Categories
প্রবন্ধ

ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব সত্যরঞ্জন বকসি – প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের কঠোর পরিশ্রম ও লড়াই, যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত সৃঙ্খল মুক্ত হতে পেরেছভাপেরেছিল। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে সত্যরঞ্জন বকসি ছিলেন একজন অন্যতম বীর ও নির্ভীক বিপ্লবী। সত্যরঞ্জন বকসি ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে। সত্যরঞ্জন বকসি ছিলেন ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অক্লান্ত কর্মী। তাঁর আবাদান ভারতের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। আজ সেই বীর বিপ্লবীর প্রয়াণ দিবস। জানব তাঁর সেই আত্মত্যাগের কিছু কথা। সত্যরঞ্জন বকসি ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং সুভাষচন্দ্র বসুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও সাংবাদিক।

সত্যরঞ্জন বক্সী বর্তমান বাংলাদেশের বরিশালের গৌরনদী থানার বারথি গ্রামে ১৮৯৭ সালের ১৪ই জুলাই জন্মগ্রহণ করেন।  বাবা বসন্ত কুমার বক্সী ও মা মোক্ষদাসুন্দরী।  পড়াশোনা করেছেন ঢাকা ও কলকাতায়।  মাতুল হেমচন্দ্র ঘোষ ১৯১১ সালে ছাত্র অবস্থায় মাতুল হেমচন্দ্র ঘোষ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বিপ্লবী দল মুক্তি সংঘের (পরে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স নামে পরিচিত) সংস্পর্শে আসেন। ১৯১৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম. পাস করেন এবং ১৯২০ সালে আইনে স্নাতক হন।  এবার তিনি ‘এশিয়াটিক ফেডারেশন’ শিরোনামে একটি বিখ্যাত প্রবন্ধ লিখে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের নজরে আসেন এবং তাঁর স্নেহভাজন হন।

১৯২৩ সালে, তিনি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের ‘ফরওয়ার্ড’ পত্রিকার সহ-সম্পাদক নিযুক্ত হন এবং তার সাংবাদিকতা জীবন শুরু হয়।  দেশবন্ধুর মৃত্যুর পর তিনি ওই পত্রিকার সম্পাদক হন।  ১৯২৭ সালে, তিনি জরিমানা সহ রাষ্ট্রদ্রোহের জন্য কারাগারে বন্দী হন।  তিনি ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে কারারুদ্ধ হন।  ১৯৩০ সালে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি ‘লিবার্টি’ পত্রিকায় যোগ দেন।  লিবার্টি বন্ধ হয়ে গেলে তিনি ‘অ্যাডভান্স’ এবং পরে শরৎচন্দ্র বসুর ‘নেশন’ পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন।

সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সহায়তা করে গেছেন সুকৌশলে। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনে, ঢাকায় লেম্যান, হাডসন, মেদিনীপুরে বার্জ, পেডি, ডগলাস, কুমিল্লায় জেলা ম্যাজিসেট্রটের উপর শান্তি-সুনীতির গুলি, অ্যান্ডারসনের উপর আক্রমণ বা রাইটার্স বিল্ডিং-এ অলিন্দ যুদ্ধের বিনয়-বাদল-দীনেশ এর আত্মাহুতি – এ সবের পিছনে কোন না কোন ভাবে তার যোগদান ছিল। কোথাও পরামর্শদাতা, কোথাও আশ্রয় দাতা আবার কোথাও বা সহযোগী হিসাবে। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী তিনি ছিলেনই। তিনি ও মেজর সত্য গুপ্ত নিরলস ভাবে অত্যন্ত সাবধানে ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ১৬/১৭ ই জানুয়ারির সুভাষের মহানিস্ক্রম্মণের পরিকল্পনার ছক তৈরি করেছিলেন।

তিনি মহানিষ্ক্রমণ পর্ব সম্পর্কে অনেক কিছু জানতেন।  ১৯৪২ সালে, সত্যরঞ্জন শান্তিময় গঙ্গোপাধ্যায়, বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের যতীশ গুহ প্রমুখ বিপ্লবীদের সাথে গ্রেফতার হন।  দিল্লির লাল কেল্লায় সামরিক বাহিনীর হেফাজতে ব্রিটিশ শাসকদের অকথ্য অত্যাচার।  বন্দী অবস্থায় নির্মম নির্যাতনের ফলে মৃত্যু হয় যতীশ গুহের।  কিন্তু সত্যরঞ্জন অবশেষে অনাহার, অর্ধাহার এবং ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে থেকে মুক্তি পান।  নেতাজিকে নিয়ে তাঁর অসামান্য কাজ হল- “জীবনে দুঃসাহসিক কাজ”।  লোকচক্ষু থেকে সত্যরঞ্জন দেশের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন।

সত্যরঞ্জন বকসি ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দের ৮ই জানুয়ারি কলকাতায় প্রয়াত হন।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *