Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

বিশ্ব থিয়েটার দিবস নিয়ে কিছু কথা।

প্রতি বছর ২৭ মার্চ বিশ্ব থিয়েটার পালিত হয়। থিয়েটার শুধুমাত্র বিনোদনই প্রদান করে না। এটি একটি শিল্প। পৃথিবীর আদিম কাল থেকেই মানুষের নিজের গল্প বলার তাগিদটা অদম্য। তাই থিয়েটারের মত সৃজনশীল মাধ্যমের অন্ত নেই। শিক্ষা প্রদান করতে ও অনুপ্রেরণা জোগাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থিয়েটার। থিয়েটারের ভূমিকা জনসমক্ষে তুলে ধরতেই হয় বিশ্ব থিয়েটার দিবস।আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইন্সটিটিউটের দ্বারা ১৯৬১ সালে সর্বপ্ৰথম এই দিবসটির প্রচলন শুরু হয়েছিল।

 

ইতিহাস-‐–

 

আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইন্সটিটিউট (আইটিই) কর্তৃক ১৯৬১ সালে বিশ্ব থিয়েটার দিবসের প্রবর্তন হয়। প্রতিবছর ২৭ মার্চ আইটিই কেন্দ্রসমূহ এবং আন্তর্জাতিক থিয়েটার কমিটি দিবসটি পালন করে। দিবসটি উদ্‌যাপন করতে বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চনাটক অনুষ্ঠান প্রদর্শিত হয়। এর মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হচ্ছে- এই দিবস উদ্‌যাপন লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইন্সটিটিউটে একজন তারকা মঞ্চনাটকের মাধ্যমে, আইটিইর শান্তির সংস্কৃতি বিষয়ক এক বিশেষ বাৰ্তা প্রেরণ করে। প্ৰথম বিশ্ব থিয়েটার দিবসের আন্তর্জাতিক বাৰ্তা ১৯৬২ সালে ফ্রান্সের জিন কোকটিয়াও লিখেছিলেন। প্ৰথমে হেলসিঙ্কি এবং তারপর ভিয়েনায় ১৯৬১ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত আইটিইর নবম আলোচনাসভায় আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইন্সটিটিউটের ফিনিশ কেন্দ্রের পক্ষে অধ্যক্ষ আর্ভি কিভিমায় বিশ্ব থিয়েটার দিবস উদ্‌যাপনের প্রস্তাব দেন। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান কেন্দ্রসমূহে এটাকে সমৰ্থন দেয়ার পরই দিবসটির বিশ্বব্যাপি প্রচলন শুরু হয়।

 

থিম—

 

বিশ্ব থিয়েটার দিবস উদযাপন এবং থিয়েটার শিল্পের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির একটি দিন। এটি করার জন্য, প্রতি বছর ২৭ মার্চ, বিগত ৫৯ বছর ধরে একটি থিম অনুসরণ করা হয়। বিশ্ব থিয়েটার দিবস ২০২৪-এর থিম হল “থিয়েটার এবং শান্তির সংস্কৃতি।” ITI প্রতি বছর বিশ্ব থিয়েটার দিবসের জন্য কোনো নির্দিষ্ট থিম নির্ধারণ করে না। প্রতি বছর, বিশ্ব থিয়েটার দিবসের প্রতিপাদ্য হল “থিয়েটার এবং শান্তির সংস্কৃতি”। অনেক উদযাপন আইটিআই কেন্দ্রে এবং বিশ্বজুড়ে মনোনীত স্থানে ঘটে এবং আইটিআই এই দিনটি উদযাপনকারী প্রত্যেককে তাদের প্রচারের জন্য তাদের সৃজনশীলতা ব্যবহার করতে উত্সাহিত করে।

 

বিশ্ব থিয়েটার দিবস ২০২৪: তাৎপর্য

 

এই বিশ্ব থিয়েটার দিবসের মূল লক্ষ্য হল থিয়েটারকে তার সমস্ত আকারে প্রচার করা, মানুষকে থিয়েটারের মূল্য সম্পর্কে সচেতন করা, থিয়েটার সম্প্রদায়গুলিকে তাদের কাজকে বৃহৎ পরিসরে প্রচার করতে সক্ষম করা, থিয়েটারকে এর সমস্ত রূপ উপভোগ করা এবং অন্যদের সাথে থিয়েটারের জন্য আনন্দ ভাগ করুন। বিশ্ব থিয়েটার দিবস আমাদের থিয়েটারের বিভিন্ন রূপ উদযাপন করার এবং আমাদের সমাজে তাদের তাত্পর্য উপলব্ধি করার সুযোগ দেয়। থিয়েটারের এই ফর্মগুলির মধ্যে অনেকগুলি শতাব্দী ধরে টিকে আছে, যখন কিছু সময়ের সাথে সাথে নতুন আকারে বিকশিত হয়েছে। যদিও কিছু অন্যদের চেয়ে বেশি বিখ্যাত, এই সমস্ত শিল্প ফর্ম শিক্ষা, বিনোদন, উদ্দীপনা এবং শিথিলকরণের জন্য অপরিহার্য। দিবসটির অন্যতম লক্ষ্য হল থিয়েটারের মূল্য ও সৌন্দর্য সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা। এই কারণেই আন্তর্জাতিক থিয়েটার সম্প্রদায় নাটক ও সঙ্গীতের প্রাচীন নৈপুণ্যকে উন্নীত করার জন্য প্রতি বছর পারফরম্যান্স, বক্তৃতা এবং পুরস্কার উপস্থাপনের পরিকল্পনা করে।

 

নাটক বা থিয়েটার সব সময় মানুষের মনে ও চেতনায় এক উচ্চ স্থান পেয়ে এসেছে। নাটক বলতেই আমাদের মনে আসে শেকসপিয়রের নাম। তাঁকে বলা হয় বিশ্বের অগ্রণী নাট্যকার। তবে নাটক মানে শুধু শেকসপিয়র নন, কালিদাস, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বাদল সরকার, বিজন ভট্টাচার্য, দীনবন্ধু মিত্রের মতো অনেকের নামই আসে। ভারত এমন একটি দেশ, সেখানে সব কিছুরই নিজস্ব রূপ আছে। গ্রীক ঘরানার নাটক নিজ গুণে কবেই ভারতের একান্ত হয়ে উঠেছে। সংস্কৃত সাহিত্যের শুদ্রক রচিত ‘মৃচ্ছকটিক’, কালিদাস রচিত ‘অভিজ্ঞান শকুন্তলম’, ভবভূতির ‘উত্তর রামচরিত’ সেই নির্দশনই বহন করে চলেছে।

 

গুরুত্ব—

 

থিয়েটার হল এটি শিল্প রূপ। যা শুধু মাত্র বিনোদনই নয়। ব্যক্তিদের শিক্ষিত ও অনুপ্রাণিত করে।। নাটকের মাধ্যমে, থিয়েটার সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা আনে, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে উন্নীত করে এবং সহানুভূতি ও বোঝাপড়াকে উৎসাহিত করে। এটি ব্যক্তিদের তাদের দৃষ্টিভঙ্গি চ্যালেঞ্জ করে এবং কথোপকথন এবং আলোচনার জন্য একটি স্থান প্রদান করে সমালোচনামূলক চিন্তার দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করে।

 

উপসংহার—

 

থিয়েটার, একটি নির্দিষ্ট স্থানে বা  মঞ্চে, লাইভ দর্শক, লাইভ  অভিনয়, অভিনেতা ও অভিনেত্রীর মাধ্যমে প্রকৃত অভিজ্ঞতা লাভ করার, সমন্বিত শিল্প। তাই সিনেমা বা সিরিয়াল কখনই থিয়েটারের জায়গা নিতে পারেনি। বলা হয় একজন থিয়েটার অভিনেতা এতটা দক্ষ হন, যে সব মাধ্যমেই তিনি মানানসই। আজ বিশ্ব থিয়েটার দিবস সব নাট্য শিল্পীদের কাছে বিশেষ আনন্দের। বিভিন্ন নাটকের মাধ্যমে এই দিনটি পালন করা হয়।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট ও উইকিপিডিয়া।।

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *