকের হিসেব কোন..?

ভালোবাসায় কোন দাগ দিতে নেই..
কোন আঁচড় দিতে নেই..
বড্ড কোমল সুখের এই ‘ভালোবাসা’..
হয়তোবা কখনো সখনো অনেক দুঃখের…!

আমাদের জন্য অনেক আছে..
তুমি কিংবা আমি ছাড়াও আরও অনেক…!
তুমি হয়তো দুরন্ত কোন মেঘের মতন…
আমি হয়তো মাঠের কোনে বৃষ্টি জমা জল…!

জীবন কখনো কাওকে দিব্যি দেয় না…
কঠিন নিয়মের শেকল বাঁধে না সমাজের মতো.!
চাইলে তুমি উড়ে যেতে পারো পুরোটাই…!
বাতাসের গায়ে কোন গন্ধই যে স্থায়ী নয় কোনদিন…!

এই যে নিয়ম করে লিখতে গেলে কত ব্যাকরণ..!
বাংলায় আমি বরাবরই ভালো..
শুধু সমাস টা মাথায় খেলে কম..
তবে এটুকু বুঝি,
চারপাশের সবকিছুই আমাদের জন্য নয়…
কেও আকাশের জন্য কাঁদে…
আবার কারো মন পড়ে থাকে ঘরের রঙিন পর্দায়..!

দিন শেষে কিন্তু আমরা সবাই একা,বড্ড একা..
অথচ মেনে নেয়ার সাহস হয়ে ওঠে না কারো..
‘মায়া’ জিনিসটা ভয়ানক কঠিন….
ভালোবাসা ছাড়া তাকে শেকলে বাঁধতে গেলে..
বুকে রক্ত জমাট বাঁধে…. !
লালের এই রুপে আমার ভীষণ ভয়…
বড্ড কঠিন ভয়….!

Share This
Categories
কবিতা

শব্দহীন ::: রাণু সরকার।।।

এমনটা তো চাইনি
আমার বলা শেষ!
তুমি এভাবে আসবে ভাবতেই
পারছিনা-

এসেই যখন পড়েছো এখনো
নির্ভীক আছো দাঁড়িয়ে-
তোমার শরীর ফেনাহীন কেনো?
এমনটা তো চাইনি-
চেয়েছিলাম বুদবুদের পুঞ্জ!

আমার চাওয়া নিশ্চয়ই তোমার
জানা আছে-
ক্লান্তিটাকে পর্দার আড়ালে রেখে
আসতে পারতে!
চেয়েছিলাম গুপ্ত আশ্রয়স্থল,
দীর্ঘকাল সাগ্রহে কামনা যায়-
গোলাপের গাছটি কেনো ঢেউয়ে
বাড়ি খাচ্ছে?
ফাঁকা জায়গায় এতো ঢেউ
কোথা থেকে এলো–
এমটা হতে পারে সেকথা জানা
ছিলো নিশ্চয়ই!

Share This
Categories
কবিতা

আদরের অনামিকা :: রাণু সরকার।।।

রাতে ঘুম আসেনি, ভাবনারা ছিলো প্রিয়র অভ্যন্তরে,
ভোরে একটু চোখ বুজে আসছিলো-
মনে হলো প্রিয় নিদ্রাতুর চোখে চুম্বন করলো।

গায়ে তার যৌনগন্ধ,
ঘুমের মধ্যে হৃদয়ে ঢেউ তুলে দিলো,
ঘুমের ঘোরে হাত ধরে নিয়ে যায় জ্যোৎস্নায় স্নান করবে বলে।

দু’জনেই স্নান করছিলো,
কাঁপা কাঁপা স্বরে করলো অঙ্গীকার,
দু’জনের হৃৎশব্দ একসুরে বেজে উঠল-
ঘুমের মধ্যে সে-কি সুখ, প্রেমানন্দে নানান স্পর্শ!

হিংস্রের মত নেশালাগা জ্যোৎস্নার রাত ব্যাকুল বিবস্ত্র শরীর দু’জনের,
এক নিঝুম জ্যোৎস্না রাতে নদীর ধারে ঘাসের কোমল শয্যায় হলো মিলন,
মিলনের অজান্তে বীজ রোপণ করা হয়ে গেলো, কি হবে এখন?

বীজ রোপণ করেছে যখন গাছটির কি নাম দেওয়া যায়,
ভয়ে ভয়ে গাছটির নামকরণ করলো-
নাম দিয়েছে অনামিকা।

গাছটি দু’জনের মিলনের খুব আদরের,
গাছটি স্বপ্নে রোপণ হলল,
কিন্তু দু’জনের খুব আদরের, স্বপ্নের অনামিকা!

২৬|০৪|২০১৮

Share This
Categories
কবিতা

এক শ্রাবণের কথা : রাণু সরকার।

শ্রাবণের আকাশে কালো মেঘের পুঁজিতরাশি,
এই বুঝি এলো বর্ষা রাণী, স্বামী-পুত্র গেছে মাঠে,
ধেয়ে এলো ঘনকাল ও মাগো মা নিমেষে হলো এক হাঁটু জল মাঠ ঘাট হলো এক বোঝা দায়।
হায়-রে শ্রাবণের ধারা দেখো দেখো ধানের মাথা গুলো করছে যেন বিনয়ী বাতাসের তাড়নায়।

গরু-ছাগলের পাল দিচ্ছে কি হাঁক ডাক,গোগৃহ তো জলে ডুবুডুবু গা যাচ্ছে ওদের ভিঁজে। এতোগুলো গাই বাছুরের পাল রাখি কোথায়ও, কে যানতো এভাবে শ্রাবণেরধারা বৈবে অবিরাম।

সূর্য এই বুঝি দিলো ডুব তবে যায় না দেখা মনে হয় একটু আছে বাকি,
বোঝাও কি উপায় আছে আঁধার রেখেছে যে ঘিরে।
এখনো কি পারছে না বুঝতে তারা হুঁশ নেই কি একদম,একা কি করে দেই সব সামাল বৃদ্ধা শ্বাশুড়িটাও পরে আছে বিছানায়।
দুয়ারে এক হাঁটুজল দাঁড়িয়ে দেখছি-কারুর দেখা নেই,ঘনঘন বিদ্যুতের চমকানি,
একা গৃহে ভয়ে ভয়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত,
তাকে বলেছিলাম-বেলা না গড়ায় এসো ফিরে তাড়াতাড়ি ঘরে, কে কার কথা শোনে,
সকাল থেকেই ছিলো মেঘেদের মুখ ভার করছিলো তারা কানাকানি।

তখনি বুঝেছি আসবে ধেয়ে নেবে সব ভাসিয়ে ক’দিন আগেই বলেছিলাম গোয়াল ঘরের চালটাতে ঘর চাপাতে হবে কানে নেয় নি কথা।

হঠাৎই কানে এলো কে যেন ডাকছে,বউঠান বাব-বেটা ফিরেছে কি ঘরে?
আমি বলি না গো দাদাঠাকুর ফেরেনি এখনো তারা।
দেখ দেখি কি মুশকিলের কথা,তারা কি বোঝে
না দু’কূল গেছে ভেসে,
বলেছিলেম তো তারে বেলা থাকতেই যেন আসে ফিরে ঘরে।
গৃহিণীর কথা বাসি হলে লাগে কাজে।

Share This
Categories
কবিতা

কোরক : রাণু সরকার।

আমার জন্ম জন্মান্তরের
কিছু সুখ দুঃখের স্মৃতি‐
অত্যাচারিত তারা-
তোমার ঠোঁটে বা হৃদয়ে
কি করে তাদের রাখি!
আমি কোন চিহ্ন রেখে
যাবো না-

তুমি কি আমার?
না—
আমার নও অন্য কারোর!
যদি ভুল বলি করো খমা-

আমার কোন স্মৃতি
থাকে যদি মনে!
ধরা দেবে তুমি নিজে-
ধূর্ত কপটচারী–
খুলতে হবে না দ্বার!

ঠোঁটে যদি পুষ্পকোরকের
অনুভূতি হয়ে থাকে-
সেটা আমার নিবিড় প্রখরতা কদাচ-
দীর্ঘকালের আকাঙ্ক্ষিত
সোহাগের অভ্যর্থনা!

তবে তুমি কি আমার?
না–
ছিলে একসময় এখন
অন্য কারো!
প্রকৃতি সাক্ষী রখেছে-
তবে আকাঙ্ক্ষিত যুগল
ঠোঁট ভরাট হলোনা!
মদিরার কামনা বাসনার চুম্বনে!

Share This
Categories
কবিতা

আদুল : রাণু সরকার।

প্রতিদিন মধ্যাহ্নে তটিনীর জলে স্নান সেরে
আদুল যৌবন
ভেজা কাপড়ে মুড়ে কলসীতে জল ভরে হেঁটে যাও-
চুলে মাখা চন্দন তেলের গন্ধ ভেসে আসে নাকে, মন হয় চঞ্চল!

জলপরীর সাজে দেখায় বেশ জলের বিন্দু চোখেমুখে,
ঠোঁট দুটি যেন মদিরা ঢালা!

এতো সুন্দর দৃশ্য হোতনা দেখা
যদি না থাকতাম আড়ালে অপেক্ষায়!

Share This
Categories
কবিতা

ছোট শিশুর কষ্ট : রাণু সরকার।

বাপটা আমার থেকেও নেই মনে
করি মারা গেছেন
চোখ মেলে দেখিনি বাপের মুখ কেমন,
কোন ভোরে মা গেলো চলে
বাবুর বাড়ির বাসন ধুতে
আমরা এখন তিনজন থাকি রেললাইনের ঝুপরিতে।

আমার কাছে ভাইকে রেখে
কি করে যাই ইস্কুলেতে
খিদের জ্বালায় শুয়ে পড়ে
ভাই যে আমার সারা হলো কেঁদেকেটে।

কাল রাতে পেটে আমার
ব্যথা ছিলো
খাইনি,আমার ভাতটা থেকে গেলো-
পান্তা করে নুন দিয়ে ভাই আমার খেয়ে
নিলো
দাড়িয়ে আছি নিয়ে কোলে
কান্না ভাইয়ের থেমে গেলে।
ইস্কুলের যাবার সময় হলো
এই বুঝি,ঘন্টা বেজে থেমে গেলো-
কি করে যাবো,মা যে এলো না এখনো
হয়তো গিন্নীমা কাজের চাপে রেখে দিলো
এমন তো করেনি কখনো
আমারা গরিব বলে করলো এমন
বাপটা যদি থাকতো এখন।

Share This