Categories
রিভিউ

আজ ৮ আগস্ট, ইতিহাসের আজকের এই দিনে যা ঘটেছিল।

আজ ৮ আগস্ট। ইতিহাস ঘেটে দেখা যায় বছরের প্রতিটি দিনে ঘটেছে অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। আসুন আজকের দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় একনজরে দেখে নিই।  ইতিহাসের আজকের এই দিনে কী কী ঘটেছিল, কে কে জন্ম নিয়েছিলেন ও মৃত্যুবরণ করেছিলেন——-

 

আজ যাদের জন্মদিন—-

১৯০১ – সাইক্লোট্রন উদ্ভাবনের জন্য সুপরিচিত আর্নেস্ট লরেন্স নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী।

১৯১০ – সিলভিয়া সিডনি, মার্কিন অভিনেত্রী।

১৯২৮ – বিলায়েত খাঁ ভারতের বিখ্যাত বাঙালি সেতার বাদক।

১৯৩০ – বেগম ফজিলাতুন্নেসা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্ত্রী ও বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাতা।

১৯৩১ – রজার পেনরোজ, ইংরেজ গাণিতিক-পদার্থবিজ্ঞানী।

১৯৩৭ – ডাস্টিন হফম্যান, মার্কিন অভিনেতা ও পরিচালক।

১৯৫১ – মুহাম্মাদ মুরসি, মিশরীয় প্রকৌশলী, শিক্ষায়তনিক ও রাজনীতিক, এবং মিশরের ৫ম রাষ্ট্রপতি।

১৯৮১ – রজার ফেদেরার, সুইস টেনিস খেলোয়াড়।

১৯৯০ – কেন উইলিয়ামসন, নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটার ও বর্তমান অধিনায়ক।

১৮৮৯ – জ্যাক রাইডার, অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট।

১৭৩২ – ইয়োহান ক্রিস্টফ আডেলুং, জার্মান ভাষাবিজ্ঞানী।

 

ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনের ঘটনাবলী—-

১৯০৬ – বিপিনচন্দ্র পালের সম্পাদনায় ইংরেজি দৈনিক ‘বন্দেমাতরম’ প্রথম প্রকাশিত হয়।

১৯৪৯ – ইকুয়েডরে প্রবল ভূ-কম্পনে দশ হাজার লোক মৃত্যুবরণ করে।

১৯৫৫ – জেনিভায় পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৭২টি দেশের ১২০০ বিজ্ঞানীর এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু হয়।

১৯৬৭ – দক্ষিণ এশীয় জাতিসমূহের সংস্থা আশিয়ান প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৮৮ – দক্ষিণ আফ্রিকা, কিউবা ও অ্যাঙ্গোলায় যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়।

১৮১০ – ঊর্দু কবি মির্জা গালিব নবাব ইলাহী বকসের কন্যা মারুফকে বিয়ে করেন।

১৮১৫ – নেপোলিয়ন বোনাপার্ট সেন্ট হেলেনের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন।

১৮৬৪ – জেনেভায় রেডক্রস গঠিত হয়।

১৮৬৪ – আন্তর্জাতিক রেডক্রস যুদ্ধকালে আক্রান্ত না হওয়ার অধিকার পায়।

১৭৯৬ – ৪৪ সদস্য নিয়ে বোস্টন আফ্রিকান সোসাইটি গঠিত হয়।

১৫৪৯ – ফ্রান্স ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।

১২২০ – সুইডেন লিহুলার যুদ্ধে এস্টানিয়ান উপজাতির কাছে পরাজিত হয়।

 

এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন যারা—-

২০০৯ – শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায় বিশিষ্ট বাঙালি গীতিকার।

২০২১ – বলিউডের ‘মন কি আওয়াজ প্রতীজ্ঞা’ খ্যাত ভারতীয় অভিনেতা অনুপম শ্যাম।

১৯৭৫ – প্রবাদপ্রতিম গীতিকার ও কবি প্রণব রায় (গীতিকার)।

১৯৭৭ – আচার্য ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায় খ্যাতনামা বাঙালি কণ্ঠশিল্পী, সুরকার ও সঙ্গীতপরিচালক।

১৮২৪ – ফ্রিড্‌রিশ আউগুস্ট ভোল্‌ফ, জার্মান ভাষাতাত্ত্বিক ও সমালোচক।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

পাঞ্জাব কেশরি লালা লাজপত রায় : ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে এক চিরস্মরণীয় নাম।

সূচনা— ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের অব্যর্থ পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে  পাঞ্জাব কেশরি লালা লাজপত রায় প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন।পাঞ্জাব কেশরি লালা লাজপত রায়  ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে।

 

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে লালা লাজপত রায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা ছাড়াও তিনি আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ছিলেন লাল-বাল-পাল-এর মধ্যে একজন। লাল – লালা লাজপত রায়,বাল – বাল গঙ্গাধর তিলক এবং পাল – বিপিন চন্দ্র পাল, এঁরা তিনজনই ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের চরমপন্থী দলের নেতা ছিলেন এবং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন।
লালা লাজপত রায়কে পাঞ্জাব কেশরি নামেও পরিচিত । তিনি পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক ও লক্ষী বিমা কম্পানী স্থাপন করেছিলেন। তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের চরম পন্থীদলের লাল-বাল-পালের অন্যতম নেতা।  .
জন্ম ও বংশ পরিচয়— .
লালা লাজপত রায় পাঞ্জাবে ১৮৬৫ সালের ২৮ শে জানুয়ারিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল রাধা কৃষ্ণান আজাদ। কিছু সময় কাল হরিয়ানার রহতাক এবং হিসাব শহরে তিনি ও কালতি করেছিলেন। সাথে তিনি লাল বাল পাল নামে বিখ্যাত ছিলেন। শৈশবকাল থেকেই তিনি দেশের জন্য নিজেকে নিযুক্ত করেছিলেন।
কর্ম জীবন—
তিনি কিছুসময়কাল হরিয়াণার রোহতক এবং হিসার শহরে উকালতি করেন। লালা লাজপত রায় হিন্দী ভাষায় মধ্যযুগীয় হিন্দুত্ববাদী রাজা শিবাজী ও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জীবনী রচনা করেন। ইংরেজি ও হিন্দিতে লিখেছিলেন বেশ কয়েকটি বই। মায়ের স্মৃতিতে  প্রতিষ্ঠা করেছিলেন হাসপাতাল।সাংবাদিক লালা লাজপত রায় নিয়মিত লিখতেন ‘দ্য ট্রিবিউন’ (The Tribune) পত্রিকায়।
লালা লাজপত রায় এর সমাজ সেবা—-
তিনি স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর সাথে আর্য সমাজকে পাঞ্জাবে জনপ্রিয় করে তোলেন। এছাড়া অনেক জায়গায় দুর্ভিক্ষের সময় শিবির স্থাপন করে অসহায় মানুষদের সেবা করেছেন।
স্বাধীনতা অন্দোলনে ভুমিকা—
তিনি ভারতে ও বিশেষকরে পাঞ্জাবে পাঞ্জবী ভাষাকে হটিয়ে হিন্দী ভাষা প্রতিস্হাপনের ক্ষেত্রেও সহযোগীতা করেছিলেন। তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলের অন্যতম নেতা ছিলেন। বাল গঙ্গাধর তিলক ও বিপিন চন্দ্র পালের সহিত তিনি লাল-বাল-পাল নামেই বিখ্যাত ছিলেন। এই তিন নেতারাই ভারতে সর্বপ্রথম ব্রিটিশ থেকে ভারতের স্বাধীনতার দাবী করেন পরবর্তি সময়ে সমগ্র ভারতবাসী এই আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ে। তিনি স্বামী দয়ানন্দ সরসত্বীর সহিত আর্য সমাজকে পাঞ্জাবে জনপ্রিয় করে তোলেন। তিনি অনেক স্থানে দুর্ভিক্ষের সময় শিবির স্থাপন করে লোকের সেবা করেছেন। ১৯২৮ সনের ৩০ অক্টোবর তারিখে তিনি সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত প্রদর্শনিতে অংশগ্রহণ করেন । সেখানে তিনি পুলিশের লাঠি চার্চে গভীর ভাবে আহত হন। গুরুতরভাবে আহত হয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘’আমার শরীরে করা ব্রিটিশের প্রহার, ব্রিটিশের ধংসের কারণ হয়ে উঠবে’’।
মৃত্যু—
সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ সুপার জেমস এ স্কট লাঠিচার্জ করার নির্দেশ দেন। স্কট নিজেও লাঠিচার্জ করেন। লালা লাজপত রায়কে স্কট প্রথমে ধরেন কিন্তু তিনি তাঁকে গ্রেফতার না করে লাঠিপেটা করতে শুরু করেন। পুলিশ রিপোর্টে দাবি করা হয়ে, স্কট লালা লাজপত রায়কে ধরার পর লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। আর তাতে মারাত্মকভাবে আহত হন লালাজী। গুরুতরভাবে আহত লালাজীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু লাজপত রায় চিকিৎসায় আর সাড়া দেন নি।১৯২৮ এর ১৭ নভেম্বর হাসপাতালেই  মারা যান ‘পঞ্জাব কেশরী’।
মৃত্যু পরবর্তী সময়—
লালা’র মৃত্যুর ফলে সমগ্র দেশ উত্তেজিত হয়ে উঠে। চন্দ্রশেখর আজাদ, ভগৎ সিং, শিবরাম রাজগুরু ও সুখদেব থাপার ও অন্যান্য স্বাধীনতা সংগ্রামীরা লালাজির মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিজ্ঞা নেয়। ১৯২৮ সনের ১৭ ডিসেম্বর তারিখে এই স্বাধীনতা সংগ্রামীরা লালা’র মৃত্যুর প্রতিশোধ স্বরুপ ব্রিটিশ পুলিশ অফিসার সাংডর্সকে গুলি করে হত্যা করে। সাংডর্সকে হত্যা করার জন্য রাজগুরু, সুখদেব ও ভগত সিংকে ব্রিটিশ সরকারের কারাগার থেকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। এই ভাবে ভারতীয় রাজনীতিতে এক নতুন স্পন্দন সৃষ্টি হয়।
আসুন জেনে নেওয়া যাক ভারতের এই অন্যতম মহান মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে কিছু না জানা তথ্য——
১) অন্যান্য অনেক মুক্তিযোদ্ধার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে লালা লাজপত রায় ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন, তখন তিনি অনেকটাই ছোট ছিলেন।
২) ১৮৭৭ সালে তিনি রাধা দেবী-র সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের তিন সন্তান ছিল- দুটি ছেলে এবং একটি মেয়ে।
৩) ১৮৮০ সালে, তিনি লাহোরের সরকারি কলেজে আইন নিয়ে পড়তে যান। এই সময়ে তিনি কয়েকজন তরুণ মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে আলাপচারিতার সুযোগ পান।
৪) লাহোরে থাকার সময়ই, তিনি আর্য সমাজের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীকে দেখেন এবং তাঁর শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হয়ে লালা লাজপত রায় আর্য সমাজে যোগ দেন।
৫) ১৮৮৬ সালে তিনি ও তাঁর পরিবার তিনি হিসার-এ চলে আসার পরে সেখানে তিনি আইন নিয়ে প্র্যাকটিস শুরু করেন। পরে তিনি হিসারে আইনজীবী বাবু চূড়ামণি-র সঙ্গে বার কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া-র সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
৬) তিনি, বাবু চূড়ামণির সঙ্গে হিসার জেলায় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একটি শাখা প্রতিষ্ঠা করেন এবং ওই একই জেলায় আর্য সমাজের একটি শাখাও প্রতিষ্ঠা করেন।
৭) তিনি ১৮৮৮ এবং ১৮৮৯ সালে কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনে অংশ নেওয়া চারজন প্রতিনিধিদের মধ্যে একজন হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। উভয় অধিবেশনই এলাহাবাদে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
৮) ১৮৯২ সালে, তিনি লাহোর হাইকোর্টে আইন প্র্যাকটিস করতে যান। এই সময়ে তিনি সাংবাদিকতা নিয়েও প্র্যাকটিস শুরু করেন এবং ‘দ্য ট্রিবিউন’ পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন।
৯) তিনি পাঞ্জান ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক ও লক্ষী বিমা কোম্পানি স্থাপন করেছিলেন। তাঁর নির্দেশনায় দয়ানন্দ অ্যাংলো বৈদিক বিদ্যালয় পরিচালন কমিটিও প্রতিষ্ঠিত হয়।
১০) তিনি খুব শীঘ্রই বুঝতে পেরেছিলেন যে, তাঁকে আইন ত্যাগ করতে হবে এবং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিতে হবে। সেইমতো তিনি ১৯১৪ সালে আইন প্র্যাকটিস বন্ধ করে দেন।
১১) ১৯০৭ সালের মে মাসে, পাঞ্জাবের রাজনৈতিক আন্দোলনের অংশ নেওয়ার জন্য তাঁকে বার্মার মান্দালয়ে নির্বাসন দেওয়া হয়েছিল।
১২) ১৯২০ সালে অনুষ্ঠিত কলকাতা বিশেষ অধিবেশন চলাকালীন, লালা লাজপত রায় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের (INC) প্রেসিডেন্ট হন।
১৩) ১৯২৮ সালের ৩০ অক্টোবর তিনি সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত প্রদর্শনিতে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে তিনি পুলিশের লাঠি চার্জে গভীর ভাবে আহত হন।
১৪) ১৯২৭ সালে তাঁর মা যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় তিনি তাঁর মায়ের স্মৃতিতে গুলাব দেবী চেস্ট হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। কথিত আছে যে, যেখানে তাঁর মা মারা গিয়েছিলেন হাসপাতালটিও পাকিস্তানের ওই একই জায়গায় অবস্থিত। ১৯৩৪ সালের ১৭ জুলাই এটি উদ্বোধন করা হয়। হাসপাতালটি কেবলমাত্র মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত।
১৫) সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশ সুপার জেমস এ স্কট বিক্ষোভকারীদের উপর লাঠি চার্জ করার নির্দেশ দেন। স্কট নিজেই ওই লাঠি চার্জে গিয়ে লালা লাজপত রায়কে ধরে ফেলেন। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে যে, তিনি লালা লাজপত রায়কে মারাত্মকভাবে লাঞ্ছিত করেছিলেন।
১৬) রায় গুরুতরভাবে আহত হয়ে জনগণের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ”আমার শরীরে করা ব্রিটিশের প্রহার, ব্রিটিশের ধংসের কারণ হয়ে উঠবে।”
১৭) চিকিৎসায় থাকা সত্বেও তিনি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি এবং ১৯২৮ সালের ১৭ নভেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে ব্রিটিশ সরকার, স্কট বা অন্য কোনও ব্রিটিশ সরকারী কর্মকর্তার ভূমিকা অস্বীকার করে।
১৮) ১৯৫৯ সালে লালা লাজপত রায় ট্রাস্টের উদ্বোধন করেন পাঞ্জাবের একদল সমাজসেবী।
১৯) ২০১০ সালে, লালা লাজপত রায় পশুচিকিৎসা এবং প্রাণী বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে হরিয়ানা সরকার।
।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট; উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

আজ বাইশে শ্রাবণ, কবি গুরুর প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি — একটি বিশেষ পর্যালোচনা।

ভারতবর্ষের গৌরবের ইতিহাসে যে সকল বিরল প্রতিভার ব্যতিক্রমী মানুষের দৃষ্টান্ত আমরা দেখতে পাই তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ এমন একজন মানুষ যাঁকে সময় ও কালের গণ্ডীতে বিচার করা যায় না। তিনি শাশ্বত, চির-বর্তমান। তাই জন্মের দেড়শ বছরের বেশি অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের জীবনে আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।
রবীন্দ্রনাথের জীবনের যে দিকটি বেশি করে আমাদের নাড়া দেয় তা হল তাঁর সহনশীলতা, যা তাকে দুঃখ, বিড়ম্বনা জয় করে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে, তাঁকে সাধারণ থেকে আসাধারণত্বের দিকে নিয়ে গেছে এবং মরণশীল জগতে তাঁকে অমরত্ব দান করেছে।
ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথের জীবনের পথচলা কখনওই মসৃণ ছিল না। কৈশোর থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত দুঃখ ছিল তাঁর সঙ্গী। কিন্তু দুঃখে তিনি কাতর হয়ে পড়েননি। তাঁর মধ্য দিয়ে খুঁজেছেন বেঁচে থাকার আনন্দ। আপন সৃষ্টির মধ্যেই তিনি ভুলতে চেয়েছেন জীবনের দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণাকে। ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে তাঁর সৃষ্টি, দুঃখ তাঁকে তাড়া করে বেড়িয়েছে সর্বত্র।
রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির কথা বলতে গেলে সর্বাগ্রে যা মনে আসে তা হল তাঁর গান। জীবনের এমন কোনো দিক নেই যা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ গান লেখেননি। বর্তমানে অজস্র গান, সুর যেখানে সৃষ্টির বর্ষপূর্তির আগে হারিয়ে যায়, সেখানে রবীন্দ্রনাথের গান তার ব্যতিক্রমী সুর মূর্ছনায় শাশ্বত হয়ে আছে। আজও সুখের মুহূর্তে আবেগমথিত মনে যেমন বেজে ওঠে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুর, তেমনি দুঃখ ভারাক্রান্ত, বিরহক্লিষ্ট মন সান্ত্বনা পেতে ডুব দেয় রবীন্দ্রসঙ্গীতে। সারাজীবনে প্রায় তিন হাজার গান রচনা করেছেন রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, বর্তমানে রবীন্দ্রসঙ্গীতের যে ব্যাপক প্রসারতা তা রবীন্দ্র জীবদ্দশায় ছিল না। রবীন্দ্রনাথের জীবনের বহুবিধ দুঃখের মধ্যে এও ছিল এক বিষম দুঃখ। সেই দুঃখের প্রকাশ আমরা দেখি তাঁর কথায়। মৃত্যুর দু-বছর আগে ১৯৩৯ সালের ১৪ মে, রবীন্দ্রনাথ মংপুতে মৈত্রেয়ীদেবীর সামনে বলেছিলেন, “… দেখো রবিঠাকুর গান মন্দ লেখে না, একরকম চলনসই তো বলতেই হবে। …কম গান লিখেছি! হাজার হাজার গান, গানের সমুদ্র—সেদিকটা বিশেষ কেউ লক্ষ করে না গো, বাংলাদেশকে ভাসিয়ে দিয়েছি। আমাকে ভুলতে পার, আমার গান ভুলবে কী করে?”
সত্যিই রবীন্দ্রনাথ আমাদের ভাসিয়ে দিয়েছেন গানের সমুদ্রে। প্রাণ-প্রাচুর্যতাপূর্ণ তাঁর গান চির নতুন ও চিরন্তন। সেই গান তাঁকে অমরত্ব দান করেছে। কিন্তু উপরোক্ত উক্তি প্রমাণ করে কতটা আক্ষেপ, যন্ত্রণা, দুঃখ মিশে রয়েছে তাঁর কথায়। আসলে জীবিতকালে তাঁর বিরুদ্ধ সমালোচকের অভাব ছিল না। সেকারণে জীবদ্দশায় তিনি তাঁর গানের ব্যাপক প্রসারতা দেখে যেতে পারেননি। তাই বলে তাঁর কলম থেমে থাকেনি। দুঃখ সহ্য করে, বুকের মধ্যে অভিমান চেপে রেখে একের পর এক গান রচনা করে গেছেন তিনি।
আগেই বলেছি রবীন্দ্রনাথের জীবনের পথচলা কখনওই মসৃণ ছিল না। সারাজীবন ধরে নানান বিড়ম্বনা তাঁকে তাড়া করে বেড়িয়েছে। ঘরে-বাইরে রবীন্দ্র অনুরাগী যেমন অনেক ছিল, তেমনি রবীন্দ্র সমালোচকেরও অভাব ছিল না। বিভিন্ন সময় এরা নানাভাবে রবীন্দ্রনাথের নেতিবাচক সমালোচনা করেছেন, তাঁকে কটাক্ষ করেছেন, তাঁকে অপদস্থ করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ কখনও এদের বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য প্রকাশ করেননি। শান্ত, সমাহত চিত্তে তিনি সমস্ত সমালোচনা সহ্য করেছেন। হিংসা, বিদ্বেষ তাঁর মনের মধ্যে ছিল না। ছোটোবেলায় তিনি দীক্ষিত হয়েছিলেন ব্রাহ্মধর্মে। যে ধর্মের মূলকথা ছিল সমভাতৃত্ববোধ। আজীবন তিনি সেই ধর্ম বা ধারনা থেকে বিচ্যুত হননি। তাই দেশ কিংবা বিদেশ, যে বা যারা কটাক্ষ করুক না কেন, তিনি দুঃখকে নীরবে সহ্য করেছেন। কারুর বিরুদ্ধে অপ্রিয় কথা বলেননি।
খ্যাতির বিড়ম্বনা বলে একটি কথা আছে। জীবনে যত খ্যাতি তিনি পেয়েছেন ততই বিড়ম্বনাও বেড়েছে। এমনকি রবীন্দ্রনাথের যে নোবেলপ্রাপ্তি নিয়ে আমাদের গর্ব, সেটাও তাঁর জীবনে ছিল এক ভয়াবহ বিড়ম্বনা ও যন্ত্রণার কারণ। তৎকালীন বহু বাঙালী পণ্ডিত রবীন্দ্রনাথের নোবেলপ্রাপ্তির তীব্র কটাক্ষ করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন তাঁর ‘দ্য সং অফারিংস’ কাব্যগ্রন্থের জন্য। এই কাব্যগ্রন্থের কবিতা বা গানগুলির ইংরাজি অনুবাদ করেছিলেন কবি নিজে। কিন্তু তৎকালীন কিছু বাঙালী পণ্ডিত বলতে থাকলেন এই অনুবাদ কবির নিজের নয়। কেননা কবির ইংরাজি জ্ঞান খুব কাঁচা। কেউ বলতে থাকলেন ওগুলো অনুবাদ করেছেন ইয়েটস। কেউ বা বলতে থাকলেন অ্যান্ড্রুজ এর কথা।
রবীন্দ্রনাথ যে ইংরাজিতে বাংলার মতো সাবলীল ছিলেন না তা তিনি নিজের মুখে স্বীকার করেছেন। ভাইঝি ইন্দিরাকে লেখা একটি চিঠিতে একথার উল্লেখ রয়েছে। সেখানে তিনি লিখেছেন, “…আমি যে ইংরাজি লিখতে পারিনে এ কথাটা এমনি সাদা যে এ-সম্বন্ধে লজ্জা করার মতো অভিমানটুকুও আমার কোনোদিন ছিল না। যদি আমাকে কেউ চা খাবার নিমন্ত্রণ করে ইংরাজিতে চিঠি লিখত তাহলে তার জবাব দিতে আমার ভরসা হত না। তুই ভাবছিশ আজকে বুঝি আমার সে মায়া কেটে গেছে—একেবারেই তা নয়—ইংরাজিতে লিখছি, এইটেই আমার মায়া বলে মনে হয়।” তবে গীতাঞ্জলির কবিতাগুলির অনুবাদ যে তাঁর নিজস্ব সে বিষয়ে কোনো সংসয় নেই। নিজের লেখা অনুবাদের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে কবিতা কিংবা গানের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অত্যন্ত খুঁতখুঁতে। পাছে তাঁর কবিতার অর্থ বদলে যায় সেই ভয়ে অনুবাদের ব্যাপারে তিনি অন্য কারও ওপর ভরসা করতে পারেননি। এদিকে রোটেনস্টাইন তাঁর কবিতার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ইংল্যান্ড সফরে তাঁর হাতে কিছু কবিতা তুলে দেওয়ার জন্য একপ্রকার বাধ্য হয়ে তিনি নিজেই অনুবাদের কাজে মন দেন। ইন্দিরাদেবীকে লেখা উপরিউক্ত চিঠিতে সেকথার বিবরণ রয়েছে। তিনি লিখেছেন, “… গেল বারে যখন জাহাজ চড়বার দিন মাথা ঘুরে পড়লুম, বিদায় নেবার বিষম তাড়ায় যাত্রা বন্ধ হয়ে গেল, তখন শিলাইদহে বিশ্রাম করতে গেলুম। কিন্তু মস্তিস্ক ষোলো আনা সবল না থালে একেবারে বিশ্রাম করার মতো জোর পাওয়া যায় না। তাই অগত্যা মনটাকে শান্ত রাখবার জন্য একটা অনাবশ্যক কাজে হাত দেওয়া গেল। তখন চৈত্রমাসে আমের বোলের গন্ধে আকাশে আর কোথাও ফাঁক ছিল না এবং পাখির ডাকাডাকিতে দিনের বেলাকার সকল কটা প্রহর একেবারে মাতিয়ে রেখেছিল। ছোটোছেলে যখন তাজা থাকে তখন তার মার কথা ভুলেই থাকে। যখন কাহিল হয়ে পড়ে তখনই মায়ের কোলটি জুড়ে বসতে চায়—আমার সেই দশা হল। আমি আমার সমস্ত মন দিয়ে আমার সমস্ত ছুটি দিয়ে চৈত্র মাসটিকে যেন জুড়ে বসলুম—তার আলো আর হাওয়া আর গন্ধ আর গান একটুও আমার কাছে বাদ পড়ল না। কিন্তু এমন অবস্থায় চুপ করে থাকা যায় না—হাড়ে যখন হাওয়া লাগে তখন বেজে উঠতে হয়। ওটা আমার চিরকালের অভ্যেস, জানিসত্। অথচ কোমর বেঁধে কিছু লেখবার মতো বল আমার ছিল না। সেই জন্যে ঐ গীতাঞ্জলির কবিতাগুলি নিয়ে একটি একটি করে ইংরাজিতে তর্জমা করতে বসে গেলুম। যদি বলিস্ কাহিল শরীরে এমনতর দুঃসাহসের কথা মনে জন্ময় কেন—কিন্তু আমি বাহাদুরি করবার দুরাশায় একাজে লাগিনি। আর একদিন যে ভাবের হাওয়ায় মনের মধ্যে রসের উৎসব জেগে উঠেছিল সেইটিকে আর একবার আর এক ভাষার ভিতর দিয়ে মনের মধ্যে উদ্ভাসিত করে দেবার জন্য কেমন একটা তাগিদ এল। একটা ছোট্ট খাতা ভরে এল। এইটি পকেটে নিয়ে জাহাজে চড়লুম। পকেটে নেবার মানে হচ্ছে এই যে, ভাবলুম সমুদ্রের মধ্যে মনটি যখন উসখুশ করে উঠবে তখন ডেক চেয়ারে হেলান দিয়ে আবার একটি দুটি করে তর্জমা করতে বসব। ঘটলও তাই। এক খাতা ছাপিয়ে আর এক খাতায় পৌঁছন গেল।” রবীন্দ্রনাথের এই চিঠি প্রমাণ করে যে গীতাঞ্জলির ইংরেজি অনুবাদ নিয়ে সমালোচকদের কটাক্ষ কতটা মিথ্যা ছিল।
যাই হোক, নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তি যে তাঁর জীবনে বিড়ম্বনা সৃষ্টি করতে চলেছে তা আগাম আঁচ করতে পেরেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯১৩-এর নভেম্বর মাসে শান্তিনিকেতনে কবিগুরুর নোবেলপ্রাপ্তির টেলিগ্রাম এসে পৌঁছোয়। ক্ষিতিমোহন সেন শাস্ত্রী উত্তেজিতভাবে রবীন্দ্রনাথকে সেই আনন্দ সংবাদ দেন। কিন্তু কবিগুরুর মুখে আনন্দের চেয়ে বিষণ্ণতার ছবু ফুটে ওঠে। সেই সময় তাঁর পাশে উপস্থিত এডওয়ার্ড টমসনকে কবি বলেছেন, “I shall ever have any peace again.” যে এজরা পাউন্ড রবীন্দ্রনাথের লেখার উচ্চ প্রশংসা করেছেন, যে ইয়েটস্ তাঁর ইংরাজি গীতাঞ্জলির ভূমিকা লিখেছেন, রবীন্দ্রনাথের নোবেলপ্রাপ্তি তাঁদের খুশি করতে পারেনি। উল্টে তাঁরা রবীন্দ্রনাথের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন, তাঁর ইংরাজি অনুবাদ নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। আবার ইয়েটস জীবনের সায়াহ্নে এসে অনুযোগ করে চিঠি লিখেছেন রবীন্দ্রনাথকে। সব বিতর্ক ভুলে রবীন্দ্রনাথ তাঁকে আপন করে নিয়েছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ বিভিন্ন দেশে গেছেন, বিভিন্ন বিষয়ে বক্তৃতা করেছেন। কিন্তু এখানেও বিড়ম্বনা তাঁকে পিছু ছাড়েনি। জাপান, আমেরিকা, চীন প্রভৃতি দেশে তাঁর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আমিরকায় দেওয়া বক্তব্যের পর কখনও তাঁকে বলা হয়েছে, তাঁর বক্তব্যের উদ্দেশ্য হিন্দু বিপ্লবী প্রচারে বাধা দেওয়া, কখনওবা বলা হয়েছে তিনি দেশের যথার্থ প্রতিনিধি নন। ১৯২৪ সালে চীনে বক্তৃতা দেওয়ার সময় তাঁকে নানান অপ্রীতিকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়। এমনকি ২৫ মে এক বক্তৃতা দেওয়ার সময় চীনা যুবকরা তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে—‘পরাধীন দেশের দাস ফিরে যাও।’ বিশের দশকে রবীন্দ্রনাথ যখন জার্মানি যান তখন অনেকে তাঁকে দেখেছিলেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দূত হিসাবে। রবীন্দ্রনাথের জীতায়তাবোধ কিংবা দেশপ্রেম নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ থাকতে পারে না। তাই উপরোক্ত ঘটনাগুলি তাঁর কাছে অত্যন্ত পীড়াদায়ক। কিন্তু এসব অপমান কিংবা কটাক্ষ তিনি নীরবে সহ্য করেছেন।
তবে রবীন্দ্রনাথের জীবনের সবচেয়ে বড়ো দুঃখ বা শোক হল মৃত্যুশোক। নিজের জীবদ্দশায় পারিবারিক মৃত্যু মিছিলের স্বাক্ষী থেকেছেন তিনি। প্রায় তিরিশজন পরিজনের মৃত্যু দেখতে হয়েছে তাঁকে। মাত্র ১১ বছর বয়সে তিনি মাকে হারান। কিন্তু মায়ের মৃত্যু তাঁর মনে সেভাবে দাগ কাটতে পারেনি। প্রথমবার মৃত্যুর গভীর শোক অনুভব করেন বৌঠান কাদম্বরী দেবীর মৃত্যুতে। কাদম্বরী দেবী ছিলেন তাঁর শৈশবের খেলার সাথী, কৈশোর-যৌবনের বন্ধু। স্বামীর অবহেলায় নিঃসঙ্গ কাদম্বরীও রবীন্দ্রনাথকে অনেকটাই আপন করে নিয়েছিলেন। তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্ন মতামত আছে। সে বিতর্ক দূরে সরিয়ে রেখে বলি, রবীন্দ্রনাথ ও কাদম্বরী দেবী উভয়ে উভয়কে ভালোবাসতেন। তাই কাদম্বরীর মৃত্যু রবীন্দ্রনাথকে প্রবলভাবে আঘাত করেছিল। তাঁর কথায়, “কিন্তু আমার চব্বিশ বছর বয়সের সময় মৃত্যুর সঙ্গে যে পরিচয় হল তা স্থায়ী পরিচয়।” পরবর্তী সময়ে তাঁর নানা লেখায় আমরা দেখতে পাই এই হারানোর যন্ত্রণার সুশোভন প্রকাশ। চল্লিশ বছর বয়সে তিনি হারান সহধর্মিনী ও কর্মসাথী মৃণালিনীদেবীকে। স্ত্রীর মৃত্যুও তাঁকে গভীরভাবে আঘাত দেয় যা প্রকাশ রয়েছে তাঁর বিভিন্ন লেখায়। এর মধ্যে ছোটোপুত্র শমীন্দ্রনাথ যাকে রবীন্দ্রনাথ আদর করে ডাকতেন ‘শমী ঠাকুর’ বলে, তার মৃত্যু কবির মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছিল। এককথায়, পরিজনদের মৃত্যু তাঁক কষ্ট দিয়েছে বারবার। কিন্তু মৃত্যুকে তিনি গ্রহন করেছেন শান্ত চিত্তে আর অন্তরের কষ্টকে তিনি মর্যাদার সঙ্গে প্রকাশ করেছেন তাঁর লেখালিখির মধ্য দিয়ে। আসলে রবীন্দ্রনাথ জানতেন বৃহৎ কর্মের জন্যই তিনি পৃথিবীতে এসেছেন। তাই মৃত্যুতে কাতর হয়ে পড়া তাঁর চলবে না। শমীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর তিনি জগদীশচন্দ্র বসুকে একটি চিঠিতে লিখেছিলেন, “আমাদের চারিদিকেই এত দুঃখ এত অভাব এত অপমান পড়িয়া আছে যে নিজের শোক লইয়া অভিভূত হইয়া এবং নিজেকেই বিশেষরূপে দুর্ভাগা কল্পনা করিয়া পড়িয়া থাকিতে আমার লজ্জাবোধ হয়।” আবার ১৩২৫ সনের ১৪ শ্রাবণ শান্তিনেকতন থেকে শ্রীমতী রানু অধিকারীরে লেখা এক চিঠিতে তিনি বলেছেন, “… কেননা আমার উপরে যে কাজের ভার আছে; তাই আমাকে দুঃখ ভোগ করে দুঃখের উপরে উঠতে হবে। নিজের শোকের মধ্যে বদ্ধ হয়ে এই মুহূর্ত কাটাইবার হুকুম নেই আমার।”
এই দুটো বক্তব্যই প্রমাণ করে রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধ ও জীবন সম্পর্কে তাঁর বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গী। বৃহত্তর শোক আর দুর্দশার আবহে তিনি নিজের দুঃখ ও শোককে গ্রহন করেছেন। মৃত্যু তাঁকে কষ্ট দিয়েছে, যন্ত্রণা দিয়েছে কিন্তু বিপর্যস্ত করে দিতে পারেনি। মৃত্যুকে তিনি দেখেছেন প্রেমিকের মতো। তাই তিনি বলেছেন, ‘মরণরে, তুহু মম শ্যাম সমান।’
রবীন্দ্রনাথের কাছে মৃত্যুই জীবনের শেষ কথা নয়। জীবনের বহু পরিবর্তনের মতো মৃত্যুও একটি পরিবর্তন। মৃত্যু মানে জীবনের শেষ নয়, শরীরের সমাপ্তি। ১৩৩৮ সনের ১৫ কার্তিক বাসন্তীদেবীকে লেখা একটি চিঠিতে তিনি বলেছেন, “জীবন আর মরণ তো একই সত্তার দুই দিক—চৈতন্যে ঘুম আর জাগরণ যেমন।” এই মৃত্যুশোকের মধ্য দিয়ে তিনি এগিয়ে নিয়ে গেছেন তাঁর সৃষ্টির ধারা। আর মৃত্যুকে তিনি গ্রহন করেছেন শান্ত চিত্তে, প্রকাশ করেছেন মর্যাদার সহিত। যেখানে মৃত্যু নয় তিনি বড়ো করে দেখিয়েছেন জীবনদেবতাকে। নিঃসন্দেহে রবীন্দ্রনাথের এই গভীর সহনশীলতা জীবনের এত বিপর্যয় এড়িয়ে তাঁকে বৃহত্তর জগতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। তাঁকে অমরত্ব দান করেছে।
পরিশেষে বলি, রবীন্দ্রনাথ শুধু একজন সাহিত্যিক, শিল্পী, গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার, কর্মযোগী প্রভৃতি ছিলেন না। তিনি আমাদের সামনে এক প্রতীক। দুঃখকে জয় করে এগিয়ে যাওয়ার প্রতীক। গয়ায় থাকাকালীন রবীন্দ্রনাথ একসময় বলেছিলেন, “জীবনে দুঃখ পাওয়ার দরকার আছে।” সত্যিই তাই। তা নাহলে জীবনের প্রকৃত সুখ, বেঁচে থাকার প্রকৃত আনন্দ অনুভব করা যায় না। দুঃখ নিজেকে চিনতে শেখায়, নিজেকে ভাবতে শেখায়। শুধু তাই নয়, দুঃখই দুঃখকে ভুলতে শেখায়। জাহাজে পাড়ি দিয়ে নিরাপদ দূরত্বে পৌঁছোনোর যে সুখ, তার থেকে অনেক বেশি আনন্দ পাওয়া যায় যদি সেই জাহাজ সমুদ্রে চরম ঘূর্ণিতে আটকে পড়ার পর তীব্র লড়াই করে শেষমেশ গন্তব্যে পৌঁছোতে সক্ষম হয়। আমাদের জীবনটাও তাই। জীবনে সুখের চেয়ে দুঃখের ভাগ বেশি। তাই দুঃখে কাতর হয়ে পড়লে জীবন হয়ে ওঠে যন্ত্রণার, বেঁচে থাকা হয়ে ওঠে দুঃসহ। সে কারণে দুঃখে কাতর হওয়া নয়, দুঃখে নিজেকে শক্ত রেখে লড়াই করতে হবে। তাহলে জীবনে প্রকৃত সুখ অর্জন করা সম্ভব। অন্য কিছু নয়, কেবল দুঃখই পারে দুঃখের নিরসন ঘটাতে। তবে তার জন্য চাই সহনশীলতা। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন—
“দুঃখ যদি না পাবে তো
দুঃখ তোমার ঘুচবে কবে
বিষকে বিষের দাহ দিয়ে
দহন করে মারতে হবে।
জ্বলতে দে তোর আগুনটারে
ভয় কিছু না করিস তারে,
ছাই হয়ে সে নিভবে যখন
জ্বলবে না আর কভু তবে।
এড়িয়ে তারে পালাস না রে
ধরা দিতে হোস না কাতর।
দীর্ঘ পথে ছুটে কেবল
দীর্ঘ করিস দুঃখটা তোর
মরতে মরতে মরণটারে
শেষ করে যে একেবারে,
তার পরে সেই জীবন এসে
আপন আসন আপনি লবে।”
রবীন্দ্রনাথের জীবন ইতিহাস পর্যালোচনা করে বারে বারে যে দিকটি আমাদের সামনে প্রকট হয় তা হল তাঁর জীবনভরা দুঃখ, বিড়ম্বনা ও তাঁর অসীম সহনশীলতা। উপরোক্ত কবিতায় দুঃখ এবং তাঁর থেকে মুক্তির পথ কী, তা সুন্দরভাবে ব্যক্ত করেছেন কবি।

 

।।কলমে : সৌরভকুমার ভূঞ্যা।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

ব্রিটিশ শাসকের ঘুম কেড়ে নেওয়া বীর বিপ্লবী রাসবিহারী বসু, দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে অগ্রনী বিপ্লবীদের মধ্যে অন্যতম তিনি।

ভারতে ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতাকামী আন্দোলনের একজন অগ্রগণ্য বিপ্লবী নেতা এবং ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির অন্যতম সংগঠক ছিলেন রাসবিহারী বসু। রাসবিহারী বসু ১৮৮৬ খ্রীষ্টাব্দের ২৫ শে মে অধুনা পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলায় অবস্থিত তার পৈতৃক গ্রাম সুবলদহে জন্মগ্রহণ করেন৷ পিতা বিনোদবিহারী বসু এবং তার মায়ের নাম ভুবনেশ্বরী দেবী। তিনকড়ি দাসী ছিলেন তার ধাত্রী মাতা৷ তার পিতামহ নাম ছিলেন কালীচরণ বসু৷
এই বসু পরিবারের আদিবাস ছিল অধুনা পূর্ব বর্ধমান জেলার সুবলদহেতে৷ তাঁদের পূর্বপুরুষ নিধিরাম বসুই সর্বপ্রথম সুবলদহে বসবাস শুরু করেন৷
রাসবিহারী বসুকে তার নামটি দিয়েছিলেন পিতামহ কালীচরণ বসু। গর্ভাবতী অবস্থায় তার মা ভুবনেশ্বরী দেবী কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

 

তাই সুবলদহ গ্রামের পশ্চিম পাড়াতে অবস্থিত বিষ্ণুমন্দির বা কৃষ্ণ মন্দিরে তার নামে প্রার্থনা(মানত) করা হয়েছিল যাতে তিনি(ভুবনেশ্বরীদেবী) সুস্থভাবে সন্তানের জন্ম দেন, তাই পরবর্তীকালে তার নাতির নাম রাখেন, কৃষ্ণের অপর নামে। রাসবিহারী হল কৃষ্ণের অপর নাম। রাসবিহারী বসু এবং তার ভগিনী সুশীলা সরকারের শৈশবের বেশির ভাগ সময় কেটেছিল সুবলদহ গ্রামে। তারা সুবলদহ গ্রামে বিধুমুখী দিদিমণির ঘরে বসবাস করতেন। বিধুমুখী ছিলেন একজন বাল্যবিধবা, তিনি ছিলেন কালিচরণ বসুর ভ্রাতৃবধূ। রাসবিহারী বসুর শৈশবের পড়াশোনা সুবলদহের গ্রাম্য পাঠশালায় (বর্তমানে সুবলদহ রাসবিহারী বসু প্রাথমিক বিদ্যালয়) ঠাকুরদার সহচর্যে সম্পন্ন হয়েছিল। রাসবিহারী বসু শৈশবে লাঠিখেলা শিখেছিলেন সুবলদহ গ্রামের শুরিপুকুর ডাঙায়। তিনি সুবলদহ গ্রামে তার ঠাকুরদা কালিচরণ বসু এবং তার শিক্ষকদের কাছ থেকে বিভিন্ন জাতীয়তাবাদী গল্প শুনে তার বিপ্লবী আন্দোলনের অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন। তিনি ছিলেন গ্রামবাসীদের নয়নের মণি। শোনা যায় যে, তিনি ইংরেজদের মূর্তি তৈরি করতেন এবং লাঠি খেলার কৌশলে সেই মূর্তিগুলোকে ভেঙে ফেলতেন। তিনি ডাংগুলি খেলতে খুব ভালোবাসতেন। তিনি শৈশবে সুবলদহ গ্রামে ১২ থেকে ১৪ বছর ছিলেন, এছাড়াও তিনি পরবর্তীকালে ব্রিটিশদের চোখে ধুলো দিয়ে প্রয়োজনে সুবলদহ গ্রামে এসে আত্মগোপন করতেন। পিতা বিনোদবিহারী বসুর কর্মক্ষেত্র ছিল হিমাচল প্রদেশের সিমলায়। তিনি সুবলদহ পাঠশালা, মর্টন স্কুল ও ডুপ্লে কলেজের ছাত্র ছিলেন। জীবনের প্রথম দিকে তিনি নানা বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং আলিপুর বোমা বিস্ফোরণ মামলায় ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে অভিযুক্ত হন। পরবর্তীকালে তিনি দেরাদুনে যান এবং সেখানে বন্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে হেড ক্লার্ক হিসেবে কাজে যোগদান করেন। দেরাদুনে তিনি গোপনে বাংলা, উত্তর প্রদেশ ও পাঞ্জাবের বিপ্লবীদের সংস্পর্শে আসেন।বিপ্লবী হিসেবে তার অন্যতম কৃতিত্ব বড়লাট হার্ডিঞ্জের ওপর প্রাণঘাতী হামলা। বিপ্লবী কিশোর বসন্ত বিশ্বাস তার নির্দেশে ও পরিকল্পনায় দিল্লিতে ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে বোমা ছোড়েন হার্ডিঞ্জকে লক্ষ্য করে। এই ঘটনায় পুলিশ তাকে কখনোই গ্রেপ্তার করতে পারেনি। সমগ্র ভারতব্যাপী সশস্ত্র সেনা ও গণ অভ্যুত্থান গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন রাসবিহারী বসু। জনৈক বিশ্বাসঘাতকের জন্যে সেই কর্মকাণ্ড ফাঁস হয়ে যায়। বহু বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকায় তিনি ব্রিটিশ সরকারের সন্দেহভাজন হয়ে ওঠেন এবং শেষ পর্যন্ত দেশত্যাগে বাধ্য হন। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি বন্যা বিধ্বস্ত সুবলদহ গ্রামে ফিরে আসেন এবং ত্রাণ বিলির উদ্যোগ নেন।[৯] ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের ১২ মে কলকাতার খিদিরপুর বন্দর থেকে জাপানি জাহাজ ‘সানুকি-মারু’ সহযোগে তিনি ভারতবর্ষ ত্যাগ করেন। তার আগে নিজেই পাসপোর্ট অফিস থেকে রবীন্দ্রনাথের আত্মীয়, রাজা প্রিয়নাথ ঠাকুর ছদ্মনামে পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন।
তারই তৎপরতায় জাপানি কর্তৃপক্ষ ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের পাশে দাঁড়ায় এবং শেষ পর্যন্ত ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় সমর্থন যোগায়। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ২৮-২৯ মার্চ টোকিওতে তার ডাকে অনুষ্ঠিত একটি সম্মেলনে ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লীগ বা ভারতীয় স্বাধীনতা লীগ গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে তিনি সেই সম্মেলনে একটি সেনাবাহিনী গঠনের প্রস্তাব দেন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ২২ জুন ব্যাংককে তিনি লীগের দ্বিতীয় সম্মেলন আহ্বান করেন। সম্মেলনে সুভাষচন্দ্র বসু কে লীগে যোগদান ও এর সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের আমন্ত্রণ জানানোর প্রস্তাব গৃহীত হয়। যেসব ভারতীয় যুদ্ধবন্দি মালয় ও বার্মা ফ্রন্টে জাপানিদের হাতে আটক হয়েছিল তাদেরকে ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লীগে ও লীগের সশস্ত্র শাখা ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মিতে যোগদানে উৎসাহিত করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে জাপানি সেনাকর্তৃপক্ষের একটি পদক্ষেপে তার প্রকৃত ক্ষমতায় উত্তরণ ও সাফল্য ব্যাহত হয়। তার সেনাপতি মোহন সিংকে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির নেতৃত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। কিন্তু তার সাংগঠনিক কাঠামোটি থেকে যায়। রাসবিহারী বসু ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (আজাদ হিন্দ ফৌজ নামেও পরিচিত) গঠন করেন। জাপানে সোমা নামে এক পরিবার তাকে আশ্রয় দেয়। ওই পরিবারেরই তোশিকা সোমাকে তিনি বিবাহ করেন। রাসবিহারী বসুকে জাপান সরকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘সেকেন্ড অর্ডার অব দি মেরিট অব দি রাইজিং সান’ খেতাবে ভূষিত করে। জানুয়ারি ২১, ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে জাপানে রাসবিহারী বসুর মৃত্যু হয়।
তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট ও উইকিপিডিয়া।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

ক্ষুদিরাম বসু , ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে এক অগ্নি পুরুষ।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের অব্যর্থ পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে ক্ষুদিরাম বসু  প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন। ক্ষুদিরাম বসু ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে।

 

 

ক্ষুদিরাম বসু, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক অমর নাম। দেশের স্বাধীনতার জন্য ফাঁসির মঞ্চে যারা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে প্রথম বিপ্লবী ছিলেন তিনি। ভারতবর্ষকে স্বাধীন করতে ক্ষুদিরাম বসুর এই আত্মত্যাগ আজও অনুপ্রেরণা যোগায় এবং উৎসাহিত করে দেশপ্রেমের অগ্নিমন্ত্রে শপথ নিতে। এখন জেনে নেব ক্ষুদিরাম বসু সম্পর্কে কিছু কথা।

ক্ষুদিরাম বসু ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৩ ডিসেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত মেদিনীপুর শহরের কাছাকাছি (বর্তমান পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা) কেশপুর থানার অন্তর্গত মৌবনী (হাবিবপুর) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ত্রৈলোক্যনাথ বসু ছিলেন নাড়াজোলের তহসিলদার। তার মার নাম লক্ষ্মীপ্রিয় দেবী। তিন কন্যার পর তিনি তার মায়ের চতুর্থ সন্তান। তার দুই পুত্র অকালে মৃত্যুবরণ করেন। অপর পুত্রের মৃত্যুর আশঙ্কায় তিনি তখনকার সমাজের নিয়ম অনুযায়ী তার পুত্রকে তার বড়ো দিদির কাছে তিন মুঠো খুদের (চালের খুদ) বিনিময়ে বিক্রি করে দেন। খুদের বিনিময়ে কেনা হয়েছিল বলে শিশুটির নাম পরবর্তীকালে ক্ষুদিরাম রাখা হয়।ক্ষুদিরামের বয়স যখন মাত্র পাঁচ বছর তখন তিনি তার মাকে হারান।45

এক বছর পর তার পিতার মৃত্যু হয়। তখন তার বড়ো দিদি অপরূপা তাকে দাসপুর থানার এক গ্রামে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। অপরূপার স্বামী অমৃতলাল রায় ক্ষুদিরামকে তমলুকের হ্যামিল্টন হাই স্কুলএ ভর্তি করে দেন।
১৯০২ এবং ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে শ্রী অরবিন্দ এবং সিস্টার-নিবেদিতা মেদিনীপুর ভ্রমণ করেন। তারা স্বাধীনতার জন্যে জনসমক্ষে ধারাবাহিক বক্তব্য রাখেন এবং বিপ্লবী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে গোপন অধিবেশন করেন, তখন কিশোর ছাত্র ক্ষুদিরাম এই সমস্ত বিপ্লবী আলোচনায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। স্পষ্টভাবেই তিনি অনুশীলন সমিতিতে যোগদান করেন এবং কলকাতায় বারীন্দ্র কুমার ঘোষের কর্মতৎপরতার সংস্পর্শে আসেন। তিনি ১৫ বছর বয়সেই অনুশীলন সমিতির একজন স্বেচ্ছাসেবী হয়ে ওঠেন এবং ভারতে ব্রিটিশ শাসন বিরোধী পুস্তিকা বিতরণের অপরাধে গ্রেপ্তার হন। ১৬ বছর বয়সে ক্ষুদিরাম থানার কাছে বোমা মজুত করতে থাকেন এবং সরকারি আধিকারিকদেরকে আক্রমণের লক্ষ্য স্থির করেন।
১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে ক্ষুদিরাম তার বোন অপরূপার স্বামী অমৃতলাল রায়ের সঙ্গে তমলুক শহর থেকে মেদিনীপুরে চলে আসেন।ক্ষুদিরাম বসু তমলুকের হ্যামিল্টন স্কুল এবং মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষালাভ করেন।
মেদিনীপুরে তার বিপ্লবী জীবনের অভিষেক। তিনি বিপ্লবীদের একটি নবগঠিত আখড়ায় যোগ দেন। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসু এবং রাজনারায়ণ বসুর প্রভাবে মেদিনীপুরে একটি গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠন গড়ে উঠেছিল। সেই সংগঠনের নেতা ছিলেন হেমচন্দ্র দাস কানুনগো এবং সত্যেন্দ্রনাথ বসু ছিলেন হেমচন্দ্র দাসের সহকারী। এটি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ব্রিটিশবিরোধীদের দ্বারা পরিচালিত হতো। অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই ক্ষুদিরাম তার গুণাবলীর জন্য সবার চোখে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেন। ক্ষুদিরাম সত্যেন্দ্রনাথের সাহায্যে বিপ্লবী দলভুক্ত হয়ে এখানে আশ্রয় পান। ক্ষুদিরাম তারই নির্দেশে ‘সোনার বাংলা’ শীর্ষক বিপ্লবাত্মক ইশতেহার বিলি করে গ্রেপ্তার হন। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে কাঁসাই নদীর বন্যার সময়ে রণপার সাহায্যে ত্রাণকাজ চালান। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে বারীন্দ্র কুমার ঘোষ তার সহযোগী হেমচন্দ্র কানুনগোকে প্যারিসে নির্বাসনে থাকা একজন রাশিয়ান নিকোলাস সাফ্রানস্কি-এর কাছ থেকে বোমা তৈরির কায়দা শেখার জন্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
কিংসফোর্ডকে গুপ্তহত্যার প্রচেষ্টা
অনুশীলন সমিতি কিংসফোর্ডকে হত্যা করার প্রচেষ্টা জারি রেখেছিল। এপ্রিলে দুই সদস্যের একটা পরিদর্শক দল মুজাফফরপুর সফর করে, যাতে যুক্ত ছিলেন প্রফুল্ল চাকী। তাদের ফিরে আসায় বোমা দিয়েছিলেন হেমচন্দ্র, যেগুলো বানানো হয়ছিল ৬ আউন্স ডিনামাইট, একটা বিস্ফোরক এবং কালো পাউডার ফিউজ। প্রফুল্ল চাকি মুজাফফরপুরে ফিরেছিলেন একটা নতুন ছেলেকে নিয়ে, যার নাম ক্ষুদিরাম বসু।
অরবিন্দ ঘোষ, বারীন্দ্র ঘোষ এবং তাদের সহযোগীদের কাজকর্মে পুলিশের সন্দেহ হতে থাকে।কলকাতা পুলিশ কিংসফোর্ডের জীবন বাঁচানোর জন্যে সচেতন হয়ে ওঠে। কমিশনার এফ এল হলিডে মুজাফফরপুর পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্টের উপেক্ষার বদলে সতর্ক হয়েছিলেন। যাইহোক, চারজন লোককে ম্যাজিস্ট্রেটের বাড়ি পাহারা দেওয়ার জন্যে ব্যবস্থা করা হয়।ইতিমধ্যে ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকি নতুন নাম ধারণ করে যথাক্রমে হরেণ সরকার ও দীনেশ চন্দ্র রায় হয়েছেন, এবং কিশোরীমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত এক দাতব্য সরাইখানায় (ধর্মশালা) তারা বাসা নেন। তাদের অজ্ঞাতবাসের দিনগুলোতে ওই বিপ্লবীদ্বয় তাদের লক্ষ্যের কার্যকলাপ এবং দৈনন্দিন রুটিনের ওপর নজরদারি করতেন। দুই বিপ্লবী সফলভাবে তিন সপ্তাহের ওপর তাদের পরিচয় গোপন রাখতে পেরেছিল। মুজাফফরপুরের সুপারিন্টেন্ডেন্ট আর্মস্ট্রঙের কাছ থেকে একটা চিঠি নিয়ে সিআইডি অফিসার কলকাতায় ফিরে এসেছিল, যাতে বলা হয়েছিল যে, বিপ্লবীদ্বয় ওখানে পৌঁছায়নি।[১৫] ২৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় ক্ষুদিরাম এবং প্রফুল্ল তাদের পরিকল্পনা কার্যকর করার জন্যে জায়গামতো হাজির হয়েছিল। স্কুল ছাত্রের ভান করে মুজাফফরপুর পার্কে তারা সমীক্ষা করেছিলেন যে, এটা ব্রিটিশ ক্লাবের উলটো দিকে, যেখানে কিংসফোর্ড ঘনঘন আসেন। একজন কনস্টেবল তাদের দেখেছিল।
মুজাফফরপুরে কিংসফোর্ডকে গুপ্তহত্যার প্রচেষ্টা
ভাগ্য ভালোর দিনে, প্রিঙ্গল কেনেডি নামে একজন ব্রিটিশ ব্যারিস্টারের মেয়ে এবং স্ত্রীর সঙ্গে কিংসফোর্ড এবং তার স্ত্রী ব্রিজ খেলছিলেন। তারা রাত ৮.৩০ নাগাদ বাড়ি ফিরতে মনস্থ করেন। কিংসফোর্ড এবং তার স্ত্রী একটা গাড়িতে ছিলেন যেটা কেনেডি এবং তার পরিবারের গাড়ির মতোই দেখতে ছিল। কেনেডি মহিলাগণ কিংসফোর্ডের বাড়ির চত্বর থেকেই যাচ্ছিলেন। যখন তাদের গাড়ি ওই চত্বরের পূর্ব ফটকে পৌঁছায়, ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল গাড়িটার দিকে দৌড়ে যান এবং গাড়িতে বোমাগুলো ছোড়েন। একট প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটে এবং গাড়িটা সঙ্গে সঙ্গে কিংসফোর্ডের বাড়িতে আনা হয়। গাড়িটা ভেঙে গিয়েছিল এবং কেনেডি মহিলাগণ ভীষণভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। মিস কেনেডি এক ঘণ্টার মধ্যেই মারা যান এবং মিসেস কেনেডি গুরুতর আঘাতের ফলে ২ মে তারিখে প্রয়াত হন।
ক্ষুদিরাম এবং প্রফুল্ল নিজেদের রাস্তায় পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেছিলেন। মধ্যরাতের মধ্যে সারা শহর ঘটনাটা জেনে গিয়েছিল, এবং খুব সকাল থেকেই সমস্ত রেলস্টেশনে সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল যাতে প্রত্যেক যাত্রীর ওপর নজর রাখা যায়। শিমুরিঘাট রেল স্টেশনে প্রফুল্ল যখন জল খাওয়ার জন্যে ট্রেন থেকে নামেন, তখন মিস্টার ব্যানার্জি মুজফফরপুর থানায় একটা টেলিগ্রাম পাঠান। মোকামাঘাট রেল স্টেশনে প্রফুল্লকে পাকড়াও করার চেষ্টা করেন মিস্টার ব্যানার্জি। প্রফুল্ল তার কাছে থাকা রিভলভার দিয়ে নিজের মতো লড়াই করার চেষ্টা করেন, কিন্তু শেষে যখন দেখেন যে, রিভলভারে একটামাত্র গুলি আছে, তখন তিনি নিজের মুখের মধ্যে গুলি করেন।
হাতে হাতকড়ি লাগানো ক্ষুদিরামকে পয়লা মে মুজফফরপুর থেকে আনা হয়। পুরো শহর থানায় ভিড় করেছিল একদল সশস্ত্র পুলিশকর্মীর ঘিরে থাকা একটা কিশোর ছেলেকে শুধু একপলক দেখার জন্যে।
দুজন মহিলাকে হত্যা করার জন্যে তার বিচার হয় এবং চূড়ান্তভাবে তার ফাঁসির আদেশ হয়।
ফাঁসি হওয়ার সময় ক্ষুদিরামের বয়স ছিল ১৮ বছর, ৭ মাস এবং ১১ দিন, যেটা তাকে ভারতের কনিষ্ঠতম ভারতের বিপ্লবী অভিধায় অভিষিক্ত করেছিল।

তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট

Share This
Categories
রিভিউ

আজ ৮ আগস্ট, ইতিহাসের আজকের এই দিনে যা ঘটেছিল।

আজ ৮ আগস্ট। ইতিহাস ঘেটে দেখা যায় বছরের প্রতিটি দিনে ঘটেছে অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। আসুন আজকের দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় একনজরে দেখে নিই।  ইতিহাসের আজকের এই দিনে কী কী ঘটেছিল, কে কে জন্ম নিয়েছিলেন ও মৃত্যুবরণ করেছিলেন——-

 

আজ যাদের জন্মদিন—-

১৯০১ – সাইক্লোট্রন উদ্ভাবনের জন্য সুপরিচিত আর্নেস্ট লরেন্স নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী।

১৯১০ – সিলভিয়া সিডনি, মার্কিন অভিনেত্রী।

১৯২৮ – বিলায়েত খাঁ ভারতের বিখ্যাত বাঙালি সেতার বাদক।

১৯৩০ – বেগম ফজিলাতুন্নেসা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্ত্রী ও বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাতা।

১৯৩১ – রজার পেনরোজ, ইংরেজ গাণিতিক-পদার্থবিজ্ঞানী।

১৯৩৭ – ডাস্টিন হফম্যান, মার্কিন অভিনেতা ও পরিচালক।

১৯৫১ – মুহাম্মাদ মুরসি, মিশরীয় প্রকৌশলী, শিক্ষায়তনিক ও রাজনীতিক, এবং মিশরের ৫ম রাষ্ট্রপতি।

১৯৮১ – রজার ফেদেরার, সুইস টেনিস খেলোয়াড়।

১৯৯০ – কেন উইলিয়ামসন, নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটার ও বর্তমান অধিনায়ক।

১৮৮৯ – জ্যাক রাইডার, অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট।

১৭৩২ – ইয়োহান ক্রিস্টফ আডেলুং, জার্মান ভাষাবিজ্ঞানী।

 

ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনের ঘটনাবলী—-

১৯০৬ – বিপিনচন্দ্র পালের সম্পাদনায় ইংরেজি দৈনিক ‘বন্দেমাতরম’ প্রথম প্রকাশিত হয়।

১৯৪৯ – ইকুয়েডরে প্রবল ভূ-কম্পনে দশ হাজার লোক মৃত্যুবরণ করে।

১৯৫৫ – জেনিভায় পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৭২টি দেশের ১২০০ বিজ্ঞানীর এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু হয়।

১৯৬৭ – দক্ষিণ এশীয় জাতিসমূহের সংস্থা আশিয়ান প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৮৮ – দক্ষিণ আফ্রিকা, কিউবা ও অ্যাঙ্গোলায় যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়।

১৮১০ – ঊর্দু কবি মির্জা গালিব নবাব ইলাহী বকসের কন্যা মারুফকে বিয়ে করেন।

১৮১৫ – নেপোলিয়ন বোনাপার্ট সেন্ট হেলেনের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন।

১৮৬৪ – জেনেভায় রেডক্রস গঠিত হয়।

১৮৬৪ – আন্তর্জাতিক রেডক্রস যুদ্ধকালে আক্রান্ত না হওয়ার অধিকার পায়।

১৭৯৬ – ৪৪ সদস্য নিয়ে বোস্টন আফ্রিকান সোসাইটি গঠিত হয়।

১৫৪৯ – ফ্রান্স ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।

১২২০ – সুইডেন লিহুলার যুদ্ধে এস্টানিয়ান উপজাতির কাছে পরাজিত হয়।

 

এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন যারা—-

২০০৯ – শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায় বিশিষ্ট বাঙালি গীতিকার।

২০২১ – বলিউডের ‘মন কি আওয়াজ প্রতীজ্ঞা’ খ্যাত ভারতীয় অভিনেতা অনুপম শ্যাম।

১৯৭৫ – প্রবাদপ্রতিম গীতিকার ও কবি প্রণব রায় (গীতিকার)।

১৯৭৭ – আচার্য ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায় খ্যাতনামা বাঙালি কণ্ঠশিল্পী, সুরকার ও সঙ্গীতপরিচালক।

১৮২৪ – ফ্রিড্‌রিশ আউগুস্ট ভোল্‌ফ, জার্মান ভাষাতাত্ত্বিক ও সমালোচক।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
রিভিউ

আজ ৭ আগস্ট, ইতিহাসের আজকের এই দিনে যা ঘটেছিল।

আজ ৭ আগস্ট। ইতিহাস ঘেটে দেখা যায় বছরের প্রতিটি দিনে ঘটেছে অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। আসুন আজকের দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় একনজরে দেখে নিই।  ইতিহাসের আজকের এই দিনে কী কী ঘটেছিল, কে কে জন্ম নিয়েছিলেন ও মৃত্যুবরণ করেছিলেন——-

 

দিবস—–

 

(ক) আন্তর্জাতিক বায়োডিজেল দিবস।

 

আজ যাদের জন্মদিন—-

১৯০২ – আর্নে ভিলহেল্ম কাউরিন টিসেলিয়ুস, তিনি ছিলেন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী সুইডিশ প্রাণরসায়নী।

১৯০২ – অ্যান হার্ডিং, মার্কিন মঞ্চ, চলচ্চিত্র, বেতার ও টেলিভিশন অভিনেত্রী।

১৯১১ – নিকোলাস রে, মার্কিন চলচ্চিত্র পরিচালক।

১৯১৩ – ওয়লফগাং পাউল, তিনি ছিলেন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী জার্মান পদার্থবিদ।

১৯২৮ – জেমস র‍্যান্ডি, কানাডীয়-আমেরিকান অবসরপ্রাপ্ত মঞ্চ যাদুকর এবং বৈজ্ঞানিক সংশয়ী।

১৯৩৩ – এলিনর অস্ট্রম, একজন মার্কিন অর্থনীতিবিদ।

১৯৩৭ – ডন উইলসন, ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন।

১৯৪৩ – মোহাম্মদ বাদি, মিশরীয় মুসলিম ব্রাদারহুডের অষ্টম প্রধান গাইড( মুরশিদ)।

১৯৪৭ – আনোয়ার ইব্রাহীম, তিনি ছিলেন মালয়েশিয়ার শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ ও ৭ম উপ-প্রধানমন্ত্রী।

১৯৪৮ – গ্রেগ চ্যাপেল, অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ও বিখ্যাত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা।

১৯৫১ – জুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস, তিনি কলম্বিয়ার ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও ৫৯ তম প্রেসিডেন্ট।

১৯৫৯ – কোনরাড এলস্ট, বেলজিয়াম প্রাচ্যবিদ এবং লেখক।

১৯৫৯ – আলী শাহ, জিম্বাবুয়ের সাবেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার।

১৯৫৯ – রসানা আরকুয়েটে, তিনি আমেরিকান অভিনেত্রী, পরিচালক ও প্রযোজক।

১৯৬০ – ডেভিড ডুকভ্‌নি, একজন মার্কিন অভিনেতা।

১৯৬০ – আন্তোনিও বান্দেরাস, তিনি স্প্যানিশ অভিনেতা ও প্রযোজক।

১৯৬২ – সুজান কলিন্স, তিনি আমেরিকান লেখক ও চিত্রনাট্যকার।

১৯৬৩ – ফুলন দেবী, তিনি ছিলেন ভারতীয় আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ।

১৯৬৬ – জিমি ওয়েলস, মার্কিন ব্যবসায়ী এবং উইকিপিডিয়ার সহপ্রতিষ্ঠাতা।

১৯৭০ – ব্রেন্ডন পল জুলিয়ান, তিনি নিউজিল্যান্ড বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান সাবেক ক্রিকেটার ও সাংবাদিক।

১৯৭১ – ডমিনিক কর্ক, ইংল্যান্ডের সাবেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার।

১৯৭৩ – হাভিয়ের আদেলমার জানেত্তি, আর্জেন্টিনা সাবেক ফুটবল।

১৯৭৪ – মাইকেল শ্যানন, মার্কিন অভিনেতা ও সঙ্গীতজ্ঞ।

১৯৭৪ – হাইফা আল-মনসুর, তিনি সৌদি আরবের প্রথম নারী চলচ্চিত্র পরিচালক।

১৯৭৫ – শার্লিজ থেরন, দক্ষিণ আফ্রিকান-মার্কিন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ও প্রযোজক।

১৯৭৫ – ইলহান মান্সিজ, তিনি তুর্কি সাবেক ফুটবলার।

১৯৮০ – ওয়েড ব্যারেট, তিনি ইংরেজ মুষ্টিযোদ্ধা, কুস্তিগীর ও অভিনেতা।

১৯৯০ – লুকাস টিল, তিনি আমেরিকান অভিনেতা ও প্রযোজক।

১৮১০ – কামিল বেন্স, তিনি ছিলেন ইতালিয়ান রাজনীতিবিদ ও ১ম প্রধানমন্ত্রী।

১৮৪৫ – আবাই কুনানবিউলি, তিনি ছিলেন কাজাখ কবি, সুরকার ও দার্শনিক।

১৮৬৫ – আলেকজান্ডার গ্লাযুনভ, তিনি ছিলেন রাশিয়ান সুরকার, কন্ডাক্টর ও শিক্ষাবিদ।

১৮৬৮ – প্রমথ চৌধুরী, বাঙালি প্রাবন্ধিক, কবি ও লেখক।

১৮৭১ – অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ভারতীয় চিত্রশিল্পী এবং লেখক।

১৮৭৪ – হার্বার্ট হুভার, তিনি ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩১তম রাষ্ট্রপতি।

১৮৭৬ – মাতা হারি, একজন ওলন্দাজ নর্তকী।

১৮৭৯ – যোহানেস কৎজ, দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটার।

১৭০২ – মুহাম্মদ শাহ, ভারতের মুঘল সম্রাট ছিলেন।

১৭৪০ – স্যামুয়েল আর্নল্ড, তিনি ছিলেন ইংরেজ সঙ্গীত স্রষ্টা।

১৭৭৯ – কার্ল রিটার, একজন প্রখ্যাত জার্মান ভূগোলবিদ।

১৩৯৭ – দ্বিতীয় আলবার্ট, তিনি ছিলেন জার্মানির রাজা।

১২৬৭ – দ্বিতীয় জেমস, তিনি ছিলেন আরাগনের।

 

ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনের ঘটনাবলী—-

২০০৭ – বাংলাদেশের আকাশ থেকে বিশাল আকৃতির একটি বরফ খণ্ড পড়ে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বিড়ালদহ মাজারের পাশের একটি বাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হয়।

১৯১১ – ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্যরা সর্বপ্রথম বেতন গ্রহণের পক্ষে ভোট দেন।

১৯১৩ – বলকান যুদ্ধ অবসানে বুখারেস্ট চুক্তি সম্পন্ন হয়।

১৯১৪ – অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে ফ্রান্স যুদ্ধ ঘোষণা করে।

১৯২০ – প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত ওসমানিয় সাম্রাজ্যের সাথে মিত্র পক্ষের একটি ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

১৯৩৭ – চীনের গুরুত্বপূর্ণ থংজং হ্রদ ও কানতুং প্রদেশের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য জাপান হামলা চালায় এবং দুই বছর ঐ দেশ দু’টির মধ্যে যুদ্ধ চলে।

১৯৪৫ – দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের অন্তিম লগ্নে জাপান নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।

১৮২১ – মিসৌরি আমেরিকার ২৪তম রাজ্যে পরিণত হয়।

১৬৭৫ – রয়াল গ্রিনউইচ অবজারভেটরি স্থাপিত হয়।

 

এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন যারা—-

১৮১৩ – রামরাম বসু বাংলা গদ্যসাহিত্যের আদি লেখকদের একজন।

১৮৪৮ – জনস জ্যাকব বার্জেলিয়াস, একজন সুয়েডীয় রসায়নবিদ ছিলেন।

১৯৩৮ – কনস্তান্তিন স্তানিস্লাভ্‌স্কি, ছিলেন একজন রুশ মঞ্চ অভিনেতা ও নির্দেশক।

২০০২ – ক্রিস্টেন নিগার্ড, তিনি ছিলেন নরওয়েজিয়ান কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও রাজনীতিবিদ।

২০০৮ – আইজাক হায়েজ, তিনি ছিলেন আমেরিকান গায়ক, গীতিকার, পিয়ানোবাদক, প্রযোজক ও অভিনেতা।

২০১১ – ন্যান্সি ওয়েক, ব্রিটিশ এজেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে কাজ করেছেন।

২০১৫ – ফ্রান্সেস ওল্ডহ্যাম কেলসি, ছিলেন একজন কানাডীয়-মার্কিন ফার্মাকোলজিস্ট ও চিকিৎসক।

২০১৮ – করুণানিধি মুথুবেল, ভারতীয় রাজনীতিক ও ভারতের তামিল নাড়ুর সাবেক মুখ্যমন্ত্রী।

১৯৪১ – (২২শে শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ভারতবর্ষের প্রথমনোবেল বিজয়ী বাঙালি কবি ও সাহিত্যিক।

১৯৫৬ – হরেন্দ্র কুমার মুখার্জি খ্যাতনামা বাঙালি শিক্ষাবিদ ও পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল।

১৯৬৬ – আলবার্ট উক্সিপ, তিনি ছিলেন এস্তোনিয়ান অভিনেতা, উদ্ভিদবিজ্ঞানী ও অনুবাদক।

১৯৭১ – বাঙালি কবি, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ সরোজ দত্ত।

১৯৭৩ – জ্যাক গ্রিগরি, অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার।

১৯৭৪ – রোসারিও ক্যাস্তেলানোস, মেক্সিকান কবি ও লেখক।

১৯৭৫ – বার্ট ওল্ডফিল্ড, তিনি ছিলেন অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার।

১৯৮০ – ইয়াহিয়া খান, তিনি ছিলেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ও সামরিক শাসক ছিলেন।

১৭২৩ – গুইলাউমে ডুবইস, তিনি ছিলেন ফরাসি অঙ্কবাচক ও রাজনীতিবিদ।

১৭৫৯ – ষষ্ঠ ফেরডিনান্ড, তিনি ছিলেন স্পেনের রাজা।

০৮৪৭ – আল আবু জাফর হারুন ইবনে মুহাম্মদ আল মুতাসিম, তিনি ছিলেন আব্বাসীয় খলিফা।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

আজ ৭ আগস্ট, ইতিহাসের আজকের এই দিনে যা ঘটেছিল।

আজ ৭ আগস্ট। ইতিহাস ঘেটে দেখা যায় বছরের প্রতিটি দিনে ঘটেছে অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। আসুন আজকের দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় একনজরে দেখে নিই।  ইতিহাসের আজকের এই দিনে কী কী ঘটেছিল, কে কে জন্ম নিয়েছিলেন ও মৃত্যুবরণ করেছিলেন——-

 

দিবস—–

 

(ক) আন্তর্জাতিক বায়োডিজেল দিবস।

 

আজ যাদের জন্মদিন—-

১৯০২ – আর্নে ভিলহেল্ম কাউরিন টিসেলিয়ুস, তিনি ছিলেন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী সুইডিশ প্রাণরসায়নী।

১৯০২ – অ্যান হার্ডিং, মার্কিন মঞ্চ, চলচ্চিত্র, বেতার ও টেলিভিশন অভিনেত্রী।

১৯১১ – নিকোলাস রে, মার্কিন চলচ্চিত্র পরিচালক।

১৯১৩ – ওয়লফগাং পাউল, তিনি ছিলেন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী জার্মান পদার্থবিদ।

১৯২৮ – জেমস র‍্যান্ডি, কানাডীয়-আমেরিকান অবসরপ্রাপ্ত মঞ্চ যাদুকর এবং বৈজ্ঞানিক সংশয়ী।

১৯৩৩ – এলিনর অস্ট্রম, একজন মার্কিন অর্থনীতিবিদ।

১৯৩৭ – ডন উইলসন, ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন।

১৯৪৩ – মোহাম্মদ বাদি, মিশরীয় মুসলিম ব্রাদারহুডের অষ্টম প্রধান গাইড( মুরশিদ)।

১৯৪৭ – আনোয়ার ইব্রাহীম, তিনি ছিলেন মালয়েশিয়ার শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ ও ৭ম উপ-প্রধানমন্ত্রী।

১৯৪৮ – গ্রেগ চ্যাপেল, অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ও বিখ্যাত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা।

১৯৫১ – জুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস, তিনি কলম্বিয়ার ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও ৫৯ তম প্রেসিডেন্ট।

১৯৫৯ – কোনরাড এলস্ট, বেলজিয়াম প্রাচ্যবিদ এবং লেখক।

১৯৫৯ – আলী শাহ, জিম্বাবুয়ের সাবেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার।

১৯৫৯ – রসানা আরকুয়েটে, তিনি আমেরিকান অভিনেত্রী, পরিচালক ও প্রযোজক।

১৯৬০ – ডেভিড ডুকভ্‌নি, একজন মার্কিন অভিনেতা।

১৯৬০ – আন্তোনিও বান্দেরাস, তিনি স্প্যানিশ অভিনেতা ও প্রযোজক।

১৯৬২ – সুজান কলিন্স, তিনি আমেরিকান লেখক ও চিত্রনাট্যকার।

১৯৬৩ – ফুলন দেবী, তিনি ছিলেন ভারতীয় আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ।

১৯৬৬ – জিমি ওয়েলস, মার্কিন ব্যবসায়ী এবং উইকিপিডিয়ার সহপ্রতিষ্ঠাতা।

১৯৭০ – ব্রেন্ডন পল জুলিয়ান, তিনি নিউজিল্যান্ড বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান সাবেক ক্রিকেটার ও সাংবাদিক।

১৯৭১ – ডমিনিক কর্ক, ইংল্যান্ডের সাবেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার।

১৯৭৩ – হাভিয়ের আদেলমার জানেত্তি, আর্জেন্টিনা সাবেক ফুটবল।

১৯৭৪ – মাইকেল শ্যানন, মার্কিন অভিনেতা ও সঙ্গীতজ্ঞ।

১৯৭৪ – হাইফা আল-মনসুর, তিনি সৌদি আরবের প্রথম নারী চলচ্চিত্র পরিচালক।

১৯৭৫ – শার্লিজ থেরন, দক্ষিণ আফ্রিকান-মার্কিন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ও প্রযোজক।

১৯৭৫ – ইলহান মান্সিজ, তিনি তুর্কি সাবেক ফুটবলার।

১৯৮০ – ওয়েড ব্যারেট, তিনি ইংরেজ মুষ্টিযোদ্ধা, কুস্তিগীর ও অভিনেতা।

১৯৯০ – লুকাস টিল, তিনি আমেরিকান অভিনেতা ও প্রযোজক।

১৮১০ – কামিল বেন্স, তিনি ছিলেন ইতালিয়ান রাজনীতিবিদ ও ১ম প্রধানমন্ত্রী।

১৮৪৫ – আবাই কুনানবিউলি, তিনি ছিলেন কাজাখ কবি, সুরকার ও দার্শনিক।

১৮৬৫ – আলেকজান্ডার গ্লাযুনভ, তিনি ছিলেন রাশিয়ান সুরকার, কন্ডাক্টর ও শিক্ষাবিদ।

১৮৬৮ – প্রমথ চৌধুরী, বাঙালি প্রাবন্ধিক, কবি ও লেখক।

১৮৭১ – অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ভারতীয় চিত্রশিল্পী এবং লেখক।

১৮৭৪ – হার্বার্ট হুভার, তিনি ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩১তম রাষ্ট্রপতি।

১৮৭৬ – মাতা হারি, একজন ওলন্দাজ নর্তকী।

১৮৭৯ – যোহানেস কৎজ, দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটার।

১৭০২ – মুহাম্মদ শাহ, ভারতের মুঘল সম্রাট ছিলেন।

১৭৪০ – স্যামুয়েল আর্নল্ড, তিনি ছিলেন ইংরেজ সঙ্গীত স্রষ্টা।

১৭৭৯ – কার্ল রিটার, একজন প্রখ্যাত জার্মান ভূগোলবিদ।

১৩৯৭ – দ্বিতীয় আলবার্ট, তিনি ছিলেন জার্মানির রাজা।

১২৬৭ – দ্বিতীয় জেমস, তিনি ছিলেন আরাগনের।

 

ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনের ঘটনাবলী—-

২০০৭ – বাংলাদেশের আকাশ থেকে বিশাল আকৃতির একটি বরফ খণ্ড পড়ে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বিড়ালদহ মাজারের পাশের একটি বাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হয়।

১৯১১ – ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্যরা সর্বপ্রথম বেতন গ্রহণের পক্ষে ভোট দেন।

১৯১৩ – বলকান যুদ্ধ অবসানে বুখারেস্ট চুক্তি সম্পন্ন হয়।

১৯১৪ – অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে ফ্রান্স যুদ্ধ ঘোষণা করে।

১৯২০ – প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত ওসমানিয় সাম্রাজ্যের সাথে মিত্র পক্ষের একটি ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

১৯৩৭ – চীনের গুরুত্বপূর্ণ থংজং হ্রদ ও কানতুং প্রদেশের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য জাপান হামলা চালায় এবং দুই বছর ঐ দেশ দু’টির মধ্যে যুদ্ধ চলে।

১৯৪৫ – দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের অন্তিম লগ্নে জাপান নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।

১৮২১ – মিসৌরি আমেরিকার ২৪তম রাজ্যে পরিণত হয়।

১৬৭৫ – রয়াল গ্রিনউইচ অবজারভেটরি স্থাপিত হয়।

 

এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন যারা—-

১৮১৩ – রামরাম বসু বাংলা গদ্যসাহিত্যের আদি লেখকদের একজন।

১৮৪৮ – জনস জ্যাকব বার্জেলিয়াস, একজন সুয়েডীয় রসায়নবিদ ছিলেন।

১৯৩৮ – কনস্তান্তিন স্তানিস্লাভ্‌স্কি, ছিলেন একজন রুশ মঞ্চ অভিনেতা ও নির্দেশক।

২০০২ – ক্রিস্টেন নিগার্ড, তিনি ছিলেন নরওয়েজিয়ান কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও রাজনীতিবিদ।

২০০৮ – আইজাক হায়েজ, তিনি ছিলেন আমেরিকান গায়ক, গীতিকার, পিয়ানোবাদক, প্রযোজক ও অভিনেতা।

২০১১ – ন্যান্সি ওয়েক, ব্রিটিশ এজেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে কাজ করেছেন।

২০১৫ – ফ্রান্সেস ওল্ডহ্যাম কেলসি, ছিলেন একজন কানাডীয়-মার্কিন ফার্মাকোলজিস্ট ও চিকিৎসক।

২০১৮ – করুণানিধি মুথুবেল, ভারতীয় রাজনীতিক ও ভারতের তামিল নাড়ুর সাবেক মুখ্যমন্ত্রী।

১৯৪১ – (২২শে শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ভারতবর্ষের প্রথমনোবেল বিজয়ী বাঙালি কবি ও সাহিত্যিক।

১৯৫৬ – হরেন্দ্র কুমার মুখার্জি খ্যাতনামা বাঙালি শিক্ষাবিদ ও পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল।

১৯৬৬ – আলবার্ট উক্সিপ, তিনি ছিলেন এস্তোনিয়ান অভিনেতা, উদ্ভিদবিজ্ঞানী ও অনুবাদক।

১৯৭১ – বাঙালি কবি, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ সরোজ দত্ত।

১৯৭৩ – জ্যাক গ্রিগরি, অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার।

১৯৭৪ – রোসারিও ক্যাস্তেলানোস, মেক্সিকান কবি ও লেখক।

১৯৭৫ – বার্ট ওল্ডফিল্ড, তিনি ছিলেন অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার।

১৯৮০ – ইয়াহিয়া খান, তিনি ছিলেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ও সামরিক শাসক ছিলেন।

১৭২৩ – গুইলাউমে ডুবইস, তিনি ছিলেন ফরাসি অঙ্কবাচক ও রাজনীতিবিদ।

১৭৫৯ – ষষ্ঠ ফেরডিনান্ড, তিনি ছিলেন স্পেনের রাজা।

০৮৪৭ – আল আবু জাফর হারুন ইবনে মুহাম্মদ আল মুতাসিম, তিনি ছিলেন আব্বাসীয় খলিফা।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

আজ হিরোশিমা দিবস, জানুন দিনটি কেন পালিত এবং গুরুত্ব।

প্রতিবছর ৬ আগস্ট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপের বার্ষিকী হিসাবে পালন করা হয়।১৯৪৫ সালের ৬ই আগস্ট সকালে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী জাপানের হিরোশিমা শহরের ওপর লিটল বয় নামের নিউক্লীয় বোমা ফেলে এবং এর তিন দিন পর নাগাসাকি শহরের ওপর ফ্যাট ম্যান নামের আরেকটি নিউক্লীয় বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ভয়াবহ বোমা নিক্ষেপ ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের উদ্দেশ্য করা হয়েছিল। এই দিনটিকে শান্তির প্রচারের জন্য এবং পারমাণবিক শক্তি ও পারমাণবিক অস্ত্রের বিপদ সম্পর্কে সচেতনতা ছড়ানোর জন্য স্মরণ করা হয়।

 

কি হয়েছিলো সেদিন—

 

হিরোশিমার কথা মনে আছে সবার? ভুলে যাওয়ার কথা নয়। ইতিহাস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। জাপানের একটি শহর যুগের পর যুগ কেন এতো আলোচনায়? ইতিহাস বলছে, জাপানের একটি শহর হিরোশিমা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই শহরের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী ‘লিটল বয়’ নামের পারমাণবিক বোমা ফেলে। ঘটনাটি ঘটে ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট সকালে। এর তিন দিন পর জাপানের নাগাসাকি শহরের ওপর ‘ফ্যাট ম্যান’ নামের আরেকটি পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে জাপানের হিরোশিমা শহরে ফেলা হয় বিশ্বের প্রথম পরমাণু বোমা। তখনও ঘুম থেকে জেগে ওঠেনি হিরোশিমার মানুষ। সকাল ৮টা বেজে ১৫ মিনিট। হঠাৎই দানবের মতো হিরোশিমার আকাশের নীলিমায় উদয় হল মার্কিন বি টুয়েন্টিনাইন বোমারু বিমান এনোলা গ্রে। কল্পকথার আগুনমুখো ড্রাগনের মতো সেখান থেকে হিরোশিমার একটি হাসপাতালের ১ হাজার নশো ফুট ওপর বিস্ফোরিত হয় বিশ্বের প্রথম আণবিক বোমা লিটল বয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আণবিক বোমার বিষাক্ত ছোবলে মারা গেল ৮০ হাজার মানুষ। আহত হল আরও ৩৫ হাজার। ঘুমের মধ্যে মারা গেল নারী, শিশু, বৃদ্ধ, যুবা। মাটির সঙ্গে মিশে গেল বেশির ভাগ দালান-কোঠা। হাসপাতালগুলোতে আহতদের চিকিৎসার জন্য বেঁচে রইল খুব অল্পসংখ্যক চিকিৎসক ও সেবিকা। মুহূর্তের মধ্যে যেন এক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হল ছবির মতো সুন্দর জাপানের ছোট্ট শহর হিরোশিমা। এখানেই শেষ নয় বছর না ঘুরতেই আণবিক বোমার ভয়াবহ তেজস্বক্রিয়তায় মারা যায় আরও ৮০ হাজার জাপানি।

 

কেন চালানো হল এই হামলা ?

 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানের আত্মসমর্পণের আহ্বানে জাপান সাড়া না দেওয়ায় তাঁর নির্দেশেই ঠান্ডা মাথায় হিরোশিমায় চালানো হয় নারকীয় এই হামলা। এর উদ্দেশ্যে ছিল দু’টি। এক হল জাপানিদের জব্দ করা, আরেক হল যুদ্ধ দ্রুত শেষ করতে জাপানকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করা। ১৯৩৯-১৯৪৫ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ৯০০০ পাউন্ডেরও বেশি ইউরেনিয়াম-235 বিশ্বের সর্বপ্রথম মোতায়েন করা পারমাণবিক বোমা এবং মার্কিন B-29 বোমারু বিমান, এনোলা গে ৬ আগস্ট ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমা শহরে আক্রমণ করেছিল । বিস্ফোরণটি এতটাই বিশাল ছিল যে তাৎক্ষণিকভাবে ৭০০০০ জন লোকের হত্যা হয়, যা শহরের ৯০% এলাকায় ছড়িয়ে পরে এবং পরবর্তীকালে প্রায় ১০০০০ জন মানুষ রেডিয়েশন এক্সপোজারের প্রভাবে মারা যায়।

 

যার কারণে মুহূর্তেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল একটি শহর। এতে বহু ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট, গাছ-গাছালিসহ হিরোশিমার সার্বিক নির্মাণ কাঠামো বিধ্বস্ত হয়েছিল। জাপানের সরকারি ওয়েবসাইট জানায়, এ হামলায় হিরোশিমার ৬৫ শতাংশ ভবন ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। তারপরই ১৫ অগাস্ট নিঃশর্ত সমর্পণ করার ঘোষণা দেন জাপানের সম্রাট হিরোহিতো। কেননা পারমাণবিক বিস্ফোরণের ভয়াবহ প্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল জাপানের কয়েক প্রজন্মকে।

 

এখনও সে দিনের সেই হামলার দু:সহ স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে হিরোশিমার মানুষ। আণবিক বোমা হামলার এত বছর পরও শহরে জন্ম নিচ্ছে বিকলাংগ শিশু, ক্যনসারসহ দুরারোগ্য ব্যধিতে ভুগছে বহু মানুষ। শোনা যায়, নারীদের গর্ভের সন্তানও এতে আক্রান্ত হয়েছিল। প্রসবের পর বেশিরভাগকেই বিকলাঙ্গ হতে দেখা যায়। সেই ভয়াবহতাকে স্মরণ করতেই প্রতিবছর দিনটিকে ‘হিরোশিমা দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। বিশ্বশান্তি ও শান্তিপূর্ণ রাজনীতির প্রচার করতেই দিবসটি পালন করা হয়।

 

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
উপন্যাস

দামাল মেয়ে কুহেলি (ধারাবাহিক উপন্যাস,দ্বাদশ পর্ব) : দিলীপ রায় (৯৪৩৩৪৬২৮৫৪)।

“কি হলো নাতনী । আমার চা দাও !”
গুণধর দাদুর ডাকে কুহেলির হুঁশ ফিরলো । প্রায় সঙ্গে সঙ্গে উত্তরে কুহেলি বলল, “দাদু“ চা আনছি ।“ তারপর মাটির দুটি চায়ের ভাঁড়ের মধ্যে একটি ভাঁড় গুণধর দাদুর দিকে এগিয়ে ধরে জিজ্ঞাসা করলো, “আজ কী ধরনের বিস্কুট দেবো ?”
না নাতনী, আজ বিস্কুটের পরিবর্তে আমাকে একখানা পাউরুটি দাও । পাউরুটি দিয়ে চা খাবো ।
তারপর কৌতুহল চেপে রাখতে না পেরে গুণধর দাদু জিজ্ঞাসা করলো, “যুবক ছেলেটি কী তোমার পূর্ব-পরিচিত ?”
না দাদু । চা খেতে দোকানে ঢুকেছিলো ।
উহুঁ নাতনী । ছেলেটির সাথে নিশ্চয় তোমার কোনো সম্পর্ক আছে ! নতুবা তার জন্য তুমি অতোটা উতলা কেন ?
কোথায় উতলা হলাম !
নাতনী, আমি ঠিক বুঝতে পারি । ছেলেটির প্রতি তোমার টান দেখে আমি নিশ্চিত, যুবক ছেলেটি তোমার একান্ত আপনজন…… ?
কি যে বলো দাদু । সে নিছক একজন খরিদ্দার ।
খরিদ্দার হলে কী হবে ? ছেলেটিকে আমি চিনি । খুব ভাল ছেলে । সাহাপুর গ্রামের নীলকন্ঠের ছেলে । নীলকন্ঠের সাইকেল, ভ্যান-রিক্সা সারানোর দোকান । আমলাই বাজারে খুব চালু দোকান । নীলকন্ঠের গিন্নি ভ্যানে গাঁয়ে গাঁয়ে ঘুরে সব্জি বিক্রি করে । নীলকন্ঠের বৌটা একটু-আধটু লেখাপড়া জানে । দুজনের উপায়ে তাদের সুখী সংসার । কিন্তু নীলকন্ঠের একটাই ছেলে । ছেলেটি চাকরি না পাওয়ায় তাদের মন খারাপ । তারা চায় না, তাদের ছেলে সাইকেল সারানোর মতো ব্যবসায়ে নামুক । ছেলেটির পড়াশুনা খুব বেশী না । তবে চাকরির চেষ্টা অনেকদিন থেকে । তবে ছেলেটির পুলিশের চাকরির প্রতি বেশী ঝোঁক ! আজ সম্ভবত পুলিশের চাকরির পরীক্ষা দিতে কান্দি গেলো ।
দাদু, তুমি তো ছেলেটির হাঁড়ির খবর পর্যন্ত জানো । তবে ছেলেটির নাম কী ?
নামটা আমার মনে নেই । তবে ছেলেটি খাসা ! গাজা-মদ-বিড়ি-সিগারেট কিচ্ছু খায় না । গাঁয়ের মানুষ সকলেই তাকে ভালবাসে ।
তারপর কুহেলির দিকে তাকিয়ে বলল, “নাতনী এবার আমি চলি ।“
গুণধর দাদু চলে যাওয়ার পর দোকানে বেশ কয়েকজন খরিদ্দারের ভিড় । তাদের চা-জল খাবার দরকার । ব্যস্ত হয়ে পড়লো কুহেলি । কাজের ব্যতিব্যস্ততায় নিমেষের মধ্যে যুবক ছেলেটির কথা কুহেলির অন্তর থেকে আউট ! সেই মুহূর্তে খরিদ্দারদের চাহিদা মেটাতে কুহেলি হিমসিম । উনুন থেকে এক কড়াই ঘুগনি নামলো । ঘুগনি সুস্বাদু হওয়ার কারণে খরিদ্দাদের ভিড় । ঘুগনি উত্তম স্বাদযুক্ত বানানোর জন্য কুহেলির অনলস খাটুনি । ইদানীং ঘুগনিতে পনিরের ছোট ছোট টুকরো মেশায় । ঘরে তৈরী করা নিজের মশলাটা ব্যবহার করে । যার জন্য স্বাদ খুব ভাল হয় । চারজন টোটোওয়ালা অপেক্ষা করছে পাউরুটি ঘুগনি খাওয়ার জন্য । তাদের খাবার দিয়ে উনুনে চা বসালো । কুহেলির একটাই নীতি, সেটা হচ্ছে কখনই চা বানিয়ে চায়ের কেটলিতে রেখে পরের খরিদ্দারদের দেবে না । খরিদ্দারেরা যখন চাইবেন ঠিক সেই মুহূর্তে চা বানিয়ে খরিদ্দারদের পরিবেশন করবে । তাতে দু-কাপ হোক, বা চার কাপ হোক । খরিদ্দারদের প্রয়োজন মতো কুহেলি চা বানাতে অভ্যস্ত । তা ছাড়া চা তৈরীর রসায়ন কুহেলির একেবারে নিজস্ব । ফলে তার দোকানের চায়ের গুণগত মান তুলনামূলকভাবে যথেষ্ট ভাল । এছাড়া এলাকার সকলেই জানে, খাবারের প্রতি কুহেলি যথেষ্ট যত্নশীল ।
**********************************
তারপর অনেকদিন কেটে গেলো । খরিদ্দারদের নিয়ে কুহেলির ব্যস্ততা বেড়েছে, তো কমেনি । সেদিন রবিবার । দুপুরে প্রয়োজন ছাড়া কুহেলি কখনই খাওয়ার জন্য বাড়ি ছোটে না । তবে তুলনামূলকভাবে দুপুরে খরিদ্দারের ভিড় কম । সেই সময় টোটোওয়ালা, অটোওয়ালা, রিক্সাওয়ালা, ছোট ছোট দোকানদার দুপুরের খাবার খেতে বাড়িতে ছোটে । তাই দুপুরটাতে বেচাকেনা হাল্কা । দুপুরে মসুরির ডাল সেদ্ধ ও বাটা মাছের ঝাল বানিয়েছে । সাধারণত দুপুরে সেদ্ধ ভাত খেতে অভ্যস্ত কুহেলি । তবে মাছ না থাকলে ডিম সেদ্ধ অথবা অন্তত ডিমের ওমলেট থাকে । আজ নকুল কাকু লোকাল বাটা মাছ কেটে সুন্দরভাবে ড্রেসিং করে কুহেলিকে পৌঁছে দিয়ে বলে গেছেন, “মাছের ঝাল বানিয়ে খেতে ।“ কাঁচা হাতে মাছের ঝাল বানানো । তাই তার একরাশ চিন্তা, বাটা মাছের যে ঝালটা সে বানিয়েছে সেটা খেতে পারবে কিনা ? থালায় গরম ভাত ও মসুরির ডাল সেদ্ধ ও একটা বাটিতে মাছের ঝাল । তারপর খরিদ্দারদের জায়গায় থালা নিয়ে খেতে বসলো কুহেলি । খেতে বসে তাকিয়ে দেখে , খাওয়ার জল নিয়ে বসেনি । ইতিপূর্বে তার বাবা খাওয়ার সময় জলের গ্লাস দেখতে না পেলে, তিনিই ছুটে জল নিয়ে বসতেন । তাঁর একটা কথা আজও কুহেলির কানে বাজে, “খাওয়ার সময় অবশ্যই জল নিয়ে বসা চাই । নতুবা কোনো কারণে খাবার গলায় আটকে গেলে সেক্ষেত্রে জল না খেলে বিপদের আশঙ্কা !” তাই খাওয়ার সময় কুহেলি জলের গ্লাস বা জলের বোতল পাশে রাখবেই । আজও তার ব্যতিক্রম হলো না । খাওয়ার জলের বোতল সঙ্গে নিয়ে খেতে বসলো ।
ডাল সেদ্ধ দিয়ে খাওয়ার পর বাটা মাছের ঝাল কেবলমাত্র মুখে দিয়েছে, ঠিক সেই সময় সাহাপুরের সেই যুবক ছেলেটি কুহেলির চায়ের দোকানে উপস্থিত । তারপর একগাল হাসি দিয়ে কুহেলির উদ্দেশে বলল, “সেইদিনের অর্ডারের চায়ের দাম মেটাতে এলাম ।“ আপনি খেয়ে নিন, তারপর কথা হবে ।
দোকানের চেয়ারের দিকে ইশারা করে কুহেলি বলল, আপনি একটু বসুন প্লীজ । খাওয়ার পরে আপনার সঙ্গে কথা বলছি ।
যুবক ছেলেটি চুপ থাকার পাত্র নয় । কুহেলির সাথে অনর্গল অযথা বকবক করতে শুরু করলো ।
প্রথমেই জিজ্ঞাসা, “বাড়ি থেকে কী রোজ খাবার দিয়ে যায়, নাকি আপনি বাড়ি না যেতে পারলে খাবার আসে ?” প্রায় সঙ্গে সঙ্গে আবার প্রশ্ন, “কাঞ্চন নগরের মোড় থেকে আপনার বাড়ি কতোদূর ?”
কুহেলি নীরব ! মনে মনে ভাবছে, কলির কেষ্ট এসেছেন । কুহেলি সম্বন্ধে তার কৌতুহলের শেষ নেই । অথচ এখনও তার নাম অজানা ।
হাত মুখ ধুয়ে আর একটা চেয়ার নিয়ে কুহেলি বসলো ।
“আপনার শুভ নামটাই জানা হলো না ?”
যুবক ছেলেটি তখন হাসিমুখে বলল,”আমি জগন্নাথ, তবে গ্রামে বেশীর ভাগ মানুষ জগা নামে ডাকে ।“
আমি আপনাকে জগাদা বলে ডাকবো ।
আমার জগা নামে ডাকটা ভাল লাগে ।
অপরিচিত মানুষের মুখে জগা নামটা শুনতে কী আপনার ভাল লাগবে ?
আপনি অপরিচিত কেন বলছেন ? সেদিন আপনার দোকান ঘুরে গেলাম । ভাবলাম, দুপুরে দোকানে খরিদ্দার কম থাকবে । তাই এই সময়ে আপনার সঙ্গে দেখা করতে আসা । আর তা ছাড়া …………
আর তা ছাড়া কী ?
তা ছাড়া সেদিন বলে গিয়েছিলাম, “পরে আপনার দোকানে আসবো ।“
সব ঠিক আছে, কিন্তু জগা নামে ডাকাটা আমার স্মরণে লাগছে !
কী আশ্চর্য ! আমি আপনাকে ডাকার জন্য অনুরোধ করেছি ।
তবুও আমি জানিয়ে রাখছি, আমি আপনাকে জগাদা বলে ডাকবো ।
তারপর একটু হেসে কুহেলি জিজ্ঞাসা করলো, “এবার বলুন, সেদিনের ইন্টারভিউ কেমন হলো ?
সেদিন ছিল আমার শারীরিক মাপজোক । স্বাস্থ্য বিষয়ক কথাবার্তা । রাজ্য সরকারের পুলিশের কন্সটেবলের চাকরি । আগের লিখিত পরীক্ষায় পাশ করার পর মাপজোকে ডেকেছিল । সেদিনের মাপজোকের পরীক্ষা দিয়ে আমি খুশী । সুতরাং পুলিশের চাকরিটা হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল । জানি না, শেষ পর্যন্ত কী হবে ?
আমার বিশ্বাস, পুলিশের চাকরিটা আপনি পাবেন । এবার বলুন, কী খাবেন ?
আপনার হাতে তৈরী চা খাবো । সেদিন চা খাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি । আজ চা খাওয়ার সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাইছি না ।
আপনি বসুন, আমি চা বানিয়ে আনছি ।
এত ব্যস্ত হবেন না । খরিদ্দার এলে তাদের সাথে আমাকেও বানিয়ে দেবেন । বরং ফুরসত পেয়েছেন, একটু জিরিয়ে নিন ।
আপনি যথেষ্ট মানবিক !
মানবিকতা আমার জীবনের বড় গুণ । কিন্তু জীবনের অন্যান্য দিকগুলির দিকে তাকালে এবং নম্বর দিতে চাইলে, সেখানে নির্ঘাত জিরো দেবেন ।
কেন নিজেকে ছোট ভাবছেন ?
কোনো কাজ করি না । বাপের হোটেলে খাই-দাই, ঘুরে বেড়াই । শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জনের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বাড়াতে পারিনি । এইজন্য বাপের বকুনি অহরহ । সুতরাং আমি একটা অকর্মার ঢেঁকি ।
দুইজন টোটোওয়ালা ঢুকে বলল, “আদা দিয়ে ভাল করে দুটো চা বানাও দিদি ।“
তিন কাপ চা বানালো কুহেলি । মাটির ভাঁড়ে পরিবেশন করলো । আলাদা প্লেটে জগন্নাথকে দু-রকম বিস্কুট দিলো । টোটোওয়ালা চায়ে চুমুক দিয়ে স্বতোস্ফূর্তভাবে বলল, “আজকের চা অন্যান্যদিনের চেয়ে অনেক বেশী সুস্বাদু । বরং বলা ভাল আজকের চা, স্পেশাল চায়ের চেয়েও অনেক উন্নত ।“
টোটোওয়ালার কথা শুনে জগন্নাথ মুচকী মুচকী হাসছে । তারপর কুহেলির দিকে তাকিয়ে বলল, “দাদা একদম ঠিক বলেছেন । আজকের চা অতি মধুর ।“
“থাক জগাদা ! লোকের কথা শুনে আপনাকে সুমিষ্ট মন্তব্য করতে হবে না ।“ বলেই আড়চোখে জগন্নাথের দিকে তাকালো কুহেলি ।
এমন সময় জগন্নাথের মোবাইল ফোন বেজে উঠলো ।
“হ্যালো বাবা । হঠাৎ ফোন !”
এইমাত্র পোস্টম্যান এসেছিলেন । পুলিশের চাকরির এ্যাপোন্টমেন্ট লেটার দিয়ে গেলেন । তোকে সত্বর পুলিশের চাকরিতে জয়েন করতে হবে ।
বাবা, পোস্টিং কোথায় দিলো ?
এই মুহূর্তে ভরতপুর থানায় রিপোর্ট করতে বলেছে ।
“ঠিক আছে বাবা । আমি একটু পরে বাড়ি ফিরছি ।“ বলেই লাইন কেটে দিলো জগন্নাথ । কুহেলি লক্ষ করলো, চাকরির খবর পেয়ে জগন্নাথের শারীরিক ভাষা পুরোপুরি পাল্টে গেলো । খুশীতে টগবগ । তবুও নিজেকে সংযত করে স্বাভাবিক ছন্দে কুহেলির দিকে তাকিয়ে বলল, “পুলিশের চাকরিটা আমার হয়ে গেছে ।“
হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে কুহেলি উত্তরে বলল, “অভিনন্দন !”
“অসংখ্য ধন্যবাদ ।“ খুশীর মেজাজে জগন্নাথ তখন উৎফুল্ল ।
জগাদা, একটা কথা বলবো ।
“কী ?” জানতে চাইলো জগন্নাথ ।
এবার আপনি কী আমাদের ভুলে যাবেন ? যদিও আমার সঙ্গে আপনার আলাপ স্বল্পদিনের ।
স্বল্পদিনের হলেও ……… । যাকগে সেকথা ।
থামলেন কেন জগাদা । কীযেন বলতে চেয়েছিলেন । “স্বল্পদিনের হলেও” বলতে গিয়ে থেমে গেলেন ।
আজ আমি উঠবো কুহেলি ম্যাডাম !
উহুঁ ! কুহেলি ম্যাডাম নয় । এখন থেকে শুধু কুহেলি ।
তবে আপনাকেও জগা নামে ডাকতে হবে, এমনকি “তুমি” সম্বোধনও ।
“ধীরে বৎস ! ধীরে ।“ ঠিক সেই সময় লোহাদহ ঘাট যাওয়ার প্যাসেঞ্জার ভর্তি বাস এসে থামলো । ঠাসা ভিড় । বাস থেকে অনেক প্যাসেঞ্জার নামলেন । এক ঝাক প্যাসেঞ্জার কুহেলির দোকানে হাজির । তাদের বক্তব্য, “বাসটি দেরী করার জন্য তাদের প্রচণ্ড খিদে । ঘুগনী সহযোগে পাউরুটি ও ডিম-টোস্ট চাই ।“
কুহেলি পড়লো মহা সমস্যায় । তাই মুখ ফুটে বলে ফেলল, এতগুলি লোকের পাউরুটি টোস্ট বানাতে একটু সময় লাগবে । একার হাতে আমাকে সব তৈরী করতে হবে । আপনারা ধৈর্য ধরে বসুন প্লিজ !
আপনি ধীরেসুস্থে করুন । আমাদের তাড়া নেই । প্যাসেঞ্জারদের মধ্যে থেকে অল্প বয়সী মহিলা জগন্নাথের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বলল, “আপনার স্বামীকে হাত লাগাতে বলুন । তাহলে আরও তাড়াতাড়ি হবে ।“
একটু হেসে কুহেলি উত্তর দিলো, “উনি আমার স্বামী নন । বরং বন্ধু বলতে পারেন ।“
মহিলা আবার কীযেনো বলতে যাচ্ছিলেন । তাঁর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে জগন্নাথ কুহেলিকে বলল, “উনি যথার্থ বলেছেন ।“
কোনটা যথার্থ বলেছেন — স্বামী, না অন্য কিছু ?
আহম্মকের পাল্লায় পড়া গেলো ! আমি বলতে চাইছি, আমি আপনার কাজে হাত লাগাতে চাই ।
“সরকারি পুলিশকে দিয়ে আমি কোনো কাজ করাতে পারবো না । তাতে খরিদ্দার বিরাগভাজন হলেও আমার তাতে দুঃখ নেই । দেখা যাবে, আপনি একদিন অজানা অজুহাতে আমাকে হাতকড়া পরিয়ে ছাড়বেন !
কুহেলির হাত থেকে একরকম ছিনিয়ে নিয়ে জগন্নাথ পাউরুটি সেঁকতে শুরু করলো । অন্যদিকে কুহেলি ডিম ফাটিয়ে ঐ টোস্ট বানাতে লাগলো । নিমেষের মধ্যে খাবার রেডি করে খরিদ্দারদের খাবার পরিবেশন করলো কুহেলি । কাজের ফাঁকে ফাঁকে জগন্নাথের কর্মকাণ্ড লক্ষ করে কুহেলি বুঝতে পারলো, জগন্নাথ সত্যিই আন্তরিক ও মানবিক । কাজের প্রতি এতটাই নিষ্ঠা, যার জন্য কুহেলির দিকে ঘুরে তাকাবার ফুরসত নেই । জগন্নাথকে নিয়ে গুণধর দাদুর বর্ণনা একদম সঠিক । জগন্নাথের এইসব কর্মকাণ্ড দেখে একটু হলেও কুহেলির মন জগন্নাথের প্রতি দুর্বল হয়ে উঠলো ।
দিদি, আমাকে একটু ঘুগনি দেবেন !
খরিদ্দারের ডাক শোনামাত্র কুহেলির মন থেকে জগন্নাথের চিন্তা উধাও । পুনরায় দোকানের খরিদ্দারকে পরিষেবা দিতে তৎপর হয়ে উঠলো ।
তারপর ভরতপুর থানায় যোগ দেওয়ার দিন খুব সকালে কুহেলির সঙ্গে দেখা করে গেলো জগন্নাথ । সেদিন জগন্নাথের সাথে কুহেলি কোনো কথা বলতে পারেনি । তার চোখ ছিল ছলছল । শুধু অস্ফূট স্বরে বলেছিল, “ভাল থেকো ।“ জগন্নাথও তদ্রূপ । চুপচাপ বসেছিল । দোকান ভর্তি লোকের মধ্যে উঠে যাওয়ার সময় কুহেলির খুব কাছে গিয়ে জগন্নাথ বলল, “তোমাকে আমার সর্বক্ষণ মনে থাকবে ।“
***********************************
কুহেলি টাকা জমানোর দিকে জোর দিলো । তার ইচ্ছা, আধুনিক স্টাইলে রেস্টুরেন্ট খোলা । তার জন্য পর্যাপ্ত পুঁজি দরকার । দোকান ঘর সাজাতে হবে । দরকার হলে উপরে ঘর বানাতে হবে । খরিদ্দারদের বসার জন্য চেয়ার-টেবিল যথেষ্ট সংখ্যায় দরকার ! তার উপর লাইট-ফ্যান । সোজা কথা আধুনিক স্টাইলে দোকানের সৌন্দর্য বাড়াতে হবে । রেস্টুরেন্টে কলেজের ছেলে-মেয়ে সহ সব ধরনের খরিদ্দারদের আগমন ঘটবে । তা ছাড়া দোকানে তখন কর্মচারী রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে । সুতরাং অনেক চিন্তা ভাবনার প্রয়োজন । সর্বোপরি পুঁজির দরকার ।
মাঝখানে কানাই কাকাকে তার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলো কুহেলি । কানাই কাকা পরিষ্কার বলে দিয়েছে, “দোকান উন্নয়নের ব্যাপারে তোমার পুরো স্বাধীনতা রয়েছে । সুতরাং তুমি তোমার ইচ্ছামতো দোকান ঘর সাজিয়ে যাও, আমি তোমার পাশে আছি । আমি চাই, তোমার ব্যবসা বাড়ুক ।“
কুহেলি এখন বড় ব্যবসায়ী । গাঁয়ে-গঞ্জে কুহেলিকে নিয়ে মানুষের মধ্যে আলোচনা, “অভিভাবকহীন একটা বয়স্তা মেয়ে গায়ে-গতরে খেটে যেভাবে দোকানটাকে দাঁড় করালো, সেটা অবর্ণনীয় । তার সমবয়সী অনেক ছেলেরা এইভাবে দোকান দাঁড় করাতে পারবে না । অন্যান্য মেয়েদের কথা ছেড়েই দিলাম । তার উপর মেয়েটা দুর্ধর্ষ সাহসী । এমন সাহসী মেয়ে দ্বিটীয়টি খুঁজে পাওয়া কঠিন !” কাঞ্চন নগর গাঁয়ের বুড়ো মানুষেরা রোজ বিকেলে কুহেলির দোকানে ভিড় করছেন । তাঁদের অনুরোধে কুহেলি বিকেলে অল্প সংখ্যায় সিঙ্গারা ভাজে । সিঙ্গারা বানানোর পদ্ধতি কুহেলি আগেই শিখেছিলো । কেননা প্রথমদিকে সে চেয়েছিলো, সিঙ্গারার দোকান দিতে । তাই কুহেলির সিঙ্গারা বানানোর প্রণালী শেখা । যার জন্য কুহেলি জানে মশলার পরিমান, কতোটা আলু, কতোটা ময়দা, কাঁচা লঙ্কা, সাদা তেল, খাবার সোডা, হলুদ, মৌরি, বাদাম ভাজা, পেয়াজ কুচানো, শুকনো লঙ্কা, আদা-রসুন, গরম মসলা, ধনে পাতা, ইত্যাদি উপকরণ সিঙ্গারা তৈরীতে লাগে । বিকেলের সিঙ্গারা ভাজা ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে । আশেপাশের গ্রামের ছেলেমেয়েরা সাইকেলে এসে কুহেলির দোকান থেকে সিঙ্গারা কিনে নিয়ে যাচ্ছে । দোকানের বিক্রিবাট্টা দেখে প্রতিবেশী দোকানদারদের কুহেলির প্রতি বাঁকা চাহনী । অথচ অন্যদিকে কুহেলির জনপ্রিয়তা দেখে কাঞ্চন নগর গ্রামের স্মৃতির বাবা বললেন, “তুমি এলাকার ছেলেমেয়ের কাছে উৎকৃষ্ট উদাহরণ । তোমাকে দেখে তাদের শেখা উচিত ‘কঠোর পরিশ্রম কাকে বলে এবং কঠোর পরিশ্রম করলে আর্থিক উপার্জন অনায়াসেই সম্ভব ।“
তারপর দীর্ঘদিন কেটে গেলো ।
জগন্নাথ এখন ভরতপুর থানার পুলিশ । বাড়ি থেকেই মোটর বাইকে যাতায়াত । কুহেলির দোকানে বসে চা খাওয়ার সময় নেই । মাঝে মধ্যে যাওয়া-আসার পথে কাঞ্চন নগরের মোড়ে এসে দূর থেকে হাত তুলে ‘টা-টা’ দিয়ে গন্তব্যস্থলে চলে যায় । জগন্নাথের ব্যস্ততা দেখে কুহেলি হাসে ও ভাবে, “বাবু এখন থানার বড় পুলিশ । দায়িত্ব অনেক । তাই তার অফিসে যাওয়ার ভীষণ তাড়া !”
কুহেলি এখনও রেস্টুরেন্ট খোলার প্রয়োজনীয় পুঁজি সংগ্রহ করতে পারলো না । তবে দোকান ঘরটায় হাত দিয়েছে । ছাদ ঢালাই হয়ে গেছে । প্লাস্টারের কাজ চলছে । সামনে বর্ষাকাল । আষাঢ় মাসের শেষ দিক । ভারী বর্ষণ শুরু হয়নি । জমিতে এখন পাট চাষ । পাট কেটে সেই জমিতে ধান রোয়ার চাষ শুরু হবে । চারিদিকে পাট ক্ষেত । বড় বড় পাট । কিছুদিনের মধ্যেই পাট কেটে পচানোর কাজ চলবে ।
অন্যদিকে পাট বড় হলেই কুহেলির চিন্তা বাড়ে । এই সময় গ্রামের মেয়েদের জীবনে অনেক অবাঞ্ছনীয় ঘটনা ঘটে । কিছু সুযোগ সন্ধানী পুরুষ লোলুপ দৃষ্টিতে বয়স্থা মেয়েদের দিকে বিশ্রিভাবে তাকায় । তারা ছোট-বড় মানে না, মেয়ে দেখলেই তাকে তুলে নিয়ে পাটের জমিতে ঢুকিয়ে অশালীন ব্যবহার করার নোংরা প্রয়াস ! দুরভিসন্ধি নোংরা মানুষের হাত থেকে গৃহস্থ বাড়ির বৌ-ঝি’রাও ছাড়া পান না । তার উপর রয়েছে পাচারকারীর চক্র ! নারী পাচারকারী চক্র এই সময় সক্রিয় হয়ে ওঠে । তারা বিভিন্ন জায়গায় ওত পেতে থাকে । স্থানীয় প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে রাতের অন্ধকারে মেয়েদের তুলে নিয়ে মোটা টাকার বিনিময়ে ভিন রাজ্যে পাচার করে দেয় । সেইজন্য আষাঢ়ের শেষে বা শ্রাবণের গোড়ায় জমিতে পাট না-কাটা পর্যন্ত কুহেলির দুশ্চিন্তা ! ভয়ে ভয়ে বাড়িতে যাতায়াত । রাতের বেলায় কাঞ্চন নগরের মানুষের সাথে বাড়ি ফেরে । কাউকে না পেলে, কানাই কাকাকে ডেকে আনে এবং তারপর কাকার সাথে বাড়ি ফেরে । বাড়ি ফেরার সময় লোক নির্বাচন ঠিক না হলে, সেই লোকের হাতে হেনস্থা হওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল । অতীতে অনেক অঘটন ঘটেছে । যদিও কুহেলি এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন কোনোদিন হয়নি । তবে মেয়েদের নিয়ে এই ধরনের আপত্তিজনক ঘটনা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল ।
সারাদিন টিপটিপ বৃষ্টি ! আকাশ মেঘাচ্ছন্ন । বিকেলে খরিদ্দার কম । আকাশের অবস্থা ভাল না থাকায় কুহেলি বিকেলে সিঙ্গারা ভাজেনি । যদিও সিঙ্গারার দুজন খরিদ্দার ঘুরে গেলেন । সন্ধ্যা নেমে এলো । বৃষ্টি কিছুটা থেমেছে । তবে রাস্তা-ঘাটে বৃষ্টির জমা জল । রাস্তা কাদায় ভর্তি । বাসে প্যাসেঞ্জার কুব কম । দোকানে কয়েকজন বসে চা খাচ্ছেন । সন্ধ্যা শেষ হতে না হতেই, চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার । রাত্রি বাড়ছে । দোকান তাড়াতাড়ি বন্ধ করতে চায় কুহেলি । খরিদ্দার নেই । দোকানে শুধুমাত্র ভ্যান রিক্সাওয়ালা মন্টু বসে চা খাচ্ছে । তখন লোডশেডিং । দোকানে বড় বড় দুটি মোমবাতি জ্বালানো । মন্টু কুহেলিকে বলল, “আজ চারিদিকে খুব অন্ধকার । সম্ভবত অমাবস্যা কাছে ! রাস্তায় লোকজন কম । পরের বাসটা দেখে আমি বাড়ি চলে যাবো । শেষ বাসের অপেক্ষায় থাকবো না ।“
“আমিও দোকান বন্ধ করবো মন্টুদা । খরিদ্দারের আনাগোনা খুব কম ।“
ঠিক সেই মুহূর্তে হন্তদন্ত হয়ে কাঞ্চন নগরের পুবালী দোকানে ঢুকেই কুহেলকে বলল, “আমি তোমার সঙ্গে বাড়ি ফিরবো । আমার খুব বিপদ ! অজানা কিছু দুষ্কৃতী আমার পিছু নিয়েছে । সংখ্যায় তারা তিনজন । আবছা আলোয় একজনের মুখে কালো দাড়ি দেখলাম । তাদের উদ্দেশ্য খারাপ । বিশ্রি ভাষায় আমাকে শাসাচ্ছিলো । অন্ধকারে দুষ্কৃতীদের চেহারা বোঝা গেলো না । দুষ্কৃতকারীরা বাইরে থেকে আমাদের এলাকায় ঢুকেছে । মেয়েদের সর্বনাশ করা তাদের টার্গেট ! পেছনে তাড়া করার জন্য খুব জোরে সাইকেল চালিয়ে তোমার দোকানে । অল্পের জন্য আজ রক্ষা পেলাম । এবার তোমার সঙ্গে বাড়ি ফিরবো ।“
পুবালীর কথা শেষ হতে না হতেই সেই মুহূর্তে ঐ তিনজন দুষ্কৃতি কুহেলির দোকানে হাজির । কুহেলির দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাচ্ছে । মুখে বিশ্রি গন্ধ । দুষ্কৃতি তিনজন দোকানে ঢোকামাত্র, কুহেলি মোবাইলে জগন্নাথকে দুষ্কৃতদাকারীর অসৎ উদ্দেশের কথা মেসেজ করে দিলো ।
“এই বেটি, দোকানের মালিক কে ? আমরা চা খাবো ।“ আধা আধা হিন্দি ও বাংলা মিশিয়ে চায়ের অর্ডার । অন্যদিকে ঐতিনজন দুষ্কৃতিকে দেখতে পেয়ে পুবালী পেছন দিয়ে পাশের মিষ্টির দোকানে পালালো । মন্টু তখনও চা খাচ্ছে । দোকানে মন্টু থাকায় কুহেলির একটু ভরসা !
তিনটি চা বানিয়ে তাদের সামনে ধরে কুহেলি বলল, “আপনারা কোথা থেকে এসেছেন ?”
দাড়িওয়ালা পরিষ্কার বাংলায় বলল, “তারা সালার থেকে এসেছে । একজন আত্মীয়কে তারা খুঁজছে ।“ তারপর নিজেদের মধ্যে মৃদু স্বরে বলাবলি, চায়ের দোকানের মেয়েটি খুব খাসা ! তারপর অন্য একজন দুষ্কৃতি মন্টুর দিকে তাকিয়ে বলল, দোকানে কী কেউ একটু আগে ঢুকেছিলো ?”
চোখের ইশারায় কুহেলি মন্টুদাকে কিছু বলতে “না” করে দিলো । তাই রিক্সা ভ্যানওয়ালা মন্টুদা বোবা মানুষের অভিনয় করে হাতের ইশারায় দুষ্কৃতিদের কথার উত্তর দিলো, “সে দোকানে কাউকে দেখেনি ।“ মোবাইলের এস-এম-এসের আওয়াজে মোবাইলে তাকিয়ে দেখে জগন্নাথ বাইক নিয়ে তার দোকানে কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছাচ্ছে । নিশ্চিন্ত হলো কুহেলি । তাই হাল্কা কথাবার্তার মধ্যে দুষ্কৃতিদের আটকে রাখলো কুহেলি ।
এই মুহূর্তে জগন্নাথ একমাত্র কুহেলির কাছের মানুষ । শীতল অনেকদিন আগেই সম্পর্ক চুকিয়ে দিয়েছে । শীতল অজুহাত দেখিয়েছিল, তাদের বাড়িতে কুহেলিকে মেনে নিচ্ছে না । কেননা তারা নীচু বংশের । তবুও কুহেলি উপযাজক হয়ে শীতলকে চেপে ধরে বলেছিলো, “ভালবাসা জাতপাত দেখে হয় না । তুমি আমাকে ভালবাসো, এটাই সত্যি । সুতরাং আমাকে জীবনসঙ্গিনী হিসাবে মেনে নেওয়ার ব্যাপারে তোমার কী মত ?” নির্লজ্জের মতো উত্তরে শীতল বলেছিল, “যেখানে বাবা-মায়ের মত নেই, সেখানে আমাদের সম্পর্ক স্থায়ী করতে অপারগ ।“ পরে কুহেলি খোঁজখবর নিয়ে জেনেছিল, “শীতল কলকাতার অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে অনেক আগেই জড়িয়ে পড়েছে । তাকেই জীবনসঙ্গিনী হিসাবে বেছে নিয়েছে শীতল ।“ তারপর থেকে শীতলের সঙ্গে কুহেলির সম্পর্ক শেষ । এমনকি শীতলের সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ !
হঠাৎ দোকানের সামনে বোলারো চার চাকার গাড়ি !
কিছু বুঝে ওঠার আগেই সাদা রুমালে কেমিক্যাল মিশিয়ে কুহেলিকে বেহুঁশ করে গাড়িতে তুললো । সেই অপহরণের দৃশ্য দেখার জন্য বাইরে উঁকি দিতেই দুষ্কৃতিদের চোখে পড়লো পুবালী । তাকেও গাড়িতে তুললো । নিমেষের মধ্যে বোলারো গাড়ি সোজা লোহাদহ ঘাট । সেখানে ডিজেল ইঞ্জিনে চলা খেয়া নৌকা রেডি । আরও একজন ষণ্ডামার্কা দুষ্কৃতি খেয়া ঘাটে অপেক্ষারতো । পরিকল্পনামাফিক তাদের ছক । বোলারো গাড়ি সমেত খেয়া নৌকায় পার হয়ে বাজারসৌ এলাকাকে পেছনে রেখে গাড়ি ছুটলো বহরমপুরের দিকে । কলকাতার দিকে ঝুঁকি নিলো না । বহরমপুর শহরে না ঢুকে তারা ছুটলো শিলিগুড়ির বাগডোগরা বিমান বন্দরের দিকে । সেখানে জলপাইগুড়ির জঙ্গল থেকে অপহরণ করা চারজন মেয়েকে নিয়ে অপেক্ষা করছে তাদের আর একটি দল । ভোরের ফ্লাইটে দিল্লি যাওয়ার কথা ! কুহেলি ও পুবালীকে নিয়ে আগন্তুকদের গাড়ি দ্রুতগতিতে ছুটছে ।
(চলবে)

Share This