Categories
কবিতা

পুরুষের অতীত : রাণু সরকার।

এই যেপুরুষ, তোমায় একটা কথা বলবো?

কী কথা বলবে, বলো তাড়াতাড়ি-
আমার অনেক কাজ আছে বর্তমানে,
যত তাড়াতাড়ি পারি শেষ করতে চাই।

আচ্ছা বলতো পুরুষ-
তোমার কী অতীত আছে?

হ্যাঁ, আছে বইকি, আছে তো-
আমার অতীত তো থাকে কর্মস্থলে।
কেনো বলো তো ?

কেনোর মানে খুঁজতে লাগবে অনেক সময়।

যখন আমি অবসরপ্রাপ্ত হবো
তখন তাকে আনবো ভেবেছি-
সে আমার অপেক্ষায় আছে-
সবসময় থাকবে বলেছে-
নিশ্চিন্তে তাকে নিয়ে ভেবে ভেবে
শেষ জীবনটা কাটিয়ে দেবো।

এখন অতীত নিয়ে যদি ব্যস্ত থাকি
বর্তমান হারিয়ে যাবে তাকে আর খুঁজে
পাবো না-
আর এই বর্তমানটাও তখন অতীত হবে
বুঝতে পেরেছো, নারী?

তখন তুমিই সাতপাঁচ কথা শোনাবে-
অতীতকে নিয়ে থাকলে-
তুমি তখন বলবে- আমাদের কী পেট ভরাবে অতীত?
বর্তমান নিয়ে ভাবো-
তাই বর্তমানের সাথে এখন জড়িয়ে আছি।

Share This
Categories
কবিতা

ইশারা : রাণু সরকার।

তুমি ইশারা করে কি
যে বলো-ধুত্ ছাই-
তোমার ইশারার কথা
আমি বুঝি না-
তবে বোঝার চেষ্টা করি,

ইশারায় কি জানি কি বলো
বুঝতেই পারি না,
কেনো ইশারায় ডাকো?
আমি তো একদিন বলেছি
তোমার হয়তো মনে নেই
বেশি দূরে যাই না-
যেতেও পারিনা-
ভয় পাই তুমি তো জানো!

যদি ফিরে আসতে না পারি,
হাত ধরে খাদের কিনারায়
যদি নিয়ে যায়!
মনটা যদি পিছলে খাদে
পড়ে যায়-

আমি বলেছি তো বেশি
দূরে যাই না,
কাছে পিঠেই থাকি,
হাত দু’টি প্রসারিত করে
উচ্চস্বরে ডাক দিয়েই দেখো না-

এক ছুটে চলে আসবো
তোমার বুকে!
মনে কষ্ট পেওনা বুঝিনা বলে-
বলেছি তো–
তবে বোঝার চেষ্টা করি,
কিন্তু বেশি দূরে আমি যাই না!

Share This
Categories
প্রবন্ধ

অবনী মুখোপাধ্যায় : ভারতীয় উপমহাদেশের একজন সাম্যবাদী, বিপ্লবী।

সূচনা—-

ভারতীয় উপমহাদেশের একজন সাম্যবাদী, বিপ্লবী অবনী মুখোপাধ্যায় এক উল্লেখযোগ্য নাম। ১৯২০ সালে ১৭ অক্টোবর তাসখন্ডে ৮ জন সদস্যকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা হলো কমিউনিস্ট পার্টি যার অন্যতম সদস্য অবনীনাথ ও তার পত্নী রোজা ফিটিংগফ। অবনীনাথ মুখোপাধ্যায় অল্প বয়েসেই প্রবীন কমিউনিস্ট ব্যক্তিত্ব সখারাম গনেশ দেউস্করের সান্নিধ্য পেয়েছিলেন। অবনীর পিতা রাজনীতি থেকে তাকে দূরে রাখার চেষ্টা করেন। দূরে পাঠাতে তাকে আমেদাবাদের টেক্সটাইল ট্রেনিং ইন্সটিটিউট এ পড়তে পাঠান। ১৯১৪ সালে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় মহান বিপ্লবী বাঘা যতীনের। অবনীনাথ তারই পরামর্শে চাকরি নিয়ে জাপান যাত্রা করেন জাপানে ও অন্যান্য এশীয় দেশের সশস্ত্র বিপ্লবীদের সাথে যোগাযোগের উদ্দেশ্যে।

 

জন্ম—

অবনীনাথ মুখোপাধ্যায় মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুর শহরে ৩ জুন ১৮৯১ জন্মগ্রহণ করেন। তার আদি নিবাস বাংলাদেশের খুলনায়র বাবুলিয়া গ্রামে। পিতার নাম ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়। স্কুলের পাঠ শেষে তিনি কলকাতায় উইভিং টেকনোলজি শেখেন।

 

ব্যক্তিগত জীবন —-

 

তিনি বিয়ে করেন ১৯২০ সালে।  বলশেভিক তরুণী রোজা ফিটিংগফের সাথে তার বিবাহ হয় ১৯২০ সালে। কমিউনিস্ট বিপ্লবী ও গবেষক চিন্মোহন সেহানবীশের সাথে মস্কোয় রোজার সাক্ষাত হয়। জানা যায় অবনীর পুত্র গোরা ঐতিহাসিক স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধে শহীদ হন ১৯৪০ সালে। মেয়ে মায়া ছিলেন যক্ষারোগ বিশেষজ্ঞা।

 

কর্ম জীবন—

 

ছাত্রাবস্থায় কলকাতাতেই তিনি গণেশ দেউস্কর ও বিপিন পালের দ্বারা প্রভাবিত হন। উইভিং শেখার পর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতার বঙ্গলক্ষ্মী কটন মিলের অ্যাসিস্ট্যান্ট উইভিং মাস্টার হয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। কিন্তু উচ্চতর শিক্ষার জন্য জাপান ও জার্মানি যান। ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে উচ্চতর শিক্ষাপ্রাপ্ত হয়ে দেশে ফিরে অ্যান্ডু ইউল কোম্পানিতে চাকরি নেন ও কিছুকাল পরে বৃন্দাবনের প্রেম মহাবিদ্যালয়ে উপাধ্যক্ষ হিসাবে যোগদান করেন।

 

বৈপ্লবিক জীবন—

কুখ্যাত কার্লাইল ফতোয়া জারি করে ব্রিটিশ সরকার ছাত্র আন্দোলন নিষিদ্ধ করলে ১৯০৫ সালে তার বিরুদ্ধে কিশোর অবনী একটি জনসভায় যোগ দেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে শাস্তি প্রদান করলে তিনি স্কুল থেকে পালিয়ে জামালপুরের রেল শ্রমিক ধর্মঘটে সামিল হন। অল্প বয়েসেই সান্নিধ্য পেয়েছিলেন প্রবীণ জাতীয়তাবাদী ব্যক্তিত্ব সখারাম গনেশ দেউস্করের। অবনীনাথ মুখোপাধ্যায়, গদর বিপ্লবী ভগবান সিং ও রাসবিহারী অস্থায়ী বিপ্লব কমিটি গঠন করেন। জার্মান দূতের সাথে দেখা করে ফেরার পথে বিপ্লবীদের নাম ঠিকানাসহ নোটবই নিয়ে ধরা পড়েন পেনাং পুলিশের হাতে অবনীনাথ। ১৯১৭ সালে সিঙ্গাপুরে তাকে বন্দি করে রাখা হয়। কয়েকজন জার্মান যুদ্ধবন্দীর সাথে অবনীনাথ দু:সাহসীক ভাবে পলায়ন করেন। সেখান থেকে সুমাত্রায় এক রবার বাগিচায় কাজ নেন ও গোপনে যোগাযোগ করেন ইন্দোনেশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির সাথে। মানবেন্দ্রনাথ রায়ের মতে সেখানেই তিনি রুশ বিপ্লবের কথা জানতে পারেন ও কমিউনিজমে আকৃষ্ট হন। পরে জাল ছাড়পত্রের সাহায্যে শাহির ছদ্মনামে অবনীনাথ এরপর চলে যান হল্যান্ড ও জার্মানি।

 

হিন্দুস্থান শ্রমিক ও কৃষক পার্টির প্রতিষ্ঠা—

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকা সত্বেও ১৯২২ এর শেষে তিনি ভারতে ফেরেন।  ভারত ত্যাগের পূর্বে মাদ্রাজে হিন্দুস্থান শ্রমিক ও কৃষক পার্টির প্রতিষ্ঠা করে যান ১৯২৪ এর ২রা মার্চ।

 

 গবেষনা ও রচনা—

মস্কোতে এম এন রায়ের সাথে মিলিতভাবে ‘ইন্ডিয়া ইন ট্রানজিশন’ বইটি রচনা করেন। মোপলা বিদ্রোহ সম্বন্ধে অবনী একটি পুস্তিকা লেখেন যা লেনিনের ব্যক্তিগত গ্রন্থাগারে পাওয়া গেছে। এছাড়া ১৯২৩ সালে তিনি ‘গরীবের কথা’ একটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন।

 

সম্মাননা—-

১৯৮৬ সালে সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির সর্বোচ্চ নেতৃত্ব অবনী মুখোপাধ্যায়কে মরণোত্তর সন্মানে পুনর্বাসিত করেন

 

 

মৃত্যু—-

তাঁর মৃত্যু রহস্যাবৃত। সন্দেহ করা হয় বুখারিনের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল এই অভিযোগে রাশিয়ান গোয়েন্দা দপ্তরের নির্দেশে তার মৃত্যুদণ্ড হয়।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
রিভিউ

আজ ৩ জুন, ইতিহাসের আজকের এই দিনে যা ঘটেছিল।

আজ ৩ জুন। ইতিহাস ঘেটে দেখা যায় বছরের প্রতিটি দিনে ঘটেছে অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। আসুন আজকের দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় একনজরে দেখে নিই।  ইতিহাসের আজকের এই দিনে কী কী ঘটেছিল, কে কে জন্ম নিয়েছিলেন ও মৃত্যুবরণ করেছিলেন——-

 

দিবস—–

 

(ক)  বিশ্ব সাইকেল দিবস।

 

আজ যাদের জন্মদিন—-

১৯৬০ – কার্ল রেকেম্যান, সাবেক অস্ট্রেলীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার।

১৯৬৬ – ওয়াসিম আকরাম, সাবেক পাকিস্তানি ক্রিকেট খেলোয়াড়।

১৯৬৮ – সাফ্রন, ইংরেজ গায়িকা।

১৯৮২ – ইয়েলেনা ইসিনবায়েভা, ভলগোগ্রাদে জন্মগ্রহণকারী রাশিয়ার বিখ্যাত প্রমিলা পোল ভল্টার।

১৯৮৫ – উকাশ পিশ্চেক, পোল্যান্ডের একজন পেশাদার ফুটবলার।

১৯৮৬ – রাফায়েল নাদাল, স্পেনের একজন পেশাদার টেনিস খেলোয়াড়।

১৯৯১ – উকাশ তেওদোর্চেক, পেশাদার ফুটবলার।

১৯৯২ – মারিও গোটজে, জার্মান ফুটবলার।

১৮৯১ – ভারতীয় বাঙালি বিপ্লবী ও কমিউনিস্ট নেতা অবনীনাথ মুখোপাধ্যায়।

১৯০৬ – জোসেফিন বেকার, আমেরিকান বংশদ্ভুত ফ্রেন্স নৃত্যশিল্পী, সঙ্গীত শিল্পী ও অভিনেত্রী।

১৯০৬ – ওয়াল্টার রবিন্স, ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ও ফুটবলার।

১৯১০ – পলেট গডার্ড, আমেরিকান অভিনেত্রী এবং মডেল।

১৯১১ – এলেন কর্বি, মার্কিন অভিনেত্রী।

১৯১৯ – ছায়া দেবী(চট্টোপাধ্যায়), প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্রাভিনেত্রী।

১৯২০ – অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসকার, বিশিষ্ট অধ্যাপক, গবেষক ও পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি’র ভূতপূর্ব সভাপতি।

১৯২৪ – করুণানিধি মুথুবেল, ভারতীয় রাজনীতিক এবং তামিলনাড়ুর সাবেক মুখ্যমন্ত্রী।

১৯২৫ – টনি কার্টিস, মার্কিন চলচ্চিত্র অভিনেতা।

১৯২৬ – অ্যালেন গিন্সবার্গ, মার্কিন কবি এবং লেখক।

১৯২৮ – জন রিচার্ড রিড, সাবেক নিউজিল্যান্ডীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার।

১৯৩১ – রাউল কাস্ত্রো, কিউবার রাষ্ট্রপতি এবং ফিদেল কাস্ত্রোর ভাই।

১৭২৩ – জিওভান্নি আন্তোনিও স্কোপোলি, তাইরলীয় চিকিৎসক ও প্রকৃতিবিদ।

 

ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনের ঘটনাবলী—-

 

২০০০ – মন্টেনিগ্রো কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণা।

২০১০ – রাজধানী ঢাকার নিমতলি মহল্লায় অগ্নিকাণ্ডে ১১৭ জনের মৃত্যু হয়।

১৯১৫ – ব্রিটিশ সরকার রবীন্দ্রনাথকে ‘নাইট’ উপাধিতে ভূষিত করে।

১৯৩৬ – অবিভক্ত ভারতের সিভিলিয়ান রেডিওর নাম পরিবর্তন করে অল ইন্ডিয়া রেডিও নামকরণ।

১৯৪০ –  (ক) ব্যাটল্‌ অব ডানকার্ক।

(খ)  – জার্মান বিমানবাহিনী ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের উপর বোমা বর্ষণ শুরু করে।

(গ) – সিঙ্গাপুর বৃটিশ শাসনের হাত থেকে স্বাধীনতা লাভ করে।

১৯৪৬ – ভারতের জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক নেতারা ব্রিটিশ সরকার প্রস্তাবিত ভারত বিভাজন প্রস্তাব মেনে নেন।

১৯৪৭ – বৃটিশ সরকার ভারত বিভাগের পরিকল্পনা প্রকাশ করেন।

১৯৪৯ – আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৬৯ – ভাষা বিজ্ঞানী অধ্যাপক মুহম্মদ আবদুল হাই ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত হন।

১৯৭১ – জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশে হানাদার বাহিনীর অত্যাচার মানব ইতিহাসের সর্বাধিক বিষাদময় ঘটনা।

১৯৭৮ – বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জিয়াউর রহমান বিজয় লাভ করে।

১৯৮৪ – ভারত সরকার শিখদের পবিত্র হরমন্দির সাহিব দখলের জন্য অপারেশন ব্লু স্টার শুরু করে; এটি ৮ জুন পর্যন্ত পরিচালিত হয়।

১৯৮৯ – চীন সরকার তিয়েনআনমেন স্কয়ার থেকে অবরোধকারীদের বিতারণের জন্য সেনা প্রেরণ করে।

১৯৯৯ – যুগোশ্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট স্লোভেদান মিলোশোভিচ কোসভো থেকে সৈন্য সরিয়ে নিতে সম্মত হয়।

১৭৮৯ – ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলায় লবণ উৎপাদন নিষিদ্ধ করে।

১৬৬৫ – ডিউক অব ইয়র্ক জেমস স্টুয়ার্ট ওলন্দাজ নৌ-রণতরীকে পরাজিত করেন।

১৬৬৫ – লোয়েস্টফটের যুদ্ধে ইংরেজদের কাছে ওলন্দাজদের পরাজয়।

১৫০২ – পর্তুগীজ নৌ অভিযাত্রী ভাস্কো-দা-গামা ভারতের কালিকট বন্দরে এক নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিলো।

১০৯৮ – খ্রিস্টানদের এন্টিয়ক দখল। ১৩ হাজার মুসলমানকে হত্যা।

 

এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন যারা—-

২০০১ – অ্যান্থনি কুইন, মার্কিন অভিনেতা।

২০১৪ – প্রবীণ সাংবাদিক বেনজীর আহমেদ।

২০১৫ – সত্যজিৎ রায়ের স্ত্রী বিজয়া রায়।

২০১৬ – মোহাম্মদ আলী, মার্কিন বক্সার।

২০২০ – বলিউডের বিশিষ্ট গীতিকার আনোয়ার সাগর।

১৯০৮ – গোপাল সেনগুপ্ত, বাঙালি, ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের শহীদ বিপ্লবী।

১৯২৪ – ফ্রান্‌ৎস কাফকা, জার্মান ও চেক উপন্যাস ও ছোটগল্প লেখক।

১৯৬১ – কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি কৃষিবিজ্ঞানী,শিক্ষাবিদ ও লেখক।

১৯৬৩ – (ক)  নাজিম হিকমত, তুর্কি কবি এবং লেখক।

(খ) – ধর্মগুরু ত্রয়োদশ পোপ জনের মৃত্যু।

১৯৬৯ – মুহম্মদ আবদুল হাই, বাংলা ভাষার ধ্বনিবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক।

১৯৭৭ – আর্চিবাল্ড ভি. হিল, ইংরেজ শারীরতত্ত্ববিদ।

১৯৭৫ – এইসাকু সাতো, জাপানী রাজনীতিবিদ।

১৯৮৪ – ঐতিহাসিক আবু মহামেদ।

১৯৮৭ – রুহুল্লাহ্‌ খামেনেই, ইরানি ধর্মীয় নেতা ও রাজনীতিবিদ।

১৯৯০ – রবার্ট নয়েস, আমেরিকান পদার্থবিজ্ঞানী এবং ইন্টেল কর্পোরেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা।

১৬৫৭ – উইলিয়াম হার্ভে, ইংরেজ চিকিৎসক।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

পানিহাটির চিঁড়া-দধি মহোৎসবের প্রচলনে শ্রীল রামদাস বাবাজী মহাশয়ের অবদান : রাধাবিনোদিনী বিন্তি বণিক।

এই বৎসর পানিহাটির প্রসিদ্ধ চিঁড়া-দধি মহোৎসব অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ২রা জুন। বৈষ্ণব ইতিহাসের পরম ঐতিহ্যবাহী ‘দণ্ডোমহোৎসব’-কে স্মরণ করতে এ উৎসবের প্রচলনে বরানগর পাঠবাড়ির রামদাস বাবাজী মহাশয়ের অবদান অনস্বীকার্য। কি ভাবে ?

আসুন জেনে নেওয়া যাক , সেই মহোৎসবের আকর্ষণীয় ইতিহাস আর সেই ইতিহাস শ্রদ্ধা-স্মরণে রামদাস বাবাজী মহাশয়ের প্রচেষ্টার কথা।

নবদ্বীপ সমাজবাড়ির বড়বাবা তথা শ্রীল রাধারমণচরণ দাসদেব তাঁর প্রিয় শিষ্য বরানগর পাঠবাড়ির রামদাস বাবাজীকে আদেশ দিয়েছিলেন নতুন মঠ-মন্দির স্থাপন নয়, বরং লুপ্ত বৈষ্ণব তীর্থগুলি উদ্ধার করার দিকে বেশী মনোনিবেশ করতে হবে। অর্থাৎ, যে যে স্থানে আমাদের অন্তরের আপনার জন শ্রীশ্রীনিত্যানন্দ-গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু এবং তাঁদের পার্ষদরা লীলা করেছেন সেই সকল মহিমান্বিত স্থানগুলির প্রাচীন ইতিহাসকে লোকমননে স্মরণ করিয়ে দেওয়া , লোকচক্ষুর সম্মুখে আনা তথা কালের গর্ভে লুপ্তিকরণ হতে উদ্ধার করা।

আর , একজন যোগ্য শিষ্যের মতই রামদাস বাবাজী মহারাজ আজীবন সেই আদেশকে শিরোধার্য করে লুপ্ত বৈষ্ণব তীর্থ উদ্ধারে এবং জনমনন থেকে হারিয়ে যাওয়া লীলাগুলির ইতিহাস পুনঃ জাগরণে সদা সচেষ্ট থেকেছেন।

বর্তমান পানিহাটির গঙ্গাপাড়ে দণ্ডমহোৎসব তলায় প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ শুক্লা ত্রয়োদশী তিথিতে আমরা যে ‘চিড়াদধি মহোৎসব’ উপলক্ষে প্রায় চার-পাঁচ লক্ষ ভক্তসমাগম দেখি, তার হোতা কিন্তু রামদাস বাবাজী মহারাজ-ই। পরম দয়াল শ্রীনিত্যানন্দের এক ঐতিহাসিক লীলা যা প্রায় পাঁচশো বছরেরও বেশি সময় আগে অনুষ্ঠিত হয়েছিল(১৫১৭খ্রিষ্টাব্দে) পানিহাটির শ্রীরাঘব ভবনের অদূরে এই গঙ্গাতীরে—সেই লীলার কথা কেবল গ্রন্থের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু, সেই লীলাকে স্মরণ করে আবারও একবার সেই স্থানে উপস্থিত হয়ে প্রণত হওয়া, অশ্রুভেজা আঁখিতে ভক্তপ্রাণ হৃদয়ে ভাববিহ্বল হওয়া—-এসবের অগ্রপথিক রামদাস বাবাজী মহারাজ। তিনি বেশ কয়েকজন অনুগত ভক্তজনাদের সাথে করে প্রতি বছর এই তিথিতে উপস্থিত হতেন পানিহাটিতে । তারপর চৈতন্য ভাগবত ,চৈতন্য চরিতামৃত গ্রন্থ থেকে পয়ার গেয়ে , তাতে আখর দিয়ে কীর্তন করে লীলা স্মরণ করতেন আর অশ্রুবন্যার প্লাবন আনতেন দণ্ডোমহোৎসব তলায় সেই ঐতিহ্যমণ্ডিত সুপ্রাচীন বটবৃক্ষমূলে। প্রায় একশো বছর পূর্বে বাবাজী মহারাজ এমন সেবা শুরু করেন। ক্রমে ক্রমে প্রতি বৎসর পালিত হওয়া সেই প্রথা আজকের সুবৃহৎ চিঁড়াদধি মেলার রূপ নেয়। যদিও করোনা পরিস্থিতির কারণে বিগত দু’বছর ভক্তসমাগম বন্ধ ছিল । তবে, শ্রীপাঠবাড়ি আশ্রম থেকে প্রাণের আয়োজন অব্যাহত ছিল । বাবাজী মহারাজ চিত্রপটে গমন করেছেন সেস্থানে আর তাঁদের সংকীর্তনের ধারাও অক্ষুণ্ন ছিল । এবছর ভক্তদের আনন্দের অবধি নেই। করোনা যদিও পুরোপুরি যায়নি , কখন আবার রক্তচক্ষু নিয়ে দৃষ্টি দেবে ঠিক নেই , তবু প্রকোপ যখন কম , তখন উৎসবে ভক্তির আনন্দের অংশীদার তো হতেই হয় !

আসুন এবার দণ্ডমহোৎসবের ইতিহাস কী জানা যাক।

দণ্ড অর্থাৎ শাস্তি। শাস্তি যখন মহৎ কারণে হয় ,মহা লাভ ঘটায় ,তখন তাতে মহোৎসব করাই যায় ,এটা না হয় বোঝা গেল। কিন্তু ,কেন শাস্তি ?

১৫১৪ খ্রীষ্টাব্দে যখন পুরীধাম থেকে সন্ন্যাসী মহাপ্রভু গৌড়ে আসেন ,তখন পানিহাটির এই ঘাটে নেমে রাঘব পণ্ডিতের ভবনে ওঠেন। আবার ১৫১৭খ্রীষ্টাব্দে মহাপ্রভুর নির্দেশে নিত্যানন্দ যখন পুরীধাম থেকে বঙ্গে চলে আসেন , তখন তিনিও এই রাঘব পণ্ডিতের কাছেই ওঠেন তাঁর সকল পার্ষদদের নিয়ে। আর ,মূলতঃ নিত্যানন্দের এই আসাতেই পানিহাটির মহোৎসবের ইতিহাস লুকিয়ে আছে।
হুগলী জেলার সেসময় সমৃদ্ধপূর্ণ গ্রাম সপ্তগ্রাম। এখানকার জমিদার হিরণ্য দাস আর গোবর্দ্ধন দাস–দুই ভাই। তাঁদের একমাত্র উত্তরাধিকারী হলেন রঘুনাথ দাস। রঘুনাথের হৃদয়ে ছিল তীব্র গৌরপ্রীতি । তাঁর মন সংসারে নেই। সংসার ত্যাগ করে শ্রীক্ষেত্রে গৌরাঙ্গের কাছে চলে যাবেন বলে , তিনি কতবার কত প্রচেষ্টা করেছেন।‌কিন্তু ,বাবা-জ্যাঠার প্রখর নজরদারিতে প্রতিবারই অসফল হয়েছেন। একদিন শুনলেন গৌরাঙ্গের একান্ত নিজজন নিত্যানন্দ আসছেন পানিহাটিতে। অনেক অনুনয় বিনয় করে বাবা-জ্যাঠাকে রাজী করিয়ে দর্শন করতে এলেন নিত্যানন্দকে।
নিত্যানন্দ গঙ্গাতীরে বটগাছের তলায় পিণ্ডার ওপর বসে আছেন। চারপাশে তাঁকে ঘিরে প্রায় হাজার ভক্ত দাঁড়িয়ে ,বসে। নিত্যানন্দের প্রতিপত্তি দেখে রঘুনাথ বিস্মিত। তিনি দণ্ডবৎ প্রণাম জানালেন।জমিদার পুত্রকে দেখিয়ে একজন পরিচয় দিলেন নিত্যানন্দের কাছে। নিত্যানন্দ বললেন, ” আয় ,আয় ,চোরা। এদিকে আয় । ওহ্,তুমি আমায় না বলে গৌরকে পেতে চেয়েছিলে ! তুমি জানো না ,আমি না দিলে গৌরকে পাওয়া যায় না ! গৌরাঙ্গ আমার সম্পদ। না জানিয়ে সম্পদ নিলে চুরি করা হয়। তুমি চুরি করতে চেয়েছ।তাই, তোমায় আজ দণ্ড দেব।” রঘুনাথ বললেন, ” দণ্ড পেয়ে যদি গৌরচরণ পাওয়া যায় ,তবে তাতেই আমি রাজি। দণ্ড দিয়ে আমায় গৌরাঙ্গকে দিন। বলুন ,কী শাস্তি আমার । আমি মাথা পেতে নেব, যে কোন প্রকার শাস্তি।” নিত্যানন্দ বললেন,”এখানে মহোৎসব হবে ।সকলকে চিড়ে, দই , ফল আহার করাবে তুমি। সকল খরচ তোমায় বহন করতে হবে মহোৎসবের।” মহাখুশি রঘুনাথ আয়োজন করলেন সবকিছুর।
সেই মহোৎসবে জাতপাতের সকল বিভেদ ভুলে একসাথে ছত্রিশ জাতির প্রায় হাজারজন মানুষ বসে প্রসাদ পেলেন,যা আজ থেকে প্রায় পাঁচশো বছর আগে এক অসম্ভব, অভাবনীয় ,অবাস্তব ব্যাপার ছিল । নিত্যানন্দের মানবমুখী , সাম্যবাদী নীতির এ এক দারুণ দৃষ্টান্ত। সারাদিন মহাসংকীর্তন ধ্বনিতে আকাশে বাতাসে মহামিলনের মহাকল্লোল উঠল। জাতিদ্বন্ধ ভুলে মানুষ আবেগের অশ্রুতে ভেসে একে অপরকে কোলাকুলি করলেন । চারিদিকে সৌভ্রাতৃত্বের সৌরভ। পদকর্তা বিস্মিত হয়ে তাইতো লিখলেন –“ব্রাক্ষ্মণে চণ্ডালে করে কোলাকুলি ,কবে বা ছিল এ রঙ্গ।”
নিত্যানন্দ অনেক কৃপা করলেন রঘুনাথকে। তিনি তাঁকে কাছে ডেকে তাঁর মাথায় নিজের চরণ স্পর্শ করিয়ে বললেন, “আজ তুমি যে পুলিন ভোজন করালে তাতে চৈতন্য মহাপ্রভু বড় প্রীত হয়েছেন তোমার প্রতি। তোমায় কৃপা করতেই তাঁর আগমন হয়েছিল এখানে। তিনি কৃপা করে চিঁড়া-দধি ভোজন করেছেন। কীর্তনে নৃত্য দর্শন করে রাত্রে প্রসাদ ভক্ষণও করেছেন। নিজে এসে তোমায় উদ্ধার করে গেছেন গৌরহরি। তোমার যত বিঘ্ন সবের বিনাশ হয়ে গেছে। তোমায় তিনি অন্তরঙ্গ ভক্ত করে নিজের কাছে রাখবেন। স্বরূপ দামোদরের কাছে তোমায় সমর্পণ করবেন। নিশ্চিন্তে থেকো, তুমি খুব শীঘ্রই তাঁর চরণ পাবে।”

এরপরই রঘুনাথের সংসারের বন্ধন মোচন হয়। তিনি শ্রীক্ষেত্রে মহাপ্রভুর কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হন। মহাপ্রভু রঘুনাথকে কাছে টেনে নিলেন‌।
এই ঘটনা এই সত্যই প্রতিস্থাপিত করে যে ,গৌরাঙ্গের কৃপা নিতাইমূলা। অর্থাৎ, নিত্যানন্দ কৃপা না করলে মহাপ্রভু কৃপা করেন না। তাই সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিতাই কৃপা পাবার জন্য ,নিজেদের সকল অপরাধের মোচন করার জন্য ভক্তরা আজও চিঁড়ে-দই নিবেদন করেন নিতাই-নিমাই-এর কাছে। আজও এই তিথিতে সেখানে সপার্ষদ নিতাই-নিমাই প্রকট হন সেদিনের মত করে।
এই তিথিতে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দণ্ডমহোৎসব তলায় শুরু হয়ে যায় কমপক্ষে একশোটি ছাউনিতে কীর্তন । বরানগর পাঠবাড়ি আশ্রম, ভারত সেবা সঙ্ঘ, গৌড়ীয় মঠ, ইসকন,ভবা পাগলা সম্প্রদায় ,সদগুরু সম্প্রদায় ইত্যাদি নানা সংগঠন তাদের নিজের নিজের সুন্দর করে সাজানো আশ্রমমন্দির ছাউনিতে কীর্তন ,ভোগরাগ সম্পন্ন করেন। আর ,এদিনের ভোগে অবধারিত ভাবে যা নিবেদিত হয় তা হল চিড়ে,দই , মিষ্টি আর ফল। অন্নের সাথে অন্যান্য সুস্বাদু ব্যজ্ঞন কিন্তু নিবেদিত হয় না।

বাঙালির হিয়া অমিয় মথিয়া যে দুই ভাই নিতাই-নিমাই বিরাজ করছেন , তাঁদেরকে অন্তরের আঙিনায় আবার একবার প্রেমাভিষেক করাবার জন্য এই বিশেষ দিনে ভক্তদের যাবতীয় প্রচেষ্টা তাই দেখা যায়।

অন্তর ভরে প্রণাম জানাই সপার্ষদ নিত্যানন্দ ও গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুকে। প্রণাম জানাই রামদাস বাবাজী মহারাজকে। আপনাদের কৃপায় এ অধমার সকল অপরাধের মোচন হোক । ভক্তসেবায় যেন এ জীবন উৎসর্গ করতে পারি—এ প্রার্থনা জানালাম।

——-সেবা অভিলাষিণী
ভক্তকৃপা প্রার্থিনী
জীবাধমা
রাধাবিনোদিনী বিন্তি বণিক‌।

Share This