Categories
রিভিউ

সম্মানিত কবি ও গবেষক লিটন রাকিব।

হরিহর মহাবিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠে হালদার পাড়া রেডিয়েন্ট ক্লাবের উদ্যোগে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মদিন উপলক্ষে ঘুটিয়ারী শরিফ মিলন মেলার শুভসূচনা হল। এবছর মেলা তৃতীয় বর্ষে পদার্পণ করলো। উলেখ্য প্রজাতন্ত্র দিবসের  পূর্ণলগ্নে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্যানিং এর ভূমিপুত্র তরুন কবি,সম্পাদক ও গবেষক লিটন রাকিব সহ এলাকার বিশিষ্টজনেরা। এদিন লিটন রাকিবকে অগণিত মানুষের উপস্থিতিতে সহৃদয় সংবর্ধনা প্রদান করেন মেলা কমিটির সভাপতি মান্নান লস্কর ও সম্পাদক আক্কাস ঘোরামী। উত্তরীয়, পুষ্পস্তবক ও স্মারক  তুলে দেওয়া হয় উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে। সম্মাননা গ্রহনের পর লিটন রাকিব তাঁর বক্তৃতায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সৌহার্দ এবং সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশে মননশীলতার চর্চায় উতসাহিত করেন তরুন প্রজন্মকে।তিনি আরো বলেন- যেকোনো সৃজনশীলতায় নিগুড়ভাবে মননশীলতা বিরাজ করে।

সমগ্র অনুষ্টানটির  সঞ্চালনায় ছিলেন সাবির আলি লস্কর। মেলায় ভিড় ছিলো চোখে পড়ার মতো।মিলনমেলা চলবে ২ রা ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

Share This
Categories
কবিতা

প্রকৃতি : রাণু সরকার।

তুমি নারী,
তুমিই প্রকৃতি সর্বগুণান্বিত।
কখনো উজ্জ্বল জ্যোতি ছড়িয়ে যায় তোমার রূপে,
আবার অন্ধকারময় কৃষ্ণাভতে ঢেকে যায়
কখনো তা৷

তোমার রূপে
স্নেহশীলতার পাশে থাকে প্রসববেদনাও,
রূপের মাধুরীতে জড়িয়ে আছে প্রেমানন্দ,
রাতের অন্ধকারে স্বপ্ন দেখা,
ভোরের আলো ফোটার আগেই তোমার অন্তর্ধান!

লীলাময়ী তুমি নারী-
অল্পক্ষণব্যাপী স্বপ্নে আবাহন করি,
তোমার রূপে নিমজ্জিত থাকি,
কখনো তিক্ততা জাগে সংসারে,
সন্তান না বুঝেও কোলে উঠে হাসে।

প্রকৃতির বুকে গাছ,
গাছের বুকে ফুল ফল না থাকলে মানায়?
শ্রাবণের বর্ষায় বা বসন্তে কখনো কখনো যৌবনদীপ্ত
ইঙ্গিত দ্বারা আহ্বান করা স্বপ্নে!
আকাঙ্ক্ষা জাগে নতুন করে নিবিড় সম্পর্ক
গড়তে!
কিন্তু চিরকাল অনাবৃষ্টিতে থাকা যায়-

তবুও তুমি সুন্দর-
তুমি নারী, তুমি প্রকৃতি,
অন্ধকারকে রাখো আড়ালে!

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

নেতাজী বসেছিলেন,  তাই সেই চেয়ারে আর কেউ কখনো বসেননি, নেতাজীর স্পর্শ পাওয়া কাঠের চেয়ারকে বুক দিয়ে আগলে রাখেন দেশুড়িয়া গ্রামের কর্মকার পরিবার।

নেতাজী বসেছিলেন যে চেয়ারে সে চেয়ারে  আর কেউ বসেনি কোনোদিন। ৭৩  বছর ধরে বাঁকুড়ার দেশুড়িয়া গ্রামের কর্মকার বাড়িতে যত্নে রাখা সেই চেয়ার আজো শূন্য। পরিবারের আশা ফের কোনোদিন নেতাজী ফিরে এসে আবার বসবেন সেই চেয়ারে।

সালটা ১৯৪০। বাংলার আকাশে ক্রমশ তীব্রতা বাড়ছে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের। ২৮ এপ্রিলের তপ্ত বাঁকুড়ায় সুভাষ চন্দ্র বসু এসেছিলেন গঙ্গাজলঘাটির বুকে সভা করতে। মঞ্চে তাঁর বসার জন্য রানীগঞ্জ থেকে ভাড়া করে আনা হয়েছিল সুন্দর সোফা। স্থানীয় নেতৃত্বের বসার জন্য মঞ্চে বরাদ্দ ছিল স্থানীয় ভাবে সংগ্রহ করা কাঠের চেয়ার।

 

 

নেতাজী সোফা সরিয়ে বসার জন্য টেনে নিয়েছিলেন সাধারণ একটি কাঠের চেয়ারকে। আগুন ঝরানো বক্তৃতা শেষে নেতাজী মঞ্চ ছাড়তেই আর দেরী করেননি দেশুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা রামরূপ কর্মকার। ছুটেছিলেন মঞ্চের উদ্যেশ্যে। তাঁর বাড়ি থেকে আনা চেয়ারেই যে বসেছিলেন নেতাজী। সটান মঞ্চে উঠে সেই চেয়ার মাথায় তুলে হেঁটে সেদিন বাড়ি ফিরেছিলেন রামরূপ কর্মকার। বাড়িতে ফিরে চেয়ার রেখেছিলেন নিজের বাড়ির ঠাকুর ঘরে।

 

বাড়ির সকলকে বলেছিলেন ওই চেয়ারে নেতাজীর ছোঁয়া আছে। তাই সেই চেয়ার যেন যত্নে রাখা হয়।  তারপর দামোদর দিয়ে বয়ে গেছে বহু জল। প্রিয় নেতাজী নিরুদ্দেশ হয়ে গেছেন। আরও পরে দেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু নেতাজী অন্তর্ধান রহস্যের মিমাংসা আজো হয়নি। নেতাজীকে হারানোর একরাশ যন্ত্রণা নিয়ে আজো দিন কাটে কর্মকার পরিবারের। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বুক দিয়ে কর্মকার পরিবার আগলে রাখেন নেতাজীর ছোঁয়া পাওয়া সেই সাধারণ কাঠের চেয়ারটিকে। পরিবারের কূলদেবী মনসার নিত্য পুজোর পাশাপাশি শূন্য কাঠের চেয়ার কর্মকার বাড়িতে পূজিত হয় দেবতা জ্ঞানে। শূন্য কাঠের চেয়ারকে ঘিরে যাবতীয় আবেগ ও অহঙ্কার আবর্তিত হয় দেশুড়িয়া গ্রামের কর্মকার পরিবারের।

 

কলমে : আবদুল হাই।

Share This
Categories
রিভিউ

বাংলায় হুগলির বৈঁচিগ্রাম বইমেলায় ফুটে উঠলো বাংলা জনপদে বই প্রেমের রঙ্গিন প্রচ্ছদ।

মন সারস সহিত্য ডেস্ক, সৌগত রাণা কবিয়াল:- ভারতবর্ষে তক্ষশিলা যুগ থেকে আজকের হালফ্যাশন অনলাইন পিফিএফ-এ লেখকদের সৃষ্টি পরিচয় নিবন্ধন… পুরোটা পথ জুড়েই বইয়ের প্রতি, জ্ঞানের প্রতি মানুষের অদম্য উচ্ছ্বাস… যার পরিমার্জনায় শীতের আরাম-আদুরে উৎসবমুখর বাঙালীর চতুর্দশতম পার্বণ হিসেবে বইমেলার অলিখিত স্বীকৃতি…!

শীতকাল মানেই হাজার উৎসবের মাঝে জায়গা করে নেওয়া বই উৎসব বা বই পার্বণ…. কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা কিংবা বাংলাদেশের একুশে বইমেলার মতন বৃহৎ পরিসরের পাশাপাশি জেলায় জেলায় ছোট শহর কিংবা গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এরকম অজস্র ক্ষুদ্র স্থানীয় বইমেলা ও লিটল ম্যাগাজিন মেলা…..তারই ধারাবাহিকতায় শহর কলকাতা থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরবর্তী হুগলি জেলার একটি বর্ধিঞ্চু গ্রাম বৈঁচিগ্রামের আঞ্চলিক গ্রন্থমেলা- ‘বৈঁচিগ্রাম বইমেলা’…!
গত ৫ই জানুয়ারি থেকে ১২ই জানুয়ারি পর্যন্ত বৈঁচিগ্রামবাসিরা এবার তাদের ১৫ তম মেলা আয়োজন করে বৈঁচিগ্রাম অগ্রগামী সংস্থার অসাধারণ পরিচালনায়…!

‘গ্রাম থেকে জেগে ওঠে প্রাণ’ থিমকে সামনে রেখে এই বইমেলায় প্রায় ত্রিশটি বিভিন্ন প্রকাশনী সংস্থার অংশগ্রহণে বৈঁচিগ্রাম বইমেলা হয়ে উঠেছিলো বাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতির এক চমৎকার মেলবন্ধন…! শীত উৎসবের ভীড়ে মেলার মাঠ প্রাঙ্গণে স্থানীয় শিশু থেকে প্রবীণ, সকল আপামর মানুষের উৎসবমুখর পদচারণায় মেলা মঞ্চের আলো ছড়িয়ে পড়ে বইমেলার প্রতিটি কোনে….! গুগল মাষ্টার মশাইয়ের এই যুগেও নতুন বইয়ের গন্ধ নিতে মেলা প্রাঙ্গণে বই প্রেমীদের ভীড় ভীষণ আশা জাগানিয়া সুখ এনে দেয়…!

সাত দিন ব্যাপি এই পুস্তক মেলার উদ্ভোদন করেন বিশিষ্ট কবি মৃদুল দাশগুপ্ত মহাশয়..উপস্থিত ছিলেন কবি তনুশ্রী রায় মহাশয়া…! মেলা উপলক্ষে ভিন্ন-ভিন্ন দিন নানান সাংস্কৃতিক আয়োজনের মাঝে বিশেষ সাহিত্যিকগনের উপস্থিতিতে মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ সাহিত্য আলোচনা…! সেখানে উপস্থিত হয়ে গ্রামীণ জনপদে সাহিত্য নিয়ে মুল্যবান আলোকপাত বর্ষীয়ান কবি গীতিকার অরুণ চক্রবর্তী মহাশয়, সাহিত্যিক রজত পুরোকায়স্থ মহাশয় ও কবি সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক সাংবাদিক সৌগত রাণা কবিয়াল মহাশয়…! তাদের পাশাপাশি মেলা মঞ্চে সংবর্ধিত হোন স্থানীয় সাহিত্যিক ঘরের মেয়ে মনীষা বন্দ্যোপাধ্যায়…!
মনোজ্ঞ সঙ্গীত সন্ধ্যায় মেলা মঞ্চে নিজেদের অপূর্ব সুর মূর্ছনায় আগত বই প্রেমিদের মুগ্ধতায় পরিপূর্ণ করেন জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী লোপামূদ্রা মিত্র, রূপঙ্কর বাগচি এবং সুরজিৎ ও বন্ধুরা…! মেলায় মঞ্চস্থ হয় নাটক ইচ্ছামৃত্যু… অনুপম বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনায়, রাহুল গোস্বামীর নির্দেশনায় চমৎকার এই নাটকটিতে অভিনয় করেন, জগবন্ধু বন্দ্যোপাধ্যায়, পাপিয়া মুখোপাধ্যায়, প্রজিৎ চ্যাটার্জি, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও
অর্নব ঘোষ প্রমুখ…!


ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পৃষ্ঠপোষকতায় বিহারী লাল মুখার্জীর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত বি-এল মুখার্জি বিদ্যালয়ের মাঠ প্রাঙ্গণে
বৈঁচিগ্রাম বইমেলার উদ্ভোদনী দিনে উপস্থিত ছিলেন মাননীয়া বিধায়িকা ডক্টর রত্না দে নাগ মহাশয়া, পান্ডুয়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি চম্পা হাজরা মহাশয়া, পান্ডুয়া পঞ্চায়েত সমিতির কর্মদক্ষরা ও জেলা পরিষদের সদস্য ও সদস্যরা, বাটিকা বৈচি অঞ্চলের প্রধান ও উপপ্রধান ও সমাজসেবী আব্দুল মান্নান মহাশয়, অঞ্চলের সব সদস্য সদস্যরা ও আরো বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এবং বইমেলার সম্পাদক সঞ্জিত ব্যানার্জি মহাশয়…!

৯৬০ সালের পরবর্তী সময়ে প্রাচীণ চিনা-দের বইয়ের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে ‘শানবিন’ এর প্রচলন… পৃথিবীতে বই সংগ্রহের প্রাচীণতম এই উদাহরণের পাশাপাশি সক্রেটিস সময়েও জ্ঞান অর্জনে বই কেনা বেচার কথা উল্লেখ পাওয়া যায়…! তবে প্রচলিত ইতিহাস অনুযায়ী খ্রিষ্টীয় পনেরো শতকে জোহানস গুটেনবার্গ মুদ্রণযন্ত্র বা ছাপাখানা আবিষ্কার করার পর থেকে জার্মানিতে লিপজিগ মতান্তরে ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে ছাপা বইমেলার প্রারম্ভিক সূচনা থেকে পরবর্তীতে ১৭ শতকের পর ইউরোপসহ বিশ্বের আরও কিছু দেশে বইমেলা বা গ্রন্থমেলা মানুষের শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জনের অন্যতম উৎসব হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করে…!

গাছের বল্কলে, গুহায়, পাথরের গায়ে নানান আঁকাবুকির মাধ্যমে তাদের নিজস্ব ও অবস্থানগত বিবরণ তুলে ধরার যে চর্চা শুরু হয়েছিলো..আজকের বইমেলা যেন তারই অত্যাধুনিক বিবর্তন…!
প্রায় চার হাজার বছর আগে প্রাচীন মেসোপটেমিয়ায় ( বর্তমান ইরাক ও সিরিয়া ) ‘গিলগামেশ’ পৃথিবীর প্রথম উপন্যাস থেকে আজকের বৈঁচিগ্রাম বইমেলার মতন আঞ্চলিক বইমেলাগুলোতে বাবা মায়ের হাত ধরে আসা ছোট শিশু সাহিত্যিকদের ভাবনার চিত্রপটে লেখা শিশুতোষ গল্পের বইয়ের সচিত্র মলাট…..
এ যেন এক পূর্ণ পৃথিবীর সভ্যতার কথা বলে যায়…!

সভ্যতার যাদুর ঝুলি যতই জীবনকে দুর্দান্ত বেগ এনে দিক না কেন, মানুষের মনের কথাগুলোর কল্প চিত্রের আবেগ হয়ে বইমেলা সবসময় থাকবে সময়ের বর্তমান চাকায়…!
বই কিনুন..বই পড়ুন..বই উপহার দিন প্রিয়জনকে…!
ধন্যবাদ…

 

সৌগত রাণা কবিয়াল—
— কবি সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক

Share This
Categories
অনুগল্প গল্প

টুকাই : রাণু সরকার।

পতিত বস্তু পথ থেকে তুলে তুলে জড়ো করে বস্তায় নানান জায়গা থেকে, কখনো ডাস্টবিন ঘেঁটে।
ছোটবেলা থেকে বঞ্চিত মাবাবার ভালোবাসা থেকে। এমন অনেক ছেলেমেয়ে আছে যারা মা বাবার সাথেই কুড়িয়ে বেরায় জঞ্জাল।
এই আবর্জনা কুড়িয়ে বিক্রি করে যা টাকা পায় কোনরকমে পেট চলে, ওদের ঘর নেই, রাস্তার ধারে ঝুপড়ি বানিয়ে দিনের পর দিন কাটিয়ে দেয়।
মেয়েদের সমস্যা বেশিরভাগ,অন্ধকার নেমে আসলেই ভয়ে ভয়ে রাত কাটে- কখন কি অঘটন ঘটিয়ে দেয় হিংস্রের দল। একদিন এক ঝুপড়ির দুহিতার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে হিংস্র জন্তু, মনে হয় তার খাদ্যের অনটন দেখা দিয়েছিল, আসলে বিনামূল্যে গায়ের জোরে খাবার মেলে যে ঝুপড়িতে। সেই দুহিতা কিছুদিনের মধ্যেই হয় অন্তঃসত্ত্বা, আর কি করা ওদের সাথে তো কেউ নেই ঘৃণার চোখে দেখি তাই অস্বাভাবিক ভাবেই হলো গর্ভমোচন। এরাতো টুকাই- তাই না?ছেলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হলো কিছুদিন লালনপালনও করলো। কি জানি কে চুরিও করে নিলো শিশুটিকে সন্তান হারা মা এখন পাগল।কে করবে ওর চিকিৎসা?

পাশের এক ঝুপড়ির টুকাই সব দেখে ভয় পেলো – ওরকম যদি ওর হয়।
এই টুকাই একটু বুদ্ধিমতী ছিলো তাই সে একদিন জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যবহৃত আবরক কিনে রাখলো তার আত্মরক্ষার হাতিয়ার হিসেবে। এক ওষুধের দোকান থেকে-দোকানী টুকাইয়ের কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে-ভাবতে থাকে যে কি করবে-হয়তো পরে ভাবনার উত্তর ঠিক খুঁজে পেয়েছে।
কোন হিংস্র আসলে অনিচ্ছাকৃত এই অস্ত্রটি হাতে তুলে দিয়ে বলবে, এই নে– আমার অস্ত্র দিয়ে আমাকে খুন কর—

ভাবা যায় না সচরাচর এইরকম ঘটেই চলছে- এই টুকাই দের কথা ভাবি না, নিজেকে নিয়েই থাকি ব্যস্ত।

Share This
Categories
কবিতা

বিজয়িনী : শীলা পাল।

তুমি কখনও ভেবেছ কি
একটা বিশাল সাম্রাজ্য যখন হারিয়ে যায়
অথবা জীবন থেকে মুছে যায়
সেই শূন্যতা তোমার বুকে শত সহস্র
সমুদ্র ঢেউয়ের মত আছড়ে পড়বে
সেই ভার বহন করার শক্তি তোমার আছে কী না আমার জানা নেই
সেই ক্ষমতা তুমি অর্জন কর
সতত এই প্রার্থনা করে যাই
তুমি আবার সগর্বে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলবে আমি হারতে শিখি নি
সেই অভিপ্রেত দিনটির অপেক্ষায় বসে
থাকব আমি।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

স্বামী বিবেকানন্দ — আজও প্রাসঙ্গিক : দিলীপ রায় (৯৪৩৩৪৬২৮৫৪)।

স্বামী বিবেকানন্দ শুধু বাঙালির জীবনের এক আদর্শ মহামানবই নন, তিনি যুগাবতার । তিনি ছিলেন একজন হিন্দু সন্ন্যাসী, দার্শনিক, লেখক, সংগীতজ্ঞ এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর ভারতীয় অতীন্দ্রিয়বাদী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের একমাত্র শিষ্য । তাঁর দেখানো আদর্শের রাস্তা যুক্তিবোধের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় মানুষকে। আধ্যত্মকে এক অন্য পর্যায়ে উন্নত করে বিবেকানন্দ সকলের জীবনকে আরও বেশি করে আলোর দিকে ঠেলে দিয়েছেন । স্বামী বিবেকানন্দ জীবপ্রেমের দীক্ষা পান শ্রীরামকৃষ্ণের কাছ থেকে, যেখানে তিনি বলেছেন ‘যত্র জীব, তত্র শিব’। জীবের সেবা করলে স্রষ্টারও সেবা করা হয় । স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ । সবার আগে মানব সেবা । সুতরাং মানুষের সেবার মাধ্যমে ঈশ্বরের সেবা করা সম্ভব। জীবপ্রেমের দর্শন প্রকাশ পেয়েছে তাঁর দুটি চমৎকার লাইনেঃ
“বহুরুপে সম্মুখে তোমার ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর ?
জীবপ্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর ।“
তাই আমরা কেউ বিবেকানন্দকে পরিপূর্ণভাবে বুঝিনি । কারণ তিনি ছিলেন বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব । তিনি প্রচুর বই পড়তেন । দর্শন, ধর্ম, ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, শিল্পকলা, সাহিত্য, ইত্যাদি বিষয়ে । তা ছাড়া তাঁর বিশেষ আগ্রহ ছিল বেদ, উপনিষদ, ভাগবতগীতা, রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ, প্রভূতি হিন্দু ধর্ম গ্রন্থে । যার জন্য সংগীত, চিত্রকলা, দর্শন, রাষ্ট্রনীতি, ইতিহাস, অর্থনীতি, সমাজতত্ব, ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর ছিলো গভীর ব্যুৎপত্তি । তাই তিনি নিজেই বলেছেন, “বিবেকানন্দকে বুঝতে হলে আরেক বিবেকানন্দকে দরকার” । কর্মী বিবেকানন্দ, সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ, গুরু বিবেকানন্দ, শিষ্য বিবেকানন্দ, জ্ঞানী বিবেকানন্দ, যোগী বিবেকানন্দ, কবি বিবেকানন্দ সবই বাহ্য । কারণ এই সমস্ত গুণেই তিনি শীর্ষস্থানের অধিকারী হলেও তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয়, ‘ভালোবাসায় ভরা হৃদয় বিবেকানন্দ’ ।
বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের “শিব জ্ঞানে জীব সেবা” মন্ত্রে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন । তাই তিনি মানুষের কল্যাণ সাধনকেই প্রকৃত ঈশ্বর সাধনা বলে মনে করেছিলেন ।
বিবেকানন্দ ছিলেন মানব প্রেমিক সন্ন্যাসী । মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি ধর্ম ও বিজ্ঞান উভয়কেই সমানভাবে প্রয়োজন বলে মনে করেছিলেন । তাঁর মতে “ধর্ম”” মানুষের অন্তর্নিহিত দেবত্বকে ফোটাবে । বিজ্ঞান মানুষকে সুখ ও সমৃদ্ধি উপহার দেবে । শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ প্রথমে আত্মবিশ্বাসী হবে । আর আত্মবিশ্বাস থেকে আসবে আত্মনির্ভরশীলতা । বিবেকানন্দের মতে, শিক্ষাই সমাজের সকল সমস্যা দূরীকরণের মূল চাবি কাঠি । শিক্ষার আলো মানুষের মনের অন্ধকারকে দূর করে এবং মানুষকে স্বনির্ভর করতে সাহায্য করে । বিবেকানন্দের শিক্ষা পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্যেই ছিল সমাজে যথার্থ “মানুষ” তৈরি করা –যাতে চরিত্র গঠিত হয়, মনের শক্তি বাড়ে । বুদ্ধি বিকশিত হয়, মানুষ নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াতে শেখে । উপরন্ত বিবেকানন্দের শিক্ষা ছিল সার্বজনীন । তিনি চেয়েছিলেন বিশেষভাবে যুব সমাজের নবচেতনার অভ্যুদয় । নিষ্ঠা, সততা ও আত্মনির্ভরতা ছিল তাঁর আরাধ্য । এসব গুণ জগতের সব সমাজের সব মানুষেরই সম্পদ ।
( ২ )
এখানে বিশেষভাবে প্রনিধানযোগ্য – বিবেকানন্দ যেভাবে ভারতবর্ষকে চিনেছিলেন বা অনুভব করেছিলেন, অন্য কোনো ব্যক্তি ঠিক সেভাবে ভারতবর্ষকে অনুভব করতে পারেননি । পুণ্যভূমি ভারতবর্ষে জন্মগ্রহণ করে বিবেকানন্দ ধন্য মনে করেছিলেন । ভগিনী নিবেদিতার ভাষায়, “তিনি নিজেই হয়ে উঠেছিলেন ভারতবর্ষ – রক্তমাংসে গড়া ভারত প্রতিমা ।“ আর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ রোমাঁ রোলাঁকে (ফরাসী সাহিত্যিক) বলেছিলেন, “যদি ভারতবর্ষকে জানতে চাও বিবেকানন্দকে জানো । বিবেকানন্দের লেখা আগে পড়ো । “
বিবেকানন্দ সহজে ঠাকুর রামকৃষ্ণ দেবকে গুরু মানেননি । প্রথমদিকে নরেন্দ্রনাথ রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবকে গুরু বলে মেনে নিতে অস্বীকার করেছিলেন । এমনকি তাঁর চিন্তাভাবনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ প্রকাশ করেছিলেন । অথচ উল্টে তিনি রামকৃষ্ণ দেবের ব্যক্তিত্বের কাছে বিশেষভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলেন । যার জন্য ঘনঘন তিনি দক্ষিণেশ্বরে যাতায়াত শুরু করেন । ব্রাহ্ম সমাজের সদস্য নরেন্দ্রনাথ সেইসময় মূর্তিপূজা, বহুদেববাদ, রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের কালী পুজা সমর্থন করতেন না । এমনকি অদ্বৈত বেদান্তমতবাদকেও তিনি ঈশ্বরদ্রোহিতা ও পাগলামি বলে উড়িয়ে দিতেন । নরেন্দ্রনাথ রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবকে পরীক্ষা করতেন । রামকৃষ্ণ দেবও শান্তভাবে তার যুক্তি শুনে বলতেন, “সত্যকে সকল দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা করবি ।“
১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের গলায় ক্যান্সার ধরা পড়ে । চিকিৎসার প্রয়োজনে তাঁকে প্রথমে উত্তর কলকাতার শ্যামপুকুর ও পরে কাশীপুরের একটি বাগান বাড়িতে স্থানান্তরিত করা হয় । সেখানেই নরেন্দ্র নাথের ধর্ম শিক্ষা চলতে থাকে । কাশীপুরে নরেন্দ্রনাথ নির্বিকল্প সমাধি লাভ করেন । তারপর রামকৃষ্ণ দেবের কাছ থেকে সন্ন্যাস ও গৈরিক বস্ত্র লাভ করেন । রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব নরেন্দ্রনাথকে শিক্ষা দেন “মানব সেবাই ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ সাধনা” । এরপর ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই আগষ্ট শেষ রাত্রে কাশীপুরেই রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব প্রয়াত হন । ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে নরেন্দ্রনাথের গুরুভ্রাতা বাবুরামের মা নরেন্দ্রনাথ ও অন্যান্য সন্ন্যাসীদের আঁটপুরে আমন্ত্রণ জানান । সেখানেই তাঁরা রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের মতো জীবন যাপনের সিদ্ধান্ত নেন । তখন নরেন্দ্রনাথ “স্বামী বিবেকানন্দ” নাম গ্রহণ করেন ।
এরপরে পরিব্রাজকরূপে তাঁকে আমরা কী দেখলাম । ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে পরিব্রাজকরূপে মঠ ত্যাগ করেন বিবেকানন্দ । পরিব্রাজক হিন্দু সন্ন্যাসীর এক ধর্মীয় জীবন — এই জীবনে তিনি স্বাধীনভাবে পর্যটন করে বেড়ান কোনো স্থায়ী বাসস্থান ও বন্ধন ছাড়াই । পরিব্রাজক জীবনে বিবেকানন্দের সঙ্গী ছল একটি কমন্ডলু, লাঠি এবং তাঁর প্রিয় দুটি গ্রন্থ –ভাগবদ্গীতা ও ইশানুসরণ । বিভিন্ন ধর্মসম্প্রদায় ও সমাজ ব্যবস্থার সঙ্গে সুপরিচিত হন । এই সময় ভিক্ষোপজীবী হয়ে সারা ভারত পদব্রজেই পর্যটন করেন বিবেকানন্দ । সেইজন্য বিবেকানন্দকে সারা বিশ্বের মানুষ “পরিব্রাজক” হিসেবে জানে । ভারতবর্ষ পর্যটনের সময় তিনি বিভিন্ন পণ্ডিত, দেওয়ান, রাজা এবং হিন্দু-মুসলমান, খ্রিষ্টান এমনকি নিম্নবর্গীয় ও সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গেও মেলামেশা ও একসঙ্গে বাস করেন ।
( ৩ )
১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বারাণসী থেকে যাত্রা শুরু করেন । তখন সাক্ষাৎ হয় বিশিষ্ট বাঙালী লেখক ভূদেব মুখোপাধ্যায় ও বিশিষ্ট সন্ত ত্রৈলঙ্গস্বামীর সাথে । বৃন্দাবন, হথরাস ও হৃষীকেশে ভ্রমণের সময় হথরাসে তাঁর সঙ্গে স্টেশন মাস্টার শরৎচন্দ্র গুপ্তের সাক্ষাত হয় । তিনি পরে বিবেকানন্দের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে সদানন্দ নামে পরিচিত হন । তিনি ছিলেন বিবেকানন্দের প্রথম যুগের শিষ্য । ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দে আবার নৈনিতাল, আলমোড়া, দেরাদুন, ঋষীকেশ, হরিদ্বার এবং হিমালয় ভ্রমণে যান । তারপর রওনা দেন দিল্লি । এইভাবে পশ্চিম ভারত, দক্ষিণ ভারত ভ্রমণ সারেন ।
১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে ৩০শে জুন থেকে ১৪ই জুলাই শিকাগো যাওয়ার পথে বিবেকানন্দ জাপান ভ্রমণ করেন । তিনি ঘুরে দেখেছিলেন কোবে, ওসাকা, কিওটো, টোকিও আর য়োকোহামা শহর । ১০ই জুলাই ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে য়োকোহামার ওরিয়েন্টাল হোটেল থেকে তাঁর ভক্ত মাদ্রাজের আলাসিঙ্গা পেরুমলকে লেখা চিঠিতে বিবেকানন্দ জানিয়েছিলেন জাপান নিয়ে তাঁর মুগ্ধতার কথা । তিনি জাপানীদের “পৃথিবীর সবচেয়ে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন জনগণের অন্যতম” বলে অভিহিত করেছিলেন । তারপর চিন, কানাডা হয়ে তিনি শিকাগো শহরে পৌঁছান ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে । কিন্তু শিকাগো শহরে পৌঁছে মূলত দুটি সমস্যায় পড়েন । মহাসভা শুরু হতে দেড় মাস বাকী । অন্যটা কোনো খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানের প্রশংসাপত্র বা পরিচয়পত্র ব্যতিরেকে কোনো ব্যক্তিকে প্রতিনিধি হিসাবে বিশ্বধর্ম মহাসভায় গ্রহণ করা হবে না । তারপর তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন হেনরি রাইটের সংস্পর্শে এলেন । তাঁকে হার্ভার্ডে আমন্ত্রণ জানানোর পর এবং ধর্মসভায় বক্তব্যদানে বিবেকানন্দের প্রশংসাপত্র না থাকা প্রসঙ্গে রাইটের বক্তব্য, “আপনার কাছে প্রশংসাপত্র চাওয়াটা হচ্ছে স্বর্গে সূর্যের আলো দেওয়ার অধিকার চাওয়ার মতো অবস্থা ।“ রাইট তখন প্রতিনিধিদের দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নিকট এক চিঠিতে লিখলেন, “আমাদের সকল অধ্যাপক একত্রে যতটা শিক্ষিত ইনি তাঁদের থেকেও বেশী শিক্ষিত ।“
বিশ্বধর্ম মহাসভা ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই সেপ্টেম্বর শিকাগোর আর্ট ইনস্টিটিউটে উদ্বোধন হয় । তিনি ভারত এবং হিন্দু ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করেন । পাশ্চাত্যে অভিযানের নিরিখে যেসব অভিজ্ঞতা, তাতে শিকাগো বিশ্বধর্ম মহাসম্মেলনে উপস্থিত হয়ে ভারতীয় সনাতন ও বেদান্তের উপর ভাষণ দেওয়া ভীষন তাৎপর্যপূর্ণ । তাঁর বক্তব্য শুরু করলেন, “আমেরিকার ভ্রাতা ও ভগিনীগণ …।“ — সম্ভাষন করে । তাঁর বক্তব্যে সহিষ্ণুতা ও মহাজাগতিক গ্রহণযোগ্যতা প্রসঙ্গ ওঠে । গীতা থেকে উদাহরণমূলক পংক্তি তুলে ধরেন । তাঁর বক্তব্যে বিশ্বজনীন চেতনা ধ্বনিত হয় ।
প্রেসের কাছে তিনি “ভারতের সাইক্লোন সন্ন্যাসী” হিসেবে অভিহিত হন । “নিউ ইয়র্ক ক্রিটিক” লিখেছিল “ঐশ্বরিক অধিকারবলে তিনি একজন বক্তা এবং তাঁর শক্তিশালী, বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার চেয়ে বরং আগ্রহোদ্দিপক ছিল ঐ সকল ছন্দময়ভাবে উচ্চারিত শব্দসমূহ ।“ আমেরিকার পত্রিকাসমূহ বিবেকানন্দকে “ধর্মসভার সবচেয়ে মহান ব্যক্তিত্ব” হিসেবে প্রতিবেদন লিখেছিল । পরবর্তীতে শ্রীমতি অ্যানি বেসান্ত ভারতে ফিরে এসে লিখেছিলেন, “গেরুয়াধারী কম বয়স্ক প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বধর্ম মহাসম্মেলন মঞ্চে বিবেকানন্দ ছিলেন সূর্যের মতো তেজস্বী এক পুরুষ ।“
তারপর ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই ডিসেম্বর আমেরিকা ও ইংল্যান্ড ভ্রমণ শেষে ইংল্যান্ড থেকে ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা দেন । তারপর ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই জানুয়ারী কলম্বো তিনি পৌঁছান ।
( ৪ )
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই বিবেকানন্দের সদর্থক ভূমিকা । রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের একনিষ্ঠ ভক্ত সুভাষ চন্দ্র বসু । সেই বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু বলেছিলেন, বিবেকানন্দ ছিলেন “আধুনিক ভারতের স্রষ্টা ।“ জাতীয়তাবাদ নিয়ে বিবেকানন্দের চিন্তাভাবনার প্রতি তিনি ছিলেন সতত সংবেদনশীল । সুতরাং বিবেকানন্দের স্বদেশমন্ত্র দেশ স্বাধীনতার প্রেক্ষাপটে বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ । বলা চলে বিবেকানন্দ স্বাধীনতা আন্দোলনকে প্রভাবিত করেছিলেন । যার জন্য মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, “বিবেকানন্দের রচনা তাঁর “দেশপ্রেম হাজারগুণ” বৃদ্ধি করেছিল ।“ যখন পরাধীন ভারতবাসী আত্মশক্তি হারিয়ে ফেলেছিল, তখন বিবেকানন্দ চেয়েছেন মানুষের আত্মশক্তির বিকাশ । তাই তিনি বলেছেন, “তোমরা ঈশ্বরের সন্তান, অমৃতের অধিকারি, পবিত্র ও পূর্ণ । তুমি নিজেকে দুর্বল বলো কী করে ? ওঠো, সাহসী হও, বীর্যবান হও ।“
স্বদেশমন্ত্রে তিনি বলেছেন, হে ভারত, এই পরানুবাদ, পরানুকরণ, পরমুখাপেক্ষা, এই দাসসুলভ দুর্বলতা, এই ঘৃণিত জঘন্য নিষ্ঠুরতা … এইমাত্র সম্বলে তুমি উচ্চাধিকার লাভ করবে ? এই লজ্জাকর কাপুরুষতা সহায়ে তুমি বীরভোগ্যা স্বাধীনতা লাভ করিবে ? হে ভারত, ভুলিও না তোমার নারীজাতির আদর্শ সীতা, সাবিত্রী, দময়ন্তী । ভুলিও না, তোমার উপাস্য উমানাথ সর্বত্যাগী শঙ্কর । ভুলিও না, তোমার বিবাহ, তোমার ধন, তোমার জীবন ইন্দ্রিয়সুখের —নিজের ব্যক্তিগত সুখের জন্য নহে । ভুলিও না, তুমি জন্ম হতেই “মায়ের” জন্য বলিপ্রদত্ত । ভুলিও না, নীচজাতি, মুর্খ, দরিদ্র, অজ্ঞ, মুচি, মেথর তোমার রক্ত, তোমার ভাই । হে বীর, সাহস অবলম্বন করো, সদর্পে বলো —- আমি ভারতবাসী, ভারতবাসী আমার ভাই । বলো, মুর্খ ভারতবাসী, দরিদ্র ভারতবাসী, ব্রাহ্মণ ভারতবাসী, চন্ডাল ভারতবাসী আমার ভাই । সদর্পে বলো, ভারতবাসী আমার ভাই, ভারতবাসী আমার প্রাণ, ভারতের দেবদেবী আমার ঈশ্বর, ভারতের সমাজ আমার শিশুশয্যা, আমার যৌবনের উপবন, আমার বার্ধক্যের বারাণসী । বলো ভাই, ভারতের মৃত্তিকা আমার স্বর্গ । ভারতের কল্যান, আমার কল্যান । “
১৯০২ খ্রিষ্টাব্দের ৪ই জুলায় রাত ৯.১০ মিনিটে ধ্যানরত অবস্থায় দেহত্যাগ করেন । তাঁকে বেলুড়ে গঙ্গা নদীর তীরে একটি চন্দন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া চিতার উপর দাহ করা হয় । যার বিপরীত পাশে ষোলো বছর আগে রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের মরদেহ দাহ করা হয়েছিল ।
আজ তাঁর শুভ জন্মদিন (জন্মঃ ১২ই জানুয়ারী, ১৮৬৩) । তাঁর শুভ জন্মদিনে আমার শতকোটি প্রণাম ।
———–০————–

Share This
Categories
কবিতা

প্রণাম স্বামীজী : মীনাক্ষী।

স্বামীজী তোমায় প্রণাম জানাই
তুমি বীর সন্ন্যাসী
পথ দেখিয়েছো মোদের সদাই
ঘুরে সেই পথেতেই যেন আসি।

পুরোভাগে তুমি পিছনে তোমার
অজ্ঞান মানব দল সাথে
ধন্য তুমি বিবেকানন্দ
ঠাকুর মায়ের আশীর্বাদে।

অগ্নিমন্ত্রে জ্বালিয়েছিলে
যেই শিক্ষার আলো
জ্ঞানের সে দ্বার খুলে গিয়েছিল
জ্বেলেছ অন্ধ মনের আলো।

তোমার মুখের বক্তৃতামালা
সাড়া ফেলেছিল দেশে, বিদেশে
তুমিই মহান, অন্ধসংস্কারের
করেছিলে বন্হীসংস্কার শেষে।

কথামৃতের অমৃত বাণী কে
ছড়িয়ে দিয়েছিলে তুমিই
প্রদীপের আলোর মত
মানুষকেও জাগিয়েছো তুমিই।

নারীকে তুমি সম্মান দিয়ে
দিয়েছ সমাজ সংস্কারের মন্ত্র
আজকে তোমায় প্রণাম জানাই
হে স্বামীজী, হে বিবেকানন্দ।।

Share This
Categories
কবিতা

চন্দনকাঠের চাঁদ, চিতা ও চমৎকার :: শুভঙ্কর দাস।।।


অনশ্বর গুহার ভেতর ছুটন্ত স্পন্দন
সময়রাক্ষসের চোখে তুচ্ছ, অতি সামান্য অথচ ব্রহ্ম-উদ্যম
তাতেই অলীক নির্মিত গোটা ভুবনের সম্রাট ও সিংহাসন!


মাঘী সংক্রান্তীর কোনো তারাখসা রাত
রক্তমাংসের পুষ্পবৃষ্টি, ঘড়ির কাঁটার উল্লম্ফনসম
ভয়ার্ত জন্ম-আঙুল,চেপে ধরে অনিদ্রিত,অগাধ সফেন স্তন!


কোনো অঙ্কে বিভাজিত নয় অঙ্ক অথচ দৃশ্য শুরু
দিগন্তে মিশে যাওয়া সাদা বলাকার পাখা,সবুজ শীষের শরীর বেয়ে নামা শিশির, ধানসিদ্ধ উনুনের লালাভমুখ
অরব আয়োজনের সাক্ষী
পথচলা গুহার চিত্রের শিকারের পর অবিরাম শান্তি।


অভিযানে অ্যামিবার আলস্যমাখা চিহ্ন বুকের মধ্যে
এনেছে বক্বল বিশুদ্ধতা, গতি তো দুর্বোধ্য, বৃক্ষের পাশে
মাথায় ময়ূরপালক বেঁধে চোখ দেখানো অসূর্যকে
রূপকথার চেয়েও অসীম,অবধারিত..


অরণ্যের সকল পোশাক ফেলে আলোর স্বভাবসত্য
স্নায়ুকিরণ চলাচল সেই মহাশূন্য থেকে পিঁপড়ের পায়ের নূপুরের ধ্বনির মাঝে, যেখানেই আর্তনাদ
প্রার্থনা শিশুহাতের,শুভ্রতার মেঠো অনুবাদ


জলজ পরিবার,শ্বাস ভরে নিয়ে সপরিবারে বাঁশি
হয়ে ওঠার নিরলস নিমগ্নতা,বসুন্ধরা বিজয়ের হাসি
কোনো জীবাস্মস্মৃতির ভেতর গোপন রেখে
এই উপলব্ধি, হৃদয়ের সুউচ্চতা ও স্থাপত্য কল্পনাতীত!


ক্ষমা শব্দের ভেতর রক্ত,শূল,কাঁটা আর বহনকারী মিথ্যের দোষারোপ, আশেপাশে সবই শব,শুধু শিরের
মাঝখানে জাগ্রত তৃতীয় নয়ন
জ্বলছে, জ্বলছে নারীত্ব,পুরুত্বের কাঠে ও কাঠামোয়..


তুষারক্ষেত্রে অযুত পায়ের চিহ্ন পাবে না,শিবরেখা
বরাবর পড়ে আছে পৃথিবীজন্মের কথা,কোথায় ছিল সেই মহাজাগতিক ছিদ্র, মাতৃযোনী,বিস্ফোরণ!
সকল প্রাণ,আসলে ধ্বংসাবশেষ…


স্বপ্নের ভেতর সারাৎসার সিঁড়ি, অথচ কতক্ষণ স্থায়ীত্ব!
হৃদয়ের সক্রিয় শব্দের মূর্তি, সে দৈব হোক বা অদৈব
অঘোষিত সিদ্ধান্ত এই,নিজের সৃষ্টিকে প্রশ্ন না করে
নিজেই উত্তরলিপি পাঠ করো নিজের আয়নায়…

১০
পর্যায়ে রেখা মাত্র দুটি, আদম ও ইভ, সত্যি কোনো
গল্পের নটেগাছ না হলেও প্রতিটি মাটির নিচে শিকড়
যাচ্ছে, কোন টানে? চেতনার অধিকৃত প্রাণে
অস্ত্রগুলি পরীক্ষিত, শুধু আহত ও পরবর্তী শুশ্রূষার
কাহিনি শিশু শুনতে থাকতে মাতৃগর্ভে

১১
অন্তহীন সন্তরণে জল পেতেও পারো আবার নাও পেতে পরো,সাঁতার অশেষ,অমোঘ এবং অপরিবর্তনীয়
নদীর কাছে নৌকা মিলনপ্রত্যাশী,অথচ স্থিরতা নেই
পিতা-মাতার চক্ষু-চমাড়া,সেই ধ্বনিত প্রকাশ

১২
খাঁচা নির্মাণই দেবত্ব,এই দিলাম চাঁদ,এই দিলাম জোছনা
এই দিলাম জোনাকি,এবার আর্ষপ্রয়োগের আবেগে
বিদ্যুৎ, বিনত প্রস্তাব, বৃষ্টি ও মুখর-মেঘে
সব কাঁচাপাকা সন্তানই জয়ের স্মারক…

১৩
আঁচলের হলুদ শস্য, আলপনা সেই স্বর্গাবোধি
অনিপুণ হাতের সোহাগ মাখানো সহবাস
লক্ষ্মীবিদ্যা শেখানোর যুগান্তর শাঁস, যেভাবে নতুন ফসলের গান,মনকণিকার অভিভাবক,অযান্ত্রিক!

১৪
জ্ঞানের কাছে থেমে আছে যা,ক্ষুধার সৈকতস্বাদ
রোদপোহানোর মতো পুঁথিপাঠ,ধর্ম-মোক্ষ-মহৎমঠ
সবই শিশুপালনের মতো আবর্তন
শুধু দীর্ঘরাত পেরিয়ে একটাই লড়াই,মৃত্যু প্রতিদ্বন্দ্বী

১৫
বনমানুষের স্বভাব ঢেলে দিয়েছে ঈশ্বরের অবয়বে
নিজেকে পোশাকের মুখোশে,কাপড়ের সৌজন্যে ঢেকে
নিজেই আবার দায়মুক্ত হয়ে নগ্ন হয় রাতে ও দিনে
কে অন্তরাল? নীলকন্ঠের রেখেছো মোহিত আড়াল!

১৬
অকস্মাৎ জানতে পারল,অনুভব ছাড়া কোনো দরজা
বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে নেই,প্রজ্ঞা, প্রেরণা, প্রদীপ এবং প্রীতি
ফুরিয়েও সঠিক সন্ধি বা সহবাস হয়নি
নিহত চোখের নিচে মুঠো মুঠো বলিরেখা

১৭
সেই মরুপথে যাত্রা, নাভিসরোবরে স্নান,স্বরূপের
সাহসসমগ্র ইতিহাসের অক্ষম পাতা,তার ওপর
মৃতচিতাবাঘের ওপর ছবি তোলার মতো কারুকার্য
অবাক পানীয়,পিপাসার কীরকম সযত্ন সঞ্চারণ!

১৮
জড় ও জমির অধিকাংশ চর্চা ও চেষ্টা, অন্বেষণ
সেইসঙ্গে নরম,তুলতুলে,পদ্মপ্রথম শরীর,খনন
বাদবাকি শুধু শ্রদ্ধাবান হাহুতাশ আর পড়ে থাকে
কিছু জরাসন্ধ ইন্দ্রিয়, যাদের নগ্ন দ্রৌপদীদহন ছাড়া
কিছু বিদ্ধ মহাভারতীয় তীর

১৯
সহসা প্রেমের সারি সারি সঙ্কল্প কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকার তলদেশ পর্যন্ত একে-অপরকে
প্রতিষ্ঠিত করতে,দৃশ্য, দৃশ্যের পালিশ,গান,গানের গভীরতা,প্রস্তাব, প্রস্তাবের সংস্কৃতি, সেই সরলতা প্রথম কদম ফুল

২০
অতি কষ্টে শ্মশান সন্ধিতে আসে,আশির কাছে
বা তারও ঢেলা-ভাঙা আগে দেখিয়ে রাখে চতুষ্পদ
বা আয়তক্ষেত্রের মাপ,স্বয়ং পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার
ছায়াছবি,তবুও সরাসরি মুহুর্ত, চুম্বন

২১
উজ্জ্বল নীলগ্রহ একাই বুকে প্রান ভরে নিয়েছে
যেভাবে ডুবসাঁতার দেওয়ার আগে ভরে নেয় দম
মেঘের আসবাব, মাঠের মাধুকরী, পুষ্পের প্রস্তাব
সব স্বয়ংচালিত ক্ষুদ্রকে করে সুবৃহৎ

২২
কেবল কি কাঠামো? যাবতীয় খড়,মাটি,অস্ত্র
যে গড়ে,তার ফুসফুস, পেট,চরিত্রসংশোধন বিন্যাস
কোনো নক্ষত্র মৃত ছাড়া মাটি ছোঁয় না
ঈশ্বরও ধাতবস্বর, আঘাত হলে আকৃতি পায়

২৩
সরলতা ন্যাংটাশিশুর মতো সকলের গৃহের সামনে ধুলোর গড়াগড়ি দেয়,হাসে,দুর্ঘটনায় কাঁদে
পুনর্বাসন সচেষ্টায় সর্বস্ব বিলিয়ে দেয়,শুধু অশান্ত কিছু ছাঁচ দরজা-জানালা বন্ধ করে

২৪
শব্দহীন বেদনার বাতাসে এগিয়ে চলে মহাশূন্যকারিগর
নিজের নিঃশ্বাসের সঙ্গে কথোপকথন, নিজেকে স্পর্শ
করে প্রাণময় করে তোলে পরবর্তী পর্যায়
সেখানেও প্রবাহিত সম্পর্কের সুজনিশাক, তরতাজা

২৫
উৎসমুখে আগ্নেয়ঘর, একটি মাত্র শিল্পী বেঁচে আছে
তাঁকে করুণা করে কেউ সর্বশক্তিমান বলে বাঁচতে চেয়েছে,স্বর্গের কল্পনার চেয়ে মহৎগুণ এই
পিতৃপুরুষের শেষযাত্রায় মাথায় হাত রেখে,নিরাময়ের
নতুন গল্প শোনানো,সত্যি হলেও হতে পারে…

২৬
চাঁদের সংগীত যেকোনো শরীরকে হরিতকীমন্দির করে তুলতে পারে,জীবাণুর সকল পরিচয়, দৃষ্টি, সহবাস
অথবা পরাক্রমী উৎপাদন ভুলিয়ে রাখে নন্দনতত্ত্ব
শুধু লড়াই নেমেছে সমুদ্রের মতো,পুতুল হতে পারবে না!

২৭
শেষপাতে ঈশ্বর এসে খাবেন বলে,পা-ধোয়ার জল, তুলানরম বক্বল,পরমাসুন্দরী সম্ভাষণ সাজিয়ে রেখে
অনুসরণীয় কোনো নৃত্য-গীত এবং স্তব প্রদর্শিত
শুধু ঈশ্বর পশু-পাখি-গিরিগিটি-কেঁচো অথবা গৃহপালিত
প্রীতিময় পুরাণপাতা,সেটাই রহস্য!

২৮
নদী যেদিকে বহমান,পাহাড় যতটা আকাশভেদী
বৃক্ষের শিকড়কৌশল, সব ভাস্কর্য ও স্থাপত্য শেষে
যা রক্ত-ক্লেদ-কফকে রূপময়-শ্রেয়শ্রেষ্ঠ করেছে
প্রণয়,অশ্বিনীকুমারের রথচক্র ঘষটে গেছে মাটিতে

২৯
পাথরে খোদিতরূপ, অবিশ্বাসের আলোড়নে যদি
সকল মূর্তি ভেঙে যায়,জড়ো করা প্রসাধন, প্রভাব
প্রতিশোধ আগুনে পুড়ে,ছাই
সেই ছাইয়ের ওপর অবতার ঘুমায়,ত্রিশূল শর্ত হয়ে

৩০
চাঁদের দুপিঠেই চাবুক,কুমিরের রোদ পোহানোর মতো
বিস্ময় শুয়ে আছে প্রকাশ্যে,নিজেকে এই যজ্ঞের আগুনে উৎসর্গ করেছে,অষ্টধাতুর সঙ্গে মিশিয়ে
চাঁদের চেয়েও অপরূপ অপরাধ করবে বলে…

৩১
নির্মাণ মাইলের পর মাইল হেঁটে আসে,সেখানে সৌখিন পরীক্ষায় অভিষেক, মুকুট বানানো হয়নি বুকের মাংস কেটে,ক্রিয়াধর্মের সূত্র ধরে অপেক্ষা ফিরে আসবে
যা কিছু অন্তর্গত ভালো,ভালোর মহিমা

৩২
হৃদয় সশস্ত্র ডুবোজাহাজ, নিজের শরীরে সামুদ্রিক
তা নয়, যার দর্শনে শ্বাসকার্য চলে,সেখানে যুদ্ধ, যুদ্ধবিরতি,কেন এই মহাকর্ষীয় আন্দোলন, মুখ,মুখর
কোলাহল,মধ্যমণি,সেই মুদ্রা ও মুগ্ধতা

৩৩
হৃদয়ের পান্ডুলিপি কেউ না কেউ সংবিধান ও সম্রাটের
পায়ের কাছে রেখে,মুক্তি ও মধুরিমা
এই যে অবাধ আবেগ,তার শাসিত কেন্দ্রীয় নিউক্লিয়াস
সবই দাগ রেখে,শুধু উষ্ণতাকে তপসিলি তাম্রযুগ!

৩৪
পদাবলির পাতা ইঁদুরের মুখে,খুদের আকাল
মাঠে মাঠে সবুজের লাশ,হাঁড়ি,কলসি,বাটি,চাল,ডাল
আর বৈষ্ণবী রাত,কন্ঠিবদল করে রৌদ্রবিক্রয়
অপরাহ্নে চক্ষুস্থির, এতো পাঠ বাকি নারীর…

৩৫
একটি পরিচ্ছন্ন কাল,তাই কম্পিত হাতের ওপর রাখা
জয়ের সকল চিহ্ন দিয়ে জলেডোবা রাস্তাটুকু চলাচলের
যোগ্য করে,বিশ্বরূপদর্শন। অতীত,ভবিষ্যৎ ও বর্তমানকে
জানার এই প্রক্রিয়া, সৃষ্টির নিয়ামকের দাঁড়িপাল্লা

৩৬
আত্মা কোথা থেকে নিয়ে এসেছে আনাজ,মাছ,মাংস
স্নানের পর ত্রিপিটক খুলে সাদাবস্ত্র নামিয়েছে শির
সেই শিরে চুম্বন করছে সশরীরে নূর, পরমহংসের কাতর
কান্না মিশে আছে অস্তিত্বে,এবার পোড়ায় মায়া,গাছের ছাল

৩৭
আমলকি করতলে রেখে বলছে, মানুষ নয়,মানুষী নয়
লিঙ্গভেদে শুধু মাতা, নিত্যসিদ্ধ,শুধু উচ্চারণ, পিতা,
মুমুক্ষুবৃক্ষ,মাঝখানে সাধনবর্গ সেই যোনিপথে চক্রাকারে
চমৎকার

৩৮
অরণ্য থেকে বেরানো শ্বাস,শূদ্রের হাতে তৈরি মারণাস্ত্র
বালক চলেছে সাধু-দর্শনে,বালিকা ধরেছে,বালকের
শরীরী পটবস্ত্র, যা নিজের শরীর দিয়ে তৈরি
ক্ষত্রিয় অবাক,বৈশ্য বিগলিত,শুধু একটি জ্যোতিরেখায় ব্রাহ্মণ শূদ্রের পায়ের ধুলোয় মন্ত্র লিখছে

৩৯
বেদান্ত-আয়াত এবং বাইবেলের ধ্বনিত চমৎকার ধ্বনি
একশো শতাংশ আন্তরিক জেনে,বদ্ধজীব, আরও আরও
বদ্ধ হয়ে হাসে,সেই হাসিতে বিদ্যুৎ চিরে যায়
কৃষক শুধু গলায় হাড়ের মালা দেখিয়ে বলে
ক্ষিদের পাতা খুলে খুলে নোঙর বানাব…

৪০
সহসা শেষ কথা,শেষ কথাই,মৃত্যুর মতো সংবাদ
মৃত শোনে না,কোনোদিন, অথচ দশ সহস্র গোধন ও সমপরিমাণ স্বর্ণমুদ্রার আশায় সন্ন্যাসী ও সংসারী
সেই সংবাদের সুষ্ঠু আশায় মৃত্যুকে ভেট দেয়…

৪১
সকল ভিক্ষুক হাত জড়ো করে নদীর ওপর,যাদের শরীরে এখনও রাজসভা লেগে,কষ্ট বেশি তাদের
আর যাদের গায়ে লেগে আছে পথের ধুলোয়
তারা স্নানমাত্র সারস

৪২
শ্বাসকার্যে ঈশ্বরের সন্ধ্যা ও সকাল।গোলাকার একটি বলীয় প্রক্রিয়া, তার ওপর মাটি-পাথর-মাংসের নামকরণ ও বুক চিতিয়ে ওঠার নমুনা,সুনিপুণ বিবরণী হিসেবের
ঐ পর্যন্ত কি আকাশ? হলুদ হ্রদের হাহাকার,শুধু সূর্যপ্রতিম সবুজ সবুজ মদের মতো ঘাস!

৪৩
অমরত্বের ভুল বোঝাবুঝি, উপাস্য তাকেই করেছে যে সবচেয়ে ক্ষুরধার অস্ত্র ধরতে পারে,সেই হত্যার সারাৎসার লীলা,এখন আহ্নিক গতির পৃষ্ঠা ছিঁড়ে
ভুবন গড়ার খেলা,খেলার অধিক অভ্যাস,এমন কি ঈশ্বরীয় বিশ্বাস!

৪৪
ঝুলন্ত মাটির বারান্দা, ধনুকহাতে বীরশ্রেষ্ঠ,স্বর্গামাধুরীর মতো মোহময়ী নারীর কোমরে হাত ক্রেডিটকার্ড ধরে থাকা কুবের,তার অনেক নিচে সিনেমার পোস্টারের নিচে খালি পেটে,না,অভুক্ত নয়, অশ্রু চেটে চেয়ে আছে
নবযুগের নায়ক

৪৫
যেকোনো বৃহৎ রাক্ষসের চেয়ে শক্তিশালী কাম,নিসর্গ, দেব-দেবী,পক্ষীরাজঘোড়া,রূপকথা,সমৃদ্ধনগরের জলপথ,আবিষ্কার, আরামপ্রিয় নিদ্রা,নত হয়ে থাকা মুনি-ঋষির শির
তার চেয়েও জন্মগ্রহণ,মানুষের, মানুষের বাচ্চার..

৪৬
মানুষের বসবাসযোগ্য ভূমি,লেখো,অশ্রু, অশ্রু, অশ্রু

৪৭
অনুতাপ চেতনার শেষ তলে ঢেউ তোলে একা
যেন নিঃসঙ্গ সৈনিক
মহাভারতের কোনো অধ্যায়কে ক্ষমা করবে না

৪৮
এখনও প্রেম সমর্থন পায়নি,জিততে কোনোদিন পারেনি!শুধু অপেক্ষার পাথুরে রেখা অথবা জীবাশ্ম হয়ে
স্থির,কোনো এক জীবন্ত হৃদয়ের

৪৯
মৃতদেহের ওপর জন্মান্তরের গাছ,সেই গাছে ধুলো…

৫০
আবার চোখের পাতায় লেখো, অপেক্ষা,অপেক্ষা, অপেক্ষা…

উৎসর্গ। কবি শম্ভু রক্ষিত
চিত্রঋণ।ফেসবুক

 

————————//———————-
২৫শে ডিসেম্বর, ২০২১.©Suvankar Das, Haldia

Share This
Categories
কবিতা

সুখ : রাণু সরকার।

সুখগুলো নিতান্তই নাবালক,
মন্থরগতিতে বুকে হেঁটে চলে-
সুনির্দিষ্টতার বড়ই অভাব,
নাবালক বটে, তবে দয়ালু,
কষ্টের পাশে ঘোরাঘুরি করে,
তার ঠোঁটে লেগে থাকে অস্ফুট ক্ষীণ হাসি।
নাবালক হলেও বিলাসপ্রিয়,
কটু কথা বলি রাগে-
হতভাগা, কবে তুই সাবালক হবি?
গভীর রাতে নিভৃতে যতনে যখন বুকে জড়িয়ে ধরে-
তখন শুধুই সুখ-দুঃখের স্মৃতি বিচরণ।

Share This