Categories
কবিতা

সাথী : শীলা পাল।।

তুই সঙ্গে থাকলে—-
আমার মনের
আকাশ কতো নীল হয়ে যায় !
পুষ্প বনে রঙের ঝর্ণা ,
বাতাসে চপলতার ইশারা ,
নদীর স্রোতে উচ্ছলতা
সব যেন আমাকে ঘিরে থাকে।

তোর স্পর্শে
পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়ে
যে ঝর্ণা তার সমস্ত উচ্ছ্বাস
আমি আমার অনুভূতি দিয়ে
বুঝতে পারি ,আমি গলতে থাকি
ওই ধোঁয়াশা জলকণার মতো।

তুই কাছে এলে
আমি স্থানুবৎ।আমার চোখ পলকহীন
ঝড়ের পূর্বাভাসের মতো,
এক নিস্তব্ধতা ঢেকে ফেলে।

একটু ছোঁয়ায় বৃষ্টি এসে
ভাসিয়ে নিয়ে যায়
বাঁধ ভাঙে প্লাবনের।

Share This
Categories
কবিতা

স্মৃতিচারণ : শীলা পাল।

আমাদের সেই প্লাটফর্ম টি
বড় সুন্দর ছিল
লালমাটির কাঁকর বিছানো একটা কর্গেটের শেড,
একটি পুরণো অশথগাছ, আর অনেক কালের একটি বটবৃক্ষ দু প্রান্তে প্রহরীর মত দাঁড়িয়ে আছে।
আমার বন্ধুদের সঙ্গে নিত্যদিনের বৈকালিক ভ্রমনের একটি প্রিয় জায়গা।
রেলগাড়ির আসা যাওয়া তার তীব্র
হুইশেলের আওয়াজ আমাদের ভেতরটা নাড়িয়ে দিয়ে চলে যেত
যেন অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি দেওয়ার একটা আহ্বান।
ভীষণ ভালোলাগার নেশায় তাদের চলে যাওয়া বুকের মধ্যে ঝমঝম আওয়াজ তুলতো।
এই রেশ মনের মধ্যে একটা নেশার মত থেকে যেত। আবার পরের দিনে
ছুটতাম সেই বাঁশির ডাকে।
রেলগাড়ি চলে যাওয়ার পর যে একটা শূন্যতা অনেকক্ষণ বুকের মধ্যে তা অনুভব করতাম।
কোনও কোনও দিনে
একপাশে ঝাঁকড়া ছাতিমগাছের নীচে হলুদ কাপড় পরা সাঁওতাল বর কনে প্যাসেঞ্জার ট্রেনের জন্য বসে থাকতো হাঁ করে দেখতাম।
শীতের দিনে শাল পিয়ালের জঙ্গলে পাতা ঝরার একটা শব্দ হাওয়ার সঙ্গে মিশে কেমন যেন মনকেমন করত।
এখনও সেই শৈশবের দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যায়।জীবন টাই তো এখন সেই প্লাটফর্ম হয়ে আছে।কত জনের আসা যাওয়ার সাক্ষী হয়ে বসে আছি।
গাড়িতে হয়তো যখন চড়ে বসব তখন প্লাটফর্ম অনেক দূরে ছাড়িয়ে চলে যাব।

Share This
Categories
কবিতা

উর্বরা : শীলা পাল।

কুয়াশার আড়ালে তন্বী মেয়েটি আনমনা,
ভরন্ত ধানের ক্ষেতের মত গর্ভিনী পরবিনী
সোনারঙ উছলে পরে আড়াল সরে গেলে
ফসল ভরা যৌবন তার অহংকার।
চোখে তার কামনার উগ্র চাহনি
সুবাস ছড়িয়ে পড়ে দিক থেকে দিকে।
পৌষের অবেলায় গৃহস্থের উঠোনে
তার আরাধনা শুরু হয়
প্রদীপের আলোয় আলোকিত যুবতী দেবীরূপে
প্রতিষ্ঠিতা ।তন্বী মেয়েটি মাতৃ রূপে
কল্যাণী জননী র প্রশান্ত হাসি
সংসারে তার আলো কুয়াশা সরিয়ে দেয়।

Share This
Categories
কবিতা

উপলব্ধি : শীলা পাল।

কবে কখন চুড়ির রিনরিন বেজে ওঠা থেমে গেছে
বুঝি নি,
ধুলো মাখা পায়ে সবকিছু
ফেলে কখন এসেছি অন্য মনে, বুঝতে পারি নি।
তোমার প্রসন্ন হাসি আমার জীবনের প্রশান্তি এনে দিয়ে বলল
নিরাভরণ হলে তবেই প্রাপ্তি, ত্যাগের একটা একটা ধাপ এভাবেই এসে তোমাকে মুক্ত মনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে।
তোমার কাছে আকাশ নেমে আসবে একদিন
আমি অপেক্ষা করি।

Share This
Categories
কবিতা

প্রকৃতি : শীলা পাল।

গোধূলির আলোয় দেখলাম ঝরাপাতার উপর
বসে তুমি কেমন যেন সব হারিয়ে উদ্ভ্রান্ত।
কেন কেন
এই যে নিস্তব্ধ আকাশ তার ভাষাহীন সৌন্দর্য,
পাটে বসা সূর্যের কোমল রঙের বিচ্ছুরণ
তোমার হৃদয়ে একটা ভীষণ কিছু পাওয়ার মত
মনে হল না!
আমরা চোখ মেলে যদি একবার প্রকৃতিকে
ভালোবেসে ফেলতে পারি
দেখবে সে তোমার জন্য তার গোপন অন্দরের জায়গায়
বিছিয়ে রেখেছে ভালোবাসার গন্ধে মাখা চন্দনের
সুবাসিত শীতলপাটি,
তুমি তার উপর শুয়ে বিশ্রাম করবে ।
আসন্ন সন্ধ্যায় কাঁপা কাঁপা হাতে তোমার চোখে ,
তোমার সর্বাঙ্গে ছুঁয়ে যাবে কামরাঙা রঙের বিকেল
চুপি চুপি বলবে “এসো আমাকে ভালোবাস “তোমার সব হতাশা হারিয়ে যাবে।

Share This
Categories
কবিতা

বিজ্ঞান :: রাণু সরকার।।

মানুষ পৃথিবীর এক বিরলতম প্রজাতি যে অজ্ঞতাকে দূর করতে বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারে ডুবে থাকে, অনেক চেষ্টার পর নতুন কিছু আবিষ্কার করে, তার সফলতায় রোমাঞ্চকর অনুভূতিও উপভোগ করে। আগুন জ্বালাবার কৌশল, কৃষিকাজ কিম্বা চাকার ব্যবহার মানব সভ্যতার আদি পর্বের যুগান্তকারী আবিষ্কার।

গবেষণা থেমে নেই চলতেই থাকে, কে তাকে আটকায়।আমরা বিজ্ঞানের জগতে ভেসে বেড়াই, যেমন দূরদুরন্তে পাড়ি দেই সেই বিজ্ঞানের ওপর ভর করে।

বাতাসের তরঙ্গে কথা বলা, মঙ্গলে বাড়ি খোঁজা, সমুদ্রের নিচে ট্রেনে চেপেও চলাচল করি দূরে বহুদূরে। বিজ্ঞানের সৃষ্টি বোঝা বড় দায়।

বৈজ্ঞানিকেরা গবেষণায় জয় করে বিশ্ব, তারা জয় করে কত কষ্ট করে আর আমরা সহজেই তা উপভোগ করি। বড় বড় রোগ এক্সরে মেশিনের সাহায্যে রোগ নির্ণয় হয়, ভালোমন্দ তাদের হাতে ছেড়ে আমরা নিশ্চিন্তে থাকি বসে, আমরা তাদের আবিষ্কারের ফল ভোগ করি কিন্তু মনে করি ক’বার তাদের অবদানের কথা, ব্যস্ত থাকি ভোগের আনন্দে।

বিজ্ঞানের সৃষ্টি মানবজীবনে যেমন অনেক স্বাচ্ছন্দ এনেছে তেমনি তার অপব্যবহার
মানব সভ্যতার ভবিষ্যৎ প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড় করিয়েও দিয়েছে। হিরোসিমা-নাগাসাকি আধুনিক সভ্যতার কলঙ্ক নয় কি!

Share This
Categories
কবিতা

অতীত :: রাণু সরকার।।

অতীতকে কত খুঁজি, পাইনা, কোথায় গেলো অতীতের সেই দিনগুলো?
ফাঁকা আকাশ কোথাও দেখছিনা তো,
নিশ্চল দাঁড়িয়ে অজস্র বড়ো বড়ো বাড়ি,
বিহগ-বিহগীর দল সারিবদ্ধ হয়ে উড়ে যেতে বাধা পায়।
আগে যেতে যেতে দিতো সেকি ডাক, হোতাম আত্মহারা।
কোথায় গেলো সেই পাখির ডাক, সেই দিনগুলো?
মদের বোতলে ঝর্ণাধারার পতনের শব্দ অপ্রকৃষ্ঠ লাগে,
ঝিঁঝিপোকার ডাক আর শোনা যায় না,
জলফড়িং আর প্রজাপতির শূন্যে বিচরণ
এখন আর চোখে পড়েনা।
শিশিরে ভেজা সবুজ উদ্ভিদের হাসি দেখে আনন্দে বিহ্বল হতো আমার চোখ-
আজ আর তেমনটা হয়না।
গ্রীষ্মের প্রখর তাপে গাছের ছায়া বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তো- সাথে দূষণমুক্ত বাতাস-
কোনটাই পাই না।
আর্তনাদ করি ঠান্ডা ঘরে শুয়ে,
প্রদীপের আলোতে অনুভব করি অতীতের দিনগুলো।
সামনে আলোর রশ্মি, পিছে আঁধারের লুকোচুরি খেলা,
আনন্দের সাগরে যেতাম ভেসে।
এগিয়ে গিয়ে অতীতকে গিয়েছি ভুলে!

Share This
Categories
অনুগল্প কবিতা

প্রশ্ন : রাণু সরকার।।

কেমন আছি-
এই প্রশ্নটা সহৃদয় ব্যাক্তিরা দেখা হোলেই জিজ্ঞেস করে।
এই জিজ্ঞেসের পিছে ভালো ও মন্দ দু’টিকে আড়ালে রেখে
সহৃদয় বেশিরভাগ ব্যাক্তিরা জিজ্ঞেস করে।

যাকে জিজ্ঞেস করে তার কখনো সখনো ইচ্ছে জাগে
অব্যক্ত কথা বলতে, কিন্ত ভাবনাতে পড়তে হয়।
অব্যক্ত কথা বললে যদি সে কাব্য রচনা করে বসে।

দেখা যায় বেশিরভাগ সহৃদয় ব্যাক্তি বিশাল কাব্য রচনা করে,
সেই কাব্যেতে বড় বড় অক্ষরে তার নাম লেখা।

জীবনযুদ্ধে ক্লান্ত হয়ে সর্বহারা,
আসলে এসব কাউকে বলতে নেই,
তাই ক্লান্তিকে বোবা হৃদয়ে রেখে
একটি উত্তরে ফিরতে হয়,
বেশ আছি, এই চলেছে বা ভালো আছি।

Share This
Categories
কবিতা

স্মৃতি ::: রাণু সরকার।।

সঙ্গীহীন বৃদ্ধার বিশেষ কোনই কাজ নেই-
তবে আছে প্রচুর কষ্ট ও অসহ্য যন্ত্রণা,
অসুস্থ শরীরের যন্ত্রণা ভোগ করা বৃদ্ধাই
ভালো জানে,
মনের মুকুরে থাকে নানা স্মৃতি, কার্টুনের টুকরো টুকরো করে আনাগোনা,

রাতে চোখের পাতা অধিক সময়ই খোলা থাকে
তবে বন্ধ হতে সময় লাগে,
যখন বন্ধ হয়- হয়তো তখন তন্দ্রা ঘুমে ধরে
ভোরে অজান্তেই শিশিরে ভিঁজে যায় চোখ দু’টি কান্নায় হবে হয়তো।

Share This
Categories
কবিতা

একজোড়া উপগিরি ::: রাণু সরকার।।।

তোমার ঠোঁট জোড়া যেন সদ্য
ফোটা গোলাপ,
কাঁচা বয়স,
সাজো হলে বুঝি ঋতুমতী?

একজোড়া উপগিরি উপচে পড়ছে
অমৃত সুধা!
আমার জীবন রক্ষার-
পান করে হই উজ্জীবিত,

সুন্দর ডোঙা, বেয়ে বেয়ে যাবো
অনেক দূর-
ক্লান্ত হয়ে ডুবিয়ে দেবো গহিন গাঙে!
ফুলের বৃন্ত থেকে শোষণ করবো মধু!

অর্ধবিকশিত ফুল মধুমদগন্ধময়!
সেখানে থেকে আমার অন্তর ভিজে যায়
বিন্দু বিন্দু শিশিরে!

Share This