পার্বতী শিবকে বিবাহ করার ইচ্ছা রাখতেন। পাশাপাশি সমস্ত দেবী-দেবতাও শিব-পার্বতীর বিবাহে ইচ্ছুক ছিলেন। পার্বতীর কাছ থেকে বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে দেবতারা কন্দর্পকে শিবের কাছে পাঠিয়েছিলেন। শিব সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন ও তৃতীয় নেত্র দিয়ে তাঁকে ভস্ম করে দেন। কিন্তু শিবকে নিজের স্বামীরূপে মেনে নিয়েছিলেন পার্বতী। তাই শিবকে পাওয়ার জন্য কঠোর তপস্যা শুরু করেছিলেন তিনি। তাঁর তপস্যার জোরে সমস্ত স্থানে হাহাকার শুরু হয়েছিল। বড় বড় পর্বতের ভিতও নড়ে গিয়েছিল। তখন শিব নিজের ধ্যান থেকে উঠেছিলেন এবং পার্বতীকে বলেছিলেন যে তিনি যেন কোনও যুবরাজের সঙ্গে বিয়ে করে নিয়েছিলেন। কারণ শিবের সঙ্গে বসবাস করা সহজ নয়।
কিন্তু হিমালয় কন্যা পার্বতী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, তিনি শিব ছাড়া কাউকে বিবাহ করবেন না। পার্বতীর ভালোবাসা দেখে মহাদেব তাঁকে বিবাহ করতে প্রস্তুত হয়েছিলেন। শিব যখন পার্বতীর সঙ্গে বিবাহ করতে যান, তখন তাঁর সঙ্গে ডাকিনি, ভূত-প্রেত, পেত্নী ছিল। ডাকিনি ও পেত্নীরা শিবকে ভস্ম দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছিলেন ও হাড়ের মালা পরিয়েছিলেন।
শিবের এই আশ্চর্যজনক বরযাত্রী পার্বতীর গৃহে পৌঁছালে সমস্ত দেবতা চমকে ও ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। এই বিচিত্র রূপে শিবকে মেনে নিতে পারেননি পার্বতীর মা। তখন তিনি শিবের সঙ্গে নিজের মেয়ের বিবাহ দিতে অসম্মত হয়েছিলেন। পরিস্থিতি খারাপ দিকে এগোতে দেখে পার্বতী শিবকে বিবাহের জন্য নিয়মনীতি অনুযায়ী তৈরি হয়ে আসতে প্রার্থনা করেছিলেন। শিব তাঁর প্রার্থনা স্বীকার করেছিলেন। সমস্ত দেবী-দেবতাকে সুন্দর ভাবে বরবেশে সাজিয়ে দিয়েছিলেন। ঐশ্বরিক জল দিয়ে মহাদেবকে স্নান করানো হয়, রেশমের ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছিল। শিবের এই দিব্য রূপ দেখে পার্বতীর মা বিবাহে রাজি হয়েছিল। ব্রহ্মার উপস্থিতিতে এই বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল।
শান্তিপুর শহরের এক নম্বর ওয়ার্ডের উত্তম সরকার প্রায় ৩৬ বছর আগে, ওপার বাংলা থেকে আনা এই গাজন শুরু করেন। এ বছরেও ৪৫ জন সন্ন্যাস গ্রহণ করেছে। হর গৌরীর বিবাহ এখানকার প্রধান আকর্ষণ। মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে ছাদনা তলায় শুভদৃষ্টি মালা বদল আগুনে খই দেওয়া থেকে শুরু করে সমস্ত কিছু অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে, যা দেখার জন্য অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষায় থাকে আশেপাশের বিভিন্ন মানুষজন।
উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন নীল পুজো , কাটাভাঙ্গা আগুনের উপর দিয়ে হাটা এ ধরনের নানান সংযমী সন্ন্যাসী কর্মকাণ্ড। শিব পার্বতীর বিবাহ। এছাড়া জীব মুখ এবং পিঠে বর্ষি গেথানো অবস্থায় চরকে ঘোরানো। এ বিষয়ে তারা এতটাই পারদর্শী যে চাপরা থেকে তাদেরকে আহ্বান জানানো হয়েছে বড়শি গেথানোর কাজে। চড়কের দিন অর্থাৎ বাংলার শুভ নববর্ষে মৎস্য মুখ করে সন্ন্যাসীদের ব্রত ভঙ্গ করা হয়।
।।নদীয়া, নিজস্ব সংবাদদাতা।।