ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের কঠোর পরিশ্রম ও লড়াই, যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত সৃঙ্খল মুক্ত হতে পেরেছভাপেরেছিল। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে মাখনলাল সেন ছিলেন একজন অন্যতম বীর ও নির্ভীক বিপ্লবী। মাখনলাল সেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে। মাখনলাল সেন ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম বিপ্লবী, অনুশীলন সমিতির নেতা, সাংবাদিক ও সম্পাদক । তিনি বিপ্লবী সাংবাদিকতার আদর্শ স্থাপন করেছেন।
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন——–
মাখনলাল সেন ১১ জানুয়ারী, ১৮৮১ সালে তার পিতার কর্মস্থল চট্টগ্রাম, বর্তমানে বাংলাদেশ, ব্রিটিশ ভারতে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা গুরুনাথ সেন তখন সেখানে সহকারী সার্জন ছিলেন। পৈতৃক বাড়ি ছিল মুন্সীগঞ্জ জেলার টংগিবাড়ী উপজেলার সোনারংয়ে। পড়াশুনা চট্টগ্রামে।
বিপ্লবী ক্রিয়াকলাপ———
এমএ পড়ার সময় মাখনলাল স্বদেশী আন্দোলনের সময় বিপ্লবী দলে যোগ দেন এবং ঢাকায় যান এবং অনুশীলন সমিতির নেতা পুলিনবিহারী দাস গ্রেফতার হওয়ার পর সমিতির নেতা হন। ১৯১০ সালে ঢাকা ষড়যন্ত্র মামলায় তাঁর নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে তিনি আত্মগোপন করেন এবং কলকাতায় চলে যান। ১৯১৪ সালে বর্ধমান ও কাঁথিতে প্রবল বন্যা হলে তিনি বাঘা যতীনের সাহায্যে বন্যা দুর্গতদের সাহায্য করতে এগিয়ে যান। এ নিয়ে তৎকালীন বাংলা সরকারের সঙ্গে তুমুল বিরোধ শুরু হয়। ১৯১৫ সালে ভারত রক্ষা আইন প্রণীত হলে মাখনলাল চট্টগ্রামের টেকনাফ অঞ্চলে গ্রেফতার হন। ১৯২০ সালে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি কলকাতায় আসেন এবং কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশনে যোগ দেন। অধিবেশনে মহাত্মা গান্ধীর সমর্থনে এগিয়ে যান। এরপর নাগপুর কংগ্রেসে অসহযোগ নীতি গৃহীত হলে ১৯২১ সালে তিনি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের অনুরোধে কলকাতায় গৌড়ীয় সর্ববিদ্যায়তনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশের পূর্ববঙ্গে সোনারং ন্যাশনাল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
সাংবাদিকতায় ভূমিকা————
তাঁর বিপ্লবী জীবনের বন্ধু সুরেশচন্দ্র মজুমদারের অনুরোধে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১লা নভেম্বর আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক হন কয়েকদিনের জন্য। সেই বছরের ১২ই নভেম্বর, তিনি কলকাতা পুলিশ কমিশনারের আদেশ অমান্য করার জন্য গ্রেপ্তার হন এবং গোলটেবিল সম্মেলনের প্রতিবাদে একটি মিছিলের নেতৃত্ব দেন এবং ছয় মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। ১৯৩৯ সালে, তিনি আনন্দবাজার পত্রিকা ছেড়ে “সাংবাদিক কর্নার” নামে একটি সাংবাদিক সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন এবং ভারত নামে একটি সংবাদপত্র প্রকাশ করেন। ১৯৪২ সালের ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের সময় তিনি “ভারত” পত্রিকার মাধ্যমে বিপ্লবী সাংবাদিকতার চূড়ান্ত আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কাগজটিও ক্ষোভের সাথে দেখা হয়েছিল এবং মাখনলালকে আত্মগোপনে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। কিছুদিনের মধ্যেই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে এবং ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি কারারুদ্ধ ছিলেন। মুক্তির পর তিনি আবার “ভারত” পত্রিকা প্রকাশ করেন, কিন্তু বেশিদিন চালাতে পারেননি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মাখনলাল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগে যোগ দেন।
জীবনাবসান———
মাখনলাল সেন ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের ১১ই মে প্রয়াত হন।
।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।