Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

মাতৃভাষা ও সত্যিকারের মা ::: শুভঙ্কর দাস।।।

“আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে?
কথায় না বড় হয়ে, কাজে বড় হবে,”

আমি জানি এই দুটি চরণ পড়া মাত্র পাঠক পরের দুটি চরণ অনায়াস আনন্দে উচ্চারণ করে ফেলবেন।
এবং কবির নামও হয়তো বলতে পারবেন।
অবশ্য এই কবির পুত্রের নাম জীবনানন্দ দাশ,এক ডাকে সকলেই জানেন।কবিতা পড়েন।এখনও পর্যন্ত বাংলা কবিতার জগতে তাঁর প্রভাব রবীন্দ্রনাথের পরেই…
কীভাবে লিখতেন কবি জীবনানন্দের মা,
সংসারের কাজকর্মে ফাঁকে ফাঁকে অবলীলায় কবিতা রচনা করতে পারতেন।হয়তো খুব ব্যস্ত হয়ে কিছু করছেন,’ব্রহ্মবাদী’ পত্রিকার সম্পাদক আচার্য মনোমোহন চক্রবর্তী এসে বললেন, এখুনি কবিতা চাই,প্রেসে পাঠাতে হবে,লোক দাঁড়িয়ে আছে।
শুনে কবি-মাতা খাতা কলম নিয়ে রান্নাঘরে ঢুকে একটা হাতে খুন্তি, অপর হাতে কলম নাড়ছেন,যেমন চিঠি লিখছেন।বড়ো একটা ঠেকছে না কোথাও! এবং সম্পাদক মহাশয় একটু পরে হাতে পেতেন একটি মৌলিক কবিতা।
এবং এই দৃশ্য রান্নাশালের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে দেখতেন বালক জীবনানন্দ, খুবই অবাক হতেন!
এবং জেনে রাখুন,মায়ের কবিত্ব ও বই পড়ার আগ্রহই জীবনানন্দকে কবিতার প্রতি,বইপাঠের প্রতি আকৃষ্ট করেছিল।মা তাঁকে বই পড়তে ও কবিতা লিখতে প্রাণিত করতেন।
এবং পড়াতেন মহাপুরুষের জীবনী,যাতে জীবনানন্দ তাঁদের জীবনের ওপর কবিতা রচনা করতে পারে,আসল অর্থ ছিল,সেই জীবনের কথা জেনে নিজের জীবনের পথ তৈরি করা।
এইভাবে ‘বঙ্গবাণী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় জীবনানন্দের কবিতা,দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশকে নিয়ে।
নাম ছিল,’দেশবন্ধু প্রয়াণে’।
কবিতাটি কেমন হয়েছে জানার জন্য মায়ের কাছে নিয়ে যায় পত্রিকাটি।
তাতে মায়ের মতামত হল,চিত্তরঞ্জন সম্বন্ধে লিখেছো, ভালোই করেছ,কিন্তু রামমোহন ওপর লিখতে বলেছি তোমাকে,মহর্ষির ওপরেও”
এইরকমভাবে পুত্র জীবনানন্দকে মাতা একটা মহাপুরুষের তালিকা করে দিয়েছিলেন।
কারণ তাতেই হবে—

” মুখে হাসি,বুকে বল,তেজে ভরা মন
মানুষ হইতে হবে,এই তার পণ”

সেই পণে ও মায়ের ঐকান্তিক আলোর পথে গিয়ে আমরা পেলাম বাংলা কবিতার এক মহা-অনুভবী কবিকে,যাঁকে পাঠ ছাড়া আধুনিক কবিতার গতি ও গর্ব নেই!
মায়ের নাম নিশ্চিত জানেন?
এটি কমেন্টে লিখুন,কারণ এই ধরণের মায়ের বড় অভাব বর্তমান সময়ে,বই পড়া তো দূরের কথা,মহাপুরুষের জীবনীপাঠ তো পরের কথা,সন্তানকে মোবাইল আসক্তি থেকে সরাতে গিয়ে নিজেই একটি অ্যাপে পরিণত হয়ে যাচ্ছেন!এখনকার মিনি মাতাগণ
নিজেই বই পড়েন না!মহাপুরুষের জীবনী পড়েন না! ফলে যেমন বৃক্ষ, তেমনই ফল…
তাই এই মাতা-কবির নাম কমেন্ট-ঘরে লিখুন এবং অন্তর সঠিক পথে চালিত হোক।কারণ

“আমাদের দেশে হবে সেই মা কবে?
মোবাইল ছাড়িয়ে বই ধরিয়ে দেবে
মুখে বাংলা, বুকে বাংলা, বই-ভরা মন
পাঠক হতেই হবে এই সত্য আমরণ”

একান্ত ক্ষমাপ্রার্থী শুভঙ্কর দাস।

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *