Categories
গল্প প্রবন্ধ

জানুন, শ্রীজগন্নাথের কপালে কিভাবে এল হীরে : রাধাবিনোদিনী বিন্তি বণিক।

রায়সেনগড়ের রাজার প্রধান সেনাপতি ছিলেন শ্রীঅঙ্গদ । তিনি আবার সম্পর্কে রাজার খুড়াও(কাকা) হতেন । অঙ্গদ তেমন ভক্ত  ছিলেন না । তবে তাঁর পত্নী অত্যন্ত ভক্তিমতী ছিলেন । অঙ্গদ  পত্নীকে ভীষণ ভালোবাসতেন । বলতে গেলে পত্নী-অন্ত-প্রাণ ছিলেন । পত্নীর সুখের জন্য তিনি যে কোন কিছু করতে রাজি । একদিন অঙ্গদের ভবনে পত্নীর গুরুদেব এলেন । সেসময় অঙ্গদ ছিলেন না । গৃহে ফিরে তিনি দেখলেন গুরুদেবের সেবায় ব্যস্ত  তাঁর পত্নী । মুহুর্তেই ক্রোধিত হলেন অঙ্গদ । পত্নীকে  তিরস্কার করে বসলেন এই বলে যে, অন্দরমহলে কীভাবে একজন বাইরের পুরুষ প্রবেশ করলো ! ভক্তিমতী রমণী প্রথমে বোঝাবার চেষ্টা করলেন , গুরু সম্পর্কে এমন প্রাকৃত, হীন ভাবনা মনে আনতে নেই । কিন্তু, পত্নীপ্রেমিক অঙ্গদ কিছুতেই কিছু বুঝতে চান না । ভীষণ ঈর্ষা হয়েছে মনে তাঁর । শান্ত প্রকৃতির, সুশীলা রমণী অত্যন্ত কষ্ট পেলেন যখন অঙ্গদ দু-চার কথা সেই গুরুদেবকেও শুনিয়ে দিলেন । রমণী স্থির করলেন, যে গৃহে আমার গুরুর অপমান হল, সেই গৃহে আমি আর থাকবোই না । কিন্তু , আমার স্বামী তো আমায় গৃহের বাইরে যেতেই দেবেন না । চারিদিকে প্রহরী । তাহলে আমি বরং চিরকালের জন্য পৃথিবী থেকে বিদায় নেব ।
মুখে কিছু পত্নী বলেন না, কিন্তু দিনের পর দিন অনাহারে থাকতে লাগলেন । প্রাণ ত্যাগের অভিসন্ধি  নিয়ে । অবশেষে রুগ্না, ক্লীষ্টা হলেন । অসুস্থ হয়ে পড়লেন । বৈদ্য দেখে শুনে বুঝলেন দীর্ঘদিন অনাহারে থাকার ফল এ । অঙ্গদ যখন জানলেন সব বৃত্তান্ত, ব্যথিত হলেন খুব । নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা হল তাঁর । হাজার হোক  পত্নীই যে তাঁর জগৎ । পত্নীকেই নিজের দেবীরূপে দেখতেন তিনি । অভিমান ভুলে তাই মানিনী পত্নীর মান ভাঙ্গাবার চেষ্টা করলেন; বললেন, “তুমি আহার করো । অন্ন মুখে তোলো । কথা দিচ্ছি যা বলবে তাই আমি মাথা পেতে নেব । শুধু তুমি সুস্থ হয়ে আবার আগের মতন হও । খাবার খাও । আমি তোমায় চাই শুধু । আমি ভুল করেছি, মেনে নিচ্ছি । তুমি আমায় ক্ষমা করে দাও দয়া করে । যা ইচ্ছে আদেশ করো ওগো অভিমানিনী ! দেখো, আমি শুনি কিনা ।” অঙ্গদের কাতর প্রার্থনায় হেসে ফেললেন রমণী , বললেন, “বেশ, তবে এতদিন যা বলেছি, কিন্তু করতে চাওনি , এবার সেটাই করতে হবে তোমাকে। যদি রাজী থাকো তবেই অন্ন মুখে নেব ।” অঙ্গদ—- “তুমি একবার শুধু বলে দেখো । আমি তো কথা দিয়েছি যে শুনবো ।” পত্নী—- “তবে তুমি আমার শ্রীগুরুদেবের থেকে কৃষ্ণমন্ত্রে দীক্ষা নাও ।” অঙ্গদ এখন তাতেই রাজী । এতদিন শোনেননি, কিন্তু, এবার যে তার প্রিয়ার প্রাণসংশয় দেখা দিয়েছে । অগত্যা রাজী না হয়ে উপায় নেই যে !
শ্রীগুরুদেবকে আমন্ত্রণ করে আনানো হল অঙ্গদের ভবনে । অঙ্গদ ক্ষমাপ্রার্থনা করে দীক্ষা নিলেন । পত্নীও যার-পর-নাই আনন্দিতা হলেন স্বামীর সিদ্ধান্তে । গুরুদেব ছিলেন সদ্ গুরু । ফলে তাঁর কৃপা-আশীর্বাদে প্রকৃতই ভাবান্তর ঘটে গেল অঙ্গদের অন্তরে । মন্ত্রজপ করতে করতে, কৃষ্ণনাম নিতে নিতে প্রকৃত বৈষ্ণবে পরিণত হলেন তিনি । এখন তাঁর আমূল পরিবর্তন ঘটে গেছে চরিত্রে । এই অঙ্গদ অন্য এক মানুষ এখন । শ্রীরাধার প্রেমকে স্মরণ করতে-করতে শ্রীকৃষ্ণের শ্রীজগন্নাথ-রূপে পরিবর্তিত হবার কথা ভেবে তিনি তন্ময় হয়ে যান । নিজের অন্তরের পত্নীপ্রেমকে অনুভব করে শ্রীকৃষ্ণের অন্তরে শ্রীরাধার প্রতি যে প্রেম—- তা অনুধাবন করার চেষ্টা করে নয়নাশ্রুতে বক্ষ ভাসান তিনি । শ্রীকৃষ্ণের প্রেমবিগলিত রূপ সেই ‘শ্রীজগন্নাথ’-এর প্রতি অদ্ভুত আকর্ষণ তিনি অনুভব করেন । প্রবল প্রেম জাগ্রত হয় জগন্নাথের জন্য ভক্ত শ্রীঅঙ্গদের হৃদয়ে । ভক্ত যখন আপন হৃদমন্দিরে ভগবানকে বসিয়ে নিজের নয়নবারি দিয়ে ভগবানের শ্রীচরণ ধৌত করে দেন আবেগে, আবেশে, ভক্তিতে, প্রেমে —-তখন ভগবানেরও আসন টলে, তিনিও সেই ভক্তের জন্য আকুল হন । তিনি যে ভক্তাধীন —-ভক্তের অধীন ! ভক্তের ভালোবাসায় বাঁধা পড়তে তাঁর বড় ভালো লাগে । বা বলা ভালো ,  তিনি আপনা হতেই বাঁধা পড়ে যান ভক্তের প্রেমরজ্জুতে ।
অঙ্গদ নয়ন জলে ভাসেন আর নিজের পত্নীকে কৃতজ্ঞতা জানান এই বলে যে, “প্রিয়া ! তোমার কাছে আমি জন্ম-জন্মান্তরের কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ হয়েছি । তুমি যদি আমায় কৃষ্ণভজনের এমন সুন্দর পথের পথিক না করতে, তবে তো আমি এত আনন্দের, এত সুখের সন্ধানই পেতাম না ! সত্যিই তুমি আমার প্রথম গুরু গো, প্রিয়ে !” পত্নী শুনে বলেন—- “না, না, এ তুমি কী বলছো ! বলো না এমন ! তোমার পূর্ব জন্মের সুকৃতি বশেই তুমি যা পাবার পেয়েছে । আমার কী সাধ্য বলো ! আমি তো নিমিত্ত মাত্র ! আর কখনো এমন বলো না যে আমি গুরু !” তখন অঙ্গদ বলেন কেন তুমি কী শোনোনি যে—-
“স্ত্রী কিংবা পুত্র কিংবা পশু কেনে নয় ।
কৃষ্ণে মতি যাহা হৈতে সেই গুরু হয় ।।
বিপ্র কিংবা ন্যাসী কিংবা শূদ্র কেনে নয় ।
যেই কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা সেই গুরু হয় ।।”
অর্থাৎ, স্ত্রী, পুত্র বা পশু —-সে যেই হোক না কেন, যার থেকে কৃষ্ণে মতি আসে তিনিই গুরু । আবার ব্রাহ্মণ, সন্ন্যাসী কিংবা শূদ্র বলে কোন কথা নেই —- কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা হলেই তিনি গুরুপদবাচ্য হন ।
এরপর পতি-পত্নীতে তাঁদের শ্রীগুরুদেবের চরণ স্মরণ করেন । প্রকৃতই তো গুরুদেব সদ্গুরু একজন । তাইতো তাঁর প্রদত্ত মন্ত্রে এত তেজ, এত কৃপা যে সেই মন্ত্র জপতে জপতে হৃদয়ে কৃষ্ণপ্রেম জাগ্রত হয়েছে । অঙ্গদ গভীরভাবে শ্রীকৃষ্ণভজনে ডুবলেন । রাজবিষয় বা জাগতিক ব্যাপার আর তাঁর ভালো লাগে না । যেতে হয় যান রাজসভায় । গ্রাম্য কথায় আর মন বসে না ।  মাঝে মধ্যেই অনুপস্থিত থাকেন সভায় ।
একদিন অঙ্গদ বাড়ীতে আছেন, এমন সময় রাজপেয়াদা হাজির । রাজা মহাশয় ডেকে পাঠিয়েছেন, যুদ্ধে যেতে হবে । যুদ্ধের কথা শুনেই অঙ্গদ তৎক্ষণাৎ ‘না’ বলে দিলেন, বললেন—- “না, না, যুদ্ধ-টুদ্ধ আমার দ্বারা আর হবে না । জীবহিংসা আমি করতে পারবো না । তুমি গিয়ে রাজাকে বলে দাও ।” অঙ্গদ যে আর আগের মানুষ নেই—- সে খবর তো রাজা অনেক দিন আগেই পেয়েছেন, অনুভবও করেছেন তাঁর আচরণে । কিন্তু, এখন যে তাঁকে ভীষণভাবে প্রয়োজন রাজার । যুদ্ধে-অভিজ্ঞ অঙ্গদ ছাড়া জয় অনিশ্চিত । রাজা তাই পেয়াদাকে দিয়ে খবর পাঠালেন—- জীবহিংসা করে প্রাণনাশ তাঁকে করতে হবে না নিজের হাতে । কিন্তু, সেনাদের উপযুক্ত পরিচালনার জন্য তাঁর উপস্থিতি একান্ত আবশ্যক । না হলে এ যাত্রায় রক্ষা নেই । রাজ্যের পরাজয় নিশ্চিত । এভাবে অঙ্গদ নিজের দায়িত্ব এড়াতে কোন মতেই পারেন না । রাজ-আজ্ঞা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতেই হবে ।
অগত্যা অঙ্গদ সবদিক বিচার বিবেচনা করে যুদ্ধে উপস্থিত থাকলেন । যুদ্ধ-বিজ্ঞ অঙ্গদের সুনিপুণ পরিচালন গুণে শত্রু রাজা হার স্বীকার করে নিজের সব সম্পদ অর্পণ করে দিয়ে সে যাত্রায় পার পেলেন । যুদ্ধের নিয়মানুযায়ী  নিজের মাথার পাগড়িটিও দিয়ে দিলেন । সেই পাগড়িতে ছিল নির্মল সুন্দর সুদুর্লভ এক মহা-মূল্যবান হীরকখণ্ডক । নজরে পড়লো সেই হীরে অঙ্গদের । দেখামাত্র তাঁর মনে হল, এই হীরে শুধু বহু মূল্যের  নয়, অতি দুর্লভও । চাইলে মূল্য দিয়েও এমন হীরে লব্ধ করা যায় না । নাহ্, এই হীরের যোগ্য অধিকারী তো কেবল শ্রীজগন্নাথ ! আহা ! এ হীরে যদি তাঁর মস্তকে বা কপালে থাকতো তবে কেমন হত ! না, না, এ হীরে আমি বরং নিজের হাতে জগন্নাথকে দিয়ে আসবো ।
অঙ্গদ দেশে ফিরে লুটে আনা সব সম্পদ রাজাকে দিয়ে দিলেন, কেবল দিলেন না সেই অত্যাশ্চর্য অদ্ভুত সুন্দর হীরেটি । নিজের কাছে গোপনে যত্ন করে রেখে দিলেন জগন্নাথকে দিতে যাবেন বলে । এদিকে রাজা লোক মারফৎ জানতে পারলেন যে, পরাজিত রাজার পাগড়িতে হীরে বসানো ছিল, যা সেনাপতি  অঙ্গদ নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন ।
রাজধন আত্মসাৎ করেছে জেনে রাজার ভীষণ ক্রোধ হল । কিন্তু, যেহেতু অঙ্গদ তাঁর সম্পর্কে খুড়ো হন, এবং মনে মনে শ্রদ্ধা করেন তিনি তাঁকে , তাই শাস্তি না দিয়ে, কেবল হীরেটি ভালো মুখে ফেরৎ চাইলেন । কিন্তু, অঙ্গদ দিতে নারাজ । রাজা বারংবার চেয়েও যখন পেলেন না, তখন তাঁর (অঙ্গদ) ঘরবাড়ি ঘেরাও করলেন । তবু ভয় পেলেন না অঙ্গদ সাধু । মনে মনে ভাবলেন প্রাণ যায় যাক তিনি জগন্নাথকে হীরে পরিয়েই ছাড়বেন । আর তাই বেশ কয়েকজন ঘোড়সওয়ার নিয়ে নিজের পাগড়িতে সযত্নে হীরেটিকে লুকিয়ে রেখে যাত্রা করলেন পুরুষোত্তম ক্ষেত্রের দিকে । রাজা এহেন চাতুরীর কথা শুনে পাঁ‍চশ সেপাহীসহ  পাত্রকে পাঠিয়ে ধাওয়া করালেন অঙ্গদের পিছনে । বললেন, “অঙ্গদকে প্রাণে প্রথমেই মারবে না । হীরে চাইবে কেবল । হীরে যদি ভালো কথায় দিয়ে দেয় তো ভালো । হীরে নিয়ে ওকে ছেড়ে চলে আসবে । কিন্তু, যদি তা না দিতে চায়, তবে মুণ্ডচ্ছেদ করে ফেলবে । ওই হীরে আমার চাই, যার জন্য অঙ্গদ এতখানি সাহসী হয়ে উঠলো যে আমার বিরুদ্ধে যেতেও  কুণ্ঠাবোধ করলো না !”
যথারীতি সেনারা একসময় নাগাল পেয়ে গেল অঙ্গদ ও তাঁর ঘোড়সওয়ারদের । সেনারা রাজার হুকুমের কথা জানালো, হীরে না  দিলে এবার কিন্তু মস্তক ছেদন করা হবে । অঙ্গদ ভাবলেন এ তো মহা ফ্যাসাদে পড়া গেল ! কী করা যায় এখন  ! আর তো তবে জগন্নাথের কাছ অবধি পৌঁছানোই গেল না । হীরে দেবো কেমন করে ! তিনি বললেন, “আমি হীরে দিয়ে দেবো তোমাদের । কিন্তু, তার আগে আমি পাশের এই পুষ্করিণীতে স্নান-পূজা করে আসি । সেনারা রাজি হয়ে গেল  । অঙ্গদ স্নান করে উঠে জলে দাঁড়িয়েই শ্রীজগন্নাথদেবের উদ্দেশ্যে অনেক স্তব-স্তুতি করলেন, পূজা দিলেন নিজের মত করে । এবার হীরাখানি সৈন্যদের ফিরিয়ে দেবার সময় । তিনি হীরা হাতে নিয়ে নয়ন বন্ধ করে শ্রীজগন্নাথের চরণ কমল ধ্যান করে মনে মনে নিবেদন করলেন, “হে পুরুষোত্তম জগন্নাথ ! আমি অতি অভাগা যে এই হীরা তোমার কপালে পরাতে চেয়েও পেরে উঠলাম না । এ হীরা কী অন্যের কপালে সাজে ! এ যে একমাত্র তোমাকেই মানায় । কত ভালোবেসে তোমার জন্য আনলাম, কিন্তু পারলাম না দিতে । হে জগন্নাথ আমি তোমাকে উদ্দেশ্য করেই এই হীরা জলে ফেলে দিচ্ছি । এবার তোমার যদি মন চায়, তবে তুমি গ্রহণ করো । আর, আমার কিছু বলার নেই । এই নিবেদন শুধু করলাম । যা ভালো মনে হয় করো ।” —এরপর হীরা নিয়ে অগাধ জলের মধ্যে ফেলে দিলেন অঙ্গদ । বক্ষ তাঁর নয়নের বারিতে ভেসে যাচ্ছে তখন । কন্ঠ রোধ হয়ে আসছে । দেহে বল নেই । অতি অবসন্ন মনে হচ্ছে নিজেকে । এবার সেনারা তাঁকে নিয়ে যা ইচ্ছে করে করুক । মুণ্ড ছেদন করলে করুকগে যাক ।
এদিকে এতক্ষণ সেনারা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অঙ্গদের স্নান-পূজা সব নজরে রাখছিল, যাতে সকলের চোখকে ফাঁকি দিয়ে সুযোগ বুঝে সেনাপতি অঙ্গদ পালাতে না পারেন । কিন্তু, তিনি যে এমন কাণ্ড করে বসবে তা কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি । যখন অঙ্গদ ছুঁড়ে ফেললেন হীরাটি, সকলে একসঙ্গে ‘হায় ! হায় ! এ কী করলেন’ বলে সমস্বরে চীৎকার করে উঠেছিল । আর তারপরই সকলে একসাথে জলে ঝাঁপ দেয় হীরা পাবার লোভে । তারা ভাবলো, অঙ্গদ যায় যাক, হীরা যদি হাতে আসে, অনেক লাভ হবে ।
অঙ্গদ যাত্রা করলেন শ্রীক্ষেত্রের দিকে । ওদিকে  নদীর পাক উঠিয়ে অনেক তল্লাশি করেও হীরার দেখা মিলল না । কেউই পেল না হীরা । রাজাকে জানানো হল । রাজা সব শুনে মৌন হয়ে গেলেন । অনুভব করলেন হীরা জগন্নাথের কপালে পড়াবে বলে অঙ্গদের তীব্র বাসনার কথা ।
ওদিকে পুরুষোত্তম ক্ষেত্রে জগন্নাথের মন্দিরে ঘটলো এক আশ্চর্য ব্যাপার । পাণ্ডারা হঠাৎ দেখলেন জগন্নাথের কপালে একটি বৃহদাকার অপূর্ব সুন্দর হীরকখণ্ড জ্বলজ্বল করছে । তাঁরা ভেবে কুলকিনারা পেলেন না । এই হীরা এল কোথা থেকে !  শিঙ্গারের সময় তো তাঁকে পরানো হয়নি । অদ্ভুত কাণ্ড ! মন্দিরে এ নিয়ে শোরগোল পড়ে গেল । জগন্নাথ  রাত্রে প্রধান পাণ্ডাকে স্বপ্নাদেশ দিলেন—- “আমার কপালের হীরক যে দিয়েছে —-সে আমার ভক্ত ‘অঙ্গদ’ । তার পদার্পণ হবে কাল শ্রীক্ষেত্রে । তোমরা যত্ন করে তাকে দর্শন করাবে সব ।” পরদিন প্রভাত হতেই সন্ধান শুরু হয়ে গেল অঙ্গদ নামের কোন ভক্ত মন্দিরে প্রবেশ করলো কিনা । অপেক্ষার অবসান হল একসময় । অঙ্গদ এলেন জগন্নাথ দর্শনে । পাণ্ডারা তাঁকে যত্ন করে জগন্নাথ দর্শন করালেন । হ্যাঁ, দেখলেন জগন্নাথের মুখে মৃদু-মৃদু হাসি আর মস্তকে ভক্তের ভালবাসার চিহ্ন সেই হীরা—- যা ভগবান সাদরে গ্রহণ করেছেন । অঙ্গদের অন্তর তখন আকুতি ভরা প্রেমে জরজর থরথর । জগন্নাথ তাহলে তাঁর উপহার স্বীকার করেছেন ! এমন যে সৌভাগ্য সত্যই হবে তা তো বিশ্বাসই করতে পারছেন না  অঙ্গদ !
এখনও পর্যন্ত জগন্নাথের বিশেষ বিশেষ শিঙ্গারের দিনে সেই হীরা পরানো হয় তাঁকে।
————–নম্রানতা
রাধাবিনোদিনী বিন্তি বণিক

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *