Categories
প্রবন্ধ

প্রবীণ গান্ধীবাদী এবং সর্বোদয় নেতা চারুচন্দ্র ভাণ্ডারী’র জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি।।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের অব্যর্থ পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে বহু মনুষ এই অন্দলনে সামিল হয়েছিলেন। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে চারুচন্দ্র ভান্ডারী প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন।চারুচন্দ্র ভান্ডারী ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে।

চারুচন্দ্র ভান্ডারী ছিলেন ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অক্লান্ত কর্মী। চারুচন্দ্র ভান্ডারী ছিলেন একজন নিবেদিতপ্রাণ কংগ্রেস কর্মী, প্রবীণ গান্ধীবাদী এবং সর্বোদয় নেতা। তিনি আচার্য বিনোবা ভাবের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে বাংলায় সর্বোদয় আন্দোলনের প্রধান প্রচারক ছিলেন এবং ভূদান আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন।

জন্ম ও শিক্ষা জীবন—

চারুচন্দ্র ভান্ডারী ১৮৯৬ সালের ১৯ অক্টোবর বর্তমান ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ডায়মন্ড হারবার মহকুমার কুলপি থানার অন্তর্গত শ্যামসুরচক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

কর্মজীবন-

১৯৩০ সালে সারা দেশে লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু হলে চারুচন্দ্র ভান্ডারী মহাত্মা গান্ধীর নির্দেশে সুন্দরবনে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। তিনি আইনজীবী পেশা ত্যাগ করে পুরোপুরি স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেন। লবণ সত্যাগ্রহে অংশ নেওয়ায় চারুচন্দ্রও পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর দক্ষিণ ২৪ পরগনার হাটুগঞ্জ, ডায়মন্ড হারবার, কুলপি, করঞ্জলি, হরিণাভি সহ সুন্দরবনের বিভিন্ন জায়গায় খাদি মন্দির তৈরি করা হয়। স্বাধীনতা সংগ্রামী বিশ্বরঞ্জন সেন ডায়মন্ড হারবারে ‘খাদি মন্দির’ প্রতিষ্ঠায় তার সহযোগীদের একজনের ভূমিকা পালন করেছিলেন। সে সময় সুন্দরবন সংলগ্ন গ্রামের অর্থনীতির ভিত্তি হয়ে উঠেছিল এই খাদি মন্দির। সেখানে চরকা থেকে তৈরি কাপড় গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই খাদি মন্দির থেকেই চারুচন্দ্র তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ঠিক করেন।

১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময়, মহাত্মা গান্ধী চারুচন্দ্রের আমন্ত্রণে ডায়মন্ড হারবারে বর্তমান মহকুমা শাসকের অফিস সংলগ্ন ময়দানে একটি জনসভা করেছিলেন।
চারুচন্দ্র মহাত্মা গান্ধীর আন্দোলনের সাংগঠনিক ও সেবামূলক কাজের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
তিনি গান্ধীবাদী আদর্শে জন্মগ্রহণকারী আধুনিক বাংলাদেশের কুমিল্লায় প্রতিষ্ঠিত অভয় আশ্রমের সাথেও যুক্ত ছিলেন।
চারুচন্দ্র ভান্ডারী আচার্য ছিলেন বিনোবা ভাবের একজন উল্লেখযোগ্য শিষ্য। চারুচন্দ্র পশ্চিমবঙ্গে তাঁর সর্বোদয় আন্দোলনের অন্যতম প্রধান প্রবর্তক ছিলেন। তাঁর মতে, সমবায় গ্রাম দান ও জমি দান আন্দোলনের মূলনীতি। চারুচন্দ্র ভান্ডারী বিনোবা ভাবের নীতিকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন। গয়াতে অনুষ্ঠিত সর্বোদয় সম্মেলনে তিনি আরও অনেকের সাথে জীবন ব্রত নিয়েছিলেন। তিনি ডায়মন্ড হারবারে পশ্চিমবঙ্গ ভূদানযজ্ঞ সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন।

চারুচন্দ্র ভান্ডারী বঙ্গীয় আইনসভার সদস্য ছিলেন। ১৯৪৭ সালের ২০শে জুন তিনি বাংলার অবিভক্ত বিভাগ এবং পশ্চিমবঙ্গ প্রতিষ্ঠার পক্ষে কথা বলেন। ১৯৫১ সালে স্বাধীন ভারতের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে, চারুচন্দ্র ভান্ডারী ডায়মন্ড হারবার বিধানসভা কেন্দ্র থেকে কিষান মজদুর প্রজা পার্টি (KMPP) এর সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষের মন্ত্রিসভায় প্রথম খাদ্যমন্ত্রী হন।

তাঁর রচিত গ্রন্থসমূহ—

ভূদানযজ্ঞ কি ও কেন (১৯৫৫), কোর-আন সার (আসামের অশান্তি প্রসঙ্গে (১৯৬১),

আমাদের জাতীয় শিক্ষা (১৯৬২)

সম্মাননা—

তার মৃত্যুর পর ডায়মন্ড হারবারে তার স্মরণে চারুচন্দ্র স্মৃতি কমিটি গঠন করা হয়। ডায়মন্ড হারবার শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ‘গার্লস স্কুল রোড’ পৌরসভা কর্তৃক ‘চারচন্দ্র ভান্ডারী সরণি’ নামকরণ করা হয়েছে এবং ডায়মন্ড হারবার মেইন রোড ও চারুচন্দ্র ভান্ডারী সরণির সংযোগস্থলে চারুচন্দ্র ভান্ডারীর আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে।

মৃত্যু—

চারুচন্দ্র ভান্ডারী ১৯৮৫ সালের ২৪ জুন মারা যান।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *