জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন——–
বাংলা রঙ্গমঞ্চের নৃত্যগীতে সুদক্ষা খ্যাতনাম্নী অভিনেত্রী নীহারবালার জন্ম ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে। তাঁর পিতা ছিলেন কিশোরী মোহন সরকার ও মাতা নীরদা। মাত্র নয় বৎসর বয়সেই তার রঙ্গমঞ্চে প্রবেশ। মাতার কাছেই তার শিক্ষা আর বেড়ে ওঠা । সঙ্গীতের শিক্ষা নেন গৌরীশঙ্কর মিশ্র’র কাছে। তবে নৃত্য ও সঙ্গীতে প্রশিক্ষণের জন্য কিছুদিন মঞ্চ ত্যাগ করেন। তিনি পুনরায় ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে রঙ্গমঞ্চে যোগ দেন নৃত্য ও সঙ্গীতে তালিম নেওয়ার পর।
অভিনয় জীবন————
স্ত্রী-চরিত্র অভিনয়ে একদিকে নাট্যসম্রাজ্ঞী তারাসুন্দরী ও অন্যদিকে লাস্যময়ী নীহারবালা সেসময় স্টারের প্রধান আকর্ষণ ছিলেন। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দ হতে তিনি দীর্ঘদিন স্টার থিয়েটারে অভিনয় করেন। “কর্ণার্জুন” নাটকে ‘নিয়তি’ র ভূমিকায় অভিনয় করে প্রথম খ্যাতি লাভ করেন, সালটা তখন ১৯২৩। নাটকটি সেসময় দু-শো রজনী অভিনীত হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর “চিরকুমার সভা” নাটকে ‘নীরবালা’র ভূমিকায় তার অভিনয় দেখেন। কবিকে মুগ্ধ করে নাটকে সঠিকভাবে তার নাট্যগীতির প্রয়োগের দক্ষতা ও তিনি কবির প্রশংসা কুড়ান। এরপর গ্রামোফোন কোম্পানি তার অনেক গান রেকর্ড করে।
রেকর্ডে প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গানগুলি হল—-
আমি কখন ভাঙি কখন গড়ি, প্রাণহীনা পুতুল সমান, কালপ্রবাহ চলে ধীরে।
এর পরে তিনি স্টার থিয়েটার গোষ্ঠীর সঙ্গে বর্মায় যান ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে । সেখানে “কর্ণার্জুন” ও “ইরাণের রানী” দুটি নাটকে অভিনয় করেন। তিনি বহু নাটকে অভিনয় করেছেন তাঁর তিন দশকের অভিনয় জীবনে। তাঁর অভিনিত উল্লেখযোগ্য নাটক গুলি হল—–
মুক্তির ডাক, জয়দেব, চণ্ডীদাস, প্রফুল্ল, বন্দিনী, রাখিবন্ধন, ছিন্নহার, অপ্সরা, সধবার একদশী, রূপকুমারী, বিবাহ বিভ্রাট, মৃণালিনী, কপালকুণ্ডলা , রামী , চন্দনা, আলেয়া , নাহের, সুদত্তা – প্রভৃতি।
স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র “চন্দ্রশেখর” অভিনয় করে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। এখানে নট ও নাট্যকার অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় তার সহঅভিনেতা ছিলেন । যে সকল চলচ্চিত্রে বিভিন্ন ভূমিকায় তাকে অভিনয় দেখা গিয়েছে সেগুলি হল ———
দেবদাস, প্রহ্লাদ, মিশর রানী, কেলোর কীর্তি, চাঁদ সদাগর, বিদ্যাসুন্দর, আবর্তন, সেলিমা।
অবসরকালীন জীবন ও জীবনাবসান——-
১৯৪৪ সালে তিনি দক্ষিণ ভারত সফরে পুদুচেরি যান। ১৯৫০ সালে অভিনয় থেকে অবসর নেওয়ার পর, তিনি শ্রী অরবিন্দের পন্ডিচেরি আশ্রমের বাসিন্দা হন এবং সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে থাকেন। ১৯৫৪ সালের ৭ মার্চ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।