Categories
প্রবন্ধ

বাঙালি সশস্ত্র বিপ্লবী সতীশচন্দ্র পাকড়াশী – প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের কঠোর পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়। এই অন্দোলনে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে  সতীশচন্দ্র পাকড়াশী সরকার প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন। সতীশচন্দ্র পাকড়াশী সরকার ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে। সতীশ চন্দ্র পাকড়াশী ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং একজন বাঙালি সশস্ত্র বিপ্লবী।

 

 

সতীশ চন্দ্র পাকড়াশী ১৮৯১ সালের ১৩ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের নরসিংদীর মাধবদীতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম জগদীশচন্দ্র পাকড়াশী, মাতা মৃণালিনী।

 

 

১৪ বছর বয়সে, সতীশচন্দ্র তার ছাত্রাবস্থায় বিখ্যাত বিপ্লবী ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী মহারাজের সান্নিধ্যে আসার পর গুপ্ত বিপ্লবী পার্টি অনুশীলন সমিতির সদস্য হন।  ১৯১১ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর একই বছর অস্ত্র আইনে তাকে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।  মুক্তি পেয়ে তিনি নরসিংদীতে ফিরে গোপনে আবার দলে যোগ দেন।  তাকে মালদায় পাঠানো হয়েছে।  ১৯১৪ সালে তিনি কলকাতায় যান।  সতীশ পাকড়াশি আইবি পুলিশ সুপারকে হত্যা করার দায়িত্ব নেন কিন্তু পরিকল্পনা অনুযায়ী সুপারিনটেনডেন্টের সভাকক্ষে বোমা নিক্ষেপ করা হয় কিন্তু ভুলের কারণে সতীশ নিজেই বোমা নিক্ষেপে গুরুতর আহত হন।  রাজশাহী বিজ্ঞান কলেজের ছাত্ররা তাকে তাদের হোস্টেলে আশ্রয় দিয়ে চিকিৎসা সেবা দেয়।  ব্রিটিশ সরকার তার নামে একাধিক রাজনৈতিক ডাকাতির জন্য পরোয়ানা জারি করে।

 

 

১৯১৭ সালে, তার সহকর্মী নলিনীকান্ত বাগচীর সাথে তিনি ঢাকায় পুলিশের দমন-পীড়নের জন্য গা ঢাকা দেন।  আরও কয়েকজন সদস্যের সাথে তারা গৌহাটিতে যান এবং সেখান থেকে সারা বাংলাদেশে সশস্ত্র বিপ্লবের কাজ শুরু করেন।  ১৯১৮ সালের ১২ জানুয়ারি পুলিশ তাদের গোপন ঘাঁটি ঘেরাও করলে, ৭ জন পার্শ্ববর্তী নবগ্রহ পাহাড়ে পালিয়ে যায় এবং রিভলবার নিয়ে পুলিশের সাথে লড়াই করে।  ৫ জন ধরা পড়লেও সে ও নলিনীকান্ত বাগচী পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।  দুজনেই পায়ে হেঁটে কলকাতায় চলে যান।  এর কিছুদিন পরই ঢাকায় নলিনীকান্ত শহীদ হন।

 

 

 

 

১৯১৮ সালে কলকাতায় ধরা পড়লে তাকে প্রথমে প্রেসিডেন্সি জেল ও পরে রাজসাহী জেলে পাঠানো হয়। তিন বছর পরে মুক্তি পান। ১৯২৩ সালে সোভিয়েত রাশিয়া থেকে আগত বিপ্লবী অবনী মুখোপাধ্যায়ের সাথে তাকে রাশিয়ায় পাঠানোর চেষ্টা করে সমিতি তবে তা ব্যর্থ হয়। ১৯২৩ এর সেপ্টেম্বর মাসে তিনি আবার গ্রেফতার হন এবং রাজবন্দী হিসেবে ৫ বছর জেল খাটেন। এই সময় তিনি অলিপুর, মেদিনীপুর, ঢাকা, মহারাষ্ট্রের যারবেদা এবং কর্ণাটকের বেলগাঁও জেলে আটক থাকেন। ১৯২৯ এ মেছুয়াবাজার বোমা মামলায় গ্রেপ্তার হলে তার আন্দামানে দ্বীপান্তর হয়। ১৯৩৩ থেকে ছয় বছর সেলুলার জেলে বন্দী থাকেন। এই সময় তিনি কমিউনিজমে আকৃষ্ট হন। তার জীবনের ৩২ বছর কারান্তরালে কেটেছে। ১১ বছর আত্মগোপন করে ছিলেন।

১৯২৮ সালে তিনি কলকাতায় ধরা পড়লে প্রথমে তাকে প্রেসিডেন্সি জেলে এবং পরে রাজশাহী জেলে পাঠানো হয়।  তিন বছর পর মুক্তি পান তিনি।  ১৯২৩ সালে, সমিতি তাকে সোভিয়েত রাশিয়ার একজন বিপ্লবী অবনী মুখার্জির সাথে রাশিয়ায় পাঠানোর চেষ্টা করে, কিন্তু তা ব্যর্থ হয়।  ১৯২৩ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি আবার গ্রেপ্তার হন এবং রাজকীয় বন্দী হিসাবে ৫ বছর দায়িত্ব পালন করেন।  এসময় তাকে ঢাকার আলিপুর, মেদিনীপুর, মহারাষ্ট্রের জারবেদা ও কর্ণাটকের বেলগাঁও থেকে আটক করা হয়।  ১৯২৯ সালে মেশুবাজার বোমা মামলায় গ্রেফতার হলে তাকে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে স্থানান্তর করা হয়।  ১৯৩৩ সাল থেকে তিনি ছয় বছর সেলুলার জেলে বন্দী ছিলেন।  এ সময় তিনি কমিউনিজমের প্রতি আকৃষ্ট হন।  তার জীবনের 32 বছর কারাগারে কেটেছে।  তিনি ১১ বছর ধরে আত্মগোপনে ছিলেন। তার রচিত গ্রন্থ অগ্নিযুগের কথা। এছাড়া স্বাধীনতা ও অনুশীলন পত্রিকায় তিনি বহু লেখা লিখেছিলেন। ঢাকার প্রগতি লেখক সংঘের প্রবীণ সদস্য ও বাংলাদেশ শহীদ প্রীতি সমিতির সভাপতিও ছিলেন।

 

 

মৃত্যু—

 

 

৩০ ডিসেম্বর, ১৯৭৩ সালে  বিপ্লবী সতীশচন্দ্র পাকড়াশী প্রয়াত যান।

 

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *