ক্রিকেট ভালোবাসেনা এমন একজন ভারতীয় খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আমাদের দেশের মানুষ ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ। এখানে ফুটবল যতটা না জনপ্রিয় তার চেয়ে কয়েকগুন বেশী জনপ্রিয় ক্রিকেট। যখন দেশের খেলা থাকে মানুষ ভুলে যায় নাওয়া খাওয়া। আর যারা ক্রিকেট ভালবাসেন তাদের কাছে সৌরভ গাঙ্গুলী এক অতি পরিচিত, জনপ্রিয় ও আবেগের নাম। সকলের প্রিয় দাদা। শুধু ক্রিকেট ভক্তরা’ইবা কেন বলি, প্রতিটি ভারতবাসির কাছে তিনি এক অতিপরিচিত নাম। ভারতীয় ক্রিকেটের খোল নলচে পালটে দিয়ে ছিলেন তিনি। বলা চলে তার হাত ধরে ভারতীয় ক্রিকেটের আধুনিকতায় পৌঁছনর প্রথম ধাপ শুরু হয়ে যায়। চোখে চোখ রেখে কথা বলা, আগুনে আগ্রাসি মনোভাবের সঞ্চার ঘটিয়ে ছিলেন তিনি। সেই আমাদের সকলের প্রিয় সৌরভ ওরফে দাদা র আজ জন্মদিন। এই বিশেষ দিনে তার জীবনের কিছু কথা তুলে ধরলাম।
সৌরভ চণ্ডীদাস গাঙ্গুলী ( জন্ম ৮ জুলাই ১৯৭২), দাদা নামেও তিনি পরিচিত (অর্থাৎ “বড় ভাই” বাংলায়), এবং একজন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার। তাকে ভারতীয় ক্রিকেটের মহারাজা বলা হয়। তিনি ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছিলেন এবং ভারতের অন্যতম সফল ক্রিকেট অধিনায়ক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। অধিনায়ক হিসেবে, তিনি ভারতীয় জাতীয় দলকে ২০০৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে নিয়ে যান।
সৌরভ গাঙ্গুলী ৮ জুলাই ১৯৭২-এ কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন এবং তিনি চণ্ডীদাস এবং নিরূপা গাঙ্গুলীর কনিষ্ঠ পুত্র। চণ্ডীদাস একটি সমৃদ্ধ প্রিন্ট ব্যবসা চালাতেন এবং শহরের অন্যতম ধনী ব্যক্তি ছিলেন। গাঙ্গুলির একটি বিলাসবহুল শৈশব ছিল এবং তার ডাকনাম ছিল ‘মহারাজা’, যার অর্থ মহান রাজা। গাঙ্গুলির বাবা চণ্ডীদাস গাঙ্গুলি দীর্ঘ অসুস্থতার পর ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে ৭৩ বছর বয়সে মারা যান।
যেহেতু কলকাতার মানুষের প্রিয় খেলা ছিল ফুটবল, তাই গাঙ্গুলি প্রথমে এই খেলার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। নিরূপা গাঙ্গুলি ক্রিকেট বা অন্য কোন খেলাকে ক্যারিয়ার হিসাবে গ্রহণ করার পক্ষে খুব বেশি সমর্থন করেননি। ততক্ষণে, তার বড় ভাই স্নেহাশীষ বাংলা ক্রিকেট দলের একজন প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেটার ছিলেন। তিনি গাঙ্গুলির একজন ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নকে সমর্থন করেছিলেন এবং গাঙ্গুলিকে একটি ক্রিকেট কোচিং ক্যাম্পে নাম লেখাতে বলেছিলেন।
গাঙ্গুলী তখন দশম শ্রেণীতে পড়ছিলেন।
ডানহাতি হওয়া সত্ত্বেও, গাঙ্গুলি বাঁ-হাতি ব্যাট করতে শিখেছিল যাতে তিনি তার ভাইয়ের খেলার সরঞ্জাম ব্যবহার করতে পারেন। ব্যাটসম্যান হিসেবে কিছু প্রতিশ্রুতি দেখানোর পর তিনি একটি ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি হন। তাদের বাড়িতে একটি ইনডোর মাল্টি-জিম এবং কংক্রিটের উইকেট তৈরি করা হয়েছিল, যাতে তিনি এবং স্নেহাশিশ খেলাটি অনুশীলন করতে পারেন। তারা বেশ কিছু পুরানো ক্রিকেট ম্যাচের ভিডিও দেখতেন, বিশেষ করে ডেভিড গাওয়ারের খেলা, যাকে গাঙ্গুলি প্রশংসিত করেছিল। উড়িষ্যা অনূর্ধ্ব-১৫ দলের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করার পর, তাকে সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলের ক্রিকেট দলের অধিনায়ক করা হয়, যেখানে তার বেশ কয়েকজন সতীর্থ তার অহংকার বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন। তার প্লেম্যানশিপ তাকে ১৯৮৯ সালে বাংলার হয়ে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে আত্মপ্রকাশ করার সুযোগ দেয়, যে বছর তার ভাইকে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।
তিনি ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যশিল্পী ডোনা গাঙ্গুলীকে বিয়ে করেছেন, তার একটি কন্যা সানা (জন্ম ২০০১) রয়েছে।
সৌরভ গাঙ্গুলি তার ওডিআই ক্যারিয়ারে ১১৩৬৩ রান করেছেন যা ওয়ানডে ম্যাচে সবচেয়ে বেশি রান করার জন্য বিশ্বের নবম অবস্থানে রয়েছে। শচীন টেন্ডুলকার এবং ইনজামাম উল হকের পর তিনি তৃতীয় ব্যাটসম্যান যিনি একদিনের ক্রিকেটে ১০০০০ রান পূর্ণ করেছিলেন। ওডিআই ক্রিকেট বিশ্বকাপে একজন ভারতীয় ব্যাটসম্যানের এক ইনিংসে সর্বোচ্চ স্কোর (১৮৩) করার রেকর্ড তার দখলে। ২০০২ সালে, উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমানাক তাকে সর্বকালের ষষ্ঠ সর্বশ্রেষ্ঠ ওডিআই ব্যাটসম্যান হিসেবে স্থান দেয়। তিনি ২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে এবং ২০১২ সালে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন।
গাঙ্গুলি ২০০৪ সালে চতুর্থ সর্বোচ্চ ভারতীয় বেসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রীতে ভূষিত হন। তিনি ২০১৯ সালে বোর্ড অফ কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ার সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি আইপিএল স্পট ফিক্সিং এবং বেটিং কেলেঙ্কারির তদন্তের জন্য ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত তদন্ত প্যানেলেরও একজন অংশ।
।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া।।