Categories
কবিতা

দেখো হৃদয়ের গহীনে ::: প্রবীর কুমার চৌধুরী।।।

এত রক্তের নেশা কেন?
তোমাদের মায়েরা কি ক্ষমার চোখে দেখবে –
এত মমতাময়ীর বুকখালি?
আসলে তোমরা তো প্রসব যন্ত্রনা জানোনা –
অনুভব করোনি কখনো ,কোন মুহূর্তে ।

স্বর্গে যাওয়ার যে মিথ্যা অভিলাষে তুমি,
আসলে মৃত্যুর সাঁকোতে গড়িয়ে যাচ্ছো –
নরকের গন্তব্যে ।
রক্ত নদীর তুফানেই তোমার –
পারাপারের নৌকা ডোবে, ভীষণ ক্ষোভে।

বয়সের ভারে,ভারে একদিন অনুশোচনায় জ্বলবে,
চোখের জলে কোনদিন কি জয় আসবে?
সব রক্তই যে আদি পিতার মহাদান,
আজ বেদনায় আদম ও ইভের অশ্রুস্নান।
দেখ হৃদয়ের গহীনে ঘুমিয়ে আছে মহাজ্ঞানী মহান …..।

Share This
Categories
কবিতা

আমরা প্রতিবাদী ::: প্রবীর কুমার চৌধুরী।।।

আজ দেখি অমানবিকতার হিংস্র আস্ফালন
জল্লাদের মুক্ত তরবারি জ্বালাচ্ছে দাবানল।
বসন্তের নীল আকাশে রক্তের আলপনা-
নরপিশাচ ,হিংস্র পশুর আনাগোনা।
রাজপথে অবুঝ শিশুর করুন বাঁচার আবেদন –
মার বুক খালি কত , শিশুর অকাল নিধন।

অশুভ সুম্ভ,নিশুম্ভ ,একি করেছে আরম্ভ ?
দিকেদিকে মৃত্যুবার্তা, শুধু ধ্বংসের দম্ভ।
গোলা, বারুদ আর অস্ত্রের অহংকার
রাজপথে মৃত্যুর মিছিল,দিকে দিকে শিশুর চিৎকার ।
মায়ের বুক বিদীর্ণ পদঘাতে-
অবুঝ শিশু আঘাতে আঘাতে
আজ নিষ্প্রাণ । অসহায় বিধাতা –
আজ মৃত্যু মাগে রোদনভরা বসন্তে।
বেদনার অশ্রুজলে ভেসে যায় দীর্ঘশ্বাস ,কত অভিশাপ জমে অজান্তে।

এখনো কি থাকবে নীরব স্বার্থপর পৃথিবী ?
আগামী যে হয় প্রেমহীন তামাদি
এখনও হয়নি সময় প্রতিবাদের মশাল নেওয়ার?
শুভবুদ্ধি জ্বলে ওঠ, সময় হয়েছে জবাব দেওয়ার ।
নিষ্ঠুর জল্লাদ,দেখো হাসে কি আহ্লাদে-
নীরব থেকো না অসহায় শিশুর আর্তনাদে ,
এস দ্বারখুলে সহানুভূতির হাত বাড়াই
শেষ শয্যায় শাহিত শিশুর বুকে স্নেহের হাত বোলাই ।
শেষ বারের মতো চিৎকারে বলি-
হুঁশিয়ার ,বন্ধ কর এ রক্তের হলি ,
বন্ধ কর এই বীভৎস নারকীয় হত্যাকান্ড
যত বুর্জুয়া, স্বার্থানেশি,ভাঙবো এবার তোদের মিথ্যাভ্যান্ড ।

প্রাণ রক্ষায় অপারক নপুংসক, অক্ষম –
নিপাত যাক তোদের ক্ষমতা পৃথিবীর কাটুক বিভ্রম।
আগামীর প্রতিবাদ হানবে আঘাত-
অভিশাপে বিদীর্ণ হবে তোদের বক্ষ।
সময়ের হিসাব চাইবে জবাব-
প্রতিবাদী হচ্ছে জড়ো লক্ষ লক্ষ্ ।

এস প্রতিবাদের দরজা খুলি-
সমস্বরে সবাই বলি ,
দিকে দিকে ঘুম ভেঙে আসুক আহ্বান ,
এ পৃথিবীর নিষ্পাপ সকল শিশু আমাদের সন্তান।
মানবতা জাগুক,হিংসা মরুক হোক বিবেকের উত্থান।

সংরক্ষিত/প্রবীর কুমার চৌধুরী।

Share This
Categories
কবিতা

এক্ষণে ::: প্রবীর কুমার চৌধুরী।।।

ছলে, বলে, কৌশলে –
এখন নবসজ্জিত বিলাসী জীবন ।
হাহাকারের রাতে কামনার অসহায়তা খরিদ-
লজ্জার বিপনী এখন শোভা পায় অর্থের প্রলোভনে।
আহবকালের বিভীষিকা ভুলিয়ে দেয় কুটিল ক্ষুধা,
নগ্ন শরীরের প্রহসন দেখে আত্মজা দেয় অবিশ্রান্ত অভিশাপ ।

নিষিদ্ধ রাতের বঞ্চনায় পবিত্র প্রেম ক্ষত বিক্ষত-
ভালোবাসার অভিনয়ে দেহের ক্রয়-বিক্রয়, শেষ রাতে-
শ্মশানে নিষ্কৃতি মেলে, দুবাহু মেলে অগ্নিশয্যায় নিশ্চিন্ত নিদ্রা।
অভিমানী বুক ,ছিন্ন করে সুখ,বিবেক বেদনার সুরে-
প্রাতের আহির ভৈরবে আকাশ ভরায়।

প্রেমসিক্ত জীবন মেগে হয়ো না বিবসন এইটুকুই আবেদন,
এ ধরণী কাঁপে, অভিশাপে, বৃথাই নগ্নতার নগ্ন কামনা?
হে পঞ্চপাণ্ডব,হে কৃতজ্ঞ কর্ণ ,স্থবির ভীষ্ম শুধু একবার –
পৌরুষদীপ্ত নবমহাভারতে দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ বন্ধ কর।

সংরক্ষিত।

Share This
Categories
কবিতা

আমি ডাক বয়ে যাই :: প্রবীর কুমার চৌধুরী।।

আজ সকালে চিঠি এল-
খবর পেলাম লেফাফা খুলে,জীবন সন্ধিক্ষণে –
বেকার নাশে কর্মআশে আমি হরকরার কর্ম পেয়েছি।
দোরে দোরে বার্তা দেওয়া-
পৃথিবীর মনের কথা,সময়ের দুঃখ,হাসি-
ভাঙ্গাগড়ার নিত্যদিনের সংবাদ।
ঝরা পাতার নিত্য চোখের জল-
কাব্যছায়ায় নিশ্চিন্তর আশা আর শব্দ ছায়ায় স্নিগ্ধতার সম্বল।
সবার অব্যক্ত কথা,যত দুঃখ মাঝে জমানো প্রতিবাদ-
ক্রন্দসীর রুদ্ধ শ্রবণে মেঘগর্জনে তরঙ্গায়িতই করাই আমার শেষ কর্তব্য।

প্রহর কেমন আয়েশে,আরামে গভীর ঘুমে অচেতন ,
ষড়যন্ত্রের নিষ্ঠুরতা, বিষাক্ততায় নিত্য হাতছানি ,
ভয়ার্ত ন্যুব্জ মানবিকতার দুহাতে প্রসারিত সাবধান বাণী –
সমানেই বয়ে আনে রোগগ্রস্ত অসহায় শত শত অভিমানী।
আমারই পিঠে,আছে মিঠে মিঠে পদক্ষেপ বার্তাখানি ।
এবার মুক্তির স্বাদে , এ মন কোকোনদে উঠবে ক্ষিপ্ত গজরানী।

সময় দিয়েছে ডাক, আমি তো কর্মে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ,
হোক না শূন্য বাতিস্তম্ভ, দেদীপ্যমান জ্যোৎস্নার আলো মেখে পথের যত খানাখন্দ,যত উঁচু নিচু ঢিবি ,আঁধারেই পথ দেখে
শেষবারের মত বিলাব দোরে দোরে প্রতিশ্রুতির সমস্ত খবরখানি।

তারপর-
আগামী সূর্যোদয়ে আগামীর পথশিশু মুক্তির গান গাইতে গাইতে
চলবে –
আজি কি আনন্দ এ প্রেমভরা বসন্তে ,
ওই দেখ মুক্তির আনন্দাশ্রু ঝরে দিগন্তে ,দিগন্তে।
শঙ্খ,ঘন্টা,কাসর আর আজানের শব্দে আমি-
কর্তব্য অবসানে শেষবারের মতো ঘুমাবো নিশ্চিন্ত,নিরুদ্বেগ,শান্তমনে।

সংরক্ষিত।

Share This
Categories
কবিতা

আছে এখনো আছে ::: প্রবীর কুমার চৌধুরী।।

এখনো প্রেম আছে, টান আছে, আছে ব্যাকুলতা
এখনো মানুষ আছে, সত্য আছে, আছে উদারতা।

এখনো নির্মল আকাশ আছে,আকাশে মেঘ আছে,আছে বলাকার ডানা
এখনো আকাশ ভরা আলো আছে,মন আছে,কাছে যেতে নেই মানা।

এখনো ভোরের সূর্য আছে ,বিরহ আছে ,আছে প্রাণে আকুলতা
এখনো সবুজ আছে,চোখে জল আছে, আছে প্রেম বিহ্বলতা।

এখনো জীবন আছে, সংসার আছে,আছে দায়িত্ববোধ
আমি তুমির বাইরে প্রতিবেশীর কাছে আছে সম্মানবোধ।

এখনো দেখা আছে, আবেগ আছে, আছে নাড়ীর টান
এখনো প্রতিবাদে মিছিল আছে,আছে কর্মের আহ্বান।

এখনো মা আছে,বুক ভরা স্নেহ আছে,আছে জন্মস্থান
সাড়ে তিনহাত জমির অধিকার আছে,আছে অনেক অভিমান।

সংরক্ষিত
গড়িয়া,কলকাতা।

Share This
Categories
কবিতা

ঘুম ভেঙে এসো ::: প্রবীর কুমার চৌধুরী।।

অবক্ষয়ের করাল ছায়ায়-
আজ সব কবলিত, তবুও মায়ায় নিরুপায় ।
সীমাহীন আস্পর্ধায়-
কলঙ্কিত এ অধ্যায়,
তুমি চুপ কেন দুঃসময়ে, শিক্ষার দম্ভ?
এইতো সময় দক্ষযজ্ঞের,হয় হোক আরম্ভ।

চাতকের মতো অপেক্ষার জল না চেয়ে
কলমে রক্ত ভরে বিদ্রোহে এসো ধেয়ে।
সবলা, অবলা,যত নিচের তলা, হোক উত্থান,
সূর্যের আগুনে ঝলসিয়ে করব মহাপ্রস্থান।
ইতিহাস কথা বল,আর নয় চোখ ছলছল,
অমৃত ছেঁচে অশনিকে দেব হলাহল।

সংরক্ষিত/ প্রবীর কুমার চৌধুরী

Share This
Categories
প্রবন্ধ

স্বর্ণযুগে বাংলা আধুনিক গানের একজন বিস্মৃত শিল্পী অরুণ দত্ত, প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি ।।।

বাংলা আধুনিক গানে এমন অনেক শিল্পী ছিলেন যাঁদের গান, যাঁদের নাম বিস্মৃতির আড়ালে চলে গেছে। অথচ একসময় আকাশবাণীর ‘অনুরোধের আসর’-এ রমরমিয়ে বাজত এইসব শিল্পীদের গান। এমনই একজন বিস্মৃত শিল্পী অরুণ দত্ত।

সংক্ষিপ্ত জীবন—

অরুণ দত্ত ব্রিটিশ ভারতের বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।  তাঁর দুই বোন খুব ভালো গেয়েছে।  দিদির হাত ধরে গানের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। কেশব গণেশ ঢেকালের কাছে বাড়িতেই শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিখেছিলেন । অনুপম ঘটক’কে কলকাতায় কলেজ জীবনে গুরু হিসেবে পান।  এই অনুপম ঘটকের কন্যাকে তিনি বিয়ে করেন।  পরে তিনি কমল দাশগুপ্তকেও গুরু হিসেবে পেয়েছিলেন।  মেট্রো-মারফি আন্তঃকলেজ প্রতিযোগিতায় তার অভিষেক।  পঁচিশ বছর বয়সে গ্রামোফোন রেকর্ডসে প্রকাশিত যখন চাঁদ ঘুমাবে, রাত ঘুমাবে গানটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।  সতীনাথ মুখোপাধ্যায় এবং ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য আকাশবাণীতে তার গানের প্রশংসা করেছিলেন। তাঁর মেয়ে মধুরিমা দত্ত চৌধুরীও একজন সঙ্গীতশিল্পী।

জেনে নেবো  তাঁর কণ্ঠে গাওয়া জনপ্রিয় গান গুলি –

তাঁর কণ্ঠে গাওয়া জনপ্রিয় গান গুলি হলো – আমি যে প্রদীপ জ্বলিতেই শুধু পারি, যারে ফিরে যা পাখি ফিরে, কুহর কবিতা পৃথিবী যে ওই শোনে, সূর্যে রৌদ্রে পুড়িয়ে নিজেকে, সে জানি না কোথায়, তারে মনে পড়ে যায়, তোমার ওই সাগর চোখে, ওরে ও চম্পাকলি, ও পাখি উড়ে যা ( হৈমন্তী শুক্লার সঙ্গে)  পাখি বলে কারে দেবো এ গান ভাবি তাই (হৈমন্তী শুক্লার সঙ্গে), পায়ে চলা পথ যেথায় গিয়েছে ভেঙ্গে, কেন গো পরনি আজ, যদি যাবে চলে যেও।

জীবনাবসান—

বিশিষ্ট বাঙালি এই সঙ্গীতশিল্পী ২০২১ খ্রিস্টাব্দের ৬ই নভেম্বর পরলোক গমন করেন।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

স্মরণে কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী, ভারতরত্ন ভূপেন হাজারিকা।

ভূপেন হাজারিকা ছিলেন একজন বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী এবং ভারতীয় সঙ্গীতের আইকনোক্লাস্ট এবং একজন বিশ্ব শিল্পী।  এই কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পীর জন্ম ভারতের আসামে।  গভীর কণ্ঠের এই গায়কের জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী।  অসমীয়া চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে তিনি সঙ্গীত জগতে প্রবেশ করেন।  পরবর্তীতে তিনি বাংলা ও হিন্দি ভাষায় গান গেয়ে ভারত ও বাংলাদেশে অবিশ্বাস্য জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।  তিনি অল্প সময়ের জন্য বিজেপি বা ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগ দেন।  ২০০৬ সালের বিবিসি বাংলার শ্রোতাদের জরিপে, তাঁর গান “মানুষ মানওয়ান নাইয়িদ” সর্বকালের বিশটি সেরা বাংলা গানের তালিকায় দ্বিতীয় স্থান লাভ করে।
ভূপেন হাজারিকা ৮ সেপ্টেম্বর ১৯২৬ আসামের সাদিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন।  তার বাবার নাম নীলকান্ত হাজারিকা, মাতার নাম শান্তিপ্রিয়া হাজারিকা।  পিতামাতার দশ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন জ্যেষ্ঠ।  তাঁর অন্য ভাইবোনরা হলেন- অমর হাজারিকা, প্রবীণ হাজারিকা, সুদক্ষিণা শর্মা, নৃপেন হাজারিকা, সাইদ হাজারিকা, কবিতা বড়ুয়া, স্তুতি প্যাটেল, জয়ন্ত হাজারিকা এবং সমর হাজারিকা।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ভূপেন হাজারিকা কানাডায় বসবাসকারী প্রিয়ম্বদা প্যাটেলকে বিয়ে করেন।
ভূপেন হাজারিকার গানগুলোতে মানবপ্রেম, প্রকৃতি, ভারতীয় সমাজবাদের, জীবন-ধর্মীয় বক্তব্য বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। এছাড়াও, শোষণ, নিপীড়ন, নির্যাতনের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ প্রতিবাদী সুরও উচ্চারিত হয়েছে বহুবার।
বিস্তীর্ণ দুপারে, আজ জীবন খুঁজে পাবি,  আমি এক যাযাবর, প্রতিধ্বনি শুনি, মানুষ মানুষের জন্যে, সাগর সঙ্গমে, হে দোলা হে দোলা, চোখ ছলছল করে, আমায় ভুল বুঝিস না, একটি রঙ্গীন চাদর, ও মালিক সারা জীবন, গঙ্গা আমার মা গানগুলি আজও অমর হয়ে রয়েছে।
২৩তম জাতীয় চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ আঞ্চলিক চলচ্চিত্র ‘চামেলী মেমসাহেব’ ছবির সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন তিনি,
পদ্মশ্ৰী, অসম সরকারের শঙ্করদেব পুরস্কার (১৯৮৭), দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার (১৯৯২)
জাপানে এশিয়া প্যাসিফিক আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে রুদালী ছবির শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালকের পুরস্কার অর্জন। তিনিই প্রথম ভারতীয় হিসেবে এই পুরস্কার পান। (১৯৯৩), পদ্মভূষণ (২০০১)  অসম রত্ন (২০০৯), সঙ্গীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার (২০০৯), ভারতরত্ন (২০১৯)।
কিডনী বৈকল্যসহ বার্ধক্যজনিত সমস্যায় জর্জরিত হয়ে ৫ নভেম্বর, ২০১১ সালে ৮৫ বছর বয়েসে প্রয়াত হন।
।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

স্বদেশী আন্দোলনের প্রথম যুগের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা ও বিপ্লবী, বিপিনবিহারী গঙ্গোপাধ্যায়।।।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের কঠোর পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়। এই অন্দোলনে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে বিপিনবিহারী গঙ্গোপাধ্যায় প্রথম সারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন।  বিপিনবিহারী গঙ্গোপাধ্যায় ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে।
বিপিনবিহারী গঙ্গোপাধ্যায়, জন্ম নভেম্বর ৫, ১৮৮৭ । তিনি ছিলেন স্বদেশী আন্দোলনের প্রাথমিক যুগের একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন নেতা এবং অগ্নি যুগের একজন বিপ্লবী।
বিপিনবিহারীর আদি নিবাস ছিল উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার হালিশহর।  বারীন্দ্রকুমার ঘোষ এবং রাসবিহারী বসু সহকর্মী হিসেবে বিপ্লবী মন্ত্রে দীক্ষিত হন।  মুরারিপুকুর, আরিয়াদহ প্রভৃতি বিপ্লবী কেন্দ্রগুলির সাথে তার সরাসরি যোগাযোগ ছিল। তিনি ১৮৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত স্ব-উন্নতি সোসাইটির সদস্য ছিলেন যা বিপ্লবের প্রাথমিক দিনগুলিতে বিদ্যমান ছিল।  ১৯১৪ সালে তাঁর উদ্যোগে রোদা কোম্পানির মাউসার পিস্তল অপহরণ করা হয়।  ১৯১৫ সালে, যুগান্তর দল কার্তিক বার্ড কোম্পানির গাড়ি লুট করতে যতীন্দ্রনাথের সাহায্যকারী ছিল।  তিনি ১৯২১ সালে কংগ্রেস আন্দোলনে যোগ দেন। তিনি ১৯৩০ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। এছাড়াও তিনি ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগ দেন। তিনি তার জীবনের প্রায় ২৪ বছর বিভিন্ন কারাগারে কাটিয়েছেন।
তিনি শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।  ন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস গঠনের পর তিনি বাঙালি প্রাদেশিক সংগঠনের সভাপতি ছিলেন।  প্রথম সাধারণ নির্বাচনে তিনি উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বিজপুর কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হন এবং পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্য হন।
১৪ জানুয়ারি, ১৯৫৪ সালে মহান এই বিপ্লবী প্রয়াত হন।

।।তথ্য: সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

রবীন্দ্রনাথের পুত্রবধূ , কবি, চিত্রশিল্পী ও নৃত্যবিশারদ,  প্রতিমা দেবী – অবিস্মরণীয় এক নারী।

প্রতিমা ঠাকুর লেখিকা, কবি, চিত্রশিল্পী এবং নৃত্যবিশারদ ছিলেন। তিনিরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুত্রবধূ এবং রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী। তাঁর  জন্ম ৫ নভেম্বর ১৮৯৩ খ্রি.।  তাঁর পিতার নাম  শেষেন্দ্রভূষণ চট্টোপাধ্যায়।  মায়ের নাম বিনয়িনী দেবী।  ১১ বছর বয়সে, গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট বোন কুমুদিনীর ছোট নাতি নীলনাথের সাথে প্রতিমার বিয়ে হয়।  নীলনাথ গঙ্গায় সাঁতার কাটতে গিয়ে ডুবে যায়।  রবীন্দ্রনাথের স্ত্রী মৃণালিনী দেবী ছোট প্রতিমাকে দেখে তাঁকে পুত্রবধূ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।  কিন্তু মৃণালিনীর অকাল মৃত্যুর কারণে তা সম্ভব হয়নি।  রথীন্দ্রনাথের সফর থেকে ফিরে আসার পর রবীন্দ্রনাথ প্রতিমা কে আবার বিয়ে করার প্রস্তাব দেন।  তিনি সামাজিক সংস্কার উপেক্ষা করে প্রতিমাও রথীন্দ্রনাথকে বিয়ে করেন।  এই বিয়েই ছিল জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির প্রথম বিধবা বিবাহ।
কর্মজীবন তিনি বিশ্বভারতী এবং শান্তিনিকেতনে বিভিন্ন কাজে রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর স্বামীর সাথে নিজেকে নিযুক্ত করেছিলেন।  তিনি বিভিন্ন হস্তশিল্প এবং রবীন্দ্রনাথের নৃত্য-নাট্য পরিকল্পনা প্রবর্তনে সহায়তা করেছিলেন।  তিনি একজন ভালো চিত্রশিল্পীও ছিলেন।  তিনি ইতালীয় শিক্ষক গিলহার্দির অধীনে কিছুকাল চিত্রকলা অধ্যয়ন করেন।
বিয়ের কিছুদিন পর, তিনি শান্তিনিকেতনের প্রথম মেয়েদের নাটক লক্ষ্মী প্রকর্ণ-এ খিরি চরিত্রে অভিনয় করেন।  তিনি শান্তিনিকেতনে মেয়েদের নাচ শেখানোর ব্যবস্থা করেন।  তিনি রবীন্দ্রনাথের বাল্মীকি প্রতিভা ও মায়ার খিলে নাচতেন।  তিনি রবীন্দ্র নৃত্যনাট্যের প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন।  তাঁর আগ্রহে রবীন্দ্রনাথ চিত্রাঙ্গদা বা পেইং-এর ওপর একটি নৃত্যনাট্য রচনার পরিকল্পনা করেন।  তিনি প্রথমে কয়েকটি বর্ষমঙ্গল নৃত্য রূপান্তরিত করার পর, তিনি রবীন্দ্রনাথকে পূজারিণীর কবিতার একটি নৃত্য সংস্করণ লিখতে অনুরোধ করেন।  রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে তিনি মেয়েদের নিয়ে অনুষ্ঠান করার উদ্যোগ নেন।  এরপর রবীন্দ্রনাথ রচনা করেন নটীরপূজা।  প্রতিমা দেবী অনেক চেষ্টার মাধ্যমে শান্তিনিকেতনের মেয়েদের সাথে এটি করেছিলেন।  নন্দলাল বসুর কন্যা গৌরী শ্রীমতীর ভূমিকায় নেচেছিলেন। ‘নবীন’-এর অভিনয়ের সময় বেশিরভাগ নাটকের পরিকল্পনা করেছিলেন প্রতিমা দেবী।  প্রায় চৌদ্দ বছরের কঠোর পরিশ্রমের পর তিনি রবীন্দ্রনাথের চিত্রাঙ্গদা নৃত্যনাট্যকে স্থায়ী রূপ দিতে সক্ষম হন।  চিত্রাঙ্গদার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তিনি চণ্ডালিকা নৃত্য তৈরি করেন।
নৃত্যেও তিনি পোশাক ও মঞ্চ সজ্জায় শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্য বজায় রেখেছিলেন।  শেষে, তিনি মঞ্চের নকশা স্কেচ করতেন।  তিনি কলা ভবনের শিল্পীদের সঙ্গে নাচের ভঙ্গি আঁকার চেষ্টা করতেন।  মায়া খেলা নাট্যকেও তিনি নতুন রূপ দিয়েছেন।  ক্ষুধার্ত পাষাণ এবং ডালিয়া, শব্দ এবং গল্পের সামান্য ক্ষতি ইত্যাদি মূকনাট্য-ধরনের ছক-এ রূপান্তরিত হয়েছিল।
প্রতিমা কল্পিতাদেবী ছদ্মনামে প্রবাসী পত্রিকায় অনেক কবিতা লিখেছেন।  রবীন্দ্রনাথ তার কল্পিতাদেবী ছদ্মনাম ঠিক করেন।  রবীন্দ্রনাথ মাঝে মাঝে তাঁর কবিতা সংশোধন করতেন।  তাঁর গদ্য রচনায় লেখকের চারিত্রিক শৈলী দেখা যায়।  তাঁর লেখা স্বপ্নবিলাসী পড়ে রবীন্দ্রনাথ মুগ্ধ হয়ে মন্দিরার উদ্ধৃতি লেখেন।
প্রতিমা দেবীর লেখা নির্বাণ গ্রন্থে রবীন্দ্র জীবনের শেষ বছরগুলোর ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে।  স্মৃতিকথার বইটিতে রয়েছে অবনীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথের কথা।  এছাড়া এতে বাড়ির মেয়েদের কথা, উৎসবের কথা বলা হয়েছে।  শান্তিনিকেতনের নৃত্যশৈলী নিয়ে তিনি নৃত্য গ্রন্থে লিখেছেন।  চিত্রলেখা তাঁর লেখা কবিতা ও ছোটগল্পের সংকলন।
তিনি শান্তিনিকেতনে নারী শিক্ষা ও নারী কল্যাণেরও দেখাশোনা করেন।  তিনি মেয়েদের নিয়ে আলাপিনী সমিতি গঠন করেন।  অভিনয় ও গান এই সমাজে স্থান করে নিয়েছে।  তার ব্যবস্থাপনায় আশ্রমের মেয়েরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে গ্রামের অশিক্ষিত মেয়েদের স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরি, শরীরের যত্ন, হাতের কাজ ইত্যাদি শেখাতেন।
।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This