Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

কেন পালিত হয় আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার দিবস, দিনটির পালনের গুরুত্ব কি?

ভূমিকা—

আজ আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার দিবস। এটি আন্তর্জাতিক অপরাধ বিচার দিবস বা আন্তর্জাতিক বিচার দিবস হিসাবেও পালন করা হয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক অপরাধ বিচারের উদীয়মান ব্যবস্থাকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে ১৭ জুলাই সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার দিবস পালিত হয়। ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গঠনের চুক্তি গ্রহণের তারিখকে স্মরণ করে রাখার জন্য এই দিনটিকে গ্রহণ করা হয়।  তাই আজ মানবতাবিরোধী অপরাধসহ যেকোনো ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং সকলের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে  দেশে দেশে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার দিবস।

 

ইতিহাস—

 

আমরা জানি বিশ্বব্যাপী সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধগুলোর বিচার প্রক্রিয়া সুনিশ্চিত করতে বিশ্বের অনেক দেশেই বিচ্ছিন্নভাবে নানা রকমের আন্দোলন হয়েছে। তবে এ ধরনের বিচার প্রক্রিয়ার আন্তর্জাতিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা মোটেই সহজ ছিল না। এর ধারনা আর প্রেক্ষাপটটিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই আন্দোলনের রূপ নিয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত এ রকম একটি আদালত প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে।

১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের জেনোসাইড কনভেনশন স্বাক্ষরিত হয়। ফলে পরবর্তী সময়ে নুরেমবার্গ ও টোকিওতে সংঘটিত হওয়া অপরাধের বিচার কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়। এসব ঐতিহাসিক ঘটনা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ন্যায়বিচার পাবার গুরুত্ব বাড়িয়ে দেয়। গণমানুষের প্রত্যাশাকে আশার আলো দেখিয়ে দিতে সাহায্য করে।

এসব ঘটনা ও সাফল্য ‘রোম সংবিধি’ এর মতো চুক্তি প্রতিষ্ঠার পটভূমি তৈরি করতে সাহায্য করে। শুরুতে ১২০টি দেশ ভোটের মাধ্যমে ‘রোম সংবিধি’ অনুমোদন করে। প্রক্রিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ এই চুক্তির সঙ্গে একাত্ম হয়েছে। ।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ১৯৯৮ সালের এই দিনে নেদারল্যান্ডসের হেগে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১০ সালের ১ জুন উগান্ডার রাজধানী কাম্পালাতে অনুষ্ঠিত রোম বিধির রিভিউ কনফারেন্সে ১৭ জুলাই দিনটি আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয় জাতিসংঘ।

 

পালনের উদ্দেশ্য—-

 

অপরাধের বিচার করে বিশ্বজুড়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য পালিত হয় আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার দিবস।  অপরাধ সেটা যেখানেই হোক আর যে দেশেই হোক, মানুষ যেন বিচার প্রক্রিয়ার আশ্রয় নিতে পারে সেই ধারনাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পালন করা হয় আন্তর্জাতিক ন্যায় বিচার দিবস।

একটি স্বাধীন দেশের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হওয়া আবশ্যক। দেশের প্রতিটি মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়া তার নাগরিক অধিকার। এই ন্যায়বিচারের অধিকার নিশ্চিত করাই এই দিবস পালনের উদ্দেশ্য।

বিশ্বের নানা স্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধগুলোকে যেন বিচার প্রক্রিয়ায় সম্মুখীন করা যায়, সেজন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠা পাওয়া এই বিশেষ আদালতটির সদর দপ্তর নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে। তবে যে কোনো দেশেই এই আদালতের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারে।

 

পালনের গুরুত্ব—

 

আসলে ন্যায়বিচার একটি আপেক্ষিক বিষয়। দেশ, কাল হিসেবে ন্যায়বিচার ভিন্ন। এমনকি অনেক সময় বিচার করলেও তা কার্যকর করা যায় না। সেক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলা যায় না। ন্যায়বিচার হতে পারে জলের জন্য, শিক্ষার জন্য, সমঅধিকারের জন্য কিংবা অন্য যে কোনো বিষয়ে। এক্ষেত্রে প্লেটোর রিপাবলিক বইয়ের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। প্লেটো সেখানে বলেছেন সমাজ তৈরি হয় ন্যায়ের মধ্য দিয়ে। ঘরের মধ্যে, সমাজের মধ্যে ন্যায়বিচার হচ্ছে কিনা, ধনী দেশের সঙ্গে সম্পর্কে গরিবের ন্যায়বিচার হচ্ছে কিনা তা দেখতে হবে। সেই বিচারের মধ্য দিয়েই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পায়।

 

উপসংহার—

 

সর্বপরি বলা যায় ন্যায়বিচার ভাবনা টা কেবল মাত্র খাতায় কলমে সীমাবদ্ধ হলে চলবে না। একটি মনুষ প্রকৃত ন্যায়বিচার পাচ্ছে কিনা সেটাও পর্যবেক্ষণ করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় প্রকৃত ন্যায় বিচার পর্থীরা বঞ্চিত থেকে যায়। সমাজিক প্রভাব প্রতিপত্তি, অর্থবল এর প্রভাব খাটিয়ে অনেকেই নিজেদের দোষ ঢেকে দিতে সক্ষম হয়, যা কখনই কাম্য নয়। তাই ভাবতে হবে দৃশ্যমান বিচারের বাইরেও একটি বিচার আছে। সেখানে মৌলিক ন্যায়বিচার করতে পারছেন কিনা সেটি বিবেচনায় নিতে হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠের জন্য ন্যায়বিচার করা সম্ভব না হলে সিস্টেম বদলাতে হবে। যাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ন্যায়বিচার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত না হতে পরে। ন্যায়বিচার পাওয়া একটি মানুষের সমাজিক আধিকার। তাই প্রতি বছর, সারা বিশ্বের লোকেরা এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক অপরাধমূলক বিচার, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সমর্থনে বিভিন্ন ইভেন্টের আয়োজন করে থাকে এবং আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার দিবস পালন করে থাকে।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

 

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *