Categories
রিভিউ

আজ ২৯ মে, ইতিহাসের আজকের এই দিনে যা ঘটেছিল।

আজ ২৯ মে। ইতিহাস ঘেটে দেখা যায় বছরের প্রতিটি দিনে ঘটেছে অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। আসুন আজকের দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় একনজরে দেখে নিই।  ইতিহাসের আজকের এই দিনে কী কী ঘটেছিল, কে কে জন্ম নিয়েছিলেন ও মৃত্যুবরণ করেছিলেন——-

 

দিবস—–

 

(ক) আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস।

(খ) সেনাবাহিনী দিবস (আর্জেন্টিনা)।

 

আজ যাদের জন্মদিন—-

১৬৩০ – দ্বিতীয় চার্লস ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডের রাজা।

১৮৬০ – স্যার মণীন্দ্র চন্দ্র নন্দী, কাশিমবাজারের মহারাজা ও মানবতাবাদী ব্যক্তিত্ব।

১৮৬৫ – রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়, ঊনবিংশ শতকের বাঙালি সাহিত্যিক ও ‘প্রবাসী’ ও ‘মডার্ন রিভিউ’ এর সম্পাদক।

১৮৬৮ – দ্বিতীয় আবদুল মজিদ, সর্বশেষ উসমানীয় খলিফা।

১৮৯৪ – ইয়োজেফ ফন স্টার্নবের্গ, অস্ট্রীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন চলচ্চিত্র পরিচালক।

১৮৯৬ – স্টেলা ক্রামরিশ, অস্ট্রীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন ইতিহাসবিদ ও কিউরেটর যিনি মূলত ভারতীয় শিল্পের ইতিহাস নিয়ে প্রসিদ্ধি লাভ করেন।

১৯০৩ – বব হোপ, মার্কিন কৌতুকাভিনেতা, অভিনেতা, গায়ক, নৃত্যশিল্পী, মল্লক্রীড়াবিদ ও লেখক।

১৯০৫ – হীরাবাঈ বরোদাকর, হিন্দুস্তানী শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী।

১৯১৪ – তেনজিং নোরগে, নেপালী শেরপা, এডমন্ড হিলারির সাথে যৌথভাবে এভারেস্ট শৃঙ্গ জয় করেন।

১৯১৭ – জন এফ. কেনেডি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫তম রাষ্ট্রপতি।

১৯২১ – বিশিষ্ট বাঙালি শিল্প ব্যক্তিত্ব সাধন দত্ত।

১৯২৫ – অমলেন্দু বিশ্বাস, বাংলাদেশী যাত্রা অভিনেতা ও পরিচালক।

১৯২৯ – দ্বিজেন শর্মা, বাংলাদেশী প্রকৃতিবিদ।

১৯২৯ – পিটার হিগস, ব্রিটিশ তাত্ত্বিক পদার্থবিদ এবং এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যামিরেটাস অধ্যাপক।

১৯৪০ – ফারুক আহমদ খান লেগারি, পাকিস্তানি রাজনীতিবিদ এবং অষ্টম প্রেসিডেন্ট।

১৯৪১ – অরুণাভ সরকার, বাংলাদেশী কবি, কলাম লেখক, সাহিত্য সম্পাদক ও মুক্তিযোদ্ধা।

১৯৫২ – হুমায়ুন ফরিদী, বাংলাদেশী অভিনেতা।

১৯৮৪ – নিয়া জ্যাক্স, মার্কিন পেশাদার কুস্তিগীর, মডেল এবং বডিবিল্ডার।

১৯৯৩ – মাইকা মনরো, মার্কিন অভিনেত্রী এবং পেশাদার কাইটবোর্ডার।

 

ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনের ঘটনাবলী—-

১৩২৮ – ফিলিপ-৫ ফ্রান্সের রাজমুকুট গ্রহণ করেন।

১৪৫৩ – কনস্টান্টিনোপল বিজয়: সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদের নেতৃত্বে উসমানীয় সেনারা ৫৩ দিন অবরোধের পর বাইজেন্টাইন রাজধানী কনস্টান্টিনোপল জয় করে এবং বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সমাপ্তি ঘটে।

১৭২৭ – দ্বিতীয় পিটার রাশিয়ার জার হন।

১৮০৭ – মোস্তফা চতুর্থ কর্তৃক তুরস্কের সুলতান সেলিম তৃতীয় ক্ষমতাচ্যুত।

১৮৭৪ – সুইজারল্যান্ডে সংবিধান কার্যকর হয়।

১৯০৩ – সার্বিয়ার রাজা আলেকজান্ডার আর্বেনোভিচ সস্ত্রীক নিরাপত্তা রক্ষীদের হাতে নিহত।

১৯৩৪ – তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোসফের স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি অনুযায়ী, কিউবারের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বাতিল করা হয়।

১৯৩৫ – হেগ জাদুঘর উদ্বোধন করা হয়।

১৯৩৭ – স্পেনে গৃহযুদ্ধ চলার সময় রিপাবলিকানদের জঙ্গী বিমান জার্মানীর একটি জাহাজে আঘাত হানে।

১৯৪৮ – আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধ বিরতির জন্য জাতিসংঘের পরিচালিত প্রথম শান্তিরক্ষা মিশন।

১৯৫৩ – তেনজিং নরগেএবং এডমন্ড হিলারী যৌথভাবে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন। দু জনের মধ্যে তেনজিং নরগে প্রথমে শৃঙ্গে উঠেছিলেন।

১৯৫৪ – পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক এ.কে. ফজলুল হকের নেতৃত্বে গঠিত যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভা বাতিল ঘোষণা করা হয়।

১৯৫৯ – শার্ল দ্য গোল ফ্রান্সে জাতীয় নিরাপত্তামূলক সরকার গঠন করেন।

১৯৬৩ – ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশে ২২ হাজার লোকের প্রাণহানি ঘটে।

১৯৬৮- ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাব ইউরোপিয়ান কাপ জয় করে।

১৯৭২ – তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিকসেন সৌভিয়েত ইউনিয়নে তার এক সপ্তাহব্যাপী সফর করেন।

১৯৯০ – বরিস ইয়েলৎসিন রুশ ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

১৯৯০ – কর্ণফুলি সেতু আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়।

১৯৯১ – ক্রোয়েশিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা।

১৯৯৩ – চতুর্থ এশিয়া-প্যাসিফিক রেড ক্রস সম্মেলন পেইচিংএ সমাপ্ত হয়।

১৯৯৬ – কায়রোতে ৭টি আরব দেশের পরিবেশ সংক্রান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

১৯৯৬ – বেনজামিন নেতানিয়াহু ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত।

 

এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন যারা—-

১২৫৯ – ডেনমার্কের রাজা দ্বিতীয় ক্রিস্টোফার।

১৪৫৩ – উলুবাতলি হাসান, অটোমান সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদের অধীনস্থ একজন তিমারলি সিপাহি।

১৮২৯ – হামফ্রে ডেভি, ব্রিটিশ আবিষ্কারক এবং প্রখ্যাত রসায়নবিদ।

১৮৯২ – বাহাউল্লাহ, বাহাই ধর্ম-এর প্রতিষ্ঠাতা।

১৯৪২ – জন ব্যারিমোর, আমেরিকান অভিনেতা।

১৯৭১ – পৃথ্বীরাজ কাপুর, ভারতের থিয়েটার ও চলচ্চিত্র অভিনেতা ও ভারতীয় গণনাট্য সংঘের প্রতিষ্ঠাতা ।

১৯৭৭ – সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, বাঙালি, একজন ভাষাতাত্ত্বিক পণ্ডিত, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ।

১৯৭৯ – ম্যারি পিকফোর্ড, কানাডীয়-মার্কিন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ও প্রযোজক।

১৯৮১ – চীনের মহান বিপ্লবী পথিকৃৎ ড: সান ইয়াত সেনের বিধবা সন ছিং লিন।

১৯৮৭ – চৌধুরী চরণ সিং, ভারতীয় রাজনীতিবিদ এবং ভারতের ৬ষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী।

২০০৪ – আঞ্জুমান আরা বেগম, একুশে পদক বিজয়ী বাংলাদেশী সঙ্গীতশিল্পী।

২০১০ – ডেনিস হপার, মার্কিন অভিনেতা, চলচ্চিত্র নির্মাতা, আলোকচিত্রী ও চিত্রশিল্পী।

২০১৭ – মানুয়েল নরিয়েগা, পানামার সাবেক রাজনীতিবিদ ও সৈনিক।

২০২১ – (ক) ‘টারজান’ খ্যাত হলিউড তারকা জো লারা।

(খ ) বিষ্ণুপুর ঘরানার কিংবদন্তি ধ্রুপদী সঙ্গীত শিল্পী ড.দেবব্রত সিংহ ঠাকুর।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

গুরুতত্ত্বে-র গূঢ় রহস্য : রাধাবিনোদিনী বিন্তি বণিক।

শ্রীমন্ মহাপ্রভু রায় রামানন্দের কাছে জানতে চেয়েছিলেন — “বিদ্যার মধ্যে কোন্ বিদ্যা জীবের হয় সার ?” বিদ্যা শব্দটি “বিদ্‌’ ধাতু থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘জানা’। আর সার অর্থে শ্রেষ্ঠ। অর্থাৎ তিনি জানতে চাইলেন কী বা কাকে জানা শ্রেষ্ঠ? তখন ‘রায় কহে, ভক্তি বিনা বিদ্যা নাহি আর। ভক্তি বিদ্যাই শ্রেষ্ঠ।” ভক্তিকে জানাই সর্বোত্তম বিদ্যা। ভক্তি কি? ভক্তি অর্থাৎ ভজনা। অতএব, ভগবানকে ভজনা করতে জানাই হল শ্রেষ্ঠ বিদ্যা। এ পৃথিবীতে যে কোন ধরণের শিক্ষার জন্য একজন শিক্ষকের প্রয়োজন। এমনকি যা আমরা প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষভাবে বা অনুভবের দ্বারা শিখি তাও এ সংসারে কারো না কারো প্রেরণা বা অবদান। তাহলে জাগতিক বিদ্যা শিক্ষা করতে যখন শিক্ষকের প্রয়োজন তখন ভক্তিবিদ্যা বা পরাবিদ্যার মতো গম্ভীর বিষয়কে জানার জন্য, শেখার জন্যও একজন শিক্ষকের প্রয়োজন। এই শিক্ষকই হলেন ‘গুরু’। গুরু শব্দটি ‘গুড়’ ধাতু থেকে এসেছে। যার অর্থ ‘রক্ষা করা’। যিনি সংসার মহাদাবাগ্নি থেকে রক্ষা করেন তিনিই গুরু। ‘গু’অর্থ ‘অন্ধকার’, ‘রু’ অর্থ ‘দূর করা’। যিনি অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করে দেন তিনিই গুরু। গুরু অর্থে ‘হিতকারী’। গুরু অর্থে ‘উপদেষ্টা’। কথিত আছে— “এক অক্ষর শিখায় যে, জন্মে জন্মে গুরু সে।” আবার গুরু অর্থ ভারীও হয়। অতএব এই যে, ‘গুরুতত্ত্ব’ তা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ, গূঢ়, ও রহস্যময় বিষয়ও।

আমাদের জীবনে গুরুর প্রয়োজন কতটা? গুরু বিনা কি গতি নেই? ভগবানকে মন থেকে ডাকলে, ভক্তি করলেই তো চলে, তার জন্য আবার গুরুর কি দরকার—এ প্রশ্ন আমাদের অনেকের মনেই। তাহলে সেই উত্তর স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখ থেকেই আমরা শুনি। তিনি বলেছেন – ভবসমুদ্র পাড় করতে মানব- শরীর হল এক সুদৃঢ় নৌকা। যা প্রাপ্ত হওয়া দুর্লভ। সেই দুর্লভ বস্তু সুলভ হয়ে যখন কেউ মনুষ্য যোনিতে জন্মগ্রহণ করে; গুরু-কে তার জীবন সমুদ্র পথের কাণ্ডারী নিযুক্ত করে; তখন শুধুমাত্র স্মরণ করা মাত্রই আমি অনুকুল বায়ু হয়ে তাকে লক্ষ্যপথে নিয়ে যাই। আর যে তা করে না, সে নিজের আত্মহননের পথ প্রশস্ত করে। তার অধঃপতনের জন্য সে নিজেই দায়ী হয়।’ (শ্রীমদ্ ভা.-১১/১০/১৭)।

অতএব ভগবানের কথা থেকেই পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে ভবসমুদ্র পার করতে গুরুর চরণাশ্রয় করলেই ভগবান ভক্তের উদ্ধারের জন্য নিজের হাতখানা বাড়িয়ে দেন। এ প্রসঙ্গে, শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হলেন বালক ‘ধ্রুব’ মহারাজ। তপঃকর্মের শেষ সীমায় পৌঁছালেও বালক ধ্রুব-কে দর্শন দিতে পারছিলেন না শ্রীনারায়ণ। তখন শ্রীভগবানের আদেশে নারদ মুনি ধ্রুবকে দ্বাদশ অক্ষর মন্ত্রে দীক্ষা দান করলেন। দীক্ষিত হাবর পর ধ্রুব শ্রীনারায়ণের সাক্ষাৎ দর্শনের কৃপালাভ করলেন। তাই গুরুর যে কী গুরুত্ব তা সহজেই অনুমেয়। কলিযুগ পাবনাবতার শ্রীমন্ মহাপ্রভু নিজে পরতত্ত্বের শেষ সীমা হয়েও শ্রীঈশ্বরপুরীপাদের কাছে দীক্ষা নিয়ে গুরুকরণ করে দেখিয়েছেন গুরুর প্রয়োজনীয়তা। দীক্ষা কি? জীব গোস্বামীপাদ তাঁর ‘ভক্তিসন্দর্ভ’ গ্রন্থে বলেছেন—‘যা থেকে দিব্যজ্ঞান লাভ হয় ও পাপসমূহ সম্যকরূপে নষ্ট হয় তাই দীক্ষা।’ (২৮৩ অনুঃ)। এখন এই দিব্যজ্ঞান হাটে-বাজারে বিকোবার বস্তু নয় যে গিয়ে ক্রয় করবো । বা, গ্রন্থ পড়ে জ্ঞানার্জনের দ্বারাও শুধু লাভ হওয়া সম্ভব নয়। তাহলে একমাত্র উপায়—‘শ্রীগুরুদেব’। শ্রীগুরুদেব ভিন্ন অন্য কেউ দীক্ষাদান করতে পারেন না। বা ঘুরিয়ে বললে, যিনি দীক্ষা দান করেন তিনিই শ্রীগুরুদেব। “অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জন শলাকায়। চক্ষুরুন্মীলিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ।।” অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকে উদ্ধার করে দীক্ষা নামক দিব্যজ্ঞানের অঞ্জনশলাকা দ্বারা যিনি জ্ঞানচক্ষুর উন্মীলন করেন, তিনিই শ্রীগুরুদেব, তাঁকে প্রণাম করি।

শ্রীল রূপ গোস্বামীপাদ তাঁর ‘শ্রীভক্তিরসামৃত সিন্ধু’ গ্রন্থে যে চৌষট্টি প্রকার ভজন অঙ্গের নির্দেশ করেছেন তার প্রারম্ভেই ভক্তি মন্দিরে প্রবেশের দ্বারস্বরূপ তিনটি বিশেষ অঙ্গের কথা লিখেছেন—১) গুরুপদাশ্রয়, ২) শ্রীকৃষ্ণমন্ত্রে দীক্ষা গ্রহণ করে ভাগবত ধর্ম শিক্ষা, ও ৩) বিশ্বাসের সঙ্গে শ্রীগুরুসেবা। শ্রীগুরুপদাশ্রয় বলতে দীক্ষাগ্রহণের পূর্বে কিছুকাল শ্রীগুরুদেবের কাছে বাস করে তাঁর আনুগত্যে থেকে নিষ্কপট সেবা পরিচর্যা দ্বারা গুরুদেবকে প্রসন্ন করা-কে বোঝানো হয়েছে। এর ফলে গুরু ও শিষ্য একে অপরকে অনুধাবন করতে পারেন। শিষ্য দীক্ষাগ্রহণের যোগ্যতা ও ভজনযোগ্যতা লাভ করে। আবার শিষ্যের সেবার আন্তরিকতা দেখে গুরুদেবের চিত্ত করুণার্দ্র হয়ে ওঠে। আর তার ফলে করুণা বিগলিত ও সন্তুষ্ট শ্রীগুরুদেবের কাছ থেকে পাওয়া দীক্ষামন্ত্র পরম পুরুষার্থ ও সৌভাগ্যজনক হয় শিষ্যের কাছে। এ প্রসঙ্গে ঠাকুর নরোত্তমের দৃষ্টান্ত প্রাতঃস্মরণীয় আমাদের কাছে। শ্রীল লোকনাথ গোস্বামী সংকল্প করেছিলেন যে তিনি জীবনে কোন শিষ্য গ্রহণ করবেন না। আর ঠাকুর নরোত্তম তাঁকেই মনে মনে গুরুরূপে বরণ করে নিয়েছিলেন। তাই তাঁর থেকে দীক্ষাগ্রহণ করাটাই ছিল নরোত্তম ঠাকুরের অভীষ্ট। তিনি প্রতিদিন লোকনাথ প্রভুর প্রাতঃকৃত্য করার স্থানটি সূর্যোদয়ের আগেই মার্জন করে পরিস্কার করে রাখতেন। আর তারপর “বৈষ্ণবের দেহ প্রাকৃত কভু নয়। অপ্রাকৃত দেহ ভক্তের চিদানন্দময় ।।” এই জ্ঞানে লোকনাথ প্রভুর বিষ্ঠাকেও অপ্রাকৃত বস্তু হিসেবে মেনে সেই বিষ্ঠালাগানো সম্মার্জনীটি (ঝাঁটাটি) নিজের বুকে চেপে ধরে ‘হা গুরুদেব’ বলে ক্রন্দন করতেন। এদিকে লোকনাথ গোস্বামী মনে মনে সংকুচিত হন, এই ভেবে যে— কোন ব্রজবাসী এমন সেবা করে প্রতিদিন তার জন্য ! এতে যে তার পাপ হচ্ছে !

দীর্ঘ এক বৎসর পর বহু চেষ্টা করে লোকনাথ গোস্বামী একদিন হাতে-নাতে ধরলেন নরোত্তম ঠাকুরকে, অমন হীনসেবা দানের সময়। বিস্মিত ও মুগ্ধ হলেন নরোত্তম ঠাকুরের গুরুভক্তি দেখে। সেই দিনই নিজের সংকল্প ত্যাগ করে দীক্ষা দিলেন নরোত্তম ঠাকুরকে।

“গুরুকৃপা হি কেবলম্”—গুরুকৃপাই শিষ্যকে নিতাই-গৌর-গোবিন্দের প্রতি একনিষ্ঠ প্রেমসেবায় ব্রতী করেন। শ্রীললিতা সখী মাতা ঠাকুরাণী বলেছেন— “শ্রীগুরুকৃপাই সাধনভক্তি, ভাবভক্তি ও প্রেমভক্তির মূল।” তাই গুরুসেবা দ্বারা গুরুপ্রসন্নতা অর্জন করা একান্তরূপে বাঞ্ছনীয় এবং চরম ও পরম কর্তব্য শিষ্যের কাছে। গুরুসেবা দুই প্রকার—১) পরিচর্যারূপ সেবা ও ২) প্রসঙ্গরূপ সেবা। শ্রীগুরুদেবকে জলপ্রসাদ বা ভোজ্যপ্রসাদ নিবেদন, স্নানাদির জন্য জল আহরণ, তাঁর শ্রীঅঙ্গমার্জন, বস্ত্রধৌতাদি, অথবা অসুস্থ থাকাকালীন পথ্যাদি দান, শ্রীঅঙ্গের সেবা ইত্যাদি হল পরিচর্যারূপ সেবা তাঁর। আর, ভাগবতী কথা পাঠ করে , কৃষ্ণনামগান কীৰ্ত্তন করে শ্রবণ করানো—- ইত্যাদি হল প্রসঙ্গরূপ সেবা। শ্রীপাদ মাধবেন্দ্রপুরী যখন অসুস্থ অবস্থায় ছিলেন তখন শ্রীঈশ্বরপুরী তাঁর কতই না সেবা করেছেন। শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতে পাই—“ঈশ্বরপুরী গোসাঞি করে শ্রীপাদ সেবন। স্বহস্তে করেন মল-মূত্ৰাদি মার্জন।।’ অতএব নিষ্ঠসহ পরিচর্যারূপ সেবা করেছেন। আবার “কৃষ্ণনাম, কৃষ্ণলীলা শুনায় অনুক্ষণ।” কৃষ্ণনাম, কৃষ্ণকথা শ্রবণ করিয়ে প্রসঙ্গরূপ সেবাও করেছেন। সেবায় সন্তুষ্ট গুরু শ্রীপাদ মাধবেন্দ্রপুরী আশীর্বাদ করলেন শিষ্য ঈশ্বরপুরীকে “তোমার হোক কৃষ্ণের প্রসাদ।” সেই আশীর্বাদের গুণেই প্রেমের সাগর হলেন তিনি আর পরিণামে স্বয়ং ভগবান শ্রীমন্ মহাপ্রভুকে শিষ্যরূপে পেলেন। অতএব, দীক্ষাগ্রহণান্তে শ্রীগুরুসেবার বিশেষ প্রয়োজন। সেবা দ্বারা সাধকের সকল অনর্থ নষ্ট হয়ে যায়। সর্বশ্রেষ্ঠ চিত্তশুদ্ধির উপায় ‘শ্রীগুরুদেব’। সকল অভাব পূরণের উপায় ‘শ্রীগুরুদেব’। সিদ্ধ জগন্নাথ দাস বাবার শিষ্য তথা শ্রীঅঙ্গসেবক বিহারীজী গুরুচরণ-ছাড়া-না হবার আদর্শ। জগন্নাথ দাস বাবা বলেছিলেন— “হ্যাঁ রে বিহারী ! তুই আমায় চাস, নাকি টাকা চাস? ভেবে বল। ভাবছি তোকে একগাড়ী টাকা পাইয়ে দেবার ব্যবস্থা করে যাব আমার মৃত্যুর পরে।” বিহারী হাসতে হাসতে বললেন- “বাবা। তোমার আবার টাকা কই গো ! থাকো তো লোকের দয়া করে তৈরী করে দেওয়া কুটীরে, আর ভিক্ষা করে আনা চালে ঠাকুরের প্রসাদান্ন পাও। তুমি কোথায় টাকা পাবে, বল?” সিদ্ধ বাবা বললেন, “আমায় কয়েকদিন পরই গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু নিতে আসবেন। তখন আমি বলবো তাঁকে— বিহারী তো আমার অনেক সেবা করেছে, ওকে এক গাড়ী টাকা পাইয়ে দাও। গৌরাঙ্গ প্রভু তোর টাকার ব্যবস্থা করে দেবেন।” এইবার বিহারী সঙ্গে সঙ্গে বললেন- “না, না বাবা ! টাকা আমার চাই না, আমার শুধু তোমার শ্রীচরণ চাই।” তৃপ্ত হয়ে বাবা তখন আশীর্বাদ করে বললেন, “বেশ। তোর কোনদিন কোন অভাব হবে না। তুই শুধু শ্রীনাম করে যাস, বাকী সব শ্রীনামের প্রভাবে ঠিক হয়ে যাবে।” এই ঘটনার চারদিন পরই সিদ্ধ বাবা দেহ রাখলেন। তিনি ১৪০ বৎসর ধরাধামে ছিলেন। তাঁর নিত্যলীলায় গমনের পর বিহারীই তাঁর যাবতীয় ক্রিয়া-কর্ম করলেন। সুতরাং, শ্রীগুরুচরণ প্রাপ্তিই একমাত্র লক্ষ্য হয় যথার্থ সাধকের।

“দাস বংশী কহে, ভজিলে ভজন নহে, গুরকৃপা ভজনের মূল।” শ্রীগুরুস্বরূপের চিন্তনই হল ধ্যানের মূল, পূজার মূল শ্রীগুরুচরণ পূজা, মন্ত্রের মূল শ্রীগুরুবাক্য আর ভক্তির মূল হল শ্রীগুরুভক্তি। যার প্রতি গুরুদেব তুষ্ট হন, স্বয়ং শ্রীহরিও তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন। কৃষ্ণ অপ্রসন্ন হলে গুরুদেব তাঁর ভজন দ্বারা কৃষ্ণের মন ফেরাতে পারেন সেই শিষ্যের প্রতি। কিন্তু গুরু অসন্তুষ্ট হলে, কৃষ্ণ গুরুকে প্রসন্ন করতে কোন চেষ্টা করেন না। তাই তো বলা হয়েছে, “কৃষ্ণ রুষ্ট হলে গুরু রাখিবারে পারে। গুরু রুষ্ট হলে কৃষ্ণ রাখিবারে নারে।।’
তাহলে এমন মহিমাময় গুরুদেবকে কী ভগবৎস্বরূপ জ্ঞান করে গঙ্গাজল-তুলসী দিয়ে পূজা করা উচিৎ? কারণ বলা হয়েছে— “গুরু কৃষ্ণরূপ হন শাস্ত্রের প্রমাণে । গুরুরূপে কৃপা করেন শিষ্যগণে।।” তবে তার উত্তর হল, গুরু কেবল শিষ্যের কাছে আরাধ্যস্বরূপ, সমগ্র জগৎ-এর কাছে নন। তিনি শিষ্যের কাছে প্রিয়তমাংশে ও পূজাতমাংশে কৃষ্ণের সাথে অভিন্ন কিন্তু স্বরূপাংশে ভিন্ন। অর্থাৎ শিষ্যের কাছে গুরুদেব কৃষ্ণের মতই প্রিয় ও পূজনীয়, কিন্তু ভগবানের ষড়শ্বৈর্যশালী যে স্বরূপ তা গুরুতে নেই। গুরুর ভিতর সাধক-ভক্ত ভবন প্রকাশিত হয়। তিনি নিজেকে একজন সাধক ভিন্ন অন্য কিছু ভাবেন না। তাই তাঁর শ্রীচরণে তুলসী-গঙ্গাজল নিবেদন করে কৃষ্ণজ্ঞানে পূজা করলে তিনি অসন্তুষ্ট হন। এ প্রসঙ্গে, উৎকলে ‘বড়বাবাজী’ নামে খ্যাত শ্রীরাধারমণচরণদাস বাবা অপূর্ব সিদ্ধান্ত করে গেছেন।
একবার শ্রীগুরুপূর্ণিমায় পুরীর ঝাঁজপিটা মঠে উপস্থিত ভক্তদের মধ্যে সংশয় দেখা দেয় যে, শ্রীগুরুদেব কে কী পৃথক দ্রব্য দিয়ে পূজা করা উচিৎ নাকি প্রসাদী দ্রব্যে পূজা করা সঙ্গত? কারণ শাস্ত্রে গুরু-কৃষ্ণের অভিন্নতার প্রমাণ আছে বিস্তর। তাই সর্বাগ্রে গুরুপূজা করা উচিৎ। এমনকি কোথাও বলাও নেই যে কৃষ্ণের প্রসাদী দ্রব্যে তাঁকে ভোগ লাগানো বা পূজা করা বিধেয়। তাহলে উপায়? তখন বড়বাবাজী মহাশয় বললেন— “শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর প্রদর্শিত উপাসনা প্রণালীর নাম রাগানুগা পন্থা। এই উপাসনার মূল ভিত্তিই ‘আনুগত্য’ অর্থাৎ গুরুর অনুগত হয়ে ভজন। এমন গুরুকে সাক্ষাৎ ভগবদ্‌-বুদ্ধিতে পূজা করলে উনি যতটা সুখী হন তার থেকে বেশী সুখ পান অনুগত ভাবের আরাধনায়। অর্থাৎ কৃষ্ণের প্রাসদী থালায় তাঁকে বরণ করলে। কারণ তিনি তো নিজেও সাধক। আর তাই শিষ্যের কাছে ‘সকল ছাড়িয়া আজ্ঞা বলবান’ অর্থাৎ গুরুর আজ্ঞানুসারে কর্ম করাই শিষ্যের কর্ত্তব্য । সেবার অর্থ তো সুখ দেওয়া। আমি হয়তো সাক্ষাৎ কৃষ্ণ ভেবে গুরুকে সেবা-পূজা করলাম অনেক কিন্তু তাতে তিনি সুখী হলেন না। তাহলে সেই সেবা করে আমি নিজেও সুখলাভ করতে পারবো কী? শাস্ত্রে প্রমাণ ও যুক্তি যাই থাক শিষ্যের কাছে গুরু আজ্ঞাই সর্বথা পালনীয়। তাই গুরুসেবা করে গুরুকে সুখ দিতে কৃষ্ণের মালা, প্রসাদে গুরুপূজা করাটাই বিধেয়, সমুচিত।”

শ্রীপাদ রামদাস বাবাজী মহাশয় বলেছেন যে— “শ্রীগুরু পাদপদ্মই হলেন শেষ প্রাপ্তি। নিতাই-গৌর বা অন্য যা কিছুর সেবা সকলই তাঁর (গুরুদেবের) সুখের জন্য। শ্রীগুরদেবকে সুখ দিতে হলে তিনি যা পেলে সুখ পাবেন তাই দিতে হবে। সেবা মানে নিজে সুখ পাওয়া নয়। সেব্যকে সুখ দিয়ে, তাঁরই সুখে নিজে সুখ পাওয়া। এ সুখ পাওয়া নিজের সুখ পাওয়ার চেয়ে কোটিগুণ বেশি …. সেবকের তো ওই ভজন-সাধন, সর্বদা শ্রীগুরুদেবের সুখের পানে ও মুখের পানে চেয়ে থাকা।”

শ্রীরাধারমণদেবের অশেষ কৃপাস্নাত সবিশেষ গুরুগতপ্রাণ শিষ্য শ্রীশীতলচরণ দাস বাবাজী মহাশয় সিদ্ধ মহাত্মা ত্রৈলঙ্গ স্বামীকে সাক্ষাৎকালে একবার প্রশ্ন করেছিলেন—‘ঈশ্বর দর্শন করতে শ্রীগুরুর কৃপালাভ কতটা অপরিহার্য?’ ত্রৈলঙ্গ স্বামীজী হিন্দীতে যে উত্তর দিয়েছিলেন তার বাংলা অনুবাদ করলে হয়— “জগতে শ্রীগুরু হতে আর কোন বস্তুই বড় অর্থাৎ গুরু নয়। শ্রীগুরু ব্যতীত আর সকলই লঘু। জপ-তপ-আরাধনা, পুত্র-পরিবার- সংসার—-এ সবই শ্রীগুরুচরণলাভের চেয়ে বড় নয়। সাধারণভাবে শ্রীগুরুদেব দুইভাবে পাওয়া যায়—দীক্ষাগুরু ও শিক্ষাগুরু। আবার বিশেষভাবে গুরুকে তিনভাবে দর্শনলাভ হয়—জগৎগুরু, দীক্ষাগুরু ও শিক্ষাগুরু। চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্রাদি যে শক্তির ইঙ্গিতে নিরন্তর আপন কার্য সমাধা করে চলেছে নিয়মের গণ্ডীতে থেকে—– সে শক্তিকে জগদগুরু বলা যায়।
যখন কোন শক্তি জীবের হৃদয়ে জগদ্‌গুরুকে জানবার বা বোঝার জন্য প্রেরণা জাগিয়ে জগৎগুরুর পথে এগিয়ে নিয়ে যায়, তখন সেই শক্তিকে দীক্ষাগুরুর শক্তি বলা হয়। এই বিশ্বচরাচর হচ্ছে জগদ্গুরুর মায়াজাল। ব্রহ্মাণ্ডের পরমানু থেকে ব্রহ্মা পর্যন্ত পশুপাথী, কীটপতঙ্গ, বৃক্ষলতা, গ্রহনক্ষত্র প্রভৃতি মনুষ্য ও মনুষ্যেতর জীবজগত থেকেই শিক্ষাগ্রহণ করার প্রয়োজন পরে। যার কাছ হতে সেই শিক্ষা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে পাওয়া যায়, তখন তাঁকে বা সেই শক্তিকে শিক্ষাগুরুর শক্তির প্রভাব বলা যায়। জগদ্গুরুকে জানতে শিক্ষাগুরুর প্রয়োজন অপরিহার্য।”

অতএব, ‘গুরুকৃপা হি মূলম্’ গুরুকৃপাই মূল, গুরুকৃপাই একমাত্র সহায়, একমাত্র অবলম্বন । শ্রীগুরুদেব নির্দেশিত পথে নববিধা ভক্তি (শ্রবণ, কীৰ্ত্তন, স্মরণাদি …) যাজন করে আমরা নিতাই-গৌর-গোবিন্দের প্রেমসেবা করার যোগ্যতা অর্জন করবো। ভজনরাজ্যে প্রবেশ করিয়ে দেন ভক্ত-কে তাঁর গুরুদেব আপন ভজনানুভূতির শিক্ষা ও সকরুণ কৃপা দ্বারা। গুরুকৃপাতেই ভজনপথ হয় সুসংহত, শাস্ত্রানুযায়ী সঠিক ও প্রেমপূর্ণ।

কলিযুগে আমাদের জগদ্গুরু হলেন পতিত উদ্ধারণ শ্রীমন্ নিত্যানন্দ প্রভু। তাইতো শ্রীরামদাস বাবাজী মহাশয় বলেছেন , “যত দেখ শ্রীগুরুরূপ, নিত্যানন্দ প্রকাশ-স্বরূপ।… দেখে গুরু স্বরূপ নানা, যেন ভিনু ভিনু মনে করো – না ! অনুকূলে বা প্রতিকূলে নিতাই অনন্ত গুরুরূপে।…নিতাই যেখানে যেমন সেখানে তেমন, যে যেমন তার কাছে তেমন।…যেদিন শ্রীগুরুরূপে হাত ধরেছে, সেদিন সাধন শেষ হয়েছে। গুরুরূপে দেছে পদছায়া, শেষ হয়েছে সব চাওয়া পাওয়া । …. কাজ কি অন্য উপাসনা, আমার কাজ তাঁর পদে বিকানা।”

তাই একান্ত নিবেদন, শ্রীগুরুতত্ত্বের’র মতো গূঢ় গম্ভীর গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব নিয়ে লেখার চেষ্টা আমার মত ভজনহীনা, অধমার ধৃষ্টতা—বই আর কিছু নয়। বামন হয়ে চাঁদে হাত বাড়ানোর মতো! “বিধি কী এ সাধ পূরাবে আমার।” সাধ্যের বাইরে গিয়ে সাধপূরণ করার আস্ফালন শুধু। সকল গুরুজন তথা গুণীজন, সাধু-গুরু-বৈষ্ণবের কাছে আমি ক্ষমা প্রার্থিনী, এ হেন ধৃষ্টতার জন্য। আর সেই সাথে সকলের শ্রীচরণে অনন্তকোটি প্রণাম নিবেদন করে আশীর্বাদ ভিক্ষা করি যেন গুরু-গোবিন্দের চরণারবিন্দে সেবা করাই জন্মজন্মান্তরের একমাত্র অভীষ্ট হয় আমার।

জয় শ্রীগুরুদেব। জয় শ্রীশ্রীনিতাই। জয় শ্রীশ্রীগৌরসুন্দর ।

Share This
Categories
উপন্যাস

দামাল মেয়ে কুহেলি (ধারাবাহিক উপন্যাস, সপ্তম পর্ব) : দিলীপ রায় (৯৪৩৩৪৬২৮৫৪)।

কানাই কাকা কিরণের অভব্যতার বিন্দুবিসর্গ টেরও পেলো না । অন্যদিকে কুহেলি উপযাজক হয়ে কাকাকে কিচ্ছু জানালো না । ইচ্ছা করেই জানালো না, কেননা কথা প্রসঙ্গে কিরণের বেয়াদপীর কথাগুলি বা কার্যকলাপগুলি কাকাকে সবিস্তারে জানাতে হবে । সেখানে শ্লীলতাহানির প্রসঙ্গও উঠবে । সেটা নিয়ে কাকা রেগে গিয়ে গাঁয়ে ফিরে হুলস্থুল বাধাতে পারে । তাতে আখেরে কুহেলির বদনাম রটবে ছাড়া ভাল কিছু ঘটবে না । সুতরাং কাকাকে সমস্ত ঘটনা না বলার সিদ্ধান্তে অটল রইলো কুহেলি । অথচ কিরণের অভব্যতার একটা যোগ্য শাস্তি হওয়া উচিত ছিল । নতুবা ভবিষ্যতে আবার চড়াও হতে পারে । কাকাকে না জানালেও কুহেলি মনে মনে ভেবে রাখলো — সময় সুযোগ মতো সে নিজে কিরণকে জব্দ করবে । যতক্ষণ পর্যন্ত কিরণকে উচিৎ শিক্ষা দিতে না পারছে, ততক্ষণ কুহেলির মানসিক শান্তি নেই । তাই সময় সুযোগের অপেক্ষায় রইলো ।
বড় রাস্তা থেকে কাঞ্চন নগর গাঁয়ে ঢোকার মুখে বড়াল কাকীমার চায়ের দোকান । কুহেলি লক্ষ করলো, কিরণ সেখানে বসে মাটির ভাঁড়ে চা খাচ্ছে । চায়ের ভাঁড়ে চুমুক দিয়ে ভয়ার্ত চোখে ঘুরে ফিরে কুহেলির দিকে কিরণের নজর । অন্যদিকে বড় বড় চোখ করে কুহেলি এমন একটা ইঙ্গিত দিলো যার মর্ম – সবুর করো, দুই একদিনের মধ্যে বাদরামির যোগ্য জবাব তুমি পাবে ।
কানাই কাকা কুহেলিকে বড্ড ভালবাসে । কিন্তু কাকীমার ভয়ে কুহেলির মঙ্গলের জন্য কিচ্ছু করতে পারে না । এমনকি কুহেলিকে ভাল-মন্দ খাবার কিনে দিতে পারে না । পাছে কাকীমা জানতে পারলে তুমুল ঝগড়াঝাটির হুলস্থুল বাধিয়ে কাকাকে অশান্তির বেড়াজালে নাকানি-চোবানি খাওয়াবে !
পাকুড় গাছ তলায় দেখা মাত্র হাতে “বাপুজি কেক্‌” ধরিয়ে দিয়ে কানাই কাকা বলল, “খেয়ে নে মা । অনেকক্ষণ আগে বাড়ি থেকে বের হয়েছিস, এখন নিশ্চয় খিদেতে পেট জ্বলছে । কেক্‌টা খেলে অনেকটা শান্তি !” তারপর কাঞ্চন নগরে ঢোকার আগে সাইকেল থামিয়ে কাকা জিজ্ঞাসা করলো, “তোর পরীক্ষা শুরু হচ্ছে কবে থেকে ?”
আগামী বুধবার থেকে, কাকা ।
“সুতরাং তোর পরীক্ষা এসে গেলো । পরীক্ষা ভাল হওয়া চাই । তোর উপর আমার অনেক ভরসা । আমার বিশ্বাস, তুই ভাল রেজাল্ট করবি ।“ কাকা ডান হাতটা কুহেলির মাথায় রেখে আবার বলল, “আমার আশীর্বাদ রইলো ।”
সাইকেল দাঁড় করিয়ে কুহেলি কাকার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো ।
বাড়ি ফিরে দেখে, গোটা বাড়িটা অন্ধকার । অন্ধকার বাড়ির আনাচে কানাচের গাছের ডালে জোনাকীরা মৃদুমন্দ আলো ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে । উঠোনে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে, মৃদুমন্দ আলোর ছটা ছাড়ানো তারাগুলিতে আকশটা ভর্তি । বাড়িতে ঢোকার মুখে দুটো কুকুর এতক্ষণ শুয়ে ছিল । কুহেলিকে দেখা মাত্র লেজ নাড়তে নাড়তে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো । যদি কুহেলি দিদিমণির কাছ থেকে খাবার পাওয়া যায় । কুকুরের চাহনীতেই বলে দিচ্ছে, তারা কুহেলির আগমনের অপক্ষায় ছিল । কুহেলির বাড়ি ঢোকার অর্থ হচ্ছে কুকুর দুটি পেট ভরে খেতে পারবে । কেননা প্রতিদিন বিশেষ করে রাত্রিতে পথ-কুকুরদের কুহেলি খাওয়ায় । তবে ইদানীং খাওয়াবার পরিমাণ কমে গেছে । বাবা থাকাকালীন, কুহেলি বাজার থেকে আলাদাভাবে কুকুরদের খাওয়াবার জন্য খাবার কিনে আনতো । কুকুরেরাও পরম তৃপ্তিতে খাবারগুলি খেতো । সেটা এখন কুহেলির কাছে ইতিহাস ! তবে কুকুরেরাও সম্ভবত জেনে গেছে তার আদরের দিদিমণির খাওয়ানোর ক্ষমতা কমে গেছে । তারা আর কুহেলিকে বেশী উত্ত্যক্ত করে না । নীরবে ঘরের সামনে এসে লেজ নাড়ে । কুহেলি তার সামর্থ্য মতো খাবার দেয় । তাতেই কুকুরগুলি খুশী ।
লাইট জ্বালিয়ে বাথ রুমে ঢুকলো । স্নান সারলো । কিরণের জাপটে ধরাটা কুহেলিকে প্রচণ্ড আঘাত দিয়েছে । মানসিক কষ্টে বিব্রত । রাস্তার আজকের ঘটনায় কুহেলিকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো সে একজন অবলা নারী । নারীরা আজও মধ্যরাত্রে রাস্তা ঘাটে অসুরক্ষিত । যে কোনো মুহূর্তে তাদের বিপদ অনিবার্য । তাই নিজেকে আরও সাবধানতা অবলম্বন করার কথা ভাবছে । স্নান সেরে বসার উপায় নেই । ছুটলো রান্না ঘরে । ভাত বসালো সেই সঙ্গে ডাল ও ভেণ্ডি ভাজা । গ্যাসে রান্না । একজনের রান্না । তাই বেশী সময় নিলো না । খাওয়া দাওয়ার পর ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত্রি সাড়ে দশটা ।
পড়ার ঘরে ঢুকলো । পড়ায় তার একেবারেই মন বসছে না । বারংবার কিরণের বাদরামির ঘটনা চোখের সামনে ভেসে উঠছে । কিছুতেই মন থেকে ঝেড়ে ফেলে পড়ায় মন বসাতে পারছে না । কিরণকে নিয়ে যতো ভাবছে ততো তার চোখে ক্রোধের আগুন । কেননা কিরণকে তার অভব্যতার যোগ্য শাস্তি দিতে না পারলে কুহেলির মন শান্ত হচ্ছে না । পড়ার ঘরের লাইট নিভিয়ে শোওয়ার ঘরে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো ।
এমন সময় দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ ! কুহেলি হকচকিয়ে গেলো । এত রাত্রিতে কে এলো ? তবে কী কাকা খোঁজ নিতে তার ঘরে এত রাত্রিতে কড়া নাড়ছে । ধন্দে পড়ে গেলো কুহেলি । তাই বিছানায় শুয়েই তার চিৎকার, “কে ওখানে, কে ডাকছেন ?”
কোনো সাড়া শব্দ নেই । আবার কড়া নাড়লো ।
কুহেলি এবার স্পষ্ট বুঝতে পারলো, কেউ দুরভিসন্ধিমূলকভাবে তার দরজায় অনবরত কড়া নাড়ছে । কাকা নিশ্চয় নয় ! কাকা থাকলে তার ডাকে সাড়া দিতো । নিজেকে শক্ত করলো কুহেলি । তারপর কাকাকে ফোন করলো । কিন্তু ঐদিক থেকে কাকা ফোন তুলছে না । এদিকে আবার জোরে জোরে দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ ! তারপর বাইরে থেকে চিৎকার করে কুহেলিকে বলল, “দরজা খোল্‌ । নতুবা তোর দিন শেষ !”
গলার স্বর শুনে কুহেলির দৃঢ় বিশ্বাস, গলার আওয়াজ কিরণের । কুহেলি বুঝতে পারলো, কিরণ অন্য কোনো অভিসন্ধি নিয়ে রাত্রিতে এসেছে । সেই সময় কুহেলির সাথে দুর্ব্যবহার করে তার আশ মেটেনি । পুনরায় এসেছে যেনতেনপ্রকারেন কুহেলিকে অপদস্ত করতে । আর ঝুঁকি না নিয়ে কাকাকে আবার ফোন ।
“হ্যালো !” কাকা ফোন তুলেই হ্যালো সম্বোধন করে পুনরায় উত্তর পাওয়ার আশায় রইলো ।
“হ্যালো কাকা ! দরজায় অচেনা কেউ এসে কড়া নাড়ছে !” কুহেলি কাকাকে বলল ।
কাকা শোনামাত্র বলল, “আমি এক্ষুণি আসছি, মা ।“
কানাই কাকার হাঁটার শব্দ পেয়ে কিরণ সেখান থেকে চম্পট !
কাকা এসে কাউকে দেখতে না পেয়ে কুহেলিকে বলল, “কেউ এখানে নেই । তুই বরং খেয়ে শুয়ে পড় মা ।“
কাকা চলে যাওয়ার পর কুহেলি আবার বিছানায় গা এলিয়ে দিলো । কুহেলির বদ্ধ ধারণা, কিরণ দরজায় কড়া নাড়ছিল । রাগে সে জ্বলছিল । কিন্তু তার পক্ষে সেই সময় কিচ্ছু করার নেই । ছেলে হলে ঘর থেকে বেরিয়ে কিরণের কলার ধরে অন্তত শাসানো যেতো । অথচ সেটাও তার পক্ষে সম্ভব হলো না । তাই চুপচাপ খানিকক্ষণ বিছানায় শুয়ে থাকার পর হঠাৎ কুহেলির মনে পড়লো অঙ্কের কথা । ঝটাপট বিছানা থেকে উঠে লাইট জ্বালিয়ে অঙ্ক কষতে শুরু করলো । তারপর অনেক সময় বাদে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত্রি ১টা । তখন কুহেলির ঘুমও পাচ্ছে । লাইট নিভিয়ে ঘুমিয়ে গেলো ।
সকালে উঠতে দেরী । সকালে উঠেই খাবারের চিন্তা ! ঘরে জমানো পয়সা প্রায় শেষ । কুহেলি কোনোরকমে পরীক্ষা পর্যন্ত জমানো পয়সায় চালাতে চায় । তাই ডাল ও ডিমের ওমলেট্‌ হচ্ছে তার দুপুরের খাবার । রান্নাটুকু বাদ দিয়ে বাকী সময় তার পড়াশুনা । পড়াশুনায় তার ঢিলেমি নেই । পড়ায় ভীষণ মনোযোগী । তার মাথায় সর্বদা ঘুরপাক খাচ্ছে নিজের পায়ে দাঁড়াবার কথা । প্রথমে লক্ষ্য গ্রাজুয়েট । তারপর সর্বভারতীয় পরীক্ষায় বসা । গ্রাজুয়েট ডিগ্রি থাকলে দেশের সমস্ত পরীক্ষায় বসার ছাড়পত্র মিলবে । তাই তার আপাতত স্নাতক ডিগ্রি টার্গেট ।
দেখতে দেখতে বুধবার আগত । নিজের স্কুলেই পরীক্ষার সিট্‌ । দুপুর বারোটা থেকে পরীক্ষা শুরু । সকালবেলায় চাষের জমিতে যাওয়ার আগে কানাই কাকা কুহেলির সঙ্গে দেখা এবং আশীর্বাদ করে গেছে । সকালবেলায় আগেভাগে সেদ্ধ-ভাত নামিয়ে রেখেছে । যাতে যাওয়ার সময় কোনোরকম দেরী না হয় । ৯টার মধ্যে স্নান শেষ । খাওয়া সেরে ঠিক সকাল ১০টায় বাড়ি থেকে পরীক্ষার উদ্দেশে রওনা দিলো । বের হবার আগে পরীক্ষায় বসার এ্যাডমিট কার্ড ও আনুসঙ্গিক জিনিসপত্র যেমন কলম, ইত্যাদি ঝালিয়ে নিলো । সব ঠিক মতো বুঝে নিয়ে বাড়ি থেকে পরীক্ষার উদ্দেশে রওনা দিলো ।
পরীক্ষা ভাল দিচ্ছে কুহেলি ।
শেষদিনে অঙ্ক পরীক্ষা । বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় ঠাকুরকে প্রণাম করলো কুহেলি । ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা জানালো, অঙ্ক পরীক্ষা যেনো ভাল হয় । পরীক্ষার হলে বসে অঙ্কের প্রশ্নপত্র দেখে কুহেলি অবাক ! বরং বলা ভাল খুব খুশী । প্রশ্নের অঙ্কগুলি খুব সহজ । তাই নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই তার অঙ্ক প্রশ্নের উত্তর শেষ । বাকীটা সময় সিটে বসে অঙ্কগুলি পুনরায় ঝালাই করে নিলো, কোথাও ভুল হয়েছে কিনা ? ভাল করে দেখার পর কুহেলি নিশ্চিত, অঙ্কে ১০০এর মধ্যে ১০০ পাচ্ছে । সুতরাং অঙ্ক পরীক্ষা দিয়ে কুহেলি খুব খুশী ।
পরীক্ষা শেষ । কুহেলির মাথা থেকে পরীক্ষার টেনশন আউট্‌ । এখন সে ফ্রী । এখন তার মানসিক চাপমুক্ত জীবন !
রান্না করতে গিয়ে মাথায় হাত ! এক ফোঁটা সরষের তৈল নেই । তা ছাড়া চাল, ডাল, কাঁচা আনাচ-পাতি সব কিছুই বাড়ন্ত । অথচ ভাণ্ডারে একটা পয়সা নেই । চিন্তায় কুহেলি বেসামাল । এখন কী করবে ? মাঠের জমি শেষ । বাবা সেগুলি বিক্রি করে নতুন সংসার পেতেছে । সুতরাং চাষের জমি থেকে আয় আসার পথ বন্ধ । কাকীমার উপদ্রবে ভাইঝির প্রয়োজনে কানাই কাকা কাজে লাগতে পারছে না । সেটা কাকার চালচলনে প্রস্ফুটিত । পয়সা উপায়ের ব্যবস্থা কীহবে, কুহেলির মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না । এতদিন ইচ্ছা করে কুহেলি শীতলের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখেনি । তার ঘন ঘন ফোনে পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হতে পারে, এইসব কথা ভেবে শীতলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেনি । পয়সা উপার্জনের ব্যাপারে কুহেলি কিছুতেই শীতলের সঙ্গে পরামর্শ করতে নারাজ । শীতল শুনলে কুহেলির উপার্জনের ভাবনার জলাঞ্জলি ঘটবে । শীতল কিছুতেই পয়সা উপার্জনের জন্য কুহেলিকে কাজ করতে দেবে না । তার চেয়ে তাকে না জানানোই ভাল । কুহেলিকে একা সিদ্ধান্ত নিতে হবে । শলা-পরামর্শ করার কেউ নেই । কানাই কাকাও কুহেলির উপায়ের পথ খোঁজার সঙ্গে একমত হবে না । কানাই কাকা কিছুতেই কুহেলিকে এই অল্প বয়সে উপার্জনের দিকে ঠেলে দিতে চাইবে না । কাকা যদিও আগে বলে রেখেছে, পরীক্ষার পর মামা বাড়িতে গিয়ে থাকতে ।
মামা বাড়িতে থাকতে কুহেলি ঘোর বিরোধী । সে এখন যথেষ্ট বড় । বাঁচার জন্য একটা কিছু করে খাওয়ার ক্ষেত্রে কুহেলি যথেষ্ট স্বাবলম্বী । সুতরাং এইসব ছোটখাট সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কুহেলি একাই একশ ! পান্তা মাসিকে নিজের চোখে দেখেছে কায়িক পরিশ্রম করে বাঁচতে । পান্তা মাসিও একজন মহিলা । কুহেলি ভাবলো, সে শারীরিকভাবে শক্ত । যে কোনো কাজ করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট দক্ষ । যদিও প্রয়োজনীয় কাজ করার ক্ষেত্রে তার অনীহা নৈব নৈব চ । বাঁচার ক্ষেত্রে যে কোনো ছোটখাট কাজও সম্মানের । অনেক ভেবে দেখলো, কাঞ্চন নগরে থাকলে পরের বাড়ি থালা-বাসন মেজে উপার্জন করা ছাড়া অন্য কোনো সম্মানজনক উপায়ের পথ খোলা নেই । তার মাথায় কয়েকটা দোকান খোলার কথা ঘুরপাক খাচ্ছে । যেমন চায়ের দোকান, ফুচকার দোকান, জামা-কাপড় আইরণ করার দোকান, টেলারিং দোকান, রুটি তরকারির দোকান, ইত্যাদি । পকেটে পূঁজি নেই । ব্যবসা খুলতে পুঁজি লাগে । সুতরাং স্বল্প পুঁজিতে চায়ের দোকান খোলা যেতে পারে । ফুচকা বানাতে অল্প পুঁজি লাগে । আইরণের দোকানে নামমাত্র পুঁজি । এইসব ভাবতে ভাবতে সকালবেলাটা কেটে গেলো ।
বাজারে ছুটলো । পাঁচশ গ্রাম চাল, দুটো কাঁচকলা, অল্প পরিমাণে আলু, পিঁয়াজ, আদা, রসুন, একটা বেগুন, কয়েকটা পটল, ইত্যাদি সবজি কিনে বাড়ির দিকে যাত্রা শুরু । বাড়িতে এসে দেখলো, তনামিকা উঠোনের পাশে কাঠাল গাছের নীচে দাঁড়িয়ে । তনামিকা পাশের গ্রামে থাকে । ওরা একসঙ্গে পড়ে । ওর বাবা স্কুল শিক্ষক । গাঁয়ে ওদের আর্থিক অবস্থা, স্বচ্ছল । তনামিকা কুহেলির ভাল বন্ধু । একসঙ্গে পড়ার সুবাদে দুইজনের সম্পর্ক খুব কাছের । তাই তনামিকাকে দেখা মাত্র কুহেলি এক গাল হাসি দিয়ে বলল, “কতক্ষণ ?”
“কিছুক্ষণ ! তুই অযথা টেনশন করিস না । তোর সঙ্গে দরকারি কথা আছে । সেটা বলতেই তড়িঘড়ি আসা ।
এবার তোর দরকারি কথাটা শোনা যাক ।
তুই একটা কাজের খোঁজ নিতে বলেছিলি ?
পেয়েছিস কী ?
পেয়েছি, তবে পরের মাস থেকে কাজে যোগ দিতে বলেছে ।
কাজটা কী ? সেটা আগে জানা দরকার ।
একটা কাপড়ের দোকানে ।
দোকানটি কোথায় ?
কাপড়ের দোকানটি সালারে । সকালে ৯টার সময় দোকানে পৌঁছাতে হবে, আর ছুটি সন্ধ্যা ৭টায় । সারাদিনের কাজ ।
মাসিক বেতন কতো ?
মাসিক বেতন ৮হাজার টাকা ।
এবার কুহেলি থামলো । তারপর তনামিকার দিকে তাকিয়ে বলল, “সারাদিন কাজ করলে আমি পড়বো কখন ?”
বাড়ি ফিরে রাত্রিতে পড়বি ।
তোর কী মাথা খারাপ ! কাজটা জোগাড় করেছিস, এইজন্য আমি তোর কাছে কৃতজ্ঞ ! কিন্তু তুই তো জানিস, এরপর আমাকে কলেজে ভর্তি হতে হবে । সারাদিন দোকানে বসে থাকলে কলেজ কখন করবো, আর পড়বো কখন ? আর তা ছাড়া, সন্ধ্যা ৭টার পর দোকান থেকে ছাড়া পেলে আমার বাড়ি ফিরতে অনেক রাত্রি হবে । সালার থেকে বাসে ভরতপুর । তারপর সেখান থেকে সাইকেলে কাঞ্চন নগর । রাত্রিতে রাস্তায় অনেক রকমের উপদ্রব । বিশেষ করে একদল কুমতলবি ছোকরার দলের উৎপাত । তখন আমার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ?
তনামিকার কথা বন্ধ হয়ে গেলো । তখন কুহেলিকে বলতে বাধ্য হলো, “তুই বরং অন্য কোথাও কাজের চেষ্টা কর । সেটাই বরং ভাল ।“
বেজার মুখে তনামিকা চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত !
তনামিকার উঠে যাওয়া দেখে কুহেলি বলল, “উঠলে হবে না । এক কাপ চা খেয়ে যেতে হবে । চা বানাতে আমার সময় লাগবে না ।“
মাটির ভাঁড়ে চায়ে চুমুক দিয়ে তনামিকা হেসে হেসে বলল, “একটা পরামর্শ দেবো ?”
অবশ্যই !
তুই বরং চায়ের দোকান খোল্‌ । তোর হাতের চা খুব সুন্দর । তারপর ডান হাতের মাটির ভাঁড় তুলে ধরে বলল, এই রকম সুস্বাদু চা বানালে তোর চায়ের দোকান খুব ভাল চলবে ।“
এটা ভাল প্রস্তাব । চায়ের দোকান খোলা নিয়েও ভাবছি । তবে সিদ্ধান্ত নিইনি ।
তারপর তনামিকা তার বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিলো ।
দুপুরের রান্না শেষে স্নান সেরে খেয়ে নিলো কুহেলি ।
———–০———–
( চলবে )

Share This
Categories
প্রবন্ধ

কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪-তম জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি : দিলীপ রায় (৯৪৩৩৪৬২৮৫৪)।

আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ । তিনি বাংলা ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ বর্ধমান জেলার (বর্তমানে পশ্চিম বর্ধ্মান জেলা) আসানসোলের কাছে চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর ডাক নাম “দুখু মিয়া” । তাঁর জীবনকে আমরা চারটি ভাগে ভাগ করতে পারিঃ- প্রাথমিক জীবন ১৮৯৯ — ১৯১৭, সৈনিক জীবন ১৯১৭ – ১৯২০, সাহিত্য জীবন ১৯২০ – ১৯৪২ ও অসুস্থতা জীবন ১৯৪২ – ১৯৭৬ ।
নজরুল এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা ছিল ধর্মীয় । স্থানীয় এক মসজিদে সম্মানিত মুয়াজ্জিন (নমাজের সময় হলে অংশ নেওয়ার জন্য আজান দেন) হিসেবেও কাজ করেছিলেন । কৈশোরে বিভিন্ন থিয়েটার দলের সাথে কাজ করতে গিয়ে তিনি কবিতা, নাটক এবং সাহিত্য সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান লাভ করেন । ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজ করার পর তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসাবে বেছে নেন । সেই সময় তিনি কলকাতাতেই থাকতেন । তিনি ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হন । জেলে বন্দী অবস্থায় লেখেন “রাজবন্দীর জবানবন্দী” । নজরুল প্রায় ৩০০০গান রচনা করেন । অধিকাংশ গানে সুরারোপ করেছেন তিনি নিজে, সেগুলি নজরুল গীতি নামে পরিচিত ।
কবি নজরুল ইসলাম ছিলেন বাঙালি কবি এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশের জাতীয় কবি । তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ ও দার্শনিক যিনি বাংলা কাব্যে অগ্রগামী ভূমিকা রেখে গেছেন । তিনি বাংলা সাহিত্যে, সমাজ ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব । ভারত ও বাংলাদেশ — দুই দেশে তাঁর কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত । তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকে বিদ্রোহী কবি বলা হতো । তাঁর কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের উপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের ও দাসত্বের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ । বিশেষভাবে উল্লেখ থাকে যে, বিংশ শতাব্দীর বাংলা মননে কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব ছিল অপরিসীম । কাজী নজরুল ইসলাম প্রেম, সাম্য, আর বিদ্রোহের বাণী উচ্চারণ করেছেন আজীবন । যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনি জীবনে ও কাজে বিদ্রোহী কবি । তিনি প্রকাশ করেন বিদ্রোহী এবং শেকল ভাঙ্গার গানের মতো কবিতা । “অগ্নিবীণা” হাতে তাঁর প্রবেশ, “ধূমকেতুর” মতো তাঁর প্রকাশ । বাংলা কবিতায় নজরুলের আবির্ভাব একেবারেই উল্কার মতো । কাজী নজরুল ইসলামের গান ও কবিতা জীবন সংগ্রাম ও স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রেরণা জুটিয়েছে । বাংলা কাব্যে একটি নতুন ধারার জন্ম দিয়েছিলেন । সেটা হচ্ছে গজল । শ্যামাসঙ্গীত ও ভক্তিগীতিও রচনা করেন । সংগীত বিশিষ্টজনদের মতে রবীন্দ্রনাথ – পরবর্তি নজরুলের গান অনেকটাই ভিন্ন ধরনের নির্মাণ । অধিকাংশ গান সুর প্রধান । বৈচিত্রপূর্ণ সুরের লহরী কাব্যকথাকে তরঙ্গায়িত করে এগিয়ে নিয়ে যায় । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কাজী নজরুল ইসলামকে বর্ণনা করেছিলেন — “ছন্দ ও সরস্বতির বরপুত্র” হিসাবে ।
যদিও উল্লেখিত তবুও বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা । তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে বাংলা সঙ্গীত জগতকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন । তার কবিতা, গান ও সাহিত্য কর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল । তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক । রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা নজরুল চেয়েছিলেন । কিন্তু তিনি মনে করতেন এর পথে প্রধান বাধা সাম্প্রদায়িক সংঘাত । সেইজন্য তিনি “দুর্গম গিরি কান্তার মরু” গানে বলেছিলেন —
“হিন্দু না ওরা মুসলমান ওই জিজ্ঞাসে কোন্‌ জন ?
কাণ্ডারি বলো ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মার ।“
তাঁর লেখনি জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে । তাঁর কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে । বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস ।
দাসত্বের শৃঙ্খলে বদ্ধ জাতিকে শোষণ ও উৎপীড়ন থেকে মুক্ত হবার ডাক দিয়েছিলেন । তাই তাঁর বিখ্যাত কবিতা “বল বীর / বল উন্নত মম শীর” । অনেকেই বলেন “বিদ্রোহী” কবিতা তাঁকে অমর করে রেখেছে ।
১৯৭২ সালের ২৪শে মে ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন । রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তাঁর বসবাসের ব্যবস্থা করেন । কবির বাকী জীবন বাংলাদেশেই কাটে ।
পরবর্তীতে কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রে “জাতীয় কবি”র মর্যাদা দেওয়া হয় । তাঁর রচিত “চল চল চল ঊর্ধ্বগগনে বাজে মাদল” বাংলাদেশের রণসংঙ্গীত হিসাবে গৃহীত ।
১৯৭৬ সালের ২৯শে আগষ্ট ঢাকার পিজি হাসপাতালে কবির জীবনাবসান ঘটে । কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয় । এখানেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন ।
পরিশেষে এটাই বলার, ৭৭ বছর তিনি বেঁচেছিলেন এবং এই ৭৭ বছর ছিল তাঁর সৃষ্টি ও সৃজনশীলতার এক বিশাল ইতিহাস । কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মদিনে তাঁকে জানাই শতকোটি প্রণাম । (তথ্যসূত্রঃ সংগৃহীত)
———–০———

Share This
Categories
কবিতা

পারঘাটা ::: রাণু সরকার।।।

খেলতে যাবি? চলে আয়-
মাটিতে ছক কেটে চাড়া ভাঙা খোলার
কুটরো ফেলে এক পায়ে ভর দিয়ে খেলবো,
আয় না-চলে আয়–
কেউ বকবেনা তোকে।

তুই কে? মনে পড়ছে না তো-
ভুলে গেছি সব, দৃষ্টি ক্ষীণ শ্রবণশক্তিহীন,
ক্ষণের জন্য পড়ে মনে।
ভুলে যাবো এখন না এলে-

পাকা কেশ পড়েছে ঝরে দৃষ্টিও ক্ষীণ,
হাতে লাঠি ভালো করে ধরে হাঁটতে পারিস না,
পেটে ক্ষিদে থাকে সবসময়-
আধপেটা খেতে দেয় সেও ভাঙা থালায়।

ঘুমোবার জায়গাতে ইঁদুর খেলে লুকোচুরি
ঘুম ভেঙে যায় তাই না বল?
ভোরে চা খেতে ভালোবাসতি সেটাও এখন জোটে না-
সেই তো চলে এলো প্রথম বেলা সুরু,
শাসন আর শাসন এটা করো না ওটা করো না
এ– বাবা এটা ভেঙে ফেললে বলছি না সাবধানে চলবে-

আমার সাথে আয় শান্তি পাবি-

ওই যে– নদী, দেখেছিস না তো-
আমার হাত ধর-
ওপাড়ে যাবো নৌকো করে
তোর আমার মতো কত– সাথি,
খেলবো আয়-
কারোর গলগ্রহ হতে হবে না, কেউ বোকবেনা পড়তে বসা নেই, দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার নেই মানা-
ভয় পাচ্ছিস?
এখন না আসলে পরে পারবি তো এই মঞ্চে
অভিনয় করতে?
বড্ড কঠিন কিন্তু- ভেবে দেখ-

লাঠি নিয়েই দাঁড়াতে পারিস না কী করে অভিনয় করবি?
আয়- খেলবো চাড়া ভাঙা খোলার কুটরো দিয়ে আয় না চলে- বলছি তো কেউ বোকবেনা কেউ||

Share This
Categories
কবিতা

বাদলের প্রত্যাশা ::: রাণু সরকার।।।

আমার হৃদয়ে ফাগুনের বসন্ত জাগে না-
কেনো বলতো? আমি যে ক্ষুধাতুরা সবসময়
থাকি কাতর।
তোমার জাগতে পারে, অট্টালিকায় কর বাস
আহারের জন্য করতে হয় না দুশ্চিন্তা।

আমি আহারের সন্ধানে চলি কষ্টের তাপ
অঙ্গে লেপন করে।
প্রখর রোদের তাপে থাকি তৃষ্ণার্ত।

তখন কোথায় আমার বসন্তের কৃষ্ণচূড়া,
আম্র মুকুলের গন্ধ!
আমি দেখি না তাদের,আমার কাছেই থাকে
দেখার ফুরসত কোথায়,
আমায় দেখে কৃষ্ণচূড়া,পাশ দিয়ে চলে যায় গন্ধ ছড়িয়ে আম্র মুকুল-
আমার গায়ে ঘামের গন্ধ পায় তখন পাসকাটিয়ে
চলে যায় আমের মুকুল।

রোদের প্রখর তাপে
চাষের জমির বুক বিদারণ করে-
করছে আর্তনাদ-
সেও আমার মতো তৃষ্ণার্ত,
কবে যে আসবে মেঘের ভেলায় চেপে বাদল!

গাছেরা স্বপ্ন দেখায় মগ্ন, কত বাসনা তাদের-
প্রতিটি শাখায় আত্মগোপন করে আছে
অর্ধবিকশিত ফুল।

রাতে চলে বাতাসের সাথে কথোপকথন,
নবযৌবনা কচি পাতারা বিহ্বল বাদলের প্রত্যাশায়।
আমার বসন্ত ক্ষুধাতুর, মৌনতা অবলম্বন করেছে,
তোমার বসন্ত থাক প্রেম-প্রীতি নিয়ে!

Share This
Categories
কবিতা

বাক্যালাপ ::: রাণু সরকার।।।

মৃৎশিল্পী মাটি প্রমথিত কোরে
নানা রকমের পুতুল দেবদেবীর মূর্তি
আরো কত কী তৈরি করে।

একদিন মাটি সহ্যশক্তি হারিয়ে ফেলে,
তীক্ষ্ণ আর্তনাদ করে বলছে-
তুমি আমাকে প্রমথিত করছো শিল্পী-
তোমার কী একটুও কষ্ট হয় না হৃদয়ে?
মনেই করতে পারো না আমারও ব্যথা আছে-
নীরবে কষ্ট সহ্য করি কোন আওয়াজ করিনা।
তোমাকে যদি এভাবে কেউ প্রমথিত করে
তোমার কেমন লাগবে?

আমারও দিন আসবে গো শিল্পী সেই দিনটির অপেক্ষায় তাই নির্বাক থাকি।
তখন আমি থাকবো ওপরে তুমি থাকবে নিচে।

গভীর রাতে বাক্যালাপ মাটি ও মৃৎশিল্পীর
দুশ্চিন্তায় নিশ্চল থাকতে পারছে না শিল্পী,
এই কথা শুনে আহার নিদ্রা বন্ধ, আতঙ্কে
বিজড়িত,
কাজে বসে না তার মন।

ঠিকই বলেছে মাটি,
কী করে মাটি নরম করে মূর্তি গড়বো?
তাহলে কী আর কোনদিন মূর্তি গড়া হবে না-
কিন্তু এটাই যে আমার জীবনধারণের একমাত্র পেশা।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

জমজমাট জামাই ষষ্ঠী ::: রাধাবিনোদিনী বিন্তি বণিক।।।

আজ জামাই ষষ্ঠী। জামাই ষষ্ঠী কিন্তু বাঙালিদের কাছে বেশ মিষ্টি মধুর একটি পার্বণ। তাই না ? বিশেষতঃ জামাই আর শাশুড়িদের কাছে এটি যেন সারা বছর ধরে এক অপেক্ষার উৎসব—একথা কিন্তু স্বীকার করতেই হবে জামাই আর শাশুড়ি উভয়কেই। এই তিথিতেই শ্বশুড় বাড়িতে জামাই আদর পাওয়া বিষয়টি পুরুষদের কাছে বাস্তবায়িত হয় ভীষণভাবে। আবার বিপরীতে জামাইরা তাঁদের দ্বিতীয় মা , অর্থাৎ শাশুড়ি মার হাতে তুলে দেন আপন আপন সামর্থ্য অনুযায়ী শ্রদ্ধার্ঘ্য। অতএব, উভয় দিক থেকেই বেশ একটা ‘দিবে আর নিবে,মিলাবে মিলিবে,যাবে না ফিরে’ ব্যাপার ঘটে। ফলস্বরূপ, আদরের জামাইয়ের সাথে শ্বশুর বাড়ির সম্পর্ক আরও মাখো মাখো হয়ে মালপোয়া-মিষ্টিদইয়ের মাত্রা পায়।
কিন্তু , শুধুই কী দেওয়া-নেওয়া , তার বেশি কিছু নয় ? না,না,তা কেন। এদিন যে নিজের জামাইয়ের দীর্ঘায়ু আর মঙ্গল কামনায় বাঙালি মায়েরা পালন করেন নানান আচার । বটপাতা,দূর্বা আর আম নতুন হাতপাখার ওপর রেখে, সেই পাখা আড়াআড়ি ভাবে ধরে জামাইকে বাতাস করেন শাশুড়ি। সেই সঙ্গে মুখে বলতে থাকেন ”ষাট,ষাট,ষাট” । অর্থাৎ,ভালো হোক ,ভালো হোক জামাইবাবার ।এই স্নিগ্ধ,শীতল হাওয়া জামাইকে রোগমুক্ত রাখতে সাহায্য করে এই বিশ্বাস ।এ প্রথা তাঁর যাবতীয় অমঙ্গল বিনাশকারী মনে করা হয়। জামাইয়ের মাথায় আশীর্বাদ দেন ধান-দূর্বা দিয়ে। ধান হল সম্পদের বা সমৃদ্ধির প্রতীক । আর ,দূর্বার গুণ হল তা সহজে মরে না। পায়ে মারিয়ে চলে গেলেও বেঁচে ওঠে। অতএব, দীর্ঘায়ুর দ্যোতক দূর্বাঘাস।
পাঁচ রকম ফল,মিষ্টি,দই ,দুধ,চিড়ে এসব থালায় সাজিয়ে জামাইয়ের সামনে ধরে দেন শাশুড়িরা। জামাই ফলাহার করবে তাই এসবের আয়োজন। আবার জৈষ্ঠ্য মাস তো আম, জাম,কাঁঠাল,লিচু,তালশাসের মাস । তাই এই গ্রীষ্মকালীন ফলের স্বাদ জামাইকে পাওয়াতেই বুঝিবা , এমন একটি মধুর পার্বণের সূচনা হয়েছিল।বাংলাদেশের অনেক জায়গায় এও প্রথা আছে বিয়ের কথা পাকা হয়ে গেলে পাত্র ও কন্যাপক্ষের পরিবার একে অপরকে আম-দুধ ভেট দেয় এসময়।
এবার আসি ষষ্টী পূজা সম্পর্কে।সন্তানের মঙ্গল করেন মা ষষ্টী । বাঙালিদের প্রতি ঘরে ঘরে নবজাত শিশুর জন্য ষষ্টী পূজো করা হয় অবধারিত ভাবে। তারপরই কিন্তু আঁতুর ওঠে মা ও শিশুর। জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্লা ষষ্ঠী তিথি বা জামাইষষ্ঠী এদেশী বা ঘটী রমণীদের কাছে অরণ্য ষষ্ঠী বা স্কন্দ ষষ্ঠীর ব্রত হিসেবে পালিত হয়।
এদিন সকালে স্থানীয় বট গাছের তলায় এসে পূজারী ব্রাক্ষ্মণের দ্বারা মা ষষ্টীর পূজা সারেন তাঁরা। খেজুরের ছড়া,ডোয়ো ফল,জাম ,বটপাতা ইত্যাদি একসাথে করে ‘ভাগা’ অর্পণ করেন । গুটিছোপায় (মাটির দোয়াতের মত দেখতে) দই দেন ,আর নানারকম ফল নিবেদন করেন দেবীর উদ্দেশ্যে। যেসব রমণীর সন্তান হয় না , তাঁরা এখানে এসে এদিন আঁচল পেতে ব্রাহ্মণের থেকে গ্রহণ করেন মা ষষ্টীর প্রসাদী গোটা ফল। বিশ্বাস সে ফল খেলে অচীরেই সন্তানসম্ভবা হবেন । এদেশী মায়েরা সন্তানের মঙ্গল কামনায় উপবাস করে থাকেন। রাতে ফলাহার সারেন চিড়ে ,মুড়ি দিয়ে। যা কিছু চর্ব্য-চোষ্য সব রেঁধে দেন জামাই ও পরিবারের অন্য সকলের জন্য । তবে বাঙালদের মধ্যে আবার এসব উপবাস টুপবাসের ব্যাপার নেই। মহানন্দে জামাইকে ব্যাপক ভাবে খাওয়া দাওয়া করিয়ে নিজেও শাশুড়ি ভরপেটে থাকেন। তাবলে জামাই ষষ্ঠীর আচার পালনে কোন ত্রুটি বা খামতি থাকে না । নিষ্ঠাসহ জামাইয়ের প্রতি কর্তব্য সারেন তাঁরা।
আবার কোন কোন পরিবারে শ্যালিকাদের জন্যও একটি অদ্ভুত নিয়ম থাকে তাঁদের ভগ্নিপতিদের প্রতি। এদিন বাঁশের কঞ্চি বেঁকিয়ে লাভ সাইন বা হার্ট শেপের করে তাতে লাল সুতোয় ধান বেঁধে উপহার হিসেবে তুলে দেন তাঁরা ভগ্নিপতির হাতে।
মুর্শিদাবাদ জেলার সামসেরগঞ্জ থানার অন্তর্গত দোগাছি গ্রামে এইদিনে গ্রামের এয়োস্ত্রীগণ সাড়ম্বরে গ্রাম্যদেবতার পূজা করেন এবং ডোমকল থানার অন্তর্গত ভগীরথপুর গ্রামের স্ত্রীলোকগণ দইমেলা উৎসব পালন করেন।
এবার একটি প্রশ্ন কিন্তু প্রায় সকলের মনেই একটু উঁকি দিচ্ছে জানি।তা হল
‘যম-জামাই-ভাগ্না/তিন হয়না আপনা ‘ কথায় আছে যখন ,তবে ঘটা করে জামাই ষষ্ঠী কেন করা ! কন্যা ষষ্ঠীও তো হতে পারতো! আসলে জামাইবাবাজীবনকে তুষ্ট রাখার এ এক পন্থা বলা যায়। নিজের মেয়েটির সংসার বন্ধন যাতে অটুট থাকে , জামাইয়ের আদরে ,ভালোবাসায় মেয়ে যাতে রসেবশে, সুখে-শান্তিতে ঘর করে , সধবা থাকে চিরটাকাল সেই আশাতেই এত সব পরিপাটী প্রচেষ্টা ।

অতএব,সব মিলিয়ে জামাই ষষ্ঠীর পার্বণ জমে ক্ষীর হয়ে যায় আনন্দে,আবেগে আর জামাইয়ের প্রতি নির্ভেজাল ভালোবাসায়।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

গুপি গাইনের চরিত্রের মধ্যে অমর হয়ে রবেন তপেন চ্যাটার্জী।

ভূমিকা—

তপেন চ্যাটার্জী ছিলেন ভারতের একজন বাঙালি কিংবদন্তি অভিনেতা যিনি সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্রে বেশ কয়েকটি ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন, বিশেষ করে গুপি গাইনে বাঘা বাইন (১৯৬৮) এবং এর সিক্যুয়েল ১৯৬৮-এ গুপি গাইনের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।  বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম সফল ছবি সত্যজিৎ রায়ের ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’। ১৯৬৯-এ মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবির নামভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তপেন চট্টোপাধ্যায় ও রবি ঘোষ। অন্যান্য চরিত্রে ছিলেন সন্তোষ দত্ত, জহর রায় ও হরীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। সেই সময় বাংলায় সবথেকে ব্যয়বহুল ছবি ছিল ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’।

 

জন্ম ও পরিবার—

 

তপেন চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর, কালীঘাটের মাইশোর রোডের বাড়িতে। নলিনীরঞ্জন ও শোভনাদেবীর পাঁচ সন্তানের মধ্যে তপেন ছিলেন দ্বিতীয়। তাঁরা তিন ভাই ও দুই বোন। অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক তপেন চট্টোপাধ্যায়ের প্রাথমিক শিক্ষা রাজেন্দ্র বিদ্যাভবনে।

 

 

অভিনয়ের দিকে ঝোঁক—

ছোট থেকেই অভিনয়ের দিকে ঝোঁক ছিল। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় তপেন প্রথম মঞ্চে পা দিলেন, নাটকের নাম ‘অচলায়তন’। ছোট্ট চরিত্র হলেও দর্শকের মনে দাগ কেটে গিয়েছিল তাঁর অভিনয়। শীতকালে বা পুজোর সময় সেই নাটকের জন্যই ডাক পড়ত তপেনের। পরে শেখর চট্টোপাধ্যায়ের গ্রুপ থিয়েটারে যোগ দিয়েছিলেন।

 

কর্ম জীবন—-

অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার তপেন চট্টোপাধ্যায় খুব কম বয়সে এক সময়ে রাজস্থানের বিকানেরে চাকরি করতেন। সেখানকার জিপসাম মাইনস-এ রোজ দু’ টাকা দু’ আনা পারিশ্রমিক মিলত। বছর দুই চাকরি করার পর অতঃপর কলকাতায় ফিরলেন তিনি। তখনও কি জানতেন, এই রাজস্থানে এসেই তিনি জীবনের শ্রেষ্ঠ চরিত্রের জন্য শুটিং করবেন, তা-ও সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায়! কলকাতায় ফিরে এসে যোগ দিলেন কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাটকের দলে।

 

 

অভিনয় জীবন—-

 

তবে প্রথমে তিনি একজন যোগ্য প্রকৌশলী হিসেবে, চ্যাটার্জির রাজস্থানে চাকরি ছিল, এরপর তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন এবং সত্যজিৎ রায়ের পুনরুজ্জীবিত বাংলা পত্রিকা সন্দেশে যোগ দেন।  ছোটদের পত্রিকা সন্দেশের বিজ্ঞাপন বিভাগে কর্মজীবন শুরু করেন।  সত্যজিৎ তাকে মহানগরে একটি ক্যামিও চরিত্রে অভিনয় করেন এবং তারপরে গুপি গাইন বাঘা বাইন-এ গায়ক গুপি গাইন হিসেবে বিখ্যাত হন।  আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাশে গানটি তার উপর গুপি এবং রবি ঘোষের বাঘা বাইন চরিত্রে নির্মিত গানটি এখনও বাঙালি চলচ্চিত্রপ্রেমীদের স্মৃতিতে নাড়া দেয়।

 

জানা যায় গুপীর চরিত্রে তপেন’ই পরিচালকের প্রথম পছন্দ ছিলেন না। ষাটের দশকের শুরুতে, সত্যজিৎ যখন এই ছবি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন, তখন বহুরূপী নাট্যগোষ্ঠীর অভিনেতা অরুণ মুখোপাধ্যায়কে গুপীর চরিত্রের জন্য ভেবেছিলেন। শুন্ডি ও হাল্লা রাজার চরিত্রে ছবি বিশ্বাস, এবং মন্ত্রীর ভূমিকায় তুলসী চক্রবর্তীর কথা ভেবেছিলেন। এরপর একমসয় গুপীর চরিত্রে গায়ক-অভিনেতা পার্থ মুখোপাধ্যায়ের নামও শোনা যায়।ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয় যে বাঘার চরিত্রে অভিনয় করবেন রবি ও গুপীর ভূমিকায় দেখা যাবে নবাগত জীবনলাল বন্দ্যোপাধ্যায়কে যিনি সত্যযুগ পত্রিকার সহসম্পাদক ছিলেন।

শেষমেশ তিন-তিনবার অভিনেতা পাল্টে গুপীর জন্য তপেনকে নির্বাচিত করেন সত্যজিৎ। এর আগে তপেন সত্যজিতের ‘মহানগর’-এ একটি ছোট চরিত্রে কাজ করেছিলেন। ১৯৮০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হীরক রাজার দেশে ছবিতেও গুপী ও বাঘার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তপেন ও রবি।

 

 

চলচ্চিত্র সমূহ—

 

১৯৬৩-মহানগর, ১৯৬৯-গুপী গাইন বাঘা বাইন, ১৯৭০- রূপসী, ১৯৭১-ধন্যি মেয়ে, ১৯৭৩- শ্রীমান পৃথ্বীরাজ, ১৯৭৩- ননিগোপালের বিয়ে, ১৯৭৪- সঙ্গিনী, ১৯৭৪- বিকালে ভোরের ফুল, ১৯৭৪- ঠগিনী, ১৯৭৭-ভোলা ময়রা, ১৯৭৭- হাতে রইল তিন, ১৯৭৯গণদেবতা (তারা নাপিত) , ১৯৮০আঁচল (প্রযোজনা), ১৯৮০-হীরক রাজার দেশে(গুপী গাইন), ১৯৯১-গুপী বাঘা ফিরে এলো(গুপী), ১৯৯৬-রবিবার, ১৯৯৭- শ্রীমান ভূতনাথ, ২০০৮- নরক গুলজার(সর্বশেষ চলচ্চিত্র)

 

প্রয়াণ—-

তপেন চ্যাটার্জি ২৪ মে ২০১০ তারিখে  ৭২ বছর বয়সে মারা যান। তিনি ফুসফুসের রোগে ভুগছিলেন।

 

।।তথ্য সূত্র: উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবপেজ ।।

 

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজ বিশ্ব কচ্ছপ দিবস, কেন পালিত হয় জানুন।

বিশ্ব কচ্ছপ দিবস প্রতি বছর ২৩ মে বিশ্বব্যাপী পালিত হয় কচ্ছপদের বেঁচে থাকতে এবং তাদের প্রাকৃতিক বাসস্থানে উন্নতি করতে সহায়তা করার বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে। এই বিশেষ দিনটি আমেরিকান কচ্ছপ রেসকিউ (ATR), একটি অলাভজনক সংস্থা দ্বারা ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ATR একটি স্বামী এবং স্ত্রী জুটি, সুসান টেলেম এবং মার্শাল থম্পসন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
এই সংস্থায়, তারা কচ্ছপ এবং কচ্ছপের সমস্ত প্রজাতিকে উদ্ধার ও পুনর্বাসন করে, যারা ঝুঁকিপূর্ণ, বিপন্ন বা সমালোচনামূলকভাবে বিপন্ন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে, ATR কেয়ার হোমে প্রায় ৪০০০ কাছিম এবং কচ্ছপের যত্ন নিয়েছে। তারা অসুস্থ, অবহেলিত বা পরিত্যক্ত কচ্ছপদের তথ্য সরবরাহ করতে সহায়তা করে।

 

বিশ্ব কচ্ছপ দিবস হল একটি বার্ষিক ইভেন্ট যা ২০০০ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এটি আমেরিকান কচ্ছপ রেসকিউ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
বিশ্ব কচ্ছপ দিবসের উদ্দেশ্য হল কচ্ছপ এবং কাছিমের আবাসস্থল রক্ষা করতে তারা কী করতে পারে সে সম্পর্কে মানুষকে শিক্ষিত করা।  এই সরীসৃপগুলি দৈনিক ভিত্তিতে এত লোকের জন্য যে আনন্দ নিয়ে আসে তারও এটি একটি উদযাপন।
সারা বিশ্বে দিনটি নানাভাবে পালিত হয়।  অনেক লোক আছে যারা কচ্ছপের মতো পোশাক পরে আবার অন্যরা কেবল সবুজ কিছু পরার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।  লোকেরা এমন প্রকল্পগুলিতে সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকে যা তাদের স্থানীয় এলাকায় বসবাসকারী কচ্ছপদের উদ্ধার করতে সহায়তা করে।
এছাড়াও এমন অনেক সংস্থান রয়েছে যা স্কুলগুলিতে উপলব্ধ করা হয়েছে যা শিক্ষকরা বিশ্ব কচ্ছপ দিবসকে ঘিরে পাঠ তৈরি করতে ব্যবহার করতে পারেন।  কচ্ছপ এবং কাছিম যে হুমকির সম্মুখীন হয় সে সম্পর্কে ভবিষ্যত প্রজন্মের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।  এটি এমন কিছু যা শিশুরা এতে জড়িত হওয়া উপভোগ করে।
আমেরিকান টর্টোইস রেসকিউ (এটিআর) ১৯৯০ সালে স্বামী এবং স্ত্রীর দল সুসান টেলেম এবং মার্শাল থম্পসন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।  এটি একটি অলাভজনক সংস্থা যা সমস্ত প্রজাতির কাছিম এবং কচ্ছপকে উদ্ধার করে এবং পুনর্বাসন করে।  এই প্রাণীগুলি যে পরিবেশে বাস করে সেগুলিকে রক্ষা করার জন্য এটি অনেক কাজ করে।  তারা সর্বদা প্রাণীদের জন্য নতুন বাড়ি খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে কিন্তু যদি এটি সম্ভব না হয় তবে তারা এটিআর-এর যত্নে থাকবে।

5টি বিপন্ন কচ্ছপ প্রজাতি—

 

১। বিকিরিত কচ্ছপ- দক্ষিণ মাদাগাস্কারের স্থানীয় বিকিরিত কাছিম। একসময় সমগ্র দ্বীপ জুড়ে প্রচুর পরিমাণে, প্রজাতিটি এখন আইইউসিএন দ্বারা গুরুতরভাবে বিপন্ন। আগামী ৫০ বছরের মধ্যে প্রজাতিটি সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হতে পারে।
২। অ্যাঙ্গোনোকা কচ্ছপ- অ্যাঙ্গোনোকা কাছিম শুধুমাত্র উত্তর-পশ্চিম মাদাগাস্কারের উপসাগরীয় অঞ্চলে পাওয়া যায়। সমালোচনামূলকভাবে বিপন্ন হিসাবে তালিকাভুক্ত, অ্যাঙ্গোনোকা কচ্ছপের বর্তমান বন্য জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ২০০ প্রাপ্তবয়স্ক রয়েছে বলে অনুমান করা হয়।

৩। ফিলিপাইন ফরেস্ট টার্টল- এই প্রজাতিটি শুধুমাত্র ফিলিপিনো দ্বীপ পালাওয়ানে পাওয়া যায়। সমালোচনামূলকভাবে বিপন্ন হিসাবে তালিকাভুক্ত, ফিলিপাইন ফরেস্ট কচ্ছপ বহিরাগত প্রাণী সংগ্রাহকদের দ্বারা অত্যন্ত মূল্যবান।
৪। পেইন্টেড টেরাপিন- এগুলি ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনাই, থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়ায় পাওয়া যায়। পেইন্টেড টেরাপিন শুধুমাত্র সমালোচনামূলকভাবে বিপন্ন নয় বরং পৃথিবীর সবচেয়ে বিপন্ন ২৫ টি স্বাদু পানির কচ্ছপের মধ্যে একটি হিসেবেও তালিকাভুক্ত।
৬। হলুদ মাথার বাক্স কচ্ছপ- এরা মধ্য চীনের আনহুই প্রদেশের অধিবাসী। আইইউসিএন দ্বারা সমালোচিতভাবে বিপন্ন হিসাবে তালিকাভুক্ত, হলুদ মাথার বক্স কচ্ছপকে বিশ্বের ২৫টি সবচেয়ে বিপন্ন প্রজাতির কচ্ছপের মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

 

জাতীয় কাছিম দিবস/ কচ্ছপ দিবস সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য—-

 

জাতীয় কাছিম দিবস/ কচ্ছপ দিবস কি?

 

জাতীয় বিশ্ব কচ্ছপ দিবস, কখনও কখনও বিশ্ব কাছিম দিবস বা জাতীয় কাছিম দিবসও বলা হয়, এমন একটি দিন যা কচ্ছপ এবং কাছিম উদযাপনের জন্য তৈরি করা হয়।  এটি প্রতি বছর ২৩শে মে সারা বিশ্বের দেশে পালিত হয়।  এর মূল উদ্দেশ্য হল এই সুন্দর প্রাণীদের মুখোমুখি হওয়া সমস্যাগুলি সম্পর্কে আরও বেশি লোককে সচেতন করা, কচ্ছপ এবং কচ্ছপদের রক্ষা করতে এবং বন্যের মধ্যে তাদের বেঁচে থাকার হার বাড়ানোর জন্য আরও মানবিক পদক্ষেপকে অনুপ্রাণিত করা।  এটি একটি অলাভজনক সংস্থা যা সমস্ত প্রজাতির কাছিম এবং কচ্ছপকে উদ্ধার ও পুনর্বাসন করে।  বিশ্বজুড়ে মানুষ বিভিন্ন উপায়ে বিশ্ব কচ্ছপ দিবস উদযাপন করে।

 

 বিশ্ব কচ্ছপ দিবস প্রথম কবে পালিত হয়?

 

বিশ্ব কচ্ছপ দিবস ১৯৯০ সালে আমেরিকান কচ্ছপ উদ্ধার (ATR) দ্বারা স্বামী ও স্ত্রীর দল সুসান টেলেম এবং মার্শাল থম্পসন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত একটি প্রাণী উদ্ধার সংস্থা যারা কচ্ছপ এবং কাছিম সংরক্ষণে নিবেদিত।
ATR প্রতি বছর ২৩শে মে বিশ্ব কচ্ছপ দিবসকে স্পনসর করেছে এবং এটি এখন সারা বিশ্বের কচ্ছপদের জন্য সবচেয়ে বড় প্রজাতি সচেতনতা দিবসগুলির মধ্যে একটি।

 

 প্রথম জাতীয় কাছিম/কচ্ছপ দিবস কবে?

 

২০০২ সালে এটিআর (আমেরিকান কচ্ছপ উদ্ধার) দ্বারা প্রথম বিশ্ব কচ্ছপ দিবস পালিত হয়।

 

 কেন আমরা বিশ্ব কচ্ছপ দিবস উদযাপন করি?

 

আমরা কচ্ছপ এবং কাছিম সম্পর্কে আরও মনোযোগ আকর্ষণ এবং জ্ঞান বাড়াতে জাতীয় কাছিম দিবস উদযাপন করি।  কচ্ছপগুলি উজ্জ্বল প্রাণী যা বেশিরভাগই বসে থাকা মনে হতে পারে তবে খুব আকর্ষণীয়।  তারা বিশ্বের প্রাচীনতম সরীসৃপ গোষ্ঠীগুলির মধ্যে একটির অন্তর্গত – যা তাদের সাপ, কুমির এবং কুমিরের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বয়স্ক করে তোলে।  এটা গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা কচ্ছপ এবং কচ্ছপের জনসংখ্যার গবেষণা ও সুরক্ষা করি, কারণ তারা আমাদের সমুদ্র সৈকতকে পরিষ্কার রাখে মৃত মাছগুলিকে খাওয়ানোর মাধ্যমে যা উপকূলে ধুয়ে যায় এবং আমাদের মহাসাগরে পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখে।
এই প্রাণীগুলি ২০০ মিলিয়ন বছর আগে ডাইনোসরের সময়কালের।  সমগ্র বিশ্বে মোট ৩০০ প্রজাতির কচ্ছপ রয়েছে, যার মধ্যে ১২৯ প্রজাতিই বিপন্ন।  তাই, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে কচ্ছপদের তাদের প্রাকৃতিক আবাসস্থলে বেঁচে থাকতে এবং উন্নতি করতে সাহায্য করার জন্য, প্রতি বছর বিশ্ব কচ্ছপ দিবস পালিত হয়।

 

 আমি কিভাবে শিশুদের সাথে বিশ্ব কচ্ছপ দিবস উদযাপন করতে পারি?

 

বিশ্বজুড়ে মানুষ বিভিন্ন উপায়ে বিশ্ব কচ্ছপ দিবস উদযাপন করে।  মানুষ কচ্ছপ সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং কার্যক্রমের আয়োজন করে।  কিছু মানুষ এই দিনে রাস্তা-মহাসড়ক থেকে কচ্ছপদের উদ্ধার করে তাদের প্রাকৃতিক আবাসস্থলে ফিরিয়ে দেয়।  আপনি শিশুদের সাথে বিশ্ব কচ্ছপ দিবস বা জাতীয় কাছিম দিবস পালন করতে পারেন এমন অনেক মজার এবং সহজ উপায় রয়েছে!
কচ্ছপের মতো সাজানো বা গ্রীষ্মের সবুজ পোশাক পরা থেকে শুরু করে, মহাসড়কে ধরা কচ্ছপগুলিকে বাঁচানো, গবেষণা কার্যক্রম পর্যন্ত, উদযাপন করার অনেক উপায় রয়েছে।
দিনটি উদযাপনের একটি মজার উপায় হল কচ্ছপ বা কাছিমের মতো সাজানো।  অথবা, একটি সহজ ড্রেস-আপ বিকল্পের জন্য, আপনি দিনটি স্মরণ করতে এবং সচেতনতা বাড়াতে আপনার ক্লাস বা স্কুলের বাচ্চাদের সবুজ কিছু পরতে আমন্ত্রণ জানাতে পারেন।
বিশ্ব কচ্ছপ দিবসে আরেকটি দুর্দান্ত জিনিস হল এমন একটি দাতব্য সংস্থার জন্য অর্থ সংগ্রহ করা যা একটি বেক সেল নিক্ষেপ করে বা স্পনসরড হাঁটার মাধ্যমে কচ্ছপদের সাহায্য করে, উদাহরণস্বরূপ।
বিশ্ব কচ্ছপ দিবসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হল কচ্ছপ সম্পর্কে আরও তথ্য জানা এবং প্রজাতি সম্পর্কে মানুষের সম্মান এবং জ্ঞান বাড়াতে অন্যদের সাথে তথ্য ভাগ করা।  এটি করার জন্য, কেন আমাদের একটি দুর্দান্ত বিশ্ব কচ্ছপ দিবসের শিক্ষার সংস্থান ব্যবহার করবেন না, শিশুদের সাথে ভাগ করে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত?

কচ্ছপ এবং কচ্ছপের কার্যকলাপ প্যাক – বড় বাচ্চাদের সাথে বিশ্ব কচ্ছপ দিবস উদযাপন করতে এই আকর্ষক কার্যকলাপ প্যাকটি ব্যবহার করুন।  এটি কারুশিল্প, রঙিন শীট এবং ওয়ার্কশীটগুলিতে পূর্ণ যাতে বাচ্চাদের ব্যস্ত রাখা যায় যখন তারা মহিমান্বিত প্রাণীগুলি সম্পর্কে শেখে।

ওয়ার্ল্ড টার্টল ডে ফ্যাক্ট শীট – এই ফ্যাক্ট শীটটি প্রিন্ট করার জন্য প্রস্তুত এবং বয়স্ক বাচ্চাদের সাথে কচ্ছপ সংরক্ষণের জ্ঞান সম্প্রসারিত করার জন্য এবং তাদের সুরক্ষার জন্য আমরা কী করতে পারি তা জানাতে।

মহাসাগরের দূষণ: একক ব্যবহার প্লাস্টিক পাওয়ারপয়েন্ট – এই পাওয়ারপয়েন্টটি শিশুদের (৭ থেকে ১১ বছর বয়সী) সাথে শেয়ার করার জন্য আদর্শ যা তাদের সারা বিশ্বে প্লাস্টিক দূষণের কারণে সৃষ্ট সমস্যাগুলি বুঝতে সাহায্য করে এবং এটি কীভাবে কচ্ছপকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছে৷  আপনার স্থানীয় এলাকায় প্রকৃত পরিবর্তনকে অনুপ্রাণিত করার জন্য, আপনি এমনকি শিশুদের তাদের স্থানীয় এমপিকে লিখতে উত্সাহিত করতে প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কে এই চিঠির টেমপ্লেটটি ব্যবহার করতে পারেন।

আমাদের সমস্ত টুইঙ্কল সংস্থানগুলি আমাদের ডিজাইনারদের বিশেষজ্ঞ দল দ্বারা তৈরি করা হয়েছে এবং শিক্ষকদের দ্বারা পরীক্ষা করা হয়েছে৷  এর মানে আপনি নিশ্চিত হতে পারেন যে তারা শ্রেণীকক্ষে জড়িত এবং পাঠ্যক্রম অনুসরণ করছে।

কচ্ছপের চেয়ে মানবতার প্রিয় প্রাণী খুব কমই আছে।  এই খোলসযুক্ত প্রাণীগুলি বিশ্বের কার্যত সমস্ত কোণে পাওয়া যেতে পারে এবং উপমা, পৌরাণিক কাহিনী এবং সমস্ত ধরণের জনপ্রিয় মিডিয়াতে তাদের পথ খুঁজে পেয়েছে।
বিশ্ব কচ্ছপ দিবস শুধুমাত্র কচ্ছপদের প্রতি ভালবাসা এবং ভক্তি দেখানোর জন্য নয় বরং আমরা তাদের পাশাপাশি তাদের বিভিন্ন আবাসস্থল রক্ষা করতে পারি তাও নিশ্চিত করা।

কচ্ছপ এবং কাছিম এর মধ্যে পার্থক্য কী তা জানা গুরুত্বপূর্ণ।  যদিও তারা উভয়ই একই পরিবারের অন্তর্গত, কচ্ছপরা তাদের সময় জলের কাছাকাছি বা জলে কাটায় যখন কচ্ছপ প্রাথমিকভাবে স্থল প্রাণী।
কচ্ছপ এবং কাছিম উভয়ই এমন প্রাণী যারা তাদের নিজ নিজ বাস্তুতন্ত্রে অসাধারণ ভূমিকা পালন করে।  অন্যান্য প্রাণীর বাসযোগ্য গর্ত খনন করা হোক বা সৈকত থেকে মৃত মাছ পরিষ্কার করা হোক না কেন, তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This