Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

সুর সম্রাজ্ঞী কিংবদন্তী সঙ্গীত শিল্পী লতা মঙ্গেশকর -জন্ম দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

জন্ম—-

 

লতা মঙ্গেশকর ছিলেন ভারতের একজন স্বনামধন্য গায়িকা।
লতা মঙ্গেশকর ১৯২৯ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর তৎকালীন ইন্দোর রাজ্যের রাজধানী ইন্দোর (বর্তমান মধ্যপ্রদেশ) জন্মগ্রহণ করেন। লতা মঙ্গেশকরের পিতার নাম পণ্ডিত দীনানাথ মঙ্গেশকর। তার বাবা মারাঠি থিয়েটারের একজন বিখ্যাত অভিনেতা এবং নাট্য সঙ্গীত সুরকার ছিলেন। তাই সঙ্গীত শিল্প তার উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত হয়েছিল। তার মাতা সেবন্তী (পরবর্তী নাম পরিবর্তন করে সুধামতি রাখেন) বোম্বে প্রেসিডেন্সির তালনারের (বর্তমান উত্তর-পশ্চিম মহারাষ্ট্র) একজন গুজরাতি নারী ছিলেন।

 

তিনি এক হাজারেরও বেশি ভারতীয় ছবিতে গান করেছেন এবং তার গাওয়া মোট গানের সংখ্যা দশ হাজারেরও বেশি। এছাড়া ভারতের ৩৬টি আঞ্চলিক ভাষাতে ও বিদেশি ভাষায় গান গাওয়ার একমাত্র রেকর্ডটি তারই।

 

পরিবার—

পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে লতা সর্বজ্যেষ্ঠ। তার বাকি ভাইবোনেরা হলেন – আশা ভোঁসলে, ঊষা মঙ্গেশকর, মীনা মঙ্গেশকর ও হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর।

 

স্মরণীয় ঘটনা—-

শৈশবে বাড়িতে থাকাকালীন কে এল সায়গল ছাড়া আর কিছু গাইবার অনুমতি ছিল না তার। বাবা চাইতেন ও শুধু ধ্রপদী গান নিয়েই থাকুক। জীবনে প্রথম রেডিও কেনার সামর্থ্য যখন হলো, তখন তার বয়স আঠারো। কিন্তু রেডিওটা কেনার পর নব ঘুরাতেই প্রথম যে খবরটি তাকে শুনতে হয় তা হচ্ছে, কে. এল. সায়গল আর বেঁচে নেই। সঙ্গে সঙ্গেই রেডিওটা ফেরত দিয়ে দেন তিনি।

 

 

তাঁর গাওয়া উল্লেখযোগ্য হিন্দি গান—

 

তাঁর গলায় পনেরো হাজারেরও বেশি হিন্দি গান রয়েছে। উল্লেখযোগ্য কিছু হিন্দি ছায়াছবির জনপ্রিয় গান –

 

হোঁঠো মে অ্যায়সি বাত (জুয়েল থিফ), আ জান-এ যা (ইন্তেকাম), রয়না বিতি যায়ে (অমর প্রেম), তেরে বিনা জিন্দেগি সে কোই (আঁধি), চলতে চলতে, ইঁয়ুহি কোই (পাকিজা), দুনিয়া করে সওয়াল তো হাম বহু (বেগম), অ্যায় দিল এ নাদান রাজিয়া (সুলতান), নাম গুম জায়েগা (কিনারা), সুন সাহিবা সুন (রাম তেরি গঙ্গা মইলি), সিলি হাওয়া ছু গয়ি (লিবাস), ইয়ারা সিলি সিলি (লেকিন), দিল তো পাগল হ্যায় (দিল তো পাগল হ্যায়), তেরে লিয়ে (বীর জারা), দিল হুম হুম করে (রুদালি), জিয়া জ্বলে (দিল সে), তুঝে দেখা তো ইয়ে জানা সনম (ডি ডি এল জে), আয়েগা আনেওয়ালা (মহল), আজা রে পরদেসি (মধুমতী), পেয়ার কিয়া তো ডরনা কেয়া (মুঘল-ই-আজম), আল্লা তেরো নাম (হম দোনো), অ্যায় মেরে ওয়াতন কে লোগো, লগ যা গলে (ওয়োহ কৌন থি), আজ ফির জিনে কি (গাইড), রহে না রহে হম (মমতা), তু জাঁহা জাঁহা চলেগা (মেরা সায়া),

 

তাঁর গাওয়া উল্লেখযোগ্য বাংলা গান—

 

বাংলাতে ২০০টি গান রেকর্ড করেছিলেন। তারমধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য গান–

 

ও মোর ময়না গো, কেন কিছু কথা বলো না, আজ মন চেয়েছে আমি হারিয়ে যাব, চলে যেতে যেতে দিন বলে যায়, চঞ্চল ময়ূরী এ রাত, কে যেন গো ডেকেছে আমায়, আষাঢ় শ্রাবণ মানে না তো মন, মঙ্গল দীপ জ্বেলে, আজ নয় গুনগুন গুঞ্জন প্রেমের, প্রেম একবারই এসেছিল, রঙ্গিলা বাঁশিতে কে ডাকে, না যেও না রজনী এখনও, ওগো আর কিছু তো নাই, আকাশ প্রদীপ জ্বলে, একবার বিদায় দে মা, সাত ভাই চম্পা, নিঝুম সন্ধ্যায়, চঞ্চল মন আনমনা হয়, বাঁশি কেন গায়, যদিও রজনী পোহাল তবুও।

পুরস্কার ও স্বীকৃতি—

 

লতা মঙ্গেশকর তার কর্মজীবনে অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন। তিনি ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা ভারতরত্ন (২০০১), দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা পদ্মবিভূষণ (১৯৯৯), তৃতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা পদ্মভূষণে (১৯৬৯) ভূষিত হয়েছেন। এই সঙ্গীতশিল্পীকে ২০০৭ সালে ফ্রান্স সরকার তাদের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা লেজিওঁ দনরের অফিসার খেতাব প্রদান করেছে। এছাড়া তিনি দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার (১৯৮৯), মহারাষ্ট্র ভূষণ পুরস্কার (১৯৯৭), এনটিআর জাতীয় পুরস্কার (১৯৯৯), জি সিনে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার (১৯৯৯), এএনআর জাতীয় পুরস্কার (২০০৯), শ্রেষ্ঠ নারী নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে ৩টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ১৫টি বাংলা চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি শ্রেষ্ঠ নারী নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে ৪টি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেছেন। তিনি ১৯৬৯ সালে নতুন প্রতিভা বিকাশের লক্ষ্যে শ্রেষ্ঠ নারী নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন। পরবর্তী কালে তিনি ১৯৯৩ সালে ফিল্মফেয়ার আজীবন সম্মাননা পুরস্কার এবং ১৯৯৪ ও ২০০৪ সালে দুইবার ফিল্মফেয়ার বিশেষ পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৭৪ সালে সব চেয়ে বেশি সংখ্যক গান রেকর্ড করার জন্য গিনেস বুক অফ রেকর্ডে তাঁর নাম ওঠে। তাঁকে ১৯৮০ সালে দক্ষিণ আমেরিকার সুরিনামের সাম্মানিক নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়। ১৯৮৭ সালে আমেরিকার সাম্মানিক নাগরিকত্ব পান। ১৯৯০ সালে পুনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে সাম্মনিক ডক্টরেট প্রদান করা হয় । ১৯৯৬ সালে ভিডিওকন স্ক্রিন লাইফটাইম পুরস্কার। ২০০০ সালে আই আই এফ লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কার এরকম আরো বহু পুরস্কার ও সম্মানে তিনি ভূষিত।

 

প্রয়াণ—

 

লতা ২০২২ সালের ৮ জানুয়ারি কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মুম্বাইয়ের ব্রীচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি হন। করোনা মুক্তও হয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তী শারীরিক অসুস্থতায় অবস্থার অবনতি হয়।  ২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি আজকের দিনেই তিনি মুম্বাইয়ে ৯২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

 

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া।।

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *