Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

গোয়ার ৪ টি দর্শনীয় সমুদ্র সৈকত।

ঘুরতে কে না ভালোবাসে। বিশেষ করে বাঙালিরা সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ে ভ্রমনের নেশায়। কেউ পাহাড়, কেউ সমুদ্র আবার কেউ প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থান ভালোবাসে ভ্রমণ করতে। প্রকৃতি কত কিছুই না আমাদের জন্য সাজিয়ে রেখেছে। কতটুকুই বা আমরা দেখেছি। এ বিশাল পৃথিবীতে আমরা অনেক কিছুই দেখিনি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার দুনিয়ায় আজ গোটা পৃথিবীটা হাতের মুঠোয়় এলেও প্রকৃতিকে চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করা এ এক আলাদা রোমাঞ্চ, আলাদা অনুভূতি যার রেষ হৃদয়ের মনিকোঠায় থেকে যায় চিরকাল।। তাইতো আজও মানুষ বেরিয়ে পড়়ে প্রকৃতির কে গায়ে মেখে  রোমাঞ্চিত হওয়ার নেশায়। কেউ চায় বিদেশে ভ্রমণে, আবার কেউ চায় দেশের বিভিন্ন স্থান ভ্রমণে। এমনি এক ভ্রমণ এর জায়গা হলো  আমাদের আর এক রাজ্য গোয়া । এখন আমরা জানব গোয়ার চারটি সমুদ্র সৈকত সম্পর্কে।

 

সিঙ্কেরিম সৈকত

 

 সমুদ্র সৈকত আপনাকে তার মনোরম বালুকাময় সৈকত বরাবর হাঁটার আমন্ত্রণ জানায়। আপনি সাঁতার সহ বিভিন্ন ধরণের জল-ভিত্তিক খেলাধুলা এবং উত্তেজনাপূর্ণ ক্রিয়াকলাপগুলিতে অংশ নিতে পারেন, তবে আপনি কেবল সাঁতার কাটতে পারেন। এই সৈকতের রাতের জীবন বেশিরভাগ সময় সঙ্গীত উত্সব দ্বারা প্রভাবিত হয়। এখানে প্রচুর সংখ্যক হোটেল এবং অন্যান্য ধরণের রিসর্ট রয়েছে। এছাড়াও, আশেপাশের এলাকায় অনেক চমৎকার রেস্তোরাঁ রয়েছে যা তাদের সুস্বাদু খাবার এবং পানীয়ের জন্য পরিচিত। প্রচুর ট্যাক্সি, মোটরসাইকেল এবং বাস পাওয়া যায় বলে সিঙ্কেরিমে যাওয়া সহজ।

অশ্বেম সৈকত

 

অশ্বেম সমুদ্র সৈকত হল একটি দীর্ঘ এবং পরিষ্কার দৈর্ঘ্যের বালি যা জনসাধারণের কাছ থেকে দূরে অবস্থিত, এটি ভ্রমণকারীদের জন্য একটি দুর্দান্ত অবস্থান তৈরি করে যারা শান্তিপূর্ণ ছুটি চান যেখানে তারা যেতে পারেন সূর্য, বালি এবং তরঙ্গে ভিজিয়ে রাখুন। অশ্বেম সৈকতের আশেপাশের জল সাঁতারের জন্য আদর্শ, এবং এই অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীটি শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ প্রদান করে যারা এখনও সমুদ্রের ঢেউ পরিচালনা করার জন্য যথেষ্ট বয়সী নয়। আপনি স্থানীয় রিসর্টগুলির একটিতে স্পা দিনে নিজেকে চিকিত্সা করে বা আয়ুর্বেদিক ম্যাসেজ করতে গিয়ে আরও আরাম করতে পারেন, উভয়ই তাদের শান্ত প্রভাবের জন্য পরিচিত। এই অঞ্চলে অনুশীলন করা আয়ুর্বেদিক ম্যাসেজগুলি অত্যন্ত উচ্চ মানের এবং দক্ষতার স্তরের।

মিরামার সৈকত

 

গোয়ানদের জন্য, মিরামার বিচ মুম্বাইয়ের চৌপাট্টির সাথে তুলনীয়। এর প্রধান দর্শনার্থীরা গোয়ানরা, যারা সকালে বা সন্ধ্যায় অবসরে হাঁটার জন্য তাদের বন্ধুদের সাথে দেখা করতে আসে। ফলস্বরূপ, এটি সম্ভবত গোয়ার যেকোনো স্থানের তুলনায় সবচেয়ে কম পর্যটন পরিবেশ রয়েছে। একটি শক্তিশালী আন্ডারকারেন্টের উপস্থিতির কারণে, এই সৈকত সাঁতারের জন্য উপযুক্ত নয়। ভিউ নেওয়ার পাশাপাশি এখানে কিছু কেনাকাটা করাও সম্ভব। এটি প্রায়শই গোয়ার সৈকতগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচিত হয় যা পরিবারের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস ভারতে এই অবস্থানে ভ্রমণের জন্য আদর্শ।

মর্জিম সৈকত

 

যারা নিজেদের মধ্যে রাখতে চান তারা মরজিম বিচকে পছন্দ করবেন। এই সৈকত, যা চাপোরা নদীর উত্তরে পাওয়া যায়, এটি একটি বালুকাময় সমুদ্র সৈকতের একটি অত্যাশ্চর্য উদাহরণ এবং এটি গোয়ার সমুদ্র সৈকতগুলির মধ্যে একটি যা প্রতিদিন খুব কম দর্শক দেখে। অলিভ রিডলি কচ্ছপ হল এই সৈকতে শোয়ের তারকা কারণ এটি তাদের জন্য বাসা বাঁধার আবাসস্থল। মর্জিম সৈকত এক ধরণের বাস্তুশাস্ত্র রয়েছে যা এই ধরণের কচ্ছপের বিকাশ এবং ডিম থেকে বাচ্চা বের করার প্রচার করে, এটি তাদের বসবাসের জন্য একটি আদর্শ জায়গা করে তোলে। এর ফলস্বরূপ মরজিম বিচকে একটি নতুন ডাকনাম দেওয়া হয়েছে: টার্টল বিচ। অত্যাশ্চর্য সূর্যাস্তের দৃশ্যের প্রশংসা করার সময় 3-কিলোমিটার সমুদ্র সৈকত দীর্ঘ হাঁটার জন্য উপযুক্ত।

 

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

কথাশিল্পী বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় সম্বন্ধে দুটি কথা : দিলীপ রায়।

আমাদের দেশের প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য কথাশিল্পী বিভূতিভূষণ  বন্দোপাদ্যায়কে শৈশব থেকেই মুগ্ধ করত  । যার জন্য তিনি নিবিড়ভাবে দেখার সুযোগ পেয়েছেন গ্রাম বাংলার এখানে সেখানে লুকিয়ে থাকা ঝোঁপ-জঙ্গল, লতা-পাতা, বিভিন্ন ধরনের ফুল, নানান প্রজাতির পশু-পাখি, পথ-ঘাট, নদী-নালা, ইত্যাদি । পরবর্তী কালে  প্রকৃতির প্রতি  তাঁর অগাধ ভালবাসার  অভিজ্ঞতা নানাভাবে তাঁর রচনাকে প্রভাবিত ও  সমৃদ্ধ করেছে, এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়  । তাঁর অনুভবী এবং সংবেদনশীল মন দিয়ে প্রকৃতির অসামান্য রূপ বর্ণনা করে সাহিত্য সম্ভারকে অন্যতর ভূমিকায় উদ্ভাসিত করেছেন । সেই কারণে আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি,   তাঁর সৃজনশীল সাহিত্য প্রতিভা, অবর্ণনীয় !
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ১২ই সেপ্টেম্বর ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতবর্ষের বাংলা প্রদেশের চব্বিশ পরগণা জেলার কাঁচরাপাড়ার সন্নিকট ঘোষপুর-মুড়াতিপুর গ্রামে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন  ।  তিনি ছিলেন প্রখ্যাত মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় ও মৃণালিনী দেবীর পাঁচটি সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ সন্তান, অর্থাৎ বিভূতিভূষণ দুই ভাই এবং  তিন বোনের মধ্যে ছিলেন সবার বড় । তাঁর বাবা  ছিলেন  তদানীন্তনকালের একজন প্রখ্যাত সংস্কৃত বিষয়ক পণ্ডিত  । মহানন্দ বন্দোপাধ্যায়ের পাণ্ডিত্য  ও  কথকতার জন্য শাস্ত্রী উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন । উল্লেখ থাকে যে, তাঁদের আদি নিবাস ছিল যশোর জেলার ( বর্তমান চব্বিশ পরগনা জেলার ) অন্তর্ভুক্ত বনগ্রাম মহকুমায় অবস্থিত ইছামতী নদীর তীরে ব্যারাকপুর গ্রামে । শোনা যায়  বাবা মহানন্দ বন্দোপাধ্যায় কথকতা ও পৌরাহিত্য করতেন বলে,  তাঁর  বাল্য ও কৈশোর জীবন কাটে দারিদ্র্য , অভাব  ও  অনটনের মধ্যে । বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে প্রথমে গৌরী দেবী  ও পরে ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে রমা দেবীর সাথে দাম্পত্য জীবনে আবদ্ধ হন ।
এবার আসছি তাঁর শিক্ষা জীবন সম্পর্কে  ।  বাবা মহানন্দ বন্দোপাধ্যায়ের কাছে বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের শিক্ষার হাতেখড়ি  । লেখাপড়ার পাঠ শুরু  । ছোট থেকেই মেধাবী হওয়ার কারণে নিজ গ্রামের  পাঠশালায় পড়াশোনার পর বনগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে অবৈতনিক শিক্ষার্থী হিসাবে ভর্তি হন  । ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে বনগ্রাম হাইস্কুল থেকে এনট্রান্স পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন । ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার রিপন কলেজ (অর্থাৎ বর্তমান সুরেন্দ্রনাথ কলেজ) থেকে আই-এ পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন । ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে রিপন কলেজ থেকেই বি.এ পরীক্ষায় ডিস্টিংশন সহ উত্তীর্ণ হন । উচ্চতর পড়াশোনার জন্য এম.এ ও আইন বিষয়ে ভর্তি হন । কিন্তু পরিবারের চাপে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে পড়াশোনা ছেড়ে দেন।
এবার আসছি তাঁর কর্ম জীবন সম্পর্কে ।   হুগলী জেলার জাঙ্গিপাড়া গ্রামের বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মাধ্যমে পেশাগত জীবনে প্রবেশ । এরপরে সোনারপুর হরিনাভী স্কুলেও শিক্ষাকতা করেন  । ঐ সময়ে গৌরী দেবীর মৃত্যু হলে মনের কষ্টে  সন্ন্যাস গ্রহণ করেন । সেখান থেকে ফিরে এসে খেলৎচন্দ্র ঘোষের বাড়িতে গৃহ শিক্ষক ও সেক্রেটারি হিসাবে কাজ  করা শুরু করেন । পরবর্তীকালে  খেলৎচন্দ্রের  সুপারিশ ক্রমে ভাগলপুর সার্কেলের সহকারী ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন  । ভাগলপুরে প্রবাসী হিসাবে বসবাস করতে থাকেন, এখানেই তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস “পথের পাঁচালী” রচিত হয় । এভাবে কিছুদিন কাটানোর পর ধর্মতলায় খেলাৎচন্দ্র মেমোরিয়াল স্কুলে শিক্ষকতা করেন । পরে বনগাঁর নিকট গোপালনগর হরিপদ ইনস্টিটিউশনে আমৃত্যু জীবন পর্যন্ত  শিক্ষাকতা করতে থাকেন ।
সাহিত্য সম্বন্ধে আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে প্রবাসী পত্রিকায় “উপেক্ষিতা”  নামক গল্প প্রকাশের মধ্য দিয়ে  তাঁর সাহিত্য জীবনে সূত্রপাত  ।  ভাগলপুরের বাঙালিটোলায়  জমিদারির সেরেস্তায় নায়েবের কাজ নিয়ে চলে আসার পর “পথের পাঁচালী” উপন্যাস লেখার মধ্য দিয়ে ভাগলপুরে তাঁর লেখকজীবনের সূত্রপাত  ।  উল্লেখ থাকে যে,  ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ভাগলপুরে বসবাস কালীন  সময়ে  “পথের পাঁচালী”  রচনা শুরু   এবং ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে সেই লেখার শেষ  ।  এই ভাগলপুরের বাঙালিটোলায় লেখক বিভূতিভূষণকে আবিষ্কার করেন যিনি, তাঁর নাম উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় । এখানে একটা কথা ভীষণ প্রাসঙ্গিক,  উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় সাহিত্য ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন দুজন বিখ্যাত সাহিত্যিককে আবিষ্কার করার কারণে । তাঁদের মধ্যে প্রথমজন হলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় আর দ্বিতীয়জন হলেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় । উপেন্দ্রনাথ একদিকে সাহিত্যপাগল, অন্যদিকে মজলিসি । তাঁর বাড়ির কাছারিঘরে নিত্যদিন জমজমাট সাহিত্য আড্ডা বসতো । সেই আড্ডায়  অপরিচিত যুবক বিভূতিভূষণের ছিল নিত্য যাতায়াত । বৈঠকখানার সেই আড্ডায়  বিভিন্নরকম  সাহিত্য বিষয়ক আলোচনা ও  মন্তব্যে সকলে মেতে উঠতেন । কিন্তু এই যুবকটি কোনো আলোচনায়  অংশগ্রহণ করতেন  না । একদিন বৈশাখ মাসের  বিকেলের আড্ডায় কেউ উপস্থিত হলেন না ।  উপেন্দ্রনাথ কাছারিঘর থেকে নেমে উঁকি দিয়ে দেখলেন বাইরে রাস্তার উপরে একটি লণ্ঠনের  আলো,  সঙ্গে একটা ছায়ামূর্তি । সেই  ছায়ামূর্তি এসে হাজির হলো তাঁর বৈঠকখানায় । আড্ডারঘরে  একেবারে পেছনের বেঞ্চে গিয়ে বিভূতিভূষণ বসলেন । উপেন্দ্রনাথ বললেন, “একি ! আপনি পেছনে বসলেন কেন ?” প্রত্যুত্তরে বিভূতিভূষণ বললেন, “আরো অনেকে আসবেন, আমি কীভাবে সামনের বেঞ্চটিতে বসি ।“   উপেন্দ্রনাথ সঙ্গে সঙ্গে বললেন, “আজকে মনে হচ্ছে আর কেউ আসবেন  না । আসুন, আপনি সামনের চেয়ারটাতে বসুন ।“  নানাবিধ গালগল্পের মধ্যে উপেন্দ্রনাথ হঠাৎ বিভূতিভূষণকে জিজ্ঞেস করলেন, তা আপনার কবিতা কিংবা গল্প-উপন্যাস লেখার বাতিকটাতিক আছে নাকি ? বিভূতিভূষণ উত্তরে বললেন,  “না, তেমন কিছু নয়,  একটা উপন্যাস লিখেছি ।“  কিন্তু লেখাটি আদৌ মানসম্পন্ন হয়েছে কিনা বুঝতে পারছি না ! উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় বিভূতিভূষণকে উদ্দেশ্য করে বললেন,  “তাহলে উপন্যাসের খাতাটি একবার নিয়ে আসুন । দেখি কেমন উপন্যাস লিখেছেন আপনি ?”  এই কথোপকথনের  কয়েক দিনের মধ্যে  বিভূতিভূষণ তাঁর  “পথের পাঁচালী”  উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি জমা দিয়ে গেলেন উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে । তারপর কিছুদিন বাদে একদিন মজলিস শেষে সবাই যখন উঠে  যাচ্ছেন, ঠিক সেই মুহূর্তে উপেন্দ্রনাথ বিভূতিভূষণকে বললেন,  “আপনি এখনই যাবেন না । আপনার সঙ্গে একটু কথা আছে ।“
সাহিত্য আসর থেকে সবাই বিদায় নেওয়ার পর উপেন্দ্রনাথ বিভূতিভূষণকে বললেন,  “ভাই, আপনার হবে । হবে বলছি কেন ?  আপনার লেখা ভাল হয়েছে । কী এক অসাধারণ উপন্যাস লিখেছেন আপনি ! লেখাটা পড়েই মন-প্রাণ দুটিই জুড়িয়ে গেছে আমার । যাই হোক, এবার আসল কথা বলি, আমি ভাগলপুরে আর থাকছি না । কলকাতায় চলে যাচ্ছি । তবে আমার কলকাতায় যাওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে, সেখান থেকে একটি পত্রিকা বের করব ‘বিচিত্রা’ নামে । সেখানেই  আমি ছাপতে চাই  আপনার এই  উপন্যাসটি । আপনার এই উপন্যাস দিয়েই যাত্রা শুরু করবে ‘বিচিত্রা’ পত্রিকাটি । এর  কিছুদিনের মধ্যেই কলকাতা থেকে প্রকাশিত হতে শুরু করল বিচিত্রা এবং বিভূতিভূষণের উপন্যাসও কিস্তিতে কিস্তিতে ।  উপন্যাসটি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্যরসিক পাঠকমহলে গুঞ্জন শুরু হলো—কে এই লেখক ? যে সমাজ ও দেশ-গ্রামের তুচ্ছ জিনিসগুলো এত মনোমুগ্ধ করে তাঁর লেখনীতে ফুটিয়ে তুলেছেন  । হঠাৎ একদিন ‘শনিবারের চিঠি’র সম্পাদক সজনীকান্ত দাস বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এসে উপস্থিত । নব্বই  টাকা দিয়ে বললেন—”বিভূতিবাবু, আপনি যদি অনুমতি দেন, তবে “পথের পাঁচালী”  উপন্যাসটি বই আকারে ছাপব ।“  এভাবেই শুরু বিভূতিভূষণের পথচলা ।
এই উপন্যাসটি ছিল বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের  প্রথম ও সবচেয়ে বিখ্যাত সাহিত্যকৃতী যা পরবর্তি কালে চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় “পথের পাঁচালী” চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে বিখ্যাত হয়ে ওঠে । এছাড়াও তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস  ‘অপরাজিত’ রচনা করেন, যা ছিল পথের পাঁচালী উপন্যাসের পরবর্তী অংশ । এই দুই উপন্যাসের কাহিনীই ছিল তাঁর জীবনকেন্দ্রিক । চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় এই উপন্যাসের কাহিনীর মাধ্যমে দুটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন যা ভীষণ ভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করে । ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে কিশোর পাঠ্য ‘চাঁদের পাহাড়’ উপন্যাস ভারতবর্ষের তরুণদের কাছে অতি  জনপ্রিয় ও রোমাঞ্চকর  উপন্যাস। ২০১৩ সালে চিত্র পরিচালক কমলেশ্বর মুখার্জির পরিচালনায় ‘চাঁদের পাহাড়’ চলচ্চিত্র নির্মাণের মাধ্যমে যথেষ্ঠ খ্যাতি অর্জন করে ।
পুরস্কার হিসাবে বিখ্যাত ঔপন্যাসিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ইছামতী উপন্যাসের জন্য ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে মরণোত্তর রবীন্দ্র পুরস্কার পান । এছাড়াও তাঁর জন্মভূমি পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার বনগাঁ মহকুমার পারমাদান বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের নাম লেখকের সম্মানার্থে  “বিভূতিভূষণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য”  রাখা হয়েছে ।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় শেষ জীবনের কয়েকটি বৎসর তাঁর ভালোবাসার শেষ চিহ্ন গৌরীকুঞ্জতে কাটিয়েছেন । তিনি তার বাড়িটির নাম স্ত্রীর নামে ‘গৌরীকুঞ্জ’ রেখেছিলেন ।
১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ১লা নভেম্বর বিহারের ঘাটশিলায় (অধুনা ঝাড়খণ্ডের) ৫৬ বৎসর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পরলোক গমন করেন । বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের সৃষ্টির গুনে ইতিহাসে চিরস্মরণীয়  হয়ে থাকবেন আজীবন । তাঁকে আমার শতকোটি প্রণাম ।  (তথ্যসূত্রঃ সংগৃহীত) ।
——–০———

Share This
Categories
রিভিউ

আজ ৩১ জুলাই, ইতিহাসের আজকের এই দিনে যা ঘটেছিল।

আজ ৩১ জুলাই। ইতিহাস ঘেটে দেখা যায় বছরের প্রতিটি দিনে ঘটেছে অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। আসুন আজকের দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় একনজরে দেখে নিই।  ইতিহাসের আজকের এই দিনে কী কী ঘটেছিল, কে কে জন্ম নিয়েছিলেন ও মৃত্যুবরণ করেছিলেন——-

 

আজ যাদের জন্মদিন—-

১৯০৪ – বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায় প্রখ্যাত বাঙালি সাংবাদিক।

১৯১১ – পান্নালাল ঘোষ, বংশীবাদক।

১৯১২ – মিল্টন ফ্রিড্‌ম্যান, নোবেল বিজয়ী মার্কিন অর্থনীতিবিদ, পরিসংখ্যানবিদ।

১৯১৮ – পল বয়ার, আমেরিকান বায়োকেমিস্ট এবং শিক্ষাবিদ, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী।

১৯৩১ – বিশ্বের সেরা ১০ টেনিস সেরা তারকার কোচ নিক বলেতিয়েরি।

১৯৪৪ – জেরাল্ডিন চ্যাপলিন, ইংরেজি, ফরাসি এবং স্পেনীয় ভাষার বিশিষ্ট অভিনেত্রী।

১৯৪৬ – পি সি সরকার জুনিয়র, পুরো নাম প্রদীপচন্দ্র সরকার, ভারতীয় বাঙালি জাদুকর।

১৯৪৭ – মুমতাজ, ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী।

১৯৫৫ – আহমদ আবদুল কাদের, ইসলামি চিন্তাবিদ ও রাজনীতিবিদ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব

১৯৫৭ – মনতাজুর রহমান আকবর, বাংলাদেশী চলচ্চিত্র পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার।

১৯৬৫ – জে কে রাউলিং, ইংরেজ কল্পকাহিনী লেখিকা।

১৯৬৬ – ডিন কেইন, মার্কিন টিভি অভিনেতা। যিনি সুপারম্যান চরিত্রে অভিনয় করেছন।

১৯৮৯ – ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা, বেলারুশীয় টেনিস খেলোয়াড়।

১৯৯২ – কাইল লারসন, আমেরিকান রেস কার ড্রাইভার।

১৮০০ – ফ্রেডরিখ ভোলার, জার্মান রসায়নবিদ।

১৮৩৫ – ফ্রান্স এর ৫০ তম প্রধানমন্ত্রী হেনরি ব্রিসন।

১৮৭৫ – ফরাসি চিত্রকর জাক ভিয়ঁর।

১৮৮০ – মুন্সি প্রেমচাঁদ, আধুনিক হিন্দি এবং উর্দু ভাষার লেখক।

১৮৯১ – প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি চিত্রশিল্পী ক্ষিতীন্দ্রনাথ মজুমদার।

১৭০৪ – গাব্রিয়েল ক্রেমার, সুইজারল্যান্ডীয় গণিতবিদ।

১৭১৮ – ইংরেজ পদার্থবিদ জন ক্যান্টন।

১৭৩৬ – বিখ্যাত ফরাসী পদার্থবিদ চার্লস অগাষ্টিন কুলান।

১৫২৭ – দ্বিতীয় ম্যাক্সিমিলিয়ান, পবিত্র রোমান সম্রাট।

 

ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনের ঘটনাবলী—-

২০০৬ – কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ত্রো ছোটভাই রাউল কাস্ত্রোর কাছে সাময়িকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

২০০৭ – বাংলাদেশে অর্ধশত বছরের পুরনো খুলনার পিপলস জুট মিল আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়।

২০১২ – মাইকেল ফেলপস ১৯৬৪ সালে লারিসা লাথিনিয়ার গড়া অলিম্পিকের এক আসরে সর্বোচ্চ পুরস্কার বিজয়ের রেকর্ড ভাঙ্গেন।

১৯০৮ – স্যার ব্যাডেন পাওয়েল স্কাউট আন্দোলনের সূচনা করেন।

১৯১৯ – এয়েইমারে জার্মানি প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করে।

১৯২৭ – নাগপুরে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধে।

১৯৫৪ – ইতালীয় পর্বতারোহী দল প্রথম হিমালয়ের কে-২ শৃঙ্গে আরোহণ করেন।

১৯৭১ – এপোলো-১৫ মহাকাশ যান চাঁদে যাবার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

১৯৭২ – বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ইয়েমেন।

১৯৭৩ – বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় দক্ষিণ ভিয়েতনাম।

১৯৭৮ – চট্টগ্রামে এলপি গ্যাস কারখানা উদ্বোধন।

১৯৭৮ – চীনে শেক্সপিয়ারের রচনাবলীর উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।

১৯৯১ – সোভিয়েত-মার্কিন দূরপাল্লার পারমাণবিক অস্ত্রহ্রাস চুক্তি ‘স্টার্ট’ স্বাক্ষরিত হলে দুদেশের মধ্যে বিরাজমান পাঁচ দশক ব্যাপী বিরোধের অবসানে কার্যকর পদক্ষেপ ঘটে।

১৯৯২ – জর্জিয়া জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে।

১৯৯৫ – আজকের দিনে ভারতের হয়ে প্রথম মোবাইল ফোনে কলকাতার মহাকরণে বসে কথা বলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ইউনিয়ন কমিউনিকেশন মিনিস্টার সুখরামের সাথে।

১৮০৬ – বৃটিশ উপনিবেশবাদীরা দক্ষিণ আফ্রিকার ‘কাপ’ এলাকা দখল করে নেয়।

১৮০৭ – লর্ড মিন্টো গভর্নর জেনারেল পদে অধিষ্ঠিত হন।

১৮৫৬ – নিউজিল্যান্ডের শহর ক্রাইস্টচার্চকে সিটি হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

১৬৫৮ – আওরঙ্গজেব ভারতের মুঘল সম্রাট ঘোষিত হন।

১৪৯৮ – প্রথম ইউরোপীয় হিসেবে ক্রিস্টোফার কলম্বাস পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের ত্রিনিদাদ আবিষ্কার করেন।

 

এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন যারা—-

 

২০০৯ – ইংলিশ ফুটবলার এবং ব্যবস্থাপক বব্বি রবসন।

২০১২ – আমেরিকান গায়ক ও গান লেখক বিল ডস।

২০১৪ – নবারুণ ভট্টাচার্য, ভারতীয় লেখক।

২০১৭ – জান মোরো, ফরাসি অভিনেত্রী, গায়িকা, চিত্রনাট্যকার এবং পরিচালক।

২০২২ – প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি সংগীত শিল্পী নির্মলা মিশ্র, (৩০ জুলাই রাত্রি ১২ টা ৫ মিনিটে)।

১৯৪০ – উধাম সিং , ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের শহীদ মার্ক্সবাদী বিপ্লবী।

১৯৪৩ – হেডলি ভেরিটি, পেশাদার ইংরেজ ক্রিকেটার।

১৯৪৪ – দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ চলাকালে খ্যাতনামা ফরাসী লেখক এ্যান্টনি দোসান্ত এক বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যবরণ করেন।

১৯৭১ – সালাহউদ্দিন মমতাজ, বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা।

১৯৮০ – মোহাম্মদ রফি, ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী।

১৯৮০ – শৈলেন্দ্রনাথ গুহরায়, ভারতে মুদ্রণ শিল্পের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও শ্রীসরস্বতী প্রেসের প্রতিষ্ঠাতা।

১৯৮১ – ওমর তরিজোস, পানামার স্বৈরশাসক।

১৯৯২ – কমিউনিস্ট নেতা রতন সেন সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হন।

১৮৭৫ – অ্যান্ড্রু জন‌সন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তদশ রাষ্ট্রপতি।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
রিভিউ

আজ ৩০ জুলাই, ইতিহাসের আজকের এই দিনে যা ঘটেছিল।

আজ ৩০ জুলাই। ইতিহাস ঘেটে দেখা যায় বছরের প্রতিটি দিনে ঘটেছে অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। আসুন আজকের দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় একনজরে দেখে নিই।  ইতিহাসের আজকের এই দিনে কী কী ঘটেছিল, কে কে জন্ম নিয়েছিলেন ও মৃত্যুবরণ করেছিলেন——-

 

দিবস—–

 

(ক) স্বাধীনতা দিবস, ভানাতু প্রজাতন্ত্র।

 

আজ যাদের জন্মদিন—-

১৯৪৫ – পাত্রিক মোদিয়ানো, ফরাসি ঔপন্যাসিক।

১৯৪৭ – ফ্রাঁসোয়াজ বারে সিনৌসি‌, ফরাসি ভাইরোলজিস্ট।

১৯৪৭ – আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার, অস্ট্রিয়ান-আমেরিকান বডিবিল্ডার, অভিনেতা, মডেল, ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদ।

১৯৪৮ – জঁ রেনো, মরোক্কো ও ফরাসি অভিনেতা।

১৯৫৫ – ববিতা, বাংলাদেশী অভিনেত্রী।

১৯৬০ – রিচার্ড লিংকলেটার, মার্কিন চলচ্চিত্র পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার।

১৯৬১ – লরেন্স ফিশবার্ন, মার্কিন অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক এবং চিত্রনাট্যকার।

১৯৬৪ – ইয়ুর্গেন ক্লিন্সমান, জার্মান ফুটবলার ও ফুটবল কোচ।

১৯৬৫ – টিম মানটন, ইংলিশ ক্রিকেটার।

১৯৬৯ – এরল স্টুয়ার্ট, সাবেক দক্ষিণ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ও রাগবি ইউনিয়ন খেলোয়াড়।

১৯৭০ – ক্রিস্টোফার নোলান, ইংরেজ-মার্কিন চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক এবং চিত্রনাট্যকার।

১৯৭৪ – হিলারি সোয়াঙ্ক, মার্কিন অভিনেত্রী।

১৯৭৫ – তাজিন আহমেদ, বাংলাদেশী অভিনেত্রী, সাংবাদিক ও উপস্থাপক।

১৯৮২ – জেমস অ্যান্ডারসন, ইংরেজ ক্রিকেটার।

১৯৯২ – ফাবিয়ানো কারুয়ানা, ইতালীয়-মার্কিন দাবাড়ু।

১৯৯৫ – ইরভিং লোজানো, মেক্সিকান ফুটবলার।

১৯৯৬ – সাবরিনা পড়শী, বাংলাদেশী সঙ্গীতশিল্পী।

১৮১৮ – এমিলি ব্রন্টি, ইংরেজ ঔপন্যাসিক ও কবি।

১৮৫৫ – জার্মান শিল্পপতি সিমেন্স কম্পানির প্রতিষ্ঠাতা জর্জ ভিলহেম ফন সিমেন্স।

১৮৬২ – নিকোলাই ইউদেনিচ, রাশিয়ান জেনারেল।

১৮৬৩ – হেনরি ফোর্ড, মার্কিন ব্যবসায়ী এবং বহু উৎপাদন পদ্ধতিতে ব্যবহৃত বিন্যাসকরণ সজ্জার জনক।।

১৮৭৪ – বিলি মেরেডিথ, ব্রিটিশ ফুটবলার।

১৮৮২ – বিপ্লবী সত্যেন্দ্রনাথ বসু ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক বিপ্লবী-শহীদ।

১৮৮৬ – ভারতীয় চিকিৎসক ও সমাজ সংস্কারক মুথুলক্ষ্মী রেড্ডী।

১৮৮৭ – কাজী মোতাহার হোসেন, বাংলাদেশী পরিসংখ্যানবিদ, বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ।

১৮৯৩ – ফাতেমা জিন্নাহ, পাকিস্তানি দন্তচিকিৎসক, জীবনীলেখক, রাজনীতিবিদ ও পাকিস্তানের নেতৃত্বস্থানীয় প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম একজন।

১৮৯৮ – হেনরি মুর, ইংরেজ শিল্পী।

 

ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনের ঘটনাবলী—-

১৯১৪ – প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু।

১৯৩৫ – বিশ্বখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা পেঙ্গুইনের বই প্রথম প্রকাশিত হয়।

১৯৪৮ – লিভারপুলে বিশ্বের প্রথম বন্দর রাডার কেন্দ্র স্থাপিত হয়।

১৯৫৭ – ভারতে রপ্তানিতে সহায়তা প্রদানের জন্য ইসিজিসি লিমিটেড (পূর্বতন এক্সপোর্ট ক্রেডিট গ্যারান্টি কর্পোরেশন লি) গঠিত হয়।

১৯৬৯ – মার্কিন নভোখেয়া মেরিনার ৬-এর মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে মঙ্গল গ্রহ থেকে পৃথিবীতে ছবি পাঠানো হয়।

১৯৮০ – পূর্ব অষ্ট্রেলিয়ার দ্বীপ দেশ ভানুয়াটো স্বাধীনতা লাভ করে।

১৯৯৮ – জাপানে কাইজো ওবুচি নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

১৬০২ – মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়ায় হল্যান্ডের রাজনৈতিক প্রভাব ও উপনিবেশিক তৎপরতা শুরু হয়।

১৬২৯ – ইতালির নেপলস শহরে ভূমিকম্পে ১০ হাজার লোকের প্রাণহানি।

১৬৫৬ – পোলিশদের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে ওয়ারশ যুদ্ধের অবসান হয়।

১৫০২ – ক্রিস্টোফার কলম্বাস তার ৪র্থ সমুদ্র যাত্রায় হন্ডুরাসের উপকূলবর্তী গুয়ানায়া দ্বীপে অবতরণ করেন।

৭৬২ – আব্বাসীয় খলিফা আল-মনসুর কর্তৃক বাগদাদ শহরের প্রতিষ্ঠা।

 

এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন যারা—-

২০০৪ – হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, ভারতীয় বাঙালি রাজনীতিবিদ, ইতিহাসবিদ ও শিক্ষাবিদ।

২০০৭ – (ক) ইংমার বারিমান, সুইডিশ মঞ্চ ও চলচ্চিত্র নির্দেশক।

(খ) – মিকেলাঞ্জেলো আন্তোনিওনি, ইতালীয় আধুনিকতাবাদী চলচ্চিত্র পরিচালক।

২০২০ – সোনম শেরিং লেপচা ভারতের লেপচা সংস্কৃতির ধারক,বাহক ও সংরক্ষক।

১৯৪৭ – জর্জ চ্যালেনর, ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটার।

১৯৫৬ – যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি, বাঙালি পণ্ডিত ও বাঙলা শব্দকোষ প্রণেতা।

১৯৮০ – গোপাল ঘোষ, বাঙালি চারুশিল্পী।

১৯৮৪ – মরিস ট্রেমলেট, ইংরেজ ক্রিকেটার।

১৯৮৭ – বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়, ভারতীয় বাঙালী ঔপন্যাসিক ও ছোট গল্পকার।

১৮৯৮ – অটো ফন বিসমার্ক, জার্মান সাম্রাজ্যের স্থপতি ও প্রথম জার্মান চ্যান্সেলর।

১৭৭১ – টমাস গ্রে, ইংরেজ কবি।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
উপন্যাস

দামাল মেয়ে কুহেলি (ধারাবাহিক উপন্যাস, একাদশ পর্ব) : দিলীপ রায়।

কুহেলির ভীতি তখনও কাটেনি । সারা শরীরে আতঙ্কের ছাপ । গত রাত্রের ঘটনা কুহেলিকে ভাবিয়ে তুলেছে । দৈনন্দিন জীবনে সাধারণত তার একটাই সমস্যা, এলাকার উটকো ও উঠতি ছেলেপুলে নিয়ে । কেননা যুবতী কুহেলির শারীরিক সৌন্দর্য সকলের নজরকাড়া । গাঁয়ে গঞ্জের ছেলেপুলে ছাড়াও তার দোকানের খরিদ্দারদের মধ্যেও অনেকের কুহেলির প্রতি অতিরিক্ত টান । সেটা সামলাতে কুহেলিকে হিমসিম অবস্থা । তার উপর জুটলো নারী পাচারকারীদের কুৎসিত চক্রান্ত । কানাঘুঁষায় কুহেলি যতোটুকু বুঝেছে, তাকে বিদেশে চালান করে দিতে পারলে অনেক টাকার লেনদেন ! যার জন্য নারী পাচারকারীদের কুহেলি এখন টার্গেট । পুলিশের সক্রিয় সহযোগিতায় এযাত্রায় নিস্তার পেলো বটে, কিন্তু ভবিষ্যতে এ্যালার্ট না থাকলে যে কোনো সময়ে বিপদ অনিবার্য ।
“চিনি ছাড়া দুটো চা । সঙ্গে প্যাটিস বিস্কুট ?” কাঞ্চন নগরের সতীশ কাকা কুহেলিকে বললেন । সতীশ কাকার সঙ্গে কাকীমা রয়েছেন ।
“এত সকালে কোথায় চললেন সতীশ কাকা ?” কুহেলি কৌতুহলবশত জিজ্ঞাসা করলো ?
“আর বলো না । তোমার কাকীমার তিনদিন যাবৎ জ্বর । কিছুতেই কমছে না । গত রাত্রে তীব্র আকার ধারন করেছিল । জলপট্টি দিয়ে কোনোরকমে সামাল দিয়েছি । এখন চললাম ভরতপুরের কল্যাণ ডাক্তারবাবুর কাছে । বাস আসতে দেরী, সুতরাং তোমার দোকানে বসে চা খাওয়া যাক ।“ কুহেলির দিকে তাকিয়ে আবার সতীশ কাকা জিজ্ঞাসা করলেন, “শুনলাম, তোমাকে নাকি নারী পাচারকারীরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো ? এটা কী সত্যি ?”
“পাচারকারীরা আমাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো” এই খবরটা আপনাকে কে জানালো কাকা ?
“গাঁয়ে এটা নিয়ে যত্রতত্র আলোচনা চলছে । সেখান থেকে শোনা । আমি অবশ্য কথাটা বিশ্বাস করিনি । তোমার কাছে আসল ঘটনা শোনার জন্য উদগ্রীব !” সতীশ কাকা উত্তর শোনার জন্য কুহেলির দিকে তাকিয়ে রইলেন ।
“নারী পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়েছিলাম, এটা ঠিক । কিন্তু পুলিশের সক্রিয় তৎপরতার জন্য বেঁচে গেছি । নারীপাচারকারীরা অবশেষে তুলে নিয়ে পালাতে পারেনি ।“
“বাস এসে গেছে । আমরা চললাম ।“ বলেই সতীশ কাকা ও কাকীমা বাসে উঠে পড়লেন ।
কুহেলি বুঝতে পারলো, তাকে নিয়ে গাঁয়ের মানুষের মধ্যে ভুল খবর রটেছে যেটা কাম্য নয় । তা ছাড়া কিছু মানুষ তিলকে তাল করছেন । তাই কুহেলি ঠিক করলো সন্ধ্যাবেলা কানাই কাকাকে বলবে সঠিক খবরটা গাঁয়ের মানুষদের বলতে । যাতে মানুষ আর ভুল খবর রটাতে না পারেন ! সেই মতো কানাই কাকা গাঁয়ের মানুষদের ঘটনাটা বোঝালো এবং গাঁয়ের মানুষ ব্যাপারটা বুঝতে পেরে সকলেই কুহেলির পাশে দাঁড়ালেন । কুহেলিকে অভয় দিয়ে গ্রামবাসীরা জানিয়ে দিলেন, “যেকোনো সমস্যায় গ্রামবাসীরা তার পাশে আছে ।“
গ্রামবাসীদের স্বতস্ফূর্ত সাড়া পেয়ে কুহেলির চোখে জল এসে গেলো । দুর্দিনে গ্রামবাসীরা তার পাশে আছেন এটা জেনে আবেগে কুহেলির চোখে জল । হাত জোড় করা অবস্থায় কুহেলি গ্রামবাসীদের সামনে দাঁড়িয়ে রইলো । মুখ ফুটে কিছু বলতে পারলো না । শুধুমাত্র চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো মাটিতে ।
তারপর বেশ কিছুদিন কেটে গেলো ।
কুহেলি দোকান নিয়ে ব্যস্ত ।
এদিকে সরকারি তৎপরতায় কাঞ্চন নগরের মোড়ের রাস্তা প্রশস্ত করার কাজ শুরু হলো । একই সাথে ভরতপুর যাওয়ার রাস্তা বাড়ানোর কাজ শুরু হলো যাতে রাস্তা দিয়ে অন্তত তিনটি গাড়ি একসঙ্গে চলতে পারে অর্থাৎ আপে দুটি ও ডাউনে একটি কিংবা আপে একটি ও ডাউনে দুটি বাস বা গাড়ি অনায়াসে যাতায়াত করতে পারে । বলা চলে একটা বিশাল কর্মযজ্ঞ !
কাঞ্চন নগরের মোড়ের রাস্তা বড় হলেও, সমস্ত দোকানদারদের দোকান ঘর যার যার জায়গায় রইলো । যদিও তাদের দোকান সরাতে হলো । দোকান সরাতে গিয়ে লাভ হলো কুহেলির । এই সুযোগে রাস্তার পাশে তার দোকান ঘর আরও বাড়াতে পারলো । ফলে অনেকটা জায়গা জুড়ে তার দোকান ঘর । দোকানের মধ্যে একদিকে খরিদ্দারদের বসার জায়গা ও অন্যদিকে দোকানের সাজ-সরঞ্জাম । সুযোগ পেয়ে কুহেলি পুরো জায়গাটা জুড়ে মুলি বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘর বানালো । ভবিষ্যতে আর্থিক সুযোগ ঘটলে দোকান ঘর পাকা করার চিন্তা তার মাথায় ঘুরপাক খেলো । আপাতত মুলি বাঁশের বেড়া ও উপরে টিনের চালা ।
রাস্তা বড় করার জন্য কুহেলির আরও একটা সুবিধা । সেটা হচ্ছে, কুহেলির দোকান ঘরটি ঠিক বাস স্ট্যান্ডের প্যাসেঞ্জারদের বসার ঘরের পাশে । বসার ঘরটি আধুনিকভাবে স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে তৈরী করা । ফলে বাস স্ট্যান্ড দিয়ে যাতায়াত করা সমস্ত প্যাসেঞ্জারের দৃষ্টি কুহেলির দোকানে পড়বেই । সুতরাং তার দোকানে খরিদ্দার বাড়বে বই কমবে না ।
মুলি বাঁশের বেড়া দিয়ে দোকান ঘর বানাতে গিয়ে কিছুটা ধার করতে হলো কুহেলিকে । তবে দোকানের বেচা-কেনা লক্ষ করে তার বিশ্বাস, অচিরেই কুহেলি ধার শোধ করতে পারবে ।
ক্রমশ কাঞ্চন নগর মোড়ের বাস স্ট্যান্ড জনপ্রিয় হয়ে উঠছে । লোকজনের যাতায়াত বাড়ছে । অনেক দোকান হওয়ার কারণে স্থানীয় মানুষের আনাগোনা বেড়েছে । সবজির দোকান, মাছ-মাংসের দোকান কাঞ্চন নগরের মোড় জুড়ে বসছে । বিশেষ করে সবজিওয়ালা রাস্তার পাশে চার কোনায় চারটি বাঁশ পুঁতে মাথার উপরে পলিথিন টাঙিয়ে সবজি নিয়ে রোজ বসছে । মাছের ব্যবসায়ীরাও তদ্রূপ, মাথার উপর শেড দিয়ে মাছ বিক্রি করছে । ফলে কাঞ্চন নগরের মোড় এখন জমজমাট !
কুহেলির দোকান আরও সাজালো । এখন তার দোকানে চা ছাড়াও রুটি-ঘুগনি পাওয়া যাচ্ছে । এছাড়া রয়েছে পাকা কলা ও পাউরুটি । অনেক সবজিওয়ালা কিংবা মাছওয়ালা পাউরুটি ও কলা খেতে অভ্যস্ত । তাই সবরকম ব্যবস্থাপনা । কুহেলির দোকানের খাবারের গুণগত মান উন্নত থাকার কারণে খরিদ্দারের ভিড় ক্রমশ বাড়ছে । বলা চলে খরিদ্দারদের ভিড় চোখে পড়ার মতো । সমস্ত খরিদ্দারদের আবদার হাসমুখে সামলায় কুহেলি । কুহেলির চরিত্রের এটা একটা বড় গুণ, হাসি মুখে মানুষের সঙ্গে ব্যবহার । ইতিমধ্যে, কুহেলির খরিদ্দারদের দাদা, কাকা, জ্যাঠা, পাতানো হয়ে গেছে । লোহাদহের গুণধর বাড়ুই টোটো চালান । বয়স সত্তরের আশ-পাশ । ছেলে-বৌমা তাঁকে দেখ-ভাল না করার জন্য তিনি নিত্য টোটো চালান । সারাদিনে যেটুকু আয়, তাতেই তাঁর ডাল-ভাত জুটে যায় । সেই গুণধর টোটোওয়ালা কুহেলিকে নাতনি সম্বোধনে ডাকেন । ভোরবেলায় ঘুম ভাঙলেই টোটো নিয়ে সোজা কাঞ্চন নগরের মোড় । কাঞ্চন নগরের মোড়ের মাছের ব্যবসায়ী লোহাদহের সুখকরকে টোটো থেকে নামিয়ে গামছায় কপালের ঘাম মুছতে মুছতে কুহেলির দোকানে ঢুকে প্রথমেই তাঁর ডাক, “নাতনী, বড্ড খিদে পেয়েছে । আমাকে চা-পাউরুটি দাও !” ঐ ডাক শুনে কুহেলি হন্তদন্ত হয়ে পাউরুটি সেঁকে একটা প্লেটে সাজিয়ে গুণধর দাদুর সামনে ধরে বলবে, “পাউরুটি রেডি । চায়ের সাথে ভিজিয়ে খাও ।“ যদি তরকারি বা ঘুগনি তৈরী হয়ে যায়, সেই ক্ষেত্রে দাদুকে তরকারির সাথে পাউরুটি পরিবেশন এবং তারপর একগাল হাসি । ঐ হাসি দেখে মাঝে মাঝে দাদুকে বলতে শোনা যায়, “লোকে ঔষধ খাইয়ে লোককে পাগল বানায়, কিন্তু তুই তোর হাসি দিয়ে লোককে পাগল বানাবি !”
“তুমি কী আমার হাসিতে পাগল, দাদু ?” দাদুর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে কুহেলি কথাটা জিজ্ঞাসা করলো ।
বয়স থাকলে অবশ্যই পাগল হতাম ! তারপর দাদুর প্রাঞ্জল হাসি ! সেই হাসির তাৎপর্য বোঝা খুব কঠিন ! কিন্তু গুণধর দাদুর অকৃত্রিম ভালবাসা কুহেলির চলার পথের সারাদিনের তাজা অক্সিজেন ! প্রায়দিন গুণধর বাড়ুই কুহেলির দোকানের প্রথম খরিদ্দার । তাই কুহেলিকে খুব ভোরবেলা এসে দোকান খুলতে হয় । প্রথম প্রথম অতো ভেরবেলায় দোকান খুলতে বিরক্ত লাগতো কুহেলির । তা ছাড়া ঘুম থেকে ভোরবেলায় ওঠা কুহেলির এই সেদিন তার বাবা থাকা পর্যন্ত অভ্যাস ছিলো না । কিন্তু এখন, পরিস্থিতির চাপে বাধ্য হয়ে ঘুম থেকে ভোরবেলায় ওঠা ।
দুপুরবেলায় প্রত্যেকদিন দোকানেই নিজের জন্য ভাত বানিয়ে নেয় । সাধারণ মানের খাওয়া-দাওয়া । সকালে ঘর থেকে বেরিয়ে রাত্রিতে ঘরে ঢোকা । ঘরে ঢুকে স্থান সেরে খাওয়া-দাওয়া এবং তারপর বিছানায় শুতে যাওয়া । ছোটবেলার ছোট্ট কুহেলি এখন চায়ের দোকানদার । ভাবতেই তার কেমন লাগে । অথচ বেঁচে থাকার জন্য স্বল্প পুঁজিতে চায়ের দোকান দেওয়া ছাড়া অন্য কোনোভাবে উপার্জনের পথ খোলা ছিলো না । তবে এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার ক্রমশ উন্নতি হওয়ার কারণে কুহেলির ইচ্ছা, জায়গাটার উপর আধুনিক মানের রেস্টুরেন্ট খোলা ! যার জন্য রেস্টুরেন্ট খোলার আদব-কায়দা, বিভিন্ন রকমের রান্নার রেসেপি, রান্নার টিপস, ইত্যাদি নিয়ে ইতিমধ্যে পড়াশুনা শুরু করে দিয়েছে । মানুষের রুচি ও স্বাস্থ্যকর খাবারের রেস্টুরেন্ট বানানোর প্রতি তার খুব ঝোঁক ! রেস্টুরেন্ট খুলে উপার্জনের মাধ্যমে সারাজীবন বেঁচে থাকতে চায় কুহেলি ! সেইজন্য পরবর্তী ডিগ্রি নিয়ে অতটা উতলা নয় ।
পরেরদিন ভোরবেলা ।
ভোর সাড়ে-পাঁচটায়, গুণধর দাদুর ডাক, “নাতনী, চা দাও ?”
সবে কুহেলি দোকান খুলেছে । তাই দাদুর দিকে তাকিয়ে বললো, “দাদু, এক মিনিট জিরিয়ে নাও ! আমি তোমার চা বানিয়ে দিচ্ছি ।“
তুমি এখনও উনুন জ্বালাওনি ? উনুন না জ্বললে চা বানাবে কী করে ?
দাদু, তুমি কিচ্ছু ভেবো না । দরকার হলে আমি স্টোভে চা বানিয়ে দিচ্ছি ।
ঠিক আছে নাতনী । আমি চাপা কল থেকে হাত-মুখ ধুয়ে আসছি । দাদু বেরিয়ে যেতেই একজন হাল্কা বয়সের যুবক তার দোকানে উদয় হলো । চেহারাটা মিষ্টি । এমনকি পোশাক পরিচ্ছদও পরিপাটি, কিন্তু মুখটা শুকনো । বলা চলে মুখমণ্ডলে দুঃখজনক পরিস্থিতির ছাপ । তা ছাড়া কেমন যেনো উদাসী । দোকানে ঢুকে কুহেলিকে দেখে কিছুটা আড়ষ্ট । সম্ভবত যৌবন বয়সের মহিলা চায়ের দোকানদারকে আশা করেনি । অতো সকালে চায়ের দোকানে একজন অল্প বয়সের মেয়েকে দেখবে সেটাও তার চিন্তার বাইরে । যদিও কুহেলির সবটাই অনুমান ।
কুহেলিকে দেখে অবাক বিস্ময়ে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলো । কুহেলির দিক থেকে চোখ ফেরাতে চাইছে না । ভাবনার জগতে নিমজ্জিত । তা ছাড়া এমন একটা ভাব, যেনো কুহেলির মধ্যে সে কিছু একটা খুঁজছে !
এরপর আর চুপ থাকতে পারলো না কুহেলি । যুবক ছেলেটির খুব কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলো, “আপনি কিছু বলবেন, নাকি চা খাবেন ?”
আচমকা কুহেলির প্রশ্নে ছেলেটি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো । তারপর সম্বিৎ ফিরে পেয়ে এক গাল হাসি দিয়ে কুহেলিকে বলল, “এক কাপ চা পাওয়া যাবে ? আমি পরের বাসটা ধরবো ।“
“নিশ্চয়ই । আপনি বসুন । আমি চা বানিয়ে আনছি ।“ পুনরায় ছেলেটির দিকে তাকিয়ে কুহেলি বলল, “চায়ে কী চিনি দেবো ।“
“চিনি দেবেন, কিন্তু খুব কম ।“ উত্তর দিয়েই আবার কুহেলির দিকে কৌতুহল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ।
ইতিমধ্যে উনুন ধরে গেছে । উনুনে চা বসালো । সেই সময় গুণধর দাদু পুনরায় দোকানে ঢুকে, “নাতনি, আমার চা কী হলো ?”
দাদুর প্রশ্নের উত্তরে কুহেলি বলল, “উনুনে চা বসিয়েছি, আর দু-মিনিট ।“
চা বানিয়ে এবার মাটির ভাঁড়ে ঢাললো । ছেলেটির দিকে চায়ের ভাঁড় এগিয়ে ধরে কুহেলি বলল, “আপনার চা ।“
চায়ের ভাঁড় ধরতে যাবে এমন সময় বাসের হুইসেল ।
বাস ঢুকছে দেখতে পেয়ে চায়ের ভাঁড় নিলো না যুবক ছেলেটি । উল্টে হাত জোড় করে কুহেলির দিকে তাকিয়ে বলল, “বাস এসে গেছে । এই বাসটা মিস করলে চাকরির পরীক্ষা কেন্দ্রে ঠিক সময়ে পৌঁছাতে পারবো না । আমাকে মাফ করবেন । অন্য সময় এসে আপনার দোকানে বসে চা খেয়ে যাবো । কথা দিলাম ।“ কুহেলির উত্তর শোনার ধৈর্য নেই । ছুটে বাসে উঠে পড়লো । জানালার পাশের সীটে বসে এক দৃষ্টিতে কুহেলির দিকে তাকিয়ে রইলো । কুহেলির হাতে চায়ের ট্রেতে তখনও চায়ের ভাঁড়ে গরম ধোঁয়া উড়ছে । কুহেলিও এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মনে মনে ভাবলো, যুবক ছেলেটি তার অনেকদিনের চেনা !
( চলবে )

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায় এর প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

বাংলা গানের কণ্ঠশিল্পী জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। বৃটিশ ভারতের কলকাতার টালিগঞ্জে তার মাতুলালয়ে ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ২১ শে ডিসেম্বর প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম। আদি নিবাস ছিল অধুনা বাংলাদেশের ঢাকা বিক্রমপুরের বাহেরক গ্রামে। সেখানকার চট্টোপাধ্যায় পরিবার বরাবরই সঙ্গীতে অনুরক্ত ছিল। পিতা মণিভূষণ চট্টোপাধ্যায় চাকুরিসূত্রে সপরিবারে কলকাতার ভবানীপুরে থাকতেন। তিনি গজল,ঠুমরি দাদরায় ছিলেন দক্ষ। প্রতিমা এক বৎসর বয়সেই পিতৃহারা হলে মাতা কমলাদেবীর প্রবল ইচ্ছায় সঙ্গীত জগতে প্রবেশ করেন। আর্থিক অভাবের মধ্যেও পয়সা জমিয়ে হারমোনিয়াম কিনে ছিলেন এবং প্রথম প্রথম গান শিখতে লাগলেন মায়ের কাছেই।পরে ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়ের শিষ্য বিশিষ্ট সংগীত শিক্ষক প্রকাশকালী ঘোষালের কাছে।

 

শৈশবে সাত-আট বছর বয়সে ছুটিতে এক বার ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে এসে ঢাকা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটে। সেই শৈশবে ছুটিতে এক বার ঢাকায় আত্মীয়বাড়ি গিয়েছেন, আশপাশের লোকজন তাঁর গান শুনে তাজ্জব। এক গুণগ্রাহী ঢাকা রেডিয়োয় যোগাযোগ করিয়ে দিলেন। সেখানে শিশুবিভাগে গাইবার পরপরই ডাক এল কলকাতা বেতার থেকে। মাত্র এগারো বছর বয়সে ১৯৪৫-এ সেনোলা থেকে প্রথম রেকর্ড বেরিয়ে গেল ‘কুমারী প্রতিমা চ্যাটার্জী’ নামে। সুকৃতি সেনের কথা ও সুরে বেসিক গানের রেকর্ড। ‘প্রিয় খুলে রেখো বাতায়ন’, ‘মালাখানি দিয়ে আমারে ভোলাতে চাও’ গানগুলি বেশ জনপ্রিয় হল। জলসায় গান শুনেই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এলেন সঙ্গীতপ্রেমিক অমিয় বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্ভ্রান্ত পরিবারের সুদর্শন যুবক। কমলাদেবীকে প্রতিশ্রুতি দিলেন, গানের জগতে প্রতিমাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে যথাসাধ্য করবেন। তেরো পেরোতে না পেরোতেই স্বামীঘর করতে নবপরিণীতা প্রতিমা চলে এলেন টালিগঞ্জের সাহানগরে। সেখানেই তাঁর সন্তানদের জন্ম। এক মেয়ে, তার পরে ছেলে।

 

দক্ষিণ কলকাতার ‘মিলনচক্র’ ক্লাবে প্রতিমার গান শুনে যশস্বী শিল্পী-সুরকার সুধীরলাল চক্রবর্তী চমৎকৃত হন। তিনি ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে তার ‘সুনন্দার বিয়ে’ ছায়াছবিতে প্রতিমাকে দিয়ে ‘উছল তটিনী আমি সুদূরের চাঁদ’ গানটি গাওয়ান। আর সেই সাথে নেপথ্যগায়িকা হিসাবে আত্মপ্রকাশ। তারপর ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে’যদুভট্ট’ছায়াছবিতে কুন্দন লাল সায়গলের গাওয়া ‘বাবুল মোরা নইহার ছুট হি যায়ে’ বিখ্যাত গানটি তিনি গেয়েছিলেন। তবে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিপ্রাপ্ত পিনাকী মুখোপাধ্যায়ের “ঢুলি” চলচ্চিত্রে ( বৃন্দাবনী সারং রাগে) রাগাশ্রিত ‘নিঙাড়িয়া নীল শাড়ি শ্রীমতী চলে’ গানটি প্রতিমাকে খ্যাতির শিখরে পৌঁছে দিয়েছিল। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ও অভিভূত হয়েছিলেন। তাই এক সাংবাদিক যখন তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, গায়িকাদের মধ্যে কার গলাটি তাঁর সবচেয়ে সুরেলা লাগে, তিনি এক ঝটকায় বলে দিলেন, ‘‘প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়।’’

পরে ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে হেমন্তর সুরে ‘শাপমোচন’ছায়াছবিতে চিন্ময় লাহিড়ীর সঙ্গে ‘পটদীপ’ রাগে দ্বৈতকণ্ঠে গাইলেন ‘ ত্রিবেণী তীর্থপথে কে গাহিল গান’। স্বকীয় গায়কির গুণে কঠিন গানেরও সূক্ষ্ম কারুকাজে অনায়াসে বিচরণ করতে থাকলেন তিনি। বলা যায় কয়েক দশক জুড়ে ‘যদুভট্ট, ‘ঢুলি’, ‘শাপমোচন’, ‘ছুটি’, ‘চৌরঙ্গী’, ‘পরিণীতা’, ‘দাদাঠাকুর’ ইত্যাদি অজস্র ছায়াছবি ভরে আছে প্রতিমার গানে। অন্যদিকে আধুনিক গানের মধ্যেও তার গাওয়া ‘বাঁশবাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই’,’একটা গান লিখো আমার জন্য’ ইত্যাদি অজস্র অবিস্মরণীয় গান তার কণ্ঠে কালজয়ী আখ্যা পেয়েছে। ছায়াছবি, আধুনিক গানের পাশাপাশি রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি, ভজন, ভক্তিগীতি, কীর্তন, কাব্যগীতি, অতুলপ্রসাদের গানেও প্রতিমা সমান উজ্জ্বল ছিলেন। কলকাতার আকাশবাণীতে রম্যগীতিও গেয়েছেন।

 

অসংখ্য গানের মধ্যে তাঁর গাওয়া জনপ্রিয় কিছু গান : ‘আজি মুরলী বাজে প্রেম বৃন্দাবনে’,  ‘আন্ধার আমার ভালো লাগে’,  ‘আবীরে রাঙ্গালো কে আমায়’, ‘আমার যেমন বেণী তেমনি রবে'(১৯৬০), ‘আমার বকুল ফুল কই’, ‘একা মোর গানের তরী’, ‘একটা গান লিখো আমার জন্য’, ‘কই গো কই গো কই’,  ‘খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো’, ‘ছলকে পড়ে কল্কে ফুলে’,  ‘প্রিয় খুলে রেখো বাতায়ন’,  ‘বাঁশ বাগানের মাথার ওপর’, ‘সাতরঙ্গা এক পাখি’ প্রভৃতি।

তিনি নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসাবে ‘ছুটি’ ‘চৌরঙ্গী’ ও ‘পরিণীতা’ ছায়াছবিতে গানের জন্য পরপর তিন বৎসর বি.এফ.জে.এ. পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৪ খ্রিস্টাব্দের ২৯শে জুলাই  কলকাতায় তিনি প্রয়াত হন।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবপেজ।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ঊনিশ শতকের বিশিষ্ট বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও গদ্যকার, প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি : দিলীপ  রায়।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর উনবিংশ শতকের একজন বিশিষ্ট বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও গদ্যকার । তাঁর পসম্পর্কে বলা যেতে পারে, তিনি লেখক, দার্শনিক, পণ্ডিত, অনুবাদক, প্রকাশক ও মানবহিতৈষী । সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য প্রথম জীবনেই বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেন । সংস্কৃত ছাড়াও বাংলা লিপি সংস্কার করে তাকে যুক্তিবহ ও অপরবোধ্য করে তোলেন । বাংলা গদ্যের সার্থক রূপকার তিনিই ।
বিদ্যাসাগরের যখন জন্ম (১৮২০), তখন শিক্ষা সংস্কারে ও বাংলা ভাষার আধুনিকরণের একটা ডামাডোল পরিস্থিতি । বিশৃঙ্খলার বাতাবরণ । শিক্ষার লক্ষ্য, পদ্ধতি ও পাঠক্রম নিয়ে চলছিল নানান বিতর্ক । অথচ বাঙালী সমাজ জানে, আধুনিক শিক্ষা ও সমাজ  সংস্কারে বিদ্যাসাগরের গৌরবময় অবদানের কথা ।

তাঁর নির্মিত বাংলা ভাষার ভিত্তির ওপরেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম অধ্যায় । বিদ্যাসাগর বাংলা গদ্যকে বোধগম্য এবং সবরকমের ভাব ও চিন্তা প্রকাশের যোগ্য করে তুলেছিলেন । তাই আজও বিদ্যাসাগরকে বাংলা গদ্যের জনক বলা হয় ।
আটপৌরে বাঙালি পোশাকে বিদ্যাসাগর ছিলেন সর্বত্রগামী । প্রবল জেদ ও আত্নসম্মানবোধ নিয়ে সরকারি চাকরি করেছেন, দ্বিরুক্তি না করে ইস্তফা দিয়েছেন । পাঠ্যবই লিখে ছেপে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করেছেন, দানের জন্য ধারও করেছেন ।  উনিশ শতকে সমাজ বদলের সব আন্দোলনেই তিনি ছিলেন পুরোভাগে । এমন ব্যক্তিত্ব সবসময়ে  ব্যতিক্রম ।
বিদ্যাসাগরের একটা আপ্ত বাক্য আজও সমাজজীবনে উজ্জীবিত, “কোনো বিষয়ে প্রস্তাব করা সহজ, কিন্তু নির্বাহ করে ওঠা কঠিন” । অথচ তিনি এককভাবে ধুতিচাদর পরে একটার পর একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে সেটা বাস্তবায়িত করে গেছেন, যেমন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্যঃ শিক্ষার সংস্কার ও বিধবা বিবাহ প্রচলন । এটা সর্বজনবিদিত, বিদ্যাসাগরের লড়াইটা ছিল একার লড়াই । বিদ্যাসাগর প্রসঙ্গে বিশ্বকবি  রবীন্দ্রনাথের  মন্তব্য পরিষ্কার, তিনি গতানুগতিক ছিলেন না, তিনি ছিলেন  স্বতন্ত্র, সচেতন ও পারমার্থিক ।
এটা অনস্বীকার্য যে,  বাঙালী সমাজে আজও বিদ্যাসাগরের প্রদীপ্ত উপস্থিতি ‘বর্ণপরিচয়’ দিয়ে । প্রাথমিক শিক্ষায় ‘বর্ণপরিচয়’ এর  মাহাত্ম্য সকলের জানা । মুর্শিদাবাদ  জেলার শক্তিপুর হাই স্কুলের বাংলা ক্লাসের  দিদিমণি আমার রচনা লেখার গঠন অবলোকন করে হঠাৎ তাঁর সম্মুখে তিনি আদর করে ডেকে আমাকে বললেন, “তুই বিদ্যাসাগরের ‘বর্ণপরিচয়’ গ্রন্থের নাম শুনেছিস” ? মাথা নেড়ে আমি  বিদ্যাসাগরের বর্ণপরিচয় গ্রন্থটির নাম শুনেছি জানালাম ।  তারপর চুপি চুপি বাংলা বিষয়ের শ্রদ্ধেয়া দিদিমণি বললেন, রোজ রাতে শোওয়ার আগে বিদ্যাসাগরের ‘বর্ণপরিচয়’  বইখানা পড়বি । রচনা লেখার সময়ে তোর বানানের জড়তা কেটে যাবে ।“  সুতরাং শৈশব থেকে বাংলা ভাষা শিক্ষার প্রেক্ষাপটে বিদ্যাসাগরের বর্ণপরিচয় আজও অমলিন । সেই বিদ্যাসাগরের জন্মের দ্বিশতবর্ষ অতিক্রান্ত  । তাই দুশো বছর ধরে শিক্ষা জীবনের বাস্তবতায় ও শিক্ষা বিকাশের প্রেক্ষাপটে বিদ্যাসাগর আজও প্রাসঙ্গিক ।
বিদ্যাসাগর যখন জন্মগ্রহন করেছিলেন সেই  সময়টা ছিল রামমোহনের যুগ, যিনি একজন শিক্ষিত ও অগ্রণী পুরুষ ছিলেন এবং সমাজ সংস্কারের অন্যতম কারিগর ।  ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর  মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । ঈশ্বরচন্দ্রের পিতামহ রামজয় তর্কভূষণ ছিলেন সুপণ্ডিত ও বলিষ্ঠ দৃঢ়চেতা পুরুষ। তিনিই ঈশ্বরচন্দ্রের নামকরণ করেছিলেন। বিদ্যাসাগরের বাবা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধায় কলকাতায় স্বল্প বেতনের চাকরিতে খুব কষ্টের মধ্যে দিন যাপন করতেন । পরিবার নিয়ে শহরে বাস করা তাঁর সাধ্যের অতীত ছিল। সেই কারণে বালক ঈশ্বরচন্দ্র গ্রামেই মা ভগবতী দেবী’র  সঙ্গে বাস করতেন।
পাঁচ বছর বয়সে ঈশ্বরচন্দ্রকে গ্রামের পাঠশালায় পাঠানো হয়। ১৮২৮ সালের ডিসেম্বর মাসে তাঁকে কলকাতার একটি পাঠশালায় এবং ১৮২৯ সালের জুন মাসে সংস্কৃত কলেজে ভর্তি করানো হয়। ভর্তির ছ’মাসের মধ্যেই পাঁচ টাকা বৃত্তি পান ।  তাঁর প্রতিভার অসাধারণ ক্ষমতা দেখে শিক্ষকেরা সকলে স্তম্ভিত । তিনি ছিলেন অত্যন্ত প্রতিভাবান ছাত্র এবং ১৮৩৯ সালের মধ্যেই বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেন। পরে তিনি দু-বছর ওই কলেজে ব্যাকরণ, সাহিত্য, অলঙ্কার, বেদান্ত, ন্যায়, তর্ক, জ্যোতির্বিজ্ঞান, হিন্দু আইন এবং ইংরেজি বিষয়ে অধ্যয়ন করেন।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কর্মজীবন শুরু করেন ফোর্ট উইলিয়াম (১৮৪১) কলেজের প্রধান পন্ডিত হিসাবে । ঐসময়েই  তাঁর ইংরেজি শিক্ষার যথাযথ শিক্ষালাভ । কেননা বিদ্যাসাগরকে সকলে জানতেন সংস্কৃতের পণ্ডিত হিসাবে । ইংরেজি হাতের লেখাও ছিল নজরকাড়া । ১৮৫০ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি সংস্কৃত কলেজের সাহিত্যের অধ্যাপক পদ লাভ করেন এবং পরের মাসে অর্থাৎ ১৮৫১ সালের ২২শে জানুয়ারী ঐ  কলেজের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি কলেজের অনেক সংস্কার করেন।  ঐ সময়েই ১৮৫১ সালে বিদ্যালয় দেখলেন, সংস্কৃত কলেজে গোড়া থেকেই  শুধুমাত্র ব্রাহ্মণ ও বৈদ্য সন্তানদের পড়বার অধিকার ছিল । কিন্তু বৈদ্যদের আবার ধর্মশিক্ষায় ছিল আপত্তি । স্বভাবতই প্রশ্ন উঠল কায়স্থ ও অন্যান্য হিন্দু বর্ণদের কথা । তখনকার পণ্ডিত সমাজের তোয়াক্কা না করে, বিদ্যাসাগর তদানীন্তন কাউন্সিল অফ এডুকেশনের সেক্রেটারিকে জানিয়ে দিলেন ব্রাম্মণ ও বৈদ্য ছাড়া অন্যান্য বর্ণের বিশেষ করে শূদ্রদের সংস্কৃত কলেজে প্রবেশে তাঁর আপত্তি নেই । যদিও সেই সময় সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপকরা বিদ্যাসাগরের মতে গররাজী ছিলেন, তথাপি বিদ্যাসাগরের মতটাকেই মান্যতা দিয়েছিলেন তদানীন্তনকালের কাউন্সিল অফ এডুকেশনের সেক্রেটারি । এবং পর পরই ১৮৫৪ সালের শেষে বিদ্যাসাগর হিন্দুদের সব শ্রেনীর জন্য সংস্কৃত কলেজের দরজা খুলে দেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন এবং সেই প্রস্তাব যথাসময়ে অনুমোদিত হয়েছিল ।
সংস্কৃত কলেজের সংস্কার ও আধুনিকীকরণ এবং বাংলা ও বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন ছাড়া,  শিক্ষা প্রসারে তাঁর আরও অবদান সর্বজনবিদিত ।  ১৮৫৪ সালে চার্লস উডের শিক্ষা সনদ গৃহীত হওয়ার পর সরকার গ্রামীণ এলাকায় শিক্ষা সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেয়। এ উদ্দেশে ১৮৫৫ সালের মে মাসে বিদ্যাসাগরকে সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ পদের অতিরিক্ত সহকারী স্কুল পরিদর্শকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে তিনি নদিয়া, বর্ধমান, হুগলি এবং মেদিনীপুর জেলায় স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। তিনিই প্রথম বাংলা লিপি সংস্কার করে বাংলা ভাষাকে সহজবোধ্য করে তুলতে চেয়েছিলেন । ১৮৫৫ সালে বাংলা নববর্ষের দিনে  বর্ণপরিচয়ের প্রথমভাগ  প্রকাশ করে তিনি বাঙালীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন ।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর  এশিয়াটিক সোসাইটি (কলকাতা) ও বেথুন সোসাইটিসহ আরও কিছু সংগঠনের সম্মানিত সভ্য ছিলেন। ১৮৫৮ সালে যাঁরা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ফেলো নির্বাচিত হন,  তিনি ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম।  ১৮৫৯ সালে তিনি “ক্যালকাটা ট্রেনিং স্কুল” স্থাপনে বিশেষ ভুমিকা পালন করেন। ১৮৬৪ সালে এই প্রতিষ্ঠানের নাম রাখা হয় “হিন্দু মেট্রেপলিটন ইসস্টিটিউট”। ইংরাজ অধ্যাপকের সাহায্য ছাড়া এবং কোনোরকম সরকারি সাহায্য ছাড়া, বিদ্যাসাগর স্কুলটিকে ১৮৭২ সালে প্রথম শ্রেণীর কলেজে পরিণত করেছিলেন । বর্তমানে এর নাম “বিদ্যাসাগর কলেজ”। এটি দেশের প্রথম কলেজ যার প্রতিষ্ঠাতা – পরিচালক – শিক্ষক স্কলেই ভারতীয় ।  এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠান থেকে শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন লাভ করেন।
ব্রাম্মণ হয়েও বিদ্যাসাগর ত্রিসন্ধ্যা জপ করেননি । কোনো  মন্দিরে যাননি এবং ঈশ্বর  বিষয়ক কোনো লেখা তিনি লেখেননি । বিদ্যাসাগর ছিলেন নাস্তিক । ধর্ম সম্বন্ধে  তিনি শুধু মনে করতেন জগতের কল্যাণসাধন ও বিদ্যাচর্চা । এপ্রসঙ্গে কবি শঙ্খ ঘোষের উক্তিটি প্রনিধাযোগ্য, ধর্মের কোন বহিরঙ্গ মানতেন না । তিনি, আচরণও করতেন না । এখন যেমন অনেকে বলেন, ধর্মটা ব্যক্তিগত ব্যাপার, অনেকটা সেইরকম ।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ, বিধবা বিবাহ আইন প্রণয়ন । সেদিনের সমাজে প্রচলিত প্রথার নির্মম পরিণতির জন্য নারীদের ভাগ্য বিপর্যয়ের সম্মুখীন আপামর জনতা অবলোকন করেছিলেন । শোনা যায়, একসময় রাজা  রাজবল্লভ নিজের বালবিধবা কন্যাকে পুনর্বিবাহ দেওয়ার অনুমতি সমাজের পণ্ডিতদের কাছ থেকে পেয়েও সেই বিবাহ কারও কারও বাধায় দিতে পারেননি ।  বিদ্যাসাগরের “বিধবা বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা” বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর দেশ ও সমাজ চমকে উঠেছিল । শেষ পর্য্যন্ত ১৮৫৫ সালের ১৬ই  জুলাই বিধবা বিবাহ আইন পাশ হয়  । তারপর ১৮৫৬ সালের ২৬শে জুলাই বিধবা বিবাহ আইন স্রকারিভাবে আইন হিসাবে মঞ্জর হয় ।   বিদ্যাসাগরের দরদী হৃদয় কেঁদেছিল সেকালের সমগ্র হিন্দু নারী সমাজের দুর্গতি দুর্দশায় । বিধবা বিবাহ আইন নামে পরিচিত ১৮৫৬ সালের আইনটি কেবলমাত্র বিধবা নারীর দ্বিতীয় বিবাহের স্বীকৃতি দেয়নি, আইনটি যেমন বিবাহকে আইনসিদ্ধ করে তেমনই মৃত স্বামীর এবং দ্বিতীয় বিবাহের এবং পৈত্রিক বিষয় সম্পত্তিতে অধিকার সুনিদ্দিষ্ট করে ।  বিভিন্নভাবে জানা যায়, ১৮৫৬ থেকে ১৮৬৭ পর্যন্ত মোট ৬০টি বিধবা বিবাহ সংঘটিত   হয়  ।  আরও      জানা   যায়,   বিদ্যাসাগর     ও  তাঁর বন্ধুরা মিলে ১৮৫৬ সালের ডিসেম্বর মাসে রক্ষণশীল সমাজের বিক্ষোভ এবং প্রচণ্ড বাধার মুখে ঘটা করে এক বিধবার বিবাহ দেন। পাত্র ছিল সংস্কৃত কলেজে বিদ্যাসাগরের একজন সহকর্মী। তা ছাড়া নিজের একমাত্র পুত্রের সঙ্গে বিধবার বিবাহ দিতে তিনি কুণ্ঠিত হননি। এতে একটা জিনিস পরিস্কার,  বিধবাবিবাহ আইন প্রণয়নে বিদ্যাসাগরের দৃঢ় সংকল্প শতভাগ সফল ।
তিনি হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় তৈরি করেন, যাকে পরবর্তীতে বেথুন কলেজ নামকরণ করা হয়। নারীদের শিক্ষার দিকে আনার জন্য তিনি একটি অর্থায়নের ব্যবস্থা করেন, যা নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠা ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত ছিল। এখান থেকে মেয়েদের শিক্ষার জন্য যাবতীয় অর্থের ব্যবস্থা করা হতো। ১৮৫৭ সালের নভেম্বর মাস থেকে ১৮৫৮ সালের মে মাস অবধি সমগ্র দক্ষিণবঙ্গে বিদ্যাসাগর ৩৫টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন।
বিদ্যাসাগরের দয়া এবং মানবিকতার জন্যে তিনি করুণাসাগর নামে পরিচিত । দরিদ্রদের দানে তিনি সর্বদাই মুক্তহস্ত ছিলেন ।  তিনি তাঁর দান এবং দয়ার জন্যে বিখ্যাত হয়েছিলেন । এখানে বিদ্যাসাগর সম্বন্ধে মাইকেল মধুসূদন দত্ত’র উক্তি প্রনিধানযোগ্য,
“বিদ্যার সাগর তুমি বিখ্যাত ভারতে,
করুণার সিন্ধু তুমি, সেই জানে মনে,
দীন যে, দীনের বন্ধু ! উজ্জ্বল জগতে
হেমাদ্রির হেম কান্তি অম্লান কিরণে” ।
তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন একটি ঐতিহ্যিক এবং রক্ষণশীল পরিবারে এবং সমাজ সংস্কারের জন্যে তিনি যুক্তিও দিতেন হিন্দু শাস্ত্র থেকে কিন্তু তিনি ছিলেন ধর্ম ও ঈশ্বর সম্পর্কে সন্দিহান মনের। তাঁর বোধোদয় গ্রন্থ যেমন তিনি শুরু করেছেন পদার্থের সংজ্ঞা দিয়ে । পরে সংজ্ঞা দিয়েছেন ঈশ্বরের,  যাঁকে তিনি বলেছেন সর্বশক্তিমান, সর্বত্র বিরাজমান চৈতন্যস্বরূপ।
তিনি তাঁর একক ও সহযোগীর উদ্যোগে রেখে গেলেন আধুনিক ব্যবহারযোগ্য একটি (উচ্চারণ অনুযায়ী ও মুদ্রণযোগ্য) বাংলা ভাষা, প্রাথমিক ও নীতিশিক্ষার বহু জনপ্রিয় গ্রন্থ, বাংলা মাধ্যম স্কুলব্যবস্থা ও নারীশিক্ষার পাকা বুনিয়াদ । মাতৃ/বাংলা ভাষার শিক্ষার আর একটি প্রাক শর্ত হল ভাল পাঠ্যপুস্তকের সুলভতা । বিদ্যাসাগরের সময় তার যথেষ্ট অভাব ছিল । বিদ্যাসাগরকেও অবতীর্ণ হতে দেখা যায় এক দিকে, বাংলায় ব্যকরণসিদ্ধ মুদ্রণযোগ্য অক্ষর ও বানান সংস্কার করে, নানা পাঠ্যপুস্তক রচনা, ছাপা ও বিপণনের আয়োজন । পাঠ্যপুস্তক রচনার পাশাপাশি ছাপা  বইয়ের সম্পাদনা ও সম্মার্জনার প্রতি তাঁর অখণ্ড মনোযোগ চিরদিন বজায় ছিল । একবার  তিনি হতদরিদ্র সাঁওতালদের মাঝে দিন কাটাচ্ছেন তিনি, সেই সময় (১৮৭৮) চর্যাপদের আবিস্কর্তা, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ও তাঁর এক সঙ্গী লখনউ যাওয়ার পথে এক রাত বিদ্যাসাগরের আতিথ্যগ্রহণ করেন । রাত্রে বিশ্রামের পর সকালে উঠে শাস্ত্রী মশাই দেখলেন, “বিদ্যাসাগর মহাশয় বারান্দায় পাইচারি করিতেছেন এবং মাঝে মাঝে টেবিলে বসিয়া কথামালা কি বোধোদয়ের প্রূফ দেখিতেছেন । প্রূফে  বিস্তর কাটকুটি  করিতেছেন । যেভাবে প্রূফগুলি পড়িয়া আছে, বোধ হইল, তিনি রাত্রেও প্রূফ দেখিয়াছেন । আমি বলিলাম, কথামালার প্রূফ আপনি দেখেন কেন ? তিনি বলিলেন, ভাষাটা এমন জিনিস, কিছুতেই মন  স্পষ্ট হয় না ; যেন আর একটা শব্দ পাইলে ভাল হইত ; — তাই সর্বদা কাটকুটি করি । ভাবিলাম — বাপ রে, এই বুড়ো বয়সেও ইহার বাংলার ইডিয়ামের ওপর এত নজর ।“ (সূত্রঃ অ-বা-প,পৃঃ৪/ ২৭-৯-১৯) ।
এই অনন্য ও  বিরাট ব্যক্তিত্বের মানুষটি ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। ধর্মের কোনও বহিরঙ্গ মানতেন না এমনকি, আচরণও করতেন না ।   অথচ চালচলনে তিনি ছিলেন নিতান্তই সাদাসিধে ।  খুব বিনয়ী  এবং জীবনে  দৃঢ় সংকল্প এবং উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে ছিলেন  তিনি দৃঢ় মনোভাবাপন্ন । তিনি ছিলেন  একাধারে মহান সমাজ সংস্কারক  অন্যদিকে এক জন শিক্ষাবিদ  এবং সমাজ পরিবর্তনের জন্য নিরলস কাজ করে গেছেন অবিরাম । ভারতে শিক্ষার প্রতি তার অবদান এবং নারীর অবস্থার পরিবর্তন জন্য তিনি চিরস্বরণীয়। তাঁর অবর্ণনীয় মাতৃ ভক্তি একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত । তাই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে আজও চর্চিত ।
হিন্দু ধর্মের কুসংস্কারের বিরোধী, বিধবা বিবাহের প্রচলনকারী, নারী শিক্ষার প্রবর্তক, উনবিংশ শতাব্দীর নবজাগরণের পুরোধা ব্যক্তিত্ব, সমাজ সংস্কারক, বর্ণপরিচয় ও বহু গ্রন্থের রচয়িতা, মহান শিক্ষাবিদ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিনের প্রাক্কালে তাঁর মহান স্মৃতির প্রতি আমার শ্রদ্ধার্ঘ্য ।
————————-০——————————

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আন্তর্জাতিক ব্যাঘ্র দিবস, জানুন দিনটি কেন পালিত হয় এবং পালনের গুরুত্ব।

সমগ্র বিশ্বে বাঘের সংরক্ষণের জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে প্রতি বছর ২৯ জুলাই তারিখে আন্তর্জাতিক ব্যাঘ্র দিবস বা বিশ্ব বাঘ দিবস পালন করা হয়।২০১০ সালে সেণ্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত ব্যাঘ্র অভিবর্তনে এই দিবসের সূচনা হয়। এই দিবস পালনের মুখ্য উদ্দেশ্য হল বাঘের প্রাকৃতিক আবাস রক্ষা করা এবং বাঘের সংরক্ষণের জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করে এর সম্পর্কে থাকা ভুল ধারণা ও ভয় দূর করা। প্রতি বছর বিভিন্ন কার্যসূচীর মাধ্যমে এই দিবস পালন করা হয়। বাঘ ভারতের জাতীয় পশু হওয়ার কারণে এই দিবসের মহত্ব এখানে বেশি ধরা হয়।
২০১০ সালে নভেম্বরে প্রথম বাঘ দিবস উদযাপিত হয়। বিংশ শতকের গোড়া থেকেই বন্য বাঘের সংখ্যা ৯৫ শতাংশ কমে যায়। এই বিষয়টি উপলব্ধি করার পরেই বাঘ দিবস পালনের বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়। রাশিয়ায় সেন্ট পিটার্সবার্গ টাইগাই সামিটে প্রথম বাঘ দিবস পালিত হয়। বাঘেদের স্বাভাবিক বাসস্থান রক্ষা করাই ছিল এই সামিটের মূল উদ্দেশ্য।
সামিটে যে ১৩টি দেশ অংশগ্রহণ করে, সেগুলি হল – ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, মায়ানমার, চিন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, লাওস, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া এবং রাশিয়া। এই সামিটে ২০২২-এর মধ্যে বন্য বাঘের সংখ্যা ৬০০০-এর বেশি বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়।
সপ্তম বিশ্ব বাঘ দিবস গোটা বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ভাবে পালন করা হয়। ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল প্রভৃতি বাঘের বেশি ঘনত্ব থাকা দেশের সাথে ইংল্যান্ড ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রেও বিভিন্ন স্থানীয় কার্যসূচীর মাধ্যমে এই দিবস পালন করা হয়। কিছু জনপ্রিয় তারকা তাদের সোসাল মিডিয়ায় নিজেদের প্রোফাইল ছবি পরিবর্তন করে এতে অংশগ্রহণ করেন। বিশ্ব বন্যপ্রাণী সংস্থা (WWF) এর রেঞ্জারসমূহে বিনিয়োগ করে “দ্বিগুণ বাঘ” অভিযান চালায়। কয়েকটি কোম্পানী বিশ্ব বন্যপ্রাণী সংস্থার সঙ্গে মিলিতভাবে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন।

তথ্য অনুযায়ী বিংশ শতকের গোড়া থেকেই বন্য বাঘের সংখ্যা ৯৫ শতাংশ কমে যায়। বিষয়টি উপলব্ধি করার পরেই বাঘ দিবস পালনের বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়।প্রতি বছর বিভিন্ন কার্যসূচীর মাধ্যমে এই দিবস পালন করা হয়। বাঘ ভারতের জাতীয় পশু হওয়ার কারণে এই দিবস আমাদের দেশের একটু বেশিমাত্রায় উপযোগী। গোটা বিশ্বে নগরায়নের কারণে বাঘেরা তাদের স্বাভাবিক বাসস্থানের ৯০ শতাংশই হারিয়ে ফেলেছে। বর্তামানে বিশ্বে বাঘের সংখ্যা ৪০০০-এরও কম।
আন্তর্জাতিক ব্যাঘ্র দিবস বা বিশ্ব বাঘ দিবস সমগ্র বিশ্বে বাঘের সংরক্ষণের জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে প্রতি বছর ২৯ জুলাই তারিখে পালন করা হয়। ২০১০ সালে সেণ্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত ব্যাঘ্র অভিবর্তনে এই দিবসের সূচনা হয়। বিশ্ব বাঘ দিবস পালনের মুখ্য উদ্দেশ্য হল বাঘের প্রাকৃতিক আবাস রক্ষা করা এবং বাঘের সংরক্ষণের জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা। এছাড়াও বাঘের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মনে গেঁথে থাকা ভুল ধারণা ও ভয় দূর করাও আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস পালনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্যে।
ভারতের জাতীয় পশু বাঘ হওয়ায় ভারতে এই দিনটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। বাঘেদের স্বাভাবিক বাসস্থান বৃদ্ধি ও বাঘের সংখ্যা বাড়ানো এই বাঘ দিবসের মূল উদ্দেশ্য।

।। তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
রিভিউ

আজ ২৯ জুলাই, ইতিহাসের আজকের এই দিনে যা ঘটেছিল।

আজ ২৯ জুলাই। ইতিহাস ঘেটে দেখা যায় বছরের প্রতিটি দিনে ঘটেছে অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। আসুন আজকের দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় একনজরে দেখে নিই।  ইতিহাসের আজকের এই দিনে কী কী ঘটেছিল, কে কে জন্ম নিয়েছিলেন ও মৃত্যুবরণ করেছিলেন——-

 

দিবস—–

(ক) জাতীয় থাই ভাষা দিবস, থাইল্যান্ড।

(খ) জাতীয় সংগীত দিবস,রোমানিয়া।

(গ) আন্তর্জাতিক ব্যাঘ্র দিবস

 

আজ যাদের জন্মদিন—-

 

১৯০৪ – জাহাঙ্গীর রতনজী দাদাভাই টাটা, ভারতীয় শিল্পপতি।

১৯০৫ – দগ হামারহোল্ড, সুয়েডীয় কূটনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ এবং লেখক।

১৯৩৫ – সৈয়দ হাসান ইমাম, বাংলাদেশী অভিনেতা, ও আবৃত্তিকার।

১৯৫১ – রেজাউল বারী ডিনা, বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ।

১৯৫৩ – অনুপ জালোটা ভজন ও গজলের খ্যাতিমান ভারতীয় গায়ক।

১৯৫৯ – সঞ্জয় দত্ত, ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেতা।

১৮৪১ – অঁরি ফেয়ল, ফরাসি খনি প্রকৌশলী ও খনির পরিচালক।

১৮৪৩ – ইয়োহানেস শ্মি‌ট‌, জার্মান ভাষাবিজ্ঞানী।

১৮৬৯ – বুথ টার্কিংটন, মার্কিন ঔপন্যাসিক ও নাট্যকার।

১৮৮৩ – বেনিতো মুসোলিনি, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ কালে ইতালির সর্বাধিনায়ক।

১৮৮৮ -দীনেশরঞ্জন দাশ, বাঙালি লেখক ও চলচ্চিত্র পরিচালক ।

১৮৯২ – উইলিয়াম পাওয়েল, মার্কিন অভিনেতা।

 

ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনের ঘটনাবলী—-

২০০৫ – জ্যোর্তিবিদরা সৌরজগতের অন্যতম বামন গ্রহ এরিস আবিষ্কার করেন।

১৯১১ – কলকাতার মোহনবাগান অ্যাথলেটিক ক্লাব ইষ্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্ট দলকে হারিয়ে প্রথম আইএফএ শীল্ড লাভ করে।

১৯২১ – এডলফ হিটলার জার্মানির জাতীয় সমাজতান্ত্রিক ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা নির্বাচিত হোন।

১৯৫৭ – আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি কমিশন গঠিত হয়।

১৯৫৮ – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্‌স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অথবা নাসা প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৮৭ – ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ইংলিশ চ্যানেলের নিচে সুরঙ্গপথ (ইউরোটানেল) নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

১৮৫১ – অ্যানেবেল দ্য গ্যাসপ্যারিস ১৫ ইউনোমিয়া অ্যাস্টরয়েড আবিষ্কার করেন।

১৮৫৮ – যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মধ্যে হ্যারিস চুক্তি স্বাক্ষরিত।

১৮৭৬ – ডা মহেন্দ্রলাল সরকার উচ্চ শিক্ষার জাতীয় প্রতিষ্ঠান ও বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সাইন্স কলকাতায় প্রতিষ্ঠা করেন।

১৮৯৯ – যুদ্ধ ও যুদ্ধপরাধ সংক্রান্ত প্রথম হেগ কনভেনশন স্বাক্ষরিত হয়।

১৫৬৭ – রাজা ষষ্ঠ জেমস স্কটল্যান্ডের সিংহাসনে আরোহণ করেন।

১৫৮৮ – ব্রিটিশ রাজকীয় নৌবাহিনী এ্যাংলো-স্প্যানিশ যুদ্ধে ফ্রান্সের গ্রেভলাইনস সমুদ্র তীরে স্প্যানিশ আর্মাডাকে পরাজিত ও ধ্বংস করে।

 

এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন যারা—-

২০০৪ – প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায় , বাঙালি নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী।

২০১৮ – রমাপদ চৌধুরী , বাঙালি ঔপন্যাসিক এবং গল্পকার।

১৯৬২ – রোনাল্ড ফিশার, বিখ্যাত পরিসংখ্যানবিদ।

১৯৬৯ – আন্দলিব সাদানী, ফার্সি ও উর্দু ভাষার কবি, গল্পকার, গবেষক এবং সমালোচক।

১৯৮৩ – রেমন্ড ম্যাসি, কানাডীয়-মার্কিন অভিনেতা, পরিচালক ও প্রযোজক।

১৯৮৩ – লুইস বুনুয়েল, স্পেনীয় চলচ্চিত্র পরিচালক ও সুরিয়ালিস্ট আন্দোলনের নেতা।

১৯৯৪ – ডরোথি মেরি হজকিন, ব্রিটিশ রসায়নবিদ, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী।

১৯৯৬ – ভারতরত্ন অরুণা আসফ আলী ,ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের সংগ্রামী ও সমাজকর্মী।

১৯৯৬ – মার্সেল পল শোয়োতজেনবার্গার, ফরাসী গণিতবিদ।

১৯৯৮ – জেরোম রবিন্স, মার্কিন পরিচালক, নৃত্যশিল্পী, নৃত্য পরিচালক ও মঞ্চ প্রযোজক।

১৮৯১ – ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ঊনিশ শতকের বিশিষ্ট বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও গদ্যকার।

১৮৯০ – ভিনসেন্ট ভ্যান গখ, ওলন্দাজ চিত্রকর।

১০৯৯ – পোপ দ্বিতীয় আরবান।

১১০৮ – ফরাসী রাজা প্রথম ফিলিপ।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজ বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস, জানুন দিনটি কেন পালিত হয় এবং দিনটি পালনের গুরুত্ব।

আজ বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস,প্রতি বছর ২৮ জুলাই বিশ্বব্যাপী পালিত হয় ৷ হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস আবিষ্কারক নোবেলবিজয়ী বিজ্ঞানী বারুচ স্যামুয়েল ব্লুমবার্গ জন্মদিনে চিকিৎসাবিদ্যায় তার অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রতিবছর এইদিনে (২৮ জুলাই) হেপাটাইটিস দিবস উদযাপন করা হয়। সরাবিশ্বের মতো ভারতেও গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা হয় এ দিবস। দিবসটির উদ্দেশ্য হচ্ছে সারাবিশ্বে হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি ও ই সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করা; রোগনির্ণয়, প্রতিরোধ ও প্রতিকার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা ৷বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, সারা বিশ্বে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ হেপাটাইটিসের কোনো না কোনো ধরনে আক্রান্ত। অথচ প্রতি ১০ জনের ৯ জনই জানেন না যে, তাদের হেপাটাইটিস আছে। প্রতিবছর গোটা বিশ্বে হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ১.৪ মিলিয়ন লোক মারা যায় ৷ ফলে ভাইরাসটি প্রতিরোধে অসচেতনতা ও সময় মতো শনাক্ত না হওয়ায় অসংখ্য রোগী চিকিৎসার আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। যা অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর ঘটনা বাড়াচ্ছে।

 

হেপাটাইটিস লিভার টিস্যুর প্রদাহ জনিত একটি জটিল রোগ। এই সংক্রমণে প্রথম দিকে কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না। অনেক ক্ষেত্রে আক্রান্তদের অল্প কিছু লক্ষণ দেখা যায়। এর মধ্যে রয়েছে বমি বমি ভাব, চামড়া হলুদ হওয়া, ক্লান্তি, পেট ব্যাথা, প্রস্রাব হলুদ ইত্যাদি।
সাধারণত এই লক্ষণগুলো কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হয় এবং অল্প কিছু লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার পর দীর্ঘ ভোগান্তি শেষে রোগীর মৃত্যু হয়। ভাইরাসটির সংক্রমণের পর রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে ৩০ থেকে ১৮০ দিন সময় লাগতে পারে।
হেপাটাইটিস ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন: হেপাটাইটিস এ, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, ডি এবং হেপাটাইটিস ই। এদের মধ্যে হেপাটাইটিস এ ও ই মূলত দূষিত খাবার এবং পানির মাধ্যমে ছড়ায়। হেপাটাইটিস বি প্রধানত যৌনবাহিত রোগ। তবে গর্ভাবস্থা বা প্রসবের সময় মা থেকে শিশুরাও এতে আক্রান্ত হতে পারে।
এছাড়া এটি রক্তের মাধ্যমে সংক্রমিত হতে পারে । হেপাটাইটিস সি সাধারণত সংক্রামিত রক্তের মাধ্যমে ছড়ায়। যেমন, সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদক ব্যবহারকারীদের একত্রে মাদক নেওয়ার সময় এ ভাইরাস ছড়াতে পারে। হেপাটাইটিস ডি শুধুমাত্র হেপাটাইটিস বিতে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সংক্রামিত করতে পারে।

 

বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপে অন্যতম আটটি অফিসিয়াল পাবলিক হেলথের মধ্যে একটি ৷ অন্যান্য দিবসসমূহ হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস, বিশ্ব রক্তদাতা দিবস, বিশ্ব ইম্যুনাইজেশন সপ্তাহ, বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস, বিশ্ব তামাক দিবস, বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস এবং বিশ্ব এইডস দিবস।

বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস এর এ বারের থিম “ এক জীবন, এক লিভার ” থিমের অধীনে, WHO-এর বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবসের প্রচারাভিযান দীর্ঘ, সুস্থ জীবনযাপনের জন্য হেপাটাইটিস থেকে লিভারকে রক্ষা করার গুরুত্ব তুলে ধরে।

 

পটভূমি—-

 

২০০৮ সালের ২৮ জুলাই বিশ্ববাসীকে সচেতন করতে হেপাটাইটিস দিবস পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করে ‘বিশ্ব হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্স’। ২০১১ সালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবসটিকে স্বীকৃতি দেয়। নোবেলবিজয়ী বিজ্ঞানী বারুচ স্যামুয়েল ব্লুমবার্গ হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস আবিষ্কার করেন। তিনি এই রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষাব্যবস্থা উন্নত করেন ও টিকা দেওয়া শুরু করেন। চিকিৎসাবিদ্যায় তার এই অবদানকে স্বীকৃতি জানাতে তার জন্মদিনে (২৮ জুলাই) বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস পালিত হয়।

 

 

 

বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস এখন ১০০ টিরও বেশি দেশে বিনামূল্যে স্ক্রীনিং, পোস্টার প্রচারাভিযান, বিক্ষোভ, কনসার্ট, টক শো, ফ্ল্যাশ মব এবং টিকাদান ড্রাইভের মতো ইভেন্টের মাধ্যমে স্বীকৃত হয়।  প্রতি বছর ডব্লিউএইচও এবং ওয়ার্ল্ড হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্স সারা বিশ্বের সমস্ত ঘটনার বিবরণ দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

 

বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস পালনের গুরুত্ব: —

 

হেপাটাইটিসের বিভিন্ন রূপ এবং সেগুলি কীভাবে সংক্রমিত হয় সে সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা;

ভাইরাল হেপাটাইটিস এবং এর সাথে সম্পর্কিত রোগ প্রতিরোধ, স্ক্রীনিং এবং নিয়ন্ত্রণকে শক্তিশালী করা;

হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন কভারেজ বৃদ্ধি এবং জাতীয় টিকাদান কর্মসূচিতে একীকরণ; এবং

হেপাটাইটিস একটি বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া সমন্বয়.

 

দিবসটির উদ্দেশ্য হচ্ছে সারাবিশ্বে হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি ও ই সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করা। রোগনির্ণয়, প্রতিরোধ ও প্রতিকার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা ৷

 

 

 

প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট থিম উপর ফোকাস.  থিমের তালিকা নিম্নরূপ:

২০১১: হেপাটাইটিস প্রত্যেককে, সর্বত্র প্রভাবিত করে।  এটা জানেন.  এটা মোকাবিলা.  তার মুখোমুখি.

২০১২: এটি আপনার ধারণার চেয়ে কাছাকাছি।

২০১৩: এই নীরব হত্যাকারীকে থামাতে আরও কিছু করতে হবে।

২০১৪: হেপাটাইটিস: আবার চিন্তা করুন

২০১৫: ভাইরাল হেপাটাইটিস প্রতিরোধ।  এখনই কাজ করুন।

২০১৬: হেপাটাইটিস-এক্ট এখনই জানুন।

২০১৭: হেপাটাইটিস নির্মূল করুন।

২০১৮: পরীক্ষা।  চিকিৎসা।  হেপাটাইটিস।

২০১৯: হেপাটাইটিস নির্মূলে বিনিয়োগ করুন।

২০২০: হেপাটাইটিস মুক্ত ভবিষ্যত।

২০২১: হেপাটাইটিস অপেক্ষা করতে পারে না।

২০২২: হেপাটাইটিস যত্নকে আপনার কাছাকাছি নিয়ে আসা।

২০২৩ : এক জীবন, এক লিভার।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This