Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

বিশ্ব থিয়েটার দিবস 2025: থিম, ইতিহাস, তাৎপর্য, উক্তি এবং উদযাপন।

প্রতি বছর ২৭ মার্চ বিশ্ব থিয়েটার পালিত হয়। থিয়েটার শুধুমাত্র বিনোদনই প্রদান করে না। এটি একটি শিল্প। পৃথিবীর আদিম কাল থেকেই মানুষের নিজের গল্প বলার তাগিদটা অদম্য। তাই থিয়েটারের মত সৃজনশীল মাধ্যমের অন্ত নেই। শিক্ষা প্রদান করতে ও অনুপ্রেরণা জোগাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থিয়েটার।

থিয়েটারের ভূমিকা জনসমক্ষে তুলে ধরতেই হয় বিশ্ব থিয়েটার দিবস।আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইন্সটিটিউটের দ্বারা ১৯৬১ সালে সর্বপ্ৰথম এই দিবসটির প্রচলন শুরু হয়েছিল।

ইতিহাস—

আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইন্সটিটিউট (আইটিই) কর্তৃক ১৯৬১ সালে বিশ্ব থিয়েটার দিবসের প্রবর্তন হয়। প্রতিবছর ২৭ মার্চ আইটিই কেন্দ্রসমূহ এবং আন্তর্জাতিক থিয়েটার কমিটি দিবসটি পালন করে। দিবসটি উদ্‌যাপন করতে বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চনাটক অনুষ্ঠান প্রদর্শিত হয়। এর মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হচ্ছে- এই দিবস উদ্‌যাপন লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইন্সটিটিউটে একজন তারকা মঞ্চনাটকের মাধ্যমে, আইটিইর শান্তির সংস্কৃতি বিষয়ক এক বিশেষ বাৰ্তা প্রেরণ করে। প্ৰথম বিশ্ব থিয়েটার দিবসের আন্তর্জাতিক বাৰ্তা ১৯৬২ সালে ফ্রান্সের জিন কোকটিয়াও লিখেছিলেন। প্ৰথমে হেলসিঙ্কি এবং তারপর ভিয়েনায় ১৯৬১ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত আইটিইর নবম আলোচনাসভায় আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইন্সটিটিউটের ফিনিশ কেন্দ্রের পক্ষে অধ্যক্ষ আর্ভি কিভিমায় বিশ্ব থিয়েটার দিবস উদ্‌যাপনের প্রস্তাব দেন। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান কেন্দ্রসমূহে এটাকে সমৰ্থন দেয়ার পরই দিবসটির বিশ্বব্যাপি প্রচলন শুরু হয়।

থিম-

বিশ্ব থিয়েটার দিবস উদযাপন এবং থিয়েটার শিল্পের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির একটি দিন। এটি করার জন্য, প্রতি বছর ২৭ মার্চ, বিগত ৫৯ বছর ধরে একটি থিম অনুসরণ করা হয়। বিশ্ব থিয়েটার দিবস ২০২৫-এর থিম হল “থিয়েটার এবং শান্তির সংস্কৃতি।” ITI প্রতি বছর বিশ্ব থিয়েটার দিবসের জন্য কোনো নির্দিষ্ট থিম নির্ধারণ করে না। প্রতি বছর, বিশ্ব থিয়েটার দিবসের প্রতিপাদ্য হল “থিয়েটার এবং শান্তির সংস্কৃতি”। অনেক উদযাপন আইটিআই কেন্দ্রে এবং বিশ্বজুড়ে মনোনীত স্থানে ঘটে এবং আইটিআই এই দিনটি উদযাপনকারী প্রত্যেককে তাদের প্রচারের জন্য তাদের সৃজনশীলতা ব্যবহার করতে উত্সাহিত করে।

বিশ্ব থিয়েটার দিবস ২০২৫ : তাত্‍পর্য—

এই বিশ্ব থিয়েটার দিবসের মূল লক্ষ্য হল থিয়েটারকে তার সমস্ত আকারে প্রচার করা, মানুষকে থিয়েটারের মূল্য সম্পর্কে সচেতন করা, থিয়েটার সম্প্রদায়গুলিকে তাদের কাজকে বৃহত্‍ পরিসরে প্রচার করতে সক্ষম করা, থিয়েটারকে এর সমস্ত রূপ উপভোগ করা এবং অন্যদের সাথে থিয়েটারের জন্য আনন্দ ভাগ করুন। বিশ্ব থিয়েটার দিবস আমাদের থিয়েটারের বিভিন্ন রূপ উদযাপন করার এবং আমাদের সমাজে তাদের তাত্পর্য উপলব্ধি করার সুযোগ দেয়। থিয়েটারের এই ফর্মগুলির মধ্যে অনেকগুলি শতাব্দী ধরে টিকে আছে, যখন কিছু সময়ের সাথে সাথে নতুন আকারে বিকশিত হয়েছে। যদিও কিছু অন্যদের চেয়ে বেশি বিখ্যাত, এই সমস্ত শিল্প ফর্ম শিক্ষা, বিনোদন, উদ্দীপনা এবং শিথিলকরণের জন্য অপরিহার্য। দিবসটির অন্যতম লক্ষ্য হল থিয়েটারের মূল্য ও সৌন্দর্য সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা। এই কারণেই আন্তর্জাতিক থিয়েটার সম্প্রদায় নাটক ও সঙ্গীতের প্রাচীন নৈপুণ্যকে উন্নীত করার জন্য প্রতি বছর পারফরম্যান্স, বক্তৃতা এবং পুরস্কার উপস্থাপনের পরিকল্পনা করে।
নাটক বা থিয়েটার সব সময় মানুষের মনে ও চেতনায় এক উচ্চ স্থান পেয়ে এসেছে। নাটক বলতেই আমাদের মনে আসে শেকসপিয়রের নাম। তাঁকে বলা হয় বিশ্বের অগ্রণী নাট্যকার। তবে নাটক মানে শুধু শেকসপিয়র নন, কালিদাস, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বাদল সরকার, বিজন ভট্টাচার্য, দীনবন্ধু মিত্রের মতো অনেকের নামই আসে। ভারত এমন একটি দেশ, সেখানে সব কিছুরই নিজস্ব রূপ আছে। গ্রীক ঘরানার নাটক নিজ গুণে কবেই ভারতের একান্ত হয়ে উঠেছে। সংস্কৃত সাহিত্যের শুদ্রক রচিত ‘মৃচ্ছকটিক’, কালিদাস রচিত ‘অভিজ্ঞান শকুন্তলম’, ভবভূতির ‘উত্তর রামচরিত’ সেই নির্দশনই বহন করে চলেছে।

গুরুত্ব-

থিয়েটার হল এটি শিল্প রূপ। যা শুধু মাত্র বিনোদনই নয়। ব্যক্তিদের শিক্ষিত ও অনুপ্রাণিত করে।। নাটকের মাধ্যমে, থিয়েটার সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা আনে, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে উন্নীত করে এবং সহানুভূতি ও বোঝাপড়াকে উত্‍সাহিত করে। এটি ব্যক্তিদের তাদের দৃষ্টিভঙ্গি চ্যালেঞ্জ করে এবং কথোপকথন এবং আলোচনার জন্য একটি স্থান প্রদান করে সমালোচনামূলক চিন্তার দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করে।

উপসংহার-

থিয়েটার, একটি নির্দিষ্ট স্থানে বা মঞ্চে, লাইভ দর্শক, লাইভ অভিনয়, অভিনেতা ও অভিনেত্রীর মাধ্যমে প্রকৃত অভিজ্ঞতা লাভ করার, সমন্বিত শিল্প। তাই সিনেমা বা সিরিয়াল কখনই থিয়েটারের জায়গা নিতে পারেনি। বলা হয় একজন থিয়েটার অভিনেতা এতটা দক্ষ হন, যে সব মাধ্যমেই তিনি মানানসই। আজ বিশ্ব থিয়েটার দিবস সব নাট্য শিল্পীদের কাছে বিশেষ আনন্দের। বিভিন্ন নাটকের মাধ্যমে এই দিনটি পালন করা হয়।

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট ও উইকিপিডিয়া।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

সারা ভারতে ‘ডিজি’ নামে সুপরিচিত ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়, জীবৎকালেই কিংবদন্তির নায়কে প্রতিষ্ঠিত হন।।।

ভূমিকা—- ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন একজন বাংলা চলচ্চিত্র প্রযোজক, নির্দেশক, অভিনেতা। ধীরেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলী, ধীরেন গাঙ্গুলী বা ডি জি নামেও পরিচিত, ছিলেন দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার এবং পদ্মভূষণ সম্মানপ্রাপ্ত বাংলা চলচ্চিত্র জগতের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি একাধিক চলচ্চিত্র নির্মাণকারী সংস্থা স্থাপন করেছিলেন, যথা ‘ইন্দো ব্রিটিশ ফিল্ম কোম্পানী’, ‘ব্রিটিশ ডমিনিয়ন ফিল্মস’, ‘লোটাস ফিল্ম কোম্পানী’ ইত্যাদি।

পরবর্তীকালে তিনি নিউ থিয়েটার্সে যোগদান করেছিলেন। তিনি হাস্যরসাত্মক অনেক ছবির প্রযোজনা করেছিলেন। সারা ভারতে ‘ডিজি’ নামে সুপরিচিত ছিলেন তিনি। চিত্রশিল্পী, মূকাভিনেতা, বহুরূপী সজ্জায় বিশেষজ্ঞ, কাহিনিকার, চিত্রনাট্যকার, পরিচালক, অভিনেতা, কৌতুকশিল্পী এবং সংস্থা-সংগঠক ধীরেন্দ্রনাথ জীবৎকালেই কিংবদন্তির নায়কে প্রতিষ্ঠিত হন।
প্রাথমিক জীবন—–
১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশব ও কৈশোর সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায় না। যতদূর জানা যায় তিনি শান্তিনকেতনে লেখাপড়া করেছিলেন। পরে তিনি হায়দ্রাবাদ স্টেটের স্টেট আর্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কিছুদিন সেখানে কাটান। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এক দুঃসম্পর্কের আত্মীয়াকে বিবাহ করেন। পিতা বামনচন্দ্র ব্রাহ্ম ধর্ম গ্রহণ করে পিতৃভূমি বরিশালের আলতা গ্রাম থেকে কলকাতায় চলে আসেন। মেজদা নগেন্দ্রনাথ ছিলেন রবীন্দ্রনাথের জামাতা। কৈশোর কাটে শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের স্নেহচ্ছায়ায়। ছবি আঁকায় ও অভিনয়ে সমান দক্ষ ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের সাথে অনেক নাটকে অভিনয়ও করেছেন। ১৯১০খ্রি. শান্তিনিকেতনের পাঠ শেষ করে রবীন্দ্রনাথের পরামর্শে কলকাতা আর্ট কলেজে ভর্তি হন। বাড়ির গুরুজনদের তা পছন্দ না হওয়ায় বাড়ি ছেড়ে আলাদা থেকে পেইন্টিং ও মেক-আপ করে অর্থ উপার্জন করেন। মেক-আপ-এর কাজে তার দক্ষতা ছিল প্রসিদ্ধ, যার প্রমাণ পাওয়া যায় তার লেখা বই ভাবকী অভিব্যক্তি-তেও (১৯১৫)। পরে তিনি ব্রিটিশ ভারতের গোয়েন্দা সংস্থায় চাকরি করেছেন। এ বিষয়ে ব্রিটিশ ভারতে এবং পরে স্বাধীন ভারতে গোয়েন্দা সংস্থা সি আই ডি’র অফিসারদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। তিনি ডিটেকটিভদের নানা সাজে সজ্জিত করে দিতেন। পরে বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে পুলিশি অত্যাচারের প্রতিবাদে তিনি ওই কাজ ছেড়ে দেন। তখন ছবি এঁকে তা বিক্রি করতেন। তাঁর চিত্রপুস্তক ‘ভাবের অভিব্যক্তি’, ‘বিয়ে’, ‘ভালবাসা’, ‘ফুলসজ্জা’, ‘রং-বেরং’ প্রভৃতি। বইগুলির রচনাও তাঁর নিজস্ব। ‘রং-বেরং’ বইটির অনেকগুলি চুটকি তাঁর হাস্যকৌতুক-সৃজনক্ষমতার সাক্ষ্য বহন করে।
কর্মজীবন—-
ডি জি’র ফোটোগ্রাফির বই তাঁকে জামশেদজি ফ্রেমজি ম্যাডানের সান্নিধ্যে নিয়ে আসে; ম্যাডান এরপর ডি জ়ি’র তৈরি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করতে রাজি হন। ডি জি আর ম্যাডান থিয়েটারের ম্যানেজার নীতীশ লাহিড়ী একসাথে ১৯১৮ সালে ইন্দো ব্রিটিশ ফিল্ম কোম্পানী শুরু করেন, যেটা ছিল বাঙ্গালী মালিকানার প্রথম ফিল্ম প্রোডাক্‌শন কোম্পানী। ১৯২১ সালে এই কোম্পানীর তৈরি প্রথম ছবি বিলাতফেরত (The England Returned) মুক্তি পায়। নীতীশ লাহিড়ীর পরিচালনায় নির্মিত এই হাস্যরসাত্মক নির্বাক ছবি বাণিজ্যিক সাফল্য অর্জন করে। ১৯২২ সালে এঁদের আরও দুটি ছবি মুক্তি পায়-যশোদানন্দন আর সাধু অউর শয়তান।
কলকাতার বাইরে তিনি হায়দ্রাবাদ শহরে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ডিজি লোটাস ফিল্ম কোম্পানি। পরে হায়দ্রাবাদের নিজামের সহযোগিতায় তৈরি করেছিলেন একটি ফিল্ম স্টুডিও ও দুটি সিনেমা হল। ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে বোম্বেতে তৈরি ‘রাজিয়া বেগম’ ছায়াছবির প্রযোজক ছিলেন তিনি। এই ছবিতে মুসলিম রাজকুমারীর সাথে হিন্দু যুবকের প্রণয় কাহিনি ছিল। এই কারণে নিজাম তাঁকে হায়দ্রাবাদ থেকে বহিষ্কার করেন।
কলকাতায় ফিরে এসে ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ‘ডিজি ব্রিটিশ ডোমিনিয়ন ফিল্মস’ নামক একটি নতুন চলচ্চিত্র নির্মাণের কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এই সময় তাঁর সহযোগী ছিলেন প্রমথেশ বড়ুয়া। এরপর প্রমথেশ বড়ুয়া চলচ্চিত্র নির্মাণে আধুনিক প্রযুক্তি প্রত্যক্ষ করার জন্য লন্ডনে যান এবং সেখান থেকে চলচিত্র নির্মাণের জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর প্যারিসে কিছুদিন লাইট বয় হিসেবে কাজ করেন। প্যারিস থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণের সামগ্রী ক্রয় করে তিনি ভারতে ফিরে আসেন এবং ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে বড়ুয়া পিক্চার্স নামক ষ্টুডিও স্থাপন করেছিলেন। ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দের দিকে চলচ্চিত্রের শব্দ সংযোজনের কৌশল যুক্ত হওয়া শুরু হলে, ‘ডিজি ব্রিটিশ ডোমিনিয়ন ফিল্মস’ কোম্পানির বিলুপ্ত হয়। এবং ধীরেন্দ্রনাথ ‘বড়ুয়া পিক্চার্স কোম্পানি’তে যোগদান করেন।
চলচ্চিত্রের তালিকা—-
পরিচালক হিসেবে—–
কার্টুন (১৯৪৯), শেষ নিবেদন (১৯৪৮), শৃঙ্খল (১৯৪৭), দাবী (১৯৪৩), আহুতি (১৯৪১), কর্মখালি (১৯৪০), পথভুলে (১৯৪০), অভিসারিকা (১৯৩৮), অচিন প্রিয়া (১৯৩৮), হালবাংলা (১৯৩৮), Country Girl (১৯৩৬) (হিন্দীঃ দেহাতী লেড়কি), দ্বীপান্তর (১৯৩৬), বিদ্রোহী (১৯৩৫), Excuse Me, Sir (১৯৩৪), হালকথা (১৯৩৪), মাসতুতো ভাই (১৯৩৪), Night Bird (১৯৩৪), চরিত্রহীন (১৯৩১), টাকায় কি না হয় (১৯৩১) (ইংরেজিঃ Money Makes What Not), অলীকবাবু (১৯৩০) (ইংরেজিঃ Master Liar), Flames of Flesh (১৯৩০) (বাংলাঃ কামনার আগুন), বিমাতা (১৯২৩) (হিন্দীঃ বিজয়বসন্ত্‌, ইংরেজিঃ Stepmother), চিন্তামণি (১৯২৩), The Marriage Tonic (১৯২৩), সতী সীমন্তিনী (১৯২৩), বিজয়বসন্ত্‌ (১৯২৩), যযাতি (১৯২৩), যশোদানন্দন (১৯২২) (হিন্দীঃ শ্রীরাধাকৃষ্ণ), হরগৌরী (১৯২২), ইন্দ্রজিৎ (১৯২২), Lady Teacher (১৯২২)।
অভিনেতা হিসেবে—–
শেষ নিবেদন (১৯৪৮), বন্দিতা (১৯৪৫), হালবাংলা (১৯৩৮), Excuse Me, Sir (১৯৩৪), মাসতুতো ভাই (১৯৩৪), মরণের পরে (১৯৩১) (ইংরেজিঃ After the Death), টাকায় কি না হয় (১৯৩১) (ইংরেজিঃ Money Makes What Not), পঞ্চশর (১৯৩০) (ইংরেজিঃ Blind God / Five Arrows), অলীকবাবু (১৯৩০) (ইংরেজিঃ Master Liar), শঙ্করাচার্য (১৯২৭) (ইংরেজিঃ Renaissance of Hinduism), যশোদানন্দন (১৯২২) (হিন্দীঃ শ্রীরাধাকৃষ্ণ), Lady Teacher (১৯২২), সাধু অউর শয়তান (১৯২২), বিলাতফেরত (১৯২১) (ইংরেজিঃ The England Returned)।
লেখক/চিত্রনাট্যকার হিসেবে—
শেষ নিবেদন (১৯৪৮) (চিত্রনাট্যকার), বিলাতফেরত (১৯২১) (ইংরেজিঃ The England Returned) (লেখক)।
প্রযোজক হিসেবে—-
Flames of Flesh (১৯৩০) (বাংলাঃ কামনার আগুন), বিলাতফেরত (১৯২১) (ইংরেজিঃ The England Returned)।
প্রাপ্ত পুরস্কার ও সম্মাননা—-
ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে তাঁর অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ডি জি ১৯৭৪ সালে ভারত সরকার প্রদত্ত পদ্মভূষণে সম্মানিত হন। ভারতে চলচ্চিত্র বিষয়ে দেওয়া সর্বোচ্চ সম্মান দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার তাকে ১৯৭৫ সালে দেওয়া হয়।
মৃত্যু—-
তিনি জন্মগ্রহণ করেন কলকাতা শহরে, আর শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন এই শহরেই ১৮ নভেম্বর ১৯৭৮ সালে।

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট ও উইকিপিডিয়া।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

পাঞ্জাবের অমৃতসরে আধ্যাত্মিকতা এবং ঐক্যের আলোকবর্তিকা হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে স্বর্ণ মন্দির।।।

স্বর্ণ মন্দির, যা শ্রী হরমন্দির সাহেব নামেও পরিচিত, পাঞ্জাবের অমৃতসরে আধ্যাত্মিকতা এবং ঐক্যের আলোকবর্তিকা হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। এই শ্রদ্ধেয় স্থানটি, 16 শতকে চতুর্থ শিখ গুরু গুরু রাম দাস দ্বারা সূচিত এবং 1604 খ্রিস্টাব্দে গুরু অর্জন দেব দ্বারা সম্পন্ন করা হয়েছিল, এটি একটি সম্মানিত মুসলিম সাধক হযরত মিয়াঁ মীর কর্তৃক ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সাথে অন্তর্ভুক্তির প্রতীক।

মন্দিরটি কেবল বিভিন্ন কোণ থেকে অনুগামীদেরই আকর্ষণ করে না বরং এর স্থাপত্য, আচার-অনুষ্ঠান এবং ল্যাঙ্গার পরিষেবার মাধ্যমে শিখ ধর্মের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকেও প্রদর্শন করে।
সর্বোত্তম পরিদর্শন সময়কাল–
অক্টোবর এবং মার্চের মধ্যে আপনার ভ্রমণের পরিকল্পনা করার পরামর্শ দেওয়া হয় যখন আবহাওয়া মনোরম হয়, 10°C থেকে 25°C পর্যন্ত। এই সময়টি নভেম্বরে গুরু নানক জয়ন্তী, এপ্রিলে বৈশাখী এবং অক্টোবর এবং নভেম্বরের মধ্যে দীপাবলির মতো উল্লেখযোগ্য উত্সবগুলির সাথেও মিলিত হয়, যা একটি অনন্য সাংস্কৃতিক নিমজ্জন প্রদান করে।
স্বর্ণ মন্দিরের অনন্য দিক–
অমৃত সরোবর দ্বারা বেষ্টিত, মন্দিরটি আধ্যাত্মিক শুদ্ধির জন্য একটি স্থান হিসাবে কাজ করে। এর ল্যাঙ্গার, একটি সম্প্রদায়ের রান্নাঘর, দর্শকদের বিনামূল্যে খাবার সরবরাহ করে, সমতা এবং নিঃস্বার্থতার নীতিগুলি তুলে ধরে। গোল্ডেন টেম্পল বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বড় বিনামূল্যের রান্নাঘরের একটি হিসেবে বিখ্যাত, শিখ ঐতিহ্যের নম্রতার ওপর জোর দেয়।
প্রস্তাবিত সেবাসমূহ–
দর্শনার্থীরা দর্শনের মাধ্যমে মন্দিরের সৌন্দর্য অনুভব করতে পারেন, লঙ্গরে অংশগ্রহণ করতে পারেন এবং অখন্ডপাঠের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারেন। কীর্তন সঙ্গীত আধ্যাত্মিক পরিবেশকে উন্নত করে, যখন প্রসাদ বিতরণ ঐশ্বরিক কৃপাকে চিহ্নিত করে। অতিরিক্ত সুবিধার মধ্যে রয়েছে চিকিত্‍সা সহায়তা, হুইলচেয়ার সমর্থন, এবং বিনামূল্যে পানীয় জল, সকলের জন্য আরামদায়ক পরিদর্শন নিশ্চিত করা।
আরতি অনুষ্ঠান–
দরবার সাহেবের মধ্যে সকাল এবং সন্ধ্যায় দৈনিক আরতিতে যোগদান একটি নিমগ্ন অভিজ্ঞতা প্রদান করে। এর জমকালো সাজসজ্জার সাথে, অনুষ্ঠানটি উপস্থিতদের ভক্তি ও শ্রদ্ধায় আচ্ছন্ন করে, একটি উল্লেখযোগ্য আধ্যাত্মিক ব্যস্ততা চিহ্নিত করে।
কাছাকাছি আকর্ষণ–
অমৃতসর, স্বর্ণ মন্দিরের আবাসস্থল, জালিয়ানওয়ালা বাগ, পার্টিশন মিউজিয়াম, দুর্গিয়ানা মন্দির, মহারাজা রঞ্জিত সিং মিউজিয়াম, রাম বাগ গার্ডেন, খালসা কলেজ, গোবিন্দগড় ফোর্ট, অকাল তখত এবং মাতা লাল দেবী মন্দির সহ অন্বেষণ করার মতো বেশ কয়েকটি পর্যটন স্পট রয়েছে। এই সাইটগুলি এই অঞ্চলের সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির একটি আভাস দেয়।
গোল্ডেন টেম্পল কেবল শিখ বিশ্বাস এবং ঐতিহ্যের প্রতীক নয় বরং মানবতা, ঐক্য এবং নিঃস্বার্থতার চিরন্তন চেতনার প্রমাণ হিসেবেও দাঁড়িয়ে আছে। এর অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতি এবং পরিষেবাগুলি দর্শনার্থীদের আধ্যাত্মিক এবং শারীরিক সুস্থতার জন্য পূরণ করে, এটিকে ভারতে অবশ্যই একটি পবিত্র ল্যান্ডমার্কে পরিদর্শন করতে হবে।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

ঘুরে আসুন হলদিয়ার উপকণ্ঠে অবস্থিত প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থান , তমলুক রাজবাড়ি।।।

হলদিয়ার উপকণ্ঠে অবস্থিত, তমলুক প্রাসাদের প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ, যা তমলুক রাজবাড়ি নামেও পরিচিত, ঐতিহাসিক তাৎপর্য এবং স্থাপত্য দক্ষতার একটি দৃশ্য বর্ণনা উপস্থাপন করে। 2500 বছর পুরানো বলে বিশ্বাস করা এই সাইটটি একসময় পশ্চিমবঙ্গের রাজার বাসস্থান হিসেবে কাজ করেছিল, যা এই অঞ্চলের রাজকীয় অতীতের একটি আভাস দেয়।

তমলুক রাজবাড়ির স্থাপত্য নকশা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, কারণ এতে ইন্দো-গ্রীক স্থাপত্যের উপাদান দেখা যায়, যা ভারতের এই অংশে একটি বিরল আবিষ্কার।
ঐতিহাসিক এবং স্থাপত্যের মূল্য থাকা সত্ত্বেও, তমলুক রাজবাড়ি তর্কাতীতভাবে প্রাপ্য মনোযোগ পায়নি। তিন বছর আগে সাইটটির দর্শনার্থী অরূপ দে-এর মতে, সরকারি যত্নের অভাবে এই স্থাপত্যের বিস্ময় অবহেলায় পড়ে আছে। দে জোর দিয়ে বলেন, “এটি ইন্দো গ্রীক স্থাপত্যের একটি বিরল ঐতিহাসিক প্রমাণ। কী একটি স্থাপত্য, কিন্তু সরকার এর যত্ন নেয়নি। এটা যদি তাই হতো, এটা অবশ্যই করা হতো।” এই বিবৃতিটি তমলুক রাজবাড়ির ঐতিহাসিক ও স্থাপত্য তাত্পর্যের প্রতি আগ্রহী আরও দর্শনার্থী এবং পণ্ডিতদের আকর্ষণ করে একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে স্বীকৃত হওয়ার সম্ভাবনার ওপর জোর দেয়।
হলদিয়ার কাছে তমলুক রাজবাড়ির অবস্থান পর্যটক এবং ইতিহাস উত্সাহীদের কাছে এর আকর্ষণকে আরও বাড়িয়ে তোলে। এলাকাটি তার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য পরিচিত, তমলুক রাজবাড়ি হলদিয়ায় দেখার জন্য শীর্ষস্থানীয় স্থানগুলির মধ্যে একটি। যাইহোক, ধ্বংসাবশেষের বর্তমান অবস্থা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এর গঠন এবং ঐতিহাসিক সারমর্ম সংরক্ষণের জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপের আহ্বান জানায়।
এটি দাঁড়িয়েছে, তমলুক রাজবাড়ি পশ্চিমবঙ্গের সমৃদ্ধ স্থাপত্য ঐতিহ্য এবং এই অঞ্চলে ইন্দো-গ্রীক সাংস্কৃতিক প্রভাবের একটি প্রমাণ হিসাবে রয়ে গেছে। এটি ঐতিহাসিক স্থান সংরক্ষণের গুরুত্বের অনুস্মারক হিসাবে কাজ করে, শুধুমাত্র তাদের শিক্ষাগত এবং সাংস্কৃতিক মূল্যের জন্যই নয় বরং স্থানীয় পর্যটন ও অর্থনীতিতে অবদান রেখে স্বীকৃত ঐতিহ্যবাহী স্থান হওয়ার সম্ভাবনার জন্যও।
যারা হলদিয়ায় যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন বা ভারতের সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক এবং স্থাপত্যের উত্তরাধিকার অন্বেষণ করতে আগ্রহী তাদের জন্য, তমলুক রাজবাড়ি একটি অনন্য সুযোগ প্রদান করে। সাইটটি দর্শকদের সময়মতো ফিরে যেতে এবং অতীত যুগের মহিমা কল্পনা করার জন্য আমন্ত্রণ জানায়, যদিও এটি এই জাতীয় অমূল্য সাংস্কৃতিক ধন সংরক্ষণের প্রতি বৃহত্তর সচেতনতা এবং পদক্ষেপের আহ্বান জানায়।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

জানব জানুন চা এর ইতিহাস সম্পর্কে কিছু কথা।

চা, সারা বিশ্বে লালিত একটি পানীয়, এটির উৎপত্তি প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে চীনে ফিরে আসে, যা এর দীর্ঘ ও বহুতল ইতিহাসের সূচনা করে। উচ্চ-পদস্থ সন্ন্যাসী এবং উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের বিলাসিতা থেকে চায়ের যাত্রা অসংখ্য দেশে একটি গৃহস্থালির প্রধান স্থানে এর সাংস্কৃতিক তাত্পর্য এবং ব্যাপক আবেদনকে ধারণ করে।

593 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে, চা জাপানে পৌঁছেছিল, চা অনুষ্ঠান এবং শিষ্টাচারের সাথে গভীরভাবে জড়িত একটি সংস্কৃতিকে লালন করে। 16 শতকে ইউরোপে চা প্রবর্তনের ক্ষেত্রে ডাচদের ভূমিকা ছিল, 17 শতকে ইংল্যান্ড অনুসরণ করে, যেখানে 1659 খ্রিস্টাব্দে লন্ডনে প্রথম চায়ের দোকান খোলা হয়েছিল। 1677 সালে চীন থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চা রপ্তানি চায়ের বৈশ্বিক যাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত।
ভারতে, 1835 সালে আসামে একটি পরীক্ষা হিসাবে চা চাষ শুরু হয়, চট্টগ্রাম এবং মালনিছড়া প্রথম চা উৎপাদনকারী অঞ্চল হিসাবে আবির্ভূত হয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ভারতে চাকে জনপ্রিয় করে তোলার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল, দুধ ও চিনির সাথে এটি বিনামূল্যে প্রদান করে। এই উদ্যোগটি আজ ভারতের সমৃদ্ধ চা সংস্কৃতির ভিত্তি স্থাপন করেছে। চীনে চায়ের পবিত্র মর্যাদা বাড়ির উত্সর্গীকৃত চা ঘরগুলিতে স্পষ্ট হয়, একটি ঐতিহ্য যা সমাজে পানীয়ের সম্মানিত স্থানকে তুলে ধরে। এদিকে, জাপানে চা উৎসব পানীয়টির তাৎপর্য উদযাপন করে, যা অভিজাতদের গার্হস্থ্য জীবনে এর একীকরণকে প্রতিফলিত করে।
চিরসবুজ এবং ঝোপঝাড় প্রকৃতির জন্য পরিচিত চা গাছগুলি যদি ছাঁটাই না করা হয় তবে 30-40 ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। বাগানে শিরিষ গাছের মতো ছায়াযুক্ত গাছ লাগানোর অভ্যাস হল গুল্মজাতীয়তা বৃদ্ধি এবং পাতার উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে। লক্ষণীয়ভাবে, চা গাছ এক শতাব্দী পর্যন্ত মানসম্পন্ন পাতা উত্পাদন করতে পারে এবং তাদের বীজগুলি খুব শক্ত বাইরের আবরণে আবদ্ধ থাকে। গাঢ় সবুজ, লম্বা, এবং সামান্য কাঁটাযুক্ত পাতায় তৈলাক্ত পদার্থে ভরা ছোট কোষ থাকে, যা চায়ের আনন্দদায়ক স্বাদ এবং গন্ধে অবদান রাখে।
চা তৈরিতে পাতাগুলিকে তিন মিনিটের জন্য সিদ্ধ জলে ভিজিয়ে রাখা জড়িত, এটি একটি প্রক্রিয়া যা এর সুগন্ধ এবং গন্ধকে আনলক করে। দার্জিলিং চা, বিশেষ করে, তার অনন্য সুগন্ধের জন্য বিশ্বব্যাপী পালিত হয়। যাইহোক, চায়ের স্বাদ এবং ঘ্রাণ ঠান্ডা কাপে কমে যায়, সেরা চায়ের অভিজ্ঞতার জন্য উষ্ণ কাপ ব্যবহার করার গুরুত্বকে বোঝায়। তিব্বতের মাখন এবং সোডা চা থেকে শুরু করে রাশিয়ানদের বোতলজাত চা এবং চীন, জাপান, মায়ানমার, মঙ্গোলিয়া এবং কোরিয়ার স্বাস্থ্যগত সুবিধার জন্য গ্রিন টি পছন্দ করা বিভিন্ন সংস্কৃতির চা তৈরির অনন্য উপায় রয়েছে।
কালো চা, সবুজ চা, ওলং চা, ইট চা, এবং লেটপেট চা সহ বিভিন্ন ধরণের চা রয়েছে। ভারত এবং কেনিয়ার মতো দেশে কালো চা সবচেয়ে সাধারণ, যখন সবুজ চা মধ্য এশিয়া এবং জাপানে জনপ্রিয়তা উপভোগ করে। চা পাতায় ক্যাফেইন এবং অপরিহার্য তেলের পাশাপাশি ভাজা হলে প্রায় 2% ট্যানিন এবং 12% ট্যানিন থাকে। ক্যাফিন এবং ট্যানিন উপাদানের কারণে পানীয়টি স্নায়ুতন্ত্রের উপর উদ্দীপক প্রভাব, ক্ষুধা দমন এবং হজমে সহায়তার জন্য পরিচিত। তদুপরি, চায়ের মূত্রবর্ধক, পেশী টনিক এবং অ্যাস্ট্রিনজেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে, চলমান গবেষণা হৃদরোগ এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে এর সম্ভাব্য সুবিধাগুলি অন্বেষণ করে। ইউনানি ঔষধে, চা হার্টের সমস্যা, শোক, বিভ্রম, জ্বর, সর্দি, কাশি এবং শ্বাসকষ্টের সমাধান করার ক্ষমতার জন্য স্বীকৃত। দুধ এবং চিনির সাথে খাওয়ার সময় এটি নিদ্রাহীনতা এবং অস্থিরতা উপশম করতে সহায়তা করে, এটি নিরাময়কারী প্রভাবও থাকতে পারে।
চায়ের সাংস্কৃতিক তাত্পর্য তার খাওয়ার আশেপাশের ঐতিহ্যগুলিতে স্পষ্ট। জাপানে, চা অনুষ্ঠান এবং অনন্য চা বাটির ব্যবহার চায়ের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে, বাটিগুলি প্রায়শই লালিত পারিবারিক উত্তরাধিকারে পরিণত হয়। বাংলাদেশেও একটি সমৃদ্ধ চায়ের সংস্কৃতি রয়েছে, বর্তমানে চা সাধারণত কাপে উপভোগ করা হয়, যদিও অতীতে বাটি ব্যবহার করা হত। সমতল ভূমির উপরে পাহাড়ে তাদের সুন্দরভাবে সাজানো চা গাছের সারি সহ মনোরম চা বাগান, চা চাষে বিনিয়োগ করা যত্নশীল যত্নের একটি আভাস দেয়। ক্যামেলিয়া নামে পরিচিত চা গাছটির নাম মালয় ভাষা থেকে এসেছে, কেউ কেউ এটিকে উট নামে একজন উদ্ভিদ-সংগ্রাহক বা একজন ইতালীয় পুরোহিতকে দায়ী করেছেন যিনি গাছটিকে ইউরোপে প্রবর্তন করেছিলেন। এর ব্যবহার ছাড়াও, চুলের বৃদ্ধিতে এর উপকারিতা এবং চোখে লাগালে এর শিথিল প্রভাবের জন্যও চাকে মূল্য দেওয়া হয়।
চীনে এর উৎপত্তি থেকে শুরু করে বিশ্বব্যাপী একটি প্রিয় পানীয় হিসেবে এর ভূমিকা, চায়ের যাত্রা তার স্থায়ী আবেদন এবং বহুমুখীতার প্রমাণ। চীনের পবিত্র চায়ের ঘরে উপভোগ করা হোক না কেন, জাপানের বিস্তৃত চায়ের অনুষ্ঠানের সময়, বা ভারতের ব্যস্ত চায়ের দোকানে, চা একটি শেয়ার্ড প্যাশন হিসেবে রয়ে গেছে যা সংস্কৃতিকে অতিক্রম করে, মানুষকে এর অনন্য স্বাদ এবং স্বাস্থ্য সুবিধার প্রশংসায় একত্রিত করে।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্নিকন্যা, মোহিনী দেবী।।।

সূচনা-ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের অব্যর্থ পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে মোহিনী দেবী প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন।ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুধু শহীদ ভগত্‍ সিং-এর মতই নয় বরং শক্তিশালী নারীদের দ্বারা প্রশস্ত হয়েছিল যারা তাদের মাটিতে দাঁড়িয়েছিল এবং দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ব্রিটিশদের সাথে লড়াই করেছিল।

মোহিনী দেবী ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে। ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিকন্যা ছিলেন তিনি।
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক স্মরণীয় নাম
মোহিনী দেবী। তিনি ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিকন্যা। এছাড়া তার পরিবার বাংলাদেশের প্রগতিমুলক শিক্ষা ও সংস্কৃতির সাথে জড়িত ছিল। ইতিহাসে তাঁর নাম আজও স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। জেনে নেবো তাঁর সংগ্রামী জীবনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

জন্ম ও পরিবার–

মোহিনী দেবী ১৮৬৩ সালে ঢাকা জেলার মানিকগঞ্জে এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম রামশঙ্কর সেন ও মাতার নাম উমাসুন্দরী দেবী। ১২ বছর বয়সে তারকচন্দ্ৰ দাশগুপ্তের সঙ্গে বিবাহ হয়। শ্রমিক আন্দোলনের নেত্রী প্রভাবতী দাশগুপ্ত।

শিক্ষাজীবন–

মোহিনী দেবী ভিক্টোরিয়া স্কুলের প্রথম হিন্দু ছাত্রী, কলকাতার অভিজাত অ্যাংলিকান প্রতিষ্ঠান, মোহিনী দেবী (১৮৬৩ – ১৯৫৫) তার মূলে একজন জাতীয়তাবাদী ছিলেন। ঢাকার বেউথার রামশঙ্কর সেনের কন্যা, বারো বছর বয়সে তারকচন্দ্র দাশগুপ্তের সাথে তার বিয়ে হয়। তা সত্ত্বেও, তিনি পন্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রী এবং রামতনু লাহিড়ীর অধীনে অধ্যয়নের সুযোগ পেয়েছিলেন, ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগের কলকাতার অধ্যবসায়ী। তিনি ইউনাইটেড মিশনের একজন মহিলা শিক্ষকের কাছে ইংরেজি শিখেছিলেন। এইভাবে তিনি ভারতের সমসাময়িক উন্নয়ন সম্পর্কে সচেতন হন এবং শুরু থেকেই বিভিন্ন সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হন।

রাজনৈতিক জীবন–

১৯২১-২২ সালে তিনি গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কারণে কারাবরণ করেন। ১৯৩০-৩১ সালে আইন অমান্য আন্দোলনে নেতৃত দেন। এজন্য তাকে ছয় মাসের জেল খাটতে হয়েছিল। ‘নিখিল ভারত মহিলা সমিতির’ সভানেত্রী হিসেবে তার ভাষন উচ্চ প্রশংসিত হয়। ১৯৪৬ সালের দাঙ্গায় মুসলিম প্রধান অঞ্চল এন্টালি বাগানে নিজের বাড়িতে থেকে হিন্দু মুসলিম ঐক্যের প্রচার চালিয়েছিলেন। সে সময় তার বন্ধু-বান্ধব আত্নীয় পরিজন তাকে তিরস্কার করে কিন্তু তাতে তিনি সংকল্প হারান নি। মোহিনী দেবী একদিকে স্বাধীনতা আন্দোলন এর পক্ষে কাজ করেছিলেন অন্যদিকে নারী শিক্ষা, নারী স্বাধীনতা, সমাজসংস্কারমূলক কাজ।

স্বাধীনতা আন্দোলনে-

১৯২০-১৯২২ সালে, ব্রিটিশদের সাথে অসহযোগের জন্য গান্ধীর আহ্বানের উচ্চতায়, তিনি নিজেকে আন্দোলনে উত্সর্গ করেছিলেন। ১৯৩০-১৯৩১ সালের আইন অমান্য আন্দোলনের সময়, তিনি আইন ও পুলিশি বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করে এবং পথে কারাভোগ করে একজন উল্লেখযোগ্য নেতা আন্দোলন হিসাবে আবির্ভূত হন। গান্ধীবাদী আদর্শে তার সম্পূর্ণ সাবস্ক্রিপশন এবং তার আন্দোলন কৌশলের প্রতি অটল জমা দেওয়ার কারণে, তিনি দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে সর্বভারতীয় মহিলা কংগ্রেসের সভাপতি হন; তার বাকপটু বক্তৃতা গান্ধী সহ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। নিজের এবং তার পরিবারের নিরাপত্তা উপেক্ষা করে, তিনি কলকাতার রাস্তায় নেমে আসেন এবং ১৯৪৬ সালের ভয়াবহ কলকাতা দাঙ্গার অন্ধকার দিনগুলিতে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেন।
গান্ধীজীর আদর্শে অবিচলিত নিষ্ঠা ছিল। ১৯৪৬ খ্রী. কলিকাতায় দাঙ্গার সময় দাঙ্গা-আধুষিত মুসলমান-প্রধান অঞ্চল এন্টনিবাগানে নিজের বাড়িতে থেকে হিন্দু-মুসলমানের ঐক্যের বাণী প্রচার করেন। ‘দি স্কাভেঞ্জার্স ইউনিয়ন অব বেঙ্গল’ এবং ‘জুটি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নে’র প্রেসিডেন্ট তাঁর কন্যা প্ৰভাবতী দাশগুপ্ত ১৯২৭-২৮ থেকে ১৯৩০ – ৩১ খ্রী. পর্যন্ত শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে এক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব।

মৃত্যু–

মহান এই সংগ্রামী মোহিনী দেবী ২৫ মার্চ ১৯৫৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট ও উইকিপিডিয়া।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

১০ টি ভারতীয় স্থানে হোলি উদযাপনের অনন্য উপায় : একটি অবিস্মরণীয় সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা।।।

হোলি, রঙের উত্‍সব, ভারত জুড়ে একটি অধীরভাবে প্রতীক্ষিত ইভেন্ট, যা অত্যন্ত উত্‍সাহ এবং আনন্দের সাথে উদযাপিত হয়। এই প্রাণবন্ত উত্‍সবের গভীর সাংস্কৃতিক ও পৌরাণিক শিকড় রয়েছে, যা মন্দের ওপর ভালোর বিজয়ের প্রতীক। ভারতের প্রতিটি অঞ্চলে হোলি উদযাপনের নিজস্ব উপায় রয়েছে, যা একটি সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা প্রদান করে।

এখানে, আমরা ভারতের ১০টি স্থান অন্বেষণ করি যেখানে হোলি উদযাপন অনন্য স্থানীয় স্বাদ গ্রহণ করে, অংশগ্রহণকারীদের একটি অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা প্রদান করে।
বৃন্দাবনে, উত্‍সবটি ফুলন কি হোলির সাথে একটি আধ্যাত্মিক নোট গ্রহণ করে, যেখানে রঙের গুঁড়োর পরিবর্তে, ফুলের পাপড়ি ব্যবহার করা হয়। এই অনন্য উদযাপন ভগবান কৃষ্ণের কৌতুকপূর্ণ আত্মাকে সম্মান করে, যিনি এই পবিত্র শহরে তাঁর শৈশব কাটিয়েছিলেন।
বারসানা লাঠমার হোলির আয়োজন করে, একটি উদযাপন যা হিন্দু পুরাণে গভীরভাবে নিহিত। এখানে, মহিলারা রাধা এবং কৃষ্ণের মধ্যে উত্তেজনার একটি কৌতুকপূর্ণ পুনঃপ্রতিক্রিয়ায় লাঠি দিয়ে পুরুষদের তাড়া করে, যা ঐতিহ্যবাহী হোলি উত্‍সবকে একটি অনন্য মোড় দেয়।
জয়পুরের এলিফ্যান্ট ফেস্টিভ্যাল হোলি উদযাপনে জাঁকজমক যোগ করে। হাতি, রঙিন পোশাকে সজ্জিত, একটি বিশাল শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেয় এবং ইভেন্টের মধ্যে রয়েছে সেরা-সজ্জিত হাতির সম্মান, উত্‍সবের আনন্দের সাথে ঐতিহ্যকে একীভূত করা।
শান্তিনিকেতনে, হোলি বসন্ত উত্‍সব বা বসন্ত উত্‍সব হিসেবে পালিত হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সূচনা করা এই ঐতিহ্যের মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, এরপর আনন্দের রঙ নিক্ষেপ করা।
উদয়পুরের রাজপরিবার একটি জমকালো হোলি উদযাপনের আয়োজন করে, যেখানে একটি রাজকীয় শোভাযাত্রা, স্থানীয় পরিবেশনা এবং একটি জমকালো ভোজ, যা শহরের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রদর্শন করে।
ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে, হাম্পি প্রাণবন্ত হোলি উদযাপনের প্রস্তাব দেয় যার মধ্যে রয়েছে বনফায়ার, সঙ্গীত, নৃত্য এবং সাম্প্রদায়িক আনন্দ, যা মন্দের উপর ভালোর বিজয়ের চেতনাকে প্রতিফলিত করে।
গোয়া এবং দেরাদুনে হোলি মু উত্‍সব আধুনিক সঙ্গীত, শিল্প এবং সংস্কৃতির সাথে ঐতিহ্যবাহী হোলির মজাকে একত্রিত করে। এটি একটি নিরাপদ, বন্ধুত্বপূর্ণ ইভেন্ট হিসেবে পরিচিত যা পরিবেশ বান্ধব রং ব্যবহার করে।
হোলা মোহাল্লা, হোলির ঠিক পরেই উদযাপিত হয়, শিখ সম্প্রদায়ের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা, যেখানে মার্শাল আর্ট প্রদর্শনের বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা স্ব-শৃঙ্খলা এবং সমতার মূল্যবোধকে আন্ডারলাইন করে।
কোচিনে, কোঙ্কনি মন্দিরে মঞ্জুল কুলি উত্‍সবে সিন্থেটিক রঙের পরিবর্তে হলুদ ব্যবহার করা হয়। উদযাপন ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত, নৃত্য, এবং ভোজ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।
মণিপুরের ইয়োসাং উত্‍সব, মেইতেই সম্প্রদায়ের দ্বারা পালিত হয়, এর মধ্যে রয়েছে নাচ, গান, গেমস এবং থাবাল চোংবা নাচ, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা একটি বনফায়ারের চারপাশে নাচ করে, উত্সব পরিবেশকে যোগ করে।
এই ১০টি স্থান ভারত জুড়ে হোলি উদযাপনের সমৃদ্ধ টেপেস্ট্রির একটি আভাস দেয়। প্রতিটি স্থান এই প্রিয় উত্‍সবের আনন্দ, ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অনুভব করার একটি অনন্য উপায় প্রদান করে, যারা ভারতের প্রাণবন্ত উত্‍সবের চেতনায় নিজেদেরকে নিমজ্জিত করতে চায় তাদের জন্য তাদের অবশ্যই দেখার গন্তব্য হিসেবে তৈরি করে।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ রিভিউ

কর্তাভজা সম্প্রদায় ও কল্যাণীর সতীমার দোল মেলা : দিলীপ রায়।।।

যতদূর জানা যায়, আনুমানিক দুশো বছর আগে আউলিয়া সম্প্রদায়ের সতীমা অর্থাত্‍ সরস্বতী দেবী এই মেলার প্রবর্তন করেন । এপার বাংলা ও বাংলাদেশে যথেষ্ট জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ঘোষপাড়ার সতীমার দোল মেলা । খ্রিষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি বাংলার অন্ত্যজ সম্প্রদায়ের মানুষদয়ের নিয়ে গড়ে ওঠে আউলচাঁদ সম্প্রদায় ।

এই সম্প্রদায়ের আদিগুরু ছিলেন আউলচাঁদ । তাঁর মৃত্যুর পর আউলচাঁদ সম্প্রদায়ের কর্তাপদ লাভ করেন রামশরণ পাল । তাঁরই স্ত্রী ছিলেন সরস্বতী দেবী যিনি পরবর্তীকালে সতী মা নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেন ।
বাউল, কীর্তন, লোকগীতি, পল্লীগীতির সুরে প্রতি বছর মেলা জমে ওঠে । আখড়ায় আখড়ায় সারা রাত ধরে গানের আসর । শ্রোতারা অধিকাংশই গ্রাম ও মফঃস্বলের । বিভিন্ন জায়গায় তৈরী হয় লালন মঞ্চ । গানের পাশাপাশি বিশাল উনুন জ্বালিয়ে ক্ষুন্নিবৃত্তির ব্যবস্থা হয় ঐ আখড়াগুলিতে । দূরদূরান্ত থেকে মেলায় আগত মানুষদের আশ্রয়স্থল এই আখড়াগুলি ।
এবার আসছি কর্তাভজা সম্প্রদায় প্রসঙ্গে ।
কর্তাভজা সম্প্রদায় আঠারো শতকে বৈষ্ণববাদ ও সুফিবাদ থেকে বিকশিত একটি ক্ষুদ্র ধর্মীয় সম্প্রদায় । এই সম্প্রদায়ের মূল গুরু আউল চাঁদ ।
প্রথমেই বলি, আউলচাঁদ হলেন একজন বাঙালি ধর্ম প্রচারক ও কর্তাভজা সম্প্রদায়ের আদিগুরু । কিংবদন্তি বা লোকবিশ্বাস যে, গোরাচাঁদ অর্থাত্‍ শ্রীচৈতন্যদেব আউলচাঁদ রূপে পুনরায় আবির্ভূত হয়েছেন । গৃহী মানুষকে বৈরাগ্য ধর্ম শেখাতে শ্রীচৈতন্য আবির্ভূত হন আউল চাঁদ ফকির হয়ে । এখানে তাই কোনো জাতিভেদ নেই ।
আউলচাঁদের জন্ম-খ্রিষ্টাব্দ নিয়ে অনেক মতভেদ । শোনা যায়, তিনি হিন্দু না মুসলমান সেটা স্পষ্টভাবে জানা যায়নি । তবে প্রচলিত লোক কাহিনী অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার উলা গ্রামের (অনেকের মতে, নদীয়া জেলার প্রাচীন জনপদ উলা-বীরনগর) পান ক্ষেত থেকে একটি নবজাতক শিশুকে পাওয়া যায় । ক্ষেতের মালিক মহাদের বারুই ভগবানের আশীর্বাদ ভেবে তাঁকে লালন-পালন শুরু করেন । আউলচাঁদের পুরানো নাম পূর্ণচন্দ্র । সংস্কৃত ভাষা শেখানোর জন্য তাঁকে পাঠানো হয় সে-সময়কার বিখ্যাত বৈষ্ণবাচার্য হরিহরের কাছে । বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণচন্দ্র নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ান এবং নানাভাবে শিক্ষালাভ করেন । শেষ পর্যন্ত তিনি সিদ্ধিলাভ করেন । তাঁর নতুন নাম হয় ফকিরচাঁদ বা আউলচাঁদ । বড় হয়ে আউলচাঁদ গৃহত্যাগ করেন । বহু দেশ ঘোরার পর নদীয়া জেলার ঘোষপাড়ায় রামশরণ পাল নামে এক ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি তাঁকে আশ্রয় দেন । আউল চাঁদের ২২জন শিষ্যের মধ্যে অন্যতম শিষ্য রামশরণ পাল । ২২জনের মধ্যে রামশরণ পাল আউলচাঁদের মৃত্যর পর গুরুপদ প্রাপ্ত হন । যারজন্য তাঁর নেতৃত্বে পশ্চিম বঙ্গের নদীয়া জেলার ঘোষপাড়ায় প্রতিষ্ঠা করেন কর্তাভজা ধর্মের অন্যতম পীঠস্থান, যা পরবর্তী সময়ে সতী মায়ের মন্দির নামে সবার কাছে পরিচিত । রামশরণ পালের স্ত্রীর নাম সরস্বতী, যার নামেই এই মন্দির—-সতী মায়ের মন্দির । কথিত আছে, সরস্বতী’র প্রথম অক্ষর “স” আর শেষ অক্ষর “তী” অনুসারে সতী । আউলচাঁদের শিষ্য রামশরণ পাল গুরুর ভাবাদর্শকে ভিত্তি করে কর্তাভজা সম্প্রদায় গড়ে তোলেন । এইজন্য ভক্তের নিকট তিনি “কর্তা” এবং তাঁর স্ত্রী সরস্বতী দেবী “কর্তামা” নামে অভিহিত । রামশরণ পালের পর সরস্বতী দেবী এই সম্প্রদায়কে নেতৃত্ব দেন । রামশরণ পালের স্ত্রী কর্তাভজা সম্প্রদায়কে দিশা দেখান । রামশরণের স্ত্রী সরস্বতী দেবী ছিলেন অতীব ধর্মপরায়ণা । শোনা যায়, আউলচাঁদ হিম সাগরের জল ও ডালিম গাছের তলার মাটির সাহায্যে সরস্বতী দেবীকে অলৌকিক উপায়ে মৃত্যের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন । আরও শোনা যায়, আউলচাঁদ নাকি রামশরণ পাল ও সরস্বতী দেবীর সন্তান হয়ে পরবর্তীতে জন্ম নেন “দুলাল চাঁদ” নামে । দুলাল চাঁদ (১৭৭৬-১৮৩৩) কর্তাভজা সম্প্রদায়কে সাংগঠনিক রূপ দেন । তিনি বহু পদ রচনা করে কর্তাভজা ধর্মমতকে একটা তাত্ত্বিক কাঠামোর উপর প্রতিষ্ঠিত করেন । পদগুলি ভাব-গীত-রূপে ভক্তদের নিকট সমাদৃত । কর্তাভজারা কোনো জাতিভেদ মানেন না । তাঁরা লোভ-মোহ-কাম-ক্রোধকে নৈতিক পাপ বলে মনে করেন । সত্‍ পথে থেকে এবং মিথ্যা কথা পরিহার করে নৈতিকভাবে ধর্মকর্ম করা তাঁদের প্রধান লক্ষ্য । তাঁর সময়ে কর্তাভজা সম্প্রদায়ের খ্যাতি বহুদূর পর্যন্ত গড়ায় । মাত্র ৪৮ বছর বয়সে দুলাল চাঁদের মৃত্যু হয় । এরপর তাঁর মা অর্থাত্‍ সরস্বতী দেবী কর্তা মা বা সতীমা নামে খ্যাতিলাভ করেন ।
নদীয়া জেলার ঘোষপাড়ার রামশরণ পালের আদি ভিটেটুকু ভক্তদের কাছে অতি পবিত্র । ভিটের পাশেই ডালিম গাছ । এই গাছের নীচে যেহেতু সতীমা সিদ্ধিলাভ করেছিলেন সেইজন্য ভক্তরা ডালিম গাছের ডালে ঢিল বেঁধে মানত করেন । মনস্কামনা পূরণ হওয়ার আশায় । বাতাসা, কদমা, চিড়ে, মুড়কি দিয়ে নৈবেদ্য সাজিয়ে ভক্তদের সতীমাকে পুজো দেওয়ার রীতি । আজও সেই ট্রাডিশন অব্যাহত ।
জনশ্রুতি, শেষ বয়সে সরস্বতী দেবী সন্তানহারা হলে দোলপূর্ণিমার দিন গুরু পুজার আয়োজন করেন । সেই থেকে দোল পূর্ণিমার সূচনা । হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গা থেকে বাউলেরা আসেন । তাই স্থানীয়ভাবে সতী মায়ের মেলাটা আউল-বাউলের মেলা বা আখড়া নামে পরিচিত ।
কর্তাভজা সম্প্রদায় মূর্তিপুজা এবং সকল প্রকার আনুষ্ঠানিক যাগযজ্ঞের বিরোধী । কর্তাভজা প্রচারক দুলাল চাঁদ রচিত ভাবের গীতে বলা হয়েছে– “মানুষ ভজ, মানুষ চিন্ত, মানুষ কর সার, সকলি মানুষের খেলা মানুষ বই নাই আর ।” কর্তাভজা সম্প্রদায়ের উল্লেখযোগ্য দিক হলো এখানে হিন্দু গুরুর মুসলমান শিষ্য যেমন আছেন, তেমনি আছেন মুসলমান গুরুর হিন্দু শিষ্য । এই সম্প্রদায়ে নারী পুরুষ নেতৃত্ব নিয়ে কোন প্রশ্ন তোলা হয় না । এই কারণে গুরুদেবের ভূমিকায় নারী পুরুষ উভয়কেই দেখা যায় । একই ভাবে তাঁরা বাউল সম্প্রদায়ের মতো জাতিভেদ প্রথা মানেন না । দুলাল চাঁদের ভাবের গীতে তাই বলা হচ্ছে– “ভেদ নাই মানুষে মানুষে, খেদ কেন ভাই এদেশে ।”
সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায় কর্তাভজা সম্প্রদায়ে । এ-বিষয়ে কবি নবীন চন্দ্র সেনের বক্তব্য অত্যন্ত প্রনিধানযোগ্য । তাঁর মতে, “কর্তাভজা সম্প্রদায়ে কোনো জাতিভেদ নেই । সকলেই এক রন্ধনশালার পাক গ্রহণ করেন । ছোঁয়াছুয়ির দোষ এদের কাছে মুখ্য নয় । মানুষ সেবা তাঁদের মুখ্য বিবেচ্য বিষয় ।”
কর্তাভজাদের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো গুরুদেবের পুত্র অযোগ্য হলে তাঁরা তাকে গুরু নির্বাচন করতে চান না । তাঁদের নিয়মাবলী নামক ভাবের গীতে এই প্রসঙ্গে অভিমত ব্যক্ত করে বলা হয়েছে কর্তাভজা সম্প্রদায়ের সাধন ভজন সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখেন এমন ব্যক্তিই গুরুদেব হবার অধিকারী । এই জায়গায় কর্তাভজা সম্প্রদায় বর্ণবাদ এবং ব্রাহ্মণ্যবাদের কবল থেকে বেরিয়ে আসতে সমর্থ হয়েছেন ।
আজও কর্তাভজা সম্প্রদায়ের মধ্যে সতীমায়ের কৃপা পাওয়ার নিরিখে যথেষ্ট উন্মাদনা । তাঁদের মধ্যে সরল বিশ্বাস ও ভক্তি আজও উজ্জীবিত । যার জন্য দোল পূর্ণিমার দিন সতী মায়ের মেলায় হাজার হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে । এদেশ ছাড়া বাংলাদেশ থেকেও মেলাপ্রাঙ্গনে অনেক মানুষের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো । বাউলদের সমারোহ আলাদা মাধুর্যে ভরপুর থাকে কল্যাণীর সতী মায়ের মেলা । (তথ্যসূত্র: সংগৃহীত) ।
কলমে: দিলীপ রায় (৯৪৩৩৪৬২৮৫৪)

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

ঘুরে আসুন প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থান – মহিষাদল রাজবাড়ি।।।

পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহিষাদলের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত, একটি স্থাপত্য বিস্ময় এই অঞ্চলের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রমাণ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। প্রাথমিকভাবে জনার্দন উপাধ্যায়কে (গর্গ) থাকার জন্য তৈরি করা হয়েছিল, ব্যবসায়িক ব্যস্ততার জন্য এই এলাকায় ঘন ঘন দর্শনার্থী, এই প্রাসাদটি এখন ঐতিহাসিক তাৎপর্যের আলোকবর্তিকা হিসাবে কাজ করে।

এর প্রাঙ্গনে রয়েছে শ্রদ্ধেয় কৃষ্ণ মন্দির, যা গোপালজী মন্দির নামে পরিচিত, রাজকীয় স্থাপত্যের মহিমার মধ্যে আধ্যাত্মিকতার একটি অভয়ারণ্য।
রানী জানকি দেবীর শাসনামলে নির্মিত, মন্দিরটি শুধুমাত্র ভগবান কৃষ্ণের পূজাই করে না বরং সেই সময়কার সমন্বিত ধর্মীয় ঐতিহ্যকে প্রদর্শন করে ভগবান শিবের মূর্তিও রয়েছে। প্রবেশদ্বারের পাশে আরও দুটি উল্লেখযোগ্য কাঠামো রয়েছে – জগন্নাথ মন্দির এবং নাটমন্দির, প্রতিটি কমপ্লেক্সের আধ্যাত্মিক পরিবেশে স্তর যুক্ত করে।
প্রাসাদ কমপ্লেক্স দুটি প্রধান কাঠামোতে বিভক্ত: পুরানো প্রাসাদ এবং এর নতুন প্রতিরূপ। পরেরটি বর্তমানে রাজপরিবারের বংশধরদের দখলে রয়েছে, উত্তরাধিকারকে বাঁচিয়ে রেখেছে। প্রাসাদে দর্শনার্থীরা নিচতলার কক্ষগুলি অন্বেষণ করতে পারেন, যেখানে নিদর্শনগুলির একটি আকর্ষণীয় সংগ্রহ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে স্টাফড প্রাণী, সূক্ষ্ম পেইন্টিং এবং অ্যান্টিক আসবাবপত্র, যা অনুরোধের ভিত্তিতে দেখার জন্য উপলব্ধ, যা এর প্রাক্তন বাসিন্দাদের ঐশ্বর্যময় জীবনধারার একটি আভাস দেয়।
এই প্রাসাদের মধ্যে ঐশ্বরিক পবিত্রতা এবং রাজকীয় জীবনযাপনের সংমিশ্রণ উত্তর প্রদেশের ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক প্যানোরামার সারাংশকে ধারণ করে। এটি এমন একটি জায়গা যেখানে অতীত এবং বর্তমান একত্রিত হয়, যারা এই অঞ্চলকে রূপ দিয়েছে এমন গল্প এবং ঐতিহ্যগুলিকে খুঁজে পেতে আমন্ত্রণ জানায়।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

স্মরণে বিশিষ্ট বাঙালি কবি – নিশিকান্ত রায় চৌধুরী।।।

নিশিকান্ত রায়চৌধুরী ছিলেন একজন বাঙালি কবি। কবি ১৯০৯ সালের ২৪ মার্চ বর্তমান বাংলাদেশের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির বরিশাল জেলার উজিরপুর গ্রামে তাঁর মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা বিজয়শঙ্কর রায়চৌধুরী ছিলেন একজন আইনজীবী এবং মা সৌদামিনী দেবী। তাদের পৈতৃক নিবাস ছিল বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাট মহকুমার শিবটি গ্রামে।

নিশিকান্তের জীবনের প্রথম পর্ব কেটেছে শান্তিনিকেতনে, দ্বিতীয় পর্যায় পন্ডিচেরিতে শ্রী অরবিন্দের আশ্রমে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সান্নিধ্যে সিউড়ির বেণীমাধব ইনস্টিটিউশন এবং শান্তিনিকেতনের কলাভবনে কবি প্রথম শিক্ষা লাভ করেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁকে ‘চাঁদকবি’ বলে ডাকেন। তাঁর পিতামহ কবি সুধাকান্ত রায় চৌধুরী ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সচিব। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং নন্দলাল বসুর কাছ থেকে শিল্প শিক্ষা লাভ করেন। অবনীন্দ্রনাথ তাঁকে ডাকতেন ‘ মাই আর্টিস্ট’। অকৃতদার নিশিকান্ত ১৯৩৪ সালে পন্ডিচেরির শ্রী অরবিন্দ আশ্রমে চলে আসেন এবং সেখানে বসবাস করতেন।
তিনি শ্রী অরবিন্দের আশ্রমে আধ্যাত্মিক সাধনার পাশাপাশি কাব্যচর্চা করতেন। ঋষি অরবিন্দ নিশিকান্ত ও তাঁর কবিতার প্রতি খুব পছন্দ করতেন। অরবিন্দের দৃষ্টিতে, নিশিকান্ত ছিলেন তাঁর “প্রেরণার ব্রাহ্মণ পুত্র”। ১৯৩৯ সালে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অলকানন্দা’ প্রকাশিত হয়। সংস্কৃত শব্দের ব্যবহার, বর্ণাঢ্যতা ও চিত্রকল্প তাঁর কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য।
তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল –
ভোরের পাখি, দিনের সূর্য, বৈজয়ন্তী, বন্দে মাতরম, নবদীপন, দিগন্ত, পঁচিশ প্রদীপ। তার কবিতা ইংরাজীতে অনূদিত হয়ে “ড্রিম ক্যাডেন্স” নামে প্রকাশিত হয়। তাঁর কয়েকটি কবিতা ইংরাজীতে অনুবাদ করেন শ্রীঅরবিন্দ নিজেও।
কবি ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ২০ শে মে মৃত্যুবরণ করেন।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This