সূচনা—-
ভারতীয় উপমহাদেশের একজন সাম্যবাদী, বিপ্লবী অবনী মুখোপাধ্যায় এক উল্লেখযোগ্য নাম। ১৯২০ সালে ১৭ অক্টোবর তাসখন্ডে ৮ জন সদস্যকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা হলো কমিউনিস্ট পার্টি যার অন্যতম সদস্য অবনীনাথ ও তার পত্নী রোজা ফিটিংগফ। অবনীনাথ মুখোপাধ্যায় অল্প বয়েসেই প্রবীন কমিউনিস্ট ব্যক্তিত্ব সখারাম গনেশ দেউস্করের সান্নিধ্য পেয়েছিলেন। অবনীর পিতা রাজনীতি থেকে তাকে দূরে রাখার চেষ্টা করেন। দূরে পাঠাতে তাকে আমেদাবাদের টেক্সটাইল ট্রেনিং ইন্সটিটিউট এ পড়তে পাঠান। ১৯১৪ সালে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় মহান বিপ্লবী বাঘা যতীনের। অবনীনাথ তারই পরামর্শে চাকরি নিয়ে জাপান যাত্রা করেন জাপানে ও অন্যান্য এশীয় দেশের সশস্ত্র বিপ্লবীদের সাথে যোগাযোগের উদ্দেশ্যে।
জন্ম—
অবনীনাথ মুখোপাধ্যায় মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুর শহরে ৩ জুন ১৮৯১ জন্মগ্রহণ করেন। তার আদি নিবাস বাংলাদেশের খুলনায়র বাবুলিয়া গ্রামে। পিতার নাম ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়। স্কুলের পাঠ শেষে তিনি কলকাতায় উইভিং টেকনোলজি শেখেন।
ব্যক্তিগত জীবন —-
তিনি বিয়ে করেন ১৯২০ সালে। বলশেভিক তরুণী রোজা ফিটিংগফের সাথে তার বিবাহ হয় ১৯২০ সালে। কমিউনিস্ট বিপ্লবী ও গবেষক চিন্মোহন সেহানবীশের সাথে মস্কোয় রোজার সাক্ষাত হয়। জানা যায় অবনীর পুত্র গোরা ঐতিহাসিক স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধে শহীদ হন ১৯৪০ সালে। মেয়ে মায়া ছিলেন যক্ষারোগ বিশেষজ্ঞা।
কর্ম জীবন—
ছাত্রাবস্থায় কলকাতাতেই তিনি গণেশ দেউস্কর ও বিপিন পালের দ্বারা প্রভাবিত হন। উইভিং শেখার পর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতার বঙ্গলক্ষ্মী কটন মিলের অ্যাসিস্ট্যান্ট উইভিং মাস্টার হয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। কিন্তু উচ্চতর শিক্ষার জন্য জাপান ও জার্মানি যান। ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে উচ্চতর শিক্ষাপ্রাপ্ত হয়ে দেশে ফিরে অ্যান্ডু ইউল কোম্পানিতে চাকরি নেন ও কিছুকাল পরে বৃন্দাবনের প্রেম মহাবিদ্যালয়ে উপাধ্যক্ষ হিসাবে যোগদান করেন।
বৈপ্লবিক জীবন—
কুখ্যাত কার্লাইল ফতোয়া জারি করে ব্রিটিশ সরকার ছাত্র আন্দোলন নিষিদ্ধ করলে ১৯০৫ সালে তার বিরুদ্ধে কিশোর অবনী একটি জনসভায় যোগ দেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে শাস্তি প্রদান করলে তিনি স্কুল থেকে পালিয়ে জামালপুরের রেল শ্রমিক ধর্মঘটে সামিল হন। অল্প বয়েসেই সান্নিধ্য পেয়েছিলেন প্রবীণ জাতীয়তাবাদী ব্যক্তিত্ব সখারাম গনেশ দেউস্করের। অবনীনাথ মুখোপাধ্যায়, গদর বিপ্লবী ভগবান সিং ও রাসবিহারী অস্থায়ী বিপ্লব কমিটি গঠন করেন। জার্মান দূতের সাথে দেখা করে ফেরার পথে বিপ্লবীদের নাম ঠিকানাসহ নোটবই নিয়ে ধরা পড়েন পেনাং পুলিশের হাতে অবনীনাথ। ১৯১৭ সালে সিঙ্গাপুরে তাকে বন্দি করে রাখা হয়। কয়েকজন জার্মান যুদ্ধবন্দীর সাথে অবনীনাথ দু:সাহসীক ভাবে পলায়ন করেন। সেখান থেকে সুমাত্রায় এক রবার বাগিচায় কাজ নেন ও গোপনে যোগাযোগ করেন ইন্দোনেশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির সাথে। মানবেন্দ্রনাথ রায়ের মতে সেখানেই তিনি রুশ বিপ্লবের কথা জানতে পারেন ও কমিউনিজমে আকৃষ্ট হন। পরে জাল ছাড়পত্রের সাহায্যে শাহির ছদ্মনামে অবনীনাথ এরপর চলে যান হল্যান্ড ও জার্মানি।
হিন্দুস্থান শ্রমিক ও কৃষক পার্টির প্রতিষ্ঠা—
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকা সত্বেও ১৯২২ এর শেষে তিনি ভারতে ফেরেন। ভারত ত্যাগের পূর্বে মাদ্রাজে হিন্দুস্থান শ্রমিক ও কৃষক পার্টির প্রতিষ্ঠা করে যান ১৯২৪ এর ২রা মার্চ।
গবেষনা ও রচনা—
মস্কোতে এম এন রায়ের সাথে মিলিতভাবে ‘ইন্ডিয়া ইন ট্রানজিশন’ বইটি রচনা করেন। মোপলা বিদ্রোহ সম্বন্ধে অবনী একটি পুস্তিকা লেখেন যা লেনিনের ব্যক্তিগত গ্রন্থাগারে পাওয়া গেছে। এছাড়া ১৯২৩ সালে তিনি ‘গরীবের কথা’ একটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন।
সম্মাননা—-
১৯৮৬ সালে সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির সর্বোচ্চ নেতৃত্ব অবনী মুখোপাধ্যায়কে মরণোত্তর সন্মানে পুনর্বাসিত করেন
মৃত্যু—-
তাঁর মৃত্যু রহস্যাবৃত। সন্দেহ করা হয় বুখারিনের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল এই অভিযোগে রাশিয়ান গোয়েন্দা দপ্তরের নির্দেশে তার মৃত্যুদণ্ড হয়।
।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।