Categories
গল্প প্রবন্ধ রিভিউ

মূল্যবান মনুষ্য জীবন ও মহাকুম্ভ মেলা-2025 (ধারাবাহিক তৃতীয় পর্যায়) : স্বামী আত্মভোলানন্দ(পরিব্রাজক)।

ওঁ নমঃ শ্রীভগবতে প্রনবায় নমঃ…!

আমাদের মূল্যবান মনুষ্য জীবনে প্রয়াগরাজে চলছে মহাকুম্ভ, অমৃত-কুম্ভমেলা। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ ভক্ত সঙ্গম তীর্থে স্নান করছেন। এই মহাকুম্ভ ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। বারোটি কুম্ভ অতিক্রম করে একটি করে মহাকুম্ভ হয়। সেই বিচারে এক-একটি মহাকুম্ভ ১৪৪ বৎসর অন্তর হয়। অর্দ্ধকুম্ভ প্রতি ছয় বৎসর অন্তর হয়। অর্দ্ধকুম্ভের জন্য তিনটি তীর্থস্থান:- হরিদ্বার, নাসিক ও উজ্জয়িণী। পূর্ণকুম্ভ শুধুমাত্র প্রয়াগরাজে। “নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান, বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান !” এক অপূর্ব দৃশ্য, বাহ্যিক দৃষ্টিতে এক তীর্থক্ষেত্র, গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতীর মিলন ক্ষেত্র, নদীর চর মেলাক্ষেত্র, কয়েকশো একর জমির উপর মেলা ক্ষেত্রে নাগরিক পরিষেবা, বিশুদ্ধ পানীয় জল, উপযুক্ত পরিমাণে সুস্বাদু ভান্ডারার ব্যবস্থাপনা, বিভিন্ন আখড়ায় ধর্মকথা, ভজন, কীর্তন, অঘোরী, নাগা, বৈষ্ণব সন্ন্যাসীদের উপস্থিতি, নাগা সাধুদের হঠযোগ ও ক্রিয়াযোগের দৃশ্য পর্যবেক্ষণ, কয়েক লক্ষ মানুষের উপস্থিতি হলেও সবকিছু সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা অনুভব হলেও অন্তর্দৃষ্টি তে এর অনুভূতি আলাদা। অনুমান, মহাকুম্ভে প্রায় ৪০-৪৫ কোটি মানুষ সঙ্গম তীর্থে স্নান করবেন।

*অনেক মানুষ এমনও আছেন যারা কোনও না কোনও কারণে মহাকুম্ভে যেতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে তারা কীভাবে মহাকুম্ভ স্নানের ফল পাবেন, সে সম্পর্কেও আমাদের শাস্ত্র, ধর্মগ্রন্থে বলা হয়েছে। এই উপায়গুলি খুবই সহজ, যে কেউ করতে পারেন। স্নান করার সময় পূর্ণ শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাস থাকা জরুরি। যেতে না পারলে, কাছের যে কোনও পবিত্র নদীতে স্নান করে পুণ্য অর্জন করা যায়। অমৃত স্নানের দিন প্রবাহিত জলে গঙ্গাজল মিশিয়ে বাড়িতে স্নান করলেও পুণ্য অর্জন সম্ভব হয়।*

হিন্দুশাস্ত্রে আমাদের ধর্মগ্রন্থে এমন একটি মন্ত্র বলা হয়েছে, স্নান করার সময় যা বললে ঘরে বসেই কুম্ভ স্নানের ফল পাওয়া যায়। তবে এর জন্য মনে পূর্ণ শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাস থাকা খুবই জরুরি। এর জন্য স্নান করার সময় প্রথমে দেবনদী গঙ্গার স্মরণ করুন এবং মগ, ঘটি দিয়ে শরীরে জল ঢালার সময় ধীরে ধীরে এই মন্ত্রটি বলুন- “ওঁ গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরী সরস্বতী। নর্মদে সিন্ধু কাবেরী জলেস্মিন সন্নিধিং কুরু।।” ঘরে কুম্ভ স্নানের পুণ্যফল লাভের জন্য কিছু বিষয় মনে রাখবেন যেমন স্নান করার সময় সাবান বা শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন না। স্নানের পর সূর্যকে অর্ঘ্য দিন এবং তুলসী গাছেও জল অর্পণ করুন। মহাকুম্ভে স্নানের পর দ্বিতীয় সবচেয়ে পুণ্যের কাজ হল দান করা। তাই আপনি যখনই এই উপায় করবেন, সেদিন নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী অভাবীদের কাপড়, খাবার ইত্যাদি দান করতে পারেন। যেদিন আপনি এই উপায় করবেন, সেদিন সাত্ত্বিক খাবার খান। কুম্ভ স্নানের ফল পেতে শরীরের সাথে মানসিক শুদ্ধিরও যত্ন নিন। এই দিন কাউকে খারাপ কথা বলবেন না। কারও প্রতি খারাপ চিন্তাও মনে আনবেন না। স্নান করার সময় দেবনদী গঙ্গার স্মরণ করুন।

কুম্ভস্নানে সরাসরি পুণ্য ও পাওয়া যায় না, মোক্ষও পাওয়া যায় না, পাওয়া যায় অমৃত। আর এই অমৃতই মানুষকে দেয় যথাক্রমে পুণ্য এবং মোক্ষ। অমৃত কি? যা মানুষকে মৃত্যু-রহিত করে, তাই-ই অমৃত। সুতরাং জ্ঞানই হল অমৃত। কারণ জ্ঞানই মানুষকে মৃত্যু-রহিত করে, অমর করে। আমাদের যদি চেতনা থাকেতো কুম্ভে গিয়ে আমরা অবশ্যই এমন কিছু জ্ঞান অর্জন করতে পারবো, যা আমাদের জীবনীশক্তি বাড়িয়ে দেবে, যা আমাদেরকে অমর করে দিলেও করে দিতে পারে। তাই, দুর্লভ মনুষ্য জন্ম লাভ করে ডুব দিন আপন অন্তস্থল, নিজের অন্তরে। নিজস্ব গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতীর সঙ্গমস্থলে, যেখানে পরম জ্ঞানের মহা অমৃতভান্ড লুকোনো আছে! সেই অমৃতের খোঁজ যিনি পেয়েছেন তিনি নিজেই এক তীর্থক্ষেত্র! কারণ, আধ্যাত্মিক মতে, গঙ্গা হলো জ্ঞানের প্রতীক ! যমুনা হলো প্রেমের প্রতীক ! সরস্বতী হলো প্রজ্ঞার প্রতীক! আমাদের সকলের জ্ঞানচক্ষু উন্মেষ হোক।

আমরা মানুষ সকলেই একদিন মারা যাব, কিন্তু কে, কোথায়, কিভাবে মারা যাব সেটা আমরা জানি না। কত মানুষ কত রকমভাবে মারা যান। গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান অনেকেই, আরও কত কারণ। অতএব দুর্ঘটনায় কুম্ভমেলায় যারা মারা গেলেন, তারা মেলায় পুণ্যের জন্য না গেলেই বেঁচে যেতেন, অথবা তারা কেন পুণ্য করতে গেলেন? এতে লাভ কী হলো? তাদের প্রাণটাই যে চলে গেল? এসব ভাবাই কিন্তু অর্থহীন, কুম্ভমেলায় গিয়ে তার পুণ্য সঞ্চযের সঙ্গে তাদের মৃত্যুর কোনো যোগ আমি দেখি না। আমার সঙ্গে অনেকের মতের মিল হতে নাও পারে। মৌনী অমাবস্যায় মহাকুম্ভে অমৃত স্নানে দুর্ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়। দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী, সাধু-সন্তরাও এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন ও পীড়িত পরিবারের প্রতি সমবেদনা ব্যক্ত করেছেন। দুঃখজনক ঘটনার জন্য পীড়িত পরিবারের প্রতি সমবেদনা ব্যক্ত করি। সকলের জন্য গুরু মহারাজের শুভ আশির্বাদ প্রার্থনা করি। সবার মঙ্গল হোক, সবার কল্যাণ হোক, সবাই শুভ দর্শন করুক, কেউ যেন দুঃখ না পায়…..
ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্ …..।
স্বামী আত্মভোলানন্দ(পরিব্রাজক)

Share This
Categories
গল্প

দাবানো : দিলীপ রায় (৯৪৩৩৪৬২৮৫৪)।

রোহিমা খাতুন ও মহিমা খাতুন, দুই বোন । রোহিমা বড় । তার বিয়ে হয়ে গেছে । মহিমা এখন পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত । গাঁয়ে মহিমার সমবয়সী মেয়েরা প্রায় সকলে বিবাহিত । ঐ ফরাসডাঙ্গা গ্রামে দীর্ঘদিন থেকে অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার রেওয়াজ । যার জন্য বেশীর ভাগ মেয়েদের অষ্টম/নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় বিয়ে । মেয়েদের বিয়ের বয়স বেশী হলে, পাত্র পাওয়া কঠিন ! গাঁয়ে কয়েক ঘর ছাড়া আর সকলেই হতদরিদ্র । ‘দিন আনে দিন খায়’ অবস্থা । পরের জমিতে চাষ-আবাদে দিন-মজুর খাটে । কিছু মানুষের রাজমিস্ত্রির যোগাড়ে-মিস্ত্রি হিসাবে দূরের শহরে কাজ করে তাদের জীবিকানির্বাহ । গাঁয়ের মানুষের আর্থিক অবস্থা তথৈবচ । হাতে গোনা কয়েকজন সবজি বিক্রি করে তাদের সংসার । এইরকম একটা টানাটানির পরিস্থিতিতে ফরাসডাঙ্গা গ্রামের মানুষের দিনাতিপাত ।
রোহিমা খাতুনের বিয়ে হয়েছে ঠিক চৌদ্দ বছরের মাথায় । এখন তার বিশ বছর বয়স । দুটো সন্তানের জননী । সন্তান হওয়া ও সন্তান পালনের জন্য রোহিমার চেহারা শুকিয়ে কাঠ । এখন তার রোগা-পটকা চেহারা । চেহারার জৌলুস বয়স্ক মহিলাদের ন্যায় । এইসব দেখেশুনে মহিমা বিয়ের ব্যাপারে বেঁকে বসেছে । তার একটাই বক্তব্য, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তবেই বিয়ে । জেদি মনোভাবের জন্য মহিমাকে নানান গঞ্ছনা সইতে হচ্ছে । বিশেষ করে পাড়াপ্রতিবেশীদের কাছ থেকে । আর আছে গাঁয়ের মোড়ল অর্থাৎ মৌলবীদের উৎপাত । অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ের ব্যাপারে গাঁয়ের মৌলবীদের শ্যেনদৃষ্টি । বিয়ের উপযুক্ত বয়স হওয়া সত্ত্বেও লিয়াকত কেন মেয়েকে বিয়ে দিচ্ছে না, এইটাই তাঁদের গাত্রদাহ ? জুম্মাবারে মসজিদে নামাজ পড়া শেষ হলে মৌলবীরা লিয়াকতকে মনে করিয়ে দিলেন, “বয়স হওয়া সত্ত্বেও মেয়েকে কেন বিয়ে দেওয়া হচ্ছে না ?” মেয়েদের কাজ, ঘর-সংসার করা । “বিয়ে না দিয়ে মেয়েকে দূরের কলেজে পড়ানো” তাঁরা ভালভাবে নিচ্ছেন না ?
গাঁয়ের মৌলবীদের নির্দেশ মানতে নারাজ মহিমা । জীবনটা তার । জীবনের ভাল-মন্দের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার একমাত্র তার নিজের । তাই মহিমার জেদ, “নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তবেই বিয়ে ।“ লিয়াকত নিজেও মনেপ্রাণে চায়, তার মেয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াক । ফরাসডাঙ্গা গ্রাম থেকে অন্তত একটি মেয়ে উচ্চ শিক্ষিত হোক এবং চাকরি করুক ।
( ২ )
সকালে ঘুম থেকে উঠে লিয়াকত জমিতে ছুটলো । তার সর্বসাকুল্যে দুই বিঘে জমি । জমিতে পাট চাষ । পাট কাটার পর আমন ধান রোয়ার পালা । গিন্নিকে বলে গেলো জমিতে দুপুরের খাবার পৌঁছে দিতে । মাথার উপর থেকে কেবল সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়েছে । এমন সময় মহিমা গামছায় খাবারের থালা বেঁধে মাঠে উপস্থিত । মহিমা খবর দিলো, তার রেজাল্ট বের হয়েছে । পাশ করেছে এবং সে এখন গ্রাজুয়েট । লিয়াকতের তখন কী আনন্দ ! মেয়ের বি.এ. পাশের খবরে খুশীতে উচ্ছ্বসিত । আবেগে বলেই ফেললো, “তুই এবার মস্ত বড় চাকরি পাবি ।“
মহিমা উল্টে বললো, চাকরি পাওয়া অতো সহজ নয় বাবা । বাস্তব বড় কঠিন ।
মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে লিয়াকত বললো, “তুই আদাজল খেয়ে পড়াশোনায় মন দে । আমার বিশ্বাস, তুই চাকরি পাবি ।“
পড়াশুনার জন্য মহিমার দরকার একটা ল্যাপটপ । মহিমা আদৌ ল্যাপটপ কিনতে পারবে কিনা, সেই ব্যাপারে পুরোটাই ধন্দে ? কিন্তু লিয়াকত মেয়েকে আশ্বস্ত করলো, পাট বিক্রি করে সেই টাকায় মহিমার ল্যাপটপ কিনে দেবে ।
ডিজিটাল যুগ । তাই মহিমা নেটের মাধ্যমে নিজেকে তৈরী করতে শুরু করলো । মহিমার বাস্তব উপলব্ধি, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় দাঁড়াতে গেলে যথোপযুক্ত প্রস্তুতি দরকার !
অন্যদিকে গাঁয়ের মৌলবীরা নিজেরা মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিলেন, লিয়াকতকে আর সময় দেওয়া যাবে না ।
জুম্মাবারে মসজিদে নামাজের পরে ফরাসডাঙ্গা গ্রামের সকল মানুষের সামনে ও অন্যান্য মৌলবীদের অনুমতিক্রমে মসজিদের মূল মৌলবী ( মসজিদের পুরোহিত অর্থাৎ ‘ইমাম’) লিয়াকতকে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়ে বললেন, “তার মেয়েকে সত্ত্বর বিয়ে দিতে । অন্যথায় গাঁয়ে সকলের সাথে বাস করা যাবে না । তাকে একঘরে থাকতে হবে ।“
খবর পেয়ে ছুটে আসে মহিমা । তার আবার ভয় ডর কম । মৌলবীদের মুখের উপর সে জানিয়ে দিলো, “আমি এখন বিয়ে করবো না । আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই । তাই আমাকে সুযোগ এওয়া হোক ।“
মসজিদের মূল মৌলবী লিয়াকতের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলেন, “তোমার মত জানাও ।“
গাঁয়ের মানুষের সামনে লিয়াকত মাথা নীচু করে আমতা আমতা করে বললো, “হ্যাঁ, মেয়ে যেটা বললো সেটাই আমার মত ।“
উপস্থিত সকলেই তখন চুপ । মূল মৌলবী তখন ষোষণা করলেন, “লিয়াকতকে গ্রামে ‘এক ঘরে’ করে রাখা হলো ।“
মহিমার কাছে সবচেয়ে তাজ্জব ব্যাপার, গাঁয়ের একটি মানুষও কোনো প্রতিবাদ করলো না । মহিমার আপশোশ, মানুষ এখনও মান্ধাতার আমলে বিরাজ করছেন । বর্তমান ডিজিটাল যুগে নারীরা কতো এগিয়ে, সেখানে তাদের গাঁয়ের মানুষ অনেক পিছিয়ে । এটা নিয়ে তাঁদের মাথাব্যাথা নেই । এইসব দেখে রাগে-দুঃখে মহিমা তার বাবাকে জোর করে সেখান থেকে বিদায় নিলো ।
তারপর …………?
(৩)
তারপর চাকরির চেষ্টা । অনেক চেষ্টার পর চাকরির পরীক্ষায় পাশ করলো এবং চাকরি পাওয়ার তালিকায় নামও উঠলো । “তালিকায় নাম উঠেছে” এই মর্মে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে মহিমাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েও দিলো । কিন্তু অবশেষে জানতে পারলো, কোনো এক প্রভাবশালী নেতার মেয়েকে চাকরিটা পাইয়ে দিতে গিয়ে ‘চাকরি পাওয়ার তালিকা’ থেকে তার নাম কাটা গেছে ।
মহিমা নাছোড়বান্দা । জেদি মেয়ে । ছাড়বার পাত্রী নয় । মনে মনে ভাবছে, তাকে দাবানো যাবে না । মহামান্য উচ্চ আদালতে বিষয়টি তুললো । সেখানেও অনেক বাধা । হাইকোর্ট থেকে কেস তুলে নেওয়ার জন্য তাকে রীতিমতো শাসানি । এমনকি রাস্তাঘাটে তাকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা । কিন্তু মহিমার সাহসের কাছে তাদের সব প্রচেষ্টাই বিফল ।
ডিপার্ট্মেন্টের চিঠিটাই একমাত্র মহিমার ভরসা । কোর্টে লড়াই করার মোক্ষম অস্ত্র !
রাত্রিবেলা শুয়ে রয়েছে । পরেরদিন হাইকোর্টে মামলার শুনানি । একদল গুণ্ডা বাড়িতে এসে হুজ্জুতি । মহিমাকে বিছানা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা । মহিমার মা রান্নাঘর থেকে সবজি কাটার বটি এনে গর্জে উঠলো, “তোরা পালাবি, নতুবা তিনটেকেই আমি একসঙ্গে কচুকাটা কাটবো ।“
মহিমার মায়ের রণংদেহি মূর্তি দেখে মুখে কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা আগন্তুকগুলো পালাতে বাধ্য হলো । যাওয়ার সময় মহিমার উদ্দেশে তাদের কী চিৎকার, আগামীকাল কোর্টে গেলে তোকেও আমরা কচুকাটা কাটবো ।
এদিকে গাঁয়ে ‘একঘরে’ থাকার জন্য চিৎকার চেচামেচি শোনা সত্ত্বেও মৌলবীদের ভয়ে কেউ তাদের বাঁচাতে এগিয়ে এলো না ।
মামলার শুনানি শেষ । মাননীয় বিচারক সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দেশ দিলেন, সত্বর মহিমাকে কাজে যোগ দেওয়ার নিয়োগপত্র দিয়ে দিতে ।
মহিমা কাজে যোগ দিলো ।
লিয়াকতের চোখে আনন্দাশ্রু ।
*********************************************

Share This
Categories
গল্প

প্রেমের বিরহ।

একটি ছোট্ট শহরে দুই যুবক ছিল, তাদের নাম ছিল রাহুল এবং প্রিয়া। তারা একই কলেজে পড়াশোনা করত। রাহুল একজন খেলাধুলাপ্রিয় ছেলে ছিলেন, যখন প্রিয়া একজন সৃজনশীল এবং সংগীতপ্রিয় মেয়ে ছিলেন।

একদিন, কলেজের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে, রাহুল এবং প্রিয়া প্রথমবারের মতো একে অপরের সাথে কথা বলেন। তাদের মধ্যে একটি বিশেষ বন্ধন গড়ে ওঠে। তারা একে অপরের সাথে কথা বলতে শুরু করেন এবং তাদের মধ্যে একটি গভীর বন্ধন গড়ে ওঠে।

রাহুল এবং প্রিয়া একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। তারা একে অপরের সাথে সময় কাটাতে শুরু করেন এবং তাদের মধ্যে একটি গভীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

কিন্তু তাদের সুখের জীবন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। রাহুলের পরিবার প্রিয়ার পরিবারের সাথে মতবিরোধ করে। তারা রাহুল এবং প্রিয়ার প্রেমের সম্পর্ককে মেনে নিতে পারেনি।

তারপর রাহুল এবং প্রিয়ার মধ্যে একটি কঠিন সময় শুরু হয়। তারা একে অপরের সাথে দেখা করতে পারতেন না। তাদের পরিবারের লোকেরা তাদের একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে বাধা দিতে থাকে।

রাহুল এবং প্রিয়া একে অপরের প্রতি তাদের ভালোবাসা এবং আস্থার কারণে এই কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে সক্ষম হন। তারা একে অপরের সাথে চিঠি লিখতেন এবং ফোনে কথা বলতেন।

কিন্তু একদিন, রাহুলের পরিবার তাকে বিয়ের জন্য বাধ্য করে। রাহুল তার পরিবারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেতে পারেনি। তিনি বিয়ে করেন, কিন্তু তার হৃদয় প্রিয়ার সাথেই ছিল।

প্রিয়া রাহুলের বিয়ের খবর শুনে হৃদয়বিদারক হয়ে পড়ে। তিনি রাহুলকে ভুলে যেতে চেষ্টা করেন, কিন্তু তার হৃদয় রাহুলের সাথেই ছিল।

রাহুল এবং প্রিয়ার বিরহের গল্প একটি কঠিন এবং হৃদয়বিদারক গল্প। এটি একটি গল্প যা আমাদের বলে যে প্রেম সবসময় সহজ নয়, এবং এটি আমাদের প্রতি প্রচণ্ড আকাঙ্ক্ষা এবং আত্মত্যাগের প্রয়োজন হতে পারে।

Share This
Categories
গল্প

রাহুল এবং প্রিয়ার প্রেমের গল্প।

একটি ছোট্ট শহরে দুই যুবক ছিল, তাদের নাম ছিল রাহুল এবং প্রিয়া। তারা একই কলেজে পড়াশোনা করত। রাহুল একজন খেলাধুলাপ্রিয় ছেলে ছিলেন, যখন প্রিয়া একজন সৃজনশীল এবং সংগীতপ্রিয় মেয়ে ছিলেন।

একদিন, কলেজের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে, রাহুল এবং প্রিয়া প্রথমবারের মতো একে অপরের সাথে কথা বলেন। তাদের মধ্যে একটি বিশেষ বন্ধন গড়ে ওঠে। তারা একে অপরের সাথে কথা বলতে শুরু করেন এবং তাদের মধ্যে একটি গভীর বন্ধন গড়ে ওঠে।

রাহুল এবং প্রিয়া একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। তারা একে অপরের সাথে সময় কাটাতে শুরু করেন এবং তাদের মধ্যে একটি গভীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

রাহুল এবং প্রিয়া তাদের প্রেমের সম্পর্কের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। কিন্তু তারা একে অপরের প্রতি তাদের ভালোবাসা এবং আস্থার কারণে সব চ্যালেঞ্জ পরাস্ত করতে সক্ষম হন।

অবশেষে, রাহুল এবং প্রিয়া বিয়ে করেন এবং একসাথে সুখী জীবন কাটাতে থাকেন।

তারপর রাহুল এবং প্রিয়ার জীবনে নতুন অধ্যায় শুরু হয়। তারা একসাথে সুখী জীবন কাটাতে থাকেন। তাদের প্রেমের গল্প সবার কাছে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে।

রাহুল এবং প্রিয়া তাদের জীবনের লক্ষ্যগুলি অর্জন করতে থাকেন। রাহুল একজন সফল ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন, যখন প্রিয়া একজন সফল সঙ্গীতশিল্পী হয়ে ওঠেন।

তাদের জীবনে সুখ এবং সমৃদ্ধি ছিল। তারা একে অপরের সাথে সুখী জীবন কাটাতে থাকেন এবং তাদের প্রেমের গল্প সবার কাছে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে।

Share This
Categories
অনুগল্প গল্প

দ্য মেলোডি অফ এভার।

আভা, একজন লাজুক সঙ্গীত শিক্ষক, পৃথিবীতে তার স্থান খুঁজে পেতে সংগ্রাম করেছেন। গানের প্রতি তার আবেগ মঞ্চের ভীতি দ্বারা ছাপিয়ে গিয়েছিল।

ইথান, একজন প্রাক্তন রকস্টার, স্পটলাইট এড়াতে ছোট-শহর উইলো ক্রিকে পিছু হটে।

এক দুর্ভাগ্যজনক সন্ধ্যায়, ইথানের গানের দোকানের বাইরে আভার গাড়ি ভেঙে পড়ে।

যেহেতু ইথান আভাকে তার গাড়ি মেরামত করতে সাহায্য করেছিল, তাদের মিউজিকের প্রতি ভাগ করা ভালবাসা একটি সংযোগের জন্ম দেয়।

ইথান, আভার প্রতিভা এবং দয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে, তাকে তার মঞ্চের ভীতি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করার প্রস্তাব দেয়।

একসাথে, তারা নিখুঁত সিঙ্কে সুরেলা করেছে, তাদের কণ্ঠ একটি জাদুকরী সুর বুনছে।

ইথানের নির্দেশনায় আভা আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে।

তাদের বন্ধন গভীর হওয়ার সাথে সাথে ইথান তার অতীতের দানবদের মুখোমুখি হয়েছিল।

আভার ভালবাসা এবং সমর্থন ইথানকে মুক্তি পেতে সাহায্য করেছিল।

তাদের প্রেমের গল্প দ্বিতীয় সুযোগের সিম্ফনি হয়ে ওঠে।

_ উপসংহার_

বহু বছর পরে, আভা এবং ইথানের সঙ্গীত বিদ্যালয়ের উন্নতি ঘটে। হাতে হাত মিলিয়ে তারা স্থানীয় অনুষ্ঠানে পারফর্ম করে।

যুগে যুগে তাদের প্রেমের গান প্রতিধ্বনিত হয়েছে।

Share This
Categories
অনুগল্প গল্প

একটি নির্বিঘ্ন এনকাউন্টার।

সামান্থা, একজন মুক্ত-প্রাণ শিল্পী, অনুপ্রেরণার জন্য প্যারিসে ভ্রমণ করেছিলেন। মন্টমার্টারের মনোমুগ্ধকর রাস্তাগুলি অন্বেষণ করে, তিনি একটি অদ্ভুত বইয়ের দোকানে হোঁচট খেয়েছিলেন।

ভিতরে, একই বইয়ের জন্য পৌঁছানোর সময় তিনি একজন সুদর্শন অপরিচিত আলেকজান্ডারের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।

ক্ষমাপ্রার্থী, তারা একটি কথোপকথন শুরু করে, শিল্প, সাহিত্য এবং জীবনের জন্য ভাগ করা আবেগ আবিষ্কার করে।

যখন তারা একসাথে প্যারিসের মধ্য দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, সামান্থা নিজেকে আলেকজান্ডারের উদারতা এবং অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ প্রকৃতির দ্বারা মুগ্ধ করেছিল।

আলেকজান্দ্রে, একজন লেখক, সামান্থার সৃজনশীলতা এবং জীবনের জন্য উদ্দীপনা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন।

সিটি অফ লাইট এর জাদুকরী পটভূমিতে তাদের ঘূর্ণিঝড় রোম্যান্স প্রকাশ পেয়েছে।

সামান্থার প্রস্থান হওয়ার সাথে সাথে আলেকজান্ডার তার ভালবাসার কথা স্বীকার করেন।

সামান্থা বুঝতে পেরেছিল যে সে তার আত্মাকে খুঁজে পেয়েছে।

একসাথে, তারা আটলান্টিকের সেতুবন্ধন করেছে, শিল্প, প্রেম এবং নির্মলতায় ভরা একটি জীবন তৈরি করেছে।

_ উপসংহার_

বহু বছর পরে, আলেকজান্ডার সামান্থাকে একই বইয়ের দোকানে নিয়ে আসেন, এক হাঁটুতে নেমে পড়েন এবং তার স্বীকারোক্তির পুনরাবৃত্তি করেন।

সামান্থা হাসল, তাদের প্রেমের গল্প মাত্র শুরু।

Share This
Categories
অনুগল্প গল্প

অসম্ভাব্য পুনর্মিলন।

এমিলি, নিউ ইয়র্ক সিটির একজন সফল ইভেন্ট পরিকল্পনাকারী, প্রেম ছেড়ে দিয়েছিলেন। তার কর্মজীবনে ফোকাস তার জীবনকে গ্রাস করেছিল যতক্ষণ না সে তার নিজের শহরে তার হাই স্কুল পুনর্মিলনের আমন্ত্রণ পায়।

পুনর্মিলনীতে পৌঁছে, এমিলি তার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রিয়তমা জ্যাককে দেখে অবাক হয়েছিল। স্নাতক শেষ করার পর তারা আলাদা হয়ে গিয়েছিল, প্রত্যেকে আলাদা আলাদা পথ অনুসরণ করেছিল।

তাদের অপ্রত্যাশিত সাক্ষাৎ পুরানো অনুভূতির জন্ম দিয়েছে। তারা তাদের অতীতের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার সাথে সাথে এমিলি বুঝতে পেরেছিল যে জ্যাকের সাথে তার সংযোগ দৃঢ় রয়েছে।

জ্যাক, এখন একক পিতা, বিবাহবিচ্ছেদের পর তাদের নিজ শহরে ফিরে এসেছিলেন। তার মেয়ে লিলি ছিল তার জীবনের আলো।

এমিলি জ্যাক এবং লিলির সাথে সপ্তাহান্তে কাটিয়েছে, তাদের সাথে তার বন্ধনকে আবার জাগিয়েছে। তিনি বাবা হিসাবে জ্যাকের দয়া, মমতা এবং ভক্তি আবিষ্কার করেছিলেন।

পুনর্মিলন শেষ হওয়ার সাথে সাথে, এমিলি একটি পছন্দের মুখোমুখি হয়েছিল: NYC-তে তার ব্যস্ত জীবনে ফিরে যান বা জ্যাকের সাথে আবার প্রেমের সুযোগ নিন।

এমিলি প্রেম বেছে নিলেন।

একসাথে, তারা তাদের জীবনকে মিশ্রিত করার চ্যালেঞ্জগুলি নেভিগেট করেছে। এমিলি লিলির কাছে একজন প্রেমময় অংশীদার এবং মা হয়ে ওঠেন।

তাদের প্রেমের গল্প উন্মোচিত হয়েছে, হাসি, দুঃসাহসিকতা এবং গভীর সংযোগে ভরা।

*এপিলগ*

কয়েক বছর পরে, এমিলি এবং জ্যাক তাদের বারান্দায় বসেছিল, হাত ধরে। লিলি, এখন বড়, তাদের দিকে কৃতজ্ঞতার সাথে হাসল।

এমিলি বুঝতে পেরেছিল যে জ্যাকের সাথে পুনরায় মিলিত হওয়া প্রেমের দ্বিতীয় সুযোগের চেয়ে বেশি – এটি তার নিয়তি।

Share This
Categories
গল্প

শাশ্বত বন্ধন: একটি প্রেমের গল্প।

তাসকানির ঘূর্ণায়মান পাহাড়ের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত উইলো ক্রিকের অদ্ভুত শহরে, একটি প্রেমের গল্প প্রকাশিত হয়েছিল যা সময় এবং পরিস্থিতিকে অতিক্রম করবে। এটি ছিল দুটি আত্মার গল্প, ভাগ্যের দ্বারা একত্রে আবদ্ধ, তাদের ভালবাসা প্রতিটি দিন পেরিয়ে আরও শক্তিশালী হচ্ছে।

*অধ্যায় 1: দ্য চান্স এনকাউন্টার*

এটি ছিল একটি খাস্তা শরতের বিকেল যখন অ্যালেসিয়া, একজন প্রতিভাবান তরুণ শিল্পী, লিওনার্দোর দিকে প্রথম চোখ রেখেছিলেন। সে শহরের কেন্দ্রীয় চত্বরে হেঁটে যাচ্ছিল, চিন্তায় হারিয়ে গিয়েছিল, যখন লিওনার্দো কাছাকাছি একটি ক্যাফেতে বসে এসপ্রেসোর কাপে চুমুক দিচ্ছিল। তাদের দৃষ্টি মিলিত হয়, এবং একটি ক্ষণস্থায়ী মুহুর্তের জন্য, সময় স্থির হয়ে যায়।

অ্যালেসিয়া, তার জ্বলন্ত চেতনা এবং সৃজনশীল আবেগের সাথে, অবিলম্বে লিওনার্দোর কমনীয় হাসি এবং ভেদ করা নীল চোখের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল। লিওনার্দো, একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী লেখক, অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক উভয়ভাবেই অ্যালেসিয়ার সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়েছিলেন। তারা আনন্দের আদান-প্রদান করার সাথে সাথে সংযোগটি স্পষ্ট ছিল।

*অধ্যায় 2: প্রস্ফুটিত আবেগ*

দিনগুলি সপ্তাহে পরিণত হয়েছিল, এবং তাদের সুযোগের এনকাউন্টারগুলি ইচ্ছাকৃত বৈঠকে পরিণত হয়েছিল। দ্রাক্ষাক্ষেত্রে হাঁটাহাঁটি, হাসিতে ভরা ডিনার এবং গভীর কথোপকথন একটি অটুট বন্ধন তৈরি করেছিল। অ্যালেসিয়ার শিল্প বিকাশ লাভ করেছিল, লিওনার্দোর কথা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল, যখন তার লেখা গভীরতা অর্জন করেছিল, তার আবেগ দ্বারা উজ্জীবিত হয়েছিল।

তাদের ভালবাসা টাস্কান সূর্যাস্তের মত প্রস্ফুটিত হয়েছিল – প্রাণবন্ত, শ্বাসরুদ্ধকর এবং অবিস্মরণীয়। প্রতিটি ভাগ করা মুহুর্তের সাথে, তাদের বিশ্বাস এবং বোঝাপড়া বেড়েছে। তারা একে অপরের সঙ্গে সান্ত্বনা পেয়েছিল, তাদের হৃদয় একের মতো স্পন্দিত হয়েছিল।

*অধ্যায় 3: জীবনের পরীক্ষা*

কিন্তু ভাগ্য, যেমনটি প্রায়শই করে, চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করে। লিওনার্দোর লেখার কর্মজীবন স্থবির হয়ে পড়ে, এবং আত্ম-সন্দেহ তৈরি হয়। অ্যালেসিয়ার শৈল্পিক প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যানের সম্মুখীন হয়, তার সংকল্প পরীক্ষা করে। এই পরীক্ষার মধ্য দিয়ে, তাদের প্রেমই নোঙ্গর হয়ে ওঠে যা তাদের ধরে রাখে।

একসাথে, তারা একে অপরকে সমর্থন এবং উত্সাহিত করে জীবনের অশান্ত জলে নেভিগেট করেছিল। তাদের সংগ্রামের নীরবতার মধ্যে, তাদের প্রেম উচ্চস্বরে কথা বলেছিল – সত্যিকারের ভক্তির শক্তির প্রমাণ।

*অধ্যায় 4: চিরন্তন প্রতিজ্ঞা*

বছরের পর বছর কেটে গেল, এবং তাদের ভালবাসা বৃদ্ধি পেতে থাকল। এক চাঁদনি সন্ধ্যায়, উইলো ক্রিকের সাইপ্রাস গাছের নীচে, লিওনার্দো অ্যালেসিয়াকে প্রস্তাব করেছিলেন। আনন্দের অশ্রু নিয়ে সে মেনে নিল।

তাদের বিবাহ, ভালবাসা এবং প্রতিশ্রুতির উদযাপন, একত্রিত বন্ধু এবং পরিবার। যখন তারা প্রতিজ্ঞা বিনিময় করত, স্বর্গ তাদের মিলনে আশীর্বাদ করে তাদের উপর হাসছিল।

*অধ্যায় 5: নিরবধি উত্তরাধিকার*

কয়েক দশক পরে, অ্যালেসিয়া এবং লিওনার্দো তাদের বারান্দায় বসেছিলেন, হাত বাঁধা, তাদের যাত্রার প্রতিফলন। তাদের প্রেম অনুপ্রাণিত করেছিল অগণিত গল্প, চিত্রকলা এবং কবিতা। জীবনের সুখ-দুঃখের মধ্যে দিয়েও তাদের বন্ধন অটুট ছিল।

সূর্য যখন দিগন্তে ডুব দিয়েছিল, একটি উষ্ণ আভা ঢালাই করে, তারা জানত যে তাদের ভালবাসা মরণশীলতা অতিক্রম করবে – একটি অনন্ত শিখা আগামী প্রজন্মের জন্য উজ্জ্বল জ্বলবে।

*এপিলগ*

উইলো ক্রিকে, তাদের প্রেমের গল্প কিংবদন্তি হয়ে ওঠে, আশা ও ভক্তির আলোকবর্তিকা। অ্যালেসিয়া এবং লিওনার্দোর বন্ধন অনুপ্রাণিত করে চলেছে, যারা তাদের গল্প শুনেছে তাদের মনে করিয়ে দেয় যে সত্যিকারের ভালবাসার কোন সীমা নেই, এমনকি সময়ের জন্যও নয়।

Share This
Categories
অনুগল্প গল্প নারী কথা

সন্তানস্নেহে : প্রবীর কুমার চৌধুরী ।

আর মাত্র ৫টি  মাস বাকি চাকুরী থেকে অবসর নিতে। কতদিন,কত মাস, বছর দেখতে, দেখতে কেটে গেল চাকুরী জীবনের । আজও মনে হয়  যেন এইতো সেদিন আসলো কর্মক্ষেত্রে। পরীক্ষা, ইন্টারভিউ, তারপর প্রশিক্ষণের চিঠি হাতে পাওয়া।
প্রথম,প্রথম তো প্রশিক্ষিণ সময়ে এতো কাজের চাপ ছিল খাওয়া, নাওয়ার সময় পেতোনা বিপাশা। ক্লাসের সঙ্গে, আবার ওয়ার্ডও ডিউটি করতে হত। সাথে নাইট।
মাঝে, মাঝে তো বিশেষ, বিশেষ অনুষ্ঠানে বাইরের ক্যাম্পগুলোতেও যেতে হতো।অবশ্য সেগুলো বছরে দুয়েকবার। খুব আনন্দ হত সে ক্যাম্পে। ভীষণ ক্লান্ত লাগতো,এতো পরিশ্রম হতো  যে ভাবতো  প্রশিক্ষণ ছেড়ে বাড়ি চলে যাবে।

এই করতে,করতে একদিন বিপাশা তিনবছরের নার্সিং প্রশিক্ষণ শেষ করে প্রথম পোস্টিং পেল বর্ধমান মেডিকেল কলেজে। তারপর  হেলথ উনিভারসিটি থেকে বিএসসি,  এমএসসি  পাশ করলো। ধাপে, ধাপে প্রমোশন পেতে, পেতে আজ সে  একটা ইনস্টিটিউশননের অধ্যাক্ষা।
আজকাল বিপাশা তার চেম্বারে বসে প্রায়ই এসব কথা ভাবে। একটার পর একটা স্মৃতির পাতা উল্টিয়ে চলে বিদায় বেলায়।
আজ একটু আগেই বিপাশা সব ক্লাস ভিজিট করে এসেছে। এখন  কিছু বিল যা  গতকাল  অব্জেকশন হয়ে ফিরে এসেছে সেগুলোর রিপ্লাই লিখছিলো। বিলক্লার্ক মনোতোষ দুবার তাগাদা দিয়েছে”  ম্যাডাম দুটোর পর কিন্তু আর অব্জেকশন বিল জমা নেবে না” ।
কিছুক্ষণের মধ্যেই অব্জেকশনের মিটিয়ে দিয়ে  বিপাশা বেল দিতেই অর্ডালি বিকাশ ঘরে ঘুকতেই বলল ” বিকাশ যাওতো কম্পিউটার অপরেটর সত্যবাবুকে জিজ্ঞাসা কর এলোটমেন্টের যে চিঠিটা করতে দিয়েছি হয়েছে কিনা? হলে সাথে করে নিয়ে আসবে “।
বিপাশা এখানে ডি, ডি, ও হলে কি হবে রোজ একটা, দুটো  ক্লাসও  নেয় অন্যান্য কাজের মধ্যেই । এটা তার মনের খোরাক, শান্তি পায় ছোট, ছোট মেয়েদের সংস্পর্শে। মনে পড়ে ফেলে আসা দিনের কথা। মনে পড়ে ক্লাসমেট দের কথা। অবশ্য কয়েক জনের সাথে এখনও যোগাযোগ আছে। বিনতা, শেফালী, তনুশ্রী, আশালতা, ভারতী বিভিন্ন হাসপাতালে পোস্টিং হলেও প্রায় রাত্রে কথা হয়। ওদের মধ্যে শেফালী সিস্টার ইনচার্জ হয়ে গেছে। তনুশ্রীও মেট্রোন হয়েছে। কিন্তু বিপাশার অমায়িক ব্যবহারে আজও যে সব বান্ধবীরা ওর নিচে আছে কেউই বিপাশাকে এড়িয়ে যেতে পারেনি।এখনও তারাও যোগাযোগ রাখে। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানায়।
বিকাশ বেরিয়ে যেতেই সিস্টার টিউটর মজুলা এসে বলল – ” শুনেছেন ম্যাডাম। ফার্স্ট ইয়ারের মানসী মণ্ডল আজ কদিন ছাতু মুড়ি খাচ্ছে। হোস্টেল থেকে মিল নিচ্ছে না। বললে মুখে কোন কথা নেই। একেবারে চুপচাপ। ওর বন্ধুরাও কারণ জানতে পারেনি “।
বিপাশা অবাক  হয়ে যায় শুনে। ভাবে মানসী মণ্ডল খুব ভালো মেয়ে। অমায়িক ব্যবহার। দেখতেই শুধু সুন্দরীই নয়, লেখাপড়ায় উন্নত,। বারোক্লাসের রেজাল্ট তো  বেশ উপরের দিকে আছে । শতকৱা আশির উপরে নং । স্বভাব খুব নম্র ও ভদ্র, কথাবার্তাও খুব মার্জিত । লেখাপড়া ছাড়াও ভালো নাচ জানে। সুন্দর কবিতা আবৃতি করে। কোন একটা নাটকের গ্রুপে নাকি অভিনয় করতো ট্রেনিং এ আসতে সে গ্রুপ ছেড়ে দিয়েছে।
এবার লাইমলাইট অনুষ্ঠানে তো ওর নাচ দেখে সবাই মোহিত হয়ে গেছে। এমন মেয়েকে স্নেহ না করে কেউ থাকতে পারে?  বিপাশাতো ভীষন পছন্দ করে মেয়েটিকে।
বিপাশা শুনে বলল না ” এটা তো ভালো ব্যাপার নয়। ওকে ডেকে পাঠাও তো ক্লাস থেকে” ।
বিকাশ গিয়ে ডেকে আনলো মানসীকে। ধীর, স্থির পায়ে ঢুকলো সে। বিপাশা
স্নেহভরে জিজ্ঞাসা করলো ” কী ব্যাপার মানসী, তুমি শুনলাম কদিন হোস্টেলের মিল নিচ্ছো না। ছাতুমুড়ি খেয়ে থাকছো। কেন গো শরীর খারাপ। নাকি হোস্টেলের রান্না তোমার ভালো লাগছে না?
মানসী নিরুত্তর,চুপ। বিপাশা আবার জিজ্ঞেসা করলো ” বলো, মিল খাচ্ছো না কেন? কি অসুবিধা তোমার? ”
এবারেও মানসী কোন  উত্তর না দিয়ে চুপ করে মাথা নিচু করে  মার্বেলের মেঝের উপর পায়ের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে আঁকিবুকি কাটতে লাগলো।
মঞ্জুলা মানসীর এই ঔদ্ধত্ব দেখে অবাক। ম্যাডাম জিজ্ঞাসা করছেন এতবার আর ও  কিনা জবাব দেওয়া প্রয়োজন মনে করছে না। ধমকে ওঠে মঞ্জুলা  বলল ” একি ম্যাডাম তোমায় এতবার জিজ্ঞাসা করছেন তুমি ওনার কথায় কোন উত্তর দিচ্ছো না। তোমার গার্জেন কল করবো ” ?
মানসীর বাড়ি হোস্টলের খুব কাছে তাই মঞ্জুলা একথা বলে মানসিকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করলো ।
বিপাশা কাছে ডেকে সস্নেহে আবার জিজ্ঞাসা করলো ‘ আমায় বলো। কোন ভয় নেই। আমি অসুবিধা হলে ব্যবস্থা নেবো “।
ম্যাডামের স্নেহের স্পর্শে এবার মানসী হার মানলো। খুব পরিষ্কার উচ্চারণে আস্তে আস্তে বলল –  ‘ ম্যাডাম গত রবিবারে মা, বাবা এসেছিলেন। সঙ্গে এনেছিলেন পাঁঠার মাংস। বাড়ির কথা, দিদির বিয়ের কথা আলোচনা হচ্ছিলো। আমার খাওয়া হলে  ভুলে করে এটো থালার সাথে পরিষ্কার করা থালাগুলো  ব্যাগে ভরে নিয়ে মা চলে যান। আমিও কথা বলতে, বলতে নিতে ভুলে যাই।  তাই থালার অভাবে আমি ভাত খেতে  পারছিনা  বলেই  ছাতুমুড়ি খাচ্ছি ম্যাডাম “।

মানসীর কথায় মঞ্জুলার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। ব্যাপারটা তার  কিছুই বোধগম্য হলো না। মানসী কি বলছে!
বিপাশা  বিস্ময়ে বলল ” মানে তোমার বাড়ির লোকেরা প্রতি সপ্তাহে এসে তোমার এটো থালা বাড়ি নিয়ে যান? আর সপ্তাহের পরিষ্কার থালা দিয়ে যান?”
মানসী অপরাধীর মতো মুখ করে বলল
”  হ্যাঁ ম্যাডাম। এটো থালা নিয়ে যান আর পরিষ্কার থালা দিয়ে যান। কিন্তু এবার নানাবিষয়ে কথা বলতে বলতে ভুল হয়ে গেছে।

বিপাশা হোহো করে হেসে ওঠে এতক্ষনে। মঞ্জুলাও এতক্ষনে ব্যাপারটা বুঝে সেও  হেসে ওঠে।
ম্যাডামের চেম্বারে সমবেত হাসির আওয়াজে কৌতূহলী হয়ে অন্যান্য সিস্টার টিউটররাও বিপাশার চেম্বারে এসে জড়ো হয়। তারপর সব শুনে  তাঁরাও হাসিতে দেন। সে যেন এক নির্মল হাসির মেলা।
হাসি থামলে বিপাশা স্টোরকিপার  শোভনবাবুকে  ডেকে স্টোর থেকে ফার্স্ট ইয়ারের মানসী মন্ডলের নামে একটা থালা, একটি গ্লাস ও বাটি  ইস্যু করতে বলে। আর  মানসীকে বলে ” শোভনবাবুর থেকে ওগুলো নিয়ে হোস্টেলের মিল খেয়ে ক্লাসে যাও।
প্রায় চারটে নাগাদ বিপাশা তখন শেষ বেলার ডাক দেখছিলো। হোস্টেলের রাঁধুনিদের একজন   মিনতি দাস দরজা ঠেলে মুখ বাড়িয়ে বলল – “একটু আসবো ম্যাডাম? বিপাশা একমনে একটা আর্জেন্ট চিঠি দেখছিল  একটু বিরক্ত হয়ে বলল
” তোমার আবার কী সমস্যা হলো মিনতি” ? ”
মিনতি বলল ” ম্যাডাম মানসী মণ্ডল তো খেয়ে দেয়ে এটো বাসন পরিষ্কার না করে কিচেনে রেখে ক্লাসে চলে গেছে। এখন কে পরিষ্কার করবে”?
বিপাশা কলম থামিয়ে বলল ‘ ওকে ডেকে পরিষ্কার করে রাখতে বলো।  যাও ”
কি মনে হতে বিপাশা নিজেই  কিচেনের দিকে এগিয়ে গেল। দেখে মানসীর বাসন মাজছে আর কাঁদছে।
বিপাশা অবাক হয়ে কারণ জানতে চাইলে  মানসী বলল – ” ম্যাডাম বাসন মাজার সাবানের খাড়ে আমার হাতময় এলার্জি বেরোয় লাল ডুমু, ডুমু। তাই আমায় মা বাবা বাসন মাজতে দেননা আর সেই কারণেই মা থালা, বাটি, গেলাস  মেজে আনেন ও পুরানোটা নিয়ে যান পরিষ্কার করে আনার জন্যে “।
বিপাশা স্নেহের ছাত্রীটিকে  মাথায় হাত বুলিয়ে সস্নেহে বললেন – ” কাল দ্বিতীয় পিরিয়ডে তুমি অবশ্যই স্কিন ডিপার্টমেন্টে গিয়ে ডক্টর ব্যানার্জীকে দেখাবে।আমি বলে রাখবো। তুমি ট্রিটমেন্ট করোনি বোধহয় তাই কষ্ট পাচ্ছ। ভয় নেই একেবারেই সেরে যাবে “।
মানসীর চোখের জল তখনও শুকাইনি। তার কথা শুনে সামনে দাঁড়িয়ে মজা দেখতে আসা কারুর  মুখে এখন একটুও হাসি ফুটলো না।

এখন মানসী তৃতীতবর্ষের ছাত্রী। বিপাশা ম্যাডাম অবসর নিয়েছেন অনেকদিন। তাঁর স্নেহের কথা ভুলতে পারে না  মানসী। এখনও ম্যাডামের সাথে ফোনে যোগাযোগ রেখেছে। হাতের এলার্জি কবেই সেরে গেছে। কোন সমস্যা হলেই ফোনে জিজ্ঞাসা করে। ম্যাডামও আপন সন্তানের মতো সবকিছু সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে দেন। মানসী বিপাশা ম্যাডামের কথায় তার নিজের মায়ের ছোঁয়া পায়।

শুধু মাঝে, মাঝে, মজা করে ম্যাডাম  জিজ্ঞাসা করেন ” এই মেয়ে নিজের এটো
থালা,বাটি, গ্লাস এখন নিজেই মাজো  তো, নাকি মাকে দিয়ে মাজাও …”?

সমাপ্ত
দূরভাষ -৮৭৭৭৭৪১৩০১

Share This
Categories
গল্প প্রবন্ধ

রথ যাত্রা : শীলা পাল।

শুনেছি সোজা রথ দেখলে নাকি উল্টোরথ দেখতে হয়।মনে বাসনা ছিল অনেকদিনের
সুযোগ এসে গেল।দশ বারো বছর আগে।আমরা ছসাতজন মিলে ঠিক করলাম এবং উল্টোরথের দু দিন আগে পুরী গিয়ে পৌঁছলাম।বাপরে কি ভীড় কি ভীড় ।লোক থৈ থৈ করছে।আমরা গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলাম ।ভুবনেশ্বর থেকে পুরী ঢুকতে মধ্য রাত হয়ে গেল।গাড়ির ভীড় মানুষের ভীড় দেখে আমার রথ দেখার ইচ্ছে টাই যেন চলে গেল।কেমন যেন বুকের ভেতর টা গুড়গুড় করছে।কি জানি বাবা দর্শন হবে তো।
পরের দিন গাড়ি চলবে সকালে।ঠিক হোলো মাসির বাড়ি গিয়ে জগন্নাথ দর্শন করে আসবো।বেশ ফাঁকায় ফাঁকায় প্রভুর দর্শন হয়ে গেল।মন তৃপ্তিতে ভরে গেল।এবার রথে একবার দর্শন হলেই পুণ্য অর্জন ভালোই হবে।আমাদের দুজন অভিভাবক ছিলেন সঙ্গে ।এক আমার বেয়াইমশাই আর তার বন্ধু ।তিনি পুরীর বাসিন্দা।এবং বেশ নাম আছে ওখানে।আমার বেয়ায়মশাইদের জমিদারি ছিল ।এবং পুরীতে বেশ বড় বাড়ি এবং পরিচিতি দেখলাম ।ঠিক হোলো মন্দিরের কাছাকাছি রথ এলে আমাদের জানাবেন আমরা বাড়ি থেকে একটু আগে বেরিয়ে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় দাঁড়িয়ে রথ যাত্রা দেখবো।
উল্টোরথের দিন প্রভু যাত্রা করেছেন ।আসতে আসতে সন্ধ্যা নেমে এসেছে রথ আর যাবে না।আমরা রাতে গিয়ে রথে প্রভু জগন্নাথ কে দেখে এলাম ।পান্ডারা বললেন ভোরে রথ মন্দির অভিমুখে যাবে।আমরা ঠিক করলাম ভোরে এসে রথের দড়ি স্পর্শ করে যাবো।আমার বেয়ান খুব হুল্লোড়বাজ।আমাকে কানে কানে বললো দিদি ওরা বলুক আমরা রথ টানবো।আমি ভয়ে বললাম না না এই ভীড়ের মধ্যে মাথা খারাপ ।
ভোরে স্নান টান করে রথ যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে এসে দাঁড়ালাম।একটি দোকানের সামনে ভালো দেখা যাবে।সবই ওই অভিজ্ঞ বন্ধু টির পরামর্শ মতো।আমরা রথ তৈরি হচ্ছে সেই সময় দড়ি ধরে দাঁড়ালাম।আস্তে আস্তে যখন চলবে একটু টেনেই চলে আসবো টানাও হবে পুণ্য ও হবে।সেইমতো সবাই গিয়ে রথের দড়ি ধরে দাঁড়ালাম।রথ চলতে শুরু করলো ওরা পেছন থেকে ডাকছে এবার চলে এসো।সুপ্রিয়া আমার হাত চেপে ধরে থাকলো।সবাই বেরিয়ে গেল রথ জোরে ছুটছে আমরা দুজনে ছুটছি।কি জোরে যাচ্ছে আমরাও সেই সঙ্গে লক্ষ লক্ষ লোকের সঙ্গে দড়ি ধরে ছুটে চলেছি।কি আনন্দ কি আনন্দ ভোরের পবিত্র আলোয় যেন হাওয়ায় ভেসে চলেছি।কোনও ভয় নেই ভাবনা নেই পিছুটান নেই প্রভুর রথের দড়ি ধরে ছুটে চলেছি।কি উদ্দেশ্যে জানি না কি মনস্কামনা ভুলে গেছি কি প্রার্থনা করবো ভুলে গেছি শুধু সামনে জগন্নাথ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন এই আনন্দে যেন সারা শরীর মন অপার্থিব পরিতৃপ্তি তে ভরে যাচ্ছে ।একবার রথ থামলো।অনেকে ভেতরে ঢুকে মোমবাতি জ্বেলে দিয়ে বলছে আরতি করো মা আমরা মনের সুখে দুজনে আরতি করলাম ।প্রভু জগন্নাথ তুমি দয়া করো।একটা বাচ্চা ছেলে নারকেল এনে বললো প্রভুকে নিবেদন করো।নারকেল ফাটিয়ে প্রভুকে পথের ধুলোমাখা নৈবেদ্য দিলাম।তুমি তো আজ পথেই আছো প্রভু তাই এই নিবেদন গ্রহণ করো মনে মনে বলি।বাচ্চা টা টাকা চাইলে যা হাতে উঠে এলো দিয়ে দিলাম ।হিসেব করি নি নিজেই যে বেহিসেবি এখন।
রথ আবার চলতে শুরু করলো সুপ্রিয়া বললো দিদি বেরিয়ে পড়ি চলো।এবার জোরে ছুটবে আর বেরোতে পারবো না।ভীড় ঠেলে বাইরে আসি দূরে মন্দিরের চূড়ো ঝকঝক করছে।
অনেক দূরে চলে এসেছি।রাস্তা ফাঁকা ।ওদের খুঁজতে খুঁজতে হাঁটছি।দেখতে পাচ্ছি না ।
এদিকে ওরা রথ যাওয়ার সময় চোখ বুজে সবাই যখন আত্মমগ্ন সেই তালে তো আমরা পালিয়েছি।প্ল্যান তো আগেই করা ছিলো। এদিকে আমাদের না পেয়ে ওখানে তো হুলুস্থুলু কান্ড।নির্ঘাত আমরা হারিয়ে গেছি ঐ ভীড়ের মধ্যে কি করবো কোথায় যাবো ভেবে অস্থির ।শেষ মেশ যখন পুলিশকে জানাতে যাবে আমার দিদি চেঁচিয়ে বললো ওই তো আসছে ওরা।আমরা ভয়ে ভয়ে এসে ওদের কাছে আসতেই আমার বেয়াইমশায়ের উৎকন্ঠিত গলা আপনার ছেলেকে আমি কি বলতাম দিদি।
ভেতরটা হাসিতে ফেটে পড়ছে।বাড়ি ফিরে আগে আমরা দুজনে প্রাণ খুলে হেসে নিলাম।তারপর ভালমানুষের মতো এসে বললাম আমরা বুঝতে পারি নি রথ জোরে ছুটছিল বেরোতে ও পারছিলাম না।উনি আমাদের মন খারাপ দেখে বললেন ঠিক আছে।বিদেশ বিভুঁয়ে চিন্তা হয়।আপনি ভীতু মানুষ ।
জয় জগন্নাথ ক্ষমা করে দিও।
মনে মনে বলতে থাকলাম
জগন্নাথ স্বামী নয়নপথগামী ভবতু মে

Share This