ভ্রমণ পিপাসু বাঙালি। আর ঘুররতে কে না ভালোবাসে। তবে বিশেষ করে বাঙালিরা সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ে ভ্রমনের নেশায়। কেউ পাহাড়, কেউ সমুদ্র আবার কেউ প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থান ভালোবাসে ভ্রমণ করতে। প্রকৃতি কত কিছুই না আমাদের জন্য সাজিয়ে রেখেছে। কতটুকুই বা আমরা দেখেছি। এ বিশাল পৃথিবীতে আমরা অনেক কিছুই দেখিনি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার দুনিয়ায় আজ গোটা পৃথিবীটা হাতের মুঠোয়় এলেও প্রকৃতিকে চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করা এ এক আলাদা রোমাঞ্চ, আলাদা অনুভূতি যার রেষ হৃদয়ের মনিকোঠায় থেকে যায় চিরকাল।। তাইতো আজও মানুষ বেরিয়ে পড়়ে প্রকৃতির কে গায়ে মেখে রোমাঞ্চিত হওয়ার নেশায়। আসুন ঘুরে আসি ভারতের ই দার্জিলিং এর এক সুন্দর দর্শনীয় স্থান তাবাকোশি।
তাবাকোশি মিরিক এর কাছে রংভাং নদীর ধারে ছোট্টো একটি পাহাড়ি গ্রাম যার উচ্চতা প্রায় ৩০০০ ফুট l কমলালেবু গাছ আর চা বাগানে ঘেরা একটা মিষ্টি পাহাড়ি জনপদl নামটা শুনতে কিছুটা জাপানি মনে হলেও আদতে এটি ভারতের উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং জেলায় অবস্থিত একটি ছোট্ট গ্রাম। তাবাকোশী, যা এক কথায় প্রকৃতিপ্রেমীর কাছে স্বর্গরাজ্য। মিরিক থেকে খুব কাছে এই জনপদ হই হট্টগোল কাটিয়ে শুধু সিনিক বিউটির জন্য সেরা ডেস্টিনেশন।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানেই বার বার পর্যটকরা ফিরে আসেন এই পাহাড়ি গ্রামে। উত্তরঙ্গের জনপ্রিয় গোপালধারা চা বাগানের লাগোয়া জায়গা জুড়েই অবস্থিত এই পাহাড়ি অঞ্চলটি। মিরিকের নীচে চায়ের বাগানে ঘেরা ছোট্ট সাজানো গ্রাম এই তাবাকোশি। উত্তরকন্যার কোলে লুকিয়ে থাকা যে সব পাহাড়ি গ্রামগুলোতে এখন পর্যটনদের আনাগোনা বাড়ছে, তাদের মধ্যেই অন্যতম এই তাবাকোশি। সামনে দিয়ে বয়ে গেছে ছোট পাহাড়ি নদী। রাম্মামখোলা নদীর ঢালে অপরূপ প্রাকৃতিক শোভা একে অপরূপা করে তুলেছে। মিরিক থেকে মাত্র আট কিমি, গোপালধারা টি এসেস্টের কাছেই এর অবস্থান। রংভাঙ মোড় থেকে ছয় কিমি নিচে রংভাঙ নদীর পাশেই ছবির মতো সুন্দর তাবাকোশি। মিরিক থেকে দার্জিলিং রোড ধরে আরও খানিকটা এগিয়ে থুরবো চা বাগানের বুক চিরে গাড়ি নিয়ে চলে যেতে হবে রাঙ্গভং নদীর ধারে। গ্রামটি শহরের কোলাহল থেকে দূরে পরিবারের সাথে বা একাকি সময় কাটানোর জন্য একটি আদর্শ স্থান হয়ে উঠতে পারে আপনাদের কাছে , পাহাড়ের কোলে বসে নদির জলের আওয়াজ ও সাথে পাখিদের কুঞ্জন শুনতে শুনতে সামনের পাহাড়ের ঢালে সবুজে ঘেরা চা বাগানের মধ্যে হারিয়ে যেতে মন করবে এই তাবাকোশীতে ।
নামকরণ এর ইতিহাস–
‘তাম্বা’ যার অর্থ তামা আর ‘কোশি’ মানে নদী। রাংভাং নদীর উপর ঘন জঙ্গলকে দেখে মনে হয় যেন নদীর ওপর তামার দেশ, এখান থেকে গ্রাম নাম ‘তাবাকোশি’। বিস্তারিত ভাবে তাবাকোশি গ্রামের নামকরণের পিছনে একটা ইতিহাস রয়েছে। অনেক অনেক আগে এই জায়গাটির নাম ছিল গোপালখাড়া, অনেকে আবার গোপালধারাও বলে থাকেন। ঠিক একই নামের একটি চা বাগান রয়েছে এই অঞ্চলে। চা বাগানের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে ক্ষীণস্রোতা পাহাড়ি নদী রংভাং খোলা যার নেপালি নাম তাম্বাকোশি। বর্ষাকালে আগে যখন প্রচুর বৃষ্টি হত, শোনা যায় সেই সময় নাকি এই নদীর জল-কাদা সব একত্রে গুলে গিয়ে তামাটে রঙ ধারণ করে। সেই থেকেই সম্ভবত এই নদীর নাম হয়েছে তাম্বা। নেপালি ভাষায় ‘কোশি’ বলতে নদীকে বোঝায়। এই লোকশ্রুতি থেকেই সম্ভবত এই জায়গার নাম হয়েছে তাবাকোশি। তাই এই ব্যস্ততার সময় জীবনে আনন্দ পেতে অনায়াসেই কিছু দিন এখানে কাটিয়ে দিতে পরেন গোটা পরিবার নিয়ে।
তাবাকোশিতে কি দেখবেন—
মূলত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানেই বার বার পর্যটকরা ফিরে আসেন এই পাহাড়ি গ্রামে। উত্তরঙ্গের জনপ্রিয় গোপালধারা চা বাগানের লাগোয়া জায়গা জুড়েই অবস্থিত এই পাহাড়ি অঞ্চলটি। জোড়পোখরি, লেপচাজগত, সিমনা ভিউ পয়েন্ট, পশুপতির মার্কেট, গোপালধারা চা বাগান, মিরিক লেক, মিরিক মনেস্ট্রি । এখান থেকে দূরে মিরিক টা দেখা যায় পাহাড়ের উপর। এখানে একটা ছোট্ট ঝর্ণা আছে, তার পাশে এলাচ বাগানে তাবুতে রাত কাটানোর ব্যবস্থা আছে। চা বাগানের মধ্যে দিয়ে হেঁটে ঘুরতে ঘুরতে দেখা যায় নানান পাখির আনাগোনা, চারদিকে সবুজের সমারোহ। তাবাকশির আনাচে-কানাচে রয়েছে কমলালেবুর বাগান, রয়েছে ভুট্টার ক্ষেত, এলাচের বাগান, আদার বাগান। উপরে চা বাগান থেকে নিচে রঙভঙ নদী ও মন্দির দেখতে দারুন লাগে। পথ চলতে চলতে No Hunting বোর্ড চোখে পড়লে বুঝে নিবেন এখানে মাঝেমধ্যে হরিণ চলে আসে জঙ্গল থেকে। আরও নানা জায়গা ঘুরে নিতে পারেন তাবাকোশিতে দু’দিন থেকে।
কি কি দেখবেন—-
চাইলে খুব সকালে এখান থেকে গাড়ি নিয়ে টারজাম জায়গাটা ঘুরে আসা যায় যা তাবাকোশী থেকে ৩০ মিনিটের পথ। সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা যায় না, পুরোটা চা বাগানের মধ্যে দিয়ে। তাবাকশি থেকে জোড়পোখরি, লেপচাজগৎ, পশুপতির মার্কেট (ভারত-নেপাল সীমান্ত), গোপালধারা চা বাগান, মিরিক লেক, মিরিক মনেস্ট্রি ও পার্শ্ববর্তী এলাকা দেখতে পারবেন। ইচ্ছা হলে সময় কাটাতে পারেন রাম্মামখোলা নদীর পারেও। পক্ষী প্রেমীদের স্বর্গরাজ্য এই তাবাকোশি। তবে এখানে শান্ত, শীতল, নৈসর্গিক পরিবেশই বেশি আকর্ষণীয়।
তাবাকোশির আসেপাশে আরো যে গুলি দেখতে পারেন…
পশুপতি মার্কেট : তাবাকোশী থেকে খুব কাছে এই স্থানটি ভারত ও নেপালের বর্ডার , এখানের বিশেষত্ব হল এখানকার বাজার যেখানে কম দামে নেপালের ও বিভিন্ন বিদেশী জিনিসপত্র পাওয়া যায় , আপানরা এখান থেকে শপিং করতে পারেন।
মিরিক ঝিলঃ মিরকি থেকে তাবাকোশী খুব একটা দূরে না হওয়ায় এখান থেকে সহজেই মিরিক ঝিল ঘুরে দেখে নিতে পারেন। মিরিক ঝিলে Boating করে এখানে একটা দারুন সময় কাটিয়ে নিতে পারেন।
গোপালধারা চাবাগান : তাবাকোশী থেকে গোপালধারা চাবাগান ও খুব কাছাকাছি তাই এই স্থানটিও ঘুরে দেখে নিতে পারেন, দেখে নিতে পারেন এখানের চা ফ্যাক্টরি গুলি ।
তাই তবাকোশীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও এখানকার নিরিবিলি পরিবেশ আপানাদের মনের সকল চিন্তামুক্ত করে মনে এক শান্তির অনুভুতি এনে দিবে যার ফলে এই স্থানটি ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে মন চাইবে না। যারা শান্তশিষ্ট পরিবেশে কিছু দিন পাহাড়ে কাটাতে চান তাদের কাছে এই স্থানটি আদর্শ।
ভ্রমণের সেরা সময়—
বছরের যে কোনও সময় তাবাকোশি যাওয়া যায়। তবে মার্চ মাস থেকে জুন মাসের মাঝামাঝি সময় অথবা অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি উৎকৃষ্ট সময়।
তাবাকোশি যাওয়ার উপায়—-
নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে তাবাকোশির দূরত্ব মাত্র ৬০ কিলোমিটার। বাগডোগরা দিয়ে যেতে চাইলে সেই সুযোগও রয়েছে এখানে। বিমানবন্দর বা রেলস্টেশন থেকে গাড়ি ভাড়া করে সোজা পৌঁছে যেতে পারেন তাবাকোশি। সকালে এনজেপি (NJP) স্টেশন পৌঁছে একটা অটো নিয়ে শিলিগুড়ি জংশন চলে যেতে পারেন। তারপর সেখান থেকে মিরিক যাওয়ার একটা শেয়ার গাড়িতে চেপে বসুন। শিলিগুড়ি থেকে শেয়ার গাড়িতে মিরিক পৌঁছে একটা গাড়ি নিয়ে তাবাকোশি রওনা দিয়ে দিন। দু’দিনের হাওয়া বদলে আপনার মন ভাল হয়ে যেতে বাধ্য।
কোথায় থাকবেন—-
এখানের চা বাগানের সঙ্গেই রয়েছে একাধিক হোমস্টে। মূলত চা বাগানের মালিকরাই এই হোমস্টেগুলোর মালিক। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য টি-ভিলেজ হোমস্টে, সুনাখারী হোমস্টে। একেবারে চায়ের বাগানের পরে ছোট্ট গ্রামের শুরুতেই সুন্দর সাজানো গোছানো হোমস্টে। হোমস্টেতে তিন রকমের ঘর রয়েছে নরমাল, ডিলাক্স আর স্টোন কটেজ।
টি ভিলেজ হোমস্টে। এছাড়া হোম স্টে’তে না থেকে, তাঁবুতে থাকার ইচ্ছা হলে সে ব্যাবস্থাও আছে। চারজনের জন্য তাঁবুর ভাড়া তিন হাজার রুপী। তবে তাঁবুতে থাকলে খাবার আলাদা খরচ আছে। এছাড়া বেশি স্বাছন্দ পেতে বেশি ভাড়ার হোম স্টে’ও পাবেন।”
উপসংহার—-
মিরিক থেকে ঢিলে ছোঁড়া দূরত্বে থাকা তাবাকোশি। হাল ফ্যাশনের যুগে উত্তরকন্যার কোলে লুকিয়ে থাকা যে সব পাহাড়ি গ্রামগুলোতে এখন পর্যটনদের আনাগোনা বাড়ছে, তাদের মধ্যেই অন্যতম এই তাবাকোশি। পূর্ব হিমালয়ের কোলে রাংভাং নদীর উপর এক ঘুমন্ত গ্রাম তাবাকোশি। দার্জিলিং এর বিখ্যাত গোপালধারা চা-বাগানের একটি অংশ এই তাবাকোশী।চারদিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা ও সবুজ চা-বাগান দিয়ে মোড়া পাহাড়ের মাঝে এক শান্ত শিষ্ট নিরিবিলি গ্রাম এই তাবাকোশী ।সকালে সারাদিন অফিস ও রাতে বাড়ী এই করতে করতে দিন কেটে যাচ্ছে , এক ঘেয়েমি জীবনযাপন থেকে মুক্তি পেতে দূরে কোথাও ছুটে যেতে মন চাইছে, তবে চলে আসতে পারেন উত্তরবঙ্গের এক নিরিবিলি ছোট পাহাড়ি গ্রাম তাবাকোশীতে।
।।তথ্য : সংগৃহীত।।