স্মরণে কিংবদন্তি কৌতুক অভিনেতা জহর রায়।স্মরণে কিংবদন্তি কৌতুক অভিনেতা জহর রায়।
জহর রায় (১৯ সেপ্টেম্বর ১৯১৯ – ১ আগস্ট ১৯৭৭) ছিলেন একজন ভারতীয় অভিনেতা এবং বাংলা সিনেমার কৌতুক অভিনেতা। বাংলা তথা ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে জহর রায় এক কিংবদন্তি শিল্পী। তিনি মূলত একজন কৌতুক অভিনেতা হিসাবেই বেশী পরিচিত। তাঁর অভিনীত প্রতিটি সিনেমাতে যেভাবে হাস্যরস পরিবেশিত হয়েছে তা এককথায় অসাধারন। তিনি ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে কমেডি চলচ্চিত্রের জন্য পরিচিত ছিলেন।

১৯শে সেপ্টেম্বর ১৯১৯ অবিভক্ত বাংলার বরিশালে তথা ব্রিটিশ শাসিত ভারত বর্ষে জহর রায় জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতা সতু রায়ও রঙ্গমঞ্চ ও চিত্রজগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে জীবিকার সন্ধানে পাটনায় চলে আসেন। এখানেই জহর রায় তার পড়াশোনা শেষ করেন এবং প্রুফ রিডার, মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ এবং অবশেষে একজন দর্জির মতো অদ্ভুত চাকরিতে কাজ শুরু করেন। তিনি এই সব ছেড়ে 1946 সালের দিকে কলকাতায় আসেন।

জহর রার ১৯৩৮ সালে নারকেলডাঙ্গা হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। এরপর তিনি পাটনা থেকে আই এ পাশ করেন এবং সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রুফ রিডিং এর কাজে নি্যুক্ত হন। এই সবকিছুর মধ্যেই তিনি তাঁর অভিনয় চালিয়ে যেতে থাকেন। রয় চরিত্রাভিনেতা হওয়া সত্বেও তার যথেষ্ট ফ্যান ফলোয়িং ছিল। রায়ের প্রথম প্রধান চলচ্চিত্রের ভূমিকা ছিল অর্ধেন্দু মুখার্জি পরিচালিত পূর্বরাগে এবং বিমল রায় পরিচালিত অঞ্জনগড় (১৯৪৮) ছবিতে। এরপর বিমল রায় পরিচালিত ‘অঞ্জনগড়’ সিনেমায় একটি গুরূত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন। এরপর ১৯৫৩ সালে জহর রায় রংমহল নাট্যমঞ্চে যোগদান করেন এবং পরবর্তীকালে নাটক নির্দেশনা শুরু করেন।

জহররায়ের অভিনীত অগনিত সিনেমার মধ্যে ‘ধন্যিমেয়ে’ ‘ছদ্মবেশী’ ‘ভানু গোয়েন্দা জহর অ্যাসিস্ট্যান্ট’ বিশেষভাবে উল্লেখ্য। ‘পরশ পাথর’ সিনেমাটিতে তিনি তুলসী চক্রবর্তীর একজন চাকর এর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। যদিও চরিত্রটি খুবই ছোটো ছিল তবে তাঁর অভিনয়ের গুনে সেটিও মানুষের মনে যায়গা করে নিয়েছিল।তিনি সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। ‘গুপী গাইন ও বাঘা বাইন’ সিনেমাটিতে কূট মন্ত্রনাদায়ী ষড়যন্ত্রী মন্ত্রীর ভূমিকাতেও অসাধারন অভিনয় করেছেন।গুপি গাইন বাঘা বাইন-এ একটি মায়াবী ভূমিকা ছিল যেখানে তিনি একজন নিরীহ এবং শান্তিপ্রিয় রাজার কুটিল যুদ্ধবাজ মন্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। ‘ছদ্মবেশী’ সিনেমাটিতে তিনি একটি গানও গেয়েছেন। তার কর্মজীবনের শেষের দিকে, যখন তিনি অসুস্থ ছিলেন, তিনি ঋত্বিক ঘটকের আত্মজীবনীমূলক চলচ্চিত্র যুক্তি তক্কো আর গপ্পোতে একটি ক্যামিও করেছিলেন। তিনি প্রায় ৩৫০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।
জহর রায় বাংলা থিয়েটারে অবদানের জন্যও পরিচিত ছিলেন। দুই দশকের ক্যারিয়ারে তিনি বেশ কিছু নাটকে অভিনয় করেছেন। তিনি কলকাতার রং মহল থিয়েটারের আজীবন সহযোগী ছিলেন। আদর্শ হিন্দু হোটেল, উলকা, সুবর্ণগোলক এবং অনর্থ নাটকে তার অভিনয় এখনও মনে আছে।তাঁর অভিনয় জীবনের শেষের দিকে তিনি ঋত্বিক ঘটকের সিনেমা ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’ তে অতিথি শিল্পী হিসাবে উপস্থিত ছিলেন।

অভিনীত জনপ্রিয় চলচ্চিত্রসমূহ—
১৯৪৭ পুর্বরাগ, ১৯৪৮ অঞ্জনগড়, ১৯৫৫ ডাকিনির চর, ১৯৫৭ উল্কা, পরশ পাথর, ১৯৫৮ রাজলক্ষী ও শ্রীকান্ত , বাড়ি থেকে পালিয়ে; ১৯৬২ অতল জলের আহবান; ১৯৬৩ পলাতক, সূবর্ণরেখা; ১৯৬৫ অভয়া ও শ্রীকান্ত; ১৯৬৬ কাল তুমি আলেয়া; ১৯৬৭ নয়নিকা সংবাদ; ১৯৬৯ গুপী গাইন বাঘা বাইন; ১৯৭০ নীশিপদ্ম, ভানু গোয়েন্দা জহর অ্যাসিস্ট্যান্ট; ১৯৭১ ধন্যি মেয়ে; ১৯৭২ মর্জিনা আবদুল্লা; ১৯৭৪ যুক্তি তক্কো আর গপ্পো, যমালয়ে জীবন্ত মানুষ; ১৯৭৫ ছুটির ফান্দে।
মৃত্যু—
জহর রায় ১১ই আগষ্ট ১৯৭৭ সালে পরলোক গমন করেন।
।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।