Categories
প্রবন্ধ

যতীন্দ্র নাথ দাস, ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের শহীদ বিপ্লবী – জন্মদিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের অব্যর্থ পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে যতীন্দ্র নাথ দাস প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন। যতীন্দ্র নাথ দাস ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে।

 

 

সূচনা—

 

 

যতীন্দ্র নাথ দাস, যতীন দাস নামেই বেশি পরিচিত, ছিলেন একজন ভারতীয় স্বাধীনতা কর্মী এবং বিপ্লবী যিনি ব্রিটিশ রাজ থেকে ভারতকে স্বাধীন করতে কাজ করেছিলেন এবং হিন্দুস্তান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ছিলেন। জেলবন্দীদের অধিকারের দাবিতে ওই বছরই ১৩ই জুলাই অনশন শুরু করেন তিনি। ৬৩ দিন অনশনের পর ১৩ই সেপ্টেম্বর মাত্র ২৪ বছর বয়সে লাহোর কেন্দ্রীয় কারাগারে মারা যান।।
স্বাধীনতার পর তার সম্মানে কলকাতা মেট্রোর হাজরা অঞ্চলের মেট্রো স্টেশনটির নামকরণ করা হয় যতীন দাস পার্ক মেট্রো স্টেশন।

জন্ম শৈশব ও শিক্ষা—-

 

 

যতীন্দ্রনাথ দাস ১৯০৪ সালে কলকাতায় মানিকগঞ্জ, ঢাকা (বর্তমানে বাংলাদেশে) একটি দাস পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম বঙ্কিমবিহারী দাস এবং মাতার নাম সুহাসিনী দেবী। তিনি ম্যাট্রিকুলেশন ও ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন।  ১৯২০ সালে ভবানীপুর মিত্র ইন্সটিটিউশন থেকে ম্যাট্রিক পাস করে কংগ্রেসের সদস্য হয়ে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯২৮-২৯ সনে বঙ্গবাসী কলেজের ছাত্র ছিলেন।

 

 

বিপ্লবী জীবন—–

 

 

তিনি বাংলার একটি বিপ্লবী গোষ্ঠী অনুশীলন সমিতিতে যোগদান করেন এবং ১৭ বছর বয়সে ১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।  কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজে, দাসকে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য গ্রেফতার করা হয় এবং ময়মনসিংহের কারাগারে বন্দী করা হয়।  সেখানে বন্দি থাকাকালীন, তিনি রাজনৈতিক বন্দীদের প্রতি অশোভন আচরণের প্রতিবাদে অনশন করেন।  বিশ দিন অনশন করার পর জেল সুপার ক্ষমা চেয়ে অনশন ছেড়ে দেন।  শচীন্দ্র নাথ সান্যাল তাকে বোমা বানাতে শিখিয়েছিলেন।
১৪ জুন ১৯২৯ তারিখে, তিনি আবার বিপ্লবী কার্যকলাপের জন্য গ্রেফতার হন এবং সম্পূরক লাহোর ষড়যন্ত্র মামলার বিচারের জন্য লাহোর কারাগারে বন্দী হন। পরবর্তী সময়ে এরা জেলের ভেতর রাজনৈতিক বন্দিদের মর্যাদার দাবীতে এবং মানবিক সুযোগ সুবিধার আন্দোলনে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিল। তারা ১৩ জুলাই থেকে ভগৎসিং ও বটুকেশ্বর দত্তের সমর্থনে অনশন সংগ্রাম আরম্ভ করে। যতীন দাস ছাড়া আর কারো অনশন আন্দোলনের অভিজ্ঞতা ছিল না। ভাবাবেগে চালিত হয়ে অনশন সংগ্রামে যোগ দিতে নিষেধ করেছিল অন্য সাথীদের। সে বলল, রিভলবার পিস্তল নিয়ে লড়াই করাই চেয়ে অনেক বেশি কঠোর এক অনশন সংগ্রামে আমরা নামছি। অনশন সংগ্রামীকে তিল তিল করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে হয়।

 

 

লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা ও অনশন—

 

 

১৯২৩ সনে বিপ্লবী শচীন্দ্রনাথ সান্যাল কলকাতার ভবানিপুরে ঘাঁটি করলে তিনি এই দলে যোগ দেন। পরে দক্ষিণেশ্বরের বিপ্লবী দলের সংগেও তার যোগাযোগ হয়। ১৯২৪ সালে দক্ষিণ কলকাতায় “তরুণ সমিতি” প্রতিষ্ঠা করেন এবং এই সময় গ্রেপ্তার হয়ে ঢাকা জেলে প্রেরিত হন। জেল কর্তৃপক্ষের আচরণের প্রতিবাদে ২৩ দিন অনশন করেন। ১৯২৯ সালের ১৪ জুন লাহোর ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামি হিসেবে লাহোর সেন্ট্রাল জেলে প্রেরিত হন। এখানে রাজবন্দিদের উপর জেল কর্তৃপক্ষের দুর্ব্যবহারের জন্য অনশন শুরু করেন। এই সময় তাকে বহুবার জোর করে খাওয়াবার চেষ্টা করা হয়।দাসের অনশন ১৩ জুলাই ১৯২৯ সালে শুরু হয় এবং ৬৩ দিন স্থায়ী হয়।  জেল কর্তৃপক্ষ তাকে এবং অন্যান্য স্বাধীনতা কর্মীদের জোর করে খাওয়ানোর ব্যবস্থা নেয়।  অবশেষে, জেল কর্তৃপক্ষ তাকে নিঃশর্ত মুক্তির সুপারিশ করে, কিন্তু সরকার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এবং তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। ৬৩ দিন অনশনের পর তিনি ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯২৯ তারিখে মারা যান। দুর্গাবতী দেবী অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার নেতৃত্ব দেন, যা ট্রেনে লাহোর থেকে কলকাতা পর্যন্ত গিয়েছিল।  দাসকে শ্রদ্ধা জানাতে হাজার হাজার মানুষ রেলস্টেশনে ভিড় করেন।  কলকাতায় দুই মাইল দীর্ঘ মিছিল কফিনটি শ্মশানে নিয়ে যায়।  সুভাষ চন্দ্র বসু, যিনি হাওড়া রেলস্টেশনে দাসের কফিন গ্রহণ করেছিলেন এবং শ্মশানে শবযাত্রার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।  কারাগারে দাসের অনশন ছিল অবৈধ আটকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। অনশন চলাকালীন শান্তিনিকেতনে তপতী নাটকের মহড়া চলছিল, এই ঘটনায় মর্মাহত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নাটকের মহড়া বন্ধ রাখেন এবং সেই রাতেই রচনা করেন ‘সর্ব খর্ব তারে দহে তব ক্রোধ দাহ’ গানটি , যেটি পরে ‘তপতী’ নাটকে অন্তর্ভুক্ত হয়। এইভাবে মৃত্যুবরণ করার ফলে রাজবন্দিদের উপর অত্যাচার প্রশমিত হয়েছিলো। এই বীর শহিদের মৃতদেহ কলকাতায় আনা হলে দুই লক্ষ লোকের এক বিরাট মিছিল নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে শোকযাত্রায় কেওড়াতলা শ্মশানঘাট পর্যন্ত অনুগমন করে।

 

 

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *