Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

প্রথম ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, যা কাশ্মীর যুদ্ধ নামেও পরিচিত।

প্রথম ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, যা কাশ্মীর যুদ্ধ নামেও পরিচিত, 6 সেপ্টেম্বর, 1965-এ শুরু হয়েছিল এবং 23 সেপ্টেম্বর, 1965 পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল৷ এই দ্বন্দ্বটি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিশেষ করে বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে একাধিক ঘটনা এবং উত্তেজনার সূত্রপাত হয়েছিল৷ কাশ্মীরের।

*পটভূমি*

কাশ্মীর, একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগে একটি রাজকীয় রাজ্য ছিল। 1947 সালে, যখন ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করে, কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং প্রাথমিকভাবে স্বাধীন থাকতে চেয়েছিলেন। যাইহোক, পাকিস্তানি উপজাতীয় আগ্রাসনের কারণে, তিনি 1947 সালের অক্টোবরে ভারতের সাথে যোগদানের একটি দলিল স্বাক্ষর করেন। এর ফলে 1947 সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হয়, যা জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি এবং নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শেষ হয়। ), কাশ্মীরকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিভক্ত করে।

*যুদ্ধের কারণ*

1960 এর দশকের গোড়ার দিকে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যায় বিভিন্ন কারণের কারণে:

1. *কাশ্মীর বিরোধ*: কাশ্মীর সমস্যাটি অমীমাংসিত রয়ে গেছে, পাকিস্তান দাবি করছে সমগ্র অঞ্চল এবং ভারত সংখ্যাগরিষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ করছে।
2. *সীমান্ত সংঘর্ষ*: এলওসি বরাবর ঘন ঘন সংঘর্ষ হয়েছে, উভয় পক্ষই একে অপরকে আগ্রাসনের জন্য অভিযুক্ত করেছে।
3. *ভারতীয় সংসদের রেজোলিউশন*: 1964 সালের ফেব্রুয়ারিতে, ভারতীয় সংসদ কাশ্মীরকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে একটি প্রস্তাব পাস করে, যা পাকিস্তান তার দাবির প্রতি চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখেছিল।
4. *পাকিস্তানি অনুপ্রবেশ*: পাকিস্তান ভারত-শাসিত কাশ্মীরে জঙ্গিদের অনুপ্রবেশ শুরু করে, একটি বিদ্রোহের জন্ম দেওয়ার লক্ষ্যে।

*যুদ্ধ*

6 সেপ্টেম্বর, 1965-এ, পাকিস্তানি বাহিনী এলওসি জুড়ে একটি বিশাল আর্টিলারি ব্যারেজ শুরু করে, যার পরে একটি পদাতিক আক্রমণ হয়। ভারত শক্তির সাথে জবাব দেয় এবং যুদ্ধটি পাঞ্জাব সীমান্ত সহ অন্যান্য সেক্টরে ছড়িয়ে পড়ে।

*মূল ঘটনা*

1. *অপারেশন জিব্রাল্টার*: কাশ্মীরে জঙ্গিদের অনুপ্রবেশের পাকিস্তানের পরিকল্পনা, যা ভারতীয় প্রস্তুতির কারণে ব্যর্থ হয়।
2. *অপারেশন গ্র্যান্ড স্ল্যাম*: কৌশলগত শহর আখনুর দখল করার পাকিস্তানের প্রচেষ্টা, যা ভারতীয় বাহিনী দ্বারা প্রতিহত করা হয়েছিল।
3. *আসল উত্তরের যুদ্ধ*: একটি সিদ্ধান্তমূলক ভারতীয় বিজয়, যেখানে পাকিস্তানি বাহিনী পরাজিত হয় এবং তাদের কমান্ডার মেজর জেনারেল নাসির আহমেদ খান নিহত হন।
4. *হাজি পীরের যুদ্ধ*: ভারতীয় বাহিনী কৌশলগত হাজি পীরের গিরিপথ দখল করে, তাদের একটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা দেয়।

*যুদ্ধবিরতি এবং পরবর্তী ঘটনা*

23 সেপ্টেম্বর, 1965-এ, একটি জাতিসংঘ-মধ্যস্থতা যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছিল, যুদ্ধের অবসান ঘটায়। 1966 সালের জানুয়ারিতে স্বাক্ষরিত তাসখন্দ চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে শত্রুতার অবসান ঘটায়, উভয় পক্ষই সৈন্য প্রত্যাহার করতে এবং নিয়ন্ত্রণরেখাকে সম্মান করতে সম্মত হয়।

*পরিণাম*

1. *কাশ্মীর বিভক্ত রয়ে গেছে*: যুদ্ধ কাশ্মীর বিরোধের সমাধান করতে পারেনি, অঞ্চলটিকে বিভক্ত করে রেখেছে।
2. *ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক*: যুদ্ধ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ককে আরও উত্তেজনাপূর্ণ করে তোলে, যা ভবিষ্যতে সংঘাতের সম্ভাবনা বেশি করে তোলে।
3. *সামরিক আধুনিকীকরণ*: উভয় দেশই সামরিক আধুনিকায়নকে ত্বরান্বিত করেছে, যার ফলে একটি আঞ্চলিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।

*উপসংহার*

প্রথম ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ছিল এই অঞ্চলের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য সংঘাত, যা কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে গভীর উত্তেজনাকে তুলে ধরে। যুদ্ধের ফলে একটি অচলাবস্থা দেখা দেয়, কোন পক্ষই সিদ্ধান্তমূলক বিজয় অর্জন করতে পারেনি। অমীমাংসিত কাশ্মীর বিরোধ আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

১৯৬৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ সোয়াজিল্যান্ড বৃটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে।

6 সেপ্টেম্বর, 1968-এ, ছোট দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ সোয়াজিল্যান্ড ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে, যা তার ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক চিহ্নিত করে। এই গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষটি ছিল স্ব-শাসন এবং স্বাধীনতার জন্য সোয়াজি জনগণের বছরের পর বছর সংগ্রাম এবং সংকল্পের চূড়ান্ত পরিণতি।

_প্রাথমিক ইতিহাস এবং ঔপনিবেশিক যুগ_

সোয়াজিল্যান্ড, আফ্রিকার দক্ষিণ অংশে অবস্থিত একটি স্থলবেষ্টিত দেশ, 18 শতকের একটি সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্র্যময় ইতিহাস রয়েছে। সোয়াজি রাজ্যটি রাজা এনগওয়ানে তৃতীয় দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যিনি একটি শক্তিশালী জাতি গঠনের জন্য বিভিন্ন গোষ্ঠী এবং উপজাতিকে একত্রিত করেছিলেন। যাইহোক, 19 শতকের শেষের দিকে ইউরোপীয় উপনিবেশকারীদের আগমন রাজ্যের সার্বভৌমত্বকে ব্যাহত করে। 1894 সালে, সোয়াজিল্যান্ড ব্রিটেনের একটি সংরক্ষিত রাজ্যে পরিণত হয়, যা দেশের বিষয়গুলির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগ করে।

_স্বাধীনতার লড়াই_

স্বাধীনতার যাত্রা শুরু হয়েছিল 20 শতকের মাঝামাঝি সময়ে, যখন সোয়াজি নেতাদের একটি নতুন প্রজন্মের আবির্ভাব হয়েছিল, তারা তাদের দেশের সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধার করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। প্রিন্স মাখোসিনি ডলামিনি, স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, সোয়াজি জনগণকে একত্রিত করতে এবং ব্রিটিশ সরকারের সাথে আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। 1963 সালে গঠিত সোয়াজিল্যান্ড জাতীয় কাউন্সিল স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রধান বাহন হয়ে ওঠে।

_সাংবিধানিক আলোচনা এবং অভ্যন্তরীণ স্ব-সরকার_

1960 এর দশকের গোড়ার দিকে, ব্রিটিশ সরকার সোয়াজি নেতৃত্বের সাথে সাংবিধানিক আলোচনা শুরু করে, অভ্যন্তরীণ স্ব-শাসনের পথ প্রশস্ত করে। লিটলটন সংবিধান, 1963 সালে প্রবর্তিত, একটি আইন পরিষদ এবং একটি নির্বাহী পরিষদ প্রতিষ্ঠা করে, যা স্ব-শাসনের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ চিহ্নিত করে। যাইহোক, সোয়াজি জনগণ পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য চাপ দিতে থাকে।

_স্বাধীনতার পথ_

1966 সালে, ব্রিটিশ সরকার সোয়াজিল্যান্ডকে স্বাধীনতা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। প্রিন্স মাখোসিনি ডলামিনি স্বাধীনতার শর্তাবলী নিয়ে আলোচনার জন্য লন্ডনে একটি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। তীব্র আলোচনার পর, ব্রিটেন-সোয়াজিল্যান্ড স্বাধীনতা আদেশ 6 সেপ্টেম্বর, 1968 সালে স্বাক্ষরিত হয়, আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে।

_স্বাধীনতা এবং পরবর্তী_

6 সেপ্টেম্বর, 1968-এ, সোয়াজিল্যান্ড তার স্বাধীনতা উদযাপন করেছিল, প্রিন্স মাখোসিনি ডলামিনি দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। রাজা দ্বিতীয় সোভুজা, যিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, তিনি রাষ্ট্রপ্রধান হন। সদ্য স্বাধীন জাতি অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সামাজিক বৈষম্য সহ উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিল। যাইহোক, সোয়াজি জনগণ একটি সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক দেশ গড়তে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল।

_স্বাধীনতার উত্তরাধিকার_

সোয়াজিল্যান্ডের স্বাধীনতা সোয়াজি জনগণের সাহস এবং স্থিতিস্থাপকতার প্রমাণ হিসাবে কাজ করে। দেশটি অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। বর্তমানে, সোয়াজিল্যান্ড কমনওয়েলথ এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের সদস্য, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।

_উপসংহার_

সোয়াজিল্যান্ডের স্বাধীনতার যাত্রার গল্পটি স্ব-সংকল্প এবং স্বাধীনতার গুরুত্বের একটি শক্তিশালী অনুস্মারক। প্রিন্স মাখোসিনি দ্লামিনীর মত দূরদর্শী নেতাদের নেতৃত্বে সোয়াজি জনগণের সাহস ও সংকল্প একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথ প্রশস্ত করেছে। সোয়াজিল্যান্ডের ক্রমাগত বৃদ্ধি এবং বিকাশের সাথে সাথে এর জনগণ তাদের ঐতিহ্যের জন্য গর্বিত এবং আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সমৃদ্ধ জাতি গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

মানুষ ও মানবতা – একটি পর্যালোচনা  :  দিলীপ রায়।

“মানবতা” শব্দ নিয়ে বেশ কয়েকটি লেখা পাঠক সমাজে ইতিমধ্যে উপহার দিয়েছি । তবুও আমি মনে করি ‘মানবতা’ নিয়ে ঐ কয়েকটা লেখা জন-সচেতনার পক্ষে যথেষ্ট নয় । মানবতা, মানবিকতা, মানবপ্রেমী, ইত্যাদি শব্দগুলি আজকের দিনে খুব প্রাসঙ্গিক । রাস্তা ঘাটে হাঁটলে এবং চারিদিকের মানুষজনের দিকে তাকালে মানবিকতার কথা মনের ভিতর উদ্রেক ঘটলে, মুখে একটা শুকনো হাসি পায় । একটা কথা বার বার ঘুরপাক খায়, “হায় রে মানবিকতা ! তোর এত আকাল !” চোখ বুজে ভাবলে একটা কথা মুখ দিয়ে উচ্চারণ হয়, “নিঃস্বার্থ মানবিকতা কোথায় ?” অথচ আমরা জানি, প্রত্যেকটা মানুষের মধ্যে মানবিকতা বিরাজমান । মনুষ্যত্বহীন মানুষকে মানুষ বলা সমাজের দৃষ্টিতে প্রচণ্ড কঠিন । সমাজের দৃষ্টিতে মানবিকতা মানুষের সুপ্ত গুণাবলীর মধ্যে অন্যতম গুণ । সুতরাং এটা বলা যায়, মানুষ মানবিকতার অধিকারী । মানুষ্যত্ববোধ, মনুষ্যত্বের বিকাশ ও মানুষের কার্যকর অস্তিত্বের মধ্যেই “মানুষ’এর প্রকাশ । তাই বলা চলে, মানবিকতা ছাড়া মানুষ নয় । মানবিকতা আছে বলেই মানুষ অর্থাৎ মানবিকতা ধারন বা লালন করে বলেই মানুষ । কিন্তু দুঃখের বিষয় — মানব কল্যাণে মানবিকতার বহিঃপ্রকাশ দূরবীণ দিয়ে দেখার মতো !
“মানবতা” শব্দের সঙ্গে গভীরভাবে যে শব্দটি জড়িয়ে আছে সেটা হচ্ছে ‘নিঃস্বার্থ’ । কারণ আমরা জানি, যখন কোনো মানুষ, মানুষের কল্যাণে কাজ করবে সেটা থাকতে হবে সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থ । কিন্তু বতর্মানে একেবারে স্বাথের্র বাইরে মানুষ মানবিকতার নিরিখে কতটা কাজ করে বা করছে সেটা স্থিরভাবে বলা খুব কঠিন । কিছু ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষভাবে কোনো স্বার্থ না থাকলেও পরোক্ষভাবে রয়েছে । বর্তমানে আমাদের দেশে অনেক সংগঠনকেই মানবসেবা, মানব কল্যাণে কাজ করতে দেখা যায় । তাদের প্রয়াস কতটা ব্যাপৃত সেটা এখন ভাববার বিষয় ? সমাজে যারা অভাবী, অসহায়, সম্বলহীন, খেটে খাওয়া অতি সাধারণ মানুষ প্রয়োজনে ঐসব সংগঠন থেকে তারা কতটা উপকৃত হচ্ছে — তার কোনো রিপোর্টিং বা সংবাদ মাধ্যমে খবর আমাদের চোখে পড়ছে না ! তারা আর্থিক দিক থেকে যেমন দুর্বল তেমনি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে । মুখে না বলে বাস্তবে অভাবী, যাকে বলে অভাবগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ালে মানব কল্যাণ কথাটার স্বার্থক রূপ পেতো ।
(২)
মানবতাপ্রেমী বলে যারা চিল্লাচ্ছেন তাঁদের কর্মকাণ্ড খানিকটা বিজ্ঞাপনের ন্যায় । বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে নিজেদেরকে মানবতাপ্রেমী হিসাবে মানুষের সামনে তুলে ধরতে তাদের মুখ্য চিন্তা । চোখের সামনে কোনো কিছুর সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে আজকের মানুষেরা সেই অসহায় মানুষের হাতে ধরে ওঠানোর সময়টুকু পর্যন্ত পান না, অথচ চলমান সেই (কিছু) মানুষের মুখে অহরহ — তিনি একজন প্রকৃত মানবতাপ্রেমী মানুষ । এটা লজ্জার, যেমনি নিজের কাছে তেমনি সমাজের কাছেও । তাই মাঝে মাঝে মনে হয় মানুষ আজ বড় অদ্ভূত ধরনের, বোঝা কঠিন ! আবার একই মানুষকে দুই ধরনের ভূমিকায় দেখা যায় — কোনো সময় তিনি জনদরদি আবার কোনো সময় তিনি পশুর চেয়ে হিংস্র । মানবিক দিকের কাজটা দেখাতে গিয়ে নিজের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হলে, তিনি তখন আসল রূপ ধারন করেন । পশুর চেয়েও হিংস্র হয়ে ওঠেন । তখন হিতাহিত জ্ঞানের অভাব ঘটে ।
তাই বলি, মনুষ্যত্ব বা মানবিকতা আমাদের অন্তরের বিষয় । আর এই অভ্যন্তরীণ বিষয়কে জাগ্রত করতে আমাদের চাই আন্তরিক ইচ্ছা । এই মানবতা বা মানবিকতা গড়ে তুলতে আমাদের চাই মানসিক শক্তি, অন্তরের দৃঢ় বিশ্বাস, যা আমাদের প্রগতির পথে এগিয়ে যেতে ও বিভিন্ন বিপদের বিরূদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করবে । এই ক্ষেত্রে স্বামী বিবেকানন্দের কথায় আসা যেতে পারে । তিনি মানুষকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, “নীতিপরায়ন ও সাহসী হও । কাপুরুষেরা পাপ করিয়া থাকে, বীর কখনও পাপ করে না—এমনকি মনে পর্যন্ত পাপ আনতে দেয় না । সিংহ-গর্জনে আত্মার মহিমা ঘোষণা কর, জীবকে অভয় দিয়ে বল – “উত্তিষ্ঠিত জাগ্রত প্রাপ্য বরান্‌ নিবোধিত” —ওঠ, জাগো, লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত থামিও না । এস মানুষ হও । …… নিজেদের সংকীর্ণ গর্ভ থেকে বেরিয়ে এসে বাইরে গিয়ে দেখ, সব জাতি কেমন উন্নতির পথে চলেছে । তোমরা কি মানুষকে ভালবাস ? তোমরা কি দেশকে ভালবাস ? তাহলে এসে, আমরা ভাল হবার জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করি ।”
মানবতা ও মানবসেবা একার্থক নয় । মানবসেবার মধ্যে পরোপকার জাতীয় একপ্রকার অনুভূতির জন্ম হয় । সেক্ষেত্রে স্বজ্ঞানে বা অ-জ্ঞানে বিশেষ অহংকারবোধের উদ্রেক হয় । তবে মানবসেবা মানবিক হতে পারে — “যখন মানুষ অন্যের সেবা করে শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতিকে উপেক্ষা করে, নিঃস্বার্থভাবে অন্যের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করে, সেবা ও মানবিকতার আদর্শের মিলনকে স্বার্থক করে তোলে ।” মানুষের মানবিকতার উৎকর্ষতা নির্ধারিত হয় জগতে বিরাজমান সমস্ত জীবের প্রতি আচরণের নিরিখে । মানুষের নৈতিকতা, দায়দায়িত্ব, কর্তব্যপরায়নতার বহিঃপ্রকাশ হয় এই মহান আদর্শের মধ্য দিয়ে । সুতরাং এই কথা বলাই যায় যে, মানবতা কোনো মতবাদ নয়, একটি আদর্শ ।
পরিশেষে এটা পরিষ্কার, মানুষ মানবতার অধিকারী । আর ‘মানবতা’ হচ্ছে মানুষের বৈশিষ্ট্য । মানুষের সেবা করাই হচ্ছে মানব ধর্ম । জীব ঈশ্বরের এক মহান সৃষ্টি । প্রতিটি জীবের মধ্যে ঈশ্বর বর্তমান । জীবের সেবা করার মাধ্যমে ঈশ্বরের সেবা করা যায় । সেইজন্যেই স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, “জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর” । বাণীটি মানব কল্যাণের ক্ষেত্রে ভীষণভাবে তাৎপর্যপূর্ণ । (তথ্যসূত্রঃ সংগৃহীত) ।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

বাঙালি জাতীয়তাবাদী, ব্যারিস্টার এবং স্বাধীনতা কর্মী শরৎচন্দ্র বসু’র জন্ম দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের কঠোর পরিশ্রম ও লড়াই, যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত সৃঙ্খল মুক্ত হতে পেরেছভাপেরেছিল। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে শরৎচন্দ্র বসু ছিলেন একজন অন্যতম বীর ও নির্ভীক বিপ্লবী। শরৎচন্দ্র বসু  ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে।
শরৎচন্দ্র বসু ৬ সেপ্টেম্বর, ১৮৮৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন বাঙালি জাতীয়তাবাদী, পেশায় ব্যারিস্টার এবং ভারতীয় স্বাধীনতা কর্মী ছিলেন।  তিনি জানকীনাথ বসুর পুত্র এবং নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর মেজ দাদা।।  তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন এবং পরে অবিভক্ত স্বাধীন বাংলা প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেন।  তিনি ভারতীয় সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের একজন নৈতিক সমর্থক ছিলেন।  তিনি বিনা পয়সায় মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে আদালতে আবেদন করতেন।  তাঁর স্ত্রী বিবাহতি বসুও গান্ধীবাদী আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামে সহায়ক ভূমিকা নিয়েছিলেন।
রাজনৈতিক কর্মজীবন———-
তিনি ১৯৩৬ থেকে ১৯৪৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৪৬ সালে অন্তর্বর্তী সরকারের একজন মন্ত্রী ছিলেন। ১৯৪৭ সালে ক্যাবিনেট মিশনের পরিকল্পনায় কংগ্রেসের ভূমিকার কারণে তিনি তার সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করেন।  একজন দেশপ্রেমিক বাঙালি হিসেবে শরৎচন্দ্র বসু বাংলা বিভাগের ঘোর বিরোধী ছিলেন।  তিনি সমাজ ও ভাষার ভিত্তিতে গঠিত স্বশাসিত সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলির সমন্বয়ে একটি অখণ্ড ভারত গঠনের পক্ষে ছিলেন।  বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে তার অনেক মিল ছিল।  সোহরাওয়ার্দী এ সময় অখন্ড স্বাধীন বাংলা বাস্তবায়নের পরিকল্পনাও আনুষ্ঠানিকভাবে পেশ করেন।  অখণ্ড স্বাধীন বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নে উভয় নেতাই পরবর্তীতে একসঙ্গে কাজ করেন।
মৃত্যু——–
তিনি ১৯৫০ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি কলকাতায় মৃত্যু হয়।
।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজ ডায়াবেটিস সেবা দিবস, জানুন দিনটি কেন পালিত হয়।

আজ ডায়াবেটিস সেবা দিবস। অধ্যাপক ডা. মো. ইব্রাহিমের মৃত্যু দিবস স্মরণীয় করে রাখতে প্রতিবছর ডায়াবেটিক হাসপাতালগুলোতে ৬ সেপ্টেম্বর দিবসটি পালন করা হয়। অধিকাংশ দেশেই ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়ছে, যদিও কিছু উন্নত দেশ এ বৃদ্ধির হারে লাগাম টানতে পেরেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে উদ্বেগজনক হারে ডায়াবেটিসের রোগী বাড়ছে।  ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যার ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি, ডায়াবেটিসজনিত স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা এবং এতে মৃত্যু ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়ার কারণে ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন ডায়াবেটিসকে বৈশ্বিক মহামারি হিসাবে ঘোষণা করে।
শহুরে জনসংখ্যার তুলনায় গ্রামাঞ্চলে ডায়াবেটিক রোগী কম দেখা যায়, যা খাদ্য গ্রহণের পার্থক্যের কারণে হতে পারে । এই রোগ প্রতিরোধে শুধু সচেতনতা নয়, জীবনযাত্রার পরিবর্তনও জরুরি । বিশেষজ্ঞদের মতে, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এবং কম শারীরিক পরিশ্রমের কারণে ডায়াবেটিস রোগীদের শহরে বেশি দেখা যায় । ডায়াবেটিস হওয়ার পেছনে যেসব বিষয় জড়িত, সেগুলোকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় : পরিবর্তনযোগ্য-জীবনযাত্রা সম্পর্কিত বিষয় যেমন স্থূলতা, অলস জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ, ওষুধ ইত্যাদি; পূর্বে চিহ্নিত প্রি-ডায়াবেটিস এবং গর্ভকালীন অপুষ্টি। অপরিবর্তনীয়-পারিবারিক ও বয়স/লিঙ্গ। গবেষণালব্ধ তথ্য ও প্রমাণসাপেক্ষে এটা মোটামুটি নিশ্চিত যে, টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং এর জটিলতাগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন সচেতনতা ও সমন্বিত প্রচেষ্টা।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসা উপলক্ষে এ রোগের আধুনিকতম গবেষণার সঙ্গে ক্লিনিক্যাল চিকিৎসার বাস্তব প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার পথিকৃৎ ডা. ইব্রাহিম ।
ঢাকার সেগুনবাগিচাতে নিজস্ব চিকিৎসা কক্ষে এবং ব্যক্তিগত যন্ত্রপাতি দিয়ে তিনি ডায়াবেটিক চিকিৎসার সূচনা করেছিলেন। ১৯৮৯ সালের এইদিনে জাতীয় অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম মৃত্যুবরণ করেন।জাতীয় অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম মৃত্যুবরণের দিনের স্মরণে এ দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে।এদিন রোগীদের মধ্যে ডায়াবেটিস রোগ নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা, কীভাবে একে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় সে বিষয়ে রোগীদের জানানো হয়।
ডায়াবেটিস হলে শরীরে প্রয়োজনীয় ইনসুলিনের মাত্রা কমে যায়, শরীর ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না, প্রস্রাবের সঙ্গে শর্করা বেরিয়ে যায়। এতে রোগী দুর্বল হয় ও ধীরে ধীরে শরীরের অন্যান্য অঙ্গেও ছড়িয়ে যায়।
এ রোগ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। শুধু তাতেই থেমে থাকেন নি এ চিকিৎসক। এটিকে একাধারে গবেষণা ও গবেষণা ফলাবর্তনানুসারী ক্লিনিক্যাল চিকিৎসার উপায় ও উপলক্ষ নির্মাণ করেছিলেন, প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসা উপলক্ষে এ রোগের আধুনিকতম গবেষণার সঙ্গে ক্লিনিক্যাল চিকিৎসার বাস্তব প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার পথিকৃৎ ডা. ইব্রাহিম ।
ঢাকার সেগুনবাগিচাতে নিজস্ব চিকিৎসা কক্ষে এবং ব্যক্তিগত যন্ত্রপাতি দিয়ে তিনি ডায়াবেটিক চিকিৎসার সূচনা করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে মাত্র ২৩ জন রোগীর ওপর গবেষণা ও তাদের চিকিৎসা অগ্রগতি তথা তাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মাত্রা ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা তিনি চালু করেছিলেন। পরে রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেলে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও অন্যান্য চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় ও সমঝোতার মাধ্যমে রোগী রেফার করে চিকিৎসা করতেন।
১৯৮২ সালে যে বিশাল স্থাপনা ক্রমান্বয়ে গড়ে ওঠে, তা পরে ইব্রাহিম সেন্টার তথা অধুনা বারডেম নামে সুনাম ও সুখ্যাতি অর্জন করে।
বর্তমান জীবনধারায় ডায়াবেটিস একটি বড় সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। পরিবারে এখন দু-একজন ডায়াবেটিক থাকা যেন খুবই স্বাভাবিক । শুধু বয়স্করাই নয়, তরুণরাও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন । আমাদের দেশেও তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে অনেক ডায়াবেটিস রয়েছে এবং এই সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। তাই ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য আজকের দিনট পালিত হয়।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের চিন্তাধারা ও শিক্ষাদর্শন এখনো সমানভাবে  পাথেয়।

একদিকে ভারতীয় অধ্যাত্মবাদ,অন্যদিকে পাশ্চাত্য চিন্তাধারা –দুই মিশ্রনে পরিপূর্ণ আধুনিক প্রগতিবাদী মানুষ ছিলেন ডঃ সর্বপল্লীরাধাকৃষ্ণন। নেহেরুজীর মতে,রাধাকৃষ্ণন ছিলেন ‘আধুনিক বিশ্বদর্শনের প্রতিভূ। ……….তিনি বিভিন্নভাবে দেশের সেবা করেছেন।কিন্তু সর্বোপরি তিনি একজন মহৎ শিক্ষক।তাঁর নিকট হতে আমরা অনেক কিছু শিখেছি এবং আজও শিখতে থাকবো।’ নেহেরুজী সত্য কথাই বলেছেন। রাধাকৃষ্ণনের চিন্তাধারা ও শিক্ষাদর্শন আমাদের বত’মান যুগেও সমান প্রাসঙ্গিক এবং  পথচলার পাথেয়।তিনি যে সমস্ত উপদেশ ও শিক্ষা দিয়ে গেছেন তা আমরা যদি ঠিকমত গ্রহণ করতে পারি তাহলে আমাদের পথ চলা সুগম হবে,আমাদের জীবনে উত্তরণ ঘটবে।
অত্যন্ত সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে নিরন্তর দারিদ্রের সাথে সংগ্রাম করেও তিনি দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রপতি পদ অলংকৃত করেছিলেন।দুঃখ-দারিদ্রকে জয় করে তিনি অতি সহজেই বলতে পেরেছেন- ‘Often suffering is not punishment but discipline’.

তিনি বলেছেন ,-‘মানুষের জীবন চলমান কর্মের এক ধারাবাহিক প্রকৃতি-এক মুহূর্ত নষ্ট করা চলবেনা।’ রাষ্ট্রপতির সুমহান ঐতিহ্য পালন করতে গিয়ে অনেক সময় তাঁকে বিবেকের দংশনে দংশিত হতে হয়েছিল,তবুও তিনি কখনও সত্যের পথ থেকে বিচ্যুত হননি।তিনি কখনও নিজের আত্মগরিমা প্রকাশ করেননি,তিনি ছিলেন সহজ সরল ও অমায়িক।
তিনি গীতাঞ্জলির ইংরাজি অনুবাদ ‘Song Offerings’ পড়ে রবীন্দ্রনাথের প্রতি গভীর ভাবে আকৃষ্ট হন।রবীন্দ্রনাথের কবিতা “বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা,
বিপদে আমি না যেন করি ভয়।
দুঃখ তাপে ব্যাথিত চিত্তে নাইবা দিলে সান্ত্বনা,
দুঃখে যেন করিতে পারি জয়।”
এই কবিতাটি তাঁর মনে গেঁথে যায়,তিনি বুঝতে পারেন দুঃখের মধ্য দিয়ে যে জয়লাভ তা জীবনের চরম সার্থকতা নিয়ে আসে-
এই উপলব্ধির সঙ্গে উপনিষদের দর্শনতত্ত্বের মিল খুঁজে পেয়েছিলেন রাধাকৃষ্ণন।
উপনিষদের শ্লোকটি হল-
অসতো মা সদগময়
অসতো মা জ্যোতির্গময়,
মৃতোর্মা অমৃতগময়।”
অর্থাৎ অসত্য থেকে সত্য,অন্ধকার থেকে আলোকে এবং মৃত্যু থেকে অমৃতে চলো।
ডঃ রাধাকৃষ্ণনের জীবনের মর্মবাণী ছিল – “দেবমন্দির হচ্ছে নিত্য পবিত্র মন্দির,আর সেই মন্দিরে তুমি নিজেই, যেমন মৃগের দেহের মধ্যেই কস্তুরি বিরাজ করে।আমরা  একাগ্রচিত্তে মনের মালিন্য দূর করবো।” তাঁর মতে ,জন্ম হোক যেখানে সেখানে,কর্মের মাধ্যমেই আমরা বিশ্বমানব হতে পারি। তিনি বলেছেন-“একান্ত নীরবতার মধ্যে বন্দীর বন্ধন মুক্তির জন্য করুন ক্রন্দনের মতো এবং অন্তরকে পাওয়ার জন্য কাতর ক্রন্দনধ্বনির মতো আমাদের কানে ভেসে আসে ব্যাথিত আত্মার সবিলাপ কণ্ঠস্বর।”
তাঁর শিক্ষাদশ’নও আমাদের ভালভাবে উপলব্ধি করা প্রয়োজন।তিনি বলেছেন – “A good Teacher is a candle,it consumes itself to light the way for others.” তাঁর মতে –একজন মানুষের সফলতা,চরিত্র ও ভাল ব্যক্তিত্ব গড়ার পিছনে শিক্ষকের অবদান রয়েছে।একজন শিক্ষককে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।তিনি শুধুমাত্র পুঁথিগত হবেন তা নয়,তিনি জীবনের যে কোনো ক্ষেত্রের শিক্ষক হতে পারেন।তিনি বলবান,গুনবান ও চরিত্রবান করে তুলতে ছাত্রকে সাহায্য করবেন।সমাজগড়ার কারিগর হিসাবে শিক্ষকের গুরুত্ব অনেকখানি।তাঁর মতে, -“Every one acknowledges how a teacher shapes the life of students and we should be ever greatful to them”
জ্ঞানতপস্বী রাধাকৃষ্ণন কয়েকটি অনবদ্য বাণী রেখে গেছেন-সেগুলি নিম্নরূপ –
১। বইয়ের তাৎপর্য হলো আমাদের সংস্কৃতির মধ্যে সেতু নির্মান করা।
২। সহনশীলতা হলো শ্রদ্ধা,যা সীমিত মন অসীমতায় পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজন।
৩। জীবনের আনন্দ ও সুখ শুধুমাত্র জ্ঞান ও বিজ্ঞানের ভিত্তিতে সম্ভব।
৪। সত্যিকারের শিক্ষক তাঁরাই,যাঁরা নিজের জন্য চিন্তা করতে শেখায়।
৫। একজন পরামর্শদাতা শিক্ষক একজন ব্যক্তিকে সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ দেখাতে ক্ষমতায়ন করেন।
৬। যখন আমরা মনে করি আমরা সব জানি,তখনই আমাদের শিখতে হবে।
৭। কেবল নিখুঁত মনের মানুষেরই জীবনে আধ্যাত্মিকতার অর্থ বুঝতে পারেন,নিজের সত্যতা,আধ্যাত্মিক একনিষ্ঠতার পরিচয়।
৮। জ্ঞানও বিদ্যার ফল হলো অনুভব।
৯। মানুষের স্বভাব মূলত ভাল এবং আত্মজ্ঞানের প্রচেষ্টা সমস্ত খারাপকে দূরে ঠেলে ফেলে দেবে।
১০। যদি মানুষ দানবে পরিনত হয় তাহলে তার হার হয়,
যদি মানুষ মহামানব হয়ে যায়,তাহলে এটি তার চমৎকার,
যদি মানুষ মানুষে পরিনত হয় তাহলে এটি তার জয়লাভ।
শিক্ষা সম্পর্কে তিনি খুব সুন্দর কথা বলেছেন – ‘জনগণকে শুধুমাত্র নাগরিক হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দেবেনা, তাকে মানুষ হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দেব।’
শিক্ষা সম্পর্কে বিবেকানন্দ প্রায় একই কথা বলেছেন –
“Man making is my mission.”
পরিশেষে বলি, ডঃ রাধাকৃষ্ণন একজন পূর্ণমানব-জ্ঞানের এক অতল সমুদ্র।ঋষির মতো প্রাজ্ঞ,জ্ঞানসাগরের অতল তলের ডুবুরী।সারা পৃথিবীর মানুষ তাঁর পান্ডিত্যের ঝরনা ধারায় স্নাত হয়ে উপলব্ধি করেছেন তাঁর দর্শন,শিক্ষা,সংস্কৃতি,সমাজচিন্তা ও দেশত্ববোধ।আজও তিনি দর্শনের মধ্য দিয়ে বটবৃক্ষের মতো আমাদের ছায়া দিয়ে রেখেছেন।সারাজীবন বহু উচ্চপদে অধিষ্ঠিত হয়েও যেহেতু তিনি প্রথম জীবনে শিক্ষক ছিলেন সেইহেতু তিনি শিক্ষকসমাজকে ভুলে যান নি।তাই তাঁর নিজের জন্মদিনটিকে ‘শিক্ষক-দিবস’ হিসাবে পালন করতে নির্দেশ দিয়ে গেছেন।তিনি পুঁথি সর্বস্ব শিক্ষা দানের বিরোধী ছিলেন এবং তিনি ছাত্রদের প্রকৃত মানুষ গড়ার কথা বলেছিলেন, তাই শিক্ষকদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে সে কথাও উল্লেখ করেছিলেন।
তাই বর্তমান শিক্ষকদের উচিত তাঁর প্রদর্শিত পথে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাদান করা।আজ শিক্ষক দিবসে শিক্ষক সমাজকে  তাই আবার নতুন করে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে  তাঁর উপদেশ মতো কঠোর পরিশ্রম করার মানসিকতা নিয়ে প্রকৃত মানুষ গড়ার জন্য সচেষ্ট হতে হবে।তবেই তাঁর জন্মদিনে আমাদের সকলের শিক্ষাগুরুর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন সার্থক হবে।
এই সত্যসন্ধানী জ্ঞানতপস্বী দীর্ঘ ৮৭ বছর কর্মময় জীবন কাটিয়ে ১৯৭৫ সালের ১৭ই এপ্রিল অমরলোকে যাত্রা করেন।আজ তিনি আমাদের মধ্যে নাই।কিন্তু তিনি আমাদের জন্য রেখে গেছেন তাঁর মূল্যবান বাণী সমূহ ও দর্শন শাস্ত্রের অমূল্য গ্রন্থসমূহ-যেগুলির সাহায্যে পরমার্থিক সত্ত্বার দিব্যজ্যোতি বিদ্যুতের   মতো আমাদের অন্তরকে স্পর্শ করবে।
আসুন,আমরা আজ এই মহামনীষীর প্রয়াণ দিবসে বিনম্রচিত্তে তাঁর উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলি –
আমার মাথা নত করে দাও হে
তোমার চরণ ধুলির তলে।

কলমে : শ্রী প্রশান্ত কুমার দাস।
শিক্ষারত্ন প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ,বাজিতপুর উচ্চ বিদ্যালয়(উঃমাঃ),
পোঃ-পাথাই, ময়ূরেশ্বর-১,বীরভূম ।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

“কান্না” কী বা কেন ? একটি আলোচনা ! :  দিলীপ রায় (৯৪৩৩৪৬২৮৫৪)

 

দুঃখে কাঁদি, আঘাতে-ব্যথ্যায় কাঁদি, আবার কখনও খুব আনন্দেও কাঁদি ! প্রতিটি মানুষের জীবনে কখনও না কখনও কান্না পায় ।
( ২ )
(১) গাঁয়ের পুণ্ডরীকাঙ্খের বৌমা নীতাম্বরী, হন্তদন্ত হয়ে পটলডাঙ্গা স্টেশনের দিকে ছুটছে । রাস্তার মধ্যে হঠাৎ পুটির মায়ের সাথে দেখা, “কিগো নীতাম্বরী, হন্তদন্ত হয়ে কোথায় ছুটলে ?”
“আর বলবেন না মাসি, আজ আমার ছোট ছেলে পলাশীপাড়া থেকে বাড়ি ফিরছে । তাকে আনতে রেলওয়ে স্টেশনে যাচ্ছি ।“ উত্তরে নীতাম্বরী জানালো ।
তা বাপু, ছেলেটা হঠাৎ পলাশীপাড়ায় কেন ? বুঝতে পারলাম না ।
মাসি ! আপনাকে বলা হয়নি । ছোট ছেলে সেখানকার হাসপাতালের ডাক্তার !
শুনেছি তোমার দুই ছেলেই ডাক্তার ।
“আর মাসি । কি বলবো আপনাকে ! আপনাকে বলতে আমার দ্বিধা নেই । ছেলেদের মানুষ করতে আমার হিমসিম অবস্থা ! নিজের সখ-আহ্লাদের জলাঞ্জলি । ঠিকমতো ঘুমোতে পারতাম না । সব সময় ছেলেদের পেছনে লেগে থাকতে হতো । তাদের পড়াশুনার দিকে নজর দেওয়াই ছিল আমার ধ্যান জ্ঞান । যার জন্য আপনাদের আশীর্বাদে বড় ছেলেটা নিউরো সার্জেন্ট (এম-ডি), ছোটটা মেডিসিনে এম-ডি ।“ কথাগুলি বলার পরে নীতাম্বরীর চোখে জল ! শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছছে ।
(২) সর্বেশ্বর গাঁয়ের প্রান্তিক চাষি । বিঘে কয়েক জমি চাষ করে তাঁর সংসার । একটা ছেলে ও দুটি মেয়ে । বেচারা খেয়ে না-খেয়ে ছেলে মেয়েদের উচ্চ শিক্ষিত করেছে । মেয়ে দুটিই স্কুল শিক্ষিকা । বিয়েও দিয়েছে । ছেলেটা বাইরের রাজ্যে মস্ত বড় কোম্পানীর উচ্চ পদে কর্মরত । সর্বেশ্বর একদিন ফাইল খুঁজতে গিয়ে ছেলের ইনকাম ট্যাক্সের রিটার্ন দেখতে পায় । গত বছর যে পরিমান আয়কর দিয়েছে সেটা থেকে সর্বেশ্বর ছেলের মাসিক আয় সম্বন্ধে একটা ধারণা পায় ! অথচ ছেলে মেয়েদের পড়াতে গিয়ে এবং মেয়েদের বিয়ে দিতে গিয়ে সর্বেশ্বর আর্থিক দিক দিয়ে নিঃস্ব । সবগুলি জমি বিক্রি করতে হয়েছে । তাঁদের বুড়ো-বুড়ির দুবেলার অন্ন জোগানোই এখন ভীষণ সমস্যা । স্ত্রী-পুত্র নিয়ে ছেলের অন্য রাজ্যেতে বসবাস, ফলে বাবা-মায়ের খোঁজ নেওয়ার সময় নেই । সুতরাং তাঁরা কীভাবে বাবা-মাকে পয়সা দিয়ে সহযোগিতা করবে ? ক্ষুধায় যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে ঠিক তখন সর্বেশ্বর নিজের ভাগ্যের কথা ভেবে গিন্নির চোখের আড়ালে হাউমাউ করে কাঁদে ! শেষ বয়সে এখন তাঁর ভিখারীর ন্যায় অবস্থা !
(৩) ঐ বাংলায় নীরোদ তালিবের ভরা ঘর-সংসার । গোয়াল ভরা গরু, গোলা ভরা ধান, পরিবারের বাবা-মা সহ ছেলেমেয়ে নিয়ে মোট এগারো জন, জমি জায়গা, খাওয়া দাওয়া, বাড়ি লাগোয়া পুকুর । পুকুরে সারা বৎসর জল থাকে এবং সেখানে অনেক ধরনের মাছ । যাকে বলে অফুরন্ত শান্তির সংসার । হঠাৎ দেশ ভাগ ।
“পালাও, দেশ ছাইরা পালাও ! এই দ্যাশটায় হিন্দুদের ঠাঁই নাই ।“ রাতের অন্ধকারে হাঁটুর উপর ধুতি পরে স্ত্রী-পুত্র-কন্যা ও বুড়ো বাবা-মাকে নিয়ে অনেক ছিন্নমূল মানুষের সাথে নীরোদ তালিব ছুটলো অজানা উদ্দেশে । পদ্মা, ভাগীরথী পার হয়ে বাবলা নদীর তীরে বট গাছটার তলায় আশ্রয় নিলো বিনোদ তালিব । সব হারিয়ে ক্ষুধায় তৃষ্ণায় ভয়ে-ভীতিতে আশঙ্কায় বিনোদের চোখে জল । চতুর্দিকে অন্ধকার । অচেনা দেশে রাত্রির অন্ধকারে তাঁর চোখের জল থামানো দায় ! মনের ভিতর সব হারানোর হাহাকার ! বিনোদ তালিবের সে কি কান্না !
উপরের তিনটি ঘটনায় মানুষের তিন রকম কান্না ! এখানকার কান্নাগুলিকে আবেগপূর্ণ কান্না বলা চলে । তাই কান্না হলো একটা আত্ম-উপলব্ধি বা অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম ।
( ৩ )
আবার কান্না শারীরিক ব্যথা-যন্ত্রণার প্রতিক্রিয়ায় হতে পারে অর্থাৎ চোখে অশ্রু ঝরতে পারে । অন্যদিকে কান্নার কারণ হতে পারে এমন আবেগের মধ্যে, যেখানে রয়েছে দুঃখ , রাগ , আনন্দ এবং ভয় ।
মানসিক চাপ বা উদ্বেগের সময় সহানুভূতিশীল প্রতিক্রিয়া কান্নার কারণ হতে পারে । উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা বোঝা যাবে — তমালবাবু শিক্ষকতার চাকরি জীবন থেকে প্রায় দশ বছর হলো অবসর নিয়েছেন । তাঁর দুই ছেলে বিদেশে কর্মরত । বাবা-মাকে দেখার তাদের সময় নেই । পেনশনের টাকায় তাঁদের দুজনের দিনাতিপাত । হঠাৎ গিন্নির কঠিন ব্যামো । বুকে ভীষণ ব্যাথা । এলাকার হাতুড়ে ডাক্তার জানিয়ে দিয়েছেন, “অপারেশন জরুরি । তাঁকে অতি সত্বর কলকাতার বড় হাসপাতালে ভর্তি করা দরকার ।“ তমালবাবুর হাতে একটাও পয়সা নেই । তমালবাবু দুঃখে কষ্টে কপাল চাপড়াচ্ছেন ! এমন সময় দেবদূতের মতো ভোম্বলের আগমন । বিষম বিপদের সময় তাঁর গবেট মার্কা ছাত্র ভোম্বল ছুটে এসে তার প্রিয় স্যারের পাশে দাঁড়ালো । অথচ সাংসারিক জীবনে ভোম্বল কোনোরকমে একটা টী স্টল চালায় । তবুও ভোম্বলের সমস্ত সঞ্চিত টাকা-পয়সা, গিন্নির গহনা, স্যারের পায়ের কাছে রেখে বলল, “স্যার, আর দেরী করবেন না । এক্ষুণি হাসপাতাল চলুন ।“ ভোম্বলের সেই সময়কার চাহনী, কাতর আবেদন, সর্বোপরি তার আন্তরিকতা দেখে তমালবাবু চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না । তাই মনে মনে বললেন, তিনি ছাত্রদের শিক্ষিত করতে পারুক বা না-পারুক, অন্তত একজন ছাত্রকে মানুষ করতে পেরেছেন ।
( ৪ )
এবার জানা যাক, কান্না কেন ঘটে ?
কান্না একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যেখানে আমাদের চোখের ল্যাক্রিমাল গ্রন্থি অশ্রু উৎপন্ন করে । এই অশ্রুগুলি নালীগুলির মধ্যে দিয়ে গড়িয়ে পড়ে । এগুলি হয় গালের উপর দিয়ে গড়িয়ে পড়ে বা নাসোলেক্রিমাল নালীর মাধ্যমে নাকের মধ্যে জমা হয় ।
সঠিকভাবে, চোখের উপরের প্রান্তে উপস্থিত ল্যাক্রিমাল গ্রন্থিগুলির নিঃসরণ হল অশ্রু । আমরা যখন কাঁদি তখন কান্নার পরিমাণ বেশি হয় । আমরা যখন স্বাভাবিক শরীরবৃত্তীয় অবস্থায় থাকি তখন কান্নার পরিমাণ কম হয় । কান্নার অনুভূতির জন্ম মস্তিষ্কে, ল্যাক্রিমাল গ্ল্যান্ড থেকে । এই গ্ল্যান্ড থেকেই প্রোটিন, মিউকাস বা তেলতেলে নোনা জল তৈরি হয় । এগুলি চোখ দিয়ে অশ্রুর আকারে বেরিয়ে আসে । এই তরলকেই কান্না বলে।
মস্তিষ্কে সেরিব্রাম নামে একটা অংশ আছে, সেখানে দুঃখ জমা হয় বা দুঃখের অনুভূতি তৈরি হয় । সেই অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ হল কান্না । আরও জানা যায়, দুঃখের বা মন খারাপের কারণে শরীরে একধরনের টক্সিন বা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ তৈরি হয় । সেগুলি বার করে দেয়ার জন্য কান্নার প্রয়োজন । চোখের জলের সঙ্গে সেই ক্ষতিকর পদার্থ বেরিয়ে আসে ।
সেরিব্রাম অংশ থেকে এন্ডোক্রিন সিস্টেম বা অন্তঃক্ষরা পদ্ধতিতে হরমোন নির্গত হয় । দুঃখের কারণে জমা হওয়া ক্ষতিকর পদার্থগুলি বহন করে চোখের আশপাশের অঞ্চলে নিয়ে যায় এই হরমোনগুলি । সেখান থেকে চোখের জলের সঙ্গে টক্সিনগুলো বেরিয়ে আসে কান্নার আকারে । এটিই আসলে আবেগীয় কান্না । যন্ত্রণার বা খুশির কান্নাও একই পদ্ধতিতে আসে।
( ৫ )
কাঁদার আবার বিভিন্ন ধরন আছে । যেমন দুঃখ, ব্যথা ছাড়াও অনেক সময় আমরা অন্য কারণে কেঁদে ফেলি । আবার চোখে ঝাল বা পেঁয়াজের কষ লাগলে চোখে জল আসে । এটাকে ঠিক কান্না বলা যায় না । কিন্তু কান্নার বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে এর যথেষ্ট মিল আছে ।
রিফ্লেক্স নামে আরেক ধরনের কান্না আছে । এই কান্না একটু অন্যরকম ! হঠাৎ ব্যথা পেলে, কিংবা ঝাঁঝালো কোনও বস্তু যেমন পেঁয়াজ বা সর্ষের তেলের ঝাঁঝ কিংবা ধুলাবালি নাক বা চোখ দিয়ে ঢুকলে এই ধরনের কান্নার জন্ম । ঝাঁঝালো বস্তু চোখে ঢুকলে, চোখের কর্নিয়ায় যে স্নায়ুতন্ত্র আছে, সেখানে বার্তা পাঠায় । বদলে মস্তিষ্কও প্রতিরক্ষার জন্য হরমোন পাঠিয়ে দেয় চোখের পাতায় । চোখে সেগুলি অশ্রুর মতো জমা হয় । ধুলাবালি বা ক্ষতিকর পদার্থ বয়ে নিয়ে চোখ থেকে বেরিয়ে আসে সেই অশ্রু ।
বেসাল কান্না কাঁদতে হয় না, জানা যায় এরা চোখের মধ্যেই থাকে। বেসাল কান্না এক ধরণের পিচ্ছিল তরল — যেটা আমাদের চোখকে সব সময় ভিজিয়ে রাখে । যার জন্য আমাদের চোখ কখনোই একেবারে শুকিয়ে যায় না ।
আবেগের কান্না শুরু হয় সেরেব্রাম থেকে । সেরেব্রাম হলো মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় অংশ, এজন্য সেরেব্রামকে বলা হয় ‘গুরুমস্তিষ্ক’। সেরেব্রামেই থাকে আমাদের সব ধারণা, কল্পনা, চিন্তা-ভাবনা, মূল্যায়ন ও সিদ্ধান্ত ।
পরিশেষে আমরা বলতে “কান্না মানুষের একটা সহজাত প্রবৃত্তি ।“ কেননা সহজাত প্রবৃত্তি হচ্ছে কোনো জীবের আচরণের একটি অংশ ! অন্যদিকে উপকারের কথা ভাবলে ‘কান্না’ একটা মানুষকে উদ্দীপ্ত রাখে, চোখ পরিষ্কার রাখে, মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে, আবার বিষণ্ণতা কাটায় ।(তথ্যসূত্রঃ সংগৃহীত) ।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আন্তর্জাতিক CEDAW দিবস নিয়ে কিছু কথা।

3রা সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক CEDAW দিবস, 1981 সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক নারীর বিরুদ্ধে সকল প্রকার বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত কনভেনশন (CEDAW) গৃহীত হওয়ার স্মরণে একটি দিন। এই যুগান্তকারী চুক্তিটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের ভিত্তিপ্রস্তর এবং লিঙ্গ সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়ন প্রচারের জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার।

CEDAW এর ইতিহাস

CEDAW এর ধারণাটি প্রথম প্রস্তাব করা হয়েছিল 1963 সালে কমিশন অন দ্য স্ট্যাটাস অফ উইমেন দ্বারা, একটি জাতিসংঘের সংস্থা যা নারীদের অধিকারের প্রচারে নিবেদিত। যাইহোক, এটি 1979 সাল পর্যন্ত ছিল না যে কনভেনশনটি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ দ্বারা গৃহীত হয়েছিল। তারপর থেকে, CEDAW 180 টিরও বেশি দেশ সাইন আপ করার সাথে সবচেয়ে ব্যাপকভাবে অনুমোদিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তিগুলির মধ্যে একটি হয়ে উঠেছে।

CEDAW এর মূল বিধান

CEDAW হল একটি বিস্তৃত চুক্তি যা মহিলাদের জীবনের বিভিন্ন দিক সম্বোধন করে, যার মধ্যে রয়েছে:

1. অ-বৈষম্য: আইন, নীতি এবং অনুশীলন সহ সকল প্রকারের নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করতে রাজ্যগুলির প্রয়োজন৷
2. সমতা: শিক্ষা, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্যসেবা এবং রাজনীতিতে নারীদের সমান সুযোগ পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
3. প্রজনন অধিকার: নিরাপদ গর্ভপাত এবং গর্ভনিরোধক অ্যাক্সেস সহ তাদের নিজস্ব দেহ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার মহিলাদের রয়েছে।
4. নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা: রাজ্যগুলিকে ঘরোয়া সহিংসতা এবং যৌন হয়রানি সহ মহিলাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধ ও প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে৷
5. অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন: নারীদের সমান বেতন, সামাজিক নিরাপত্তা এবং ক্রেডিট ও ঋণের অ্যাক্সেসের অধিকার রয়েছে।

CEDAW এর প্রভাব

CEDAW বিশ্বজুড়ে নারীদের জীবনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। এটা আছে:

1. উন্নত আইন ও নীতি: অনেক দেশ নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করতে তাদের আইন ও নীতি সংশোধন করেছে।
2. বর্ধিত মহিলাদের অংশগ্রহণ: CEDAW রাজনীতি, শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানে মহিলাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করেছে৷
3. সুরক্ষিত নারীর অধিকার: CEDAW প্রজনন অধিকার এবং সহিংসতা থেকে সুরক্ষা সহ মহিলাদের অধিকার রক্ষার জন্য রাজ্যগুলির জন্য একটি কাঠামো প্রদান করেছে৷

সামনে চ্যালেঞ্জ

অগ্রগতি হওয়া সত্ত্বেও, CEDAW বাস্তবায়নে এখনও উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:

1. পরিবর্তনের প্রতিরোধ: অনেক সমাজ ঐতিহ্যগত লিঙ্গ ভূমিকা এবং স্টেরিওটাইপগুলির পরিবর্তনকে প্রতিরোধ করে।
2. সম্পদের অভাব: CEDAW বাস্তবায়নের জন্য অর্থায়ন এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি সহ উল্লেখযোগ্য সম্পদের প্রয়োজন।
3. দ্বন্দ্ব এবং সংকট: দ্বন্দ্ব এবং সংকট পরিস্থিতি প্রায়ই মহিলাদের প্রতি বৈষম্যকে বাড়িয়ে তোলে।

আন্তর্জাতিক CEDAW দিবস উদযাপন করা হচ্ছে

আন্তর্জাতিক CEDAW দিবস হল নারীর অধিকারের উদযাপন এবং লিঙ্গ সমতার গুরুত্বের স্মরণ করিয়ে দেয়। এটি একটি দিন:

1. সচেতনতা বাড়ান: CEDAW এবং এর বিধান সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ান।
2. লিঙ্গ সমতা প্রচার করুন: লিঙ্গ সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়ন প্রচার করুন।
3. নারীর অধিকারকে সমর্থন করুন: নারীর অধিকারকে সমর্থন করুন এবং তাদের সুরক্ষার জন্য সমর্থন করুন।

উপসংহার

আন্তর্জাতিক CEDAW দিবস লিঙ্গ সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়নের দিকে যাত্রার একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। যদিও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করতে এখনও অনেক কাজ বাকি আছে। আসুন আমরা এমন একটি বিশ্বের দিকে কাজ চালিয়ে যাই যেখানে নারী ও মেয়েরা তাদের অধিকার ভোগ করতে পারে এবং তাদের পূর্ণ সম্ভাবনায় পৌঁছাতে পারে।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

বাংলা চলচ্চিত্রের জগতে এক অতি পরিচিত নাম অনুপ কুমার।

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন——-

বাংলা চলচ্চিত্রের জগতে এক অতি পরিচিত নাম অনুপ কুমার। তাঁকে চিনেন না এমন বাঙালি পাওয়া খুব দুষ্কর। তিনি তাঁর অভিনয় দক্ষতায় মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন।
অনুপ কুমার ছিলেন একজন ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্র অভিনেতা।  যদিও তিনি বাংলা চলচ্চিত্রে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন, তিনি মূলত একজন থিয়েটার কর্মী ছিলেন।   অনুপকুমার ব্রিটিশ ভারতের উত্তর কলকাতায় ১৯৩০ সালের ১৭ জুন জন্মগ্রহণ করেন।   তার আসল নাম সত্যেন দাস।   পিতা নজরুল সঙ্গীতজ্ঞ ও সুরকার ধীরেন্দ্রনাথ দাস এবং মাতা বিজয়া দেবী।   তাদের আদি নিবাস ছিল পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার পান্ডুয়া।   অনুপকুমার কলকাতার ডাফ স্কুলে পড়াশোনা করেছেন।   তিনি খুব অল্প বয়সে অভিনয় শুরু করেছিলেন এবং তার বাবার দ্বারা হাতেখড়ি হয়েছিল। ১৯৩৮ সালে যখন তিনি মাত্র আট বছর বয়সে ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত “হাল বাংলা” ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন।   শিশিরকুমার ভাদুড়ীর ‘শ্রীরঙ্গম’-এ শিক্ষা শুরু হয়।

অভিনয় জীবন——

চোদ্দ বৎসর বয়সেই পেশাদারি মঞ্চে “টিপু সুলতান” নাটকে অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেন অনুপ কুমার। শ্রীরঙ্গম, বিশ্বরূপা, কাশী বিশ্বনাথ মঞ্চে নিয়মিত অভিনয় করতেন। পেশাদারি মঞ্চে আনুমানিক ৫০ টি নাটকে অভিনয় করেছেন।অনুপকুমার ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ থেকেই পেশাদার মঞ্চে নিয়মিত শিল্পী ছিলেন।

তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটকগুলি হল –

ছদ্মবেশী মল্লিকা, অঘটন, নূরজাহান, শ্যামলী, হঠাৎ নবাব, চন্দনপুরের চোর, কী বিভ্রাট, জয় মা কালী বোডিং, রাম শ্যাম যদু।
সময়ের সাথে সাথে তিনি নিজেকে একজন বিশিষ্ট কৌতুক অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।   অভিনয়ে খুব ভালো ছিলেন।   বাংলা নাটক ও চলচ্চিত্র ছাড়াও তিনি হিন্দি চলচ্চিত্র ও ‘যাত্রাপালা’ ছবিতে অভিনয় করেন।    “নিমন্ত্রণ” ছবিতে সেরা অভিনেতার জন্য জাতীয় পুরস্কার জিতেছিলেন।   বাংলা চলচ্চিত্রে তার অভিনয় মূলত পার্শ্ব চরিত্রে।   তবে কয়েকটি ছবিতে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।   তিনি বাংলা চলচ্চিত্রে কমেডি চরিত্রে অভিনয় করেছেন এবং অনেক চলচ্চিত্র ইতিহাসে পাতায় স্থান করে নিয়েছেন।

তাঁর অভিনিত উল্লেখযোগ্য ছায়াছবিগুলি হল –

বরযাত্রী, কানামাছি, পলাতক, অমৃতকুম্ভের সন্ধানে, শহর থেকে দূরে, বালিকাবধূ, নিমন্ত্রণ, বসন্ত বিলাপ, এক যে ছিল দেশ, মৌচাক, দাদার কীর্তি, প্রতিশোধ।

হিন্দি সিনেমা-

চন্দ্রশেখর,  পরিবর্তন, কিতনে পাস কিতনে দূর।

পুরস্কার ও সম্মাননা—-

বিএফজেএ’পুরস্কার পান (১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দ),   স্টার থিয়েটার থেকে পান রূপার পদক(১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে),  পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমি পুরস্কার  ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দ),  শিরোমণি পুরস্কার (১৯৯১ খ্রিস্টাব্দ), দীনবন্ধু পুরস্কার ( ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দ),   শ্রেষ্ঠ পরিচালকের স্বীকৃতি (১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ)।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

১৮১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর কলকাতায় নতুন স্কুল স্থাপনের উদ্দেশ্যে দেশীয় ও ইউরোপীয় শিক্ষানুরাগীদের যৌথ উদ্যোগে গঠিত হয় ক্যালকাটা স্কুল সোসাইটি।

1 সেপ্টেম্বর, 1818-এ, দূরদর্শী ব্যক্তিদের একটি দল কলকাতা স্কুল সোসাইটি গঠনের জন্য একত্রিত হয়েছিল, একটি অগ্রগামী সংগঠন যার লক্ষ্য ছিল ভারতে শিক্ষার বিপ্লব ঘটানো। দেশীয় এবং ইউরোপীয় পণ্ডিতদের এই যৌথ উদ্যোগ ভারতীয় শিক্ষায় একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে, যার সুদূরপ্রসারী পরিণতি হবে।

পটভূমি—

19 শতকের গোড়ার দিকে, ভারত ব্রিটিশ শাসনের অধীনে ছিল, এবং শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল বিপর্যস্ত অবস্থায়। প্রথাগত ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থা, যা রোট লার্নিং এবং ধর্মীয় নির্দেশের উপর জোর দিয়েছিল, দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে আর প্রাসঙ্গিক ছিল না। অন্যদিকে ব্রিটিশরা ভারতে পশ্চিমা ধাঁচের শিক্ষা চালু করতে আগ্রহী ছিল, কিন্তু সম্পদের অভাব এবং সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতার কারণে তাদের প্রচেষ্টা প্রায়ই বাধাগ্রস্ত হয়।

কলকাতা স্কুল সোসাইটির প্রতিষ্ঠা—

এই পটভূমিতে কলকাতা স্কুল সোসাইটি গঠিত হয়েছিল। ভারতীয় এবং ইউরোপীয় উভয়ের সমন্বয়ে সমমনা ব্যক্তিদের একটি দল কলকাতায় একটি নতুন স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য একত্রিত হয়েছিল যা ভারতীয় শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আধুনিক, পশ্চিমা-শৈলীর শিক্ষা প্রদান করবে। সমাজের প্রতিষ্ঠাতারা শিক্ষার মাধ্যমে ভারতীয় জনগণের জীবনকে উন্নত করার এবং আধুনিক বিশ্বের পরিবর্তিত চাহিদার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে তাদের সাহায্য করার ইচ্ছা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল।

উদ্দেশ্য—

ক্যালকাটা স্কুল সোসাইটির বেশ কয়েকটি মূল উদ্দেশ্য ছিল। প্রথমত, এটির লক্ষ্য ছিল ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান এবং ইতিহাসের মতো বিষয়গুলিতে ফোকাস সহ ভারতীয় শিক্ষার্থীদের একটি আধুনিক, পশ্চিমা-শৈলীর শিক্ষা প্রদান করা। দ্বিতীয়ত, এটি ভারতীয় এবং ইউরোপীয়দের মধ্যে সাংস্কৃতিক বোঝাপড়া এবং বিনিময়কে উন্নীত করার চেষ্টা করেছিল। অবশেষে, এর লক্ষ্য ছিল ভারতীয় জনগণকে আধুনিক বিশ্বে সম্পূর্ণরূপে অংশগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং জ্ঞান বিকাশে সহায়তা করা।

অর্জন—

কলকাতা স্কুল সোসাইটি তার প্রাথমিক বছরগুলিতে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক অর্জন করেছিল। 1819 সালে, এটি তার প্রথম স্কুল প্রতিষ্ঠা করে, যা ছেলে এবং মেয়ে উভয়কেই শিক্ষা প্রদান করে। সমাজ শিক্ষকদের জন্য একটি প্রশিক্ষণ কলেজও প্রতিষ্ঠা করেছিল, যা ভারতীয় স্কুলগুলিতে শিক্ষার মান উন্নত করতে সাহায্য করেছিল। উপরন্তু, এটি পাঠ্যপুস্তক এবং জার্নাল সহ শিক্ষামূলক উপকরণের একটি পরিসর প্রকাশ করেছে, যা শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়কে উন্নীত করতে সাহায্য করেছে।

উত্তরাধিকার—

কলকাতা স্কুল সোসাইটির উত্তরাধিকার অপরিসীম। এটি ভারতে পাশ্চাত্য-শৈলীর শিক্ষা প্রবর্তনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে এবং শিক্ষাকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের মূল চালক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেছে। সাংস্কৃতিক বোঝাপড়া এবং বিনিময়ের উপর সমাজের জোর ভারতীয় এবং ইউরোপীয়দের মধ্যে বৃহত্তর বোঝাপড়া এবং সহযোগিতাকে উন্নীত করতে সাহায্য করেছে। আজ, কলকাতা স্কুল সোসাইটি একটি অগ্রগামী সংস্থা হিসাবে স্মরণ করা হয় যা ভারতে আধুনিক শিক্ষার ভিত্তি স্থাপনে সহায়তা করেছিল।

উপসংহার—

1818 সালের 1 সেপ্টেম্বর কলকাতা স্কুল সোসাইটির গঠন ভারতীয় শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত। এর অগ্রণী প্রচেষ্টা ভারতে পাশ্চাত্য-শৈলীর শিক্ষা প্রবর্তন করতে এবং ভারতীয় ও ইউরোপীয়দের মধ্যে সাংস্কৃতিক বোঝাপড়া এবং বিনিময়কে উন্নীত করতে সাহায্য করেছিল। আমরা যখন সমাজের প্রতিষ্ঠা উদযাপন করি, আমরা এর প্রতিষ্ঠাতাদের দৃষ্টি ও উত্সর্গকে সম্মান করি, যারা ভারতীয় শিক্ষার গতিপথকে রূপ দিতে এবং একটি দীর্ঘস্থায়ী উত্তরাধিকার রেখে যেতে সাহায্য করেছিল৷

।। ছবি : প্রতীকী।

Share This