Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে – প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি আবৃত্তিকার ও বাচিক শিল্পী গৌরী ঘোষ।

গৌরী ঘোষ (বিবাহের পূর্বে গৌরী মজুমদার) (৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৩৮ – ২৬ আগস্ট ২০২১) ছিলেন একজন খ্যাতনামা ভারতীয় বাঙালি আবৃত্তিকার তথা বাচিক শিল্পী। তিনি ও তার স্বামী পার্থ ঘোষ বাংলা আবৃত্তি জগতে ছিলেন অন্যতম জুটি। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধের সময় অসামান্য কাজের জন্য  বাংলাদেশ সরকারের “মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মান” ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের “কাজী সব্যসাচী সম্মান” লাভ করেন।

জন্ম ও শিক্ষা জীবন—

গৌরী মজুমদারের জন্ম ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের ৩০ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ভারতের অধুনা বিহার রাজ্যের কাটিহারে। সেদিন ছিল শারদীয়া দুর্গাপূজার মহাষষ্ঠী, তাই  নাম রাখা হয়েছিল গৌরী। পিতা অমূল্যকুমার মজুমদার ছিলেন ভারতীয় রেলের কর্মচারী। তার মা ছিলেন রবীন্দ্র কবিতা অনুরাগী। তাদের আদি নিবাস ছিল অধুনা পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার চোপা গ্রামে। তার মেজদা ছিলেন প্রখ্যাত গায়ক ও চলচ্চিত্র অভিনেতা রবীন মজুমদার। পিতার বদলির কারণে তাকে বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে হয়। প্রাথমিক পাঠ শেষে কিছুদিন কলকাতায় অবস্থানের সময় মুরলীধর গার্লস হাইস্কুলে পড়াশোনা করেন। সেখানে তার প্রিয় বান্ধবী ছিলেন ঋতু গুহ। পরে আবার কাটিহারে ফিরে গেলে বাড়িতেই পড়াশোনা করেন এবং প্রাইভেটে ম্যাট্রিক পরীক্ষা পাশ করেন। গৌরীর জীবনে তার মেজদা রবীন মজুমদারের প্রভাব ছিল অপরিসীম। তার সহযোগিতায় ও প্রশ্রয়ে তিনি কলকাতায় থেকে স্নাতক হন, এম.এও পাশ করেন।

কর্মজীবন—

এম.এ পাশের পর কিছুদিন শিক্ষকতাও করেন। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রে উপস্থাপিকা-ঘোষিকা হিসাবে যোগ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। প্রায় তিন দশকের বেশী সময় ধরে কলকাতা কেন্দ্র থেকে প্রচারিত আকাশবাণীর অনেক অনুষ্ঠানে গৌরীর কণ্ঠে সুরম্য উপস্থাপনা শুনেছেন বাংলার শ্রোতারা। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি বিবাহ করেন আর এক সুস্নাত ব্যক্তিত্বের আবৃত্তিকার পার্থ ঘোষকে। বাংলার আবৃত্তি জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্রজুটি তথা গৌরী ঘোষ ও পার্থ ঘোষ দম্পতি জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন। তারা আবৃত্তি ও শ্রুতিনাটককে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেন। তাঁদের যৌথ শ্রুতি নাটক ‘কর্ণকুন্তি সংবাদ’ জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে কিংবদন্তি হয়ে ওঠে সেসময়। আকাশবাণীতে দীর্ঘদিন কাজ করা ছাড়াও মঞ্চেও উপস্থাপনা করেছেন তারা। বাংলা কবিতা নিয়ে তাদের একাধিক সিডি-ক্যাসেট রয়েছে। এরমধ্যে ‘এই তো জীবন’সহ বেশ কয়েকটি জনপ্রিয়।
তিনি পশ্চিমবঙ্গ কবিতা আকাদেমির সদস্যও ছিলেন।
মূলত আবৃত্তিকার বা বাচিক শিল্পী হিসাবে পরিচিতি থাকলেও তিনি বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিপ্রাপ্ত ছায়াছবি ঋতুপর্ণ ঘোষের অসুখ (চলচ্চিত্র) রোহিনীর মা’র ভূমিকায় অভিনয় করেন।
সাংস্কৃতিক জগতের ব্যক্তি হয়েও ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে বহু অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন গৌরী ঘোষ। স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠনের পাশাপাশি শরণার্থীদের ত্রাণের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছেন। তার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “উপমা” মাধ্যমে দুঃস্থদের  সাহায্যও করেছেন বিভিন্ন সময়ে।

মৃত্যু—

বেশ কিছুদিন গৌরী ঘোষ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। ২০২১ খ্রিস্টাব্দে আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয় এবং তখন থেকে অবস্থার অবনতি হতে থাকে। সপ্তাহখানেকের বেশী সময়ে তিনি কলকাতার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব কার্ডিয়াক সাইন্সে ভর্তি  ছিলেন। অবশেষে ২৬ আগস্ট  তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

পুরস্কার—

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তার অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মান’ প্রদান করে। তার অনবদ্য আবৃত্তি বাংলার শ্রোতাদের হৃদয়ে যে অনুভূতি জাগ্রত করে তারই স্বীকৃতিস্বরূপ পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে “কাজী সব্যসাচী পুরস্কার” প্রদান করে।
গৌরী ঘোষ ও পার্থ ঘোষের জীবন আধারিত তথ্যচিত্র – এমন তরণী বাওয়া মুক্তি পায় গৌরী ঘোষের জন্ম দিন উপলক্ষ করে ২০২১ খ্রিস্টাব্দের ৩০ সেপ্টেম্বর কলকাতার মধুসূদন মঞ্চে।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

বৈষ্ণবদের তীর্থক্ষেত্র কুলিয়া পাটের মেলা : দিলীপ রায়।

শোনা যায়, পৌষ মাসের কৃষ্ণা একাদশী তিথিতে শ্রীচৈতন্যদেব কুলিয়া গ্রামের বৈষ্ণব-নিন্দুক পণ্ডিত কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত দেবানন্দের অপরাধ ভঞ্জন করেন । তাই একে অপরাধ-ভঞ্জনের পাটও বলে । আবার অনেকে “দেবানন্দের পাটও” বলে থাকেন । যার জন্য শ্রীচৈতন্যদেব ও শ্রীনিত্যানন্দের স্মৃতি বিজড়িত কুলিয়ার পাট বৈষ্ণবদের একটি পবিত্র তীর্থস্থান ।
মন্দিরে গৌর-নিতাই বিগ্রহের নিত্য পুজা হয় । সামনেই নাট মন্দির । মন্দিরের পাশে কুলিয়া বিলের ঘাটটি ভীষণ সুন্দর ! নির্জন ও ছায়া-শীতল । বর্তমানে সমগ্র মন্দির দেখ-ভালের দায়িত্বে কলকাতার পিঞ্জরাপোল সোসাইটি ।
উল্লেখ থাকে যে, কুলিয়া পাটের এই মন্দিরটি কল্যাণী মেন স্টেশন থেকে ২.৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত । সেখানে পৌঁছানোর হরেকরকম যানবাহন । তার মধ্যে টোটো সার্ভিস উল্লেখযোগ্য ।
এবার আসছি, কুলিয়ার পাট মেলা সম্পর্কে । কুলিয়ার পাট সম্পর্কে নানা কাহিনী প্রচলিত । দেবানন্দ ছিলেন কুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা । কিন্তু ভক্তিহীন মোক্ষাভিলাষী । শ্রীমদ্‌ভাগবতের অধ্যাপনা করতেন । একদিন চৈতন্যদেবের ভক্ত বলা চলে পার্শ্বচর শ্রীবাস পণ্ডিত ভাগবতের ব্যাখা শুনতে তাঁর বাড়িতে আসেন । ভাগবতের পাঠ শুনতে শুনতে পণ্ডিত শ্রীবাস প্রেমাবিষ্ঠ হলেন । প্রেমাবিষ্ঠ হয়ে উচ্চৈস্বরে কাঁদতে লাগলেন । এটাকে পণ্ডিত দেবানন্দ পাগলের পাগলামি ভাবলেন । পাগলের পাগলামি ভেবে পণ্ডিত দেবানন্দ ও তাঁর ছাত্ররা পরম শ্রদ্ধেয় শ্রীবাসকে মারতে মারতে বাড়ির বাইরে বের করে দেন । এই অপরাধে পণ্ডিত দেবানন্দ কুষ্ঠাগ্রস্থ হন । পরবর্তীতে পণ্ডিত শ্রীবাসের উপর দুর্ব্যবহারের জন্য পণ্ডিত দেবানন্দের প্রচণ্ড অনুশোচনা হয় । তদানীন্তনকালে অর্থাৎ প্রায় পাঁচ শত বছর বা তার বেশী সময়কালে এই কুলিয়া গ্রামের পাশ দিয়ে যমুনা নদী বয়ে যেত । সেই সময় মহাপ্রভু কুলিয়া গ্রাম হয়ে কুমারহট্ট যাওয়ার সময় এখানে এলে পণ্ডিত দেবানন্দের চরণে তাঁর দুখের কথা নিবেদন করেন এবং একটা কুলোয় করে মুলো, পালং শাক, চাল, ইত্যাদি দিয়ে সিধা দেন । তারপর দয়ালু মহাপ্রভু পণ্ডিত দেবানন্দকে যমুনায় স্নান করে আসতে বলেন । পণ্ডিত দেবানন্দ যমুনায় ডুব দেওয়া মাত্র তাঁর দেহ থেকে কুষ্ঠব্যাধি নির্মূল হয় । তারপর ঐ সিধা রান্না করে মহাপ্রভু একাদশীর উপবাস ভঙ্গ করেন । এরপর যমুনার ধারে সারা রাত ধরে হরিনাম সংকীর্তন করেন ।
আরও শোনা যায়, কয়েক বছর পরে ঠিক পৌষ মাসের কৃষ্ণা একাদশীর তিথিতে পণ্ডিত দেবানন্দ দেহ ত্যাগ করেন । পৌষ মাসের কৃষ্ণা একাদশীর দিন পণ্ডিত দেবানন্দের অপরাধ ভঞ্জন হয়েছিল বলে সেই থেকে ঐ তিথিতে পণ্ডিত দেবানন্দের সমাধির পাশে অপরাধ-ভঞ্জনের মেলা বসে । কথিত আছে, এই তিথিতে এসে গৌর-নিতাই মূর্তি দর্শন করে কুলিয়ার পাটে স্নান, পুজার্চ্চনা করলে সব পাপ ও অপরাধ ভঞ্জন হয় ।
কুলিয়ার পাটের মেলা, অপরাধ ভঞ্জনের মেলা নামেও পরিচিত । মেলায় সকাল থেকেই পুণ্যার্থীদের সমাগম ঘটে । পুণ্যার্থীরা কুলো ও মুলো সহযোগে গৌর-নিতাই মূর্তিতে পুজো দেন । এই বছর মেলা সবে শুরু । এই মেলা প্রায় সপ্তাহব্যাপী চলবে । শোনা যায়, বাংলাদেশ থেকেও অনেক পুণ্যার্থী মেলায় আসেন । রাজ্যের তথা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা বাস, ট্যাক্সি, টাটা-সোমো, ইত্যাদির মাধ্যমে মেলায় হাজির হন । সুতরাং ভক্তির নিরিখে অসংখ্য মানুষের বিশ্বাস আজও অমলিন । যার জন্য মেলায় জমজমাট ভিড় ।
স্বল্প কথায় কুলিয়া পাটের মেলার ইতিহাস এইটুকু । যদিও আজও স্মৃতি বিজড়িত কুলিয়ার পাট বৈষ্ণবদের একটি অন্যতম তীর্থক্ষেত্র । (তথ্যসূত্রঃ সংগৃহীত) ।

Share This
Categories
কবিতা

সাথী : শীলা পাল।।

তুই সঙ্গে থাকলে—-
আমার মনের
আকাশ কতো নীল হয়ে যায় !
পুষ্প বনে রঙের ঝর্ণা ,
বাতাসে চপলতার ইশারা ,
নদীর স্রোতে উচ্ছলতা
সব যেন আমাকে ঘিরে থাকে।

তোর স্পর্শে
পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়ে
যে ঝর্ণা তার সমস্ত উচ্ছ্বাস
আমি আমার অনুভূতি দিয়ে
বুঝতে পারি ,আমি গলতে থাকি
ওই ধোঁয়াশা জলকণার মতো।

তুই কাছে এলে
আমি স্থানুবৎ।আমার চোখ পলকহীন
ঝড়ের পূর্বাভাসের মতো,
এক নিস্তব্ধতা ঢেকে ফেলে।

একটু ছোঁয়ায় বৃষ্টি এসে
ভাসিয়ে নিয়ে যায়
বাঁধ ভাঙে প্লাবনের।

Share This
Categories
কবিতা

স্মৃতিচারণ : শীলা পাল।

আমাদের সেই প্লাটফর্ম টি
বড় সুন্দর ছিল
লালমাটির কাঁকর বিছানো একটা কর্গেটের শেড,
একটি পুরণো অশথগাছ, আর অনেক কালের একটি বটবৃক্ষ দু প্রান্তে প্রহরীর মত দাঁড়িয়ে আছে।
আমার বন্ধুদের সঙ্গে নিত্যদিনের বৈকালিক ভ্রমনের একটি প্রিয় জায়গা।
রেলগাড়ির আসা যাওয়া তার তীব্র
হুইশেলের আওয়াজ আমাদের ভেতরটা নাড়িয়ে দিয়ে চলে যেত
যেন অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি দেওয়ার একটা আহ্বান।
ভীষণ ভালোলাগার নেশায় তাদের চলে যাওয়া বুকের মধ্যে ঝমঝম আওয়াজ তুলতো।
এই রেশ মনের মধ্যে একটা নেশার মত থেকে যেত। আবার পরের দিনে
ছুটতাম সেই বাঁশির ডাকে।
রেলগাড়ি চলে যাওয়ার পর যে একটা শূন্যতা অনেকক্ষণ বুকের মধ্যে তা অনুভব করতাম।
কোনও কোনও দিনে
একপাশে ঝাঁকড়া ছাতিমগাছের নীচে হলুদ কাপড় পরা সাঁওতাল বর কনে প্যাসেঞ্জার ট্রেনের জন্য বসে থাকতো হাঁ করে দেখতাম।
শীতের দিনে শাল পিয়ালের জঙ্গলে পাতা ঝরার একটা শব্দ হাওয়ার সঙ্গে মিশে কেমন যেন মনকেমন করত।
এখনও সেই শৈশবের দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যায়।জীবন টাই তো এখন সেই প্লাটফর্ম হয়ে আছে।কত জনের আসা যাওয়ার সাক্ষী হয়ে বসে আছি।
গাড়িতে হয়তো যখন চড়ে বসব তখন প্লাটফর্ম অনেক দূরে ছাড়িয়ে চলে যাব।

Share This
Categories
কবিতা

উর্বরা : শীলা পাল।

কুয়াশার আড়ালে তন্বী মেয়েটি আনমনা,
ভরন্ত ধানের ক্ষেতের মত গর্ভিনী পরবিনী
সোনারঙ উছলে পরে আড়াল সরে গেলে
ফসল ভরা যৌবন তার অহংকার।
চোখে তার কামনার উগ্র চাহনি
সুবাস ছড়িয়ে পড়ে দিক থেকে দিকে।
পৌষের অবেলায় গৃহস্থের উঠোনে
তার আরাধনা শুরু হয়
প্রদীপের আলোয় আলোকিত যুবতী দেবীরূপে
প্রতিষ্ঠিতা ।তন্বী মেয়েটি মাতৃ রূপে
কল্যাণী জননী র প্রশান্ত হাসি
সংসারে তার আলো কুয়াশা সরিয়ে দেয়।

Share This
Categories
কবিতা

উপলব্ধি : শীলা পাল।

কবে কখন চুড়ির রিনরিন বেজে ওঠা থেমে গেছে
বুঝি নি,
ধুলো মাখা পায়ে সবকিছু
ফেলে কখন এসেছি অন্য মনে, বুঝতে পারি নি।
তোমার প্রসন্ন হাসি আমার জীবনের প্রশান্তি এনে দিয়ে বলল
নিরাভরণ হলে তবেই প্রাপ্তি, ত্যাগের একটা একটা ধাপ এভাবেই এসে তোমাকে মুক্ত মনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে।
তোমার কাছে আকাশ নেমে আসবে একদিন
আমি অপেক্ষা করি।

Share This
Categories
কবিতা

প্রকৃতি : শীলা পাল।

গোধূলির আলোয় দেখলাম ঝরাপাতার উপর
বসে তুমি কেমন যেন সব হারিয়ে উদ্ভ্রান্ত।
কেন কেন
এই যে নিস্তব্ধ আকাশ তার ভাষাহীন সৌন্দর্য,
পাটে বসা সূর্যের কোমল রঙের বিচ্ছুরণ
তোমার হৃদয়ে একটা ভীষণ কিছু পাওয়ার মত
মনে হল না!
আমরা চোখ মেলে যদি একবার প্রকৃতিকে
ভালোবেসে ফেলতে পারি
দেখবে সে তোমার জন্য তার গোপন অন্দরের জায়গায়
বিছিয়ে রেখেছে ভালোবাসার গন্ধে মাখা চন্দনের
সুবাসিত শীতলপাটি,
তুমি তার উপর শুয়ে বিশ্রাম করবে ।
আসন্ন সন্ধ্যায় কাঁপা কাঁপা হাতে তোমার চোখে ,
তোমার সর্বাঙ্গে ছুঁয়ে যাবে কামরাঙা রঙের বিকেল
চুপি চুপি বলবে “এসো আমাকে ভালোবাস “তোমার সব হতাশা হারিয়ে যাবে।

Share This
Categories
কবিতা

বিজ্ঞান :: রাণু সরকার।।

মানুষ পৃথিবীর এক বিরলতম প্রজাতি যে অজ্ঞতাকে দূর করতে বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারে ডুবে থাকে, অনেক চেষ্টার পর নতুন কিছু আবিষ্কার করে, তার সফলতায় রোমাঞ্চকর অনুভূতিও উপভোগ করে। আগুন জ্বালাবার কৌশল, কৃষিকাজ কিম্বা চাকার ব্যবহার মানব সভ্যতার আদি পর্বের যুগান্তকারী আবিষ্কার।

গবেষণা থেমে নেই চলতেই থাকে, কে তাকে আটকায়।আমরা বিজ্ঞানের জগতে ভেসে বেড়াই, যেমন দূরদুরন্তে পাড়ি দেই সেই বিজ্ঞানের ওপর ভর করে।

বাতাসের তরঙ্গে কথা বলা, মঙ্গলে বাড়ি খোঁজা, সমুদ্রের নিচে ট্রেনে চেপেও চলাচল করি দূরে বহুদূরে। বিজ্ঞানের সৃষ্টি বোঝা বড় দায়।

বৈজ্ঞানিকেরা গবেষণায় জয় করে বিশ্ব, তারা জয় করে কত কষ্ট করে আর আমরা সহজেই তা উপভোগ করি। বড় বড় রোগ এক্সরে মেশিনের সাহায্যে রোগ নির্ণয় হয়, ভালোমন্দ তাদের হাতে ছেড়ে আমরা নিশ্চিন্তে থাকি বসে, আমরা তাদের আবিষ্কারের ফল ভোগ করি কিন্তু মনে করি ক’বার তাদের অবদানের কথা, ব্যস্ত থাকি ভোগের আনন্দে।

বিজ্ঞানের সৃষ্টি মানবজীবনে যেমন অনেক স্বাচ্ছন্দ এনেছে তেমনি তার অপব্যবহার
মানব সভ্যতার ভবিষ্যৎ প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড় করিয়েও দিয়েছে। হিরোসিমা-নাগাসাকি আধুনিক সভ্যতার কলঙ্ক নয় কি!

Share This
Categories
কবিতা

অতীত :: রাণু সরকার।।

অতীতকে কত খুঁজি, পাইনা, কোথায় গেলো অতীতের সেই দিনগুলো?
ফাঁকা আকাশ কোথাও দেখছিনা তো,
নিশ্চল দাঁড়িয়ে অজস্র বড়ো বড়ো বাড়ি,
বিহগ-বিহগীর দল সারিবদ্ধ হয়ে উড়ে যেতে বাধা পায়।
আগে যেতে যেতে দিতো সেকি ডাক, হোতাম আত্মহারা।
কোথায় গেলো সেই পাখির ডাক, সেই দিনগুলো?
মদের বোতলে ঝর্ণাধারার পতনের শব্দ অপ্রকৃষ্ঠ লাগে,
ঝিঁঝিপোকার ডাক আর শোনা যায় না,
জলফড়িং আর প্রজাপতির শূন্যে বিচরণ
এখন আর চোখে পড়েনা।
শিশিরে ভেজা সবুজ উদ্ভিদের হাসি দেখে আনন্দে বিহ্বল হতো আমার চোখ-
আজ আর তেমনটা হয়না।
গ্রীষ্মের প্রখর তাপে গাছের ছায়া বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তো- সাথে দূষণমুক্ত বাতাস-
কোনটাই পাই না।
আর্তনাদ করি ঠান্ডা ঘরে শুয়ে,
প্রদীপের আলোতে অনুভব করি অতীতের দিনগুলো।
সামনে আলোর রশ্মি, পিছে আঁধারের লুকোচুরি খেলা,
আনন্দের সাগরে যেতাম ভেসে।
এগিয়ে গিয়ে অতীতকে গিয়েছি ভুলে!

Share This
Categories
অনুগল্প কবিতা

প্রশ্ন : রাণু সরকার।।

কেমন আছি-
এই প্রশ্নটা সহৃদয় ব্যাক্তিরা দেখা হোলেই জিজ্ঞেস করে।
এই জিজ্ঞেসের পিছে ভালো ও মন্দ দু’টিকে আড়ালে রেখে
সহৃদয় বেশিরভাগ ব্যাক্তিরা জিজ্ঞেস করে।

যাকে জিজ্ঞেস করে তার কখনো সখনো ইচ্ছে জাগে
অব্যক্ত কথা বলতে, কিন্ত ভাবনাতে পড়তে হয়।
অব্যক্ত কথা বললে যদি সে কাব্য রচনা করে বসে।

দেখা যায় বেশিরভাগ সহৃদয় ব্যাক্তি বিশাল কাব্য রচনা করে,
সেই কাব্যেতে বড় বড় অক্ষরে তার নাম লেখা।

জীবনযুদ্ধে ক্লান্ত হয়ে সর্বহারা,
আসলে এসব কাউকে বলতে নেই,
তাই ক্লান্তিকে বোবা হৃদয়ে রেখে
একটি উত্তরে ফিরতে হয়,
বেশ আছি, এই চলেছে বা ভালো আছি।

Share This