Categories
কবিতা

হলো না দেখা : রাণু সরকার।

সুখ-দুঃখ-আনন্দ, আরো কত কি লিখলাম-
লেখার শেষে সবটাই দেখলাম কিন্তু শেষের লাইন কটা হলো দেখা,
জানেন খুঁজে পেলাম না শেষের কয়েকটা
লাইনের মানে–
তাই না বলুন-লেখা তো শুধু মন কলমের হয়!
মন কালির যে কত কষ্ট ভাবুন,কে তা বোঝে
তার আঘাতে কতটা ক্ষত হলো কেউ কি তা জানে!
শেষের লাইন কটা লিখলাম বটে নেশার ঘোরে ভয়ে আর দেখিনি যদি ক্ষতের গভীরতা যায় বেরে!
তাই ওদের সাধিন করলাম অন্যের দৃষ্টিপাত থেকে!!

Share This
Categories
কবিতা

এসো হে বৈশাখ :: অজয় কুমার রজক।

মাঠ- ঘাট ফুটি ফাটা জলাশয় শুন্য,
লু বয় চারিদিকে বিমর্ষ অরণ্য।
শুকিয়ে গেছে নদী- নালা- পুকুর,
পথপাশে ক্লান্তিতে ধুঁকছে কুকুর।
সারাদিন ঘাম ঝরে,
গাছের পাতা কই নড়ে?
শ্রমজীবী মানুষগুলির নিদারুণ কষ্ট,
কত কত শ্রম দিবস হচ্ছে নষ্ট।
পাখিরা উড়ে জলের খোঁজে,
তাদের ব্যথা কয়জন বোঝে?
স্কুল কলেজ বন্ধ আজ,
শিকেয় উঠেছে পড়াশোনার কাজ।
উগ্রমদ্য সম রৌদ্র, তপ্ত বালুকণা,
যেন বিষাক্ত কাল নাগিনীর উদ্ধত ফনা।
দুপুর রাতে ঘুম নেই গরমে জেরবার,
তারই মাঝে লোডশেডিং বারবার।
প্রাণ করে হাঁসফাঁস,
কি নির্মম বৈশাখ মাস।
এনো কালবৈশাখী, এনো শান্তির বারি,
তোমার সাথে নেই মোদের কোন আড়ি,
এসো হে বৈশাখ, এসো এসো।

Share This
Categories
কবিতা

তাপদগ্ধ ::: রাণু সরকার।।

নিস্তব্ধ সন্ধ্যায় একা বসে-
পুরোন কিছু স্মৃতি দ্রুতবেগে
এসে বসলো মনের
কোণে,
লাগছিলো বেশ-

সযত্নে নিলাম তাদের-
রাত কাটে পুরোন কথা বলে বলে–
ভালোবেসে একসময় স্পর্শও
করেছিলো!
রেখেছি বুকের অগোচরে
বেঁধে ইতিবৃত্ত!

যে-মালাটি পরিয়েছিলো-
ফুলগুলো তাপদগ্ধ
ঝরে পড়তে দেইনি নিচে!

Share This
Categories
কবিতা

অব্যক্ত  ::: রাণু সরকার।।।

মাঝে মাঝে অব্যক্ত কথারা দেয় হানা
যায় না প্রকাশ করা-
একেবারেই একান্ত সংলাপ,
উচ্চারণ করলে ভ্রষ্টচরিত্র ভাবাটাই স্বাভাবিক,
মনের চোখে হয়তো সে- বাঁধা-
খুঁজে পেলে মন চাইবে ঘনিষ্ঠ হতে
যদিও সম্ভব না-

ইচ্ছেদের ভীষণ ধৈর্য্য হয়-
তবুও অপেক্ষা করা;
অপেক্ষা করে না পেলে হয় যন্ত্রণা-
মনের চাওয়া পাওয়া বোঝা কষ্টকল্পিত,
মন কোন দিন পাবে না যাকে
তাকেই চায়-
মন যমুনার জল ঢালের দিকে যায় গড়িয়ে।

Share This
Categories
কবিতা

মধুর বন্ধন : রাণু সরকার।।

যৌবনের লাবন্য হলো কলাশাস্ত্র
ঘুমিয়ে থাকে কল্পনার কুটিরে
একান্ত আপন দোঁহে গোপনে!
সমাজ সাদরে সম্ভাষণ করে মধুর এক বন্ধনে,
সৃষ্টি হয় সুন্দর এক জীবনের চিত্রনাট্য!

আজ যৌনতা খুবই উদ্দাম-
সংযমহীন, চলে দিশাহীন সংসর্গে,
অদমিত কিছু বাসনা অতৃপ্ত থাকে-
অতিক্রম করার কোন প্রচেষ্টা নেই,
নেই কোন সৃষ্টির আকুতি,
শুধুই জৈবিক!

Share This
Categories
কবিতা

সত্য : রাণু সরকার।

রাত শেষ হলেই ভোর,
ভোর থাকে লক্ষ্যের বাহিরে,
আসতে দেরি হলেও সে আসবেই।

চিত্রণ শিল্পকর্ম,কঠিন ক্রিয়াকলাপ
ঘটে ঘনান্ধকারে,
চলে দখলদারি,
মন বিক্রি হয়-
সত্যিই কি অন্তর বিক্রি হয়?
জোরপূর্বক দাম দর নিয়ে চলে মন
কষাকষি,
এক রাতের অভন্তরে কত না কি ঘটে।

এই সত্য কি সূক্ষ্মদৃষ্টিতে অনুভব করি সবসময়?

Share This
Categories
কবিতা

তুলির টান : রাণু সরকার।

জল তুলিতে এঁকে ছিলাম আত্মভাব,
তুলি দিয়ে যত টান দেই ততই আঘাত-যন্ত্রণারা হুটোপপাটি করে বেরিয়ে এলো-
ভেতরের আরো অনেক রূপও বেরিয়ে এলো বাহিরে;
হয়তো অপেক্ষায় ছিলো তুলির টানের সব টানের-
সত্য বড্ড কঠিন,
কঠিনের সাথেই চললো গার্হস্থ্যজীবন!

Share This
Categories
কবিতা

বেদনাহত : রাণু সরকার।

পেয়েছি অনেক প্রাণ গেছে ভরে,
একটুও দুঃখ নেই যাই যদি মরে।

দিন-রাত এক হয়ে কাটে কষ্টের সুখে,
অনুক্ত স্বরাঘাত এলো কোথা থেকে-
ভাবনা চলে এতো কিছু কিকরে থাকে
ছোট্ট এ বুকে!

আহ্লাদে থেকেছে যখন- রূপ-রস সব করেছে হরণ!
বেঁচে থেকে কীবা লাভ, তাই বলি, আসুক না মরণ।

অজ্ঞাত বাসনা আছে কিছু বাকি-
পূর্ণ কি হবে,
অদৃষ্ট বলে-
পেয়েছি যা তা মেনে নিতে হবে।

কাছে গেলে সরে যাও, দাওনা স্পর্শখানি,
তুমি আছো, থাকবে সকলেই- তা জানি।

যাবো যাবো বলি রোজ- পারি কি যেতে,
একদিন যাবো চলে ওই তরী বাঁধা ঘাটে
যেতে চাইলেও পারবো না কাউকে সাথে
নিয়ে যেতে!

Share This
Categories
কবিতা

তাপদগ্ধ : রাণু সরকার।

নিস্তব্ধ সন্ধ্যায় একা বসে-
পুরোন কিছু স্মৃতি দ্রুতবেগে
এসে বসলো মনের
কোণে,
লাগছিলো বেশ-

সযত্নে নিলাম তাদের-
রাত কাটে পুরোন কথা বলে বলে–
ভালোবেসে একসময় স্পর্শও
করেছিলো!
রেখেছি বুকের অগোচরে
বেঁধে ইতিবৃত্ত!

যে-মালাটি পরিয়েছিলো-
ফুলগুলো তাপদগ্ধ
ঝরে পড়তে দেইনি নিচে!

Share This
Categories
উপন্যাস

দামাল মেয়ে কুহেলি (ধারাবাহিক উপন্যাস, প্রথম পর্ব) : দিলীপ রায়।

সানাই কানাই দুই ভাই । সানাই বড় ও কানাই ছোট । সানাইয়ের মেয়ে কুহেলি । কাঞ্চন নগরে তাঁদের বাড়ি । দুই ভাইয়ের পাশাপাশি বসবাস । বেঁচে থাকতে সানাইয়ের বাবা জমি-জায়গা দুজনকে সমান ভাগে ভাগ করে দিয়ে গেছেন । সানাইয়ের বেশী বয়সে বিয়ে । সেইজন্য বিয়ের অনেক বছর বাদে তাদের একমাত্র কন্যা সন্তান, কুহেলি । সানাইয়ের জীবনে সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা, কুহেলি জন্ম নেওয়ার সময় তার স্ত্রী বিয়োগ । স্ত্রীকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল সানাই । কিন্তু কিছুটা ডাক্তারদের অবহেলার কারণে কুহেলির মায়ের অকাল বিয়োগ । সেই থেকে সানাই মনমরা ! তবুও মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে সানাইয়ের বাঁচার স্বপ্ন !
কিন্তু সমস্যা অন্যত্র । সমস্যা শুরু হলো কুহেলির পান্তা মাসিকে নিয়ে । পান্তা মাসি অল্প বয়সে বিধবা । পাশের গ্রাম সুরেশপুরে তার বাড়ি । প্রতিদিন সবজি বোঝাই ঝুড়ি মাথায় নিয়ে গাঁয়ে গাঁয়ে বিক্রি । সবজি বিক্রি করে তার সংসার । পান্তা মাসির একটাই মেয়ে । অল্প বয়সে সেই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে । মেয়ের শ্বশুর বাড়ি ভরতপুরে । ভরতপুর ব্লক অফিসের পাশে জামাইয়ের চায়ের দোকান । চায়ের দোকান খুব চালু । ভাল ঘরে মেয়ের বিয়ে হওয়ায় পান্তা মাসির খুব শান্তি ! জামাই খুব কর্মঠ । ব্যবহার আর পাঁচটা ছেলের চেয়ে আলাদা । মার্জিত স্বভাব ! সর্বোপরি জামাই পান্তা মাসিকে মায়ের চেয়েও বেশী শ্রদ্ধা করে । মেয়ে বিয়ে দিয়ে এইজন্যে পান্তা মাসির মনে খুব শান্তি । মেয়েটা অন্তত সুখে শান্তিতে বাকী জীবন কাটাতে পারবে !
মেয়ের বিয়ের পর থেকে পান্তা মাসি বাড়িতে একা । সারাদিন মাথায় ঝুড়ি নিয়ে এ-গাঁয়ে সে-গাঁয়ে ঘোরাঘুরি । গাঁয়ে ঘুরে ঘুরে তার সবজি বিক্রি । দিনের শেষে তিন-চারশ টাকা লাভ । তাতেই পান্তা মাসির শান্তি । কেননা পান্তা মাসি অল্পতেই সন্তুষ্ট ।
কুহেলি হাই স্কুলে ভর্তি হলো । ক্লাস ফাইভে । কুহেলির মুখটা ভীষণ মিষ্টি । গাঁয়ের লোকজন প্রায়শই বলে, দুর্গা মায়ের মুখটা কুহেলির মুখে বসানো । তার নাকি প্রতিমার মতো সুন্দর মুখশ্রী । আপশোশ করে বয়স্ক মহিলারা বলেন, কুহেলির মা তাঁর মেয়েটার সুন্দর মুখশ্রী দেখে যেতে পারলো না । মুখপুড়িটা মেয়েকে জন্ম দিয়ে বিদায় নিলো ।
স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর থেকে পান্তা মাসির কুহেলিদের বাড়ি ঘন ঘন যাতায়াত । বাড়ি থেকে বেরিয়ে পান্তা মাসি সবজির ঝুড়ি মাথায় নিয়ে প্রথমেই কুহেলিদের বাড়ি । সেই সময় কুহেলি ঘুম থেকে ওঠে । অন্যদিকে তার বাবা প্রাতর্ভ্রমণ সেরে বাড়ির দাওয়ায় বসে । পান্তা মাসি সানাইকে দেখতে পেলে সবজির ঝুড়ি নামিয়ে তাদের রান্না ঘরে ছোটে । চা বানিয়ে প্রথমে কুহেলির বাবাকে খাওয়ায় । তারপর কুহেলির জন্য টিফিন বানিয়ে দেওয়া । কাজের খুব চাপ না থাকলে, পান্তা মাসি কুহেলিদের দুপুরের রান্না বানিয়ে, তারপর সবজি বিক্রি করতে পাড়ায় ছোটে ।
রান্না ঘরে ঢোকার জন্য কুহেলির বাবার সঙ্গে পান্তা মাসির ঘনিষ্টতা ক্রমশ বাড়তে থাকে । সকাল আটটার মধ্যে কুহেলিদের বাড়ি ঢুকে নিজের বাড়ির মতো পান্তা মাসির কাজ শুরু হয়ে যায় । শোয়ার ঘরের বিছানা তোলা । ঘর-দোর ঝাঁট দেওয়া । কুহেলির যত্ন নেওয়া । কুহেলিকে স্কুলে যাওয়ায় আগে যেমন স্কুল ব্যাগ, স্কুলের জন্য আলাদা টিফিন, ইত্যাদি গুছিয়ে দেওয়া । সকালের চা-জলখাবারের পর্ব শেষ হয়ে গেলে দুপুরের রান্নায় মন দেয় । প্রতিদিন জেলেরা গাঁয়ে মাছ বিক্রি করতে আসে । তাদের কাছ থেকে নিজে মাছ কেনে পান্তা মাসি । ডাল ছাড়া প্রতিদিন মাছের ঝোল ও একটা সবজির তরকারি রান্না করা চাই । তবে রান্না করার পর নিজে কিছুতেই খাবে না । পান্তা মাসিকে খাওয়ার জন্য সানাই অনেক অনুরোধ করেছে । কিন্তু তার একটাই কথা, মা-মরা মেয়েটার কথা ভেবে আমার রান্না করা । তার মুখে দু-মুঠো খাবার তুলে দিতে পারছি, এটাই আমার শান্তি ! আমাকে খেতে বলবেন না প্লীজ, আমি খেতে পারব না । দুপুরের রান্না শেষ করে পুনরায় ঝুড়ি মাথায় পান্তা মাসি সবজি বিক্রি করতে পাশের গ্রামে ছোটে ।
একদিন কৌতুহলবশত কুহেলি পান্তা মাসিকে জিজ্ঞাসা করলো, “তুমি আমাদের বাড়ি এত কাজ করো কেন ? এতে তোমার খাটুনি বাড়ে বই কমে না । আমাদের বাড়িতে পরিশ্রম করে তোমার কী লাভ ?”
ফ্যাকাশে মুখে পান্তা মাসি কিছুক্ষণ কুহেলির দিকে তাকিয়ে রইলো । তারপর ঠোটের কোনে এক চিলতে হাসি দিয়ে কান্তা মাসি বলল, “তুই এই খাটুনির মর্ম বুঝবি না । বড় হলে বুঝতে পারবি ।“
ভরা বৈশাখ মাসে প্রখর তাপের মধ্যে গাঁয়ে ঘুরেঘুরে কাজ করার জন্য পান্তা মাসি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লো । সেই সময় কুহেলি লক্ষ্য করলো, “তার বাবা খুব মনমরা । সকালে ওঠে আগের মতো প্রাণচঞ্চল নয় ! সকালে হাঁটতে বের হয় না । বাড়িতে মনমরা হয়ে বসে থাকে ।“ কুহেলি কাকীমার কাছে জানতে পারলো, সে স্কুলে বেরিয়ে গেলে তার বাবা পান্তা মাসির বাড়ি যায় । তাকে ডাক্তার দেখানো, ঔষধ কেনা, রান্না করা, সবকিছু করে দিয়ে বাড়ি ফেরে । ফলে তার বাবার দুপুরের খাবার খেতে নাকি বেলা তিনটে গড়িয়ে যায় । কাকীমার কাছে এতকথা শুনলেও কুহেলি বাবাকে কিচ্ছুটি জিজ্ঞাসা করে না । তবে কয়েকদিন যাওয়ার পর কুহেলি তার কৌতুহল চেপে রাখতে পারলো না । তাই বাবাকে জিজ্ঞাসা করলো, “বাবা ! পান্তা মাসির কী হয়েছে ?” উত্তরে মনমরা সুরে সানাই বলল, “তোর পান্তা মাসির টাইফয়েড জ্বর হয়েছে ।“
ডাক্তার কী বলল ?
“জ্বর এখন নিয়ন্ত্রণে ।“ ডাক্তারবাবু বললেন । তবে তোর পান্তা মাসিকে দেখভালের জন্য একটা লোক দরকার । আর তা ছাড়া তাকে নিয়মিত দামী দামী ফল খাওয়ানো খুব প্রয়োজন !
“তুমি চিন্তা করো না বাবা । পান্তা মাসি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে ।“ বাবাকে সান্ত্বনা দিলো কুহেলি ।
পরেরদিন ঘুম থেকে উঠে এ-ঘর ও-ঘর খুঁজেও বাবাকে পাচ্ছে না কুহেলি । বাবা কোথায় গেলো ? ভয় পেয়ে গেলো কুহেলি । বাবা তাকে না জানিয়ে কোথাও যায় না । কাঞ্চন নগরের শেষ মাথা দিয়ে একে-বেঁকে গেছে নোনাই নদী । দীর্ঘদিনের নোনাই নদী । এই নদীতে গ্রীষ্মকালে ভাল মাছ পাওয়া যায় । কুহেলি জানে, কারণে-অকারণে বাবা মাঝে মাঝে নোনাই নদীর পারে গিয়ে বসে থাকে । তাই কুহেলি ভাবলো, বাবা সম্ভবত নোনাই নদীর পারে গিয়ে বসে থাকতে পারে । তাই কুহেলি হাঁটতে হাঁটতে নোনাই নদীর পারে গিয়ে উপস্থিত । নোনাই নদীর পারে গিয়ে কুহেলি দেখলো, গাঁয়ের অনেক মানুষ সেখানে রয়েছেন । অনেকে খেপলা জালে নদীতে মাছ ধরছে । অত লোকের মাঝে কোথাও তার বাবাকে খুঁজে পাওয়া গেলো না । হতাশ হয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলো কুহেলি ।
রাস্তায় শীতলের সঙ্গে দেখা ।
“এত সকালে হন্তদন্ত হয়ে কোথায় চললি ?” জিজ্ঞাসা করলো শীতল ।
নোনাই নদীর পারে গিয়েছিলাম, এখন বাড়ি ফিরছি ।
হঠাৎ নোনাই নদীর পারে কেন ?
ঘুম থেকে উঠে দেখি বাবা বাড়িতে নেই । তাই ভাবলাম, বাবাকে নদীর পারে পাওয়া যাবে !
তোর বাবাকে সুরেশপুরে দেখলাম । বলেই শীতল পুনরায় জিজ্ঞাসা করলো, “তোর বাবা এত সকালে ঐ গ্রামে কেন ?”
কাজ আছে নিশ্চয় ! কিন্তু তুই সেখানে কী করছিলি ? পাল্টা প্রশ্ন করলো কুহেলি ।
আমি পড়তে গিয়েছিলাম । তুই তো জানিস, আমাদের অঙ্কের স্যার সুরেশপুরে থাকেন । তাঁর কাছে অঙ্ক শিখতে গিয়েছিলাম ।
সাইকেল থেকে নেমে শীতল হাঁটা শুরু করলো ।
মাঝখানে তিন-চারদিন কুহেলির সাথে শীতলের দেখা হয়নি । গাঁয়ে খেলার মাঠে কুহেলি কয়েকদিন যায়নি । অথচ কুহেলির অন্যান্য বন্ধুরা মাঠে প্রতিদিন যাচ্ছে এবং তারা কিৎ কিৎ, দৌড়, ইত্যাদি খেলায় মত্ত । স্কুল থেকে ফেরার সময়ও কুহেলির সাথে শীতলের দেখা হয়নি । শীতল ক্লাস সেভেনে পড়ে । কিন্তু কুহেলির সাথে শীতলের খুব ভাব । দু-ক্লাস উপরে হলেও শীতল কুহেলিকে খুব পছন্দ করে । টিফিন ভাগ করে খায় । স্কুল থেকে ফেরার সময় একসঙ্গে বাড়ি ফেরে । দুজনের মধ্যে খুব ভাল সম্পর্ক ।
“দুদিন খেলার মাঠে আসলি না কেন ?” শীতল কুহেলিকে প্রশ্ন করলো ।
স্কুল থেকে ফিরে বাবার সঙ্গে কাজ করছিলাম ।
“বাবার সঙ্গে কাজ করছিলি !” কথাটা পুনরুক্তি করেই শীতলের কী হাসি !
হাসছিস কেন ?
বাবার সঙ্গে তুই কী কাজ করছিলি ? তুই কী বাবার মতো কাজ করতে পারিস ?
বড্ড হাসবি না । আমি বাবাকে রাতের রান্নার সবজি কেটে দিচ্ছিলাম ।
তুই কী রান্না জানিস ?
জানি তো ! জানিস শীতল, আমি ভাত ও ডাল রান্না করতে পারি ।
কোনোদিন রান্না করেছিস ?
হ্যাঁ করেছি । গত রবিবারদিন বাবা জরুরি একটা কাজে ভরতপুর গিয়েছিল । যদিও বলে গিয়েছিল বাড়ি ফিরে রান্না করবে । কিন্তু আমি বাবার জন্য অপেক্ষা করিনি । বাবা ফেরার আগেই ভাত ও ডাল বানিয়েছিলাম । ভাতের মধ্যে আলু সেদ্ধ দিয়েছিলাম । বাবা খাবার খেয়ে খুব খুশী !
ডালে ঠিকমতো নুন দিয়েছিলি ?
বোকার মতো প্রশ্ন করিস না । তুই একটা হাঁদারাম !
হাঁদারাম বললি কেন ?
কেন হাঁদারাম বলবো না ! আমি ডাল রান্না করে বাবাকে খাওয়ালাম, অথচ প্রশংসা দূরে থাক একটা ধন্যবাদ দিলি না !
এবার বুঝেছি !
কী বুঝেছিস ?
তোর অভিমান হয়েছে !
আমি অভিমান শব্দের অর্থ বুঝি না । কঠিন কঠিন শব্দ দিয়ে কথা বলবি না । আমি গরীব মানুষ । বাবা স্কুলে পড়াচ্ছে, কিন্তু বাড়িতে মাস্টার রেখে পড়াতে পারছে না । শুধুমাত্র ক্লাসের মাস্টার মশাইদের পড়াগুলি ঠিকমতো করি । সুতরাং অতো কঠিন শব্দ এখনও শিখিনি, বুঝলি !
তারপর বাড়ির দোরগড়ায় পৌঁছে কুহেলি শীতলকে বলল, “আমি এসে গেছি । সুতরাং তুই এখন বাড়িতে ফিরে যা ।“
আজ স্কুল যাবি তো ?
এখনও বুঝতে পারছি না । বাবা এখনও বাড়ি ফেরেনি । সুতরাং বাবা বাড়িতে না ফিরলে স্কুলে যাওয়া হবে কিনা সন্দেহ !
হঠাৎ শীতল পেছন দিকে তাকিয়ে দেখে কুহেলির বাবা বাড়ির দিকে ধেয়ে আসছেন । তখন কুহেলিকে শীতল বলল, তোর বাবা বাড়ির দিকে হন্তদন্ত হয়ে ফিরছেন । এবার নিশ্চয় তোর স্কুলে যাওয়ার সমস্যা নেই ।
এক গাল হাসি দিয়ে কুহেলি বলল, “অবশ্যই স্কুলে যাচ্ছি । তখন দেখা হবে ।“
তারপর শীতলের দিকে তাকিয়ে ‘টা টা’ দিয়ে বাবার দিকে ছুটলো কুহেলি । বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “তুমি যাওয়ার সময় বলে যাওনি ? তাই আমি তোমাকে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজেছি ।“
আমার অন্যায় হয়ে গেছে মা । আর আমার ভুল হবে না । এরপর যেখানেই যাই না কেন, তোমাকে অবশ্যই বলে যাবো ।“
কথা দিচ্ছ !
“হ্যাঁ দিচ্ছি ।“ তারপর বাপ-বেটির কী হাসি ।
(চলবে)

Share This