Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

দ্য নাইটেঙ্গেল অফ ইন্ডিয়া ‘সরোজিনী নায়ডু’।

ভূমিকা—-

“মহাত্মা গান্ধীর “মিকি মাউস” সরোজিনি নাইডুর মৃত্যুদিবসে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।”

সরোজিনী নায়ডু (১৩ ফেব্রুয়ারি ১৮৭৯ – ২ মার্চ ১৯৪৯) ছিলেন স্বনামধন্য ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী, বিশিষ্ট বাগ্মী ও ইন্দো-অ্যাংলিয়ান কবি। তিনি ছিলেন ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন সক্রিয় যোদ্ধা। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম করতে গিয়ে সরোজিনী নাইডু অনেকবার কারাবরণ করেছেন, কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে পিছু হটেননি। মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে তিনি যোগ দেন ডান্ডি পদযাত্রায়। গান্ধী, আব্বাস তয়েব ও কস্তুরবা গান্ধী গ্রেফতার হলে তিনি ধারাসন সত্যাগ্রহে নেতৃত্ব দেন। তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাগ্মী এবং ইংরেজি ভাষার যশস্বী কবি।  তিনি ভারতীয় কোকিল (দ্য নাইটেঙ্গেল অফ ইন্ডিয়া) নামে পরিচিত। সরোজিনী নায়ডু ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম (ভারতীয়) মহিলা সভাপতি নির্বাচিত হন। স্বাধীন ভারতে তিনি উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের রাজ্যপালও হয়েছিলেন।

 

 

জন্ম ও পরিবার—

 

১৮৭৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি সরোজিনী চট্রোপাধ্যায় ভারতের হায়দরাবাদ শহরের একটি হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি ছিল অধুনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার কনকসার গ্রামে। তিনি ছিলেন বিজ্ঞানী, দার্শনিক ও শিক্ষাবিদ অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায় ও কবি বরদাসুন্দরী দেবীর জ্যেষ্ঠা কন্যা।  অঘোরনাথ ছিলেন নিজাম কলেজের প্রতিষ্ঠাতা এবং তিনি ও তার বন্ধু মোল্লা আব্দুল কায়ুম ছিলেন হায়দরাবাদের ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম সদস্য। পরবর্তীকালে রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশ নেবার জন্য তাকে কলেজের অধ্যক্ষের পদ থেকে পদচ্যুত করে হয়। সরোজিনীর ভাই বীরেন চট্টোপাধ্যায় ছিলেন এক বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কমিউনিস্ট বিপ্লবী।

 

 

শিক্ষা—-

 

সরোজিনী নাইডু ছোটবেলা থেকেই খুব বুদ্ধিমান ছিলেন। ১২ বছর বয়সে, তিনি ১২ তম পরীক্ষায় ভাল নম্বর নিয়ে পাস করেছিলেন। তিনি ১৩ বছর বয়সে ‘লেডি অফ দ্য লেক’ নামে একটি কবিতা লিখেছিলেন। যা তাকে বিখ্যাত করেছে। স্কুলে বসে অঙ্কের ১৩০০ লাইনে এই কবিতাটি লিখেছিলেন। এতে হায়দ্রাবাদের নিজাম এত খুশি হয়েছিলেন যে তাকে বিদেশে পড়ার জন্য বৃত্তি দেওয়া হয়েছিল। তিনি প্রথমে লন্ডনের কিংস কলেজে এবং পরে কেমব্রিজের গ্রিটন কলেজে পড়াশোনা করতে যান। বারো বছর বয়সে সরোজিনী মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় সমগ্র মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৮৯১ সাল থেকে ১৮৯৪ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা বন্ধ রেখে তিনি নানা বিষয় অধ্যয়ন করেন। ১৮৯৫ সালে ইংল্যান্ডে প্রথমে লন্ডনের কিংস কলেজ ও পরে কেমব্রিজের গার্টন কলেজে পড়াশোনা করেন। সরোজিনী উর্দু, তেলুগু, ফার্সি ও বাংলা ভাষা শিখেছিলেন। তার প্রিয় কবি ছিলেন পি. বি. শেলি।

 

স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ—–

 

সরোজিনী নাইডু গান্ধীজির ব্যক্তিত্ব দেখে খুব মুগ্ধ হয়েছিলেন এবং গান্ধীজির চিন্তাধারায় প্রভাবিত হয়ে তিনি নিজেকে দেশের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি সত্যাগ্রহ ও সংগঠনে একজন দক্ষ সেনাপতি হিসেবেও তাঁর প্রতিভা দেখিয়েছিলেন। তিনি জাতীয় আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন এবং জেলে যান।

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরোজিনী যোগ দেন স্বাধীনতা আন্দোলনে। ১৯০৩ সাল থেকে ১৯১৭ সালের মধ্যবর্তী সময়ে তিনি গোপালকৃষ্ণ গোখলে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, অ্যানি বেসান্ত, সি. পি. রামস্বামী আইয়ার, মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহরু প্রমুখের সংস্পর্শে আসেন।
১৯১৫ সাল থেকে ১৯১৮ সালের মধ্যবর্তী সময়ে তিনি ভারতের নানা স্থানে যুবকল্যাণ, শ্রমের গৌরব, নারীমুক্তি ও জাতীয়তাবাদ বিষয়ে বক্তৃতাদান করেন। ১৯১৬ সালে জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে সাক্ষাতের পর তিনি চম্পারণে নীলচাষীদের হয়ে আন্দোলন শুরু করেন। ১৯২৫ সালে তিনি কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনিই ছিলেন কংগ্রেসের প্রথম মহিলা সভাপতি।

 

১৯১৯ সালের মার্চ মাসে ব্রিটিশ সরকার রাওলাট আইন জারি করে সকল প্রকার রাজদ্রোহমূলক রচনা নিষিদ্ধ করে। এর প্রতিবাদে গান্ধীজি অসহযোগ আন্দোলন সংগঠিত করলে সরোজিনী সর্বপ্রথমেই আন্দোলনে যোগ দেন। পরে ব্রিটিশ সরকার এই আন্দোলনের উপর ব্যাপক দমননীতি প্রয়োগ করে।
১৯১৯ সালের জুলাই মাসে সরোজিনী ইংল্যান্ডে হোমরুল লিগের দূত মনোনীত হন। ১৯২০ সালের জুলাই মাসের তিনি ভারতে প্রত্যাবর্তন করার পর ১ অগস্ট গান্ধীজি অসহযোগ আন্দোলন ঘোষণা করেন। ১৯২৪ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি পূর্ব আফ্রিকান ভারতীয় কংগ্রেসের দুই জাতীয় কংগ্রেস প্রতিনিধির অন্যতম রূপে নির্বাচিত হন।
১৯২৮ সালের অক্টোবর মাসে তিনি নিউ ইয়র্ক সফর করেন। এই সময় যুক্তরাষ্ট্রে আফ্রিকান আমেরিকান ও আমেরিইন্ডিয়ানদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের নিন্দা করেন তিনি। ভারতে প্রত্যাবর্তনের পর তিনি কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।

 

১৯৩০ সালের ২৬ জানুয়ারি জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ৫ মে গান্ধীজিকে গ্রেফতার করা হয়। এর অনতিকাল পরেই গ্রেফতার হন সরোজিনী। এই সময় কয়েক মাস তিনি কারারুদ্ধ থাকেন। ১৯৩১ সালের ৩১ জানুয়ারি, গান্ধীজির সঙ্গে সঙ্গে তাকেও মুক্তি দেওয়া হয়। সেই বছরেই পরে আবার তাদের গ্রেফতার করা হয়। স্বাস্থ্যহানির কারণে অল্পদিনের মধ্যেই ছাড়া পেয়ে যান সরোজিনী। গান্ধীজি মুক্তি পান ১৯৩৩ সালে। ১৯৩১ সালে গান্ধীজি ও পণ্ডিত মালব্যের সঙ্গে তিনিও গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেন। ১৯৪২ সালের ২ অক্টোবর ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশ নেবার জন্য তাকে পুনরায় গ্রেফতার করা হয়েছিল। এই সময় গান্ধীজির সঙ্গে ২১ মাস কারারুদ্ধ ছিলেন সরোজিনী।

মহাত্মা গান্ধী যখন স্বাধীনতা নিয়ে দেশে যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল তা শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন, সেই সময় সরোজিনী নাইডু তাকে ‘শান্তি দূত’ বলে অভিহিত করেছিলেন এবং সহিংসতা বন্ধ করার আবেদন করেছিলেন।

 

 

মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে সরোজিনী নায়ডুর সম্পর্ক এতটাই অন্তরঙ্গ ছিল গান্ধীজি তাঁকে ‘ভারত নাইটিঙ্গেল’ উপাধি দেন। কিন্তু চিঠিতে তিনি কখনো কখনো ‘প্রিয় বুলবুল’, ‘প্রিয় মীরাবাই’ এমনকি ‘আম্মাজান’, ‘মা’ও মজা করে লিখতেন। সরোজিনীও তাকে ‘তাঁতি’, ‘লিটল ম্যান’ এবং কখনো কখনো ‘মিকি মাউস’ বলে সম্বোধন করতেন।

 

ব্যক্তিগত জীবন—-

 

১৭ বছর বয়সে সরোজিনী ড. মুথ্যালা গোবিন্দরাজুলু নায়ডুর প্রেমে পড়েন। ১৯ বছর বয়সে পড়াশোনা সমাপ্ত করে তার সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন তিনি। উল্লেখ্য, সেই যুগে অসবর্ণ বিবাহ সমাজে নিষিদ্ধ ছিল। সরোজিনী ব্রাহ্মণ হলেও গোবিন্দরাজুলু ছিলেন অব্রাহ্মণ। ১৮৯৮ সালে মাদ্রাজে ১৮৭২ সালের আইন অনুযায়ী তাদের বিবাহ হয়। তাদের চারটি সন্তান হয়েছিল: জয়সূর্য, পদ্মজা, রণধীর ও লীলামণি। কন্যা পদ্মজা পরবর্তীকালে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হন।

 

কর্ম জীবন—-

 

১৯৪৭ সালের মার্চ মাসে এশীয় সম্পর্ক সম্মেলনের স্টিয়ারিং কমিটির পৌরোহিত্য করেন সরোজিনী নায়ডু।
১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট স্বাধীনতার পর সরোজিনী নায়ডু যুক্তপ্রদেশের (বর্তমানে উত্তরপ্রদেশ) রাজ্যপাল নিযুক্ত হন।

 

 

তাঁর রচনাবলি—-

 

লেখাপড়ার পাশাপাশি কবিতাও লিখতেন। গোল্ডেন থ্রেশহোল্ড ছিল তাঁর প্রথম কবিতা সংকলন। তাঁর দ্বিতীয় ও তৃতীয় কাব্য সংকলন ‘সময়ের পাখি’ এবং ‘ব্রোকেন উইং’ তাঁকে বিখ্যাত করে তোলে। সরোজিনী চট্টোপাধ্যায়কে পৃথিবীর ইতিহাসের সেরা কবিদের মধ্যে অন্যতম মনে করা হয়। বিশ্বনন্দিত অনেক মার্কিন ও ব্রিটিশ সাহিত্যিক তার সাহিত্যের অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছেন। পোয়েট্রি সুপ নামের একটি ওয়েবসাইট তাকে পৃথিবীর ইতিহাসের সেরা ১০০ জন কবির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছে, যেখানে তার অবস্থান ছিল ১৯তম। সরোজিনী উর্দু, তেলুগু, ফারসি ও বাংলা ভাষা শিখেছিলেন। সরোজিনী নাইডু ইংরেজি ভাষায় কবিতাও লিখতেন।

উল্লেখযোগ্য  রচনাবলি—

The Golden Threshold (১৯০৫);  The Bird of Time: Songs of Life, Death & the Spring (১৯১২); The Broken Wing: Songs of Love, Death and the Spring (১৯১৭);
The Sceptred Flute: Songs of India (১৯৪৩); The Feather of the Dawn (১৯৬১);  The Gift of India;

 

মৃত্যু—-

 

স্বনামধন্য ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের সক্রিয় যোদ্ধা, বিশিষ্ট বাগ্মী ও ইন্দো-অ্যাংলিয়ান কবি বিক্রমপুর কন্যা ভারতীয় কোকিলা সরোজিনি নাইডু ১৯৪৯ সালের আজকের দিনে উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল থাকা অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।  তার মৃত্যুর পর যুগ যুগ ধরে এই অতি অসামান্য বিদুষী নারী সমগ্র মহিলাজাতির পথপ্রদর্শিকা হিসেবে সম্মানিত হযে আসছেন।

 

।।ছবি ও তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা রিভিউ

প্রাণে প্রাণে যে প্রদীপ জ্বলে : জয়তী ধর পাল।

একই বৃন্তে যেমন দুটি কুসুম ফুটে ওঠে , তেমনি একটি মহীরূহকে আশ্রয় করে রচিত হয়েছে দুটি সাহিত্যকুসুম। মহীরূহটি অবিভক্ত মেদিনীপুরের জনপ্রিয় গান্ধিবাদী নেতা শ্রী কুমারচন্দ্র জানা , আর সাহিত্যকুসুম দুটির একটি উপন্যাস ‘মাটিমাখা মহাপ্রাণ’ , অপরটি নাটক ‘সুতাহাটার গান্ধি’।
শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন , নাটকে লোকশিক্ষে হয়। এই লোকশিক্ষে যথার্থ না হলে , স্বাধীন দেশেও আমরা পরাধীন থাকব। আর তাই স্বাধীনতার স্বপ্ন আমাদের যারা দেখিয়েছিলেন তাদের অন্যতম পুরোধা দেশমিত্র কুমারচন্দ্র জানাকে আশ্রয় করে কবি শুভ্রাশ্রী মাইতি লিখেছেন নাটক ‘সুতাহাটার গান্ধি’ , যে নাটক আমাদের স্বাধীনতার যথার্থ চালচিত্রের সাথে পরিচিত করায় আলোর কলমে।
কুমারচন্দ্র জানার ব্যক্তিগত জীবন আর স্বাধীনতার সংগ্রামের বিস্তৃত প্রেক্ষাপটকে নাট্যকার খুব অল্প পরিসরে এই পাঁচ অঙ্কের নাটকে জীবন্ত করে তুলেছেন এক অসাধারণ দক্ষতায়। সময়ের প্রতীক হিসাবে গায়ে সাদা কাপড় জড়ানো চরিত্রগুলির ভাষ্য কোরিওগ্রাফির মধ্যে দিয়ে প্রবাহমান সময়কে বহতা নদীর মতোই উপস্থাপন করেছেন । কোরিওগ্রাফি কোথাও কোথাও মঞ্চে জন্ম দেয় কবিতার…
(অন্ধকার মঞ্চ জুড়ে জোনাকির ছোট ছোট বৃত্ত আলোর নকশা তৈরি করবে তখন। সকলে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকবে সেই দিকে …। আবহ – ও জোনাকি কি সুখে ওই ডানা দুটি মেলেছ…)।
জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের মঞ্চ উপস্থাপনা দর্শক মনে জন্ম দেয় শিহরনের…
(ঝুঁকে থাকার সময়রূপী সামনের জন সামনের প্লেটে রাখা লাল আবির ছিটিয়ে দেবে চারপাশে। গুলির শব্দ । পেছনের পর্দায় আলোর ঝলকানি, লাল আলো। চিৎকার। আর্তনাদ। সময়রূপী পাঁচজন লাল কাপড়ের বাঁধনে নিজেদের জড়াতে জড়াতে প্রকাশ করবে যন্ত্রণার অভিব্যক্তি ও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে ধীরে ধীরে।)
ছোট্ট কুমার বিদ্যাসাগরের মতো মহাপুরুষদের গল্প হলেও সত্যি কথা পড়তে পড়তে বড় হয়ে ওঠে , অন্যকে শ্রদ্ধা তার ভেতরে এক আলোর জন্ম দেয় , আর সেই আলো হাজার কাজের ফাঁকে ফাঁকে পড়ার সময় বের করার অঙ্গীকারবদ্ধ করে তাঁকে। কুমার তার জীবনের মূলমন্ত্রে ‘ ঠকিলেও , ঠকাইব না ‘ ( যা বইটির প্রচ্ছদে ধ্রুবপদের মতো ব্যবহৃত হয়েছে ) দীক্ষিত করেন তার ছাত্রদের , যারা এই দেশের ভবিষ্যৎ। নাটকে পাই ,
কুমার : তা পারে। তবে একটা কথা মনে রেখো সবসময়- ‘ঠকিলেও ঠকাইব না’। এই দরিদ্র মাস্টারের আর কিছু না হোক , এই কথাটিকে জীবনের ধ্রুবতারা করে তোলো তোমরা।
সকলে : ঠকিলেও ঠকাইব না। ঠকিলেও ঠকাইব না।
তিনি প্রকৃতই একজন আদর্শ শিক্ষক হিসাবে মানুষ গড়ার কারিগরের ভূমিকা নেন তাই বালিগঞ্জ জগবন্ধু ইনস্টিটিউশন এর সভাপতি আশুতোষ চৌধুরী। বলেন,
আশুতোষ : এ একেবারে খাঁটি কথা মুরলীবাবু । কুমারবাবু শুধু পুঁথিপড়া বিদ্যাদিগ্গজ ছাত্র নয় , দেশের জন্য খাঁটি সোনার মানুষ গড়ার কাজে হাত লাগিয়েছেন জোরকদমে। উনি আমাদের স্কুলের সম্পদ।
কুমার অনুভব করেন ‘দেশ মানে শুধু বাহিরমহল নয় , দেশ মানে অন্দরমহলও , আমাদের অন্তরমহলও’। এই উপলব্ধি শ্রদ্ধায় আমাদের মাথা নত করে …
কুমার : মানে শুধু আমাদের , মানে পুরুষজাতির উন্নতি হলেই হবে না , আমাদের অন্তর ছুঁয়ে আছেন যাঁরা , অন্তর তৈরি করছেন যাঁরা , তাঁদেরও তুলে আনতে হবে ঘরের অন্ধকার কোন থেকে। সামিল করতে হবে এই দেশ গঠনের মহাযজ্ঞে।
তাই স্ত্রী চারুশিলার সাথে বিবাহবন্ধনকে নাট্যকার চিহ্নিত করেছেন ‘শ্রী যোগ হল শক্তির সাথে’ বলে।
হিন্দু মুসলমানের পারস্পরিক শ্রদ্ধা ভালবাসা ফিরে ফিরে এসেছে নাটকটিতে। মুহুরি ভূদেব চক্কোত্তির হুমকির উত্তরে কুমার দৃঢ় স্বরে বলেন,
কুমার : আমাকে ভাঙবেন আপনি কি করে ? আমাকে ভাঙতে গেলে যে এই আশ্রম ভাঙতে হবে। এই দেশ ভাঙতে হবে , ভাঙতে হবে হিন্দু-মুসলমানের ভাই-ভাই সম্পর্ক। তা কি আর আমি হতে দেবো কখনো? তোমরা কি দেবে বলো?
কুমার যখন এ কথা বলেন তখন কুমারের মধ্যে যেন অখন্ড গোটা ভারতকে দেখতে পাই তাই। কুমারনারায়ন তথা কুমারচন্দ্র হয়ে ওঠেন মহম্মদ কুমারচন্দ্র ,
মৌলভী : ( ছুটে এসে বুকে জড়িয়ে ধরেন কুমারকে ) আপনি সাধারণ মানুষ নন কুমারবাবু , আজ আপনি চোখ খুলে দিলেন সবার। আপনাকে প্রণাম। আজ থেকে আপনার আরেক নাম হল মহম্মদ কুমারচন্দ্র ।
সকলে : জয় কুমারচন্দ্রের জয় , মহম্মদ কুমারচন্দ্রের জয়।
নাট্যকার প্রতিটি চরিত্রের মুখে যথাযথ সংলাপ প্রয়োগ করে তাদের করে তুলেছেন জীবন্ত রক্ত মাংসের মানুষ। তারই কয়েকটি নিদর্শন ,
১. মিস্টার স্মিথ : শাট্ আপ , রাস্কেল ! কে চায় টুমাদের সাহায্য ? ব্ল্যাক নিগার কোথাকার । টুমি যে হাসছিলে হামার ড্রেসের কাদা ডেকিয়া… সেটা কি অপমান নয় যথেষ্ট ?
২. গোমস্তা : খালি বিগ্ টক , বিগ বিগ টক্ , তাই না ! বুঝবে একদিন মজা… একটা ছোট জাতকে মাথায় তুলে নাচা…
৩. ফতেমা : (ছুটে এসে কুমারের পায়ে পড়ে কাঁদতে থাকে) দাঠাউর মুই কুন অন্যায় কাম করি নাই গো। প্যাটের জ্বালা নিভাতে , মেয়া লাতির মুখে দুটা অন্ন তুলি দিবার জন্য কাম করিতে চাইছিলি শুধু । এ গেরামে মোর খসমের ভিটাবাড়ি। মুই কখনো এর অমঙ্গল চাইতি পারি?
৪. কুমার : জানি না সূর্য । বুকের মধ্যে কে যেন ডাক দিয়ে যায় বারবার । গাঁয়ের ফকিরবাবার সুর ভেসে আসে কানে । গান্ধিজির গলার স্বর গমগম করে ওঠে, সুরেনবাবুর বক্তৃতায় শিরা-উপশিরায় আগুন ছোটে যেন… আমার বুকের মধ্যে উথাল পাথাল হয় খুব। কান্না দলা পাকিয়ে উঠে গলায়। আমার মা আমার দেশ – সব যেন একাকার হয়ে যায় আমার কাছে।
বেশিরভাগ দৃশ্য শেষ হচ্ছে গানের মধ্যে দিয়ে যা ঘটনা রেশকে দর্শকমনে অনুরণিত করে।
পরানচক স্কুলের মাস্টারমশাই মানসবাবু বলেন,
মানসবাবু : কুমার , তোমার মধ্যে আমি খাঁটি সোনা দেখেছি। আমি চাই তোমার মত ছেলেরা নিজেকে প্রস্তুত করে তুলুক । নিজেকে চিনুক। দেবদূত হয়ে ফিরে আসুক এ পোড়া দেশ গাঁয়ে। মানুষের সামনে আয়না ধরুক , নিজেকে চেনার নিজেকে জানার… আঁধার কেটে যাক সব নতুন দিনের আলোয় …ওই শোনো ফকির বাবা গান ধরেছেন কেমন…
নাটকটিও যেন দর্শকদের সামনে তুলে ধরে এক আয়না, যার মধ্যে প্রতিবিম্বিত হয় আমাদের আশা আকাঙ্ক্ষা স্বপ্ন।
নাটকের শেষে সময়ের হাত ধরে তৈরি হয়, এক অপূর্ব কবিতা …অপূর্ব আলো… অপূর্ব বন্দনা …অনন্ত …অফুরন্ত…
(সকলে একটি সুন্দর কোরিওগ্রাফিতে মাটিতে হাঁটু ঠেকিয়ে বসবে। প্রদীপজ্বলা হাত বাড়িয়ে থাকবে সামনে… নতুন দিনের আলো একটু একটু করে ছড়িয়ে পড়বে নাটকের মঞ্চেও। )
আবহে বাজবে –
ভেঙেছ দুয়ার এসেছ জ্যোতির্ময়
তোমারি হউক জয়…

‘মাটিমাখা মহাপ্রাণ’ এক আলোমাখা উপন্যাস , এ আলো ভোরের সূর্যোদয়ের মতোই আশাবাদী , দুপুরের তেজদীপ্ত গগনের মতোই অগ্নিময় , সন্ধ্যের গোধূলির মতোই স্নিগ্ধ শান্তি বর্ষণকারী।
একজন মহামানবের জীবনের ছবি আঁকতে গিয়ে লেখক শুভঙ্কর দাস যে চালচিত্র রচনা করেছেন …যে স্বদেশী আন্দোলনের প্রেক্ষাপট এঁকেছেন… তাতে সমকালীন দেশ কালকে নিপুন বুনোটে সাজিয়েছেন। লেখনীর অমোঘ আকর্ষণে সময়দেবীর সুতোতে টান পড়েছে , সেই টানে যেমন জীবন্ত হয়ে উঠেছেন বিদ্যাসাগর , গান্ধীজি , বীরেন্দ্র শাসমল , আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র , মদনলাল ধিংড়ার মতো অসামান্য চরিত্ররা , তেমনি বিধবা হররমা পতি বা রমানাথের মত আড়ালে থেকে যাওয়া নিঃস্বার্থ মানুষেরা তাদের আপন মহিমায় উজ্জ্বল হয়ে আছেন। আর আছেন রবীন্দ্রনাথ , প্রতিটি অধ্যায়ের পথ চলার শুরুতে তাঁর আলোকোজ্জ্বল উদ্ধৃতি নিয়ে পথপ্রদর্শক হয়ে। তার সাথে যুক্ত হয়েছে লেখকের মনের মাধুরী মিশিয়ে কিছু কাল্পনিক চরিত্র , যারা উপন্যাসটিকে মাটির রূপকথা করে তুলেছে এক আশ্চর্য রূপটানে। যেমন আব্দুল ফকিরের চরিত্রটি বারবার ফিরে ফিরে এসেছে , যে গানে গানে প্রকৃত মানুষ হবার শিক্ষা দেয় , যে বলে ,
‘মনকে বলো , জগতে সবই সুন্দর , কালো এলে আলো করব , আর কান্না এলে পান্না দেখব , এইভাবেতে বাঁচতে চাই…।’
রবীন্দ্রনাথের কথায় , ‘ ঐতিহাসিক উপন্যাসের মূলরস হবে মানবরস ‘। এই উপন্যাসের প্রতিটি অক্ষরে সেই মানবরসের ধারা নদীর মতই বহমান। দেশের জন্য আত্মোৎসর্গের দৃঢ় পণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সন্তানস্নেহ , ভ্রাতৃপ্রেম ,সহধর্মিণীর আত্মত্যাগ , বন্ধুবাৎসল্য , গুরুজনকে শ্রদ্ধার দৃঢ় ভিত্তি প্রস্তরের উপর। কুমারের বাবা গরিব চাষী ঠাকুরদাস একটা ছেঁড়া বইয়ের পাতা নিয়ে ঘোরেন বইটি সংগ্রহের চেষ্টায় , যার জন্য তিনি নিজের সারা বছরের অন্নসংস্থানে চাল বিলিয়ে দিতেও প্রস্তুত। এই উত্তরাধিকারই বহন করেন কুমার। শিশু কুমার ঝড় জলের সারারাত কেঁদে কেঁদে খোঁজে বর্ণপরিচয় , উঠোনকে স্লেট করে লিখে চলে অ আ। কুমারের মা লক্ষ্মীদেবী পানাভর্তি পুকুর পরিষ্কার করে , পুকুরপাড়ে ডাঁই হয়ে ওঠা কচুরিপানা দেখিয়ে বলেন ,
‘এই হচ্ছে দুঃখ কষ্ট আর আঘাত , পুকুর হলো জীবন , এইভাবে এগুলো সরিয়ে আলো আনতে হবে , এগিয়ে যেতে হবে , বুঝলি…’
এমন শিক্ষা যে মায়ের , তাঁর সন্তানই তো হয়ে ওঠেন অন্ধকারে নিমজ্জিত পরাধীন জাতির আলোর দিশারী। স্ত্রী চারুশীলাদেবী স্বামীর জন্য ভাত সাজিয়ে বসে থাকেন , মৃদু হেসে বলেন ,
‘যে অপেক্ষা করতে জানে, সে যার জন্য অপেক্ষা করছে , তার পদধ্বনি শুনতে পায়।’
এরকম সহধর্মিনীকে যিনি পাশে পান , তিনিই তো পারেন… একদিন ঘর ও বাহির মিলে এই দেশকে সোনার দেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতে…। মাস্টারমশাই ক্ষীরোদচন্দ্র কুমারের হাতে ‘আনন্দমঠ’ তুলে দিয়ে বলেন,
‘ মানুষের মতো মানুষ হও , তুমি যেন নিজেই একটা পথ হয়ে উঠতে পারো।’
এইরকম মাস্টারমশায়ের আশীর্বাদ মাথায় নিয়েই কুমারচন্দ্র বন্ধু গঙ্গাধরকে বলে ,
‘ ভাই , আমি ধুলোর মতো হতে চাই , মাড়িয়ে যাক , থুতু ফেলুক , কিন্তু আমি তো জানি , সেই ধুলোতে জল ঢেলে কখনো মূর্তি , কখনো শস্য ফলানো যায় ! এই বিশ্বাস আমার কোনদিন হারাবে না ! ‘
এই মাটিমাখা মহাপ্রাণের ছোঁয়ায় তাই মাটি জাগে , সেইসঙ্গে জাগে মাটিমাখা মানুষগুলো , যাদের কেউ কোনদিন সম্মান করেনি , মানুষ ভাবেনি !
উপন্যাসিক শুভঙ্করের প্রথম পরিচয় তিনি একজন কবি , তাই কবির কলমে উপন্যাসের কাহিনী বর্ণনা কোথাও কোথাও কবিতার ব্যঞ্জনায় হয়ে উঠেছে এক এক টুকরো উজ্জ্বল হীরকখন্ড ! উপন্যাসটি শুরু হয় রবীন্দ্রনাথের উদ্ধৃতির পর কবিতার ব্যঞ্জনায়…
‘চার্চের সুউচ্চ ঘন্টা-তোরণের পেছনে অস্তমিত সূর্য । দেখলে মনে হয় , সুদীর্ঘ ও সুতীব্র অন্ধকার দূর করতে করতে নিজেই তীরবিদ্ধ যোদ্ধার মতো ক্লান্ত , রক্তাক্ত এবং একাকী । সেই চার্চে এখনই ঈশ্বর-বন্দনা শুরু হবে। তার জন্য ঘন্টাধ্বনি হচ্ছে।’
অথবা , বালক কুমারের অধ্যয়নমগ্নতার বর্ণনা…
‘দূর থেকে দেখলে মনে হতো এ যেন সেই তপোবনের একটি খণ্ড দৃশ্য । সেখানে ছিল অপরূপ সবুজ গাছগাছালির সৌন্দর্য , এখানে মাঠের পর মাঠে রোদ মেঘের লুকোচুরি খেলা।
তার মধ্যে একজন একলব্যের মতো সেই রোদ-মেঘকে গুরু কল্পনা করে পড়াশুনা করে চলেছে।’
এইভাবে হাত ধরাধরি করে পাশাপাশি চলে কবিতা আর উপন্যাস …তৈরি করে এক খন্ড মানব ইতিহাস !

আজকের এই দিশেহারা সমাজে নিজেকে দীপ করে জ্বালতে হবে , সেই আলোয় পথ দেখে চলতে হবে … নব প্রাণের আলোয় সমাজকে করতে হবে কলুষমুক্ত। আর সেই জীবনদীপে সলতে পাকানোর কাজটি করে দেয় , কুমারচন্দ্র জানার মত সৎ কর্মযোগী দেশপ্রেমিক সাধক মহামানবদের জীবনীপাঠ। দেশকে ভালো না বাসলে দেশের মানুষকে ভালো না বাসলে কখনোই প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠা যায় না , তাইতো মানবজমিন পতিত রয়ে যায়। এইরকম নাটক , উপন্যাস , কবিতা, গল্প , প্রবন্ধ গ্রন্থ লেখা ও পাঠের মধ্যে দিয়ে সেই মানবজমিনে সোনা ফলানোর আশায় অপেক্ষায় থাকে সময় …

সুতাহাটার গান্ধি
শুভ্রাশ্রী মাইতি
লিপি প্রকাশন

মাটিমাখা মহাপ্রাণ
শুভঙ্কর দাস
লিপি প্রকাশন

Share This
Categories
অনুগল্প প্রবন্ধ

সাহিত্যের ছোটো আকাশ, বড়ো আকাশ : শুভঙ্কর দাস।

এই সময়ের সাহিত্যের আকাশটা বড় থেকে
ছোটো হয়ে আসছে
তার প্রধান তিন কারণ

এক
এই সময়ের সাহিত্যচর্চায় সত্যিকারের সন্ধানীহাতের বড় অভাব।অর্থাৎ খুঁজে খুঁজে নবীন প্রতিভা বের করে প্রতিষ্ঠা দান।তার মারাত্মক অভাব।অথচ রবীন্দ্রনাথ নিজেই খুঁজে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো বিস্ময়কর আভিধানিক আবিষ্কার করেছিলেন।বুদ্ধদেব বসুর উদারতায় ও আহ্বানে জীবনানন্দের মতো বিরল প্রতিভা স্বীকৃতি পেয়েছিল, আজকের জয় গোস্বামী, শ্রীজাত,বিনায়ক, মন্দাক্রান্তা, এমন কি মায়ে সুবোধ সরকার পর্যন্ত সকলেই কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের আনন্দময় সান্নিধ্যের পক্ষপাতপুষ্ট প্রতিভা।এই সূত্রে প্রবাদপ্রতিম কবি শঙ্খ ঘোষের নাম স্মরণীয়। তাঁর গৃহের রবিবারের আড্ডা তো অসংখ্য সৃজনশীল হাওয়ার বাতাস হয়ে ওঠার সিঁড়ি ছিল।
এখানে উচ্চারিত নামগুলো শুধু উদাহরণ, কোনো সুযোগ-সুবিধার জন্য উল্লিখিত নয়, এঁরা প্রত্যেকেই প্রতিভাবান এবং সাহিত্যে সৎ।
এই সময় প্রিয় ‘কবিসম্মেলন’ পত্রিকার দুই মহারথী কবি শ্যামলকান্তি দাশ ও শংকর চক্রবর্তী নীরবে ও নির্দ্বিধায় শস্যরোপনের কাজটি করে চলেছেন।এঁরা ব্যতিত নবীন প্রতিভার দাঁড়ানোর স্থান এতখানি অকুলান, তাতে যাকে অনুপ্রেরণা বলে,তা সত্যিকারের অণু হয়ে থেকে গেছে।
তাহলে
বল মা দাঁড়াই কোথা?

দুই
আপনার পাশের সাহিত্যরচনাকারীটি আপনার লেখা পড়েন না!
অর্থাৎ মহানগর তো দূরের নক্ষত্র, মফস্বলি কোনো সৃজনকর্মের পাঠক মফস্বলের পাওয়া দুষ্কর। আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতায় কতজন সম্পাদক, সাহিত্যিক এবং সংগঠক আছেন,যাঁরা হাতে প্রাপ্ত কবিতা-গল্প-উপন্যাস যাই পান,তার এক পাতাও উলটে দেখেন কি না সন্দেহ!
ফলে তাঁর মুখে এই আফসোস প্রতিফলিত, আজকাল ভালো লেখার বড় অভাব! আসলে তিনিই যে সবচেয়ে অভাবী,দরিদ্র, একথা কাকে বোঝানো যাবে?
ঠিক একই কথা বাচিকশিল্পীদের ক্ষেত্রে খাটে,তাঁরা এখনও মান্ধাতার আমলে পড়ে আছেন,তিনি এখনও গলার শিরা ফুলিয়ে এবং হস্তসঞ্চালনপূর্বক রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ইসলাম এবং সুকান্তে আওড়ে চলেছেন।তাঁরা অবশ্য অনেক খুঁজে খুঁজে সুনীলের নির্বাসন,শক্তির অবনী বাড়ি আছো? জয় গোস্বামীর মালতিবালা বালিকা বিদ্যালয় আর সুবোধের শাড়ি পর্যন্ত পৌঁছেছেন,তারপর? তারপর? তারপর সবই অঙ্কে যত শূন্য পেলে!
না, না, মোটেই আমরা বলছি না,যে রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-সুকান্ত-সুকুমার পড়বেন না,আবৃত্তি করবেন না,বরং এঁদের সৃষ্টি না পড়লে,যেকোনো সাহিত্যের লাজ অসম্পূর্ণ, তা তো সত্য। কিন্তু তার পাশে নতুন জমিও সন্ধানের চোখ,কণ্ঠ এবং হস্তসঞ্চালন রাখুন,তাহলে আকাশটা বড় হবে,আপনিও…
কিন্তু তা হচ্ছে না!
ফলে নবীন প্রতিভা শেষ পর্যন্ত সেই এলেবেলে আস্তাকুঁড়ে ভবিষ্যতের বীজধান হয়ে শুয়ে থাকে!

তিন
এরপর প্রকাশক!
এঁরা এক আশ্চর্য আকাশ! বাংলা সাহিত্যের প্রবহমান ধারার ধারক ও বাহক!
যাঁরা পড়েন কম, প্রকাশ করেন বেশি!তার থেকেও ব্যবসায় আবেগ খাটান আরও আরও বেশি!
আমি বই ব্যবসায়ে নেমেছি,ব্যবসাকেই প্রধান করে দেখব,একদম সঠিক।তাই তাঁদের বই প্রকাশ করে চলেন,যাঁদের বাজার তৈরি আছে।
এবং যাঁরা বাজার তৈরি করে দিতে পারবেন!
এবং তাঁদের, যাদের হাতে নিজস্ব বাজার আছে!
ফলে প্রকাশকগণ নিজে খেটে, নিজে হেঁটে প্রতিভার সন্ধান বন্ধ করে রেখেছেন!
কিন্তু এতে একদিন দেখা যাবে সাহিত্যের মৃত রথী-মহারথী ছাড়া কোনো জীবিত প্রতিভার বই প্রকাশের সুযোগ পাওয়া যাবে না!
চলুক,এইভাবে চলুক…
কিন্তু তাঁরা এটা কি বোঝেন,যদি সত্যিকারের সন্ধানী চোখ দিয়ে নবীন নবীন প্রতিভা তুলে ধরে বাজারে রাখার চেষ্টা করি,তাদের মধ্যে কেউ না কেউ পাঠকসমাজ পাবেন,ফলে আবার নতুন করে বাজার তৈরি হবে!
কিন্তু সেই ঝুঁকি নিতে এঁরা আগ্রহী নয়! ফলে সাহিত্যের আকাশ,শুধু লেখার নয়, প্রকাশেরও ছোট হতে হতে সমুদ্র থেকে গর্ত হয়ে যাবে!
এবং একদিন কলেজ স্ট্রিট না গিয়েও বলে দেওয়া যাবে,ওখানে কী বই বিকোয় এবং কী বই শুকোয়!

এই সবের ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে।
কিন্তু তা এতো যৎসামান্য যে,আকাশটাকে কিছুতেই বড় করতে পারছে না! বরং সেই সব ব্যতিক্রমীদের এমনভাবে বাধা-বিপত্তির বেড়াজালে ফেলে দেওয়া হচ্ছে, তাদের নাভিশ্বাস আকাশ পর্যন্ত ওঠে না!

সুপ্রিয় সচেতন পাঠক,
এই কথাগুলো চোখ চারিয়ে,হৃদয় মিশিয়ে এবং বোধ পিষিয়ে রচিত।এ-র সঙ্গে আপনি একমত হতে পারেন আবার নাও হতেন পারেন!
আপনি কমেন্ট করতে পারেন আবার নাও করতে পারেন!
সেটা সম্পূর্ণ আপনার মনন এলাকা।
কিন্তু এই আলোচনা পাঠের পর কথককে অকারণে ও অযৌক্তিক নেতিবাচক এবং সূচীশিল্পে বিদ্ধ না করিয়া কীভাবে এই দৃষ্টিভঙ্গিকে নস্যাত করা যায়,তাই লিখুন…
আপনার মতামতের জন্য তো ফেসবুকে পোস্ট করা…

ওহ্ হ্যাঁ,ফেসবুক।
জয় ফেসবুকস্বতী।

যার কেউ নেই, তার ফেসবুক আছে।
এবং তাই বোধহয় হলদিয়া টু হাওড়া,কলকাতা টু কাঠমান্ডু,ঢাকা টু কাশ্মীর,নিউইয়র্ক টু নদের গঞ্জ পর্যন্ত আকাশটা বেঁচেবর্তে আছে!

Share This
Categories
প্রবন্ধ

পল্লীপ্রেমী কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক।

ভূমিকা—-

বাংলার রবীন্দ্রযুগে স্বনামধন্য পল্লীপ্রেমী কবি ও শিক্ষাবিদ কবি ছিলেন কুমুদরঞ্জন মল্লিক।গ্রাম বাংলার সহজ-সরল জীবন ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তাঁর কবিতায় প্রধান বিষয়। আজও তাঁর কবিতায় সৃষ্ট প্রাকৃতিক রূপ, রস, অনুভূতি, বাংলা সাহিত্যের পরোতে পরোতে তাকে চিরঞ্জীবী করে রেখেছে। অজয় নদ, কুনুর নদীর স্রোত তাঁর উপস্থিতি অনুভব করায়। তার সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন- “কুমুদরঞ্জনের কবিতা পড়লে বাংলার গ্রামের  তুলসীমঞ্চ, সন্ধ্যাপ্রদীপ, মঙ্গলশঙ্খের কথা মনে পড়ে।”  পেশায় তিনি ছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর অন্যতম ছাত্র। ‘উজানী’, ‘অজয়’, ‘তূণীর’, ‘স্বর্ণসন্ধ্যা’ ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থ উল্লেখযোগ্য।

জন্ম ও বংশ পরিচয়—

১৮৮৩ সালের ১ লা মার্চ  অবিভক্ত বাংলার  পূর্ব বর্ধমান জেলার কোগ্রামে (বর্তমানে কুমুদগ্রাম) মাতুলালয়ে  জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস ছিল একই জেলার বৈষ্ণবতীর্থ শ্রীখন্ড গ্রামে৷ পিতা পূর্ণচন্দ্র মল্লিক ছিলেন কাশ্মীর রাজসরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। মাতা ছিলেন সুরেশকুমারী দেবী। তাঁদের পূর্বপুরুষ বাংলার নবাবের থেকে মল্লিক উপাধি লাভ করেন। তাদের পদবী সেন শর্মা বা সেনগুপ্ত।

শিক্ষা জীবন—

ছাত্র হিসাবে তিনি খুবই মেধাবী ছিলেন। কুমুদরঞ্জন ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে এন্ট্রান্স, ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার রিপন কলেজ বর্তমানে সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে এফ.এ. এবং ১৯০৫ সালে বঙ্গবাসী কলেজ থেকে বি.এ. পাস করেন ও বঙ্কিমচন্দ্র সুবর্ণপদক প্রাপ্ত হন।

কর্মজীবন—-

তিনি বর্ধমানের মাথরুন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন এবং সেখান থেকেই ১৯৩৮ সালে প্রধান শিক্ষকরূপে অবসর গ্রহণ করেন। উল্লেখ্য যে, বাংলার বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ওই স্কুলে তাঁর ছাত্র ছিলেন।

কবি প্রতিভা—-

কুমুদরঞ্জনের কবিত্বশক্তির বিকাশ বাল্যকাল থেকেই ঘটে।নদী ঘেরা অপরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে বড় হয়েছেন কবি কুমুদ রঞ্জন। কবির গ্রামের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে অজয় ও কুনুর নদী। এই গ্রাম আর নদীই হল কবির মুখ্য প্রেরণা। কবিতায় নির্জন গ্রামজীবনের সহজ-সরল রূপ তথা নিঃস্বর্গ প্রেম চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। পল্লী-প্রিয়তার সঙ্গে বৈষ্ণবভাবনা যুক্ত হয়ে তার কবিতার ভাব ও ভাষাকে স্নিগ্ধতা ও মাধুর্য দান করেছে। ধর্ম নিয়ে লিখলেও ধর্মীয় সংকীর্ণতা ছিল না।  ‘কপিঞ্জল’ ছদ্মনামে তিনি চুন ও কালি নামে ব্যঙ্গকাব্য রচনা করেন।

পল্লীকবির উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলি হলঃ— পল্লীকবির রচিত একাধিক কবিতায় রয়েছে প্রকৃতি ও গ্রাম্য পরিবেশে সৌন্দর্যের বর্ণনা। শিশু বয়সে বেশীরভাগ মানুষই পড়েছে কবি রচিত কবিতা-

চুন ও কালি (১৯১৬), বীণা (১৯১৬), বনমল্লিকা (১৯১৮), শতদল (১৯০৬ – ০৭), বনতুলসী (১৯১১), উজানী (১৯১১), একতারা (১৯১৪), বীথি (১৯১৫), কাব্যনাট্য  দ্বারাবতী (১৯২০), রজনীগন্ধা (১৯২১), নূপুর (১৯২২), অজয় (১৯২৭), তূণীর (১৯২৮), স্বর্ণসন্ধ্যা (১৯৪৮)। তার অপ্রকাশিত কাব্যগ্রন্থটি হল ‘গরলের নৈবেদ্য’। এটি সোমনাথ মন্দির সম্পর্কিত ১০৮ টি কবিতার সংকলন হিসাবে প্রকাশ।

সম্মাননা—

কবি হিসেবে তিনি সম্মানিত হয়েছেন সর্বত্র। কুমুদরঞ্জন বাংলার কবি-সাহিত্যিকদের প্রতিষ্ঠান সাহিত্যতীর্থের ‘তীর্থপতি’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক’ দিয়ে সম্মান জানায়।১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে ২১ এপ্রিল ভারত সরকার তাকে ‘পদ্মশ্রী’ উপাধিতে ভূষিত করে।

মৃত্যু—-

১৯৭০ সালের ১৪ ডিসেম্বর সমস্ত সাহিত্য কবিতা অনুরাগী মানুষকে গভীর শোকের নিমজ্জিত করে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট ।।

Share This
Categories
রিভিউ

সাহিত্যের নিরিখে সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরের এক ঝলক : দিলীপ রায়।

প্রথমেই বলি, এবার ভিন্ন-ভিন্ন স্বাদের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম যেটা সাহিত্যের নিরিখে ভীষণ প্রাসঙ্গিক !
বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলা সমিতির আমন্ত্রণে আমার বাংলাদেশ সফর ।
একুশে ফেব্রুয়ারি (২০২৩) ফ্লাইট থেকে ঢাকা বিমানবন্দরে নেমে সোজা গিয়েছিলাম “আসমান-জমিন” পত্রিকা অফিস উদ্বোধনে । সেখানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ৭ বারের সংসদ সদস্য এবং বঙ্গবন্ধুর স্নেহভাজন ছাত্র নেতা শ্রদ্ধেয় আ স ম ফিরোজ, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার বার্তা সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক আয়ুব ভুঁইয়া এবং কলামিস্ট, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক মীর আব্দুল আলীম । স্বল্প পরিসরে সাংবাদিক-সাহিত্যিকদের নিয়ে সুন্দর একটি উচ্চ-মানের অনুষ্ঠান । তারপর সোজা যাই শহীদ মিনার । সেখানে শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করি । এটা ছিল আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ শ্রদ্ধাঞ্জলি ।
বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলা সমিতি একটি সমৃদ্ধশালী সাহিত্য সংগঠন । সংগঠনটি এপার-বাংলা ও ওপার-বাংলার কবি সাহিত্যিকদের মধ্যে মেলবন্ধন তৈরী করার নিরিখে এবং ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রীবন্ধন দৃঢ় করার অভিপ্রায়ে একুশে বইমেলা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে “ভারত-বাংলাদেশ জাতীয় সাহিত্য উৎসব-২০২৩” গত ২২শে ফেব্রুয়ারী (২০২৩) সংঘটিত করলো । যে অনুষ্ঠানের ভারতের পক্ষ থেকে আমি ছিলাম যুগ্ম আহ্বায়ক । সুন্দর একটি উচ্চ-মানের সাহিত্য অনুষ্ঠান । সারাদিন ব্যাপী কবিতা, আবৃত্তি, ছড়া, গান, আলোচনায় অনুষ্ঠানটি সর্বাঙ্গসুন্দর হয়ে উঠেছিল । বাংলাদেশ সরকারের দুইজন গুরুত্বপূর্ণ ক্যাবিনেট মিনিস্টার উপস্থিত ছিলেন । একজন মাননীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ ও অন্যজন মাননীয় পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী । অনুষ্ঠানটি ফিতে কেটে উদ্বোধন করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য মোঃ আখতারুজ্জামান । সারাদিন অনুষ্ঠানের মাঝে একান্ত কাছে পেয়েছিলাম বরিষ্ঠ কবি ও একুশের পদক জয়ী অসীম সাহা, শিশু সাহিত্যিক ও একুশের পদক জয়ী আসলাম সানী, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার বার্তা সম্পাদক আয়ুব ভুঁইয়া ও বাংলা একাদেমির সভাপতি সেলিনা হোসেনকে । পরে দেখা হয়েছিল ভ্রাতৃসম জাতীয় পুরষ্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র পরিচালক ড. মাসুদ পথিকের সাথে । সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভ্রাতৃসম আবু হানিফ হৃদয় । উল্লেখ থাকে যে, ভারত থেকে আমরা যথেষ্ট সংখ্যায় কবি, লেখক, বাচিক শিল্পী, সাহিত্যিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম । তাঁদের মধ্যে অন্যতম ড. রামপদ বিশ্বাস, পার্থসারথি ঝা, দিলীপ কুমার প্রামাণিক, বুলু রায়, সুমিতা পয়ড়্যা, নন্দিনী লাহা, প্রমুখ । এই ধরনের বরিষ্ঠ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে এবং যথোপযুক্ত সম্মান পেয়ে আমি “নারায়নগঞ্জ জেলা সমিতি”এর কাছে নতমস্তকে কৃতজ্ঞ । অনুষ্ঠানটি সফলভাবে পরিচালনার জন্য অনুষ্ঠানের মধ্যমণি ও সদস্য-সচিব মীর আব্দুল আলীমকে (কলামিস্ট, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক) আমার অন্তরের ভালবাসা ও শুভকামনা ।


পরেরদিন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ভুলতায় অবস্থিত আল-রফি হাসপাতাল পরিদর্শন করার পর হাজির ছিলাম “ব্রাইট শিশু কানন হাই স্কুল” এর অনুষ্ঠানে । অনুষ্ঠানটি সংঘটিত হয়েছিল নগরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে । শিশুদের নাচ-গান সহ হৃদয়গ্রাহী একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান । এক কথায় বাচ্চাদের সুন্দর একটি মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান । এখানে রাসেল আহমেদ (সাংবাদিক) ভাইয়ের আতিথেয়তা ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক । ১৩টি রসনা তৃপ্ত দেশি মাছের ডিস দিয়ে দুপুরের আহারের ব্যবস্থা, একটি চরম পাওয়া । পরেরদিন সকালে পৌঁছালাম “রক্তের বন্ধন ফাউন্ডেশন” প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক অনুষ্ঠানে । এই প্রতিষ্ঠানটি সমাজের হিতার্থে রাত-দিন সমানে কাজ করে চলেছে । এইজন্য রক্ত-যোদ্ধাদের আমার হার্দিক অভিনন্দন । রক্ত-যোদ্ধাদের অনুষ্ঠানটি শেষ হওয়ার সাথে সাথে ছুটলাম “দৈনিক দিন প্রতিদিন” পত্রিকার বার্ষিক অনুষ্ঠানে । বাংলাদেশের বরিষ্ঠ সাংবাদিকরা সেখানে হাজির ছিলেন । সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলতে গিয়ে আমি বললাম, “আপনারা অর্থাৎ সাংবাদিকেরাই পারেন দেশ উন্নয়নে যথাযথ ভূমিকা নিতে ।“ সুন্দর একটি অনুষ্ঠানের সাক্ষী রইলাম । শেষদিন হাজির ছিলাম “রূপগঞ্জ সাহিত্য পরিষদ” আয়োজিত দুই বাংলার সাহিত্য সম্মেলনে । সেখানে অনেক গুণী কবি-সাহিত্যিকেরা উপস্থিত ছিলেন । এছাড়া ছিল বন্ধুবর মীর আব্দুল আলীমের বাড়িতে স্বল্প সময়ের জন্য আতিথেয়তা গ্রহণ !
পরিশেষে ভারতের কথা সাহিত্যিক হিসাবে আমার উপলব্ধি, “বাংলাদেশ সফরের ফলে দুই দেশের মানুষের ভালবাসার বাঁধন আরও মজবুত হলো ।“

Share This
Categories
কবিতা

কথামাত্র : শীলা পাল।

ভুলবো না কোনও দিন
চতুর্দশী কন্যাটি লজ্জায় লাল হয়
এই কথা টি বহুজন বহুবার বলে গেছে
ভোরের বেলায় চাঁপার গন্ধে মিশিয়ে দিয়ে
দ্বিপ্রহরের ব্যস্ত সময় চোখে চোখ রেখে
মুগ্ধতার ঝিলিক মৃদু হাসি মৃদু ভাষে কত
কথার বন্দনা রচনা হয়ে যেত
বৈকালের নিবিড় বাঁধনে কত মধুর কাব্যকথা
শুনতে শুনতে চুপিচুপি সন্ধ্যা এসে আড়াল
হয়ে দাঁড়াত
তখন জানা হয়ে গেছে স্তুতি আর বাস্তবের
গতিপথ দুটো ভিন্ন
না বলা কথা টাই অবশেষে জানাল
সবাই ভুলে যায় কিন্তু ভুলব না বলে।

Share This