Categories
কবিতা

স্বপ্নে পাওয়া প্রেম : রাণু সরকার।

তুমি আমার স্বপ্নে থেকে ছিলে
চিরদিনের জন্য না বলে গেলে হারিয়ে,
তোমার এভাবে হারিয়ে যাওয়াটা আর পারছিনা নিতে মানিয়ে।

পেয়েছিলাম স্বপ্নে মুক্তো,হারিয়ে গেলো, পারলাম না বাস্তবে করতে সৃষ্টি,
গোপনে সবে শুরু করেছিলাম রাখা
যদি কারো পড়ে কুদৃষ্টি।

ভুলতে পারছি না
ক্ষণে ক্ষণে চোখে ভাসে তোমার মুখখান,
হৃদয় আমার মায়াময় তাই তো বিঁধলো পুষ্পবাণ।

স্বপ্নে তোমায় চুম্বন করি,মনে হয় পান করি মদিরা,
হয়ে যাই অবশ,
তোমার ঠোঁটে কি আছে গো,
পাগল হোলাম নেশা লাগা ঠোঁটের পরশ।

স্বপ্নেও ভাবিনি ক্ষণিকের জন্য এসে তুমি কাঁদিয়ে যাবে চলে,
আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেলো সকাল সন্ধ্যা সব উৎসবের আলো,
তুমি তো জানতে চলে যাবার সময় নিকটে
তবে কেনো এসেছিলে।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

মার্কসবাদী আদর্শে বিশ্বাসী উৎপল দত্ত চিরকাল শােষিত বঞ্চিত মানুষের সংগ্রামে নিজেকে যুক্ত করেছেন তার নাটক ও নাট্য প্রযােজনার মধ্য দিয়ে!

ভূমিকা—-

উৎপল দত্ত একজন ভারতীয় অভিনেতা, পরিচালক এবং লেখক-নাট্যকার ছিলেন।  তিনি মূলত বাংলা থিয়েটারের একজন অভিনেতা ছিলেন, যেখানে তিনি আধুনিক ভারতীয় থিয়েটারে একজন অগ্রগামী ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন, যখন তিনি ১৯৪৯ সালে “লিটল থিয়েটার গ্রুপ” প্রতিষ্ঠা করেন। এই দলটি অনেক ইংরেজি, শেক্সপিয়র এবং ব্রেখ্টের নাটক রচনা করেছিল, যা বর্তমানে থিয়েটার নামে পরিচিত।  “এপিক থিয়েটার” সময়কাল, এটি অত্যন্ত রাজনৈতিক এবং উগ্র থিয়েটারে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে নিমজ্জিত করার আগে।  তাঁর নাটকগুলি তাঁর মার্কসবাদী মতাদর্শের প্রকাশের জন্য একটি উপযুক্ত বাহন হয়ে ওঠে, যা কল্লোল (১৯৬৫), মানুষের অধিকার, লৌহা মনোব (১৯৬৪), টিনার টোলোয়ার এবং মহা-বিদ্রোহার মতো সামাজিক-রাজনৈতিক নাটকগুলিতে দৃশ্যমান।  এছাড়াও তিনি ৪০ বছরের ক্যারিয়ারে ১০০ টিরও বেশি বাংলা ও হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছেন এবং মৃণাল সেনের ভুবন শোম (১৯৬৯), সত্যজিৎ রায়ের আগন্তুক (১৯৯১),  চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সর্বাধিক পরিচিত।   এবং হৃষিকেশ মুখার্জির হিন্দি কমেডি যেমন গোল মাল (১৯৭৯) এবং রং বিরাঙ্গি (১৯৮৩)।  তিনি তাঁর মৃত্যুর কিছু আগে ১৯৯৩ সালে দূরদর্শনে ব্যোমকেশ বক্সীর (টিভি সিরিজ) সীমান্ত হীরার পর্বে একজন ভাস্কর স্যার দিগিন্দ্র নারায়ণের ভূমিকাও করেছিলেন। তিনি ১৯৭০ সালে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং তিনটি ফিল্মফেয়ার সেরা কমেডিয়ান পুরস্কার পান।  ১৯৯০ সালে, ভারতের ন্যাশনাল একাডেমি অফ মিউজিক, ড্যান্স অ্যান্ড থিয়েটার সঙ্গীত নাটক আকাদেমি তাকে তার সর্বোচ্চ পুরস্কার, থিয়েটারে আজীবন অবদানের জন্য সঙ্গীত নাটক আকাদেমি ফেলোশিপ প্রদান করে।

 

প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা—-

 

উৎপল দত্ত বাংলা গণনাট্য আন্দোলনের সময়ে বিশিষ্ট অভিনেতা এবং নাট্যকার। উৎপল দত্ত ১৯২৯ সালের ২৯ মার্চ বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন।  তাঁর পিতা গিরিজারঞ্জন দত্ত।  তিনি সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ, কলকাতা, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স নিয়ে স্নাতক হন।

 

ব্যক্তিগত জীবন–

 

১৯৬০ সালে, দত্ত থিয়েটার এবং চলচ্চিত্র অভিনেত্রী শোভা সেনকে বিয়ে করেন। তাদের একমাত্র মেয়ে, বিষ্ণুপ্রিয়া দত্ত, জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ আর্টস অ্যান্ড অ্যাসথেটিক্স, নয়া দিল্লিতে থিয়েটার এবং পারফরম্যান্স স্টাডিজের একজন অধ্যাপক।

 

কর্মজীবন—

 

গণনাট্য আন্দোলন ছিল মূলত রাজনৈতিক আদর্শের প্রতিফলন, মার্ক্সবাদ থেকে প্রণীত এক ধারা যেখানে মঞ্চ হয়ে ওঠে প্রতিবাদের মাধ্যম তিনি মঞ্চের কারিগর ,বাংলা মঞ্চনাটকে অভিনয় করতেন। তিনি শেক্সপিয়ার আন্তর্জাতিক থিয়েটার কোম্পানির সাথে ভ্রমণ করেছেন বেশ কয়েকবার। তাকে গ্রূপ থিয়েটার অঙ্গনের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের অন্যতম হিসাবে গন্য করা হয়। কৌতুক অভিনেতা হিসাবেও তার খ্যাতি রয়েছে।

তিনি হিন্দি চলচ্চিত্র গুড্ডি, গোলমাল, শওকিন ও রং বিরঙ্গিতে (১৯৮৩) -তে অভিনয় করেছেন। তিনি সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় হীরক রাজার দেশে, জয় বাবা ফেলুনাথ এবং আগন্তুক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। মননশীল ছবি ছাড়াও অজস্র বাণিজ্যিক বাংলা ছবিতে খলনায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন উৎপল দত্ত। রাজনৈতিক দর্শনের দিক থেকে তিনি ছিলেন বামপন্থী ও মার্ক্সবাদী। উৎপল দত্তের বিখ্যাত নাটকের মধ্যে রয়েছে টিনের তলোয়ার, মানুষের অধিকার ইত্যাদি। তার নাটক গুলি কে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। পূর্ণাঙ্গ নাটক, পথ নাটিকা, যাত্রাপালা।

 

উৎপল দত্ত রচিত নাটকের তালিকা—

 

বাংলা রাজনৈতিক নাটকের ইতিহাস সুপ্রাচীন। নীলদর্পণ থেকেই এই রাজনৈতিক নাটকের সূচনা। কিন্তু উৎপল দত্তকে বলতে হয় অবিমিশ্র রাজনৈতিক নাট্যকার। তাঁর সমস্ত নাটকের মধ্যেই থাকে সচেতন উদ্দেশ্য। পূর্ণাঙ্গ, একাঙ্ক, পথনাটক ইত্যাদি মিলে উৎপল দত্তের নাটকের সংখ্যা প্রায় সন্তরটি। বিষয়বস্তুর দিক থেকেও নাটকগুলি বিচিত্র, কিন্তু রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি সর্বত্রই সেখানে অতন্দ্র থেকেছে। মৌলিক এই নাটকগুলি ছাড়াও আছে অসংখ্য অনুবাদ নাটক। আরাে উল্লেখ্য, রাজনৈতিক বক্তব্য উপস্থাপন করতে গিয়ে উৎপল দত্ত কখনও শিল্পসৃষ্টির অজুহাতে বা শাসক শক্তির কোপদৃষ্টি থেকে আত্মরক্ষার জন্য কোনাে অস্পষ্টতা বা অবরণের আশ্রয় নেন নি। তার বক্তব্য স্পষ্ট, সুবােধ্য এবং অকুতােভয়।

 

লাল দূর্গ, বণিকের মাণদন্ড,  এংকোর (অনুবাদ গল্প), দিল্লী চলো, ছায়ানট(১৯৫৮), অঙ্গার(১৯৫৯), ফেরারী ফৌজ(১৯৬১), ঘুম নেই (১৯৬১), মে দিবস (১৯৬১), দ্বীপ (১৯৬১), স্পেশাল ট্রেন (১৯৬১), নীলকন্ঠ(১৯৬১), ভি.আই.পি (১৯৬২), মেঘ (১৯৬৩), রাতের অতিথি (১৯৬৩), সমাজতান্ত্রিক চাল (১৯৬৫), কল্লোল(১৯৬৫), হিম্মৎবাই (১৯৬৬), রাইফেল (১৯৬৮), মানুষের অধিকার (১৯৬৮), জালিয়ানওয়ালাবাগ (১৯৬৯), মাও-সে-তুং (১৯৭১), পালা-সন্ন্যাসীর তরবারি (১৯৭২), বৈশাখী মেঘ (১৯৭৩), দুঃস্বপ্নের নগরী(১৯৭৪), এবার রাজার পালা, স্তালিন-১৯৩৪, তিতুমির, বাংলা ছাড়ো, দাঁড়াও পথিকবর, কৃপান, শৃঙ্খলছাড়া, মীরকাসিম, মহাচীনের পথে, আজকের শাজাহান, অগ্নিশয্যা, দৈনিক বাজার পত্রিকা, নীল সাদা লাল, একলা চলো রে, ক্রুশবিদ্ধ কুবা, নীলরক্ত, লৌহমানব, যুদ্ধং দেহি, লেনিনের ডাক, চাঁদির কৌটো, রক্তাক্ত ইন্দোনেশিয়া, মৃত্যুর অতীত, ঠিকানা, টিনের তলোয়ার, ব্যারিকেড, মহাবিদ্রোহ, মুক্তিদীক্ষা, সূর্যশিকার, কাকদ্বীপের এক মা, ইতিহাসের কাঠগড়ায়, কঙ্গোর কারাগারে, সভ্যনামিক, নয়াজমানা, লেনিন কোথায়, সীমান্ত, পুরুষোত্তম, শৃঙ্খল ঝঙ্কার, জনতার আফিম, পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাস, মধুচক্র, প্রফেসর মামালক, শোনরে মালিক, সমাধান, অজেয় ভিয়েতনাম, তীর।

 

পুরষ্কার এবং স্বীকৃতি—-

 

থিয়েটারে আজীবন অবদানের জন্য ১৯৯০ সঙ্গীত নাটক আকাদেমি ফেলোশিপ

শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার – জিতেছেন
১৯৭০ ভুবন শোম – ভুবন শোম

ফিল্মফেয়ার সেরা কমেডিয়ান পুরস্কার – জিতেছে
১৯৮০ গোল মাল – ভবানী শঙ্কর
১৯৮২ নরম গরম – ভবানী শঙ্কর
১৯৮৪ রং বিরঙ্গি – পুলিশ ইন্সপেক্টর ধুরন্ধর ভাতাওদেকর

বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড: সেরা অভিনেতার পুরস্কার- জিতেছেন
১৯৯৩ আগন্তুক – মনোমোহন মিত্র

ফিল্মফেয়ার সেরা পার্শ্ব অভিনেতার পুরস্কার – মনোনীত৷
১৯৭৫ অমানুষ – মহিম ঘোষাল
১৯৮০ গোল মাল – ভবানী শঙ্কর
১৯৮৬ সাহেব – বদ্রী প্রসাদ শর্মা

 

 

মৃত্যু—–

 

১৯৯৩ খ্রীস্টাব্দের ১৯শে আগস্ট তিনি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট ও উইকিপিডিয়া।।

 

Share This
Categories
কবিতা রিভিউ

উপেক্ষিত ভাষাশহীদ : শুভঙ্কর দাস।

২১ শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস।আন্তর্জাতিক ও আন্তরিক আলোর।
এই সূর্যস্মরণীয় দিনটির জন্য এ-ই মানুষটির অবদান অতুলনীয়। অথচ ভাষাদিবসের প্রেক্ষাপটে তাঁর কথা খুবই কম শোনা যায়,কম উচ্চারিত হতে দেখা যায় এবং কোনো সৃজনকর্ম তাঁকে নিয়ে রচিত হয় না!
কেন?
১৯ মার্চ প্রবল শক্তিশালী ও সর্বপ্রধান মহম্মদ আলি জিন্না ঢাকায় এসে চেঁচিয়ে উঠলেন,উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।তাঁর মুখের ওপর যাঁরা প্রতিবাদ করতে দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন,তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত।
ধীরেন্দ্রনাথের যুক্তি ছিল,দেশের ছয় কোটি নব্বই লক্ষ নাগরিকের মধ্যে চার কোটি চল্লিশ লক্ষ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলেন,অতএব বাংলাই হোক রাষ্ট্রভাষা।
কিন্তু মুসলিম লিগ তা খারিজ করে দেয়,তার কারণ সহজেই অনুমেয়।
সেই মহান ভাষাসৈনিককে এর জন্য মারাত্মক মূল্য চোকাতে হয়েছিল।১৯৭১ সালে পাকসেনারা অশীতিপর সমাজকর্মী ধীরেন্দ্রনাথকে কুমিল্লার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ময়নামতী ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
বাহান্নর ভাষা আন্দোলন শুধু মাতৃভাষার রক্ষা করেনি,একটা দেশের জন্ম দিয়েছল,সেই দেশের জন্মপরতে ধীরেন্দ্রনাথের নাম অবিচ্ছেদ্য।তাঁকে বিস্মৃত হওয়া মানে একটা ভাষাকে,একটা দেশকে অস্বীকার করা।
তাঁকে জানিয়ে অক্ষরের শ্রদ্ধা।

চার কোটি চল্লিশ লক্ষের সিংহাসন

শুভঙ্কর দাস

অক্ষরের কোনো ধর্ম হয়?
মায়ের মুখের ভাষায় কোনো কাঁটা,কোনো উদ্ধত আঙুল,কোনো স্বেচ্ছাচারীর মুর্খামি
কালো কালো রেখায় মাথা তুলতে পারে?

কোনোদিন পারে না,যে মুহূর্তে অর্ধমের অন্ধকার বাংলা বর্ণে মিশিয়ে দেবে,যে মুহূর্তে রক্তচক্ষু মিশিয়ে দেবে আদুরে অক্ষরে,যে মুহূর্তে বন্দুকে বিচার করবে বিবেকের বাণী,সেই মুহূর্তে ধীরেন্দ্রনাথ শুধু উচ্চারণ করবেন,চার কোটি চল্লিশ লক্ষের মুখের ভাষা…

বাংলা,বাংলা এবং শেষ রক্তবিন্দুর সত্য, বাংলা

২১ ফেব্রুয়ারি একটা এমন দেশের নাম,যেখানে মায়ের আঁচলে সত্যিকারের ভুবন আঁকতে নিজের প্রাণ পর্যন্ত তুলে দিতে পারে
তেমন দেশের মাটিতে যদি সিংহাসন গড়ে ওঠে

তাতে হাসিমুখে বসে থাকবেন ধীরেন্দ্রনাথ।

—————-//———————-
২৯ মার্চ,২০২৩

Share This
Categories
কবিতা

অহংকার : রাণু সরকার।

এমন কিছু সম্মানিত ও গুণসম্পন্ন নারী বা পুরুষ আছেন
নামটা উজ্জ্বল বলে তাদের মনে ভীষণ দাম্ভিকতা চলে আসে।

কথাই বলা যায় না তাদের সাথে, বন্ধুত্ব তো দুরস্থ।
আমার ভাগ্যে যখন এমনটা জুটেছে, তখন আমি ভীষণই কষ্ট পেয়েছি-
হয়তো তারা ভাবেন মনে মনে ধুত্ এদের সাথে কী কথা বলবো, আমার মতো তো আর এতো গুণী বা নাম যশ নেই, তাই একটু অবহেলার চোখেই দেখেন।

অনেক বিষয়ের ওপর তাদের নাম যশ থাকতেই পারে, সেটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।
কিন্তু অহংকার কিছুটা শিশুসুলভ মনোভাবের মতো।
অনেক সময় দেখা যায় একটা পরিণত মানুষের মধ্যে অহংকার অসহ্য লাগে।
পতনের মূল কারণ এরা বুঝতে পারেন না বা বুঝতে চান না যে মানুষ্যত্বের অভাব যা জীবনে চলার পথে সমস্যার দিকে পরিচালিত করে সেটাও ভাবনাতে আসে না, নাম যশে ভুলে থাকে।

তবে কেউ যদি আত্মসম্মান বোধে দূরত্ব বজায় রাখে তবে হয়তোবা সে শান্তি অনুভব করলেও করতে পারে।

Share This
Categories
কবিতা

পুরুষ কথা : রাণু সরকার।

পুরুষদের কি কাঁদতে নেই?
হ্যাঁ, আছে তো।
পুরুষদেরও কষ্ট আছে অনেক–

অব্যক্ত কষ্ট সাথে করে চলতে হয় সবসময়-
লোহার বর্মে তো পুরুষ আচ্ছাদিত নয় যে কাঁদবে না-
হ্যাঁ, পুরুষরাও কাঁদে।

তবে পুরুষের কাঁদা দিনের আলোর আড়ালে থাকে, অনেক কষ্টের বাসনা-
কষ্টের নানান প্রকাশভঙ্গি।

বৃষ্টি ভেজা দিনে অনেক পুরুষ কাঁদে
যাতে অশ্রুধারা মিশে যায় বৃষ্টিধারায় অন্যের অসাক্ষাতে।

রুটি-রুজির কথা ভাবতে ভাবতে ভাবতে কাঁদা তাদের ফুরিয়ে যায়-
রুজিরোজগার ভাবনা দেয় না তাদের কাঁদতে।

ভোরের আলো ফোটার আগেই শুরু হয় তাদের অভিযান রুজির সন্ধান।
রাতের অন্ধকারে তাদের ঘরে ফেরা
শুধু পরের দিনের আলো ফোটার অপেক্ষায়।

কাঁদতে গেলেই কে যেন টেনে ধরে তাদের,
এ বলে আমার এটা নেই,
ও বলে আমার ওটা নেই।
পরিবারের বায়না মেটাতে মেটাতেই ভুলে যায় নিজের জন্য একটু কেঁদে হালকা হওয়া।
এই নেইগুলো আনতে আনতেই ভুলে যায় তার নিজের কথা-
অর্ধেক কাঁদা যে রেখে এসেছিলো ওটা আর পরে খুঁজে পায় না-
তাই আর হয় না তাদের কাঁদা সারা।

সহ্য করতে যখন আর পারে না তখন ছিটকে বেরিয়ে এসে ডুকরে ডুকরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে-
আবার কখনো বুকে হাত রেখে বোবা চিৎকার করে-
কেউ যেন না দেখে।
কেউ না দেখুক একজন কিন্তু দেখে- সে হলো অন্তর্যামী।

সময়-রুটি-রুজি কাঁদতে দেয় না-
তাই পুরুষের কাঁদা কেউ দেখতে পায় না-
বুকে থেকে যায় কষ্টগুলো।
হয়তো খুঁজলে দেখা য়াবে বুকে কত পলির স্তর জমে আছে।

কিছু নারী স্তর দেখতে পায়-
শুধু দেখতে পেলে হবে না
হৃদয়ঙ্গম করতে ও তো হবে-
তা না হলে বোঝা যাবে না
তার কতটা কষ্ট।

পুরুষের পলির স্তর কত দূর পর্যন্ত
সেটা সব নারী দেখতে পায় না বা দেখতে চায় না-
এই স্তর দেখতে হলে দিব্যজ্ঞানী হতে হবে নচেৎ দেখতে পাবে না।
কিন্তু তাহলে নারীকে অনেক কিছু ত্যাগ করতে হবে।
হ্যাঁ কিছু নারী আছেন ত্যাগী তারা দেখতে পায়-
আবার কিছু নারী আছেন দেখতে পায় না।
আমার দেখা অনেক আছে বলিও তাদের মাথা নিচু করে রাখে কোন উত্তর করে না, এই গুণটা আছে ভালো- হয়তো বুঝেতে পারে তাই চুপ থাকে,
অনেকে সুধরেও গেছেন আমার বলাতে।

Share This
Categories
রিভিউ

কবিতার সর্বস্ব ও কবির সর্বনাশ ::: শুভঙ্কর দাস।।।

‘কবিতা’ কথাটি উচ্চারণ করার আগে
অন্তত একটি এমন কবিতা পড়ুন,যাতে আপনার মনে হতে পারে,আয়না শুধু কাচের নয়,অক্ষরেরও হয়!
‘কবিতা’ নিয়ে কণামাত্র মতামত প্রকাশের আগে
অন্তত একজন কবির কথা আত্মজীবনীর মতো জানুন
যাতে আপনার মনে হতে পারে
আত্মীয়স্বজন বলতে শুধু রক্তের সম্বন্ধ বোঝায় না!

এই কবিতার মতো দেখতে সাজানো কথাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্রিয়াপদ ‘পড়ুন’।
অর্থাৎ পড়া।
এই পড়ার লোকের খুবই অভাব।
রক্তাল্পতার মতো পাঠকাল্পতার রোগে ভুগছে বাংলা কাব্য-কবিতা।
কবি জীবনানন্দ দাশ ইংরেজি সাহিত্যের পড়ুয়া শিক্ষক এবং বাংলা কবিতার মনন নক্ষত্রের প্রধান। তিনি যেমন শিরোধার্য রবীন্দ্রনাথের লেখা আত্মস্থ করার চেষ্টা করতেন,তেমনি সমসময়ের বন্ধুবর্গের লেখাও, যেমন দিনেশ দাসের লেখাও পড়তেন এবং পড়ার মতো পড়ে,সেই সব কবিতার মননশীল আলোচনা বা মতামত ব্যক্ত করতেন।
অনেকেই জানেন না,কবি জীবনানন্দ কবিতা চর্চার জীবনে কবি দীনেশ দাসের মুগ্ধ পাঠক এবং আলোচক। দীনেশ দাসকে চেনেন তো?
সেই যে যিনি লেখেন

” বাইরে অদূরে
থান-কাপড়ের মতো একটি পবিত্র দিন শুকায় রোদ্দুরে।”

অথবা

“তোমার পায়ের পাতা সবখানে পাতা
কোনখানে রাখব প্রণাম!”

অথবা

“বাঁকানো চাঁদের সাদা ফালাটি
তুমি বুঝি খুব ভালোবাসতে?
চাঁদের শতক আজ নহে তো
এ যুগের চাঁদ হল কাস্তে!”

যাক! এবার মনে পড়বেই।

একটি জায়গায় জীবনানন্দ কবি দীনেশ দাসের কবিতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছিলেন,এখন বুঝতে পারি,কবিতা শুধু যে শিল্পকুশলতার নয়, আরোও ওপরের জিনিস।
পাঠক ছিলেন রবীন্দ্রনাথ।
শান্তিনিকেতনে কেউ যদি দুটি শব্দ লিখে পোস্টকার্ডও পাঠাতেন,রবীন্দ্রনাথ তাও পড়তেন।
প্রমথ চৌধুরী পড়ার জন্য গ্রন্থকীট বলে উপহাসের পাত্র হয়েছিলেন অথচ সেই পড়ার গুণে তিনি বঙ্গসাহিত্যের একজন শ্রেষ্ঠ গদ্যকার হতে পেরেছিলেন।
স্বামী বিবেকানন্দ মাত্র উনচল্লিশ আয়ুর সময়কালে যা পড়েছেন,তা একজন মানুষ শতায়ু জীবনে পারবে না!
সৈয়দ মুজতবা আলি তো গ্রন্থকেই জীবনের দরজা-জানালা এবং সোপান করেছিলেন।
বুদ্ধদেব বসু তো কবিতার ওপর ভবন ও ভুবন নির্মাণ করেছিলেন!
তারপর সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সবাই লেখার পরিমাণ মাপতে ব্যস্ত,তাঁর সেই সময় বা প্রথম আলো উপন্যাসের সহকারী গ্রন্থসূচি তালিকা নিয়ে দুই ফর্মারই বই হয়ে যেতে পারে!
মোদ্দা কথা, সেই সব পাঠকধন্য সোনালি দিন কোথায় গেল!
কবিতার বইয়ের পাঠক কোথায়?
ক’জন গাঁটের কড়ি খরচ করে কবিতার বই কেনেন?
সর্বনাশ! কেনার কথা বলে ফেললাম, হা হরি! হায় আল্লা!
কোনো কবিতার বই প্রকাশের পর যদি পঞ্চাশজনকে বিতরণ স্টাইলে দেওয়া হয়,তাহলে দেড়জন মাত্র মতামত জানান,যদি সেই কবি অতিব সৌভাগ্যবান হন।
তারপর যদি সরকারি বা বেসরকারি ডাকযোগে কবিতার বই পাঠান,তাহলে তো কথাই নেই,ডাক নিশ্চিতভাবে পৌঁছে যাওয়ার দিন অতিক্রম করে কবি যদি ফোন করে জানতে চান,কবিতার বইটি পেয়েছেন? তাতে ফোনের অপর প্রান্তের উত্তর আসবে,আপনি কী পাঠিয়েছিলেন?আসলে এতো বইপত্র আসে,বুঝতে পারছি না! আচ্ছা, আপনাকে পরে জানাচ্ছি!
ব্যাস ফোনটা কেটে যাবে এবং এই ‘পরে জানাচ্ছি’ আর কোনোদিন ফিরবে না।
এই এতো কথার সার কথা এই,কবিতা পড়ুন এবং কবিতাই আপনাকে অনুভবের সঠিক পথ দেখাবে।
প্রশ্ন উঠবে, কবিতাই কেন?
সহজ উত্তর, কবিতারই মানবমনের সর্বোত্তম নির্যাস।কবিতার চোখ দিয়ে মানুষ এবং তার সম্পর্কের পরম অনুভব ব্যক্ত ও বিস্তার দান করতে পারে।
কবিতা পড়ুন এবং তাকে স্পর্শ করতে পারলে তারপর গদ্য, উপন্যাস, গল্প অথবা গান সবকিছুর অন্তর্নিহিত আলোর কাছে অতি সহজেই পৌঁছাতে পারবেন,শুধু অক্ষর সাধন নয়, আধ্যাত্মিক এবং সংসার সত্যও অনুধাবন করতে পারবেন।
কবিতা পড়ুন এবং পড়ার যোগ্য হয়ে ওঠুন। গভীরভাবে হৃদয়স্থ করতে থাকুন,তারপর ডাক্তারি,ইঞ্জিনিয়ারগিরি,মাস্টারি, ব্যবসায়ী,বিপ্লবী,সাংবাদিক, রাজনীতি,ফুচকা অথবা বেলুন ফাটানো, যা ইচ্ছে করুন।
সবকিছু কবিতার মধ্যে দিয়ে উত্তর এবং উর্বরতা খুঁজে পাবেন।
এটাই সত্য।
ধরুন,আপনি পিতা অথবা মাতা।
কর্মক্ষেত্রের শেষে যখন বাড়ি ফিরে গিয়ে দেখলেন,সন্তানের জ্বর অথবা তার খাওয়া হয়নি, সেই মুহূর্তে আপনার বুকের বাঁদিক যেই ধক্ করে উঠল,তাই অনুভব।
তাই কবিতার পথ এবং কবিতার প্রকাশ।
এটা আনন্দের ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে,সেই একই জিনিস।

অনুভবকে রূপ দেয় চূড়ান্ত কবিতা।
আর একথা সর্বজনগ্রাহ্য সত্যি, অনুভবহীন মানুষ মাত্রই বিপজ্জনক, শুধু বিপজ্জনক নয়,বিশ্বধ্বংসাত্মক।
মনুষ্যত্ব নির্মাণ করতে হলে কবিতা পড়তেই হবে।
যা এই দুঃসময়ে প্রচণ্ড অভাব।

এতো বড় বড় কথার কিছু নেই।
এবার অতি সহজ করে সংক্ষিপ্ত সার।
কবিতা পড়তে হবে।নতুনভাবে।নতুন চোখে।
আপনার পাশে বসে সাহিত্যসভায় যে কবিকে দেখছেন,তাকে সত্যিকারের চিনুন কবিতার মধ্য দিয়ে।
আপনি এতদিন কবিকে দেখেছেন,
সে কালো কি ফর্সা,সে মোটা কি রোগা,সে আমিষ না নিরামিষ, সে বিবাহিত নাকি ডিভোর্সী, সে বাসে ঘুমায় নাকি টিকিট কাটে না! খাওয়ার গপগপ করে খায় নাকি কাকের মতো ছড়ায়,সে বিড়ি ফোঁকে নাকি মদ খায়,সে প্রেম করে নাকি পরকীয়া,সে বহুমূত্র রোগী নাকি উচ্চরক্তচাপ, সে স্কুল মাস্টার নাকি কয়লা খনির শ্রমিক, সে লিটল ম্যাগাজিন করে নাকি ঢাউস ম্যাগাজিন,তার সঙ্গে সুবোধ নাকি জয়ের আলাপ আছে,সে নন্দনে চেঁচায় নাকি গন্ধমাদন তোলে, সে অন্তর্বাস পরে নাকি উলঙ্গ থাকে, এসব স্রেফ ছুঁড়ে ফেলুন,
ছুঁড়ে, মুড়ে এবং এমন নিরাপদ দূরত্ব ফেলুন,যাতে আপনাকে প্রকৃত পাঠক হতে বাধা দিতে না পারে!
এবার মন ও মনন বদলে ফলুন।
এবার কবিতা দিয়ে কবিকে দেখুন, চিনুন এবং বোঝার মতো বুঝুন।
দেখবেন আপনার জগৎ বদল হয়ে গেছে এবং সত্যিকারের জগতে আপনি বসবাস করা শুরু করে দিয়েছেন।
কারণ অনুভব বা চিন্তন

কবির পোশাকে
কবির দাঁতে
কবির হাসিতে
কবির বকবকাকিতে
কবির ফতুয়ায়
কবির চুলে
কবির টাকে
কবির টাকায়
কবির বাজারে ব্যাগে
কবির বউ-এ
কবির বোনে
কবির ফেসবুকে
কবির হোয়াটসঅ্যাপে
কবির সেলফিতে
কবির বইদোকানে মাথা চুলকানোতে
কবির মাইক্রোফোন ধরে হাঁপানোয়
কবির বই প্রকাশে
কবির গালিগালাজে
কবির ধূমপানে
কবির প্রেমিকায় নেই।
নেই।নেই।নেই।একদম নেই।
আছে শুধু কবিতায়।একমাত্র কবিতায়। তাই কবিতা পড়ুন।একথা মফস্বল ও মহানগর সবের ক্ষেত্রে সমান সত্য ও চরম চমৎকার।
কবিতা পড়ুন।
কবিতার মাধ্যমে কবিকে প্রতিষ্ঠা করুন অন্তরে এবং আকাশে….
কিন্তু কাকে বলি? কে যে বোঝে!

২১ শে মার্চ,২০২২. শুভঙ্কর দাস।

Share This
Categories
কবিতা

বাবা-মেয়ে : রাণু সরকার।

বাবা বলেন, জানিস মা, মেয়েদের হাসি ছেলেদের হাসির থেকেও সুদৃশ্য।

এটাও জানিস না তুই! জেনে নে- ছেলেদের কান্না কত কষ্টদায়ক। জানিস, ছেলেরা সহজে কাঁদে না, কাঁদতে পারে না।

ছেলেদের সবকিছু অনুপূরণ করতে গিয়ে তারা কাঁদার কথা ভুলে যায় বা সময় পায় না।
যখন কান্না ধরে রাখতে পারেনা তখনই আড়ালে ফুপিয়ে কাঁদে বা বৃষ্টির সাথে বন্ধুত্ব করে, বৃষ্টি নিজের হাতে দু’চোখ ধুয়ে দিয়ে যায় যেন কেউ বুঝতে না পারে যে সে কেঁদে ছিলো।

তাই বলি কি মা সামনের দিন গুলো একটু ভেবে চিন্তে চলিস।

Share This
Categories
কবিতা রিভিউ

কবিতার পবিত্রতার ছুঁয়ে : শু ভ ঙ্ক র দা স।

বরিশালে জন্ম হলেও বালকটি বড় হওয়া কলকাতায়…
ইস্কুলের গণ্ডী পেরানোর অনেক আগেই কবিতায় নিমজ্জন। সেইভাব জাগ্রত হল,বরিশালে এক জমিদারের বৈঠকখানায় রবি বর্মার রামায়ণ-মহাভারতের ছবি দেখে,ভাবলেন চিত্রচিল্পী হবেন,কিন্তু ছবি আঁকা শুরু করলেন অক্ষরে…
সহসা মা মারা গেলেন।
বালকটি অসহায়,নিঃসঙ্গ এবং উদাস।
লিখলেন প্রথম কবিতা,মাকে নিয়ে,লিখে টাঙিয়ে রাখলেন দরজার পাশেই…
বরিশাল থেকে মাসির হাত ধরে মহানগরের পথে..
প্রচন্ড দারিদ্র্য এবং অসংখ্যবার বাসাবদল।
এর মধ্যে সেই বালক বড় হতে লাগলেন এবং মনেপ্রাণে এই বিশ্বাস প্রোথিত হল,কবিতার জন্য তাঁর জন্মগ্রহণ।
টিউশনির টাকায় পত্রিকা প্রকাশ।
নাম, কবিপত্র।
যেটি পরে সাহিত্যপত্রের ইতিহাস সৃষ্টি করে।
বাষট্টির বছর ধরে প্রকাশ হয়ে আসছিল। এক বিরাট বিস্ময়!
দেখা হল,বিষ্ণু দে,সুভাষ মুখোপাধ্যায়, প্রেমেন্দ্র মিত্র, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রাম বসু,নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, আলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত এবং সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে..
আলাপ হল,প্রেরণা ও উৎসাহে পেলেন এক নতুন শক্তি।
তারপর মনে হল, কবিতার বই বের করতে হবে।
পান্ডুলিপি তৈরি হল,নাম দিলেন,’দর্পণে অনেক মুখ’।
কিন্তু ছাপতে কে? টাকা কোথায়?
কবির কী অবস্থা!
নিজে ভালো করে কবি খেতেই পান না!অন্য লোকের কাছে আশ্রিত।
অথচ তাঁর ধ্যানজ্ঞান,কবিতার বই বের করবেন।
এক বন্ধু কবিতা পড়ে বলল,আমি টাকা দেবো।
কবিযুবক ছুটলেন সিগনেটের কর্ণধার দিলীপ গুপ্তের কাছে।
প্রচ্ছদ আঁকলেন,পূর্ণেন্দু পত্রী।
সেই শুরু, আবির্ভাব হল এক নতুন কবিপুরুষের…
তিনি পবিত্র মুখোপাধ্যায়।
তিনি তো লিখতে পারেন—

“অনন্তকাল কেউ বেঁচে থাকবে না
খড়কুটোর রহস্য বেরিয়ে পড়বার আগেই
আমি
খুলে ফেললাম আনুগত্যের দস্তানা
হেলমেটের সবুজ ঢালুপথের ওপর দাঁড়িয়ে পড়লো সূর্য
আমি রেকাবে পা রাখলাম রেকাবে রাখলাম পা
রেকাবে”

কী আশ্চর্য!
কবি পবিত্র মুখোপাধ্যায় সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে পা রাখার ভুলে পড়ে যান,তারপর হাসপাতালে..
তারপর অশেষ কবিতার যাত্রায়..

অলংকরণ। ভগীরথ সর্দার।।

Share This
Categories
উপন্যাস গল্প

কঙ্কাবতীর দুঃসাহস (ধারাবাহিক উপন্যাসঃঅন্তিম পর্ব) : দিলীপ রায় (+৯১ ৯৪৩৩৪৬২৮৫৪)।

তানিশা পল্লীদহ গ্রামের চয়ন হালদারকে বিয়ে করলো । গাঁয়ে চয়নের মুদিখানার দোকান । ভীষণ চালু দোকান । চয়নের সাথে তানিশার পরিচয় ছোটবেলা থেকে । কিন্তু মাঝখানে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল । কিন্তু সাগরের সাথে বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার পর তানিশা নিয়মিত চয়নের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতো, যেটা বাড়িতে কেউ টের পায়নি । তানিশাকে অর্ধাঙ্গিনী হিসাবে পেয়ে খুশীতে বিহ্বল । অন্যদিকে তানিশার বিয়ে হওয়ায় কঙ্কাবতী স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো ।
তারপর …………?
তারপর তার মোবাইলে থানা থেকে হঠাৎ ফোন পেয়ে কঙ্কাবতী চমকে উঠলো । নিয়ামতপুর থানা থেকে স্বয়ং বড়বাবুর ফোন । ভয়ে ভীতিতে কঙ্কাবতী আমতা আমতা করে পাল্টা প্রশ্ন করলো, “আমাদের অপরাধ ?”
থানার বড়বাবু উত্তরে বললেন, “আপনি থানায় আসুন ! থানায় দেখা করলে টের পাবেন আপনার অপরাধ কী ?” থানার বড়বাবু আরও নির্দিষ্ট করে বললেন, “পরেরদিন সকাল এগারোটার মধ্যে আপনাকে থানায় আসার অনুরোধ রইল ।“
কঙ্কাবতী তার জামাইদের ডাকলো । সন্ধ্যায় কঙ্কাবতীর বাড়িতে চার মেয়ে ও চার জামাই এবং দুই ছেলে ও বৌমা উপস্থিত । কঙ্কাবতী সবাইকে আলাদাভাবে জিজ্ঞাসা করলো, তারা কোনো গর্হিত কাজ করেছে কিনা ? যার জন্য বড়বাবুর হঠাৎ তলব ! আলোচনায় কঙ্কাবতী বুঝতে পারলো, তার মেয়ে-জামাই এমনকি ছেলে-বৌমারা কেউ কোনো অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত নেই । সুতরাং কঙ্কাবতী নিশ্চিন্ত, তাদের পরিবারের কেউ কোনো অপরাধমূলক কাজ করেনি । এমনকি কোনো অপরাধমূলক কাজের ষড়যন্ত্রেও তারা যুক্ত নয় । তাই কঙ্কাবতী ঠিক করলো, পরিবারের সকলে দল বেঁধে থানায় যাবে । বিনা অপরাধে বড়বাবুর কেন তলব ?
পরেরদিন সকালবেলা । রুটি ও কুমড়োর তরকারি রেডি । সবাই রুটি তরকারি খেয়ে চায়ের জন্য অপেক্ষারত ! নতুন বৌ লতা চা বানালো । চায়ের চুমুক দিয়ে ঘোতন সকলের উদ্দেশে বলল, “আর দেরী করা যাবে না । পরের ট্রেনটা মিঁয়া হল্টে ঠিক নটা দশ মিনিটে । ঐ ট্রেন যেভাবে হোক পেতে হবে । নতুবা অনেক দেরী হয়ে যাবে ।“
মিঁয়া থেকে সালার । সালার স্টেশনে নেমে বাসে নিয়ামতপুর থানা ।
বাড়ি থেকে বের হতে যাবে ঠিক সেই সময় চঞ্চল বটব্যাল এসে হাজির । চঞ্চল বটব্যাল পাশের গ্রামে বাস করেন । তিনি পুলিশের বড় অফিসার । এতকাল উত্তরবঙ্গে পোস্টিংয়ে ছিলেন । খুব সম্প্রতি তিনি নিয়ামতপুর থানায় বদলী হয়ে এসেছেন । গাঁয়ে তাঁর অনেক জমি জায়গা । এলাকার মানুষ তাঁকে সমীহ করে চলেন । কঙ্কাবতী শুনেছে, চঞ্চল বটব্যাল নাকি নিয়ামতপুর থানার মেজবাবু । কিন্তু কঙ্কাবতী ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি, তাঁর মতো নামজাদা পুলিশ অফিসার তার বাড়িতে আসবে । তাই চঞ্চল বটব্যালকে দেখে কঙ্কাবতী তাঁকে আপ্যয়ন করতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠলো ।
কঙ্কাবতীর ব্যতিব্যস্ততা দেখে চঞ্চলবাবু বললেন, “আপনি ব্যস্ত হবেন না । বরং যেখানে যাচ্ছেন সেখানে যাওয়ার প্রতি ধ্যান দিন ।“
“তা হয় নাকি ! আপনি জীবনে প্রথম আমাদের মতো গরীবের বাড়িতে পা রাখলেন । সুতরাং আপনাকে একটিবারের জন্য হলেও বসতে হবে । আপনাকে চা খেয়ে যেতে হবে । দরকার হলে, থানায় একটু পরে যাবো ।“
“উহুঁ ! থানায় যেতে দেরী করবেন না । সেই কথা বলতেই আমার আসা । থানায় আপনাকে আর্জেন্ট দরকার ।“ চঞ্চল বটব্যাল জোর দিয়ে কঙ্কাবতীকে বললেন ।
সাহস পেয়ে কঙ্কাবতী চঞ্চলবাবুকে জিজ্ঞাসা করলো, “থানায় কেন আমার মতো গরীব মানুষের হঠাৎ তলব ? আমার মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না ! বিপদের কথা ভেবে গত রাত্রিতে আমার ঘুম হয়নি । থানায় আমাকে তলব কেন, জানালে আশ্বস্থ হতাম ।“
আমি কিচ্ছু জানি না । আমাকে বড়বাবু আপনার সঙ্গে দেখা করতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং আপনাকে থানায় সঠিক সময়ে পৌঁছানোর জন্য বলেছেন ।
কঙ্কাবতী পুনরায় চঞ্চল বটব্যালবাবুকে বলল, “স্যার, আমার বড্ড ভয় করছে ! জীবনে এভাবে থানা থেকে আমাকে কোনোদিন ডাকেনি । এমনকি কোনো প্রশাসনিক দপ্তর থেকেও এভাবে ডাক পাইনি ।“
“আপনি অযথা উতলা হবেন না । থানার বড়বাবু ভীষণ ভদ্র মানুষ । আপনাদের কোনোরকম অসুবিধা হবে না ।“ চঞ্চলবাবু কঙ্কাবতীকে আশ্বস্ত করলেন । তারপর তিনি বাড়ির দিকে রওনা দিলেন ।
আর কালবিলম্ব না করে কঙ্কাবতী তার চার মেয়ে ও চার জামাই এবং দুই ছেলে ও দুই বৌমা এবং স্বামী অনিন্দ্যকে নিয়ে নিয়ামতপুরের দিকে রওনা দিলো । পরিবারের সবাইকে নেওয়ার একটাই উদ্দেশ্য, যদিও বিপদজনক কিছু ঘটে তবে সকলে মিলে থানার বড়বাবুর চেম্বারের বাইরে ধর্ণায় বসবে । নিরপরাধ মানুষকে ডেকে এনে কেন হুজ্জুতি ? কঙ্কাবতীর দূরদৃষ্টি সাংঘাতিক । বিপদে পড়লে নিজের লোকেরাই পাশে দাঁড়াবে । পাড়া প্রতিবেশীরা সমালোচনায় সিদ্ধহস্ত, অথচ বিপদে পড়লে তাঁরা বরং মুখটা ঘুরিয়ে নেয় । বেশী করে কটুকথা শোনায় । তাঁদের ভাবটা এমন, আমরা যতো বিপদে পড়বো ততো তাদের শান্তি !
সালারে পৌঁছে কী বিপদ ! নিয়ামতপুর যাওয়ার কোনো বাস নেই । বাস ধর্মঘট । সকাল ছ’টা থেকে সন্ধ্যা ছ’টা পর্যন্ত । সালার থেকে নিয়ামতপুর যাওয়ার রাস্তা খুব বেশী নয় । খুব বেশী সময় লাগলে, লাগবে আধা ঘন্টা । সকাল দশটা বাজে । কীভাবে পৌঁছাবে সেই চিন্তায় কঙ্কাবতী অস্থির । বাড়িতে এসে থানার মেজবাবু বলে গেছেন, ঠিক সময়ে থানায় পৌঁছাতে । অথচ যাতায়াতের কোনো যানবাহন নেই । সালার থেকে ট্যাক্সি ভাড়া করলে, অনেক টাকা খরচ ! তারা সংখ্যায় অনেক । বড় গাড়ি দরকার ! কঙ্কাবতী ঠাহর করতে পারছে না, তারা এখন কীভাবে পৌঁছাবে ?
ইত্যবসরে বড়বাবুর টেলিফোন, “হ্যালো ! আমি কি কঙ্কাবতী ম্যাডামের সঙ্গে কথা বলছি ?”
মায়ের কাছ থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে মনীষা পাল্টা জানতে চাইলো, “আপনি কে বলছেন ?”
“আমি নিয়ামতপুর থানার বড়বাবু বলছি ।“
“নমস্কার স্যার । আমি কঙ্কাবতীর মেয়ে বলছি । ট্রেন থেকে নেমে আমরা সালারে আটকে গেছি । বাস ধর্মঘট ! নিয়ামতপুর পৌঁছানোর কোনো যানবাহন নেই । কী করব, ঠিক বুঝতে পারছি না ।“
আপনারা একসঙ্গে কতোজন আছেন ?
আমরা পরিবারের সবাই আছি । সংখ্যায় ১৪জন । বড় বৌদি আবার সন্তান সম্ভাবনা । যার জন্য আরও চিন্তা !
বড়বাবু আবার জিজ্ঞাসা করলেন, “এই মুহূর্তে আপনারা ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন ?”
আমরা স্টেশন লাগোয়া রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি ।
“আপনারা সকলে সালার স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের কাছে গিয়ে দাঁড়ান । সালার থানা থেকে পুলিশের গাড়িতে আপনাদের নিয়ামতপুরে পৌঁছে দেবে ।“ বড়বাবু তারপর লাইন কেটে দিলেন ।
কঙ্কাবতী আরও শঙ্কিত, কী বিপদ তাদের জন্য অপেক্ষা করছে ! পুলিশ নিজ দায়িত্বে তাদের থানায় নিয়ে যাচ্ছে । অনিন্দ্য যতোবার বোঝাবার চেষ্টা করছে, আমরা সবাই তোমার পাশে আছি। সুতরাং ভয়ের কোনো কারণ নেই । তবুও কঙ্কাবতীর আশঙ্কার ধন্দে কাটছে না । ভয়ে বরং বলা চলে গুটিয়ে রয়েছে । অথচ থানার বড়বাবুর ডাককে উপেক্ষা করতে পারছে না । ঘোতনও মাকে বোঝাচ্ছে, “তুমি অযথা চিন্তা করছো ? নিশ্চয় বড়বাবু কোনো কাজের কথাবার্তার জন্য ডেকে পাঠিয়েছেন !”
ইতিমধ্যে সালার থানা থেকে পুলিশের দুখানি জিপ গাড়ি এসে হাজির ।
জেলার মধ্যে নিয়ামতপুর থানা একটি গুরুত্বপূর্ণ পুরানো থানা । আশেপাশে অনেক লোকজন ও দোকানপাট । এলাকায় হিন্দু-মুসলমান সব শ্রেণীয় মানুষের বসবাস । তবুও মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন অটুট । এই ব্যাপারে থানার ভূমিকা অনস্বীকার্য । নিয়ামতপুরে রয়েছে ব্লক অফিস, রেজিস্ট্রি অফিস, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আরও অসংখ্য ছোট ছোট অফিস । যার জন্য মহাকুমার মধ্যে নিয়ামতপুরের গুরুত্ব অপরিসীম ।
থানায় নামার সাথে সাথে ভয়ে কঙ্কাবতীর বুক ধড়ফড় !
থানার সামনে নীল-লাল বাতি লাগানো বেশ কয়েকটা গাড়ি । গাড়ি দেখে কঙ্কাবতীর আরও ভয় পেয়ে গেলো । অনিন্দ্যকে বলল, “আমাকে এক গ্লাস জল খাওয়াও ।“
অনিন্দ্য তড়িঘড়ি দোকান থেকে দশ টাকা দিয়ে জলের বোতল এনে কঙ্কাবতীকে খাওয়ালো । তারপর তার তেষ্টা মেটে ।
চঞ্চল বটব্যাল হাসতে হাসতে কঙ্কাবতীর কাছে উপস্থিত । তিনি কঙ্কাবতীকে বললেন, “আমরা আপনার জন্য অপেক্ষা করছি ।“
কঙ্কাবতী তখনও ভয়ে জড়সড় । কঙ্কাবতীর আড়ষ্টতা অবলোকন করে চঞ্চলবাবু আবার বললেন, “ম্যাডাম, ভয়ের ব্যাপার নয় । আপনি আপনার কথা নির্ভয়ে বলবেন । এখন আমার সঙ্গে চলুন ।“
আপনার সঙ্গে কোথায় যাব ?
বড়বাবুর চেম্বারে ।
আমার স্বামী ও পরিবারের লোকজন কখন যাবে ?
আপনি ভিতরে ঢুকে স্যারকে বলবেন, “আপনার পরিবারের লোকজন আপনার সঙ্গে আলোচনায় থাকতে চায় ? তিনি সানন্দে সম্মতি জানাবেন । কিন্তু এই মুহুর্তে আপনি একা আমার সাথে বড়বাবুর চেম্বারে ঢুকুন । কেননা সেখানে জেলার অনেক উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ বসে আছেন । বড়বাবুর অনুমতি ব্যতিরিকে পরিবারের লোকজন চেম্বারে ঢোকাটা শোভনীয় হবে না । আর সময় নষ্ট করবেন না । আমার সঙ্গে চলুন ।“
বড়বাবুর চেম্বারে ঢুকে দুই হাত জড়ো করে কঙ্কাবতী বলল, “নমস্কার স্যার ।“
“বসুন ।“ হাত দিয়ে চেয়ারটা দেখিয়ে দিলেন বড়বাবু । বড়বাবুর নির্দেশ মতো কঙ্কাবতী চেয়ারে বসলো ।
তারপর বড়বাবু আবার বললেন, আপনার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিই । আপনার পাশে রয়েছেন এলাকার বি ডি ও সাহেব এবং একেবারে সামনে রয়েছেন মহাকুমা শাসক এবং বা-পাশে রয়েছেন অতিরিক্ত জেলা শাসক । আপনাকে এখানে ডাকার কারণ এবার খুলে বলি ।
কঙ্কাবতী বড়বাবুর দিকে তাকিয়ে বলল, “স্যার, আলোচনার মধ্যে আমার পরিবারের লোকজন থাকলে ভাল হয় ।“
“অবশ্যই তারা থাকবেন ।“ বড়বাবু তারপর চঞ্চলবাবুকে বললেন, “কঙ্কাবতীর সাথে যারা এসেছেন, সবাইকে ডাকুন ।“
একদিকে জেলা প্রশাসনের মানুষজন বসেছেন এবং ঠিক তার উল্টোদিকে মুখোমুখি কঙ্কাবতীর বাড়ির লোকজন ।
বড়বাবু শুরু করলেন, “আপনার নাম কঙ্কাবতী ?”
হ্যাঁ স্যার ।
আপনার চার মেয়ে ও দুই ছেলে ?
“হ্যাঁ স্যার । কিন্তু স্যার, আমার বাড়ির এত খবর জানলেন কীভাবে ?” কৌতুহলবশত জিজ্ঞাসা করলো কঙ্কাবতী ।
“সেই প্রসঙ্গে পরে আসছি । এবার আপনার সঙ্গে কয়েকটা জরুরি কথা সেরে নিই !” বড়বাবু হাসিমুখে কথাগুলি বলছিলেন । ঠিক তার মাঝখানে কঙ্কাবতী মুখটা ভার করে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “স্যার, আমি জ্ঞানত কোনো অন্যায় করিনি । আবার কী ধরনের বিপদের কথা শোনাবেন, বুঝতে পারছি না ?”
অতিরিক্ত জেলা শাসক চঞ্চলবাবুর দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলেন, “আপনারা ম্যাডামকে কিছু জানাননি ?”
চঞ্চলবাবু সঙ্গে সঙ্গে উত্তরে বললেন, “স্যার, আমাদের বড়বাবু স্যারের নির্দেশ ছিল ‘ম্যাডামকে আগেভাগে কিছু না জানাতে’ । সেই মোতাবেক আমরা ম্যাডামকে কিছুই জানাইনি ।“
এবার বড়বাবু অতিরিক্ত জেলা শাসকের দিকে তাকিয়ে বল্লেন, “ম্যাডামকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য খবরটা জানাইনি ।“
তারপর অতিরিক্ত জেলা শাসক কঙ্কাবতীর কাছে গিয়ে বললেন, “আপনি বসুন ম্যাডাম । বড়বাবু একটা ভাল খবর শোনাবেন । যে খবরটার জন্য আমরা জেলার মানুষ গর্বিত ।“
বাড়ির সকলের দৃষ্টি এখন বড়বাবুর দিকে ।
বড়বাবু আবার শুরু করলেন, “ম্যাডাম, আপনি সমস্ত প্রতিকুলতা কাটিয়ে যেভাবে আপনার চার মেয়েকে মানুষ করেছেন এবং তাদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে সহযোগিতা করেছেন, তার স্বীকৃতি স্বরূপ কেন্দ্রিয় সরকার আপনাকে “নারীশক্তি” সম্মাননা দিয়ে সম্মান জানাবেন । এটি একটা বিরল সম্মান । আমাদের রাজ্য থেকে একমাত্র আপনি সেটা পাচ্ছেন ।“
খবরটা জানানোর সাথে সাথে সকল প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে হাত তালি দিয়ে কঙ্কাবতীকে সম্মান জানালো । কঙ্কাবতী তখন তার চোখের জল ধরে রাখতে পারলো না । স্পটেই কেদে দিলো । পরিবারের সবাই তখন কঙ্কাবতীকে জড়িয়ে ধরে আবেগে উচ্ছ্বাসে আনন্দাশ্রুতে বিহ্বল ।
————-০—————

Share This
Categories
কবিতা রিভিউ

ঈশ্বরী পাটনির সন্ধানে; দুই : শুভঙ্কর দাস।

ঈশ্বরী পাটনির সন্ধানে। দুই

প্রতিটি পদক্ষেপে ব্যর্থতা।
ছাত্রজীবনে প্রবেশিকা পরীক্ষায় ফেল।
আবার চেষ্টা, আবার ফেল।
ক্রমাগত কয়েকবারের চেষ্টায় উত্তীর্ণ।
বি.এ. পরীক্ষা দেন প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে,কিন্তু পরীক্ষা ভালো দেননি বলে,অনার্স টিকল না।
বিলেত গেলেন আইসিএস হবেন বলে,সেখানেও ব্যর্থ।
নিজের ব্যর্থতা নিয়ে রসিকতা করে বলতেন,I came out first in the unsuccessful list’
বিলেতে গেছিলেন আইসিএস হতে কিন্তু ফিরে এলেন ব্যারিস্টার হয়ে।
কলকাতায় ফিরলেন ১৮৯৩ সালে,আবার ব্যর্থ।পসার জমাতে।
এদিকে মারাত্মক বিপদ।পিতার মৃত্যু। এবং বিপুল ঋণের বোঝা পুত্রের কাঁধে।
আদালত তাঁদের পরিবারকে দেউলিয়া ঘোষণা করলেন।
কী করবেন?
শুরু করলেন পড়াশোনা। নানা ধরণের বই পড়তে লাগলেন।বেশি পড়লেন কবিতা।
লিখে ফেললেন কাব্যগ্রন্থ ‘মালঞ্চ’। পাঠকসমাজ পেল নতুন কবি।
সেই সঙ্গে সম্পাদনা করছেন সাহিত্যের পত্রিকা।
তারপর সহসা অলৌকিকভাবে হাতে আসে আলিপুর বোমার মামলা।জয়লাভ করলেন।রক্ষা করলেন ঋষি অরবিন্দকে।
ব্যাস,সেই শুরু, একজন মহামানবের পথচলা।
তারপর এমন বিখ্যাত ও প্রভাবশালী আইনজীবী ও স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রাণপুরুষ হয়ে উঠলেন,লোকে তাঁর চোখে দেশ দেখতে শুরু করলেন।
শুধু বিরাট পিতৃঋণ শোধ করেননি,দানে-ধ্যানে-চরিত্রে-কর্মে হয়ে ওঠেন প্রবাদপ্রতিম।
মহাত্মা গান্ধি পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে লড়াই নেমে চোখের জল ফেলে বলে ওঠেন,হমে হারা দিয়া।
সেই যোদ্ধা, কবি, দানসাগর যখন পরলোকগমণ করলেন সারা দেশ মহাশূন্যতায় ডুবে গেছিল।
ডক্টর বিধানচন্দ্র রায় সেই মহামানবের ছবি নিয়ে ছোটেন রবীন্দ্রনাথের কাছে।
আবেদন, এই ছবির ওপর একটা কবিতা লিখে দিতে।
রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন,ডাক্তার, এ তো প্রেসক্রিপশন করা নয় যে,কাগজ ধরলে আর চটপট লেখা হয়ে গেল।
বিধানচন্দ্র জানালেন,তিনি অপেক্ষা করবেন।
অবশ্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি।
রবীন্দ্রনাথ লিখে দিলেন,

” এনেছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রাণ
মরণে তাহাই তুমি করে গেলে দান।”

আশা করি বুঝতে পারছেন,কার কথা বলছি,দেশবন্ধু।
চিত্তরঞ্জন দাশ।

তাই পড়াশোনা,সত্যিকারের পড়াশোনা, কার জীবন কীভাবে বদলে দেবে,সেটা কেউ জানেন না!
একমাত্র মা সরস্বতী ছাড়া!

শুভঙ্কর দাস। ০৬/০৭/২০২২

Share This