Categories
গল্প প্রবন্ধ রিভিউ

মূল্যবান মনুষ্য জীবন ও মহাকুম্ভ মেলা-2025 (ধারাবাহিক তৃতীয় পর্যায়) : স্বামী আত্মভোলানন্দ(পরিব্রাজক)।

ওঁ নমঃ শ্রীভগবতে প্রনবায় নমঃ…!

আমাদের মূল্যবান মনুষ্য জীবনে প্রয়াগরাজে চলছে মহাকুম্ভ, অমৃত-কুম্ভমেলা। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ ভক্ত সঙ্গম তীর্থে স্নান করছেন। এই মহাকুম্ভ ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। বারোটি কুম্ভ অতিক্রম করে একটি করে মহাকুম্ভ হয়। সেই বিচারে এক-একটি মহাকুম্ভ ১৪৪ বৎসর অন্তর হয়। অর্দ্ধকুম্ভ প্রতি ছয় বৎসর অন্তর হয়। অর্দ্ধকুম্ভের জন্য তিনটি তীর্থস্থান:- হরিদ্বার, নাসিক ও উজ্জয়িণী। পূর্ণকুম্ভ শুধুমাত্র প্রয়াগরাজে। “নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান, বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান !” এক অপূর্ব দৃশ্য, বাহ্যিক দৃষ্টিতে এক তীর্থক্ষেত্র, গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতীর মিলন ক্ষেত্র, নদীর চর মেলাক্ষেত্র, কয়েকশো একর জমির উপর মেলা ক্ষেত্রে নাগরিক পরিষেবা, বিশুদ্ধ পানীয় জল, উপযুক্ত পরিমাণে সুস্বাদু ভান্ডারার ব্যবস্থাপনা, বিভিন্ন আখড়ায় ধর্মকথা, ভজন, কীর্তন, অঘোরী, নাগা, বৈষ্ণব সন্ন্যাসীদের উপস্থিতি, নাগা সাধুদের হঠযোগ ও ক্রিয়াযোগের দৃশ্য পর্যবেক্ষণ, কয়েক লক্ষ মানুষের উপস্থিতি হলেও সবকিছু সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা অনুভব হলেও অন্তর্দৃষ্টি তে এর অনুভূতি আলাদা। অনুমান, মহাকুম্ভে প্রায় ৪০-৪৫ কোটি মানুষ সঙ্গম তীর্থে স্নান করবেন।

*অনেক মানুষ এমনও আছেন যারা কোনও না কোনও কারণে মহাকুম্ভে যেতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে তারা কীভাবে মহাকুম্ভ স্নানের ফল পাবেন, সে সম্পর্কেও আমাদের শাস্ত্র, ধর্মগ্রন্থে বলা হয়েছে। এই উপায়গুলি খুবই সহজ, যে কেউ করতে পারেন। স্নান করার সময় পূর্ণ শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাস থাকা জরুরি। যেতে না পারলে, কাছের যে কোনও পবিত্র নদীতে স্নান করে পুণ্য অর্জন করা যায়। অমৃত স্নানের দিন প্রবাহিত জলে গঙ্গাজল মিশিয়ে বাড়িতে স্নান করলেও পুণ্য অর্জন সম্ভব হয়।*

হিন্দুশাস্ত্রে আমাদের ধর্মগ্রন্থে এমন একটি মন্ত্র বলা হয়েছে, স্নান করার সময় যা বললে ঘরে বসেই কুম্ভ স্নানের ফল পাওয়া যায়। তবে এর জন্য মনে পূর্ণ শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাস থাকা খুবই জরুরি। এর জন্য স্নান করার সময় প্রথমে দেবনদী গঙ্গার স্মরণ করুন এবং মগ, ঘটি দিয়ে শরীরে জল ঢালার সময় ধীরে ধীরে এই মন্ত্রটি বলুন- “ওঁ গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরী সরস্বতী। নর্মদে সিন্ধু কাবেরী জলেস্মিন সন্নিধিং কুরু।।” ঘরে কুম্ভ স্নানের পুণ্যফল লাভের জন্য কিছু বিষয় মনে রাখবেন যেমন স্নান করার সময় সাবান বা শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন না। স্নানের পর সূর্যকে অর্ঘ্য দিন এবং তুলসী গাছেও জল অর্পণ করুন। মহাকুম্ভে স্নানের পর দ্বিতীয় সবচেয়ে পুণ্যের কাজ হল দান করা। তাই আপনি যখনই এই উপায় করবেন, সেদিন নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী অভাবীদের কাপড়, খাবার ইত্যাদি দান করতে পারেন। যেদিন আপনি এই উপায় করবেন, সেদিন সাত্ত্বিক খাবার খান। কুম্ভ স্নানের ফল পেতে শরীরের সাথে মানসিক শুদ্ধিরও যত্ন নিন। এই দিন কাউকে খারাপ কথা বলবেন না। কারও প্রতি খারাপ চিন্তাও মনে আনবেন না। স্নান করার সময় দেবনদী গঙ্গার স্মরণ করুন।

কুম্ভস্নানে সরাসরি পুণ্য ও পাওয়া যায় না, মোক্ষও পাওয়া যায় না, পাওয়া যায় অমৃত। আর এই অমৃতই মানুষকে দেয় যথাক্রমে পুণ্য এবং মোক্ষ। অমৃত কি? যা মানুষকে মৃত্যু-রহিত করে, তাই-ই অমৃত। সুতরাং জ্ঞানই হল অমৃত। কারণ জ্ঞানই মানুষকে মৃত্যু-রহিত করে, অমর করে। আমাদের যদি চেতনা থাকেতো কুম্ভে গিয়ে আমরা অবশ্যই এমন কিছু জ্ঞান অর্জন করতে পারবো, যা আমাদের জীবনীশক্তি বাড়িয়ে দেবে, যা আমাদেরকে অমর করে দিলেও করে দিতে পারে। তাই, দুর্লভ মনুষ্য জন্ম লাভ করে ডুব দিন আপন অন্তস্থল, নিজের অন্তরে। নিজস্ব গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতীর সঙ্গমস্থলে, যেখানে পরম জ্ঞানের মহা অমৃতভান্ড লুকোনো আছে! সেই অমৃতের খোঁজ যিনি পেয়েছেন তিনি নিজেই এক তীর্থক্ষেত্র! কারণ, আধ্যাত্মিক মতে, গঙ্গা হলো জ্ঞানের প্রতীক ! যমুনা হলো প্রেমের প্রতীক ! সরস্বতী হলো প্রজ্ঞার প্রতীক! আমাদের সকলের জ্ঞানচক্ষু উন্মেষ হোক।

আমরা মানুষ সকলেই একদিন মারা যাব, কিন্তু কে, কোথায়, কিভাবে মারা যাব সেটা আমরা জানি না। কত মানুষ কত রকমভাবে মারা যান। গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান অনেকেই, আরও কত কারণ। অতএব দুর্ঘটনায় কুম্ভমেলায় যারা মারা গেলেন, তারা মেলায় পুণ্যের জন্য না গেলেই বেঁচে যেতেন, অথবা তারা কেন পুণ্য করতে গেলেন? এতে লাভ কী হলো? তাদের প্রাণটাই যে চলে গেল? এসব ভাবাই কিন্তু অর্থহীন, কুম্ভমেলায় গিয়ে তার পুণ্য সঞ্চযের সঙ্গে তাদের মৃত্যুর কোনো যোগ আমি দেখি না। আমার সঙ্গে অনেকের মতের মিল হতে নাও পারে। মৌনী অমাবস্যায় মহাকুম্ভে অমৃত স্নানে দুর্ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়। দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী, সাধু-সন্তরাও এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন ও পীড়িত পরিবারের প্রতি সমবেদনা ব্যক্ত করেছেন। দুঃখজনক ঘটনার জন্য পীড়িত পরিবারের প্রতি সমবেদনা ব্যক্ত করি। সকলের জন্য গুরু মহারাজের শুভ আশির্বাদ প্রার্থনা করি। সবার মঙ্গল হোক, সবার কল্যাণ হোক, সবাই শুভ দর্শন করুক, কেউ যেন দুঃখ না পায়…..
ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্ …..।
স্বামী আত্মভোলানন্দ(পরিব্রাজক)

Share This
Categories
প্রবন্ধ

পরাক্রম দিবস ও নেতাজি জয়ন্তী – একটি বিশেষে পর্যালোচনা।।।

সূচনা——

২৩শে জানুয়ারী পালিত, পরাক্রম দিবস স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মদিনে স্মরণ করা হয়।  এই বার্ষিক উদযাপন একটি ঐতিহাসিক ঘটনার চেয়ে বেশি;  এটি এমন একজন নেতার চিরস্থায়ী উত্তরাধিকারের প্রমাণ যাঁর জীবন নির্ভীকতা এবং স্বাধীনতার অন্বেষণে অটল অঙ্গীকারকে মূর্ত করেছে।

সুভাষ চন্দ্র বসু জয়ন্তীর তাৎপর্য—-

সুভাষ চন্দ্র বসু জয়ন্তী হল একটি ভারতীয় জাতীয় ছুটির দিন যা নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মবার্ষিকী স্মরণ করে, একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, জাতীয়তাবাদী এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী যিনি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন।  প্রতি বছর ২৩ জানুয়ারী, নেতাজি বসুর দেশপ্রেমের দৃঢ় চেতনা, মুক্তির প্রতি তাঁর অটল ভক্তি এবং তাঁর দৃঢ় চেতনার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পরাক্রম দিবস পালন করা হয়।

সুভাষ চন্দ্র বসু জয়ন্তীর ইতিহাস—

পরাক্রম দিবসের উৎসটি ২০২১ সালে চিহ্নিত করা যেতে পারে যখন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর ১২৪ তম জন্মদিনকে ভারত সরকার একটি জাতীয় ছুটি হিসাবে মনোনীত করেছিল।  ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে বোসের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।  ২৪ জানুয়ারী, ২০২১ তারিখে, ভারতে প্রথম পরক্রম দিবস পালন করা হয়েছিল বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে।  বেশ কিছু পাবলিক কার্যক্রম এবং শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, ভারত সরকার আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

বীর বিপ্লবী রাসবিহারী বসু : ভারতে ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতাকামী আন্দোলনের একজন অগ্রগণ্য বিপ্লবী নেতা।।

ভারতে ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতাকামী আন্দোলনের একজন অগ্রগণ্য বিপ্লবী নেতা এবং ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির অন্যতম সংগঠক ছিলেন রাসবিহারী বসু। রাসবিহারী বসু ১৮৮৬ খ্রীষ্টাব্দের ২৫ শে মে অধুনা পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলায় অবস্থিত তার পৈতৃক গ্রাম সুবলদহে জন্মগ্রহণ করেন৷ পিতা বিনোদবিহারী বসু এবং তার মায়ের নাম ভুবনেশ্বরী দেবী। তিনকড়ি দাসী ছিলেন তার ধাত্রী মাতা৷ তার পিতামহ নাম ছিলেন কালীচরণ বসু৷
এই বসু পরিবারের আদিবাস ছিল অধুনা পূর্ব বর্ধমান জেলার সুবলদহেতে৷ তাঁদের পূর্বপুরুষ নিধিরাম বসুই সর্বপ্রথম সুবলদহে বসবাস শুরু করেন।
রাসবিহারী বসুকে তার নামটি দিয়েছিলেন পিতামহ কালীচরণ বসু। গর্ভাবতী অবস্থায় তার মা ভুবনেশ্বরী দেবী কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

তাই সুবলদহ গ্রামের পশ্চিম পাড়াতে অবস্থিত বিষ্ণুমন্দির বা কৃষ্ণ মন্দিরে তার নামে প্রার্থনা(মানত) করা হয়েছিল যাতে তিনি(ভুবনেশ্বরীদেবী) সুস্থভাবে সন্তানের জন্ম দেন, তাই পরবর্তীকালে তার নাতির নাম রাখেন, কৃষ্ণের অপর নামে। রাসবিহারী হল কৃষ্ণের অপর নাম। রাসবিহারী বসু এবং তার ভগিনী সুশীলা সরকারের শৈশবের বেশির ভাগ সময় কেটেছিল সুবলদহ গ্রামে। তারা সুবলদহ গ্রামে বিধুমুখী দিদিমণির ঘরে বসবাস করতেন। বিধুমুখী ছিলেন একজন বাল্যবিধবা, তিনি ছিলেন কালিচরণ বসুর ভ্রাতৃবধূ। রাসবিহারী বসুর শৈশবের পড়াশোনা সুবলদহের গ্রাম্য পাঠশালায় (বর্তমানে সুবলদহ রাসবিহারী বসু প্রাথমিক বিদ্যালয়) ঠাকুরদার সহচর্যে সম্পন্ন হয়েছিল। রাসবিহারী বসু শৈশবে লাঠিখেলা শিখেছিলেন সুবলদহ গ্রামের শুরিপুকুর ডাঙায়। তিনি সুবলদহ গ্রামে তার ঠাকুরদা কালিচরণ বসু এবং তার শিক্ষকদের কাছ থেকে বিভিন্ন জাতীয়তাবাদী গল্প শুনে তার বিপ্লবী আন্দোলনের অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন। তিনি ছিলেন গ্রামবাসীদের নয়নের মণি। শোনা যায় যে, তিনি ইংরেজদের মূর্তি তৈরি করতেন এবং লাঠি খেলার কৌশলে সেই মূর্তিগুলোকে ভেঙে ফেলতেন। তিনি ডাংগুলি খেলতে খুব ভালোবাসতেন। তিনি শৈশবে সুবলদহ গ্রামে ১২ থেকে ১৪ বছর ছিলেন, এছাড়াও তিনি পরবর্তীকালে ব্রিটিশদের চোখে ধুলো দিয়ে প্রয়োজনে সুবলদহ গ্রামে এসে আত্মগোপন করতেন। পিতা বিনোদবিহারী বসুর কর্মক্ষেত্র ছিল হিমাচল প্রদেশের সিমলায়। তিনি সুবলদহ পাঠশালা, মর্টন স্কুল ও ডুপ্লে কলেজের ছাত্র ছিলেন। জীবনের প্রথম দিকে তিনি নানা বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং আলিপুর বোমা বিস্ফোরণ মামলায় ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে অভিযুক্ত হন। পরবর্তীকালে তিনি দেরাদুনে যান এবং সেখানে বন্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে হেড ক্লার্ক হিসেবে কাজে যোগদান করেন। দেরাদুনে তিনি গোপনে বাংলা, উত্তর প্রদেশ ও পাঞ্জাবের বিপ্লবীদের সংস্পর্শে আসেন।বিপ্লবী হিসেবে তার অন্যতম কৃতিত্ব বড়লাট হার্ডিঞ্জের ওপর প্রাণঘাতী হামলা। বিপ্লবী কিশোর বসন্ত বিশ্বাস তার নির্দেশে ও পরিকল্পনায় দিল্লিতে ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে বোমা ছোড়েন হার্ডিঞ্জকে লক্ষ্য করে। এই ঘটনায় পুলিশ তাকে কখনোই গ্রেপ্তার করতে পারেনি। সমগ্র ভারতব্যাপী সশস্ত্র সেনা ও গণ অভ্যুত্থান গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন রাসবিহারী বসু। জনৈক বিশ্বাসঘাতকের জন্যে সেই কর্মকাণ্ড ফাঁস হয়ে যায়। বহু বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকায় তিনি ব্রিটিশ সরকারের সন্দেহভাজন হয়ে ওঠেন এবং শেষ পর্যন্ত দেশত্যাগে বাধ্য হন। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি বন্যা বিধ্বস্ত সুবলদহ গ্রামে ফিরে আসেন এবং ত্রাণ বিলির উদ্যোগ নেন।[৯] ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের ১২ মে কলকাতার খিদিরপুর বন্দর থেকে জাপানি জাহাজ ‘সানুকি-মারু’ সহযোগে তিনি ভারতবর্ষ ত্যাগ করেন। তার আগে নিজেই পাসপোর্ট অফিস থেকে রবীন্দ্রনাথের আত্মীয়, রাজা প্রিয়নাথ ঠাকুর ছদ্মনামে পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন।
তারই তৎপরতায় জাপানি কর্তৃপক্ষ ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের পাশে দাঁড়ায় এবং শেষ পর্যন্ত ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় সমর্থন যোগায়। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ২৮-২৯ মার্চ টোকিওতে তার ডাকে অনুষ্ঠিত একটি সম্মেলনে ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লীগ বা ভারতীয় স্বাধীনতা লীগ গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে তিনি সেই সম্মেলনে একটি সেনাবাহিনী গঠনের প্রস্তাব দেন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ২২ জুন ব্যাংককে তিনি লীগের দ্বিতীয় সম্মেলন আহ্বান করেন। সম্মেলনে সুভাষচন্দ্র বসু কে লীগে যোগদান ও এর সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের আমন্ত্রণ জানানোর প্রস্তাব গৃহীত হয়। যেসব ভারতীয় যুদ্ধবন্দি মালয় ও বার্মা ফ্রন্টে জাপানিদের হাতে আটক হয়েছিল তাদেরকে ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লীগে ও লীগের সশস্ত্র শাখা ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মিতে যোগদানে উৎসাহিত করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে জাপানি সেনাকর্তৃপক্ষের একটি পদক্ষেপে তার প্রকৃত ক্ষমতায় উত্তরণ ও সাফল্য ব্যাহত হয়। তার সেনাপতি মোহন সিংকে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির নেতৃত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। কিন্তু তার সাংগঠনিক কাঠামোটি থেকে যায়। রাসবিহারী বসু ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (আজাদ হিন্দ ফৌজ নামেও পরিচিত) গঠন করেন। জাপানে সোমা নামে এক পরিবার তাকে আশ্রয় দেয়। ওই পরিবারেরই তোশিকা সোমাকে তিনি বিবাহ করেন। রাসবিহারী বসুকে জাপান সরকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘সেকেন্ড অর্ডার অব দি মেরিট অব দি রাইজিং সান’ খেতাবে ভূষিত করে। জানুয়ারি ২১, ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে জাপানে রাসবিহারী বসুর মৃত্যু হয়।

তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট ও উইকিপিডিয়া।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

ভ্রমণ প্রিয় মানুষদের জন্য কলকাতার কিছু দর্শনীয় স্থান ।

কলকাতার কিছু দর্শনীয় স্থান।

পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস, প্রাণবন্ত সংস্কৃতি এবং শ্বাসরুদ্ধকর স্থাপত্যের শহর। ঔপনিবেশিক যুগের নিদর্শন থেকে শুরু করে আধুনিক আকর্ষণ পর্যন্ত, কলকাতায় প্রতিটি ধরণের ভ্রমণকারীর জন্য কিছু না কিছু অফার রয়েছে। কলকাতায় ভ্রমণের জন্য কিছু শীর্ষ স্থান এখানে দেওয়া হল:

১। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল–

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল কলকাতার অন্যতম প্রতীকী ল্যান্ডমার্ক এবং অবশ্যই দেখার মতো একটি আকর্ষণ। রানী ভিক্টোরিয়ার স্মরণে নির্মিত, এই অত্যাশ্চর্য সাদা মার্বেল স্মৃতিস্তম্ভটিতে শহরের ইতিহাস ও সংস্কৃতি প্রদর্শনকারী নিদর্শন এবং প্রদর্শনীর একটি চিত্তাকর্ষক সংগ্রহ রয়েছে।

২। ভারতীয় জাদুঘর—

ভারতীয় জাদুঘর হল ভারতের প্রাচীনতম এবং বৃহত্তম জাদুঘরগুলির মধ্যে একটি, যেখানে প্রাচীন ভাস্কর্য, মুদ্রা এবং গয়না সহ নিদর্শনগুলির একটি বিশাল সংগ্রহ রয়েছে। জাদুঘরের চিত্তাকর্ষক গ্যালারিগুলি দেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রদর্শন করে, যা এটিকে ভ্রমণের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান করে তোলে।

৩। ফোর্ট উইলিয়াম—

ফোর্ট উইলিয়াম হল ১৮ শতকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক নির্মিত একটি ঐতিহাসিক দুর্গ। বর্তমানে এটি ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের সদর দপ্তর হিসেবে কাজ করে। দুর্গের ভেতরে দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ হলেও, আশেপাশের এলাকা থেকে হুগলি নদী এবং শহরের আকাশরেখার অত্যাশ্চর্য দৃশ্য দেখা যায়।

৪। হাওড়া ব্রিজ—

হাওড়া ব্রিজ, যা রবীন্দ্র সেতু নামেও পরিচিত, হুগলি নদীর উপর বিস্তৃত একটি আইকনিক ক্যান্টিলিভার সেতু। কলকাতাকে হাওড়ার সাথে সংযুক্ত করে, এই প্রকৌশল বিস্ময় শহর এবং নদীর মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপস্থাপন করে, যা এটিকে আলোকচিত্রী এবং পর্যটকদের কাছে একটি জনপ্রিয় স্থান করে তুলেছে।

৫। দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির*)—-

দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির হল দেবী কালীর প্রতি নিবেদিত একটি শ্রদ্ধেয় হিন্দু মন্দির। হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত, এই অত্যাশ্চর্য মন্দির কমপ্লেক্সটিতে জটিল স্থাপত্য, সুন্দর বাগান এবং একটি শান্ত পরিবেশ রয়েছে, যা আধ্যাত্মিক অনুসন্ধানকারী এবং স্থাপত্য প্রেমীদের জন্য এটি অবশ্যই পরিদর্শনযোগ্য করে তোলে।

৬। ইডেন গার্ডেন—-

ইডেন গার্ডেন বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিকেট স্টেডিয়ামগুলির মধ্যে একটি এবং কলকাতার একটি প্রতীকী ল্যান্ডমার্ক। আপনি যদি ক্রিকেট প্রেমী নাও হন, তবুও স্টেডিয়ামের অত্যাশ্চর্য স্থাপত্য এবং সবুজ পরিবেশ এটিকে বিশ্রাম নেওয়ার এবং দর্শনীয় স্থানগুলি উপভোগ করার জন্য একটি দুর্দান্ত জায়গা করে তোলে।

৭। সেন্ট পলস ক্যাথেড্রাল—

সেন্ট পলস ক্যাথেড্রাল হল উনবিংশ শতাব্দীতে নির্মিত একটি সুন্দর অ্যাংলিকান ক্যাথেড্রাল। অত্যাশ্চর্য গথিক পুনরুজ্জীবন স্থাপত্য, জটিল পাথরের খোদাই এবং সুন্দর দাগযুক্ত কাচের জানালা সমন্বিত, এই ক্যাথেড্রালটি ব্যস্ত শহরের কেন্দ্রস্থলে একটি শান্তিপূর্ণ মরূদ্যান।

৮। বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়াম—

বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়াম বিজ্ঞান উৎসাহী এবং পরিবারের কাছে একটি জনপ্রিয় আকর্ষণ। জ্যোতির্বিদ্যা এবং মহাকাশ অনুসন্ধানের উপর প্রতিদিনের অনুষ্ঠান এবং প্রদর্শনী অফার করে, এই প্ল্যানেটোরিয়ামটি মহাবিশ্বের বিস্ময় সম্পর্কে জানার জন্য একটি দুর্দান্ত জায়গা।

৯। নিউ মার্কেট—

নিউ মার্কেট হল কলকাতার একটি ঐতিহাসিক বাজার যেখানে কেনাকাটা এবং খাওয়ার বিস্তৃত বিকল্প রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় পোশাক এবং গয়না থেকে শুরু করে তাজা পণ্য এবং স্ট্রিট ফুড, এই ব্যস্ত বাজারটি শহরের দর্শনীয় স্থান, শব্দ এবং স্বাদ উপভোগ করার জন্য একটি দুর্দান্ত জায়গা।

১০। পার্ক স্ট্রিট—

পার্ক স্ট্রিট কলকাতার একটি বিখ্যাত রাস্তা যা তার অভিজাত রেস্তোরাঁ, বার এবং নাইটক্লাবের জন্য পরিচিত। এই প্রাণবন্ত রাস্তাটি শহরের নাইটলাইফ অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য একটি দুর্দান্ত জায়গা, যেখানে লাইভ মিউজিক ভেন্যু থেকে শুরু করে নৃত্য ক্লাব এবং লাউঞ্জ পর্যন্ত সবকিছু রয়েছে।

১১। সাউথ পার্ক স্ট্রিট কবরস্থান—

সাউথ পার্ক স্ট্রিট কবরস্থান হল কলকাতার একটি ঐতিহাসিক কবরস্থান যা ১৮ শতকের। বিস্তৃত সমাধি এবং সমাধিফলক সমন্বিত, এই কবরস্থানটি শহরের ঔপনিবেশিক অতীত অন্বেষণ এবং শেখার জন্য একটি আকর্ষণীয় জায়গা।

১২। জাতীয় গ্রন্থাগার—

জাতীয় গ্রন্থাগার হল ভারতের বৃহত্তম গ্রন্থাগার, যেখানে ২২ লক্ষেরও বেশি বই এবং পাণ্ডুলিপি রয়েছে। একটি সুন্দর ঔপনিবেশিক যুগের ভবনে অবস্থিত, এই গ্রন্থাগারটি জ্ঞানের ভান্ডার এবং বইপ্রেমী এবং গবেষকদের জন্য অবশ্যই পরিদর্শন করা উচিত।

১৩। মার্বেল প্রাসাদ—-

মার্বেল প্রাসাদ হল ঊনবিংশ শতাব্দীর একটি অত্যাশ্চর্য প্রাসাদ যা একজন ধনী বাঙালি বণিক দ্বারা নির্মিত। পাশ্চাত্য এবং ভারতীয় শিল্পের চিত্তাকর্ষক সংগ্রহের সমন্বয়ে, এই প্রাসাদটি শহরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার জন্য একটি দুর্দান্ত জায়গা।

১৪। টেগোর হাউস—

টেগোর হাউস হল ভারতের প্রথম নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক নিবাস। শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত, এই ঐতিহাসিক হাউস জাদুঘরটি এই সাহিত্যিক প্রতিভার জীবন এবং কর্মের চিত্র তুলে ধরে।

১৫। ময়দান—

ময়দান হল কলকাতার একটি বৃহৎ নগর উদ্যান যা শহরের কোলাহল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে মুক্তি দেয়। সুন্দর বাগান, হাঁটার পথ এবং প্রচুর সবুজ স্থান সমন্বিত, এই উদ্যানটি আরাম এবং শিথিল করার জন্য একটি দুর্দান্ত জায়গা।

উপসংহারে, কলকাতা এমন একটি শহর যেখানে একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস, প্রাণবন্ত সংস্কৃতি এবং অন্বেষণের জন্য প্রচুর আকর্ষণীয় আকর্ষণ রয়েছে। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এবং হাওড়া ব্রিজের মতো আইকনিক ল্যান্ডমার্ক থেকে শুরু করে ভারতীয় জাদুঘর এবং জাতীয় গ্রন্থাগারের মতো সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত, এই আশ্চর্যজনক শহরে প্রতিটি ধরণের ভ্রমণকারীর জন্য কিছু না কিছু আছে।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

ব্রিটিশ মিউজিয়াম: মানব ইতিহাস ও সংস্কৃতির এক ভান্ডার।

১৫ জানুয়ারী, ১৭৫৯ সালে লন্ডনে ব্রিটিশ জাদুঘর উদ্বোধন করা হয়, যা মানব জ্ঞান সংরক্ষণ ও প্রসারের ক্ষেত্রে এক নতুন যুগের সূচনা করে। আজ, ব্রিটিশ জাদুঘর বিশ্বের অন্যতম সেরা জাদুঘর, যা প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ দর্শনার্থীকে আকর্ষণ করে। এর বিশাল সংগ্রহ, যা ২০ লক্ষ বছরেরও বেশি সময় ধরে মানব ইতিহাস জুড়ে বিস্তৃত, মানব সংস্কৃতি বোঝার এবং উদযাপনের প্রতি জাদুঘরের প্রতিশ্রুতির প্রমাণ।

পটভূমি

ব্রিটিশ জাদুঘরটি ১৭৫৩ সালের ৭ জুন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যখন রাজা দ্বিতীয় জর্জ জাদুঘর প্রতিষ্ঠার জন্য সংসদের একটি আইনে তার রাজকীয় সম্মতি প্রদান করেন। এই আইনটি ছিল একজন ব্রিটিশ চিকিৎসক এবং সংগ্রাহক স্যার হ্যান্স স্লোনের দীর্ঘ অভিযানের ফলাফল, যিনি তার জীবদ্দশায় বই, পাণ্ডুলিপি এবং শিল্পকর্মের বিশাল সংগ্রহ সংগ্রহ করেছিলেন। স্লোয়েনের সংগ্রহ, যার মধ্যে ৭১,০০০-এরও বেশি জিনিসপত্র ছিল, ব্রিটিশ সরকার ২০,০০০ পাউন্ডে কিনেছিল এবং ব্রিটিশ জাদুঘরের সংগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু তৈরি করেছিল।

প্রাথমিক বছরগুলি

ব্রিটিশ জাদুঘর ১৭৫৯ সালের ১৫ জানুয়ারী লন্ডনের ব্লুমসবারির মন্টাগু হাউসে জনসাধারণের জন্য তার দরজা খুলে দেয়। জাদুঘরের প্রাথমিক বছরগুলি বিতর্ক এবং আর্থিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে চিহ্নিত ছিল। অনেকেই একটি জাতীয় জাদুঘরের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং জাদুঘরের সংগ্রহগুলি প্রায়শই অত্যধিক সারগ্রাহী এবং অসংগঠিত বলে সমালোচিত হয়।

এই চ্যালেঞ্জগুলি সত্ত্বেও, ব্রিটিশ জাদুঘর তার সংগ্রহগুলি বৃদ্ধি এবং সম্প্রসারণ অব্যাহত রাখে। ১৮০২ সালে, জাদুঘরটি রোসেটা স্টোন অধিগ্রহণ করে, একটি প্রাচীন মিশরীয় নিদর্শন যা জাদুঘরের সবচেয়ে বিখ্যাত জিনিসগুলির মধ্যে একটি হয়ে ওঠে। রোসেটা স্টোন, যার তিনটি ভাষায় (মিশরীয় হায়ারোগ্লিফ, ডেমোটিক লিপি এবং প্রাচীন গ্রীক) একটি শিলালিপি রয়েছে, প্রাচীন মিশরের হায়ারোগ্লিফগুলি বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

আজকের ব্রিটিশ জাদুঘর

আজ, ব্রিটিশ জাদুঘর বিশ্বের অন্যতম সেরা জাদুঘর, যা প্রতি বছর ৬০ লক্ষেরও বেশি দর্শনার্থীকে আকর্ষণ করে। মানব ইতিহাসের ২০ লক্ষ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিস্তৃত এই জাদুঘরের সংগ্রহশালায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৮০ লক্ষেরও বেশি জিনিসপত্র রয়েছে।

জাদুঘরের সংগ্রহশালাগুলি বিভিন্ন বিভাগে বিভক্ত, যার মধ্যে রয়েছে প্রাচীন মিশর এবং সুদান, গ্রীক এবং রোমান পুরাকীর্তি, মধ্যপ্রাচ্য, মুদ্রণ ও অঙ্কন, এবং প্রাগৈতিহাসিক এবং ইউরোপ। প্রতিটি বিভাগ তার বিশেষায়িত ক্ষেত্রের সাথে সম্পর্কিত জিনিসপত্র অর্জন, সংরক্ষণ এবং প্রদর্শনের জন্য দায়ী।

ব্রিটিশ জাদুঘরের কিছু বিখ্যাত জিনিসপত্রের মধ্যে রয়েছে এলগিন মার্বেল, লুইস চেসম্যান, লিন্ডিসফার্ন গসপেল এবং ম্যাগনা কার্টা। জাদুঘরে মিশর, গ্রীস, রোম এবং মেসোপটেমিয়া সহ প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলির একটি বিস্তৃত সংগ্রহও রয়েছে।

উপসংহার

ব্রিটিশ জাদুঘর মানুষের কৌতূহল এবং আমাদের ভাগ করা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বোঝার এবং উদযাপন করার আকাঙ্ক্ষার প্রমাণ। ১৭৫৯ সালে তার নম্র সূচনা থেকে শুরু করে বিশ্বের অন্যতম সেরা জাদুঘর হিসেবে বর্তমান অবস্থান পর্যন্ত, ব্রিটিশ মিউজিয়াম জ্ঞান, শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

ভবিষ্যতের দিকে তাকালে, ব্রিটিশ মিউজিয়াম বিশ্বের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আপনি একজন পণ্ডিত, ছাত্র, অথবা কেবল একজন কৌতূহলী দর্শনার্থী হোন না কেন, ব্রিটিশ মিউজিয়ামের কিছু না কিছু দেওয়ার আছে। এর বিশাল সংগ্রহ, প্রদর্শনী এবং প্রোগ্রামগুলি মানুষের সৃজনশীলতা, উদ্ভাবন এবং প্রকাশের শক্তির স্মারক।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

আলামুত দখল ও ধ্বংস :: ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণ।।

১২৫৬ সালের ১৫ জানুয়ারী, চেঙ্গিস খানের নাতি এবং ইলখানাত রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা হালাকু খান বর্তমান ইরানের নিজারি ইসমাইলি রাজ্যের দুর্গ আলামুত দখল ও ধ্বংস করেন। এই ঘটনাটি মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া এবং ইসলামী বিশ্বের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়কে চিহ্নিত করে।

পটভূমি

আলামুত, যা ঈগলের বাসা নামেও পরিচিত, উত্তর ইরানের আলবোর্জ পর্বতমালায় অবস্থিত একটি দুর্গ শহর ছিল। এটি ৯ম শতাব্দীতে জাস্টানিদ রাজবংশ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং পরে একাদশ শতাব্দীতে আবির্ভূত শিয়া ইসলামী সম্প্রদায় নিজারি ইসমাইলি রাজ্যের রাজধানী হয়ে ওঠে। নিজারিরা তাদের সামরিক দক্ষতা, কৌশলগত জোট এবং গুপ্তচর ও ঘাতকদের অত্যাধুনিক নেটওয়ার্কের জন্য পরিচিত ছিল।

১০৯০ সালে আলামুত দখলকারী ক্যারিশম্যাটিক নেতা হাসান-ই সাব্বাহ নিজারি ইসমাইলি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর নেতৃত্বে নিজারিরা তাদের অঞ্চল সম্প্রসারণ করেন, একটি জটিল শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন এবং একটি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ও বৌদ্ধিক ঐতিহ্য গড়ে তোলেন। তারা তাদের সহনশীলতা, শিল্প ও বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকতা এবং অন্যান্য ধর্মীয় ও জাতিগত গোষ্ঠীর সাথে সহাবস্থান করার ক্ষমতার জন্য পরিচিত ছিল।

মঙ্গোল আক্রমণ

ত্রয়োদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে, চেঙ্গিস খানের নেতৃত্বে মঙ্গোলরা মধ্য এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্য জয় শুরু করে। মঙ্গোলরা ছিল মঙ্গোলিয়ার একটি যাযাবর জাতি যারা একক নেতার অধীনে একত্রিত ছিল এবং একটি শক্তিশালী সামরিক যন্ত্রের অধিকারী ছিল। তারা তাদের বর্বরতা, সামরিক কৌশল এবং প্রশাসনিক দক্ষতার জন্য পরিচিত ছিল।

১২৫৩ সালে, চেঙ্গিস খানের নাতি হালাকু খানকে তার ভাই মংকে খান নিজারি ইসমাইলি রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নিযুক্ত করেন। হালাকু খানের সেনাবাহিনী ছিল মঙ্গোল যোদ্ধা, তুর্কি সৈন্য এবং স্থানীয় মিত্রদের সমন্বয়ে গঠিত। তারা নিজারি প্রতিরক্ষা দুর্বল করার জন্য সামরিক শক্তি, কূটনীতি এবং গুপ্তচরবৃত্তির সংমিশ্রণ ব্যবহার করে আলামুতের দিকে অগ্রসর হয়।

আলামুতের দখল এবং ধ্বংস

১২৫৬ সালের ১৫ জানুয়ারী, হালাকু খানের সেনাবাহিনী দীর্ঘ অবরোধের পর আলামুত দখল করে। ইমাম রুকনউদ্দিন খুরশাহর নেতৃত্বে নিজারি রক্ষকরা তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন, কিন্তু তাদের সংখ্যা ছিল অগণিত এবং তারা গুলিবিদ্ধ ছিলেন। মঙ্গোলরা দুর্গের দেয়াল ভেঙে ফেলার জন্য ক্যাটাপল্ট, তীরন্দাজ এবং অন্যান্য অবরোধ যন্ত্র ব্যবহার করে।

আলামুত দখলের পর, হালাকু খান দুর্গ ধ্বংস এবং এর বাসিন্দাদের গণহত্যার নির্দেশ দেন। বিরল পাণ্ডুলিপি এবং বইয়ের সংগ্রহের জন্য বিখ্যাত নিজারি গ্রন্থাগার ধ্বংস করা হয় এবং এর অনেক পণ্ডিত ও বুদ্ধিজীবী নিহত বা বন্দী হন।

পরবর্তী ঘটনা

আলামুতের দখল এবং ধ্বংস নিজারি ইসমাইলি রাজ্যের সমাপ্তি এবং পারস্যে মঙ্গোল শাসনের সূচনা করে। হালাকু খান ইলখানাত রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন, যা আধুনিক তুরস্ক থেকে মঙ্গোলিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত এক বিশাল ভূখণ্ডে শাসন করত।

আলামুতের ধ্বংসের ফলে ইসলামী বিশ্বের উপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ে। এটি মধ্যপ্রাচ্যে সাংস্কৃতিক ও বৌদ্ধিক বিকাশের এক যুগের সমাপ্তি এবং মঙ্গোল আধিপত্যের এক যুগের সূচনা করে। অনেক মুসলিম পণ্ডিত ও বুদ্ধিজীবী পালিয়ে যেতে বা আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হন এবং ইসলামী বিশ্ব অন্ধকার ও অস্থিরতার এক যুগে নিমজ্জিত হয়।

উপসংহার

১২৫৬ সালের ১৫ জানুয়ারী হালাকু খান কর্তৃক আলামুতের দখল ও ধ্বংস ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় ছিল। এটি নিজারি ইসমাইলি রাজ্যের সমাপ্তি এবং পারস্যে মঙ্গোল শাসনের সূচনাকে চিহ্নিত করে। আলামুতের ধ্বংস ইসলামী বিশ্বের জন্য সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে, যার ফলে সাংস্কৃতিক ও বৌদ্ধিক অবক্ষয়ের এক যুগ শুরু হয়। আজ, আলামুতের উত্তরাধিকার বিশ্বজুড়ে মানুষকে অনুপ্রাণিত এবং মুগ্ধ করে চলেছে, যা ইসলামী বিশ্বের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ও বৌদ্ধিক ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে কাজ করে।

Share This
Categories
কবিতা

জন্মদাত্রী : রাণু সরকার।

বাবুর বাড়ি বাসন ধোয়ার কাজ করে যে সে আমার জন্মদাত্রী মা–
অতীত বর্তমান ভুলতে পারি না।
দারিদ্রের কোনো পছন্দ আছে নাকি, খাই তো কাঁকর মেশানো খুদ,
দীর্ঘ উপবাসে ছিলো এক গাই, শীর্ণদেহ শুকিয়ে গেছে দুধ–
তারপরও
কিছুদিন বেঁচে ছিলো প্রাণে, চলে না আর জীর্ণদেহ,
ভাঙাচোরা মাটির দেয়াল, বাঁচবো কদিন তবুও হিসাব করি গেল,
কথাবলা, হাঁটা সবই তার কোলে, তার বুকে ছড়িয়েছি দু’পা,
বাবুর বাড়ির পান্তা এনে খাওয়ায়, কিকরে ভুলি তা?

সে আমার মা, স্বয়ং ভগবান,
কিকরে ঘুচাই, দুঃখ-কষ্টে ভরা ছিলো মায়ের মন।
গুমরে উঠতো হৃদয় কষ্ট-যন্ত্রণার বিষে,
এতো গুণবতী মায়ের কথা ভুলি কিসে।
প্রাণপণ প্রবল কর্মে নিষ্ঠা, কিন্তু অন্তরে ছিলো একটু ভয়,
কোথায় গেলো কষ্টেরা, শক্তিসাধন করেছিলো মৃত্যুঞ্জয়।

প্রচণ্ড মানসিক শক্তি ছিলো- এইরকম মা সবসময় চাই,
মায়ের কথা কিকরে ভুলি- এখনো মনে পড়ে ভুলি নাই।
মায়ের জঠরে জন্মে করি মায়ের নাম গান,
এই মাকে কেউ কি করে অপমান?
বাবুদের বাড়ি কাজ করেছে বলে কিকরে ভুলি মায়ের বাণী?
অব্যক্ত অন্তরের কষ্ট গুলো নিয়েই চলে গেলেন রাণী।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

স্বদেশী আন্দোলনের প্রথম যুগের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা ও বিপ্লবী, বিপিনবিহারী গঙ্গোপাধ্যায় – একটি বিশেষ পর্যালোচনা।।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের কঠোর পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়। এই অন্দোলনে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে বিপিনবিহারী গঙ্গোপাধ্যায় প্রথম সারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন।  বিপিনবিহারী গঙ্গোপাধ্যায় ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে।
বিপিনবিহারী গঙ্গোপাধ্যায়, জন্ম নভেম্বর ৫, ১৮৮৭ । তিনি ছিলেন স্বদেশী আন্দোলনের প্রাথমিক যুগের একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন নেতা এবং অগ্নি যুগের একজন বিপ্লবী।
বিপিনবিহারীর আদি নিবাস ছিল উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার হালিশহর।  বারীন্দ্রকুমার ঘোষ এবং রাসবিহারী বসু সহকর্মী হিসেবে বিপ্লবী মন্ত্রে দীক্ষিত হন।  মুরারিপুকুর, আরিয়াদহ প্রভৃতি বিপ্লবী কেন্দ্রগুলির সাথে তার সরাসরি যোগাযোগ ছিল। তিনি ১৮৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত স্ব-উন্নতি সোসাইটির সদস্য ছিলেন যা বিপ্লবের প্রাথমিক দিনগুলিতে বিদ্যমান ছিল।  ১৯১৪ সালে তাঁর উদ্যোগে রোদা কোম্পানির মাউসার পিস্তল অপহরণ করা হয়।  ১৯১৫ সালে, যুগান্তর দল কার্তিক বার্ড কোম্পানির গাড়ি লুট করতে যতীন্দ্রনাথের সাহায্যকারী ছিল।  তিনি ১৯২১ সালে কংগ্রেস আন্দোলনে যোগ দেন। তিনি ১৯৩০ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। এছাড়াও তিনি ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগ দেন। তিনি তার জীবনের প্রায় ২৪ বছর বিভিন্ন কারাগারে কাটিয়েছেন।
তিনি শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।  ন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস গঠনের পর তিনি বাঙালি প্রাদেশিক সংগঠনের সভাপতি ছিলেন।  প্রথম সাধারণ নির্বাচনে তিনি উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বিজপুর কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হন এবং পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্য হন।
১৪ জানুয়ারি, ১৯৫৪ সালে মহান এই বিপ্লবী প্রয়াত হন।

।।তথ্য: সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

মূল্যবান মনুষ্য জীবন ও মহাকুম্ভ মেলা-2025 : স্বামী আত্মভোলানন্দ(পরিব্রাজক)।

ওঁ নমঃ শ্রীভগবতে প্রনবায় নমঃ…!

আমাদের পরম সৌভাগ্য পুণ্যভূমি,পবিত্রভূমি ভারতবর্ষের মতো পবিত্র রত্নগর্ভা ভূমিতে আমরা জন্মলাভ করেছি। আধ্যাত্মিক দেশ তপোভূমি আমাদের এই ভারতবর্ষ। আমাদের ভারতমাতা স্বমহিমায় উজ্জ্বল। এই সুন্দর তপোভূমি,পুণ্যভূমি ভারতভূমিতে মূল্যবান মনুষ্য জীবনে কুম্ভমেলা একটি মহান আধ্যাত্মিক সমাবেশ, কুম্ভ মেলার উৎপত্তি বৈদিক যুগ থেকে। পৌরাণিক মতানুসারে, দেবতা এবং অসুররা অমরত্বের অমৃত প্রাপ্তির জন্য দুধের আদিম সাগর, ক্ষীরসাগর মন্থন করার জন্য একসাথে কাজ করার জন্য একমত হয়েছিল। এই সমুদ্র মন্থন দেবতা ও দানব উভয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়েছিল। তাই সম্মত হয়েছিল যে দেবতা এবং অসুরদের মধ্যে সমস্ত অমৃত সমানভাবে ভাগ করা হবে। কিন্তু অমৃতে পূর্ণকুম্ভ (কলসি) উপস্থিত হওয়ার সাথে সাথে অসুররা তা দখল করে পালিয়ে যায়। দেবতারা নিজেদের এবং মানবতার অমরত্ব সুরক্ষিত করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিল, তাই দেবতারা অসুরদের তাড়া করেছিলেন, যার ফলে আকাশে দেবতা এবং অসুরদের মধ্যে একটি ভয়ঙ্কর যুদ্ধ হয়েছিল। অমৃতের জন্য যুদ্ধ দেবতা এবং অসুরদের মধ্যে স্বর্গীয় যুদ্ধ টানা বারো দিন-রাত ধরে চলেছিল, যা মানুষের দৃষ্টিতে বারো বছরের সমান। (দেবতাদের এক দিন-রাত্রি সমান মানুষের এক বছর, তাই, দেবতাদের ছয় মাস উত্তরায়ণ একদিন, ছয়মাস দক্ষিণায়ন এক রাত্রি।) এই সংঘর্ষের সময়, মূল্যবান অমৃতের কয়েক ফোঁটা পৃথিবীতে পড়েছিল চারটি স্বতন্ত্র স্থানে: প্রয়াগরাজ, হরিদ্বার, উজ্জয়িনী এবং নাসিক। তাই এই চারটি স্থানে কুম্ভমেলা অনুষ্ঠিত হয়। তাই, কুম্ভমেলার শিকড় হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী সমুদ্র মন্থন বা সমুদ্র মন্থনে নিহিত। যখন গ্রহের অবস্থান এবং যে তিথিতে অমৃতের ফোঁটা পৃথিবীতে পড়েছিল সেই একই তিথিতে কুম্ভ মেলার সময়ও অমৃতকলশ স্মরণ করা হয়।

আসন্ন মহা কুম্ভ মেলা 2025-এর জন্য প্রয়াগরাজে প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে৷ এই বছর মহাকুম্ভ মেলা -13 জানুয়ারি থেকে 26 ফেব্রুয়ারি-2025 পর্যন্ত প্রয়াগরাজে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে গঙ্গা,যমুনা এবং সরস্বতী নদীর মিলনস্থলে অনুষ্ঠিত হবে। যা মহাকুম্ভ 2025 নামেও পরিচিত। বৃহস্পতি গ্রহকে দেবতাদের গুরু হিসাবে বিবেচনা করা হয়। যেহেতু বৃহস্পতির রাশিচক্র সম্পূর্ণ করতে প্রায় 12 বছর সময় লাগে , তাই প্রতি বারো বছর পর এক জায়গায় কুম্ভমেলা পালিত হয়। 13-জানুয়ারী 2025: পৌষ পূর্ণিমা দিনটি মহাকুম্ভ মেলার উদ্বোধন। 14 জানুয়ারী, 2025: মকর সংক্রান্তি (অমৃত স্নান), 29 জানুয়ারী, 2025: মৌনী অমাবস্যা ( অমৃত স্নান), মৌনী অমাবস্যা একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন।
3 ফেব্রুয়ারি, 2025: বসন্ত পঞ্চমী (অমৃত স্নান), বসন্ত পঞ্চমী ঋতু পরিবর্তনের প্রতীক এবং হিন্দু পুরাণে জ্ঞানের দেবী সরস্বতীর আগমন উদযাপন করে।12-ফেব্রুয়ারী, 2025: মাঘী পূর্ণিমা( অমৃত স্নান), দিনটি ঋষি ও সন্ন্যাসীদের জন্য এক মাসব্যাপী তপস্যার সময়কালের সমাপ্তি চিহ্নিত করে৷ 26 ফেব্রুয়ারি, 2025: মহাশিবরাত্রি(অমৃত স্নান), মহা কুম্ভের শেষ দিনটি মহা শিবরাত্রিতে পড়ে যা ভগবান শিবের বিবাহকে সম্মান করে এবং আধ্যাত্মিকতা বৃদ্ধির জন্য একটি উল্লেখযোগ্য দিন। প্রয়াগ, উত্তরপ্রদেশ : গঙ্গা, যমুনা এবং পৌরাণিক (গুপ্ত) সরস্বতী নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত, এখানেই সঙ্গম বা এই তিনটি নদীর মিলন ঘটে। প্রয়াগকে কুম্ভ মেলার স্থানগুলির মধ্যে সবচেয়ে পবিত্র বলে মনে করা হয়।

আমাদের ভারতের পবিত্র রত্নগর্ভা ভূমিতে অনন্তকাল ধরে ঋষি, মুনি, সাধু, সন্ন্যাসী, অনেক বিখ্যাত দার্শনিক, অনেক বিখ্যাত বিজ্ঞানী, অনেক বিখ্যাত মহাপুরুষ, সাধুমহাত্মা, মহামানব, অনেক বিখ্যাত মানুষ, নিজেদের প্রভাব, মহিমা, জ্ঞানের, তপস্যার, আবিস্কারের অবদান রেখে গেছেন মানব সমাজের জন্য। হর্ষবর্ধন খ্রিস্টপূর্ব ৬৪৪ সালের দিকে এলাহাবাদে কুম্ভ মেলার আয়োজন শুরু করেন। ঐতিহ্যগতভাবে কুম্ভমেলার প্রচলন ৮ম শতাব্দীর দার্শনিক ও সাধুশ্রী আদি শঙ্করাচার্য করেছিলেন। তিনি ভারতজুড়ে বিভিন্ন মঠ ও ধর্মীয় সমাবেশে দার্শনিক আলোচনা ও বিতর্ক চালু করার প্রচেষ্টা করেছিলেন। বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রীকে পুরাণের মতো প্রাচীন ধর্মগ্রন্থগুলি অনুরূপ সমাবেশের উল্লেখ করে এবং হিউয়েন সাং-এর মতো ভ্রমণকারীরা তাঁর ভারত সফরের সময় ভক্তির প্রাণবন্ত দৃশ্যগুলি বর্ণনা করেছিলেন। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষের মতে,২০১৯ সালের কুম্ভ মেলায় ২০০ মিলিয়নেরও বেশি তীর্থযাত্রীরা একত্রিত হয়েছিলেন, যার মধ্যে সবচেয়ে ব্যস্ত দিনে প্রায় ৫ কোটি মানুষ অংশগ্রহণ করেছিলেন। এই মেলাটি ইউনেস্কোর “মানবতার অমূল্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্বমূলক তালিকা”-তে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এটি বিশ্বের বৃহত্তম শান্তিপূর্ণ জনসমাগমগুলোর একটি এবং “বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় তীর্থযাত্রীদের সমাবেশ” হিসেবে বিবেচিত হয়।

কুম্ভ মেলা বহু শতাব্দী ধরে বিকশিত হয়েছে, যা আধ্যাত্মিক ঐক্য এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে। প্রতিটি কুম্ভ মেলা সাধু, তপস্বী, সন্ন্যাসী এবং তীর্থযাত্রীদের একটি অসাধারণ সমাবেশ হয়। সবাই তাদের আধ্যাত্মিক জ্ঞানের সন্ধানে একত্রিত হয়।
আধুনিক সময়ে, কুম্ভমেলা অবিরত বিশ্বাস এবং ভক্তির আধ্যাত্মিকতা এবং অমরত্বের এবং মানবতাকে তার ঐশ্বরিক জ্ঞান এবং শাশ্বত আনন্দের সন্ধানে একত্রিত করে। যা সারা বিশ্ব থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষকে আকর্ষণ করে। কুম্ভমেলা আধ্যাত্মিকতা, ইতিহাস এবং ভক্তির এক মহামিলন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রীকে পুরাণের মতো প্রাচীন ধর্মগ্রন্থগুলি অনুরূপ সমাবেশের উল্লেখ করে এবং হিউয়েন সাং-এর মতো ভ্রমণকারীরা তাঁর ভারত সফরের সময় ভক্তির প্রাণবন্ত দৃশ্যগুলি বর্ণনা করেছিলেন। সৌন্দর্যময় আমাদের এই ভারতবর্ষ সকল নৈসর্গিক উপাদানে সমৃদ্ধ। কুম্ভমেলা এই মনোরম, অনুপম সৌন্দর্য অনন্তকাল ধরে আমাদের চিত্তে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য, শিক্ষা ও আনন্দের অমৃত ধারা জাগিয়ে তুলছে। যা দেশ ও বিশ্ব জুড়ে লক্ষ লক্ষ ভক্তদের আকর্ষণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্ …..।
স্বামী আত্মভোলানন্দ(পরিব্রাজক)

Share This
Categories
গল্প

দাবানো : দিলীপ রায় (৯৪৩৩৪৬২৮৫৪)।

রোহিমা খাতুন ও মহিমা খাতুন, দুই বোন । রোহিমা বড় । তার বিয়ে হয়ে গেছে । মহিমা এখন পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত । গাঁয়ে মহিমার সমবয়সী মেয়েরা প্রায় সকলে বিবাহিত । ঐ ফরাসডাঙ্গা গ্রামে দীর্ঘদিন থেকে অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার রেওয়াজ । যার জন্য বেশীর ভাগ মেয়েদের অষ্টম/নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় বিয়ে । মেয়েদের বিয়ের বয়স বেশী হলে, পাত্র পাওয়া কঠিন ! গাঁয়ে কয়েক ঘর ছাড়া আর সকলেই হতদরিদ্র । ‘দিন আনে দিন খায়’ অবস্থা । পরের জমিতে চাষ-আবাদে দিন-মজুর খাটে । কিছু মানুষের রাজমিস্ত্রির যোগাড়ে-মিস্ত্রি হিসাবে দূরের শহরে কাজ করে তাদের জীবিকানির্বাহ । গাঁয়ের মানুষের আর্থিক অবস্থা তথৈবচ । হাতে গোনা কয়েকজন সবজি বিক্রি করে তাদের সংসার । এইরকম একটা টানাটানির পরিস্থিতিতে ফরাসডাঙ্গা গ্রামের মানুষের দিনাতিপাত ।
রোহিমা খাতুনের বিয়ে হয়েছে ঠিক চৌদ্দ বছরের মাথায় । এখন তার বিশ বছর বয়স । দুটো সন্তানের জননী । সন্তান হওয়া ও সন্তান পালনের জন্য রোহিমার চেহারা শুকিয়ে কাঠ । এখন তার রোগা-পটকা চেহারা । চেহারার জৌলুস বয়স্ক মহিলাদের ন্যায় । এইসব দেখেশুনে মহিমা বিয়ের ব্যাপারে বেঁকে বসেছে । তার একটাই বক্তব্য, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তবেই বিয়ে । জেদি মনোভাবের জন্য মহিমাকে নানান গঞ্ছনা সইতে হচ্ছে । বিশেষ করে পাড়াপ্রতিবেশীদের কাছ থেকে । আর আছে গাঁয়ের মোড়ল অর্থাৎ মৌলবীদের উৎপাত । অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ের ব্যাপারে গাঁয়ের মৌলবীদের শ্যেনদৃষ্টি । বিয়ের উপযুক্ত বয়স হওয়া সত্ত্বেও লিয়াকত কেন মেয়েকে বিয়ে দিচ্ছে না, এইটাই তাঁদের গাত্রদাহ ? জুম্মাবারে মসজিদে নামাজ পড়া শেষ হলে মৌলবীরা লিয়াকতকে মনে করিয়ে দিলেন, “বয়স হওয়া সত্ত্বেও মেয়েকে কেন বিয়ে দেওয়া হচ্ছে না ?” মেয়েদের কাজ, ঘর-সংসার করা । “বিয়ে না দিয়ে মেয়েকে দূরের কলেজে পড়ানো” তাঁরা ভালভাবে নিচ্ছেন না ?
গাঁয়ের মৌলবীদের নির্দেশ মানতে নারাজ মহিমা । জীবনটা তার । জীবনের ভাল-মন্দের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার একমাত্র তার নিজের । তাই মহিমার জেদ, “নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তবেই বিয়ে ।“ লিয়াকত নিজেও মনেপ্রাণে চায়, তার মেয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াক । ফরাসডাঙ্গা গ্রাম থেকে অন্তত একটি মেয়ে উচ্চ শিক্ষিত হোক এবং চাকরি করুক ।
( ২ )
সকালে ঘুম থেকে উঠে লিয়াকত জমিতে ছুটলো । তার সর্বসাকুল্যে দুই বিঘে জমি । জমিতে পাট চাষ । পাট কাটার পর আমন ধান রোয়ার পালা । গিন্নিকে বলে গেলো জমিতে দুপুরের খাবার পৌঁছে দিতে । মাথার উপর থেকে কেবল সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়েছে । এমন সময় মহিমা গামছায় খাবারের থালা বেঁধে মাঠে উপস্থিত । মহিমা খবর দিলো, তার রেজাল্ট বের হয়েছে । পাশ করেছে এবং সে এখন গ্রাজুয়েট । লিয়াকতের তখন কী আনন্দ ! মেয়ের বি.এ. পাশের খবরে খুশীতে উচ্ছ্বসিত । আবেগে বলেই ফেললো, “তুই এবার মস্ত বড় চাকরি পাবি ।“
মহিমা উল্টে বললো, চাকরি পাওয়া অতো সহজ নয় বাবা । বাস্তব বড় কঠিন ।
মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে লিয়াকত বললো, “তুই আদাজল খেয়ে পড়াশোনায় মন দে । আমার বিশ্বাস, তুই চাকরি পাবি ।“
পড়াশুনার জন্য মহিমার দরকার একটা ল্যাপটপ । মহিমা আদৌ ল্যাপটপ কিনতে পারবে কিনা, সেই ব্যাপারে পুরোটাই ধন্দে ? কিন্তু লিয়াকত মেয়েকে আশ্বস্ত করলো, পাট বিক্রি করে সেই টাকায় মহিমার ল্যাপটপ কিনে দেবে ।
ডিজিটাল যুগ । তাই মহিমা নেটের মাধ্যমে নিজেকে তৈরী করতে শুরু করলো । মহিমার বাস্তব উপলব্ধি, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় দাঁড়াতে গেলে যথোপযুক্ত প্রস্তুতি দরকার !
অন্যদিকে গাঁয়ের মৌলবীরা নিজেরা মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিলেন, লিয়াকতকে আর সময় দেওয়া যাবে না ।
জুম্মাবারে মসজিদে নামাজের পরে ফরাসডাঙ্গা গ্রামের সকল মানুষের সামনে ও অন্যান্য মৌলবীদের অনুমতিক্রমে মসজিদের মূল মৌলবী ( মসজিদের পুরোহিত অর্থাৎ ‘ইমাম’) লিয়াকতকে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়ে বললেন, “তার মেয়েকে সত্ত্বর বিয়ে দিতে । অন্যথায় গাঁয়ে সকলের সাথে বাস করা যাবে না । তাকে একঘরে থাকতে হবে ।“
খবর পেয়ে ছুটে আসে মহিমা । তার আবার ভয় ডর কম । মৌলবীদের মুখের উপর সে জানিয়ে দিলো, “আমি এখন বিয়ে করবো না । আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই । তাই আমাকে সুযোগ এওয়া হোক ।“
মসজিদের মূল মৌলবী লিয়াকতের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলেন, “তোমার মত জানাও ।“
গাঁয়ের মানুষের সামনে লিয়াকত মাথা নীচু করে আমতা আমতা করে বললো, “হ্যাঁ, মেয়ে যেটা বললো সেটাই আমার মত ।“
উপস্থিত সকলেই তখন চুপ । মূল মৌলবী তখন ষোষণা করলেন, “লিয়াকতকে গ্রামে ‘এক ঘরে’ করে রাখা হলো ।“
মহিমার কাছে সবচেয়ে তাজ্জব ব্যাপার, গাঁয়ের একটি মানুষও কোনো প্রতিবাদ করলো না । মহিমার আপশোশ, মানুষ এখনও মান্ধাতার আমলে বিরাজ করছেন । বর্তমান ডিজিটাল যুগে নারীরা কতো এগিয়ে, সেখানে তাদের গাঁয়ের মানুষ অনেক পিছিয়ে । এটা নিয়ে তাঁদের মাথাব্যাথা নেই । এইসব দেখে রাগে-দুঃখে মহিমা তার বাবাকে জোর করে সেখান থেকে বিদায় নিলো ।
তারপর …………?
(৩)
তারপর চাকরির চেষ্টা । অনেক চেষ্টার পর চাকরির পরীক্ষায় পাশ করলো এবং চাকরি পাওয়ার তালিকায় নামও উঠলো । “তালিকায় নাম উঠেছে” এই মর্মে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে মহিমাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েও দিলো । কিন্তু অবশেষে জানতে পারলো, কোনো এক প্রভাবশালী নেতার মেয়েকে চাকরিটা পাইয়ে দিতে গিয়ে ‘চাকরি পাওয়ার তালিকা’ থেকে তার নাম কাটা গেছে ।
মহিমা নাছোড়বান্দা । জেদি মেয়ে । ছাড়বার পাত্রী নয় । মনে মনে ভাবছে, তাকে দাবানো যাবে না । মহামান্য উচ্চ আদালতে বিষয়টি তুললো । সেখানেও অনেক বাধা । হাইকোর্ট থেকে কেস তুলে নেওয়ার জন্য তাকে রীতিমতো শাসানি । এমনকি রাস্তাঘাটে তাকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা । কিন্তু মহিমার সাহসের কাছে তাদের সব প্রচেষ্টাই বিফল ।
ডিপার্ট্মেন্টের চিঠিটাই একমাত্র মহিমার ভরসা । কোর্টে লড়াই করার মোক্ষম অস্ত্র !
রাত্রিবেলা শুয়ে রয়েছে । পরেরদিন হাইকোর্টে মামলার শুনানি । একদল গুণ্ডা বাড়িতে এসে হুজ্জুতি । মহিমাকে বিছানা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা । মহিমার মা রান্নাঘর থেকে সবজি কাটার বটি এনে গর্জে উঠলো, “তোরা পালাবি, নতুবা তিনটেকেই আমি একসঙ্গে কচুকাটা কাটবো ।“
মহিমার মায়ের রণংদেহি মূর্তি দেখে মুখে কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা আগন্তুকগুলো পালাতে বাধ্য হলো । যাওয়ার সময় মহিমার উদ্দেশে তাদের কী চিৎকার, আগামীকাল কোর্টে গেলে তোকেও আমরা কচুকাটা কাটবো ।
এদিকে গাঁয়ে ‘একঘরে’ থাকার জন্য চিৎকার চেচামেচি শোনা সত্ত্বেও মৌলবীদের ভয়ে কেউ তাদের বাঁচাতে এগিয়ে এলো না ।
মামলার শুনানি শেষ । মাননীয় বিচারক সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দেশ দিলেন, সত্বর মহিমাকে কাজে যোগ দেওয়ার নিয়োগপত্র দিয়ে দিতে ।
মহিমা কাজে যোগ দিলো ।
লিয়াকতের চোখে আনন্দাশ্রু ।
*********************************************

Share This