Categories
প্রবন্ধ

সতীশচন্দ্র দাশগুপ্ত, প্রখ্যাত গান্ধীবাদী নেতা ও গঠনমূলক সেবাকার্য ও পল্লীউন্নয়নের বিভিন্ন পদ্ধতির আবিষ্কারক।

সতীশচন্দ্র দাশগুপ্ত (১৪ জুন ১৮৮০–২৪ ডিসেম্বর ১৯৭৯) হলেন একজন রসায়নবিদ ও প্রখ্যাত গান্ধীবাদী নেতা।

জন্ম ——
সতীশচন্দ্র দাশগুপ্তর ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ই জুন বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা পূর্ণচন্দ্র দাশগুপ্ত ও মাতা বিজয়লক্ষ্মী দেবী। পিতা-মাতার আদর্শে ও প্রেরণায় তাঁর জীবন গঠন।
শিক্ষা জীবন——
কুঁড়িগ্রামে বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে কলকাতায় আসেন। প্রথমে রিপন কলেজ বর্তমানে সুরেন্দ্রনাথ কলেজ ও পরে প্রেসিডেন্সি কলেজ। স্নাতকোত্তর শ্রেণীর রসায়ন বিভাগের ল্যাবরেটরিতে কাজ করার সময়ই একাগ্রচিত্ত কর্মনিষ্ঠ ছাত্রটির প্রতি আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের দৃষ্টি আকর্ষিত হয় এবং ছাত্রটিও আচার্যের চিন্তা ও জীবনচর্চায় প্রভাবান্বিত হন।
গান্ধীদর্শন——

বেঙ্গল কেমিক্যালে সতীশচন্দ্রের ব্যস্ততার মাঝে তখন একদিকে নতুন নতুন উদ্ভাবনা তথা সন্ধানের চিন্তা আর অন্যদিকে অন্তহীন জিজ্ঞাসা – দরিদ্র দেশবাসীর সমস্যার সমাধান কীভাবে? অশান্ত মনের এমন মানসিক অবস্থায় ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের কোকনদ অধিবেশনের শিল্পপ্রদর্শনীতে যোগ দিতে গিয়ে প্রথম গান্ধী দর্শন হল তার। বেঙ্গল কেমিক্যালে গবেষণা ছেড়ে গান্ধীজির নির্দেশিত স্বরাজের পথে সর্বক্ষণের কর্মী হওয়ার আন্তরিক বাসনা ব্যক্ত করেন। কিন্তু গান্ধীজির উপদেশ মত বেঙ্গল কেমিক্যালে থেকে গবেষণা ও উদ্ভাবনের কাজ চালিয়ে গবেষণালব্ধ জ্ঞান ও তার ফসল গরীব দেশবাসীর পর্ণকুটিরে পৌঁছেছেন দিতে লিপ্ত হলেন। সতীর্থদের উদ্বুদ্ধ করে কর্মীদের দিয়ে চরকায় সুতা কাটানো, তাঁত চালানো ও কাপড় বোনার কাজ শুরু করলেন। আচার্য আর দুই শিষ্য মিলে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালালেন খদ্দরের উপর রং প্রণালী নিয়ে। বিজ্ঞানের গবেষণাগার তখন চরকা ও কুটির শিল্পের গবেষণাগারে ও কর্মশালায় পরিণত হল।

খাদি প্রতিষ্ঠান ——–
কিন্তু তাতেও তার মনের তৃপ্তি মিলছে না যখন, গান্ধীজির কাজে তিনি সপরিবারে রাতের অন্ধকারে বেঙ্গল কেমিক্যালের বাসভবন ছেড়ে চলে গেলেন সোদপুরে। ‘ফায়ারকিং’ আবিষ্কারক-বিজ্ঞানীর প্রাপ্য দু’লক্ষ টাকা দিয়ে ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে গড়ে তুললেন ‘খাদি প্রতিষ্ঠান’। ঘরে ঘরে চরকা পৌঁছে দিতে স্বল্প মূল্যের বাঁশের চরকা তৈরি করেন। বাংলার বিভিন্ন স্থানে কর্মকেন্দ্র স্থাপন করে বহুমুখী কর্মযজ্ঞের সূচনা করলেন। কুটির শিল্পের বিভিন্ন দিক নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা ও গবেষণা করেছেন। এই প্রতিষ্ঠানে কটেজ ট্যানিং ইন্ডাস্ট্রি এক সময় বড়ো বড়ো ট্যানারির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেছে। নিরক্ষর ও অল্পশিক্ষিত মানুষকে লেখাপড়া শিখিয়ে হাতে-কলমে কাজের মাধ্যমে দক্ষকর্মীরূপে গড়ে তোলার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল তার। প্রধান কর্মকেন্দ্র কলকাতার নিকটবর্তী সোদপুরের আশ্রমটি গান্ধী আশ্রম নামে পরিচিত হল। এর উদ্বোধনে মহাত্মা গান্ধী,মতিলাল নেহেরু ছাড়া সেকালের জাতীয় স্তরের বিখ্যাত ব্যক্তি হাজির ছিলেন। গান্ধীজী এই আশ্রমকে তার ‘দ্বিতীয় বাড়ি’ তথা ‘বাংলার বাসগৃহ’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। সোদপুরের গান্ধী আশ্রম সেই সময় দেশের রাজনীতিকদের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র ছিল। সতীশচন্দ্র গান্ধীজির অনুগামী হয়ে কারাবাসও করেছেন। আলিপুর জেলে অবস্থানকালে স্বেচ্ছায় সেখানে গোশালা রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব পালন করেন। তবে স্বাধীনতা উত্তরকালে আমৃত্যু রাজনীতি থেকে দূরে থেকে সংগঠনমূলক কাজ করে গেছেন ।

গবেষক লেখক সতীশচন্দ্র – নিজের অধীত বিদ্যায়, জ্ঞানে ও উদ্ভাবনে কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষাদানের জন্য উপযুক্ত বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন – তার রচিত দু’টি খণ্ডে প্রকাশিত ‘দি কাউ ইন ইন্ডিয়া’পরবর্তীকালে ভেটেরিনারি কলেজের পাঠ্যপুস্তক হিসাবে নির্বাচিত হয়। ব্যাধিজড়িত দরিদ্র দেশবাসীর জন্য লেখেন ‘হোম অ্যান্ড ভিলেজ ডক্টর’ গ্রন্থটি। তার অন্যান্য সহায়ক গ্রন্থগুলি হল-
‘খাদি ম্যানুয়েল’
‘কটেজ অ্যান্ড ম্যাচ ফ্যাক্টরি’
‘ফাউন্টেন পেন ইন্ক’
‘বোন মিট ফার্টিলাইজার’
‘গোবর গ্যাস প্ল্যান্ট’
‘হ্যান্ড মেড পেপার’
‘ক্রোম ট্যানিং ইন কটেজেস’
এছাড়াও তার উল্লেখযোগ্য রচিত ও অনূদিত গ্রন্থসমৃহ হল-
‘রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধী’
‘গান্ধীভাষ্য গীতা’
‘জীবনব্রত ও গান্ধীবাদ’
‘বিলাতে গান্ধীজী’
‘ভারতের সাম্যবাদ’
‘কুটির চর্মশিল্প’
‘রামচরিত মানস’
‘সংযম বনাম স্বেচ্ছাচার’
‘শিক্ষা ও সেবা’
‘বস্তির গল্প’
‘হিন্দু স্বরাজ্য'(অনূবাদ)
‘গান্ধীজীর আত্মকথা’ (গুজরাটি ভাষা থেকে অনূদিত)
দীর্ঘকাল তিনি ‘রাষ্ট্রবাণী’ নামে ইংরাজী ও বাংলা ভাষায় দু’টি সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদনা ও প্রকাশনা করেছেন।

সম্মাননা——
সতীশচন্দ্র দাশগুপ্ত ছিলেন নিরলস সাধনায় বিস্ময়কর প্রতীক – দেশবাসীর স্নেহলাভে বঞ্চিত হননি এবং সেটিই ছিলো তাঁর সবচেয়ে বড় স্বীকৃতি আর সম্মান। অবশ্য আজীবন গঠনমূলক সেবাকার্য ও পল্লী উন্নয়নে বৈজ্ঞানিক প্রয়োগ-পদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে যমুনালাল বাজাজ পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করা হয়। ওই বৎসরেই তিনি বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্মান সূচক ডি.এসসি উপাধিতে ভূষিত হন।
মৃত্যু——–
জীবনের শেষ লগ্নে বন্ধ্যা-জননীর কোলে গোগড়া কৃষি খামারে ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দের ২৭ শে ডিসেম্বর সতীশচন্দ্র দাশগুপ্ত প্রয়াত হন।
।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

ভারতীয় বাঙালি ঔপন্যাসিক, ছোটোগল্পকার ও প্রাবন্ধিক প্রতিভা বসু।

“প্রতিভা বসু (১৩ মার্চ, ১৯১৫ – ১৩ অক্টোবর, ২০০৬) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি ঔপন্যাসিক, ছোটোগল্পকার ও প্রাবন্ধিক। পারিবারিক পরিচয়ে তিনি বুদ্ধদেব বসুর স্ত্রী।”
প্রতিভা বসু অবিভক্ত বাংলার (অধুনা বাংলাদেশের) ঢাকা শহরের অদূরে বিক্রমপুরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার বাবার নাম আশুতোষ সোম ও মায়ের নাম সরযূবালা সোম। বুদ্ধদেব বসুর সঙ্গে বিবাহের আগে তিনি রাণু সোম নামে পরিচিত ছিলেন। তার দুই মেয়ে মীনাক্ষী দত্ত ও দময়ন্তী বসু সিং এবং এক ছেলে শুদ্ধশীল বসু। শুদ্ধশীল বসু মাত্র ৪২ বছর বয়সে মারা যান।
প্রতিভা বসু প্রথম যৌবনে সংগীতশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। তিনি দিলীপকুমার রায়, কাজী নজরুল ইসলাম, হিমাংশু দত্ত ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে গান শেখেন। রাণু সোম নামে তার একাধিক গানের রেকর্ড প্রকাশিত হয়। ১২ বছর বয়সে প্রথম তিনি গ্রামাফোন ডিস্কে রেকর্ড করেন।স্বাধীনতার আগে বড়ো হওয়ার ফলে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন প্রত্যক্ষ করেছেন তিনি। এমনকি নিজেও সেই আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামী লীলা নাগের অনুপ্রেরণায় বীর বিপ্লবী অনন্ত সিংহের ফাঁসি রদ করার জন্য গান গেয়ে অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন প্রতিভা বসু।
গান করার পাশাপাশি লিখতে শুরু করেন। প্রতিভা বসু’র জনপ্রিয়তা এমনই ছিল যে বই বিক্রেতা এবং প্রকাশকদের মধ্যে বই প্রকাশ ও বিতরণ নিয়ে ঝগড়ারও ঘটনা ঘটে। তার উল্লেখযোগ্য রচনাগুলি হল —–
উপন্যাস—-‐
মনোলীনা (১৯৪৪),
সেতুবন্ধ (১৯৪৭),
সুমিত্রার অপমৃত্যু,
মনের ময়ূর (১৯৫২),
বিবাহিতা স্ত্রী (১৯৫৪),
মেঘের পরে মেঘ (১৯৫৮),
মধ্যরাতের তারা (১৯৫৮),
সমুদ্রহৃদয় (১৯৫৯),
বনে যদি ফুটল কুসুম (১৯৬১),
‘ঘুমের পখিরা’ (১৯৬৫)
‘সমুদ্র পেরিয়ে (১৯৭৫)
‘ঈশ্বরের প্রবেশ’ (১৯৭৮)
‘পদ্মাসনা ভারতী’ (১৯৭৯)
‘প্রথম বসন্ত’
‘রাঙা ভাঙা চাঁদ’ (১৯৯৪)
‘মালতীদির উপাখ্যান (১৯৯৭)
‘উজ্জ্বল উদ্ধার’
‘সকালের সুর সায়াহ্নে’
‘দ্বিতীয় নক্ষত্র’
‘সাগরের স্বাক্ষর’ (১৯৯৮)
‘অগ্নিতুষার’
‘হৃদয়ের বাগান’
‘সোনালি বিকেল’
‘আলো আমার আলো’
‘অপেক্ষাগৃহ’
‘সমাগত বসন্ত’
‘আন্তোনিনা’
‘সূর্যাস্তের রং’
‘মাধুরীলতার ডায়েরী’
‘অতলান্ত’
‘পথে হল দেরী’
ইত্যাদি।

ছোটোগল্প———-
মাধবীর জন্য (১৯৪২),
বিচিত্র হৃদয় (১৯৪৬),
প্রতিভূ’
‘ভালবাসার জন্ম’
‘ঘাসমাটি’
‘বিকেলবেলা’
‘স্বর্গের শেষ ধাপ’
‘রূপান্তর’
‘খন্ডকাব্য’
‘অন্তহীন’
‘স্বামী-স্ত্রী’
‘ইস্টিশানের মিষ্টিফুল’
‘সেইদিন সকালে’
‘গুণীজনোচিত’
‘উৎস’
‘শব্দব্রহ্ম’
‘নিখাত সোনা’
‘আয়না’
‘সকালবেলা’
‘ঈশ্বর ও নারী’
‘মাৎসুমোতো’
‘মিসেস পালিতের গার্ডেন পার্টি’
‘সত্য মিথ্যা,মিথ্যা সত্য’
‘প্রথম সিঁড়ি’
‘মাদমোয়াজেল গতিয়ে’
‘কাঁচা রোদ’
‘সন্ধ্যাবেলা’
‘স্বপ্ন ভেঙে যায়’
‘ভেজানো দরজা’
‘সত্যাসত্য’
‘ন্যায় অন্যায়’
‘গর্ভধারিণী
‘অন্ধকারে’
‘সুমিত্রার অপমৃত্যু’
‘মহাভোজ’
‘নতুন পাতা’
প্রবন্ধ——–
মহাভারতের মহারণ্যে।
।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

স্মরণে, রামপ্রসাদ বিসমিল, মণিপুর ষড়যন্ত্র মামলায় যুক্ত বৃটিশ বিরোধী বিপ্লবী।।।

রামপ্রসাদ বিসমিল ( ১১ জুন ১৮৯৭―১৯ ডিসেম্বর ১৯২৭) একজন ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী। রামপ্রসাদ বিসমিল ছিলেন বিপ্লবী সংগঠন হিন্দুস্তান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। শহীদ ভগৎ সিং তাকে এই বলে প্রশংসা করেছেন যে তিনি উর্দু ও হিন্দিতে একজন মহান কবি ও লেখক ছিলেন, যিনি ইংরেজি থেকে  ক্যাথেরিন এবং বাংলা থেকে বলশেভিক কী কার্তুত অনুবাদ করেছিলেন।

রামপ্রসাদ বিসমিল ভারতের স্বাধীনতার জন্য মাত্র ৩০ বছর বয়সে ফাঁসির মঞ্চে শহীদ হন। তার বিখ্যাত রণহুংকার ( “সারফারোশি কি তামান্না আব হামারে দিল মে হে দেখ না হে জোর কিতনা বাজো হে কাতিল মে হে” ) এই গান গেয়ে কত বিপ্লবী যে ফাঁসির মঞ্চে শহীদ হলেন তা জানা নেই। বিসমিল আজিমাবাদী রচিত সারফারোশি কি তামান্না গজলটি রামপ্রসাদ বিসমিলের মাধ্যমে ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনে রণহুংকার হিসেবে জনপ্রিয়তা পায়। রামপ্রসাদ বিসমিল “মৈনপুর কাণ্ড” আর “কাকোরী কাণ্ডে” নেতৃত্বে দিয়ে ব্রিটিশ শাসকের বুকে প্রচণ্ড আঘাত হেনেছিল। ১১ বছরের বিপ্লবী জীবনে রামপ্রসাদ অনেক বই লিখেছিলেন এবং তা তিনি স্বয়ং প্রকাশিত করেন। রাম প্রসাদের জীবনকালেই প্রায় সমস্ত বই প্রকাশিত হয়, কিন্তু ইংরেজ সরকার তার সমস্ত বই নিষিদ্ধ করে দেন। বিপ্লবী রামপ্রসাদ বিসমিল-এর জন্ম ১১ জুন ১৮৯৭ সালে হয়। রামপ্রসাদ-এর জন্মস্থান উত্তরপ্রেশের শাহজানপুর জেলা। তার পিতার নাম ছিল মুরলিধর ও মার নাম মুলমতি দেবী। মুরলিধর বাড়িতে বসেই রাম প্রসাদ কে হিন্দি অক্ষর শেখাতেন, সে সময় উর্দু ভাষাও খুব প্রচলিত ছিল যার কারনে রামপ্রসাদ কে এক মৌলবী সাহেবের কাছে পাঠানো হত। পণ্ডিত মুরলিধর রামপ্রসাদের পড়াশোনায় বিশেষ লক্ষ্য দিতেন, একটু শয়তানি করলেই রামপ্রসাদ কে মার খেতে হত। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত রামপ্রসাদ সবসময় ফাস্ট হয়েছিল। বাল্যকালে থেকেই আর্যসমাজ এর সম্পর্কে যোগ দেন। শাহজানপুরে আর্যকুমার সভা স্থাপিত করেন। শাহজানপুরে আর্যসমাজ মন্দিরে স্বামী সোমদেবের সংস্পর্শে আসেন এবং তার জীবনে পরিবর্তন আসে। রামপ্রসাদ বিপ্লবী দলে যোগ দিয়ে হিন্দুস্তান রিপাবলিকান এসোসিয়েশনের সদস্য হন। তাদের এই বিপ্লবের কাজে অর্থ সংগ্রহ করার দরকার অস্ত্রসস্ত্র আনার জন্য। তিনি একদিন শাহজাহানপুর থেকে লখনৌতে ট্রেন ভ্রমণের সময় খেয়াল করলেন যে প্রত্যেক স্টেশন মাস্টার তার কেবিনে গার্ডের মাধ্যমে টাকার ব্যাগ আনছেন। সেই টাকার ব্যাগটি লখনৌ জংশনের সুপারেন্টেন্ডেন্টের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বিসমিল সিদ্ধান্ত নিলেন সরকারি অর্থ লুট করার। এটির মাধ্যমে শুরু হল কাকোরী ট্রেন ডাকাতি।
বিপ্লবীরা তাদের কার্যক্রম চালানোর জন্য এবং অস্ত্রশস্ত্র কেনার উদ্দেশ্যে, বিপ্লবীরা ৮ আগস্ট ১৯২৫ তারিখে শাহজাহানপুরে একটি সভায় বসেন। অনেক কথাবার্তার পর এটি সিদ্ধান্ত হয় যে তারা সরণপুর লখনৌ চলাচলকারী ৮-ডাউন প্যাসেঞ্জার ট্রেন বহনকারী সরকারি কোষাগার লুট করবেন।
৯ আগস্ট ১৯২৫ তারিখে আসফাকউল্লা খান এবং অন্য আটজন বিসমিলের নেতৃত্বে ট্রেন লুট করেন। অন্যরা হলেন বারাণসীবাসি বাংলা থেকে রাজেন্দ্র লাহিড়ী,এবং শচীন্দ্রনাথ বক্সী, উন্নাও থেকে চন্দ্রশেখর আজাদ, কলকাতা থেকে কেশব চক্রবর্তী, রাইবেরেলি থেকে বনওয়ারী লাল, ইটাওয়া থেকে মুকুন্দি লাল, বেনারস থেকে মন্মথ নাথ গুপ্ত এবং শাহজাহানপুর থেকে মুরারি লাল।
১৯২৬ সালে কাকোরি বিপ্লব সংঘটিত হয় এবং এটির বিরুদ্ধে ব্রিটিশ সরকার কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলা শুরু করে। এই মামলার বিচারে পণ্ডিত রামপ্রসাদ বিসমিল,  রাজেন্দ্র লাহিড়ী, ঠাকুর রৌশন সিং, আসফাকউল্লা খানের ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়। ১৯ ডিসেম্বর ১৯২৭ সালে গোরখপুর জেলে  ফাঁসি দেওয়া হয়।
।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

স্মরণে বৃটিশ ভারতের খ্যাতনামা চিকিৎসক, বাংলার গর্ব ডঃ রাধাগোবিন্দ কর।।

রাধাগোবিন্দ কর ব্রিটিশ ভারতের একজন খ্যাতনামা চিকিৎসক।২৩ আগস্ট ১৮৫২সালে তাঁর জন্ম।  তাঁর পিতার নাম ডাক্তার দুর্গাদাস কর । তার ভাই রাধামাধব কর ছিলেন একজন বিখ্যাত চিকিৎসক এবং সফল নাট্যব্যক্তিত্ব। প্লেগের মতো মারণরোগের মোকাবিলায় নিজের জীবন বিপন্ন করে ঝাঁপিয়ে পড়া, মাতৃভাষায় চিকিৎসা বিজ্ঞানের বই লেখা ও সম্পাদনা, শত বাধা পেরিয়ে এশিয়ার প্রথম বেসরকারি মেডিক্যাল স্কুল স্থাপন— এ সমস্তই ছিল রাধাগোবিন্দ করের দেশ ও দেশবাসীর প্রতি ভালবাসা ও দায়িত্ববোধের পরিচায়ক।
রাধাগোবিন্দ কর হেয়ার স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর, তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞান পড়ার জন্য কলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন, কিন্তু বিভিন্ন কারণে এক বছর পর কলেজ ছেড়ে যান।  ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে তিনি আবার কলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন এবং ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে উচ্চ শিক্ষার জন্য ইংল্যান্ডে যান।  ১৮৮৭ সালে, তিনি এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেডিসিনে ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে আসেন।
ডাঃ রাধাগোবিন্দ কর ভারতে ফিরে এলে তিনি কলকাতায় একটি জাতীয় চিকিৎসা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার জন্য একটি সভা আহ্বান করেন।  সেই বছরের ১৮ অক্টোবর, ড. মহেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, ড. অক্ষয় কুমার দত্ত, ড. বিপিন বিহারী মৈত্র, ড. এম. এল. দে, ড. বি. যেমন জি. ব্যানার্জী এবং ড. কুন্দন ভট্টাচার্যের মতো কলকাতার বিখ্যাত চিকিৎসকদের উপস্থিতিতে।  , ব্রিটিশ শাসকদের অধীনে সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে আলাদা একটি মেডিকেল স্কুল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।  এই সিদ্ধান্ত থেকে ক্যালকাটা স্কুল অফ মেডিসিন ১৬১, সাতীখানা বাজার রোডে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং শীঘ্রই ১১৭, বউবাজার স্ট্রিটে স্থানান্তরিত হয়।  ডক্টর রাধাগোবিন্দ কর প্রথম সম্পাদক নির্বাচিত হন।  ১৮৮৭ সালের আগস্ট মাসে, স্কুলের নাম পরিবর্তন করে কলকাতা মেডিকেল স্কুল করা হয় এবং ১৮৮৯ সালে ডাঃ রাধাগোবিন্দ কর কলকাতা মেডিকেল স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটির সেক্রেটারি নির্বাচিত হন।  ১৯০৪ সালে, ক্যালকাটা মেডিকেল স্কুল এবং অন্য একটি বেসরকারী চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলেজ অফ ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস অফ বেঙ্গল, দ্য ক্যালকাটা মেডিকেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ অফ ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস অফ বেঙ্গল গঠনের জন্য একীভূত হয়, যা ৫ জুলাই, ১৯১৬ সালে বেলগাছিয়া হিসাবে উদ্বোধন করা হয়েছিল।  মেডিকেল কলেজ।  ডঃ রাধাগোবিন্দ কর এর প্রথম সম্পাদক নির্বাচিত হন।  আজ এই কলেজটি তার নাম অনুসারে রাধা গোবিন্দ কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল (R.G.Kar) নামে পরিচিত।
রাধাগোবিন্দ কর বেশ কিছু ডাক্তারি বই রচনা করেছিলেন । এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ধাত্রীসহায়, ভিষক সুহৃদ, ভিষক বন্ধু, সংক্ষিপ্ত শারীরতত্ত্ব, কর সংহিতা, সংক্ষিপ্ত ভৈষজ্যতত্ত্ব, প্লেগ, স্ত্রীরোগচিকিৎসা, স্ত্রীরোগের চিত্রাবলী ও সংক্ষিপ্ত তত্ত্ব, গাইনিকল্যাজি, সংক্ষিপ্ত শিশু ও বাল চিকিৎসা, রোগীর পরিচর্যা প্রভৃতি ।
মৃত্যু—–
১৯১৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রাধাগোবিন্দ কর।
।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
রিভিউ

আজ  বাংলা ব্লগ দিবস, জানুন দিনটি কেন পালিত হয় এবং গুরুত্ব।।।

বাংলা ব্লগসাইট সাম হোয়্যার ইন ব্লগ ‘বাঁধ ভাঙার আওয়াজ’-এর উদ্যোগে ব্লগারদের (যারা ব্লগ লেখেন) মতামতের ভিত্তিতে ১৯ ডিসেম্বরকে বাংলা ব্লগ দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বৈচিত্র্যময় ব্লগার ও ব্লগিং প্ল্যাটফর্মের পেছনের কারিগরদের মধ্যে সেতুবন্ধন এবং এর বাইরের বিশাল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য দিবসটি ইতোমধ্যে ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশের সাইবার পরিসরে ব্লগের ভূমিকা অগ্রগণ্য। বাক স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ ও গণজাগরণের পরিসর তৈরি এর মূল উদ্দেশ্য।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

মাতঙ্গিনী হাজরা ভারতীয় বিপ্লবী, স্বাধীনতা আন্দোলনের শহীদ- একটি বিশেষ পর্যালোচনা।।।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের অব্যর্থ পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে মাতঙ্গিনী হাজরা  প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন।ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুধু শহীদ ভগৎ সিং-এর মতই নয় বরং শক্তিশালী নারীদের দ্বারা প্রশস্ত হয়েছিল যারা তাদের মাটিতে দাঁড়িয়েছিল এবং দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ব্রিটিশদের সাথে লড়াই করেছিল। মাতঙ্গিনী হাজরা  ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে। ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিকন্যা ছিলেন মাতঙ্গিনী হাজরা।

মাতঙ্গিনী হাজরা (১৯ অক্টোবর ১৮৭০ – ২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৪২) ছিলেন একজন ভারতীয় বিপ্লবী যিনি ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন।  তিনি ২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৪২ সালে তমলুক থানা দখলের জন্য সমর পরিষদ (যুদ্ধ পরিষদ) দ্বারা গঠিত স্বেচ্ছাসেবকদের (বিদ্যুত বাহিনীর) পাঁচটি ব্যাচের একজনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যখন তিনি ব্রিটিশ ভারতীয় পুলিশ কর্তৃক গুলিবিদ্ধ হন।  থানার সামনে, মেদিনীপুরে প্রথম “ভারত ছাড়ো” আন্দোলনের শহিদ হন।  তিনি একজন কট্টর গান্ধীয়ান ছিলেন এবং “বৃদ্ধা গান্ধী” এর জন্য তাকে স্নেহের সাথে গান্ধী বুড়ি নামে ডাকা হত।

১৮৭০ সালে তমলুকের নিকটবর্তী হোগলা গ্রামের এক মহিষ্য পরিবারে জন্মগ্রহণ করা ছাড়া তার প্রাথমিক জীবন সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় না এবং কারণ তিনি একজন দরিদ্র কৃষকের মেয়ে ছিলেন, তাই তিনি আনুষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করেননি।   দারিদ্র্যের কারণে বাল্যকালে প্রথাগত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন মাতঙ্গিনী। তিনি তাড়াতাড়ি বিয়ে করেছিলেন (১২ বছর বয়সে) এবং তার স্বামীর নাম ত্রিলোচন হাজরা এবং তিনি আঠারো বছর বয়সে কোন সন্তান না নিয়ে বিধবা হয়েছিলেন।  তার শ্বশুরের গ্রামের নাম আলিনান, তমলুক থানার। তিনি মাত্র আঠারো বছর বয়সেই নিঃসন্তান অবস্থায় বিধবা হয়েছিলেন।
মেদিনীপুর জেলার স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল এই আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ।  ১৯০৫ সালে, মাতঙ্গিনী হাজরা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে সরাসরি জড়িত হন।  আদর্শগতভাবে তিনি ছিলেন গান্ধীবাদী।  ১৯৩২ সালে, মাতঙ্গিনী আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দেন।  সে সময় তিনি লবণ আইন অমান্য করার জন্য জেলে ছিলেন।  তবে কিছুক্ষণ পরেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।  কিন্তু চৌকিদারি ট্যাক্স বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করতে থাকলে তাকে আবার কারারুদ্ধ করা হয়।  এই সময় তিনি ছয় মাস বহরমপুর জেলে বন্দী ছিলেন।  হিজলী বন্দী নিবাসে কিছুদিন বন্দীও ছিলেন।  মুক্তির পর, তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একজন সক্রিয় সদস্য হন এবং নিজের হাতে চরকা ঘুরিয়ে খাদি কাপড় তৈরি করতে শুরু করেন।  ১৯৩৩ সালে, শ্রীরামপুরে একটি বিভাগীয় কংগ্রেস অধিবেশনে যোগদানের সময় পুলিশের লাঠিচার্জে মাতঙ্গিনী আহত হন।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনের অংশ হিসেবে, কংগ্রেস সদস্যরা মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন থানা ও অন্যান্য সরকারি অফিস দখল করার পরিকল্পনা করেছিল।  এটি ছিল জেলায় ব্রিটিশ সরকারকে উৎখাত করে একটি স্বাধীন ভারতীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার একটি পদক্ষেপ।  তখন ৭২ বছর বয়সী হাজরা তমলুক থানা দখলের জন্য ছয় হাজার সমর্থকের, বেশিরভাগ মহিলা স্বেচ্ছাসেবকদের একটি মিছিলের নেতৃত্ব দেন।  মিছিলটি শহরের উপকণ্ঠে পৌঁছলে, ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৪ ধারার অধীনে ক্রাউন পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করার নির্দেশ দেয়।  সামনে এগোতেই একবার গুলিবিদ্ধ হন হাজরা।  স্পষ্টতই, তিনি এগিয়ে গিয়ে জনতার উপর গুলি না চালানোর জন্য পুলিশের কাছে আবেদন করেন।  জাতীয় সরকারের মুখপত্র বিলাব্বির মতে, ফৌজদারি আদালত ভবনের উত্তর দিক থেকে মাতঙ্গিনী একটি মিছিলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।  পুলিশ গুলি চালালে তিনি অন্য স্বেচ্ছাসেবকদের পেছনে ফেলে নিজে নিজে এগিয়ে যান।  পুলিশ তাকে তিনবার গুলি করে।  তার কপালে ও দুই হাতে গুলি লেগেছে।  তারপরও সে চলতে থাকে।  বারবার গুলি চালানো সত্ত্বেও, তিনি বন্দে মাতরম, “মাতৃভূমির বিজয়” বলতে থাকেন।  ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও ওড়ানোর সময় তিনি মারা যান।
১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর, মাতঙ্গিনী হাজরার নামে অসংখ্য স্কুল, পাড়া এবং রাস্তার নামকরণ করা হয়।  কলকাতার দীর্ঘ হাজরা রোডের নামকরণ করা হয়েছে তাঁর নামে।  স্বাধীন ভারতে কলকাতা শহরে প্রথম কোনো নারীর মূর্তি স্থাপন করা হয় তা মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তি।  ১৯৭৭ সালে, এই মূর্তিটি কলকাতার ময়দানে স্থাপন করা হয়েছিল।  তমলুকের ঠিক যে জায়গায় তাঁর মৃত্যু হয়েছিল সেখানে তাঁর একটি মূর্তিও রয়েছে।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

পেনশনভোগী দিবস, জানুন এই দিনটি কেন পালিত হয় এর ইতিহাস এবং গুরুত্ব।

১৯৮৩ সাল থেকে প্রতি বছর ১৭ ডিসেম্বর পেনশন দিবস হিসাবে পালিত হয়। পেনশনের ইতিহাস ১৫০ বছরেরও বেশি।  ১৮৫৭ সালে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের পর ব্রিটিশ সরকার ভারতে পেনশন ব্যবস্থা চালু করেছিল। এটি তখনকার ব্রিটেনে প্রচলিত পেনশন ব্যবস্থার প্রতিফলন ছিল।  সরকার অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের অবসর পরবর্তী জীবনের জন্য অর্থ কভার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।  ১৮৭১ সালের ভারতীয় পেনশন আইন দ্বারা সিস্টেমটি চূড়ান্ত করা হয়েছিল। তবে, ভাইসরয় এবং গভর্নরদের পেনশন প্রদানের চূড়ান্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল।  এইভাবে পেনশনভোগীরা ভাইসরয় এবং গভর্নরদের করুণাতে ছিলেন।  ব্রিটিশ সরকার মাঝে মাঝে পেনশনভোগীদের মূল্যস্ফীতির প্রভাব নিরপেক্ষ করার জন্য তাদের পেনশন বৃদ্ধির মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দেয়।  যদিও সরকার অবসর গ্রহণের সুবিধা প্রদান করছে, তবুও ১-১-১৯২২ থেকে কার্যকর করা মৌলিক বিধিগুলিতে সেগুলি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।  শ্রী ডি এস নাকারা প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের আর্থিক উপদেষ্টা, (ভারতীয় প্রতিরক্ষা পরিষেবা অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস থেকে একজন অফিসার) ১৯৭২ সালে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি অন্যান্য পেনশনভোগীদের মতো পেনশন পেতে সমস্যার সম্মুখীন হন।  তাই সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন তিনি।  বিচারপতি যশবন্তরাও চন্দ্রচূড়, তৎকালীন প্রধান বিচারপতি পিটিশনকারী এবং সরকারের কথা শুনে রায় দেন যে ‘পেনশন একটি উপহার বা পুরস্কার বা অনুদান নয়’ পেনশন হল একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীর অধিকার যিনি দীর্ঘকাল ধরে দেশের সেবা করেছেন।
সরকার তার কর্মীরা অবসর গ্রহণের পর শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনক জীবনযাপন নিশ্চিত করতে বাধ্য।  এই ঐতিহাসিক রায় জারি করা হয়েছিল ১৭ ডিসেম্বর ১৯৮২-এ।
মাননীয় প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের উপরোক্ত তাৎপর্যপূর্ণ রায় ভারতের পেনশনভোগীদের যথোপযুক্ত মর্যাদার সঙ্গে পেনশন পাওয়ার অধিকার প্রদান করেছে এবং যুক্ত হয়েছে মহার্ঘ্য ত্রাণও।
ভি এস নিকারা অবসরের পর বছরের পর বছর ধরে প্রধান বিচারপতির ঐতিহাসিক রায়ের জন্য অপেক্ষা করেছেন এবং সমস্ত অবসরপ্রাপ্ত কর্মীসম্প্রদায়ের মর্যাদা ও অধিকার পাওয়ার জন্য। নিকারাকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করার জন্য ভারতের সমস্ত পেনশনভোগীরা রায় প্রদানের তারিখটা বেছে নিয়েছেন। ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দ হতে ঐতিহাসিক রায় প্রদানের তারিখ টি ১৭ ডিসেম্বর ভারতে পেনশনভোগীদের বিভিন্ন সংগঠন দ্বারা “পেনশনার দিবস” হিসাবে পালন করা হয়। এই কারণেই ১৭ ডিসেম্বরকে ‘পেনশনার’ দিবস হিসাবে বেছে নেওয়া হয়।
১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের ৪ ফেব্রুয়ারি টাইমস অফ ইন্ডিয়ার সংবাদ উদ্ধৃতিতে, এটি গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস্এ স্থান পেয়েছে। কারণ এই রায়ের কারণে কুড়ি লক্ষ পেনশনভোগী উপকৃত হয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের রায় খুবই স্পষ্ট।  পেনশন প্রথমত পেনশনভোগীর অধিকার হিসাবে বিবেচিত হয় এবং দ্বিতীয়ত সম্মানজনক জীবনযাপনের জন্য পর্যাপ্ত হওয়া উচিত।   যাইহোক, সরকার পেনশনভোগীদের অবস্থার বিশদ বিবরণ অধ্যয়ন করতে এবং সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রকৃত অর্থে প্রতিকারের সুপারিশ করার জন্য একটি কমিশন গঠন করেছে (যা ৬ তম কেন্দ্রীয় বেতন কমিশন বা ৬ তম সিপিসি নামে পরিচিত)।

কমিশন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, ব্যক্তি ও বিভিন্ন পেনশনভোগী সংগঠনের মতামত নিয়েছে।  অল ইন্ডিয়া সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট পেনশনার্স অ্যাসোসিয়েশন (পুনেতে হেড কোয়ার্টার এবং সারা ভারতে শাখা) সমস্ত স্তরের পেনশনভোগীদের বিভিন্ন অভিযোগ বিবেচনা করার জন্য ডেটা এবং সুপারিশ প্রদানের জন্য এগিয়ে ছিল।বর্তমানে ভারতে পেনশনভোগীর সংখ্যা ৭৩ লক্ষের ও বেশি এবং ভারত সরকারের ‘পেনশন ও পেনশনভোগী কল্যাণ দফতর’ (DoPPW) নামক স্বতন্ত্র বিভাগও তাদের কল্যাণে বিভিন্ন দিকে নজর রাখে।
।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

বঙ্কিমচন্দ্র সেন, বাঙালি সাংবাদিক ও দেশ (পত্রিকা)র সম্পাদক – একটি বিশেষ পর্যালোচনা ।।।।

বিংশ শতকের প্রথমার্ধে বাংলার সাংবাদিকতার জগতে এক বিশেষ পরিচিত নাম বঙ্কিমচন্দ্র সেন  । তিনি স্বদেশচেতনায় ও সাহিত্যানুরাগে সাংবাদিকতা ও পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন।

জন্ম ও শিক্ষা জীবন——
বঙ্কিমচন্দ্র সেন বর্তমান বাংলাদেশের অবিভক্ত বাংলার ময়মনসিংহ জেলার টাঙ্গাইলের ঘরিন্দা গ্রামে ১৮৯২ সালের ১৭ই ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন।   পিতা জগৎচন্দ্র সেন ছাত্রাবস্থায় সাহিত্যের প্রতি অনুরাগী ছিলেন।   তাঁর প্রথম কবিতা ১৯১৬ সালে ময়মনসিংহের কেদারনাথ মজুমদারের “সৌরভ” পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।   তারপর একে একে বিভিন্ন পত্রিকায়।   দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের ‘নারায়ণ’ পত্রিকাতেও তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়।
কর্মজীবন——
পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করলেও স্বদেশচেতনা তাঁকে আবদ্ধ রাখতে পারে নি। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় এসে স্যার সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের “বেঙ্গলী” পত্রিকার প্রুফ রিডার হন এবং পরে ওই পত্রিকাতেই তিনি সাংবাদিকতা শুরু করেন। সাংবাদিকতা তার কাছে ছিল দেশসেবা। তিনি পরবর্তীতে ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত “প্রফুল্লকুমারের সাধনা” শীর্ষক এক নিবন্ধে লিখেছেন-
‘‘আমি যখন সংবাদপত্র সেবার ব্রত গ্রহণ করি, তখন চাকুরীর টানে তা গ্রহণ করি নাই, দেশসেবার নেশার ঝোঁকেই এপথে পা দিয়েছিলাম।’’
১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হলে ওই পত্রিকার সম্পাদকীয় স্তম্ভে তার লেখা ‘‌জেনারেল ডায়ার’‌ হইচই ফেলে দেয়। আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক বাল্যসঙ্গী সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদারের অনুরোধে ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে বঙ্কিমচন্দ্র ‘আনন্দবাজারে’ যোগ দেন। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে পত্রিকার সম্পাদক গ্রেফতার হলে তিনি কিছু দিন অস্থায়ী সম্পাদক হন। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে ২৪ শে নভেম্বর আনন্দবাজার পত্রিকা গোষ্ঠীর সাপ্তাহিক সাহিত্য পত্রিকা দেশ প্রকাশিত হলে ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ফেব্রুয়ারি দেশ পত্রিকারও সম্পাদক হন তিনি । এই সময় তিনি একসঙ্গে আনন্দবাজারের সম্পাদকীয় বিভাগের কাজ এবং ‘দেশ’ পত্রিকার সম্পাদনা করতেন। তিনি দীর্ঘ তেইশ বছর দেশ পত্রিকার সম্পাদনা করে ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে অবসর নেন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলনের সমর্থনে প্রবন্ধ লেখার জন্য কারাবরণ করেন। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ হতে আধ্যাত্মিক জগতে আকৃষ্ট হয়ে সাধনমার্গে যান। বৈষ্ণবশাস্ত্র ও ধর্ম বিষয়ে বক্তৃতা দিতে থাকেন।
তার রচিত গ্রন্থগুলি সমূহ-
বৈষ্ণব ধর্মের উপর কয়েকটি গ্রন্থও রচনা করেন। তার রচিত গ্রন্থগুলি হল –
গীতামাধুরী, লোকমাতা রানী রাসমণি,জীবনমৃত্যুর সন্ধিস্থলে, নাম মাধুরী।
মৃত্যু——
খ্যাতিমান দেশব্রতী বাঙালি সাংবাদিক বঙ্কিমচন্দ্র সেন ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের ৯ই জুন প্রয়াত হন।
।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

স্মরণে, কিংবদন্তি ভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্র অভিনেত দিলীপ রায়।

দিলীপ রায় বাংলা সিনেমার একজন কিংবদন্তি ভারতীয় বাঙালী চলচ্চিত্র অভিনেতা। পাশাপাশি তিনি ছিলেন প্রখ্যাত পরিচালক। উত্তম কুমার সমসাময়িক স্বর্ণ যুগের একজন শিল্পী তিনি। বহু  বাংলা চলচ্চিত্রে কাজ করেআছেন তিনি। তিনি ১৯৩১ সালের ১৭ ডিসেম্বর অবিভক্ত ভারতের চট্টগ্রাম জেলায় (বর্তমানে বাংলাদেশে) জন্মগ্রহণ করেন।  তিনি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের নেয়ামতপুরে স্কুলের পড়াশোনা শেষ করেন।  ১৯৫৪ সালে, তিনি ছবি বিশ্বাস অভিনীত সতী বেহুলা দিয়ে অভিনয় শুরু করেন।  তিনি অমিতাভ বচ্চন অভিনীত ক্ষুধিতা পাশান (১৯৬০), আসমান মহল (১৯৬৫), আপানজান (১৯৬৮), এবং তুফান (১৯৮৯) এর মতো অন্যান্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন।  সৌমিত্র চ্যাটার্জি ও উত্তম কুমার অভিনীত দেবদাস (১৯৭৯) দিয়ে পরিচালক হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ।  তিনি অমৃতা কুম্ভের সন্ধ্যায় (১৯৮২) এবং নীলকন্ঠ (১৯৮৫) এর মতো সিনেমাও পরিচালনা করেছিলেন।

তাঁর অভিনিত ছবি সমূহ—
তাঁর অভিনিত উল্লেখযোগ্য ছবি গুলি হলো মনের মানুষ, হিমঘর, সংঘর্ষ, অটোগ্রাফ , মন মানে না ,  এক মুঠো ছবি , শুভদৃষ্টি, ফিরিয়ে দাও, নটী বিনোদিনী, আব্বাজান, রক্তের স্বাদ, তোমার রক্তে আমার সোহাগ, মায়া মমতা, শ্বেত পাথরের থালা, ইন্দ্রজিৎ, অভাগিনী, কাগজের নৌকা, নবাব, দেবতা, গরমিল, হীরক জয়ন্তী, তুফান, ওরা চারজন, দেবিকা, তিন পুরুষ, মোহনার দিকে, সূর্য তৃষ্ণা, অভিনয় নয়, অশ্লীলতার দায়ে, দুই পুরুষ, রঙের সাহেব, ধনরাজ তামাং, সেই চোখ , অগ্নীশ্বর, রোদনভরা বসন্ত, আমি সিরাজের বেগম, আপনজন , আসমান মহল, আরোহী , অভয়া ও শ্রীকান্ত, সরি ম্যাডাম, ভগিনী নিবেদিতা, কঠিন মায়া, ঝিন্দের বন্দী, ক্ষুধিত পাষাণ, পরিবার, ক্ষণিকের অতিথি,  গড় নসিমপুর, প্রস্তর স্বাক্ষর, অজানা শপথ, জোড়াদীঘির চৌধুরী পরিবার, রাজদ্রোহী প্রভৃতি।
তাঁর পরিচালক হিসেবে—-
গরমিল (১৯৯০), নীলকন্ঠ (১৯৮৫), অমৃত কুম্ভের সন্ধানে (১৯৮২), দেবদাস (১৯৭৯)।

মৃত্যু–
কিংবদন্তি অভিনেতা দিলীপ রায় ২০১০ সালের ২ সেপ্টেম্বর আক্রান্ত হয়ে ৭৮ বছর বয়সে কলকাতায় প্রয়াত হন।
।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

স্মরণে স্বাধীন ভারতের প্রথম উপ প্রধানমন্ত্রী, ভারতের লৌহমানব সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল।

আজ ১৫ ডিসেম্বর, লৌহ মানব সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের প্রয়াণ দিবস। ভারতের প্রাক্তন উপ-প্রধানমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল পরিচিত ‘আয়রন ম্যান অফ ইন্ডিয়া’ হিসেবে।তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে নেহেরু ‘নতুন ভারতের নির্মাতা ও একীকরণকারী’ বলে অভিহিত করেছিলেন। সেই থেকেই তিনি লৌহ মানব নামে পরিচিত।  তিনি ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম পুরোধা। প্রজাতন্ত্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নেতা সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ছিলেন নিঃস্বার্থ নেতা। একটি আধুনিক ও অখন্ড ভারত গড়ার প্রকৃত যোদ্ধা। যে দেশের স্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে রেখে লড়ে গেছেন প্রাণপণে। নতুন রূপ দিয়েছিলেন ভারতের ভাগ্যকে। আজকের এই দিনে আসুন জেনে নেওয়া যাক তাঁর সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য।
সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল (ভারত-রত্ন, ১৯৯১) ছিলেন একজন ভারতীয় পণ্ডিত ও জাতীয়তাবাদী নেতা। যিনি সরদার প্যাটেল নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। তাকে ভারতের লৌহমানব বলা হয়। গুজরাতের কুর্মী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন প্যাটেল। তার পিতা-মাতা ছিলেন জাভেরভাই ও লাডবাই। তার বাবা ঝাঁসির রানির সেনাবাহিনীতে কাজ করেছিলেন। তার মা ছিলেন একজন খুব আধ্যাত্মিক মহিলা।
গুজরাতি মিডিয়াম স্কুলে তার শিক্ষাজীবন শুরু করে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল পরবর্তীকালে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে স্থানান্তরিত হন।১৮৯৭ সালে তিনি উচ্চ বিদ্যালয় পাস করেন এবং আইন পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন।তিনি তুলনায় বেশি বয়েসে ম্যাট্রিক পাশ করেন (২২ বছর)।তিনি আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করতে ১৯১০ সালে ইংল্যান্ডে যান। তিনি ১৯৩৩ সালে ইনস অফ কোর্ট থেকে আইন বিভাগে ডিগ্রী সম্পন্ন করেন ।ভারতে ফিরে এসে তিনি গুজরাতের গোধরায় তাঁর আইন অনুশীলন শুরু করেন। আইনি দক্ষতার জন্য তাকে ব্রিটিশ সরকার অনেক লাভজনক পদে প্রস্তাব দিয়েছিল তবে তিনি সব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তিনি ব্রিটিশ সরকার এবং তাদের আইনের কট্টর বিরোধী ছিলেন । তাই ব্রিটিশদের পক্ষে কাজ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
১৯১৭ সালে সর্দা‌র বল্লভভাই ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের গুজরাত শাখার সেক্রেটারি হিসাবে নির্বাচিত হন । ১৯১৮ সালে কায়রায় বন্যার পরে ব্রিটিশরা জোর করে কর চাপিয়ে দিলে তিনি কৃষকদের কর প্রদান না করার জন্য একটি বিশাল “কর শুল্ক অভিযান” পরিচালনা করেছিলেন। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষকে কৃষকদের কাছ থেকে নেওয়া জমি ফিরিয়ে দিতে বাধ্য করেছিল। তাঁর এলাকার কৃষকদের একত্রিত করার প্রচেষ্টা তাঁকে ‘সর্দার’ উপাধি দিয়েছিল।
তিনি গান্ধী দ্বারা চালিত অসহযোগ আন্দোলনকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করেছিলেন।

১৯৩০ সালে মহাত্মা গান্ধীর উদ্যোগে বিখ্যাত লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্য কারাবন্দী নেতাদের মধ্যে সর্দা‌র বল্লভভাই পটেল ছিলেন। “লবণ আন্দোলন” চলাকালীন তার অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য অসংখ্য লোকের দৃষ্টিভঙ্গিকে অনুপ্রাণিত করেছিল যারা পরবর্তীকালে এই আন্দোলনকে সফল করতে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল। কংগ্রেস সদস্যদের অনুরোধে গান্ধী কারাগারে বন্দী থাকাকালীন তিনি গুজরাত জুড়ে সত্যগ্রহ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
১৯৩১ সালে সর্দার প্যাটেলকে ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড আরউইন এবং মহাত্মা গান্ধীর মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তির পরে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। এই চুক্তিটি গান্ধি-আরউইন চুক্তি হিসাবে পরিচিতি পায়। একই বছর তিনি করাচি অধিবেশনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন ।যেখানে দলটি তার ভবিষ্যতের পথ নির্ধারণ করেছিল।
১৯৩৪ সালের আইনসভা নির্বাচনের সময় সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষে প্রচার করেছিলেন। যদিও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে তিনি গান্ধীর প্রতি তার অটল সমর্থন অব্যাহত রেখেছিলেন।
পটেলের রাজনীতি এবং চিন্তাভাবনার উপর গান্ধীর গভীর প্রভাব ছিল । তিনি গান্ধীর প্রতি অটল সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং সারা জীবন তার নীতির পাশে ছিলেন। জওহরলাল নেহেরু, চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী এবং মাওলানা আজাদ সহ নেতারা আইন অমান্য আন্দোলন ব্রিটিশদের দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করবে মহাত্মা গান্ধীর এই ধারণার সমালোচনা করেছিলেন।কিন্তু পটেল গান্ধীর এ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন দিয়েছিলেন। ১৯৪২ সালে তাকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং কংগ্রেসের অন্যান্য নেতাদের সাথে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত তিনি আহমেদনগর দুর্গে বন্দী ছিলেন।
১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর তিনি প্রথম উপ- প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন। পটেল স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতবর্ষে প্রায় ৫২২ টি রাজ্যকে ভারতের অধীনে এনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ব্রিটিশ সরকার এই শাসকদের দুটি বিকল্প দিয়েছিল – তারা ভারত বা পাকিস্তানে যোগ দিতে পারে; বা তারা স্বাধীন থাকতে পারে। এই ধারা অসুবিধা বাড়িয়ে তোলে। কংগ্রেস এই ভয়ঙ্কর কাজটি সর্দার প্যাটেলকে অর্পণ করেছিলেন যিনি ১৯৪৭ সালের তিনি রাজ্যগুলোর সংহতকরণের জন্য তদারকি শুরু করেছিলেন। জম্মু ও কাশ্মীর, জুনাগড় ও হায়দরাবাদ বাদে সকল রাজ্যকে সংহত করতে তিনি সফল হয়েছিলেন। অবশেষে তিনি তার তীব্র রাজনৈতিক বুদ্ধির সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছিলেন এবং জম্মু ও কাশ্মীর, জুনাগড় ও হায়দরাবাদ কে ভারতের অধীন করেছিলেন। আমরা যে ভারতকে আজ দেখতে পাচ্ছি তা হল সরদার বল্লভভাই পটেল যে প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন তার ফল।ঐক্যের মূর্তি সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল। তাঁর ছায়া আজও ভারতীয় রাজনীতিতে উজ্জ্বল। নিজেকে কখনও উঁচুতে তুলে ধরতে চাননি তিনি, তেমনটা করেননি কখনও। বরাবর নিজের কাজকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন সবথেকে বেশি। তাঁর কাজই তাঁর পরিচয়। গোটা প্রশাসক জীবনে অসাধ্যসাধন করেছেন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল। অসামান্য এক স্বাধীনতা সংগ্রামী তিনি। পাশাপাশি এক অসাধারণ প্রশাসকও বটে। নিজে গান্ধীবাদী হলেও অন্ধ অনুসারী নন। আজ মানুষ ভারত বলতে যা বোঝে, সেই ভারত তিনিই গড়ে দিয়েছেন। তাঁকে দেশের ‘লৌহমানব’ বলা হয়। তার সম্মাননায় ভারতের গুজরাতে তার জন্মস্থানে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভাস্কর্য তৈরি করা হয়। যার নাম দেওয়া হয় “ঐক্যের মূর্তি।”সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের স্ট্যাচুই এখন পৃথিবীর উচ্চতম স্ট্যাচু। ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’ নামে এই মূর্তি উন্মোচন করেন। ১৮২ মিটার উঁচু এই মূর্তি নর্মদা নদীর তীরে অবস্থিত। এইছাড়াও তার নামে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে।২০১৪ সালে তার জন্মদিবস ৩১ অক্টোবরকে রাষ্ট্রীয় একতা দিবস হিসাবে ঘোষণা করা হয়।মৃত্যুর পরে তাঁকে ভারতরত্ন সম্মান দেওয়া হয়। প্যাটেলকে শ্রদ্ধা জানাতে ২০১৪ সালে সূচনা হয় রাষ্ট্রীয় একতা দিবসের। প্রত্যেক বছর তাঁর জন্ম বার্ষিকীতে পালন হবে এই একতা দিবস । ১৯৫০ সালের ১৫ ডিসেম্বর মুম্বাইতে সৰ্দার বল্লভভাই পটেলের পরলোকপ্রাপ্তি ঘটে।
।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া।।

Share This